alt

শান্তিচুক্তির দ্বিতীয় ধাপ অনিশ্চিত, বিভক্ত হওয়ার ঝুঁকিতে গাজা

বিদেশী সংবাদ মাধ্যম : বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫

গাজা উপত্যকার মধ্যবর্তী বুরেইজ শরণার্থী শিবিরে সোমবার বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি শিশুরা তাদের তাঁবুর বাইরে বসে আছে -এএফপি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনার প্রথম ধাপ ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতির মধ্যেই জিম্মি-বন্দিবিনিময়ের মাধ্যমে শেষ হতে চলেছে। তবে পরিকল্পনার দ্বিতীয় ধাপ মোটেও এগোয়নি।

গাজার একাংশে বাড়িঘর তৈরির পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্রের, থাকবে কেবল ‘হামাসবিরোধীরা’

গাজায় স্বাধীন কর্তৃপক্ষ বসানো কিংবা নিরাপত্তা বাহিনী গঠন করার বিষয়টি এখনও অন্ধকারেই রয়ে গেছে। এ অবস্থায় ইসরায়েলি সেনাদের চিহ্নিত করা হলুদ রেখা বরাবর গাজা বিভক্ত হওয়ার শঙ্কা বাড়ছে। অন্যদিকে গাজায় হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। বিশেষ করে বিভিন্ন স্থানে প্রায় প্রতিদিনই গোলাবর্ষণ করছে তারা। নিহত কিংবা আহতের তালিকা বড় হচ্ছে দিন দিন। গতকাল মঙ্গলবার রয়টার্সের প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে।

গাজা এখন কার্যত দুই অংশে ভাগ হয়ে গেছে। হলুদ রেখা বরাবর এলাকা ইসরায়েলি সেনারা নিয়ন্ত্রণ করছে, যা গাজার মোট এলাকার ৫৩ শতাংশ। এই এলাকার মধ্যে রয়েছে গাজার বেশির ভাগ কৃষিজমি, দক্ষিণে রাফা, গাজা শহরের কিছু অংশ এবং অন্যান্য নগর এলাকা। আর অস্ত্র ত্যাগ না করা পর্যন্ত বাকি অংশ হামাসের নিয়ন্ত্রণেই থাকছে বলা যায়। এ অবস্থায় ট্রাম্পের পরিকল্পনার দ্বিতীয় ধাপ বাস্তবায়ন না হলে গাজা কার্যত বিভক্তই থাকবে। এই বিভাজন বছরের পর বছর ধরে চলতে পারে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

গত ১০ অক্টোবর গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। এরই মধ্যে ইসরায়েল ২৮২ বার শান্তিচুক্তি লঙ্ঘন করে হামলা চালিয়েছে। এসব হামলায় অন্তত ২৪২ নিহত ও ৬২০ জন আহত হয়েছেন। গত দুই বছরে দখলদার বাহিনীর হামলায় প্রাণ গেছে ৬৯ হাজার ১৬৯ ফিলিস্তিনির। বর্তমানে গাজার প্রায় ২০ লাখ মানুষ তাঁবুতে বসবাস করছে। কারণ ইসরায়েলি হামলায় তাদের বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গেছে। গাজার বিশাল অংশ ধ্বংসস্তূপে আটকা পড়েছে। রয়টার্সের ড্রোন ফুটেজে দেখা গেছে, গাজা শহরের উত্তর-পূর্বে ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে। কয়েক মাস ধরে বোমাবর্ষণের ফল এটা।

ট্রাম্পের পরিকল্পনার পরবর্তী ধাপ কার্যকর হলে তথাকথিত হলুদ রেখা থেকে ইসরায়েলকে আরও সরে যেতে হবে। পাশাপাশি গাজা শাসনের জন্য একটি অন্তর্বর্তীকালীন কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর কাছ থেকে ক্ষমতা গ্রহণের জন্য একটি বহুজাতিক নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন থাকবে। কিন্তু চুক্তির দ্বিতীয় ধাপ কবে বাস্তবায়ন হবে, তা কেউ জানে না।

