গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় বিধ্বস্ত একটি অ্যাম্বুলেন্স -এএফপি
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাসের সামরিক শাখার মুখপাত্র আবু উবাইদা বলেছেন, সব জিম্মির মুক্তির বিনিময়ে দেওয়া যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবটি ইসরায়েল প্রত্যাখ্যান করেছে। উবাইদা আরও বলেছেন, কোনো চুক্তি না হলে হামাস দীর্ঘ সময় ধরে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত আছে। প্রায় ২০ মিনিটের এক ভিডিও বার্তায় কাসাম ব্রিগেডের দীর্ঘদিনের মুখপাত্র উবাইদা এ কথা বলেছেন। আগে থেকে রেকর্ড করা ভিডিওটি গতকাল প্রকাশ করা হয়েছে।
সাম্প্রতিক মাসগুলোয় হামাস একটি ‘পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব’ দিয়েছে। সেখানে তারা সব জিম্মিকে একসঙ্গে মুক্তি দেওয়ার কথা বলেছিল, কিন্তু ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং তার কট্টর ডানপন্থি মন্ত্রীরা তা নাকচ করে দেন। উবাইদা বলেন, ‘এটা এখন আমাদের কাছে পরিষ্কার, অপরাধী নেতানিয়াহুর সরকার বন্দীদের ব্যাপারে মোটেই আন্তরিক নয়। কারণ, তারা সবাই সেনাসদস্য।’ তিনি আরও বলেন, হামাস এমন একটি পূর্ণাঙ্গ চুক্তির পক্ষে যার মধ্য দিয়ে যুদ্ধের অবসান ঘটবে, ইসরায়েলি বাহিনীকে গাজা থেকে পুরোপুরি প্রত্যাহার করা হবে এবং অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনিদের জন্য মানবিক সহায়তা প্রবেশের নিশ্চয়তা থাকবে।
কাতারে চলমান পরোক্ষ আলোচনা থেকে ইসরায়েল যদি আবারও সরে যায়, তাহলে ভবিষ্যতে কোনো আংশিক চুক্তির সম্ভাবনা থাকবে না বলেও হুঁশিয়ার করেছেন উবাইদা। এর মধ্যে ৬০ দিনের একটি প্রস্তাবিত চুক্তিও আছে, যার আওতায় ১০ জন জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার কথা। গাজা উপত্যকায় হামাসের কাছে এখনো ৫০ জন জিম্মি আছেন। এর মধ্যে প্রায় ২০ জন এখনো জীবিত আছেন বলে ধারণা করা হয়। এদিকে শুক্রবার হোয়াইট হাউসে আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে নৈশভোজের সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, গাজা থেকে আরও ১০ জন বন্দী খুব শিগগির মুক্তি পাচ্ছেন। ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা বেশির ভাগ বন্দীকে ফিরিয়ে এনেছি। খুব তাড়াতাড়ি আরও ১০ জন ফিরবেন। আর আমরা আশা করছি, পুরো বিষয়টা দ্রুতই শেষ হবে।’ তবে তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত বলেননি। কয়েক সপ্তাহ ধরে ট্রাম্প বলে আসছেন, যুদ্ধবিরতি ও জিম্মিদের মুক্তিসংক্রান্ত একটি চুক্তি অনিবার্য। যদিও এখনো পর্যন্ত তা বাস্তব হয়নি।
মার্চের শুরু থেকে এই প্রথম ভিডিও বার্তা দিয়েছেন উবাইদা। ভিডিওতে তিনি বলেন, হামাস যোদ্ধারা দীর্ঘ সময় ধরে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে প্রস্তুত আছেন। তারা গাজাজুড়ে ইসরায়েলি সেনাদের হত্যা বা আটক করার উদ্দেশ্যে হামলা চালিয়ে যাবেন। আরব ও ইসলামি দেশগুলোর নেতাদেরও কঠোর সমালোচনা করেছেন আবু উবাইদা। ইসরায়েলের ‘গণহত্যা’ নিয়ে আরব দেশগুলোর নীরব ভূমিকাকে তিনি বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
এদিকে, ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের ধারাবাহিক বোমা হামলা ও জ্বালানি সংকটে আগেই ভেঙে পড়েছে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। এ অবস্থায় এখনো প্রতিদিন বাড়ছে হতাহত মানুষের সংখ্যা। এতে আহত ব্যক্তিদের মধ্যে আগে কাকে চিকিৎসা দেবেন, সে সিদ্ধান্ত নিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকেরা।
স্বাস্থ্য বিভাগের সূত্র জানিয়েছে, শুক্রবার ভোরে গাজাজুড়ে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৩০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে গাজা নগরের পূর্বাঞ্চলীয় এলাকা তুফফায় তিনজন, উত্তরাঞ্চলীয় জাবালিয়া আন-নাজলায় পাঁচজন, দক্ষিণাঞ্চলীয় আল-মাওয়াসিতে দুধের শিশুসহ পাঁচজন রয়েছেন। নিহত অন্য ব্যক্তিদের মধ্যে এমন সাতজন রয়েছেন, যারা হন্যে হয়ে খাদ্যসহায়তা খুঁজছিলেন।
