alt

গাজা: ঢুকছে ত্রাণবাহী ট্রাক, সোমবার মুক্তি পাচ্ছে জিম্মিরা

সোমবার মিশরে শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন ট্রাম্পসহ ২০ বিশ্ব নেতা

সংবাদ ডেস্ক : রোববার, ১২ অক্টোবর ২০২৫

গাজায় ইসরায়েলের হামলায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ এবং ত্রাণ প্রবেশে কড়াকড়ির কারণে এতদিন অনেক প্যালেস্টাইনি ক্ষুধার্ত ছিল। জাতিসংঘ ও বিভিন্ন সংগঠন ত্রাণ সরবরাহে বাধার মুখে পড়েছিল। যুদ্ধবিরতির পর রোববার থেকে ত্রাণের ট্রাক ঢুকতে শুরু করেছে। ত্রাণের আশায় ভিড় করেন গাজাবাসী

গাজায় আপাত শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া এগিয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘ দুই বছর পর বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়া প্যালেস্টাইনিরা বিধ্বস্ত বাড়িঘরে ফিরছেন। আর ত্রাণবাহী ট্রাকও অবাধে গাজায় ঢুকছে মানবিক সহায়তা নিয়ে। ত্রাণ সংস্থাগুলো বলেছে, যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় তারা গাজায় খাবার ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সাহায্যের ‘বন্যা বইয়ে’ দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে সমঝোতা অনুযায়ী গাজায় যুদ্ধ শেষ করার লক্ষ্যে একটি বৃহত্তর চুক্তি চূড়ান্ত করতে মিশরের লোহিত সাগর তীরবর্তী অবকাশযাপন শহর শারম আল-শেখে আজ একটি আন্তর্জাতিক শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। গাজা চুক্তি উপলক্ষে মিশরে শীর্ষ সম্মেলন ট্রাম্প ও ২০ বিশ্ব নেতা যোগ দিচ্ছেন বলে সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে।

গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হয়েছে গত শুক্রবার থেকে। চুক্তি অনুযায়ী স্থানীয় সময় আজ দুপুর ১২টা পর্যন্ত হামাসের হাতে সময় আছে সব জিম্মিকে মুক্তি দেয়ার। বিনিময়ে ইসরায়েলকে মুক্তি দিতে হবে ২৫০ জন প্যালেস্টাইনি বন্দীসহ গাজা থেকে আটক হওয়া ১৭০০ জনকে যাদের মধ্যে রয়েছে প্রায় দুই ডজন শিশু।

প্যালেস্টাইনি মুক্তিকামী সংগঠন হামাস তাদের শীর্ষস্থানীয় ৭ জন প্যালেস্টাইনি বন্দীকে মুক্তি দেয়ার জন্য ইসরায়েলকে চাপ দিচ্ছে। ইসরায়েল তাদের ২ জনকে মুক্তি দিলেও হামাস একদিন আগে রোববারেই গাজায় আটক জিম্মিদের মুক্তি দেবে বলে বিবিসিকে জানিয়েছেন শান্তি আলোচনা সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা।

ইসরায়েল ও হামাস সমঝোতায় পৌঁছার পরপরই প্যালেস্টাইনিরা গাজায় ফিরে আসার পাশাপাশি রোববার সকাল থেকেই গাজার বিভিন্ন স্থানে ঢুকছে ডজন ডজন ত্রাণবাহী ট্রাক। মিশরের কাছে রাফা সীমান্ত ক্রসিংয়ে ট্রাকের সারি দেখা গেছে ছবিতে। ত্রাণ সংস্থাগুলো বলেছে, যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় তারা গাজায় খাবার ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের সাহায্য পৌঁছে দেয়ার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। কর্মকর্তারা বলছেন, এখন গাজায় ত্রানের ‘বন্যা বইয়ে’ দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা।