হামাস নিরস্ত্রীকরণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছে শুরু থেকেই। তারা যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরায়েল সমর্থিত কোনো কর্তৃপক্ষের শাসন মানবে না। একই কারণে বহুজাতিক বাহিনী গঠনও এখন অনিশ্চয়তায়। ইতোমধ্যে কাতার ঘোষণা করেছে, স্পষ্ট রূপরেখা ছাড়া তারা গাজার বাহিনীতে অংশ নেবে না। পরিকল্পনার প্রথম পর্যায়ের অংশ হিসেবে হামাস গাজায় আটকে থাকা শেষ ২০ জন জীবিত জিম্মিকে এবং ২৪ জন মৃত জিম্মির দেহাবশেষকে মুক্তি দিয়েছে। আরও চার জিম্মির দেহাবশেষ এখনও গাজায় রয়েছে।

এদিকে, গাজায় ফিলিস্তিনিদের জন্য বাড়িঘর তৈরির পরিকল্পনা করছে যুক্তরাষ্ট্র। এসব বাড়িঘর নির্মিত হবে ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুসারে যে হলুদ রেখায় পিছিয়ে গেছে তার বাইরের উন্মুক্ত এলাকায়। তবে এসব বাড়িঘরে ‘স্ক্রিনিং’, তথা বাছাই করা ফিলিস্তিনিদের আশ্রয় দেওয়া হবে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য আটলান্টিক সোমবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে। গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের দখল করা এলাকায় তথাকথিত ‘হলুদ রেখা’র পেছনে হাজারো ‘স্ক্রিনিং করা বা বাছাইকৃত’ ফিলিস্তিনির জন্য ঘরবাড়ি তৈরির পরিকল্পনা বিবেচনা করছে যুক্তরাষ্ট্র।

এই পরিকল্পনায় যুক্ত থাকা যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলি কর্মকর্তারা এসব বসতিকে বলেছেন ‘অষঃবৎহধঃব ঝধভব ঈড়সসঁহরঃরবং বা বিকল্প নিরাপদ সম্প্রদায়।’ এখানে প্রবেশের আগে ফিলিস্তিনিদের ‘হামাসবিরোধী’ মনোভাব প্রমাণের পরীক্ষা দিতে হবে। প্রস্তাবটি উঠে আসে যুক্তরাষ্ট্র সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট জেনারেল প্যাট্রিক ফ্র্যাঙ্কের এক ই-মেইলে। তিনি গাজায় যুদ্ধবিরতির তত্ত্বাবধানে থাকা বেসামরিক-সামরিক সমন্বয় কেন্দ্রের প্রধান। এসব কেন্দ্রে নিয়মিত ইসরায়েলি সেনাদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের খবর পাওয়া যায়।

ফ্র্যাঙ্ক তাঁর ই-মেইলে লিখেছেন, প্রতিটি বসতিতে একটি চিকিৎসাকেন্দ্র, একটি স্কুল, একটি প্রশাসনিক ভবন এবং প্রায় ২৫ হাজার মানুষের অস্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থা থাকতে হবে। তবে দ্য আটলান্টিক জানিয়েছে, এই পরিকল্পনা প্রায় প্রতিদিনই বদলাচ্ছে, বসতিগুলোর নির্ধারিত জনসংখ্যাও ক্রমে পরিবর্তন হচ্ছে। একপর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইসরায়েলি সামরিক কর্মকর্তাদের দল পরিকল্পনাটি সংশোধন করে প্রতিটি বসতির জনসংখ্যা ২৫ হাজার থেকে কমিয়ে প্রায় ৬ হাজারে নামিয়ে এনেছে।

প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের জামাতা ও উপদেষ্টা জ্যারেড কুশনার প্রকাশ্যে বলেছিলেন, গাজার যেসব এলাকা ইসরায়েলি বাহিনীর দখলে আছে, যুক্তরাষ্ট্র ও তার অংশীদাররা সেই অঞ্চলগুলো পুনর্গঠন করতে পারে। তবে হামাস নিয়ন্ত্রিত কেন্দ্রীয় গাজাকে ধ্বংসস্তূপ হিসেবে রেখে দেওয়া হবে। গাজা ভাগ করার এই পরিকল্পনায় নানা বিপদ রয়েছে। তবু সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের শান্তি-প্রচেষ্টার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ দুই আরব কূটনীতিক বলেছেন, তাঁরা এই উদ্যোগকে গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমস জানিয়েছে, আরব ও ইউরোপীয় দেশগুলো এই পরিকল্পনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তাদের আশঙ্কা, এটি গাজার একাংশকে স্থায়ীভাবে দখল করে রাখার প্রাথমিক ধাপ হতে পারে।

