দুই প্রেসিডেন্টের প্রশাসনে আট বছর ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। স্নায়ুযুদ্ধের সময়। রাশিয়া ও তার বলয়ের বিরুদ্ধে যত নীতি ও কৌশল, সবগুলোরই প্রণয়ন ও প্রয়োগ তার নেতৃত্বে।
সেসময়েই তিনি ভিয়েতনামের ওপর যুদ্ধ চাপিয়ে দেন। নিরপেক্ষ রাষ্ট্র কম্বোডিয়ার ওপর এক নাগাড়ে বোমা হামলা চালান চার বছর। প্রাণ হারায় অগণিত মানুষ।
তার নির্দেশেই ১৯৭১ সালে পাকিস্তানকে দেয়া হয়েছিল অবৈধ অস্ত্র, যা দিয়ে হত্যাযজ্ঞ চালানো হয় বাঙালির ওপর।
১৯৭৩-এ গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত চিলির আলেন্দে সরকারকে উৎখাতে সামরিক অভ্যুত্থান হয় তার মদদে। ১৯৭৫-এ পূর্ব তিমুরে আগ্রাসন চালাতে ইন্দোনেশিয়াকে লেলিয়ে দেন তিনিই। তার কাছ থেকে সাহস পেয়েই গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীলদের নিশ্চিহ্ন করতে ১৯৭৬-এ ‘ডার্টি ওয়ারের’ সূচনা করে আর্জেন্টিনার সামরিক একনায়ক।
সেসময় তার নীতির কারণেই আফ্রিকায় গৃহযুদ্ধ ছড়িয়ে যায়। অ্যাঙ্গোলার কথা এক্ষেত্রে বিশেষভাবে স্মরণযোগ্য।
এভাবে হন্তারক যত রাষ্ট্রশক্তি ও সংঘাতে তিনি সমর্থন, সহায়তা, প্রণোদনা ও পৃষ্ঠপোষকতা যুগিয়েছিলেন দায়িত্বের থাকার সময়, তাতে অযুতসংখ্যক মানুষ নিহত হয়েছে। ততোধিক ঘটনা ঘটেছে মানবাধিকার লঙ্ঘনের।
ইতিহাসের সেই বিতর্কিত চরিত্র, যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে সবচেয়ে আলোচিতদের একজন, যাকে হাফিংটন পোস্ট উল্লেখ করেছে সেদেশের সবচেয়ে কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী হিসেবে, সেই হেনরি কিসিঞ্জার মারা গেছেন। বুধবার। কানেকটিকাটের নিজ বাড়িতে। ওইদিন সন্ধ্যায় তার নিজস্ব পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে জানানো হয় এ সংবাদ। তবে মৃত্যুর কারণ নিয়ে বিশেষ কিছু জানায়নি তারা। ১০০ বছর বয়স পেয়েছেন। কিসিঞ্জার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন এবং প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ডের প্রশাসনে।
জীবদ্দশায় নিজের কোনো ভূমিকার জন্য কখনোই অনুশোচনা করেননি কিসিঞ্জার। আর সমালোচকদের বিষয়ে পরিহাসপরায়ণ একটা অভিব্যক্তি বজায় রাখতেন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত গণ্য হয়েছেন ওয়াশিংটনের রাজনীতিক মহলের অবিচ্ছেদ্য সভ্য হিসেবে।
২০১৬ সালে আর্জেন্টিনা সফরে গিয়ে প্রায় ক্ষমাপ্রার্থিতার সুরেই আর্জেন্টিনায় সংঘটিত নৃশংস ঘটনাগুলো পুনর্মূল্যায়নের গুরুত্বের কথা তুলে ধরেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। পরে তিনি দেশে ফিরে যাওয়ার পর সেসময়ের সরকারি নথিগুলো অবমুক্তও করা হয়েছিল। কিন্তু তার কিছুদিন পরই কিসিঞ্জারকে পেন্টাগনের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পদক সম্মানসূচক পাবলিক সার্ভিস অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত করে ওবামা প্রশাসন।
কিসিঞ্জারের ভূমিকা নিয়ে বিরচিত হয়েছে বহু বই, প্রামাণ্য ও প্রকাশনা। সেগুলোতে শুধু তার যুদ্ধাপরাধই নয়, মার্কিন সাম্রাজ্যের স্বার্থে বিশ্বব্যাপী সংঘাত ও হত্যার প্রেক্ষাপট তৈরিতে কিসিঞ্জারের পররাষ্ট্রনীতির দায়সমূহ প্রকাশ পেয়েছে। তারপরও তার অনেক প্রভাবের কথাই অনুল্লিখিত রয়ে গেছে সেগুলোতে।
