alt

আন্তর্জাতিক

ভারত-পাকিস্তান ড্রোন যুদ্ধ

দক্ষিণ এশিয়ায় সংঘাতের নতুন অধ্যায়

বিদেশী সংবাদ মাধ্যম : রোববার, ১১ মে ২০২৫

প্রথম বারের মতো ড্রোন যুদ্ধে জড়াল দক্ষিণ এশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্রধারী দুই প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তান। বৃহস্পতিবার রাতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর ও পাঞ্জাবের তিনটি সামরিক স্থাপনায় ড্রোন হামলার অভিযোগ তোলে নয়াদিল্লি। ইসলামাবাদ সে অভিযোগ অস্বীকার করে পালটা দাবি করে বসে, তারা কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ভারতের প্রায় ২৫টি ড্রোন ভূপাতিত করেছে। দিল্লি অবশ্য এ বিষয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলেনি।

বিশেষজ্ঞদের বরাতে এক খবরে বলা হয়, ইট মারলে পাটকেল ছোড়ার প্রবণতা কয়েক দশকের পুরোনো বিরোধকে নতুন একটা স্তরে নিয়ে গেছে, যেটা খুবই ভয়াবহ। যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইউএস নাভাল ওয়ার কলেজের’ অধ্যাপক জাহারা মতিসেক বলেন, ইন্দো-পাক সংঘাত ড্রোন যুগে প্রবেশ করছে। ‘অদৃশ্য চোখ’ আর চালকবিহীন এসব হামলা অস্থিরতা বাড়াতেও পারে, কমাতেও পারে। ফলে দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ভরা আকাশসামীয় যে পক্ষ ড্রোন যুদ্ধের নিয়ন্ত্রণ নেবে, তারা শুধু নিজেদের যুদ্ধক্ষেত্রেই আটকে থাকবে না, বরং এ আকাশসীমা নতুন করে গড়ে তুলবে, বলেন তিনি।

ইসলামাবাদ বলছে, বুধবার সকাল থেকে ভারতের বিমান ও বন্দুক হামলায় পাকিস্তান ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ৩৬ জন নিহত হয়। আহত হয়েছে ৫৭ জনের বেশি। অন্যদিকে ভারতের সামরিক বাহিনীর দাবি, পাকিস্তানের গোলায় তাদের বেসামরিক ১৬ ব্যক্তির প্রাণ গেছে। ভারত বলছে, গত মাসে পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর হামলার ‘প্রতিশোধ’ নিতে তারা মঙ্গলবার রাতে পাকিস্তান ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ‘জঙ্গিদের আস্তানায়’ হামলা চালায়। নয়াদিল্লির অভিযোগ, পেহেলগামের হামলায় পাকিস্তানের হাত রয়েছে, যদিও ইসলামাবাদ তা স্বীকার করেনি।

বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী ঘোষণা দেয়, করাচি, লাহোর ও রাওয়ালপিন্ডিসহ বেশ কয়েকটি শহরে তারা ভারতের ২৫টি ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করেছে। বলা হচ্ছে, ইসরায়েলের বানানো ‘হারোপ’ নামের এসব ড্রোন ধ্বংস করতে অস্ত্রের পাশাপাশি প্রযুক্তিগত নানা প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ব্যবহার করা হয়েছে। ভারতের দাবি, তারা লাহোরের একটিসহ পাকিস্তানের বিমান প্রতিরক্ষার কয়েকটি রাডার ও কিছু ব্যবস্থা নিষ্ক্রিয় করে দিয়েছে, যা ইসলামাবাদ স্বীকার করেনি।

আধুনিক যুদ্ধক্ষেত্রে লেজার-চালিত ক্ষেপণাস্ত্র, বোমা, ড্রোন ও মানুষবিহীর আকাশযান গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে, যা সামরিক অভিযানের নিশানাকে আরো নির্ভুল ও কার্যকরী করছে। এসব প্রযুক্তি বিমান হামলার সমন্বয়ে ভূমিকা রাখছে। প্রস্তুত থাকলে লেজারচালিত প্রযুক্তি সরাসরি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার মাধ্যমে তৎক্ষণাৎ যুদ্ধে সহায়তা করতে পারে। ড্রোনগুলো প্রতিপক্ষকে বিভ্রান্ত করতে বা তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ফাঁকি দিতে ব্যবহার করা যায়। এগুলো শত্রুপক্ষের আকাশে ঢুকে পড়ে তাদের রাডার চালু করাতে পারে, যেগুলোয় পরে অন্য ড্রোন বা ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালানো যায়।