গাজায় ইসরায়েলের হামলায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ এবং ত্রাণ প্রবেশের কড়াকড়ির কারণে এতদিন অনেক প্যালেস্টাইনি ক্ষুধার্ত ছিল। জাতিসংঘ ও অন্যান্য সংগঠনগুলোও ত্রাণ সরবরাহে বাধার মুখে পড়েছিল। জাতিসংঘের মতে, গাজায় মানবিক সংকট দূর করতে প্রতিদিন ন্যূনতম অন্তত ৬০০ ট্রাক ত্রাণ প্রবেশ করা প্রয়োজন। সম্প্রতি কয়েকমাসে গাজায় মানুষ কেবল সামান্য ত্রাণ পেয়ে আসছিল। যুদ্ধের সময় ইসরায়েল গাজায় ঢোকা এবং বেরানো বন্ধ করে রেখেছিল। এতে খাবার ও ওষুধ ঢোকা বন্ধ হয়ে গিয়ে গাজায় দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল।

রোববার থেকে ফের ত্রাণের ট্রাক গাজায় ঢুকতে শুরু করেছে এবং পরে আরও ট্রাক ঢুকবে বলে জানানো হয়েছে বিবিসির খবরে। এতে গাজায় মানবিক ত্রাণ সহায়তা বাড়ার আশা সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে, গাজায় আটক জিম্মিদের আজ সকালেই মুক্তি দেয়া শুরু হবে বলে জানিয়েছেন ইসরায়েল সরকারের মুখপাত্র।

তবে একই সঙ্গে ভয়ের খবরও পাচ্ছে হামাস যোদ্ধারা। সংবাদ সংস্থার থবরে বলা হয়েছে, হামাসের হাতে বন্দী ইসরায়েলি জিম্মিরা

মুক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই গাজার যে সব সুড়ঙ্গে ইসরায়েলিদের জিম্মিদের আটক করে রাখা হয়েছিল সে সুড়ঙ্গগুলো গুঁড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে ইসরায়েল।

এএফপি জানিয়েছে, গাজা থেকে জিম্মিরা মুক্ত হওয়ার পরপরই সেখানকার ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গ নেটওয়ার্কের অবশিষ্টাংশ গুঁড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করছে ইসরায়েল। যুক্তরাষ্ট্রের অনুমোদনে এ পদক্ষেপ নেয়া হবে। রোববার ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ এ কথা বলেছে।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ বলেছেন, যে দেশটির উদ্যোগে তিন দিন আগে গাজায় যুদ্ধবিরতি শুরু হয়েছে, সেই যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন একটি ‘আন্তর্জাতিক’ তদারকিতে এ অভিযান চলবে। এক বিবৃতিতে কাৎজ বলেছেন, ‘জিম্মিদের মুক্তি পাওয়ার ধাপটি শেষ হলে ইসরায়েলের জন্য বড় চ্যালেঞ্জটি হবে গাজায় হামাসের সব সুড়ঙ্গ ধ্বংস করা। এ অভিযান পরিচালনার জন্য প্রস্তুত থাকতে আমি সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছি।’

প্যালেস্টাইনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস গাজায় ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গের একটি নেটওয়ার্ক পরিচালনা করে। এ ধরনের সুড়ঙ্গ ব্যবহার করে ইসরায়েলের গোয়েন্দা নজরদারির বাইরে থেকে কাজ করার সুযোগ পায় তারা। এর মধ্যে কিছু সুড়ঙ্গ সীমানার বেড়ার নিচ দিয়ে ইসরায়েলে ঢুকে পড়েছে। এগুলো ব্যবহার করে ইসরায়েলে আকস্মিক হামলা চালানোর সুযোগ পায় হামাস।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন, ‘জিম্মিদের মুক্তি পাওয়ার ধাপটি শেষ হলে ইসরায়েলের জন্য বড় চ্যালেঞ্জটি হবে গাজায় হামাসের সব সুড়ঙ্গ ধ্বংস করা। এ অভিযান পরিচালনার জন্য প্রস্তুত থাকতে আমি সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছি।’

