alt

মামদানির ঐতিহাসিক জয়ের রহস্য কী

বিদেশী সংবাদ মাধ্যম : বুধবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৫

সমর্থকদের সামনে স্ত্রী রমা দুওয়াজিকে সঙ্গে নিয়ে জোহরান মামদানি -এএফপি

নিউইয়র্ক সিটির ইতিহাসে নতুন অধ্যায় রচনা করেছেন জোহরান মামদানি। মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিসেবে জয়ী হয়ে তিনি হয়ে গেছেন শহরটির ১১১তম মেয়র, সেই সঙ্গে নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম মেয়র, প্রথম দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত মেয়র এবং গত এক শতাব্দীর বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সী মেয়র। মাত্র ৩৪ বছর বয়সেই এই জয় অর্জন করে বিশ্বজুড়ে আলোচনায় এসেছেন তিনি।

নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো এবং রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়াকে বিপুল ব্যবধানে হারিয়ে জয়ী হয়েছেন জোহরান। তিনি একাই পেয়েছেন ৫০ শতাংশেরও বেশি ভোট, যেখানে কুমো পেয়েছেন প্রায় ৪০ শতাংশ, আর স্লিওয়ার ভোট ছিল মাত্র ৭ শতাংশের কিছু বেশি। এ জয়ের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে প্রগতিশীল আন্দোলনের একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে।

জোহরান মামদানি ছিলেন তুলনামূলকভাবে নতুন মুখ। কুইন্সের একজন অঙ্গরাজ্য পরিষদ সদস্য হিসেবে তাঁর রাজনৈতিক পরিচিতি ছিল সীমিত। কিন্তু শহরের সাধারণ মানুষের জীবনের ব্যয়, বাসস্থান সংকট, ভাড়ার লাগামছাড়া বৃদ্ধি ও পরিবহন সমস্যা নিয়ে তাঁর সাহসী অবস্থান তাঁকে জনপ্রিয় করে তোলে খুব অল্প সময়েই। নিউইয়র্কের মতো ব্যস্ত শহরে সাধারণ নাগরিকের বাস্তব সমস্যা নিয়ে সরাসরি কথা বলা, সরল ও সহজ ভাষায় প্রতিশ্রুতি দেওয়া এই দুই দিকেই জোহরান আলাদা ছিলেন অন্য প্রার্থীদের থেকে।

তাঁর নির্বাচনী ঘোষণায় ছিল সাশ্রয়ী আবাসন নির্মাণ, ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন জোরদার করা, ন্যূনতম মজুরি ঘণ্টায় ৩০ ডলারে উন্নীত করা, গণপরিবহনব্যবস্থা উন্নত করা ও ধনীদের ওপর কর বৃদ্ধি করার মতো সংস্কারমূলক প্রতিশ্রুতি। বড় বড় করপোরেটের অনুদান প্রত্যাখ্যান করে তিনি গড়ে তোলেন ছোট ছোট ব্যক্তিগত অনুদাননির্ভর প্রচারণা। হাজার হাজার তরুণ ও স্বেচ্ছাসেবীর অংশগ্রহণে তাঁর প্রচারণা হয়ে ওঠে এক সামাজিক আন্দোলনের রূপ।

নিউইয়র্ক সিটির রাস্তাঘাট, কমিউনিটি সেন্টার, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস সর্বত্র দেখা গিয়েছিল ‘পিপল ফর মামদানি’ স্লোগান। তাঁর প্রচারণার প্রাণ ছিল ‘পরিবর্তনের বার্তা’। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি যে বুদ্ধিদীপ্ত ও হাস্যরসাত্মক প্রচারণা চালিয়েছিলেন, তা তরুণ ভোটারদের ব্যাপকভাবে আকৃষ্ট করে। জুন মাসের ডেমোক্র্যাট প্রাইমারিতে তিনি যখন কুমোকে ১৩ পয়েন্টে হারান, তখন অনেকেই বুঝতে পারেন নিউইয়র্কের রাজনীতি নতুন পথে হাঁটতে যাচ্ছে।