অধ্যাপক মতিসেক বলেন, ইউক্রেন ও রাশিয়া তাদের মধ্যকার যুদ্ধে এগুলোই করছে। দুই ধরনের ভূমিকা- নিশানা করা ও সক্রিয় করা-ড্রোনকে করে তুলেছে প্রতিপক্ষের বিমান ব্যবস্থাকে ফাঁকি দেওয়ার কার্যকর এক প্রযুক্তি। এখানে মানুষচালিত উড়োজাহাজ পাঠানোর মতো ঝুঁকি নিতে হয় না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতের ড্রোনের বহরে ইসরায়েলি প্রযুক্তির আধিপত্যই বেশি। যেমন আইএআই ও হেরুন। হারপি ও হারোপ নামের ড্রোনও আছে, যেগুলো নিজেরাই ক্ষেপণাস্ত্রের মতো কাজ করে। এসব ড্রোন স্বয়ংক্রিয়ভাবে লক্ষ্যবস্তু খুঁজে বের করে তাতে আঘাতও হানতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যুদ্ধক্ষেত্রে ড্রোনের ব্যবহারে যে মনোযোগ বাড়ছে, হারোপ তার একটি উদাহরণ।

হেরন ড্রোনটিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘ভারতের চোখ’। এ ড্রোন দিয়ে যে কোনো সময় নজরদারি চালানোর পাশাপাশি যুদ্ধেও ব্যবহার করা যায়। আইএআই সার্চার এমকে-দুই ড্রোনটি তৈরি হয়েছে যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য। এটি একটানা ১৮ ঘণ্টা আকাশে থাকতে পারে; যেতে পারে ৩০০ কিলোমিটার পর্যন্ত। উড়তে পারে ৭ হাজার মিটার (২৩,০০০ ফুট) উঁচুতেও। অনেকেই মনে করেন, যুদ্ধে ব্যবহারের মতো ড্রোন ভারতের হাতে খুব বেশি নেই। তবে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৪০০ কোটি ডলারে ৩১টি ‘এমকিউ-নাইনবি প্রিডেটর’ ড্রোন কেনার চুক্তি করেছে ভারত। এসব ড্রোন হাতে পেলে ভারতের হামলার সক্ষমতা অনেক বেড়ে যাবে।

এসব ড্রোন টানা ৪০ ঘণ্টা পর্যন্ত উড়তে সক্ষম। উড়তে পারে ৪০ হাজার ফুট উঁচুতেও।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারত এখন ‘সোয়ার্ম ড্রোন’ কৌশলেও গুরুত্ব দিয়েছে। এ ধরনের ব্যবস্থায় অসংখ্য ছোট ছোট ড্রোন একসঙ্গে পাঠিয়ে শত্রুর আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে দুর্বল করে দিতে পারে। লাহোরভিত্তিক সামরিক বিশ্লেষক ইজাজ হায়দার বলেন, পাকিস্তানের ড্রোনের বহর ‘অনেক বড় ও বৈচিত্র্যময়’, যেখানে নিজেদের পাশাপাশি আমদানি করা প্রযুক্তিও আছে। তিনি বলেন, হাজারের বেশি ড্রোন রয়েছে, যেখানে চীন ও তুরস্কের পাশাপাশি স্থানীয় মডেল রয়েছে।