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস সীমান্ত পার হয়ে ইসরায়েলি ভূখণ্ডে ঢুকে হামলা চালায়। জবাবে সেদিন থেকেই গাজায় হামলা শুরু করে ইসরায়েল। এরপর থেকে দুই বছর ধরে ইসরায়েলি হামলা চালিয়ে বেশ কিছু সুড়ঙ্গ ধ্বংস করে দিয়েছে।

হামাস মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প প্রস্তাবিত পরিকল্পনার প্রথম ধাপ মেনে নিয়েছে। এর আওতায় গত শুক্রবার থেকে গাজায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চলছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, আজ ৪৮ জন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেবে হামাস। এরমধ্যে যারা জীবিত আছেন, তাদের জীবিত অবস্থায় তুলে দেয়া হবে। আর যারা নিহত হয়েছেন, তাদের লাশ হস্তান্তর করা হবে।

ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির বিনিময়ে ইসরায়েল ২৫০ জন কারাবন্দীকে মুক্তি দেবে। এরমধ্যে প্রাণঘাতী হামলার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হওয়া কয়েকজন ব্যক্তিও আছেন। গাজা থেকে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর হাতে আটক হওয়া ১ হাজার ৭০০ জন প্যালেস্টাইনিও মুক্তি পাবেন।

তবে হামাস এখনও পুরোপুরি নিরস্ত্রীকরণের জন্য রাজি হয়নি। রোববার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা হোসাম বাদরান বলেছেন, মার্কিন পরিকল্পনার দ্বিতীয় ধাপে অনেক জটিলতা এবং সমস্যার বিষয় আছে।

শীর্ষ সম্মেলন যোগ দিচ্ছেন ট্রাম্পসহ ২০ বিশ্ব নেতা

প্যালেস্টাইনি ছিটমহল গাজায় যুদ্ধ শেষ করার লক্ষ্যে একটি চুক্তি চূড়ান্ত করতে মিশরের লোহিত সাগর তীরবর্তী অবকাশযাপন শহর শারম আল-শেখে একটি আন্তর্জাতিক শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আজকের এ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পসহ বিশ্বের ২০ জনেরও বেশি নেতা উপস্থিত থাকবেন বলে গতকাল শনিবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন মিশরের প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র। ওই বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ‘গাজা যুদ্ধ শেষ করতে একটি চুক্তি’ সম্পন্ন করাই এই সম্মেলনের মূল কাজ হবে বলে ।

এতে বলা হয়েছে, ‘এ সম্মেলনের লক্ষ্য গাজা ভূখণ্ডের যুদ্ধটি শেষ করা, মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা অর্জনের প্রচেষ্টাগুলোকে শক্তিশালী করা।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘এই অঞ্চলে শান্তি অর্জনের জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গী ও বিশ্বব্যাপী সংঘাত নিরসনে তার নিরলস প্রচেষ্টার ফলশ্রুতিতে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।’

বিবিসি জানিয়েছে, মিশরের এ বিবৃতির আগে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ নিশ্চিত করেছেন যে তিনি এ সম্মেলনে উপস্থিত থাকছেন।

আল জাজিরা জানিয়েছে, জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ও যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার জানিয়েছেন তারাও এ সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন। ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি ও স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজও শারম আল-শেখের সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন।

তবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বা প্যালেস্টাইনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের কোনো প্রতিনিধি সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন কিনা, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশের প্রধানরাও এ সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও মিশরের প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফাত্তা আল সিসি এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনের সভাপতিত্ব করবেন। সম্মেলনে গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ শেষ করার উদ্দেশে ট্রাম্পের প্রস্তাবিত শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।

ছবি

দিল্লির বিস্ফোরণে দোষীদের কাউকে ছাড়া হবে না: মোদী

ছবি

দিল্লিতে গাড়ি বিস্ফোরণ, নিহত অন্তত ৯ জন

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ‘শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক চুক্তি’ চায় ইরান