ছবি

চীনের কার্বন নিঃসরণ কখনও কম, কখনও স্থিতিশীল

ছবি

মার্কিন হামলার শঙ্কায় সশস্ত্র বাহিনীকে প্রস্তুত করছে ভেনেজুয়েলা

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিভাবান মানুষ নেই, তাই বিদেশি টানতে আগ্রহী ট্রাম্প

ছবি

সম্মেলনস্থলে ঢুকে পড়লেন বিক্ষোভকারীরা, নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে সংঘর্ষ

ছবি

যুক্তরাজ্যের রাজনীতিতে অস্থিরতা, অপসারণের আশঙ্কায় স্টারমার

ছবি

দিল্লির বিস্ফোরণে দোষীদের কাউকে ছাড়া হবে না: মোদী

ছবি

দিল্লিতে গাড়ি বিস্ফোরণ, নিহত অন্তত ৯ জন

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ‘শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক চুক্তি’ চায় ইরান

ছবি

জোহরান মামদানির কাজে কীভাবে ট্রাম্প বাগড়া দিতে পারেন

শুল্কের বিরোধীরা ‘মূর্খ’, রাজস্ব থেকে মার্কিনদের ২০০০ ডলার ‘লভ্যাংশ’ দেয়া হবে: ট্রাম্প

ছবি

বিবিসির বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকি ট্রাম্পের, ক্ষমা চাইলেন সমির শাহ

ছবি

বিবিসি এখন বিশৃঙ্খল, নেতৃত্বহীন প্রতিষ্ঠান: সাবেক কর্মকর্তা অলিভার

ছবি

সৌদি আরবের সর্বোচ্চ সম্মাননা বাদশাহ আব্দুল আজিজ মেডেল পেলেন পাকিস্তানের শীর্ষ জেনারেল

ছবি

সংযুক্ত আরব আমিরাত গাজা স্থিতিশীলতা বাহিনীতে যোগ দেবে না

ছবি

সারকোজিকে মুক্তির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে ফরাসি আদালত

ছবি

মালয়েশিয়া-থাইল্যান্ড সীমান্তের কাছে নৌকাডুবিতে মৃত্যু বেড়ে ১১

ছবি

দক্ষিণ কোরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ইউনের বিরুদ্ধে নতুন অভিযোগ

ছবি

নয়া দিল্লিতে ইন্ডিয়া গেইটে দূষণবিরোধী বিক্ষোভ, ডজনের বেশি আটক

ছবি

একুয়েডরে কারাগারে দাঙ্গার মধ্যে অন্তত ৩১ জনের মৃত্যু

ছবি

মামদানির নিউইয়র্ক পরিকল্পনায় বাদ সাধতে পারেন ট্রাম্প

ছবি

গাজায় মৃত্যু ৬৯ হাজার ছাড়িয়েছে, ইসরায়েলি সেনার মৃতদেহ উদ্ধার করলো হামাস

ছবি

পাকিস্তানে বিতর্কিত ২৭তম সংবিধান সংশোধনী বিল সিনেটে উপস্থাপন

ছবি

সংবিধান সংশোধনীর বিরুদ্ধে পাকিস্তানজুড়ে বিক্ষোভের ঘোষণা বিরোধী জোটের

ছবি

লেবাননে ইসরায়েলি হামলার নিন্দা জানাল ইউরোপীয় ইউনিয়ন

ছবি

সিরিয়া- যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের নতুন অধ্যায়, ওয়াশিংটনে আল শারা

ছবি

তীব্র দূষণের ঝুঁকিতে গাজার জনস্বাস্থ্য

ছবি

কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ খরার মুখোমুখি ইংল্যান্ড

ছবি

মামদানির প্রচারকৌশলে এগোনোর চেষ্টা ট্রাম্পের

ছবি

২৬ মার্কিন ধনকুবেরের সোয়া দুই কোটি ডলারও মামদানির জয় ঠেকাতে পারেনি

ছবি

আফগানিস্তান-পাকিস্তান শান্তি আলোচনা ব্যর্থ, যুদ্ধবিরতি এখনও বহাল

ছবি

পুতিনের সঙ্গে এখনও বৈঠকের সুযোগ আছে : ট্রাম্প

ছবি

ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামোতে রাশিয়ার ভয়াবহ হামলা

ছবি

সন্ত্রাসী তালিকা থেকে সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের নাম মুছলো যুক্তরাষ্ট্র

