ইরানের রাজধানী তেহরানে মিসাইল হামলার পর ধোঁয়ার কুণ্ডলী
ইরানে ইসরায়েলের টানা ১১ দিনের বিমান হামলায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০০ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন এই তথ্য প্রকাশ করে জানায়, আহত হয়েছেন আরও তিন হাজারের বেশি মানুষ। তবে ইরানি মানবাধিকার সংস্থা ‘হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্টস ইন ইরান’ দাবি করেছে, নিহতের প্রকৃত সংখ্যা এ সংখ্যার প্রায় দ্বিগুণ।
গত ১৩ জুন ইসরায়েলের হামলা শুরুর পর পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল আকার ধারণ করেছে। সোমবার,(২৩ জুন ২০২৫) ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ আলী খামেনির এক্স-এ হুঁশিয়ারিমূলক পোস্টের কয়েক ঘণ্টা পর ইরান ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। এই পাল্টা জবাবে ইসরায়েল আবারও তেহরানে সামরিক লক্ষ্যে বিমান হামলা চালায়। উত্তর তেহরানের বিভিন্ন এলাকায় বিস্ফোরণ ও ধোঁয়ার কু-লী দেখা গেছে। এর ফলে রাজধানীর কিছু অংশে বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দিয়েছে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী দাবি করেছে, সর্বশেষ তারা ইরানের ছয়টি বিমানবন্দরে হামলা চালিয়ে ১৫টি যুদ্ধবিমান ধ্বংস করেছে। ধ্বংস হওয়া বিমানের মধ্যে রয়েছে এফ-১৫, এফ-৫, একটি রিফুয়েলিং প্লেন ও একটি এএইচ-১ কোবরা অ্যাটাক হেলিকপ্টার। ড্রোনের মাধ্যমে পরিচালিত এই হামলায় রানওয়ে ও ভূগর্ভস্থ বাংকারও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তেহরানে অবস্থিত এভিন কারাগার ও বাসিজ মিলিশিয়া সদর দপ্তরও ইসরায়েলের লক্ষ্যবস্তু হয়। ফার্স সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, এভিন কারাগারের প্রবেশপথে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তবে পালানোর কোনো ঘটনা ঘটেনি।
ইসরায়েলি বাহিনী ইরানের ফোর্দো পারমাণবিক কেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছে আইডিএফ। জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষণ সংস্থার প্রধান রাফায়েল গ্রোসি জানিয়েছেন, ফোর্দো সাইটে ‘গুরুতর ক্ষতি’ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, যদিও এখনও তা পরিমাপ করা সম্ভব হয়নি। তিনি যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন যেন আন্তর্জাতিক পরিদর্শকরা কেন্দ্রটি ঘুরে দেখতে পারেন।
এই হামলার মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ইরানে ‘শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের’ সম্ভাবনার কথা বলেছেন।
তিনি বলেছেন, ‘যদি ইরানের বর্তমান সরকার দেশের ভালো করতে না পারে, তাহলে শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন হবে না কেন?’
এছাড়া তিনি দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জাতিসংঘে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানান, অন্যদিকে ইরানের পক্ষ থেকে এই মন্তব্যের নিন্দা জানানো হয়েছে।
এদিকে বিশ্বের বিভিন্ন শহরে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ হয়েছে। আর ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হামলার পর বিশ্বজুড়ে মার্কিন নাগরিকদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। মূলত ইরানে হামলার প্রতিক্রিয়ায় সম্ভাব্য প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ এবং প্রতিবাদ আন্দোলনের আশঙ্কায় জারি করা হয়েছে।
এদিকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মস্কো রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।
ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনা এখন পূর্ণাঙ্গ সংঘাতে পরিণত হওয়ার দ্বারপ্রান্তে। উভয়পক্ষই একে অপরকে ‘শাস্তি দেয়ার’ হুমকি দিয়ে লাগাতার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। হরমুজ প্রণালিতে জাহাজ চলাচল বন্ধ হওয়ার আশঙ্কায় বৈশ্বিক জ্বালানি বাজারে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে।
এই যুদ্ধের ছায়া শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, ইতোমধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। পরমাণু নিরাপত্তা, জ্বালানি সরবরাহ ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছে। বিশ্ব এখন অপেক্ষায় এ সংঘাত কবে এবং কীভাবে থামবে?