ছবি

জোহরান মামদানির কাজে কীভাবে ট্রাম্প বাগড়া দিতে পারেন

শুল্কের বিরোধীরা ‘মূর্খ’, রাজস্ব থেকে মার্কিনদের ২০০০ ডলার ‘লভ্যাংশ’ দেয়া হবে: ট্রাম্প

ছবি

বিবিসির বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকি ট্রাম্পের, ক্ষমা চাইলেন সমির শাহ

ছবি

বিবিসি এখন বিশৃঙ্খল, নেতৃত্বহীন প্রতিষ্ঠান: সাবেক কর্মকর্তা অলিভার

ছবি

সৌদি আরবের সর্বোচ্চ সম্মাননা বাদশাহ আব্দুল আজিজ মেডেল পেলেন পাকিস্তানের শীর্ষ জেনারেল

ছবি

সংযুক্ত আরব আমিরাত গাজা স্থিতিশীলতা বাহিনীতে যোগ দেবে না

ছবি

সারকোজিকে মুক্তির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে ফরাসি আদালত

ছবি

মালয়েশিয়া-থাইল্যান্ড সীমান্তের কাছে নৌকাডুবিতে মৃত্যু বেড়ে ১১

ছবি

দক্ষিণ কোরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ইউনের বিরুদ্ধে নতুন অভিযোগ

ছবি

নয়া দিল্লিতে ইন্ডিয়া গেইটে দূষণবিরোধী বিক্ষোভ, ডজনের বেশি আটক

ছবি

একুয়েডরে কারাগারে দাঙ্গার মধ্যে অন্তত ৩১ জনের মৃত্যু

ছবি

মামদানির নিউইয়র্ক পরিকল্পনায় বাদ সাধতে পারেন ট্রাম্প

ছবি

গাজায় মৃত্যু ৬৯ হাজার ছাড়িয়েছে, ইসরায়েলি সেনার মৃতদেহ উদ্ধার করলো হামাস

ছবি

পাকিস্তানে বিতর্কিত ২৭তম সংবিধান সংশোধনী বিল সিনেটে উপস্থাপন

ছবি

সংবিধান সংশোধনীর বিরুদ্ধে পাকিস্তানজুড়ে বিক্ষোভের ঘোষণা বিরোধী জোটের

ছবি

লেবাননে ইসরায়েলি হামলার নিন্দা জানাল ইউরোপীয় ইউনিয়ন

ছবি

সিরিয়া- যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের নতুন অধ্যায়, ওয়াশিংটনে আল শারা

ছবি

তীব্র দূষণের ঝুঁকিতে গাজার জনস্বাস্থ্য

ছবি

কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ খরার মুখোমুখি ইংল্যান্ড

ছবি

মামদানির প্রচারকৌশলে এগোনোর চেষ্টা ট্রাম্পের

ছবি

২৬ মার্কিন ধনকুবেরের সোয়া দুই কোটি ডলারও মামদানির জয় ঠেকাতে পারেনি

ছবি

আফগানিস্তান-পাকিস্তান শান্তি আলোচনা ব্যর্থ, যুদ্ধবিরতি এখনও বহাল

ছবি

পুতিনের সঙ্গে এখনও বৈঠকের সুযোগ আছে : ট্রাম্প

ছবি

ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামোতে রাশিয়ার ভয়াবহ হামলা

ছবি

সন্ত্রাসী তালিকা থেকে সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের নাম মুছলো যুক্তরাষ্ট্র

ছবি

অ্যান্টার্কটিকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে

ছবি

ভেস্তে গেলো আফগানিস্তান-পাকিস্তান আলোচনা

নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে তুরস্কের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

ছবি

বাংলাদেশের সঙ্গে উত্তেজনা চায় না ভারত : রাজনাথ সিং

ছবি

প্রভাবশালী মার্কিন ডানপন্থিরা মামদানিকে আইএসের সঙ্গে জড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন

