বাংলাদেশ চলচিত্র ঊৎসবের শেষদিনেও কলকাতা যেন ‘হাওয়া’য় ভাসছে। হাওয়ার দাপটে চঞ্চল কলকাতাবাসী। গত ২৯ অক্টোবর কলকাতায় যে ‘হাওয়া’ শুরু হয়েছিল, সেই ঝড় থামলো বুধবার (২ নভেম্বর)।
গত ৫ দিন ধরে কলকাতার নন্দন প্রেক্ষাগৃহে চতুর্থ বাংলাদেশি চলচ্চিত্র উৎসবের প্রধান আকর্ষণই ছিল এই ‘হাওয়া’ সিনেমাটি। মেজবাউর রহমান সুমনের এই ছবিতে মজেছে সিনেমাপ্রেমীরা। বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের দর্শকের মন জয়ের পর কলকাতাও মাতালো ছবিটি।
‘হাওয়া’র নির্ধারিত শেষ শো ছাড়াও নন্দনের ৯০০ আসন বিশিষ্ট হলে ‘হাওয়া’র একটি বিশেষ প্রদর্শণীর ব্যবস্থা করা হলেও উপচে পড়া ভিড় সামলাতে উপ-হাইকমিশন স্টাফ ও পুলিশকে রীতিমত হিমশিম খেতে হয়েছে। এই ভিড়, এই জনসমুদ্র এই উন্মাদনা স্তব্ধ হবে বৃহস্পতিবার, এটা যেন মেনে নিতে পারছেনা কলকাতা মহানগর বাসী।
‘হাওয়া’ দেখার সুযোগ না পেয়ে বুধবারও কয়েক হাজার দর্শককে ফিরে যেতে হয়েছে। ফিরে যাওয়া এরকম বেশ কয়েকজন জানান তাদের হতাশার কথা। কলকাতার বাশদ্রোনীর বাসিন্দা শ্রাবণী ব্যানার্জী, বউ-বাজারের তমাল মান্না, হাওড়ার সমীরন আইচ, কল্যানির রীতিকা সেন ও তমা সেন, নৈহাটির স্বপন দত্ত সংবাদকে জানান, তারা পাঁচ দিন চেষ্টা করেও হাওয়া দেখতে পারেননি। তারা বলেন, একটি সিনেমার জন্য এত ভিড়-চাহিদা তারা আগে কলকাতায় দেখিনি।
এ যেন ‘বেদের মেয়ে জোৎস্না’র চেয়েও খারাপ অবস্থা, ছিল ভিড়ের প্রচন্ডতা। শেষ দিন সকাল ১০টার ‘হাওয়া’র শো দেখার জন্য পশ্চিমবঙ্গের দূরদূরান্তের আসা বহু মানুষ ভোর ৪ টা থেকে লাইনে দাঁড়ায়। কিন্তু মাত্র ৯০০ দর্শক শো দেখতে সুযোগ পায়। যারা সকালের শো দেখতে পারেননি তারা এদিন আবার সন্ধ্যা ৬ টার নির্ধরিত প্রদর্শনী দেখার জন্য লাইনে দাঁড়ান। কিন্তু অনেকেই হলে ঢোকার সুযোগ পায়নি।
তারা চঞ্চল চৌধুরীর কাছে দাবি জানান, ‘হাওয়া’ সিনেমাটি কলকাতার বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে দেখানোর জন্য যেন তিনি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সাথে আ্যডভোকেসি করেন। তাদের দাবি, ‘আমরা সিনেমা হলে পয়সা দিয়ে হাওয়া দেখতে চাই।’
মোদ্দা কথা উৎসবের শেষ দিন হাওয়া দেখতে না পেয়ে দু’বেলায় চার থেকে পাঁচ হাজার দর্শককে ফিরে যেতে হয়েছে।
যারা হাওয়া দেখতে পেরেছেন বা যারা দেখতে পারননি তাদের সবার মুখে গাইতে শোনা যায় হাওয়ার হেড মাঝির গাওয়া গান ‘সাদা সাদা কালা কালা’ আর সংলাপ।
স্বাভাবিক ভাবেই ২৯ তারিখ থেকে দুই বাংলার সংবাদ মাধ্যম বারবার একই প্রশ্ন করেছে, “কী কও মাঝি?” মাঝি কী বলেছেন সে কথা শুনেছি সকলে। এই উন্মাদনা, এই ভালোবাসা পেয়ে চঞ্চল চৌধুরী আপ্লুত। তিনি অভিভূত, এমনকি তিনি কিছুটা অবাকও। বাড়ি পাবনার কামারহাট গ্রামে। বড় হয়েছেন পদ্মা থেকে হাঁটা দূরত্বের ঘরে। মঞ্চ কাঁপিয়ে রীতিমত তাক লাগিয়েছেন বড় পর্দায়। ওপার ছাড়িয়ে এখন এপারে “চঞ্চল ম্যাজিক” গত কয়েকদিনে কামাল করেছে নন্দন চত্বর।