ছবি

অ্যান্টার্কটিকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে

ছবি

ভেস্তে গেলো আফগানিস্তান-পাকিস্তান আলোচনা

নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে তুরস্কের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

tab

শান্তিচুক্তির দ্বিতীয় ধাপ অনিশ্চিত, বিভক্ত হওয়ার ঝুঁকিতে গাজা

বিদেশী সংবাদ মাধ্যম

গাজা উপত্যকার মধ্যবর্তী বুরেইজ শরণার্থী শিবিরে সোমবার বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি শিশুরা তাদের তাঁবুর বাইরে বসে আছে -এএফপি

বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনার প্রথম ধাপ ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতির মধ্যেই জিম্মি-বন্দিবিনিময়ের মাধ্যমে শেষ হতে চলেছে। তবে পরিকল্পনার দ্বিতীয় ধাপ মোটেও এগোয়নি।

গাজার একাংশে বাড়িঘর তৈরির পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্রের, থাকবে কেবল ‘হামাসবিরোধীরা’

গাজায় স্বাধীন কর্তৃপক্ষ বসানো কিংবা নিরাপত্তা বাহিনী গঠন করার বিষয়টি এখনও অন্ধকারেই রয়ে গেছে। এ অবস্থায় ইসরায়েলি সেনাদের চিহ্নিত করা হলুদ রেখা বরাবর গাজা বিভক্ত হওয়ার শঙ্কা বাড়ছে। অন্যদিকে গাজায় হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। বিশেষ করে বিভিন্ন স্থানে প্রায় প্রতিদিনই গোলাবর্ষণ করছে তারা। নিহত কিংবা আহতের তালিকা বড় হচ্ছে দিন দিন। গতকাল মঙ্গলবার রয়টার্সের প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে।

গাজা এখন কার্যত দুই অংশে ভাগ হয়ে গেছে। হলুদ রেখা বরাবর এলাকা ইসরায়েলি সেনারা নিয়ন্ত্রণ করছে, যা গাজার মোট এলাকার ৫৩ শতাংশ। এই এলাকার মধ্যে রয়েছে গাজার বেশির ভাগ কৃষিজমি, দক্ষিণে রাফা, গাজা শহরের কিছু অংশ এবং অন্যান্য নগর এলাকা। আর অস্ত্র ত্যাগ না করা পর্যন্ত বাকি অংশ হামাসের নিয়ন্ত্রণেই থাকছে বলা যায়। এ অবস্থায় ট্রাম্পের পরিকল্পনার দ্বিতীয় ধাপ বাস্তবায়ন না হলে গাজা কার্যত বিভক্তই থাকবে। এই বিভাজন বছরের পর বছর ধরে চলতে পারে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

গত ১০ অক্টোবর গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। এরই মধ্যে ইসরায়েল ২৮২ বার শান্তিচুক্তি লঙ্ঘন করে হামলা চালিয়েছে। এসব হামলায় অন্তত ২৪২ নিহত ও ৬২০ জন আহত হয়েছেন। গত দুই বছরে দখলদার বাহিনীর হামলায় প্রাণ গেছে ৬৯ হাজার ১৬৯ ফিলিস্তিনির। বর্তমানে গাজার প্রায় ২০ লাখ মানুষ তাঁবুতে বসবাস করছে। কারণ ইসরায়েলি হামলায় তাদের বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গেছে। গাজার বিশাল অংশ ধ্বংসস্তূপে আটকা পড়েছে। রয়টার্সের ড্রোন ফুটেজে দেখা গেছে, গাজা শহরের উত্তর-পূর্বে ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে। কয়েক মাস ধরে বোমাবর্ষণের ফল এটা।

ট্রাম্পের পরিকল্পনার পরবর্তী ধাপ কার্যকর হলে তথাকথিত হলুদ রেখা থেকে ইসরায়েলকে আরও সরে যেতে হবে। পাশাপাশি গাজা শাসনের জন্য একটি অন্তর্বর্তীকালীন কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর কাছ থেকে ক্ষমতা গ্রহণের জন্য একটি বহুজাতিক নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন থাকবে। কিন্তু চুক্তির দ্বিতীয় ধাপ কবে বাস্তবায়ন হবে, তা কেউ জানে না।