ছবি

ইরানে ইসরায়েলি হামলায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করলেন ট্রাম্প

ছবি

ট্রাম্প-মামদানি কি সমানে সমান

ছবি

কেন দেশ ছেড়ে পালাচ্ছেন সুদানের নাগরিকরা

tab

গাজা: ঢুকছে ত্রাণবাহী ট্রাক, সোমবার মুক্তি পাচ্ছে জিম্মিরা

সোমবার মিশরে শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন ট্রাম্পসহ ২০ বিশ্ব নেতা

সংবাদ ডেস্ক

গাজায় ইসরায়েলের হামলায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ এবং ত্রাণ প্রবেশে কড়াকড়ির কারণে এতদিন অনেক প্যালেস্টাইনি ক্ষুধার্ত ছিল। জাতিসংঘ ও বিভিন্ন সংগঠন ত্রাণ সরবরাহে বাধার মুখে পড়েছিল। যুদ্ধবিরতির পর রোববার থেকে ত্রাণের ট্রাক ঢুকতে শুরু করেছে। ত্রাণের আশায় ভিড় করেন গাজাবাসী

রোববার, ১২ অক্টোবর ২০২৫

গাজায় আপাত শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া এগিয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘ দুই বছর পর বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়া প্যালেস্টাইনিরা বিধ্বস্ত বাড়িঘরে ফিরছেন। আর ত্রাণবাহী ট্রাকও অবাধে গাজায় ঢুকছে মানবিক সহায়তা নিয়ে। ত্রাণ সংস্থাগুলো বলেছে, যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় তারা গাজায় খাবার ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সাহায্যের ‘বন্যা বইয়ে’ দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে সমঝোতা অনুযায়ী গাজায় যুদ্ধ শেষ করার লক্ষ্যে একটি বৃহত্তর চুক্তি চূড়ান্ত করতে মিশরের লোহিত সাগর তীরবর্তী অবকাশযাপন শহর শারম আল-শেখে আজ একটি আন্তর্জাতিক শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। গাজা চুক্তি উপলক্ষে মিশরে শীর্ষ সম্মেলন ট্রাম্প ও ২০ বিশ্ব নেতা যোগ দিচ্ছেন বলে সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে।

গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হয়েছে গত শুক্রবার থেকে। চুক্তি অনুযায়ী স্থানীয় সময় আজ দুপুর ১২টা পর্যন্ত হামাসের হাতে সময় আছে সব জিম্মিকে মুক্তি দেয়ার। বিনিময়ে ইসরায়েলকে মুক্তি দিতে হবে ২৫০ জন প্যালেস্টাইনি বন্দীসহ গাজা থেকে আটক হওয়া ১৭০০ জনকে যাদের মধ্যে রয়েছে প্রায় দুই ডজন শিশু।

প্যালেস্টাইনি মুক্তিকামী সংগঠন হামাস তাদের শীর্ষস্থানীয় ৭ জন প্যালেস্টাইনি বন্দীকে মুক্তি দেয়ার জন্য ইসরায়েলকে চাপ দিচ্ছে। ইসরায়েল তাদের ২ জনকে মুক্তি দিলেও হামাস একদিন আগে রোববারেই গাজায় আটক জিম্মিদের মুক্তি দেবে বলে বিবিসিকে জানিয়েছেন শান্তি আলোচনা সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা।

ইসরায়েল ও হামাস সমঝোতায় পৌঁছার পরপরই প্যালেস্টাইনিরা গাজায় ফিরে আসার পাশাপাশি রোববার সকাল থেকেই গাজার বিভিন্ন স্থানে ঢুকছে ডজন ডজন ত্রাণবাহী ট্রাক। মিশরের কাছে রাফা সীমান্ত ক্রসিংয়ে ট্রাকের সারি দেখা গেছে ছবিতে। ত্রাণ সংস্থাগুলো বলেছে, যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় তারা গাজায় খাবার ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের সাহায্য পৌঁছে দেয়ার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। কর্মকর্তারা বলছেন, এখন গাজায় ত্রানের ‘বন্যা বইয়ে’ দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা।