২৯ নভেম্বর থেকে বাংলাদেশের ৩৭টি সিনেমা নিয়ে নন্দনে শুরু হয়েছিল চতুর্থ বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসব, বুধবার যার শেষ দিন ছিল।
এছাড়া আজমেরী হক বাঁধনের রেহানা মরিয়ম নূর, জয়া আহসানের সাম্প্রতিক মুক্তিপ্রাপ্ত বিউটি সার্কাসসহ হৃদিতা, পরাণ, পায়ের তলায় মাটি নাই, পাপ পূণ্য, কালবেলা, চন্দ্রাবতী কথা, চিরঞ্জীব মুজিব, ন ডারাই, রাত জাগা ফুল, গলুই, গন্ডি ও বিশ্ব সুন্দরীর মত সিনেমাগুলোও এবারের চলচ্চিত্র উৎসবে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
এ প্রসঙ্গে চলচ্চিত্র নির্মাতা রঞ্জন ঘোষ সংবাদকে বলেন, “হাওয়ার হেড মাঝি চঞ্চল চৌদূরী অবশ্যই এই ক্রেজের পিছনে একটি ফ্যাক্টর। আমরা তাকে পর্দায় দেখতে ভালোবাসি কিন্তু খুব কমই তাকে বড় পর্দায় দেখতে পাই। এটা একটা সুযোগ। তবে আমি মনে করি ছবিটি নিজেও একটি উন্মাদনা তৈরি করেছে। হাওয়ার ট্রেলার, গান এবং সবকিছুই তাই সতেজ।
প্রকৃতপক্ষে, সাম্প্রতিক বাংলাদেশী বিষয়বস্তু আমাদের খুব গর্বিত করে তুলছে।”
সিনেমাপ্রেমী দর্শকরা বলছেন, সাম্প্রতিককালে কোন একটি নির্দিষ্ট ছবিকে ঘিরে এত উন্মাদনা দেখা যায়নি কলকাতায়। এমনিতেই হিন্দি ছবির দাপটে কার্যত অসহায় বাংলা ছবি। মাঝেমধ্যে যে দুই একটা ভালো মানের ছবি হয় না, তা নয়। কিন্তু হিন্দি ছবি দেখতে সিনেমা হল কিংবা মাল্টিপ্লেক্স গুলোতে সিনেমাপ্রেমী মানুষ যতটা ভিড় করে, তার শিকি ভাগও ভিড় করে না বাংলা ছবি দেখার জন্য। সেই মিথ কিছুটা হলেও ভেঙে দিয়েছে ‘হাওয়া’।
বৃহস্পতিবার, ০৩ নভেম্বর ২০২২
বাংলাদেশ চলচিত্র ঊৎসবের শেষদিনেও কলকাতা যেন ‘হাওয়া’য় ভাসছে। হাওয়ার দাপটে চঞ্চল কলকাতাবাসী। গত ২৯ অক্টোবর কলকাতায় যে ‘হাওয়া’ শুরু হয়েছিল, সেই ঝড় থামলো বুধবার (২ নভেম্বর)।
গত ৫ দিন ধরে কলকাতার নন্দন প্রেক্ষাগৃহে চতুর্থ বাংলাদেশি চলচ্চিত্র উৎসবের প্রধান আকর্ষণই ছিল এই ‘হাওয়া’ সিনেমাটি। মেজবাউর রহমান সুমনের এই ছবিতে মজেছে সিনেমাপ্রেমীরা। বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের দর্শকের মন জয়ের পর কলকাতাও মাতালো ছবিটি।
‘হাওয়া’র নির্ধারিত শেষ শো ছাড়াও নন্দনের ৯০০ আসন বিশিষ্ট হলে ‘হাওয়া’র একটি বিশেষ প্রদর্শণীর ব্যবস্থা করা হলেও উপচে পড়া ভিড় সামলাতে উপ-হাইকমিশন স্টাফ ও পুলিশকে রীতিমত হিমশিম খেতে হয়েছে। এই ভিড়, এই জনসমুদ্র এই উন্মাদনা স্তব্ধ হবে বৃহস্পতিবার, এটা যেন মেনে নিতে পারছেনা কলকাতা মহানগর বাসী।
‘হাওয়া’ দেখার সুযোগ না পেয়ে বুধবারও কয়েক হাজার দর্শককে ফিরে যেতে হয়েছে। ফিরে যাওয়া এরকম বেশ কয়েকজন জানান তাদের হতাশার কথা। কলকাতার বাশদ্রোনীর বাসিন্দা শ্রাবণী ব্যানার্জী, বউ-বাজারের তমাল মান্না, হাওড়ার সমীরন আইচ, কল্যানির রীতিকা সেন ও তমা সেন, নৈহাটির স্বপন দত্ত সংবাদকে জানান, তারা পাঁচ দিন চেষ্টা করেও হাওয়া দেখতে পারেননি। তারা বলেন, একটি সিনেমার জন্য এত ভিড়-চাহিদা তারা আগে কলকাতায় দেখিনি।