হরমুজ প্রণালি বন্ধের সিদ্ধান্তে বাধা দেয়ার জন্য চীনকে আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের
পারস্য উপসাগরের মুখে অবস্থিত গুরুত্বপূর্ণ তেল পরিবহনের পথ হরমুজ প্রণালি বন্ধ করার বিষয়ে ইরান যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাতে বাধা দেয়ার জন্য চীনকে আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও।
বিশ্বের প্রায় এক-চতুর্থাংশ তেল ও গ্যাস এই পথ দিয়ে পরিবাহিত হয়।
ইরানি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে বলা হয়েছে, ইরানের পার্লামেন্ট হরমুজ প্রণালি বন্ধের একটি প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে মার্কো রুবিও ফক্স নিউজে বলেছেন, ‘আমি বেইজিংয়ে চীনা সরকারকে বলব, তারা যেন এ বিষয়ে ইরানকে ফোন করে, কারণ চীন এই প্রণালি দিয়ে বিপুল পরিমাণে তেল আমদানি করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যদি ইরান এমনটা করে, তাহলে সেটা হবে আরেকটি ভয়ানক ভুল। এটি তাদের জন্য অর্থনৈতিক আত্মহত্যার শামিল হবে।’
এই পথ বন্ধ হলে বিশ্ব অর্থনীতিতে ভয়াবহ প্রভাব পড়বে, তেলের দাম বেড়ে যাবে এবং চীন, ভারত ও জাপানের মতো বড় আমদানিকারক দেশগুলো চরম ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, হরমুজ প্রণালি বন্ধের ক্ষমতা মূলত ইরানের নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর হাতে, পার্লামেন্টের হাতে নয়।
তাছাড়া, ইরানের নিজের তেল রপ্তানিও এই পথের ওপর নির্ভরশীল, তাই এটি বন্ধ করা ইরানের জন্যই মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিশোধ হতে পারে।
ইরানের রাজধানী তেহরানে মিসাইল হামলার পর ধোঁয়ার কুণ্ডলী
সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫
ইরানে ইসরায়েলের টানা ১১ দিনের বিমান হামলায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০০ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন এই তথ্য প্রকাশ করে জানায়, আহত হয়েছেন আরও তিন হাজারের বেশি মানুষ। তবে ইরানি মানবাধিকার সংস্থা ‘হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্টস ইন ইরান’ দাবি করেছে, নিহতের প্রকৃত সংখ্যা এ সংখ্যার প্রায় দ্বিগুণ।
গত ১৩ জুন ইসরায়েলের হামলা শুরুর পর পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল আকার ধারণ করেছে। সোমবার,(২৩ জুন ২০২৫) ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ আলী খামেনির এক্স-এ হুঁশিয়ারিমূলক পোস্টের কয়েক ঘণ্টা পর ইরান ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। এই পাল্টা জবাবে ইসরায়েল আবারও তেহরানে সামরিক লক্ষ্যে বিমান হামলা চালায়। উত্তর তেহরানের বিভিন্ন এলাকায় বিস্ফোরণ ও ধোঁয়ার কু-লী দেখা গেছে। এর ফলে রাজধানীর কিছু অংশে বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দিয়েছে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী দাবি করেছে, সর্বশেষ তারা ইরানের ছয়টি বিমানবন্দরে হামলা চালিয়ে ১৫টি যুদ্ধবিমান ধ্বংস করেছে। ধ্বংস হওয়া বিমানের মধ্যে রয়েছে এফ-১৫, এফ-৫, একটি রিফুয়েলিং প্লেন ও একটি এএইচ-১ কোবরা অ্যাটাক হেলিকপ্টার। ড্রোনের মাধ্যমে পরিচালিত এই হামলায় রানওয়ে ও ভূগর্ভস্থ বাংকারও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তেহরানে অবস্থিত এভিন কারাগার ও বাসিজ মিলিশিয়া সদর দপ্তরও ইসরায়েলের লক্ষ্যবস্তু হয়। ফার্স সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, এভিন কারাগারের প্রবেশপথে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তবে পালানোর কোনো ঘটনা ঘটেনি।
ইসরায়েলি বাহিনী ইরানের ফোর্দো পারমাণবিক কেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছে আইডিএফ। জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষণ সংস্থার প্রধান রাফায়েল গ্রোসি জানিয়েছেন, ফোর্দো সাইটে ‘গুরুতর ক্ষতি’ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, যদিও এখনও তা পরিমাপ করা সম্ভব হয়নি। তিনি যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন যেন আন্তর্জাতিক পরিদর্শকরা কেন্দ্রটি ঘুরে দেখতে পারেন।
এই হামলার মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ইরানে ‘শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের’ সম্ভাবনার কথা বলেছেন।
তিনি বলেছেন, ‘যদি ইরানের বর্তমান সরকার দেশের ভালো করতে না পারে, তাহলে শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন হবে না কেন?’