আলজাজিরার সংবাদদাতা হানি মাহমুদ জানিয়েছেন, আহত ব্যক্তিদের মধ্যে শিশুরাও রয়েছে। তাদের নাসের হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। তাদের কারও কারও শরীরে এমন ক্ষত দেখা গেছে, যা ড্রোন হামলার সঙ্গে মিলে যায়। চিকিৎসাকর্মীরা বলছেন, জ্বালানির অভাবে বিদ্যুৎ নেই। আর বিদ্যুৎ না থাকলে জীবন রক্ষা করারও উপায় নেই। তাই তারা রোগীদের অগ্রাধিকার নির্ধারণের পাশাপাশি চিকিৎসা কার্যক্রমও ন্যূনতম পর্যায়ে নামিয়ে আনতে বাধ্য হচ্ছেন।
আল-শিফা হাসপাতালের প্রকৌশল বিভাগের জিয়াদ আবু হুমায়দান বলেন, মাত্র কয়েকটি বিভাগ চালু রয়েছে। বাকি সব জায়গার বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দিতে হয়েছে। ওমদা দাগমাশ নামের ডায়ালাইসিসের এক রোগী বলেন, আগে তিনি এই হাসপাতালে সপ্তাহে তিনবার স্বাচ্ছন্দ্যে এসে ডায়ালাইসিস করিয়ে যেতেন। প্রতিটি সেশনের সময় ছিল চার ঘণ্টা। আর এখন অনেক কষ্টের পরে হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন। কারণ, তারা এখন ঠিকমতো খাবারই পাচ্ছেন না। এখন ডায়ালাইসিসের সময় ও সেশন দুটিই কমিয়ে আনা হয়েছে, যা কারও কারও জীবন-মৃত্যুর প্রশ্ন।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম মাআরিভ পরিচালিত এক জনমত জরিপ অনুযায়ী, প্রায় ৪৪ শতাংশ ইসরায়েলি নাগরিক মনে করেন, গাজায় চালানো হামলা দেশের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সক্ষম হবে না।
গত বৃহস্পতিবার গাজার একমাত্র ক্যাথলিক গির্জায় বোমা হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল। এতে ৩ জন নিহত এবং অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় ইসরায়েল ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার মুখে পড়েছে।
গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় বিধ্বস্ত একটি অ্যাম্বুলেন্স -এএফপি
শনিবার, ১৯ জুলাই ২০২৫
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাসের সামরিক শাখার মুখপাত্র আবু উবাইদা বলেছেন, সব জিম্মির মুক্তির বিনিময়ে দেওয়া যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবটি ইসরায়েল প্রত্যাখ্যান করেছে। উবাইদা আরও বলেছেন, কোনো চুক্তি না হলে হামাস দীর্ঘ সময় ধরে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত আছে। প্রায় ২০ মিনিটের এক ভিডিও বার্তায় কাসাম ব্রিগেডের দীর্ঘদিনের মুখপাত্র উবাইদা এ কথা বলেছেন। আগে থেকে রেকর্ড করা ভিডিওটি গতকাল প্রকাশ করা হয়েছে।
সাম্প্রতিক মাসগুলোয় হামাস একটি ‘পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব’ দিয়েছে। সেখানে তারা সব জিম্মিকে একসঙ্গে মুক্তি দেওয়ার কথা বলেছিল, কিন্তু ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং তার কট্টর ডানপন্থি মন্ত্রীরা তা নাকচ করে দেন। উবাইদা বলেন, ‘এটা এখন আমাদের কাছে পরিষ্কার, অপরাধী নেতানিয়াহুর সরকার বন্দীদের ব্যাপারে মোটেই আন্তরিক নয়। কারণ, তারা সবাই সেনাসদস্য।’ তিনি আরও বলেন, হামাস এমন একটি পূর্ণাঙ্গ চুক্তির পক্ষে যার মধ্য দিয়ে যুদ্ধের অবসান ঘটবে, ইসরায়েলি বাহিনীকে গাজা থেকে পুরোপুরি প্রত্যাহার করা হবে এবং অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনিদের জন্য মানবিক সহায়তা প্রবেশের নিশ্চয়তা থাকবে।