অন্যদিকে, কুমো ছিলেন অভিজ্ঞ রাজনীতিক, কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগে ২০২১ সালে গভর্নরের পদ ছাড়ার পর তিনি জনপ্রিয়তা হারিয়েছিলেন। সেই সুনাম ফিরে পেতে তিনি এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে মেয়র নির্বাচনে নামেন। কিন্তু তাঁর প্রচারাভিযানে ছিল অভিজাতদের আধিপত্য, করপোরেট অনুদানের প্রভাব এবং অতীত বিতর্কের ছায়া। জোহরান একাধিক ভাষণে কুমোকে অভিযুক্ত করেন “তিনি সাধারণ মানুষের নয়, ধনীদের প্রতিনিধি।” কুমো পাল্টা বলেন, “মামদানি তরুণ, অভিজ্ঞতাহীন এবং শহর পরিচালনার উপযুক্ত নন।”

প্রচার চলাকালে নিউইয়র্কবাসী দেখেছে নানা বিতর্ক। জোহরান ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করায় ইসরায়েলপন্থি গোষ্ঠীগুলোর একাংশ তাঁর বিরোধিতা করে। এমনকি রক্ষণশীল মহল তাঁকে “জিহাদপন্থী” হিসেবেও আখ্যা দেয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও এক পর্যায়ে প্রকাশ্যে তাঁর বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। নিজের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ‘ট্রুথ সোশ্যালে’ ট্রাম্প লেখেন “যেসব ইহুদি মামদানিকে ভোট দেবে, তারা নিজেদের শত্রু। তারা বোকা এবং আত্মঘাতী কাজ করছে।” তিনি আরও হুমকি দেন, “মামদানি জিতলে নিউইয়র্ক ফেডারেল তহবিল থেকে বঞ্চিত হবে।”

ইলন মাস্কও ট্রাম্পের মতো মন্তব্য করে নিউইয়র্কবাসীকে কুমোকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান। কিন্তু এসব কটাক্ষ ও আক্রমণ মামদানির জনপ্রিয়তাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। বরং তাঁর প্রতি সহানুভূতি বাড়তে থাকে। তিনি প্রতিটি সভায় বলেন, “আমার বিরুদ্ধে ঘৃণা নয়, আমি ভালোবাসার রাজনীতি চাই।” এই সরল অথচ গভীর বার্তা শহরের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে তীব্র সাড়া তোলে।

জোহরানের নির্বাচনী প্রচারণায় যুক্ত ছিলেন প্রগতিশীল নেতা বার্নি স্যান্ডার্স ও আলেক্সান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্তেজের মতো প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব। তাঁরা প্রকাশ্যে জোহরানের পাশে দাঁড়িয়ে বলেন— “এই জয় শুধু নিউইয়র্কের নয়, এটি সাধারণ মানুষের জয়।” ক্যালিফোর্নিয়া, ভার্জিনিয়া ও নিউজার্সির নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের ধারাবাহিক সাফল্যের মধ্যেই মামদানির জয় আরও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।

নিউইয়র্কের প্রভাবশালী মিডিয়া ও বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই নির্বাচন ছিল আমেরিকার ‘নতুন প্রজন্মের রাজনীতি’র প্রতিফলন। যেখানে তরুণ প্রজন্ম, সংখ্যালঘু ও শ্রমজীবী মানুষ একসঙ্গে এসে অভিজাত রাজনীতিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে।

উগান্ডায় জন্ম নেওয়া ভারতীয় বংশোদ্ভূত জোহরান মামদানি মাত্র সাত বছর বয়সে পরিবারসহ নিউইয়র্কে আসেন। পরবর্তীতে তিনি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন এবং ২০১৮ সালে মার্কিন নাগরিকত্ব পান। গত জুলাইয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁর নাগরিকত্ব বাতিলের ইঙ্গিত দিলে মামদানি পাল্টা বলেন, “এটি কেবল আমার বিরুদ্ধে নয়, আমাদের গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে একটি হুমকি। যারা সত্য বলে, তাদের ভয় দেখাতে চাওয়া হচ্ছে।”