এগুলোর মধ্যে চীনের ‘সিএইচ-ফোর’, তুরস্কের ‘বেয়রাকতার আকিনসি’ ও পাকিস্তানের নিজস্ব মডেল ‘বুরাক’ ও ‘শাহপার’ উল্লেখযোগ্য। এর বাইরে পাকিস্তান দলোইটারিং মিউনিশন দাঁড় করিয়েছে, যা তাদের ড্রোন হামলার সক্ষমতা বাড়িয়েছে। হায়দার বলেন, ‘পাকিস্তানের বিমান বাহিনী (পিএএফ) সামরিক অভিযানে প্রায় এক বছর ধরে মানুষবিহীন ব্যবস্থা প্রয়োগ করছে। তারা ‘লয়্যাল উইংম্যান’ ড্রোনে বিশেষ মনোযোগ দিচ্ছে, যেগুলো মানুষচালিত উড়োজাহাজের সঙ্গে সমন্বয় করে ব্যবহার করা হবে। অধ্যাপক মতিসেক বলেন, ইসরায়েলের প্রযুক্তিগত সহায়তা এবং তাদের হারোপ ও হেরন ড্রোন ভারতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

অন্যদিকে তুর্কি ও চীনের ওপর পাকিস্তানের নির্ভরশীলতা চলমান অস্ত্রের মহড়াকেও সামনে আনছে। ড্রোনের ব্যবহারকে এক অর্থে ‘সংযত’ পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন ভারতীয় সামরিক বিশ্লেষক মনোজ যোশি। তিনি বলেন, যুদ্ধবিমান ও কিংবা ভারী ক্ষেপণাস্ত্রের পরিবর্তে (চলমান) সংঘাতে ড্রোন মোতায়েন করাটা তুলনামূলক ছোটখাটো সামরিক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা যেতে পারে। মানুষচালিত যুদ্ধবিমানের চেয়ে ড্রোনে অস্ত্রশস্ত্র কম থাকে। সুতরাং এক অর্থে দেখতে গেলে এটা ‘সংযত’ একটা পদক্ষেপ। ইজাজ হায়দারের বিশ্বাস, জম্মুতে পাকিস্তানি ড্রোনের সাম্প্রতিক তৎপরতা ভারতের ‘উসকানির’ একটা কৌশলগত জবাব, এটা সর্বাত্মক কোনো প্রতিশোধ নয়। অন্যদিকে যোশি মনে করেন, আমরা যে ড্রোনের লড়াই দেখছি, সেটা সম্ভবত খুব বেশি দিন চলবে না। এটা উসকানি হতে পারে, আবার সংযত হওয়ার ইঙ্গিতও হতে পারে।

ছবি

আমরা প্রতিদ্বন্দ্বী নই বরং অংশীদার, ভারত প্রসঙ্গে চীন

রুশ হামলায় কিয়েভ অঞ্চলে নিহত ১০

ছবি

ক্ষয়ক্ষতির মূল্যায়ন চলছে, পরমাণু কর্মসূচি শিগগিরই চালু করবে ইরান

ত্রাণ নিতে গিয়ে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে প্রাণ গেল ২১ ফিলিস্তিনির

ইসরায়েলের ক্রমবর্ধমান আগ্রাসনই আঞ্চলিক সঙ্কটের জন্য দায়ী: কাতার

ছবি

নজিরবিহীন লগ্নে বিশ্ব, সেটাও ছাপিয়ে যেতে পারে

ছবি

কংগ্রেস ছাড়াই ইরানে হামলা: প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা কি যথাযথভাবে প্রয়োগ হয়েছে?

ছবি

মধ্যপ্রাচ্যে যেসব দেশে আছে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি

কাতারে মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানের হামলার পর যুদ্ধ থামানোর বার্তা ট্রাম্পের

ছবি

কাতার-ইরাকের মার্কিন ঘাঁটিতে হামলার পর ভ্রমণ বিঘ্নিত, মাস্কাটে অবতরণ বিমানের

ছবি

ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি ঘোষণা ট্রাম্পের: কত ঘণ্টায় কীভাবে কার্যকর

ছবি

যুদ্ধবিরতি শুরু হয়েছে: নিশ্চিত করছে ইসরায়েল ও ইরানের গণমাধ্যম

ছবি

যুদ্ধবিরতি এখন কার্যকর, কেউ লঙ্ঘন করবেন না: ট্রাম্প

ছবি

যুদ্ধবিরতির পথে ইরান-ইসরায়েল, নিশ্চিত নয় তেলআবিব

কাতার ও ইরাকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ইরানের, বিস্ফোরণের শব্দ