গাজায় ইসরায়েলের হামলায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ এবং ত্রাণ প্রবেশের কড়াকড়ির কারণে এতদিন অনেক প্যালেস্টাইনি ক্ষুধার্ত ছিল। জাতিসংঘ ও অন্যান্য সংগঠনগুলোও ত্রাণ সরবরাহে বাধার মুখে পড়েছিল। জাতিসংঘের মতে, গাজায় মানবিক সংকট দূর করতে প্রতিদিন ন্যূনতম অন্তত ৬০০ ট্রাক ত্রাণ প্রবেশ করা প্রয়োজন। সম্প্রতি কয়েকমাসে গাজায় মানুষ কেবল সামান্য ত্রাণ পেয়ে আসছিল। যুদ্ধের সময় ইসরায়েল গাজায় ঢোকা এবং বেরানো বন্ধ করে রেখেছিল। এতে খাবার ও ওষুধ ঢোকা বন্ধ হয়ে গিয়ে গাজায় দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল।

রোববার থেকে ফের ত্রাণের ট্রাক গাজায় ঢুকতে শুরু করেছে এবং পরে আরও ট্রাক ঢুকবে বলে জানানো হয়েছে বিবিসির খবরে। এতে গাজায় মানবিক ত্রাণ সহায়তা বাড়ার আশা সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে, গাজায় আটক জিম্মিদের আজ সকালেই মুক্তি দেয়া শুরু হবে বলে জানিয়েছেন ইসরায়েল সরকারের মুখপাত্র।

তবে একই সঙ্গে ভয়ের খবরও পাচ্ছে হামাস যোদ্ধারা। সংবাদ সংস্থার থবরে বলা হয়েছে, হামাসের হাতে বন্দী ইসরায়েলি জিম্মিরা

মুক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই গাজার যে সব সুড়ঙ্গে ইসরায়েলিদের জিম্মিদের আটক করে রাখা হয়েছিল সে সুড়ঙ্গগুলো গুঁড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে ইসরায়েল।

এএফপি জানিয়েছে, গাজা থেকে জিম্মিরা মুক্ত হওয়ার পরপরই সেখানকার ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গ নেটওয়ার্কের অবশিষ্টাংশ গুঁড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করছে ইসরায়েল। যুক্তরাষ্ট্রের অনুমোদনে এ পদক্ষেপ নেয়া হবে। রোববার ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ এ কথা বলেছে।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ বলেছেন, যে দেশটির উদ্যোগে তিন দিন আগে গাজায় যুদ্ধবিরতি শুরু হয়েছে, সেই যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন একটি ‘আন্তর্জাতিক’ তদারকিতে এ অভিযান চলবে। এক বিবৃতিতে কাৎজ বলেছেন, ‘জিম্মিদের মুক্তি পাওয়ার ধাপটি শেষ হলে ইসরায়েলের জন্য বড় চ্যালেঞ্জটি হবে গাজায় হামাসের সব সুড়ঙ্গ ধ্বংস করা। এ অভিযান পরিচালনার জন্য প্রস্তুত থাকতে আমি সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছি।’

প্যালেস্টাইনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস গাজায় ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গের একটি নেটওয়ার্ক পরিচালনা করে। এ ধরনের সুড়ঙ্গ ব্যবহার করে ইসরায়েলের গোয়েন্দা নজরদারির বাইরে থেকে কাজ করার সুযোগ পায় তারা। এর মধ্যে কিছু সুড়ঙ্গ সীমানার বেড়ার নিচ দিয়ে ইসরায়েলে ঢুকে পড়েছে। এগুলো ব্যবহার করে ইসরায়েলে আকস্মিক হামলা চালানোর সুযোগ পায় হামাস।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন, ‘জিম্মিদের মুক্তি পাওয়ার ধাপটি শেষ হলে ইসরায়েলের জন্য বড় চ্যালেঞ্জটি হবে গাজায় হামাসের সব সুড়ঙ্গ ধ্বংস করা। এ অভিযান পরিচালনার জন্য প্রস্তুত থাকতে আমি সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছি।’