ছবি

শার্লটে অবৈধ অভিবাসীবিরোধী ফেডারেল অভিযান শুরু

ছবি

এবার মেক্সিকোতে জেন-জি ধাঁচে বিক্ষোভ

ছবি

সৌদি আরবে এক সপ্তাহে ২২ হাজারের বেশি বিদেশি গ্রেপ্তার

ছবি

ফিলিপাইনে হাজারো মানুষের বিক্ষোভ, প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ দাবি

ছবি

ট্রাম্প বনাম বিবিসির লড়াই, এরপর কী

ছবি

নীতিতে সংস্কার, আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য কঠোর হচ্ছে যুক্তরাজ্য

ছবি

কপে মতবিরোধ তীব্র, চুক্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা

ছবি

মামদানির প্রশাসনে কাজ করতে ৫০ হাজার আবেদন

ছবি

গ্রেপ্তার ও বিচার থেকে আজীবন দায়মুক্তি পেলেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান

ছবি

এপস্টেইন–ক্লিনটন সম্পর্কসহ প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে তদন্তে নির্দেশ ট্রাম্পের, নজরদারিতে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ

ছবি

জম্মু-কাশ্মীরে থানায় বিস্ফোরণে নিহত ৯

ছবি

ক্ষমা চেয়েও রক্ষা হচ্ছে না বিবিসির, মামলা করছেন ট্রাম্প

ছবি

মূল্যস্ফীতির শঙ্কায় খাদ্যদ্রব্যে শুল্ক প্রত্যাহার করলেন ট্রাম্প

ছবি

চীন সীমান্তে নতুন বিমানঘাঁটি চালু করল ভারত

ছবি

নীরবে যুদ্ধোত্তর গাজার নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে হামাস

ছবি

দিল্লি বিস্ফোরণে কাশ্মীর-সংযোগ খতিয়ে দেখছে ভারতীয় পুলিশ

ছবি

ল্যাটিন আমেরিকায় নতুন সামরিক অভিযানের ঘোষণা

ছবি

পশ্চিম তীরে মসজিদে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় বিশ্বসম্প্রদায়ের তীব্র নিন্দা

ছবি

গাজায় বাহিনী গঠনের মার্কিন প্রস্তাবে আপত্তি চীন-রাশিয়ার

ছবি

আমাজনের উল্টো আচরণ

ছবি

ট্রাম্প কেন পুতিনকে যুদ্ধ থামাতে রাজি করাতে পারছেন না?

ছবি

২৩০ বছর পর যুক্তরাষ্ট্রে বন্ধ হচ্ছে এক সেন্টের মুদ্রা উৎপাদন

ছবি

জলবায়ু সংকট আসলে স্বাস্থ্য সংকট: ডব্লিউএইচও

ছবি

মহাকাশে পারমাণবিক অস্ত্র মজুত করছে রাশিয়া: ম্যাখোঁ

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রে শেষ হলো ইতিহাসের দীর্ঘতম শাটডাউন

ছবি

আফগানিস্তানের প্রতি ১০ পরিবারের ৯টিই অনাহার বা ঋণে জর্জরিত

ছবি

নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদে বিস্ফোরণ, কাকতালীয় নাকি ষড়যন্ত্র

ছবি

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত জারা: মামদানির নির্বাচনী প্রচারে নেপথ্য কুশলী

ছবি

ভেনেজুয়েলা যেকোনও মার্কিন সামরিক আগ্রাসন মোকাবেলায় সশস্ত্র বাহিনী প্রস্তুত: প্রতিরক্ষামন্ত্রী

ছবি

চীনের কার্বন নিঃসরণ কখনও কম, কখনও স্থিতিশীল

ছবি

মার্কিন হামলার শঙ্কায় সশস্ত্র বাহিনীকে প্রস্তুত করছে ভেনেজুয়েলা

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিভাবান মানুষ নেই, তাই বিদেশি টানতে আগ্রহী ট্রাম্প

ছবি

সম্মেলনস্থলে ঢুকে পড়লেন বিক্ষোভকারীরা, নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে সংঘর্ষ