ছবি

১১ দিনের ইসরায়েলি হামলায় ইরানে প্রায় ৫০০ জন নিহত

ছবি

কাতারে নিরাপত্তা সতর্কতা জারি, আল উদেইদ ঘাঁটিতে নজরদারি বৃদ্ধি

সিরিয়ায় মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে হামলা

ছবি

ইরানে হামলার প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ

ইরানের ‘গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোতে’ ব্যাপক হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল

ছবি

ইরানের জনগণকে সাহায্য করতে প্রস্তুত রাশিয়া

ইসরায়েল যখন আমাদের ধরতে আসবে তখন আর কেউ অবশিষ্ট থাকবে না

ছবি

পূর্বসূরিরা যে যুদ্ধ এড়িয়ে গেছেন, তাতে জড়িয়ে কোন খেলা খেললেন ট্রাম্প

ছবি

পারমাণবিক স্থাপনায় হামলায় ক্ষয়ক্ষতি, পাল্টা হামলার পরিধি বাড়ানোর ঘোষণা তেহরানের

ছবি

ইরান মিশন শেষে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরল বি-২ বোমারু বিমান

ছবি

সিরিয়ার গির্জায় আত্মঘাতী বোমা হামলা, নিহত ২০

ছবি

ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলা

ছবি

ট্রাম্পের নির্দেশে ইরানে হামলা, জাতিসংঘসহ বিশ্বনেতাদের উদ্বেগ

মার্কিন হামলায় ইরানের পারমাণবিক তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা বাড়েনি : আইএইএ

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের হামলার জবাব যেভাবে দিতে পারে ইরান

যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় সংঘাতের তীব্রতা বাড়ার শঙ্কা জাতিসংঘের

ছবি

পাল্টাপাল্টি হামলা চলছে, আলোচনায় অগ্রগতি নেই

ইসরায়েলজুড়ে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা

ছবি

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন হামলার বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়া

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর ইসরায়েলের ১০ এলাকায় ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, আহত ১৬

ছবি

আগেই খালি হয়েছিল ফোরদো, স্যাটেলাইট ছবিতে প্রমাণ

tab

আন্তর্জাতিক

ভারত-পাকিস্তান ড্রোন যুদ্ধ

দক্ষিণ এশিয়ায় সংঘাতের নতুন অধ্যায়

বিদেশী সংবাদ মাধ্যম

রোববার, ১১ মে ২০২৫

প্রথম বারের মতো ড্রোন যুদ্ধে জড়াল দক্ষিণ এশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্রধারী দুই প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তান। বৃহস্পতিবার রাতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর ও পাঞ্জাবের তিনটি সামরিক স্থাপনায় ড্রোন হামলার অভিযোগ তোলে নয়াদিল্লি। ইসলামাবাদ সে অভিযোগ অস্বীকার করে পালটা দাবি করে বসে, তারা কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ভারতের প্রায় ২৫টি ড্রোন ভূপাতিত করেছে। দিল্লি অবশ্য এ বিষয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলেনি।

বিশেষজ্ঞদের বরাতে এক খবরে বলা হয়, ইট মারলে পাটকেল ছোড়ার প্রবণতা কয়েক দশকের পুরোনো বিরোধকে নতুন একটা স্তরে নিয়ে গেছে, যেটা খুবই ভয়াবহ। যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইউএস নাভাল ওয়ার কলেজের’ অধ্যাপক জাহারা মতিসেক বলেন, ইন্দো-পাক সংঘাত ড্রোন যুগে প্রবেশ করছে। ‘অদৃশ্য চোখ’ আর চালকবিহীন এসব হামলা অস্থিরতা বাড়াতেও পারে, কমাতেও পারে। ফলে দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ভরা আকাশসামীয় যে পক্ষ ড্রোন যুদ্ধের নিয়ন্ত্রণ নেবে, তারা শুধু নিজেদের যুদ্ধক্ষেত্রেই আটকে থাকবে না, বরং এ আকাশসীমা নতুন করে গড়ে তুলবে, বলেন তিনি।