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস সীমান্ত পার হয়ে ইসরায়েলি ভূখণ্ডে ঢুকে হামলা চালায়। জবাবে সেদিন থেকেই গাজায় হামলা শুরু করে ইসরায়েল। এরপর থেকে দুই বছর ধরে ইসরায়েলি হামলা চালিয়ে বেশ কিছু সুড়ঙ্গ ধ্বংস করে দিয়েছে।

হামাস মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প প্রস্তাবিত পরিকল্পনার প্রথম ধাপ মেনে নিয়েছে। এর আওতায় গত শুক্রবার থেকে গাজায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চলছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, আজ ৪৮ জন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেবে হামাস। এরমধ্যে যারা জীবিত আছেন, তাদের জীবিত অবস্থায় তুলে দেয়া হবে। আর যারা নিহত হয়েছেন, তাদের লাশ হস্তান্তর করা হবে।

ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির বিনিময়ে ইসরায়েল ২৫০ জন কারাবন্দীকে মুক্তি দেবে। এরমধ্যে প্রাণঘাতী হামলার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হওয়া কয়েকজন ব্যক্তিও আছেন। গাজা থেকে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর হাতে আটক হওয়া ১ হাজার ৭০০ জন প্যালেস্টাইনিও মুক্তি পাবেন।

তবে হামাস এখনও পুরোপুরি নিরস্ত্রীকরণের জন্য রাজি হয়নি। রোববার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা হোসাম বাদরান বলেছেন, মার্কিন পরিকল্পনার দ্বিতীয় ধাপে অনেক জটিলতা এবং সমস্যার বিষয় আছে।

শীর্ষ সম্মেলন যোগ দিচ্ছেন ট্রাম্পসহ ২০ বিশ্ব নেতা

প্যালেস্টাইনি ছিটমহল গাজায় যুদ্ধ শেষ করার লক্ষ্যে একটি চুক্তি চূড়ান্ত করতে মিশরের লোহিত সাগর তীরবর্তী অবকাশযাপন শহর শারম আল-শেখে একটি আন্তর্জাতিক শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আজকের এ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পসহ বিশ্বের ২০ জনেরও বেশি নেতা উপস্থিত থাকবেন বলে গতকাল শনিবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন মিশরের প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র। ওই বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ‘গাজা যুদ্ধ শেষ করতে একটি চুক্তি’ সম্পন্ন করাই এই সম্মেলনের মূল কাজ হবে বলে ।

এতে বলা হয়েছে, ‘এ সম্মেলনের লক্ষ্য গাজা ভূখণ্ডের যুদ্ধটি শেষ করা, মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা অর্জনের প্রচেষ্টাগুলোকে শক্তিশালী করা।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘এই অঞ্চলে শান্তি অর্জনের জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গী ও বিশ্বব্যাপী সংঘাত নিরসনে তার নিরলস প্রচেষ্টার ফলশ্রুতিতে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।’

বিবিসি জানিয়েছে, মিশরের এ বিবৃতির আগে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ নিশ্চিত করেছেন যে তিনি এ সম্মেলনে উপস্থিত থাকছেন।

আল জাজিরা জানিয়েছে, জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ও যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার জানিয়েছেন তারাও এ সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন। ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি ও স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজও শারম আল-শেখের সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন।

তবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বা প্যালেস্টাইনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের কোনো প্রতিনিধি সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন কিনা, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশের প্রধানরাও এ সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও মিশরের প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফাত্তা আল সিসি এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনের সভাপতিত্ব করবেন। সম্মেলনে গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ শেষ করার উদ্দেশে ট্রাম্পের প্রস্তাবিত শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।

back to top