ছবি

যুক্তরাজ্যের রাজনীতিতে অস্থিরতা, অপসারণের আশঙ্কায় স্টারমার

ছবি

শান্তিচুক্তির দ্বিতীয় ধাপ অনিশ্চিত, বিভক্ত হওয়ার ঝুঁকিতে গাজা

ছবি

দিল্লির বিস্ফোরণে দোষীদের কাউকে ছাড়া হবে না: মোদী

tab

মামদানির ঐতিহাসিক জয়ের রহস্য কী

বিদেশী সংবাদ মাধ্যম

সমর্থকদের সামনে স্ত্রী রমা দুওয়াজিকে সঙ্গে নিয়ে জোহরান মামদানি -এএফপি

বুধবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৫

নিউইয়র্ক সিটির ইতিহাসে নতুন অধ্যায় রচনা করেছেন জোহরান মামদানি। মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিসেবে জয়ী হয়ে তিনি হয়ে গেছেন শহরটির ১১১তম মেয়র, সেই সঙ্গে নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম মেয়র, প্রথম দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত মেয়র এবং গত এক শতাব্দীর বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সী মেয়র। মাত্র ৩৪ বছর বয়সেই এই জয় অর্জন করে বিশ্বজুড়ে আলোচনায় এসেছেন তিনি।

নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো এবং রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়াকে বিপুল ব্যবধানে হারিয়ে জয়ী হয়েছেন জোহরান। তিনি একাই পেয়েছেন ৫০ শতাংশেরও বেশি ভোট, যেখানে কুমো পেয়েছেন প্রায় ৪০ শতাংশ, আর স্লিওয়ার ভোট ছিল মাত্র ৭ শতাংশের কিছু বেশি। এ জয়ের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে প্রগতিশীল আন্দোলনের একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে।

জোহরান মামদানি ছিলেন তুলনামূলকভাবে নতুন মুখ। কুইন্সের একজন অঙ্গরাজ্য পরিষদ সদস্য হিসেবে তাঁর রাজনৈতিক পরিচিতি ছিল সীমিত। কিন্তু শহরের সাধারণ মানুষের জীবনের ব্যয়, বাসস্থান সংকট, ভাড়ার লাগামছাড়া বৃদ্ধি ও পরিবহন সমস্যা নিয়ে তাঁর সাহসী অবস্থান তাঁকে জনপ্রিয় করে তোলে খুব অল্প সময়েই। নিউইয়র্কের মতো ব্যস্ত শহরে সাধারণ নাগরিকের বাস্তব সমস্যা নিয়ে সরাসরি কথা বলা, সরল ও সহজ ভাষায় প্রতিশ্রুতি দেওয়া এই দুই দিকেই জোহরান আলাদা ছিলেন অন্য প্রার্থীদের থেকে।

তাঁর নির্বাচনী ঘোষণায় ছিল সাশ্রয়ী আবাসন নির্মাণ, ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন জোরদার করা, ন্যূনতম মজুরি ঘণ্টায় ৩০ ডলারে উন্নীত করা, গণপরিবহনব্যবস্থা উন্নত করা ও ধনীদের ওপর কর বৃদ্ধি করার মতো সংস্কারমূলক প্রতিশ্রুতি। বড় বড় করপোরেটের অনুদান প্রত্যাখ্যান করে তিনি গড়ে তোলেন ছোট ছোট ব্যক্তিগত অনুদাননির্ভর প্রচারণা। হাজার হাজার তরুণ ও স্বেচ্ছাসেবীর অংশগ্রহণে তাঁর প্রচারণা হয়ে ওঠে এক সামাজিক আন্দোলনের রূপ।

নিউইয়র্ক সিটির রাস্তাঘাট, কমিউনিটি সেন্টার, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস সর্বত্র দেখা গিয়েছিল ‘পিপল ফর মামদানি’ স্লোগান। তাঁর প্রচারণার প্রাণ ছিল ‘পরিবর্তনের বার্তা’। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি যে বুদ্ধিদীপ্ত ও হাস্যরসাত্মক প্রচারণা চালিয়েছিলেন, তা তরুণ ভোটারদের ব্যাপকভাবে আকৃষ্ট করে। জুন মাসের ডেমোক্র্যাট প্রাইমারিতে তিনি যখন কুমোকে ১৩ পয়েন্টে হারান, তখন অনেকেই বুঝতে পারেন নিউইয়র্কের রাজনীতি নতুন পথে হাঁটতে যাচ্ছে।