হামাস নিরস্ত্রীকরণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছে শুরু থেকেই। তারা যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরায়েল সমর্থিত কোনো কর্তৃপক্ষের শাসন মানবে না। একই কারণে বহুজাতিক বাহিনী গঠনও এখন অনিশ্চয়তায়। ইতোমধ্যে কাতার ঘোষণা করেছে, স্পষ্ট রূপরেখা ছাড়া তারা গাজার বাহিনীতে অংশ নেবে না। পরিকল্পনার প্রথম পর্যায়ের অংশ হিসেবে হামাস গাজায় আটকে থাকা শেষ ২০ জন জীবিত জিম্মিকে এবং ২৪ জন মৃত জিম্মির দেহাবশেষকে মুক্তি দিয়েছে। আরও চার জিম্মির দেহাবশেষ এখনও গাজায় রয়েছে।

এদিকে, গাজায় ফিলিস্তিনিদের জন্য বাড়িঘর তৈরির পরিকল্পনা করছে যুক্তরাষ্ট্র। এসব বাড়িঘর নির্মিত হবে ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুসারে যে হলুদ রেখায় পিছিয়ে গেছে তার বাইরের উন্মুক্ত এলাকায়। তবে এসব বাড়িঘরে ‘স্ক্রিনিং’, তথা বাছাই করা ফিলিস্তিনিদের আশ্রয় দেওয়া হবে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য আটলান্টিক সোমবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে। গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের দখল করা এলাকায় তথাকথিত ‘হলুদ রেখা’র পেছনে হাজারো ‘স্ক্রিনিং করা বা বাছাইকৃত’ ফিলিস্তিনির জন্য ঘরবাড়ি তৈরির পরিকল্পনা বিবেচনা করছে যুক্তরাষ্ট্র।

এই পরিকল্পনায় যুক্ত থাকা যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলি কর্মকর্তারা এসব বসতিকে বলেছেন ‘অষঃবৎহধঃব ঝধভব ঈড়সসঁহরঃরবং বা বিকল্প নিরাপদ সম্প্রদায়।’ এখানে প্রবেশের আগে ফিলিস্তিনিদের ‘হামাসবিরোধী’ মনোভাব প্রমাণের পরীক্ষা দিতে হবে। প্রস্তাবটি উঠে আসে যুক্তরাষ্ট্র সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট জেনারেল প্যাট্রিক ফ্র্যাঙ্কের এক ই-মেইলে। তিনি গাজায় যুদ্ধবিরতির তত্ত্বাবধানে থাকা বেসামরিক-সামরিক সমন্বয় কেন্দ্রের প্রধান। এসব কেন্দ্রে নিয়মিত ইসরায়েলি সেনাদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের খবর পাওয়া যায়।

ফ্র্যাঙ্ক তাঁর ই-মেইলে লিখেছেন, প্রতিটি বসতিতে একটি চিকিৎসাকেন্দ্র, একটি স্কুল, একটি প্রশাসনিক ভবন এবং প্রায় ২৫ হাজার মানুষের অস্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থা থাকতে হবে। তবে দ্য আটলান্টিক জানিয়েছে, এই পরিকল্পনা প্রায় প্রতিদিনই বদলাচ্ছে, বসতিগুলোর নির্ধারিত জনসংখ্যাও ক্রমে পরিবর্তন হচ্ছে। একপর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইসরায়েলি সামরিক কর্মকর্তাদের দল পরিকল্পনাটি সংশোধন করে প্রতিটি বসতির জনসংখ্যা ২৫ হাজার থেকে কমিয়ে প্রায় ৬ হাজারে নামিয়ে এনেছে।

প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের জামাতা ও উপদেষ্টা জ্যারেড কুশনার প্রকাশ্যে বলেছিলেন, গাজার যেসব এলাকা ইসরায়েলি বাহিনীর দখলে আছে, যুক্তরাষ্ট্র ও তার অংশীদাররা সেই অঞ্চলগুলো পুনর্গঠন করতে পারে। তবে হামাস নিয়ন্ত্রিত কেন্দ্রীয় গাজাকে ধ্বংসস্তূপ হিসেবে রেখে দেওয়া হবে। গাজা ভাগ করার এই পরিকল্পনায় নানা বিপদ রয়েছে। তবু সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের শান্তি-প্রচেষ্টার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ দুই আরব কূটনীতিক বলেছেন, তাঁরা এই উদ্যোগকে গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমস জানিয়েছে, আরব ও ইউরোপীয় দেশগুলো এই পরিকল্পনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তাদের আশঙ্কা, এটি গাজার একাংশকে স্থায়ীভাবে দখল করে রাখার প্রাথমিক ধাপ হতে পারে।

back to top