ওয়াশিংটন ও মস্কোর মধ্যে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে দ্রুত উত্তেজনা বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্র একদিকে রাশিয়ার তেল কোম্পানি রসনেফট ও লুকঅয়েলের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। অন্যদিকে ক্রেমলিন তাদের নতুন পারমাণবিক শক্তিচালিত বুরেভেস্টনিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র এবং পোসাইডন আন্ডারওয়াটার ড্রোন পরীক্ষা করেছে।
উভয় দেশই বলেছে তারা পারমাণবিক পরীক্ষা পুনরায় শুরু করতে পারে। উভয় দেশ যে কেবল হুমকি দিচ্ছে এমন না, বরং স্থলভাগেও যুদ্ধ অব্যাহত রয়েছে। বছরের শুরুতে সম্পর্ক উন্নতির সম্ভাবনা থাকলেও এখন পরিস্থিতি নাটকীয়ভাবে পাল্টে গেছে। ডনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে প্রবেশ করেছিলেন ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ ও ‘ভ্লাদিমিরের সঙ্গে শান্তি স্থাপন’ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে। কিন্তু যুদ্ধ এখনো অব্যহত রয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া শান্তি প্রস্তাবের বদলে হুমকি দেয়া চালিয়ে যাচ্ছে।পুতিনের সঙ্গে ব্যক্তিগত কূটনীতিতে ট্রাম্পের বাজি এখনো কেন কাজ করেনি?
‘ভালো কথা হয়, কিন্তু এগোয় না’: ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের শুরুর দিকে কিছুটা অগ্রগতির আংশিক ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল। রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার আক্রমণের পর প্রথমবার ওয়াশিংটন ও মস্কো সরাসরি আলোচনা করে। দুই প্রেসিডেন্ট নিয়মিত ফোনে কথা বলেন এবং গত আগস্টে আলাস্কায় বৈঠক করেন। এ মুহূর্তে উভয় পক্ষের একমাত্র সাফল্য হলো যে সংলাপ অন্তত চলছে।
মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের ইউরোপ ও রাশিয়া বিষয়ক সাবেক সিনিয়র ডিরেক্টর অ্যান্ড্রু পিক বলছেন, “আমরা অন্তত শান্তি প্রক্রিয়া নিয়ে কথা বলছি—এটাই বড় অগ্রগতি। অবস্থান তুলে ধরা, মত বিনিময় করা, এটাই কূটনীতির ভিত্তি।”
বিশেষ দূত উইটকফ: ট্রাম্প ব্যক্তিগত সম্পর্কের ওপরই বেশি ভরসা করেছেন। তিনি তার পুরনো নিউ ইয়র্ক রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়িক ঘনিষ্ঠ বন্ধু স্টিভ উইটকফকে বিশেষ দূত হিসেবে পুতিনের সঙ্গে দেখা করার জন্য বেশ কয়েকবার পাঠিয়েছেন। প্রতিটি সফরের পর দুই পক্ষই জানায় তারা সমঝোতার কাছাকাছি চলে এসেছেন। কিন্তু পররাষ্ট্র নিয়ে যারা কাজ করেন সেসব মহলে উইটকফের কূটনৈতিক অভিজ্ঞতা নিয়ে সন্দেহ আছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইউরোপের দুই কূটনীতিক বিবিসিকে জানান, উইটকফ প্রায়ই পুতিন ছাড় দেবেন এমন ভুল ধারণা ধরে নিয়ে মস্কো যেতেন কিন্তু পরে হোয়াইট হাউস দেখতো বাস্তবতা তার উল্টো।
রাশিয়ার একজন সাবেক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেন, উইটকফ রাশিয়ার অবস্হানের সূক্ষ্মতা বুঝতে পারতেন না এবং ক্রেমলিনকে মার্কিন নীতি ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রেও অসংগত ছিলেন। ফলে উভয় পক্ষই প্রায়ই বিপরীত উদ্দেশ্য নিয়ে কথা বলছিল। এ বিভ্রাট আলাস্কার পুতিন-ট্রাম্প বৈঠকে সবার সামনেই প্রকাশ পায়। সম্মেলন হঠাৎ সংক্ষিপ্ত করা হয়, কোনো স্পষ্ট ব্যাখ্যা ছাড়াই। পরে ট্রাম্প এবং পুতিন যখন একটি যৌথ সংবাদ সম্মেলনে উপস্হিত হন, তখন তারা যুদ্ধ শেষের জন্য কোনো সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপের ঘোষণা দেননি।