ইসলামাবাদ বলছে, বুধবার সকাল থেকে ভারতের বিমান ও বন্দুক হামলায় পাকিস্তান ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ৩৬ জন নিহত হয়। আহত হয়েছে ৫৭ জনের বেশি। অন্যদিকে ভারতের সামরিক বাহিনীর দাবি, পাকিস্তানের গোলায় তাদের বেসামরিক ১৬ ব্যক্তির প্রাণ গেছে। ভারত বলছে, গত মাসে পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর হামলার ‘প্রতিশোধ’ নিতে তারা মঙ্গলবার রাতে পাকিস্তান ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ‘জঙ্গিদের আস্তানায়’ হামলা চালায়। নয়াদিল্লির অভিযোগ, পেহেলগামের হামলায় পাকিস্তানের হাত রয়েছে, যদিও ইসলামাবাদ তা স্বীকার করেনি।

বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী ঘোষণা দেয়, করাচি, লাহোর ও রাওয়ালপিন্ডিসহ বেশ কয়েকটি শহরে তারা ভারতের ২৫টি ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করেছে। বলা হচ্ছে, ইসরায়েলের বানানো ‘হারোপ’ নামের এসব ড্রোন ধ্বংস করতে অস্ত্রের পাশাপাশি প্রযুক্তিগত নানা প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ব্যবহার করা হয়েছে। ভারতের দাবি, তারা লাহোরের একটিসহ পাকিস্তানের বিমান প্রতিরক্ষার কয়েকটি রাডার ও কিছু ব্যবস্থা নিষ্ক্রিয় করে দিয়েছে, যা ইসলামাবাদ স্বীকার করেনি।

আধুনিক যুদ্ধক্ষেত্রে লেজার-চালিত ক্ষেপণাস্ত্র, বোমা, ড্রোন ও মানুষবিহীর আকাশযান গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে, যা সামরিক অভিযানের নিশানাকে আরো নির্ভুল ও কার্যকরী করছে। এসব প্রযুক্তি বিমান হামলার সমন্বয়ে ভূমিকা রাখছে। প্রস্তুত থাকলে লেজারচালিত প্রযুক্তি সরাসরি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার মাধ্যমে তৎক্ষণাৎ যুদ্ধে সহায়তা করতে পারে। ড্রোনগুলো প্রতিপক্ষকে বিভ্রান্ত করতে বা তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ফাঁকি দিতে ব্যবহার করা যায়। এগুলো শত্রুপক্ষের আকাশে ঢুকে পড়ে তাদের রাডার চালু করাতে পারে, যেগুলোয় পরে অন্য ড্রোন বা ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালানো যায়।

অধ্যাপক মতিসেক বলেন, ইউক্রেন ও রাশিয়া তাদের মধ্যকার যুদ্ধে এগুলোই করছে। দুই ধরনের ভূমিকা- নিশানা করা ও সক্রিয় করা-ড্রোনকে করে তুলেছে প্রতিপক্ষের বিমান ব্যবস্থাকে ফাঁকি দেওয়ার কার্যকর এক প্রযুক্তি। এখানে মানুষচালিত উড়োজাহাজ পাঠানোর মতো ঝুঁকি নিতে হয় না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতের ড্রোনের বহরে ইসরায়েলি প্রযুক্তির আধিপত্যই বেশি। যেমন আইএআই ও হেরুন। হারপি ও হারোপ নামের ড্রোনও আছে, যেগুলো নিজেরাই ক্ষেপণাস্ত্রের মতো কাজ করে। এসব ড্রোন স্বয়ংক্রিয়ভাবে লক্ষ্যবস্তু খুঁজে বের করে তাতে আঘাতও হানতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যুদ্ধক্ষেত্রে ড্রোনের ব্যবহারে যে মনোযোগ বাড়ছে, হারোপ তার একটি উদাহরণ।

হেরন ড্রোনটিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘ভারতের চোখ’। এ ড্রোন দিয়ে যে কোনো সময় নজরদারি চালানোর পাশাপাশি যুদ্ধেও ব্যবহার করা যায়। আইএআই সার্চার এমকে-দুই ড্রোনটি তৈরি হয়েছে যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য। এটি একটানা ১৮ ঘণ্টা আকাশে থাকতে পারে; যেতে পারে ৩০০ কিলোমিটার পর্যন্ত। উড়তে পারে ৭ হাজার মিটার (২৩,০০০ ফুট) উঁচুতেও। অনেকেই মনে করেন, যুদ্ধে ব্যবহারের মতো ড্রোন ভারতের হাতে খুব বেশি নেই। তবে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৪০০ কোটি ডলারে ৩১টি ‘এমকিউ-নাইনবি প্রিডেটর’ ড্রোন কেনার চুক্তি করেছে ভারত। এসব ড্রোন হাতে পেলে ভারতের হামলার সক্ষমতা অনেক বেড়ে যাবে।