কাতারে চলমান পরোক্ষ আলোচনা থেকে ইসরায়েল যদি আবারও সরে যায়, তাহলে ভবিষ্যতে কোনো আংশিক চুক্তির সম্ভাবনা থাকবে না বলেও হুঁশিয়ার করেছেন উবাইদা। এর মধ্যে ৬০ দিনের একটি প্রস্তাবিত চুক্তিও আছে, যার আওতায় ১০ জন জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার কথা। গাজা উপত্যকায় হামাসের কাছে এখনো ৫০ জন জিম্মি আছেন। এর মধ্যে প্রায় ২০ জন এখনো জীবিত আছেন বলে ধারণা করা হয়। এদিকে শুক্রবার হোয়াইট হাউসে আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে নৈশভোজের সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, গাজা থেকে আরও ১০ জন বন্দী খুব শিগগির মুক্তি পাচ্ছেন। ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা বেশির ভাগ বন্দীকে ফিরিয়ে এনেছি। খুব তাড়াতাড়ি আরও ১০ জন ফিরবেন। আর আমরা আশা করছি, পুরো বিষয়টা দ্রুতই শেষ হবে।’ তবে তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত বলেননি। কয়েক সপ্তাহ ধরে ট্রাম্প বলে আসছেন, যুদ্ধবিরতি ও জিম্মিদের মুক্তিসংক্রান্ত একটি চুক্তি অনিবার্য। যদিও এখনো পর্যন্ত তা বাস্তব হয়নি।
মার্চের শুরু থেকে এই প্রথম ভিডিও বার্তা দিয়েছেন উবাইদা। ভিডিওতে তিনি বলেন, হামাস যোদ্ধারা দীর্ঘ সময় ধরে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে প্রস্তুত আছেন। তারা গাজাজুড়ে ইসরায়েলি সেনাদের হত্যা বা আটক করার উদ্দেশ্যে হামলা চালিয়ে যাবেন। আরব ও ইসলামি দেশগুলোর নেতাদেরও কঠোর সমালোচনা করেছেন আবু উবাইদা। ইসরায়েলের ‘গণহত্যা’ নিয়ে আরব দেশগুলোর নীরব ভূমিকাকে তিনি বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
এদিকে, ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের ধারাবাহিক বোমা হামলা ও জ্বালানি সংকটে আগেই ভেঙে পড়েছে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। এ অবস্থায় এখনো প্রতিদিন বাড়ছে হতাহত মানুষের সংখ্যা। এতে আহত ব্যক্তিদের মধ্যে আগে কাকে চিকিৎসা দেবেন, সে সিদ্ধান্ত নিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকেরা।
স্বাস্থ্য বিভাগের সূত্র জানিয়েছে, শুক্রবার ভোরে গাজাজুড়ে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৩০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে গাজা নগরের পূর্বাঞ্চলীয় এলাকা তুফফায় তিনজন, উত্তরাঞ্চলীয় জাবালিয়া আন-নাজলায় পাঁচজন, দক্ষিণাঞ্চলীয় আল-মাওয়াসিতে দুধের শিশুসহ পাঁচজন রয়েছেন। নিহত অন্য ব্যক্তিদের মধ্যে এমন সাতজন রয়েছেন, যারা হন্যে হয়ে খাদ্যসহায়তা খুঁজছিলেন।
আলজাজিরার সংবাদদাতা হানি মাহমুদ জানিয়েছেন, আহত ব্যক্তিদের মধ্যে শিশুরাও রয়েছে। তাদের নাসের হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। তাদের কারও কারও শরীরে এমন ক্ষত দেখা গেছে, যা ড্রোন হামলার সঙ্গে মিলে যায়। চিকিৎসাকর্মীরা বলছেন, জ্বালানির অভাবে বিদ্যুৎ নেই। আর বিদ্যুৎ না থাকলে জীবন রক্ষা করারও উপায় নেই। তাই তারা রোগীদের অগ্রাধিকার নির্ধারণের পাশাপাশি চিকিৎসা কার্যক্রমও ন্যূনতম পর্যায়ে নামিয়ে আনতে বাধ্য হচ্ছেন।
আল-শিফা হাসপাতালের প্রকৌশল বিভাগের জিয়াদ আবু হুমায়দান বলেন, মাত্র কয়েকটি বিভাগ চালু রয়েছে। বাকি সব জায়গার বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দিতে হয়েছে। ওমদা দাগমাশ নামের ডায়ালাইসিসের এক রোগী বলেন, আগে তিনি এই হাসপাতালে সপ্তাহে তিনবার স্বাচ্ছন্দ্যে এসে ডায়ালাইসিস করিয়ে যেতেন। প্রতিটি সেশনের সময় ছিল চার ঘণ্টা। আর এখন অনেক কষ্টের পরে হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন। কারণ, তারা এখন ঠিকমতো খাবারই পাচ্ছেন না। এখন ডায়ালাইসিসের সময় ও সেশন দুটিই কমিয়ে আনা হয়েছে, যা কারও কারও জীবন-মৃত্যুর প্রশ্ন।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম মাআরিভ পরিচালিত এক জনমত জরিপ অনুযায়ী, প্রায় ৪৪ শতাংশ ইসরায়েলি নাগরিক মনে করেন, গাজায় চালানো হামলা দেশের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সক্ষম হবে না।
গত বৃহস্পতিবার গাজার একমাত্র ক্যাথলিক গির্জায় বোমা হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল। এতে ৩ জন নিহত এবং অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় ইসরায়েল ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার মুখে পড়েছে।