তবে এসব সমালোচনা সত্ত্বেও তার ভূমিকাকে অর্জন হিসেবে দেখে যুক্তরাষ্ট্রের অনেকে। বিশেষ করে, চীনের সঙ্গে সম্পর্কের সূচনা এবং রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের জন্য তাকে কৃতিত্ব দেন তারা। তারা মনে করেন, এই ভূমিকাগুলো ব্যক্তিস্বার্থে নয়। বরং রাষ্ট্র হিসেবে আমেরিকার স্বার্থেই পালন করতে হয়েছে তাকে। এদের মধ্যে অনেকেরই বিশ্বাস, এগুলো না করলে অনাসৃষ্টি বরং আরও বেশি হতো। আবার কেউ কেউ মনে করেন, মার্কিন যুদ্ধ ব্যবস্থার অনিবার্য উৎপাদন এই কিসিঞ্জার।
তবে বাঙালি, আর্জেন্টাইন, কম্বোডীয়, চিলীয়, তিমুরসহ লাখ লাখ নিহত আত্মার পক্ষে যে তাকে এভাবে মূল্যায়ন সম্ভব হবে না তা খোলাখুলিভাবে উল্লেখ করা হয়েছে হাফিংটন পোস্টের নিবন্ধে।
আলফ্রেড কিসিঞ্জারের জন্ম ইহুদি পরিবারে। ১৯২৩-এ বাভারিয়ায়। নাৎসী নিপীড়নের মুখে ১৯৩৮-এ জার্মানি থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে আসে তার পরিবার।
জীবদ্দশায় সে বিষয় নিয়ে কখনো তেমন একটা আলাপ করতেন না তিনি। তবে তার মানসগঠনে সেই বিতাড়নের ঘটনার প্রভাব দেখেন ইতিহাসবিদরা। তাদের মতে, ওই কারণেই কিসিঞ্জার আজীবন অনিরাপত্তাবোধে তাড়িত ছিলেন। আতঙ্কে ভুগতেন। ভয় পেতেন সমালোচনাকে। একই কারণে অবস্থান নিতেন বিপ্লব ও বিশৃঙ্খলাকে দমানোর পক্ষে। প্রচার করতেন স্থিতিশীলতা ও ভারসাম্যের কথা।
কিসিঞ্জারের পড়াশোনা ছিল হাভার্ডে।
বৃহস্পতিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৩
দুই প্রেসিডেন্টের প্রশাসনে আট বছর ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। স্নায়ুযুদ্ধের সময়। রাশিয়া ও তার বলয়ের বিরুদ্ধে যত নীতি ও কৌশল, সবগুলোরই প্রণয়ন ও প্রয়োগ তার নেতৃত্বে।
সেসময়েই তিনি ভিয়েতনামের ওপর যুদ্ধ চাপিয়ে দেন। নিরপেক্ষ রাষ্ট্র কম্বোডিয়ার ওপর এক নাগাড়ে বোমা হামলা চালান চার বছর। প্রাণ হারায় অগণিত মানুষ।
তার নির্দেশেই ১৯৭১ সালে পাকিস্তানকে দেয়া হয়েছিল অবৈধ অস্ত্র, যা দিয়ে হত্যাযজ্ঞ চালানো হয় বাঙালির ওপর।
১৯৭৩-এ গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত চিলির আলেন্দে সরকারকে উৎখাতে সামরিক অভ্যুত্থান হয় তার মদদে। ১৯৭৫-এ পূর্ব তিমুরে আগ্রাসন চালাতে ইন্দোনেশিয়াকে লেলিয়ে দেন তিনিই। তার কাছ থেকে সাহস পেয়েই গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীলদের নিশ্চিহ্ন করতে ১৯৭৬-এ ‘ডার্টি ওয়ারের’ সূচনা করে আর্জেন্টিনার সামরিক একনায়ক।
সেসময় তার নীতির কারণেই আফ্রিকায় গৃহযুদ্ধ ছড়িয়ে যায়। অ্যাঙ্গোলার কথা এক্ষেত্রে বিশেষভাবে স্মরণযোগ্য।
এভাবে হন্তারক যত রাষ্ট্রশক্তি ও সংঘাতে তিনি সমর্থন, সহায়তা, প্রণোদনা ও পৃষ্ঠপোষকতা যুগিয়েছিলেন দায়িত্বের থাকার সময়, তাতে অযুতসংখ্যক মানুষ নিহত হয়েছে। ততোধিক ঘটনা ঘটেছে মানবাধিকার লঙ্ঘনের।