এছাড়া তিনি দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জাতিসংঘে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানান, অন্যদিকে ইরানের পক্ষ থেকে এই মন্তব্যের নিন্দা জানানো হয়েছে।
এদিকে বিশ্বের বিভিন্ন শহরে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ হয়েছে। আর ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হামলার পর বিশ্বজুড়ে মার্কিন নাগরিকদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। মূলত ইরানে হামলার প্রতিক্রিয়ায় সম্ভাব্য প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ এবং প্রতিবাদ আন্দোলনের আশঙ্কায় জারি করা হয়েছে।
এদিকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মস্কো রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।
ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনা এখন পূর্ণাঙ্গ সংঘাতে পরিণত হওয়ার দ্বারপ্রান্তে। উভয়পক্ষই একে অপরকে ‘শাস্তি দেয়ার’ হুমকি দিয়ে লাগাতার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। হরমুজ প্রণালিতে জাহাজ চলাচল বন্ধ হওয়ার আশঙ্কায় বৈশ্বিক জ্বালানি বাজারে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে।
এই যুদ্ধের ছায়া শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, ইতোমধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। পরমাণু নিরাপত্তা, জ্বালানি সরবরাহ ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছে। বিশ্ব এখন অপেক্ষায় এ সংঘাত কবে এবং কীভাবে থামবে?
হরমুজ প্রণালি বন্ধের সিদ্ধান্তে বাধা দেয়ার জন্য চীনকে আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের
পারস্য উপসাগরের মুখে অবস্থিত গুরুত্বপূর্ণ তেল পরিবহনের পথ হরমুজ প্রণালি বন্ধ করার বিষয়ে ইরান যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাতে বাধা দেয়ার জন্য চীনকে আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও।
বিশ্বের প্রায় এক-চতুর্থাংশ তেল ও গ্যাস এই পথ দিয়ে পরিবাহিত হয়।
ইরানি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে বলা হয়েছে, ইরানের পার্লামেন্ট হরমুজ প্রণালি বন্ধের একটি প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে মার্কো রুবিও ফক্স নিউজে বলেছেন, ‘আমি বেইজিংয়ে চীনা সরকারকে বলব, তারা যেন এ বিষয়ে ইরানকে ফোন করে, কারণ চীন এই প্রণালি দিয়ে বিপুল পরিমাণে তেল আমদানি করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যদি ইরান এমনটা করে, তাহলে সেটা হবে আরেকটি ভয়ানক ভুল। এটি তাদের জন্য অর্থনৈতিক আত্মহত্যার শামিল হবে।’
এই পথ বন্ধ হলে বিশ্ব অর্থনীতিতে ভয়াবহ প্রভাব পড়বে, তেলের দাম বেড়ে যাবে এবং চীন, ভারত ও জাপানের মতো বড় আমদানিকারক দেশগুলো চরম ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, হরমুজ প্রণালি বন্ধের ক্ষমতা মূলত ইরানের নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর হাতে, পার্লামেন্টের হাতে নয়।
তাছাড়া, ইরানের নিজের তেল রপ্তানিও এই পথের ওপর নির্ভরশীল, তাই এটি বন্ধ করা ইরানের জন্যই মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিশোধ হতে পারে।