অন্যদিকে, কুমো ছিলেন অভিজ্ঞ রাজনীতিক, কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগে ২০২১ সালে গভর্নরের পদ ছাড়ার পর তিনি জনপ্রিয়তা হারিয়েছিলেন। সেই সুনাম ফিরে পেতে তিনি এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে মেয়র নির্বাচনে নামেন। কিন্তু তাঁর প্রচারাভিযানে ছিল অভিজাতদের আধিপত্য, করপোরেট অনুদানের প্রভাব এবং অতীত বিতর্কের ছায়া। জোহরান একাধিক ভাষণে কুমোকে অভিযুক্ত করেন “তিনি সাধারণ মানুষের নয়, ধনীদের প্রতিনিধি।” কুমো পাল্টা বলেন, “মামদানি তরুণ, অভিজ্ঞতাহীন এবং শহর পরিচালনার উপযুক্ত নন।”

প্রচার চলাকালে নিউইয়র্কবাসী দেখেছে নানা বিতর্ক। জোহরান ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করায় ইসরায়েলপন্থি গোষ্ঠীগুলোর একাংশ তাঁর বিরোধিতা করে। এমনকি রক্ষণশীল মহল তাঁকে “জিহাদপন্থী” হিসেবেও আখ্যা দেয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও এক পর্যায়ে প্রকাশ্যে তাঁর বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। নিজের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ‘ট্রুথ সোশ্যালে’ ট্রাম্প লেখেন “যেসব ইহুদি মামদানিকে ভোট দেবে, তারা নিজেদের শত্রু। তারা বোকা এবং আত্মঘাতী কাজ করছে।” তিনি আরও হুমকি দেন, “মামদানি জিতলে নিউইয়র্ক ফেডারেল তহবিল থেকে বঞ্চিত হবে।”

ইলন মাস্কও ট্রাম্পের মতো মন্তব্য করে নিউইয়র্কবাসীকে কুমোকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান। কিন্তু এসব কটাক্ষ ও আক্রমণ মামদানির জনপ্রিয়তাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। বরং তাঁর প্রতি সহানুভূতি বাড়তে থাকে। তিনি প্রতিটি সভায় বলেন, “আমার বিরুদ্ধে ঘৃণা নয়, আমি ভালোবাসার রাজনীতি চাই।” এই সরল অথচ গভীর বার্তা শহরের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে তীব্র সাড়া তোলে।

জোহরানের নির্বাচনী প্রচারণায় যুক্ত ছিলেন প্রগতিশীল নেতা বার্নি স্যান্ডার্স ও আলেক্সান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্তেজের মতো প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব। তাঁরা প্রকাশ্যে জোহরানের পাশে দাঁড়িয়ে বলেন— “এই জয় শুধু নিউইয়র্কের নয়, এটি সাধারণ মানুষের জয়।” ক্যালিফোর্নিয়া, ভার্জিনিয়া ও নিউজার্সির নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের ধারাবাহিক সাফল্যের মধ্যেই মামদানির জয় আরও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।

নিউইয়র্কের প্রভাবশালী মিডিয়া ও বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই নির্বাচন ছিল আমেরিকার ‘নতুন প্রজন্মের রাজনীতি’র প্রতিফলন। যেখানে তরুণ প্রজন্ম, সংখ্যালঘু ও শ্রমজীবী মানুষ একসঙ্গে এসে অভিজাত রাজনীতিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে।

উগান্ডায় জন্ম নেওয়া ভারতীয় বংশোদ্ভূত জোহরান মামদানি মাত্র সাত বছর বয়সে পরিবারসহ নিউইয়র্কে আসেন। পরবর্তীতে তিনি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন এবং ২০১৮ সালে মার্কিন নাগরিকত্ব পান। গত জুলাইয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁর নাগরিকত্ব বাতিলের ইঙ্গিত দিলে মামদানি পাল্টা বলেন, “এটি কেবল আমার বিরুদ্ধে নয়, আমাদের গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে একটি হুমকি। যারা সত্য বলে, তাদের ভয় দেখাতে চাওয়া হচ্ছে।”

back to top