এ যেন ‘বেদের মেয়ে জোৎস্না’র চেয়েও খারাপ অবস্থা, ছিল ভিড়ের প্রচন্ডতা। শেষ দিন সকাল ১০টার ‘হাওয়া’র শো দেখার জন্য পশ্চিমবঙ্গের দূরদূরান্তের আসা বহু মানুষ ভোর ৪ টা থেকে লাইনে দাঁড়ায়। কিন্তু মাত্র ৯০০ দর্শক শো দেখতে সুযোগ পায়। যারা সকালের শো দেখতে পারেননি তারা এদিন আবার সন্ধ্যা ৬ টার নির্ধরিত প্রদর্শনী দেখার জন্য লাইনে দাঁড়ান। কিন্তু অনেকেই হলে ঢোকার সুযোগ পায়নি।
তারা চঞ্চল চৌধুরীর কাছে দাবি জানান, ‘হাওয়া’ সিনেমাটি কলকাতার বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে দেখানোর জন্য যেন তিনি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সাথে আ্যডভোকেসি করেন। তাদের দাবি, ‘আমরা সিনেমা হলে পয়সা দিয়ে হাওয়া দেখতে চাই।’
মোদ্দা কথা উৎসবের শেষ দিন হাওয়া দেখতে না পেয়ে দু’বেলায় চার থেকে পাঁচ হাজার দর্শককে ফিরে যেতে হয়েছে।
যারা হাওয়া দেখতে পেরেছেন বা যারা দেখতে পারননি তাদের সবার মুখে গাইতে শোনা যায় হাওয়ার হেড মাঝির গাওয়া গান ‘সাদা সাদা কালা কালা’ আর সংলাপ।
স্বাভাবিক ভাবেই ২৯ তারিখ থেকে দুই বাংলার সংবাদ মাধ্যম বারবার একই প্রশ্ন করেছে, “কী কও মাঝি?” মাঝি কী বলেছেন সে কথা শুনেছি সকলে। এই উন্মাদনা, এই ভালোবাসা পেয়ে চঞ্চল চৌধুরী আপ্লুত। তিনি অভিভূত, এমনকি তিনি কিছুটা অবাকও। বাড়ি পাবনার কামারহাট গ্রামে। বড় হয়েছেন পদ্মা থেকে হাঁটা দূরত্বের ঘরে। মঞ্চ কাঁপিয়ে রীতিমত তাক লাগিয়েছেন বড় পর্দায়। ওপার ছাড়িয়ে এখন এপারে “চঞ্চল ম্যাজিক” গত কয়েকদিনে কামাল করেছে নন্দন চত্বর।
২৯ নভেম্বর থেকে বাংলাদেশের ৩৭টি সিনেমা নিয়ে নন্দনে শুরু হয়েছিল চতুর্থ বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসব, বুধবার যার শেষ দিন ছিল।
এছাড়া আজমেরী হক বাঁধনের রেহানা মরিয়ম নূর, জয়া আহসানের সাম্প্রতিক মুক্তিপ্রাপ্ত বিউটি সার্কাসসহ হৃদিতা, পরাণ, পায়ের তলায় মাটি নাই, পাপ পূণ্য, কালবেলা, চন্দ্রাবতী কথা, চিরঞ্জীব মুজিব, ন ডারাই, রাত জাগা ফুল, গলুই, গন্ডি ও বিশ্ব সুন্দরীর মত সিনেমাগুলোও এবারের চলচ্চিত্র উৎসবে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
এ প্রসঙ্গে চলচ্চিত্র নির্মাতা রঞ্জন ঘোষ সংবাদকে বলেন, “হাওয়ার হেড মাঝি চঞ্চল চৌদূরী অবশ্যই এই ক্রেজের পিছনে একটি ফ্যাক্টর। আমরা তাকে পর্দায় দেখতে ভালোবাসি কিন্তু খুব কমই তাকে বড় পর্দায় দেখতে পাই। এটা একটা সুযোগ। তবে আমি মনে করি ছবিটি নিজেও একটি উন্মাদনা তৈরি করেছে। হাওয়ার ট্রেলার, গান এবং সবকিছুই তাই সতেজ।
প্রকৃতপক্ষে, সাম্প্রতিক বাংলাদেশী বিষয়বস্তু আমাদের খুব গর্বিত করে তুলছে।”
সিনেমাপ্রেমী দর্শকরা বলছেন, সাম্প্রতিককালে কোন একটি নির্দিষ্ট ছবিকে ঘিরে এত উন্মাদনা দেখা যায়নি কলকাতায়। এমনিতেই হিন্দি ছবির দাপটে কার্যত অসহায় বাংলা ছবি। মাঝেমধ্যে যে দুই একটা ভালো মানের ছবি হয় না, তা নয়। কিন্তু হিন্দি ছবি দেখতে সিনেমা হল কিংবা মাল্টিপ্লেক্স গুলোতে সিনেমাপ্রেমী মানুষ যতটা ভিড় করে, তার শিকি ভাগও ভিড় করে না বাংলা ছবি দেখার জন্য। সেই মিথ কিছুটা হলেও ভেঙে দিয়েছে ‘হাওয়া’।