এসব ড্রোন টানা ৪০ ঘণ্টা পর্যন্ত উড়তে সক্ষম। উড়তে পারে ৪০ হাজার ফুট উঁচুতেও।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারত এখন ‘সোয়ার্ম ড্রোন’ কৌশলেও গুরুত্ব দিয়েছে। এ ধরনের ব্যবস্থায় অসংখ্য ছোট ছোট ড্রোন একসঙ্গে পাঠিয়ে শত্রুর আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে দুর্বল করে দিতে পারে। লাহোরভিত্তিক সামরিক বিশ্লেষক ইজাজ হায়দার বলেন, পাকিস্তানের ড্রোনের বহর ‘অনেক বড় ও বৈচিত্র্যময়’, যেখানে নিজেদের পাশাপাশি আমদানি করা প্রযুক্তিও আছে। তিনি বলেন, হাজারের বেশি ড্রোন রয়েছে, যেখানে চীন ও তুরস্কের পাশাপাশি স্থানীয় মডেল রয়েছে।

এগুলোর মধ্যে চীনের ‘সিএইচ-ফোর’, তুরস্কের ‘বেয়রাকতার আকিনসি’ ও পাকিস্তানের নিজস্ব মডেল ‘বুরাক’ ও ‘শাহপার’ উল্লেখযোগ্য। এর বাইরে পাকিস্তান দলোইটারিং মিউনিশন দাঁড় করিয়েছে, যা তাদের ড্রোন হামলার সক্ষমতা বাড়িয়েছে। হায়দার বলেন, ‘পাকিস্তানের বিমান বাহিনী (পিএএফ) সামরিক অভিযানে প্রায় এক বছর ধরে মানুষবিহীন ব্যবস্থা প্রয়োগ করছে। তারা ‘লয়্যাল উইংম্যান’ ড্রোনে বিশেষ মনোযোগ দিচ্ছে, যেগুলো মানুষচালিত উড়োজাহাজের সঙ্গে সমন্বয় করে ব্যবহার করা হবে। অধ্যাপক মতিসেক বলেন, ইসরায়েলের প্রযুক্তিগত সহায়তা এবং তাদের হারোপ ও হেরন ড্রোন ভারতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

অন্যদিকে তুর্কি ও চীনের ওপর পাকিস্তানের নির্ভরশীলতা চলমান অস্ত্রের মহড়াকেও সামনে আনছে। ড্রোনের ব্যবহারকে এক অর্থে ‘সংযত’ পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন ভারতীয় সামরিক বিশ্লেষক মনোজ যোশি। তিনি বলেন, যুদ্ধবিমান ও কিংবা ভারী ক্ষেপণাস্ত্রের পরিবর্তে (চলমান) সংঘাতে ড্রোন মোতায়েন করাটা তুলনামূলক ছোটখাটো সামরিক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা যেতে পারে। মানুষচালিত যুদ্ধবিমানের চেয়ে ড্রোনে অস্ত্রশস্ত্র কম থাকে। সুতরাং এক অর্থে দেখতে গেলে এটা ‘সংযত’ একটা পদক্ষেপ। ইজাজ হায়দারের বিশ্বাস, জম্মুতে পাকিস্তানি ড্রোনের সাম্প্রতিক তৎপরতা ভারতের ‘উসকানির’ একটা কৌশলগত জবাব, এটা সর্বাত্মক কোনো প্রতিশোধ নয়। অন্যদিকে যোশি মনে করেন, আমরা যে ড্রোনের লড়াই দেখছি, সেটা সম্ভবত খুব বেশি দিন চলবে না। এটা উসকানি হতে পারে, আবার সংযত হওয়ার ইঙ্গিতও হতে পারে।

back to top