পুতিনের দিক থেকে ন্যূনতম প্রতিশ্রুতিও না পাওয়া ট্রাম্পকে বৈঠকের আয়োজক হিসেবে কঠিন অবস্হায় ফেলে। পর্দার আড়ালে কী হয়েছে তা দুই পক্ষই স্পষ্ট করেনি; ফলে সাংবাদিকরা গোপন সূত্রে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করেন। ফিনান্সিয়াল টাইমস জানায় ট্রাম্প ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতির বিনিময়ে নিষেধাজ্ঞা শিথিল ও বাণিজ্য বাড়ানোর প্রস্তাব দেন। পুতিন তা সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেন এবং ইউক্রেনের আত্মসমর্পণ ও পুরো ডনবাসের নিয়ন্ত্রণ দাবি করেন এবং একটি “ঐতিহাসিক বক্তৃতা” দেন, যা ট্রাম্পকে ক্ষুব্ধ করে, বলে ওই রিপোর্টে উল্লেখ আছে।
ইউরোপের এক কূটনীতিক বিবিসিকে বলেন, “আমেরিকানরা আলাস্কায় অগ্রগতির ঘাটতি দেখে সত্যিই হতাশ হয়েছিল।” আরেকজন বলেন, তারা ভুল বুঝেছিল রাশিয়ার জন্য যুদ্ধ আসলে কী অর্থ বহন করে। বাইডেন প্রশাসনের সময়ে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের সাবেক রাশিয়া উপদেষ্টা এরিক গ্রিন বলেন, “সম্ভাব্য ছাড় ও বিনিময় নিয়ে অনেক ভুল বোঝাবুঝি ছিল। অঞ্চল ছাড়াও নিরাপত্তা নিশ্চয়তার বিষয় ছিল, আর ট্রাম্প প্রশাসনের কিছু মানুষ বুঝতে পারেনি পুতিন ‘যুদ্ধের মূল কারণ’ বলতে কী বোঝাচ্ছেন।”
ট্রাম্প নিজেও হতাশ হয়েছিলেন। “প্রতিবার ভ্লাদিমিরের সঙ্গে আলোচনা করি, ভালো কথা হয়, কিন্তু কিছুই এগোয় না,”—অক্টোবরের নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার সময় তিনি বলেন। পুতিন আসলে কী চান: মস্কোতে রাশিয়ার সরকারি অবস্থান সাম্প্রতিক মাসগুলোতে খুব একটা বদলায়নি। যুদ্ধ শেষের পুতিনের শর্তগুলো হলো: পাঁচটি ইউক্রেনীয় অঞ্চলে রাশিয়ার সার্বভৌমত্ব স্বীকৃতি। ইউক্রেনের নিরপেক্ষ অবস্থান। ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী কমানো। রুশ ভাষার সাংবিধানিক সুরক্ষা। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার।
রাশিয়া বলছে, একটি পূর্ণাঙ্গ রাজনৈতিক চুক্তির পরই যুদ্ধ থামবে। ওয়াশিংটন ও কিয়েভের কাছে এটি অগ্রহণযোগ্য। তাদের মতে, আগে যুদ্ধবিরতি হতে হবে। অ্যান্ড্রু পিক বলেন, অগ্রগতি করতে হলে তিন বিষয়ে সমঝোতা জরুরি ভূখণ্ড। ইউক্রেনের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ। ইউক্রেনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা তার মতে, এসব বিষয়গুলির কোনোটিতেই প্রায় কোনো অগ্রগতি হয়নি।
ট্রাম্প শুরুতে ভূখণ্ডের বিষয়ে আপোষের ক্ষেত্রে নমনীয় ছিলেন।
এপ্রিলেই তিনি বলেন, “ক্রিমিয়া রাশিয়ার মতোই থাকবে,” এবং তার দল ২০১৪ সালে এ অঞ্চলের অধিগ্রহণের স্বীকৃতির সম্ভাবনাও পরখ করেছিল বলে মিডিয়া রিপোর্টে উল্লেখ আছে। অক্টোবরে ভলোদিমির জেলেনস্কির সাথে বৈঠকেও ট্রাম্প ‘অঞ্চল বিনিময়’ প্রস্তাব তোলেন বলে রয়টার্স জানায়। রাশিয়াও কিছুটা নমনীয়তার ইঙ্গিত দিয়েছিল। তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, দক্ষিণ ইউক্রেনের বর্তমান ফ্রন্টলাইন ধরে মস্কো হয়তো সমঝোতা করতে পারে। তবে তিনি এটাও বলেন, রাশিয়া এখনো খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ ডনবাস অঞ্চলের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ চায় যেখানে তারা আংশিক হামলা করেছে।