ইতিহাসের সেই বিতর্কিত চরিত্র, যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে সবচেয়ে আলোচিতদের একজন, যাকে হাফিংটন পোস্ট উল্লেখ করেছে সেদেশের সবচেয়ে কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী হিসেবে, সেই হেনরি কিসিঞ্জার মারা গেছেন। বুধবার। কানেকটিকাটের নিজ বাড়িতে। ওইদিন সন্ধ্যায় তার নিজস্ব পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে জানানো হয় এ সংবাদ। তবে মৃত্যুর কারণ নিয়ে বিশেষ কিছু জানায়নি তারা। ১০০ বছর বয়স পেয়েছেন। কিসিঞ্জার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন এবং প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ডের প্রশাসনে।
জীবদ্দশায় নিজের কোনো ভূমিকার জন্য কখনোই অনুশোচনা করেননি কিসিঞ্জার। আর সমালোচকদের বিষয়ে পরিহাসপরায়ণ একটা অভিব্যক্তি বজায় রাখতেন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত গণ্য হয়েছেন ওয়াশিংটনের রাজনীতিক মহলের অবিচ্ছেদ্য সভ্য হিসেবে।
২০১৬ সালে আর্জেন্টিনা সফরে গিয়ে প্রায় ক্ষমাপ্রার্থিতার সুরেই আর্জেন্টিনায় সংঘটিত নৃশংস ঘটনাগুলো পুনর্মূল্যায়নের গুরুত্বের কথা তুলে ধরেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। পরে তিনি দেশে ফিরে যাওয়ার পর সেসময়ের সরকারি নথিগুলো অবমুক্তও করা হয়েছিল। কিন্তু তার কিছুদিন পরই কিসিঞ্জারকে পেন্টাগনের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পদক সম্মানসূচক পাবলিক সার্ভিস অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত করে ওবামা প্রশাসন।
কিসিঞ্জারের ভূমিকা নিয়ে বিরচিত হয়েছে বহু বই, প্রামাণ্য ও প্রকাশনা। সেগুলোতে শুধু তার যুদ্ধাপরাধই নয়, মার্কিন সাম্রাজ্যের স্বার্থে বিশ্বব্যাপী সংঘাত ও হত্যার প্রেক্ষাপট তৈরিতে কিসিঞ্জারের পররাষ্ট্রনীতির দায়সমূহ প্রকাশ পেয়েছে। তারপরও তার অনেক প্রভাবের কথাই অনুল্লিখিত রয়ে গেছে সেগুলোতে।
তবে এসব সমালোচনা সত্ত্বেও তার ভূমিকাকে অর্জন হিসেবে দেখে যুক্তরাষ্ট্রের অনেকে। বিশেষ করে, চীনের সঙ্গে সম্পর্কের সূচনা এবং রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের জন্য তাকে কৃতিত্ব দেন তারা। তারা মনে করেন, এই ভূমিকাগুলো ব্যক্তিস্বার্থে নয়। বরং রাষ্ট্র হিসেবে আমেরিকার স্বার্থেই পালন করতে হয়েছে তাকে। এদের মধ্যে অনেকেরই বিশ্বাস, এগুলো না করলে অনাসৃষ্টি বরং আরও বেশি হতো। আবার কেউ কেউ মনে করেন, মার্কিন যুদ্ধ ব্যবস্থার অনিবার্য উৎপাদন এই কিসিঞ্জার।
তবে বাঙালি, আর্জেন্টাইন, কম্বোডীয়, চিলীয়, তিমুরসহ লাখ লাখ নিহত আত্মার পক্ষে যে তাকে এভাবে মূল্যায়ন সম্ভব হবে না তা খোলাখুলিভাবে উল্লেখ করা হয়েছে হাফিংটন পোস্টের নিবন্ধে।
আলফ্রেড কিসিঞ্জারের জন্ম ইহুদি পরিবারে। ১৯২৩-এ বাভারিয়ায়। নাৎসী নিপীড়নের মুখে ১৯৩৮-এ জার্মানি থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে আসে তার পরিবার।
জীবদ্দশায় সে বিষয় নিয়ে কখনো তেমন একটা আলাপ করতেন না তিনি। তবে তার মানসগঠনে সেই বিতাড়নের ঘটনার প্রভাব দেখেন ইতিহাসবিদরা। তাদের মতে, ওই কারণেই কিসিঞ্জার আজীবন অনিরাপত্তাবোধে তাড়িত ছিলেন। আতঙ্কে ভুগতেন। ভয় পেতেন সমালোচনাকে। একই কারণে অবস্থান নিতেন বিপ্লব ও বিশৃঙ্খলাকে দমানোর পক্ষে। প্রচার করতেন স্থিতিশীলতা ও ভারসাম্যের কথা।
কিসিঞ্জারের পড়াশোনা ছিল হাভার্ডে।