ক্রেমলিন জানিয়েছে, চলমান আলোচনার মধ্যে ভূখণ্ড সংক্রান্ত বিষয়সহ কোনো বিস্তারিত বিবরণ প্রকাশ করবে না। কি‘ কূটনীতিকরা জোর দিয়ে বলেন যে ইউক্রেনের ভূমির উপর নিয়ন্ত্রণ সবচেয়ে জটিল বিষয় নয়। ইউরোপের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেন, ট্রাম্প তার ব্যবসায়িক মানসিকতায় “রিয়েল এস্টেট ডিল” চেয়েছিলেন। কি‘ পুতিনের কাছে বিষয়টি শুধু ভূখণ্ডের বিষয় নয়—এটা ইউক্রেনের ওপর সার্বভৌমত্বের বিষয়। অর্থাৎ কিয়েভের রাজনৈতিক দিকনির্দেশনা ও সামরিক সক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ। মস্কো যথাযথ “নিরপেক্ষতা” এবং ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর ব্যাপক হ্রাস চায়। অন্যদিকে কিয়েভ যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর কাছ থেকে পোক্ত নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দাবি করে। পিক বলেন, “নিরাপত্তা নিশ্চয়তায় রাশিয়া একেবারেই নমনীয় না, ২০২২ সালেও, এখনো। এখানে ব্যবধান ভূখণ্ডের প্রশ্নের চেয়ে অনেক বড়।”
‘সময় কেনা’: এই শরতে বুদাপেস্টে শীর্ষ সম্মেলন আয়োজনের ব্যর্থ প্রচেষ্টা অচলাবস্হা্কে আরও স্পষ্ট করে তুলেছে। অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে ফোনালাপের পর ট্রাম্প ও পুতিন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভকে প্রতির দায়িত্ব দেন। তারা একবার কথা বলেছিলেন, কি‘ কোনও বৈঠক হয়নি। ব্লুমবার্গ জানায়, রুবিও বুঝতে পারছেন মস্কোর অবস্হান বদলায়নি। ফিনান্সিয়াল টাইমস জানায়, রাশিয়া আবারও তাদের বিশাল দাবিগুলো পুনরাবৃত্তি করে একটি স্মারকলিপি পাঠিয়েছে - যা মার্কিন কর্মকর্তাদের আরও হতাশ করেছে। ১২ নভেম্বর রুবিও বলেন, “আমরা কেবল বৈঠকের জন্য বৈঠক চালিয়ে যেতে পারি না”।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৫
ওয়াশিংটন ও মস্কোর মধ্যে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে দ্রুত উত্তেজনা বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্র একদিকে রাশিয়ার তেল কোম্পানি রসনেফট ও লুকঅয়েলের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। অন্যদিকে ক্রেমলিন তাদের নতুন পারমাণবিক শক্তিচালিত বুরেভেস্টনিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র এবং পোসাইডন আন্ডারওয়াটার ড্রোন পরীক্ষা করেছে।
উভয় দেশই বলেছে তারা পারমাণবিক পরীক্ষা পুনরায় শুরু করতে পারে। উভয় দেশ যে কেবল হুমকি দিচ্ছে এমন না, বরং স্থলভাগেও যুদ্ধ অব্যাহত রয়েছে। বছরের শুরুতে সম্পর্ক উন্নতির সম্ভাবনা থাকলেও এখন পরিস্থিতি নাটকীয়ভাবে পাল্টে গেছে। ডনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে প্রবেশ করেছিলেন ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ ও ‘ভ্লাদিমিরের সঙ্গে শান্তি স্থাপন’ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে। কিন্তু যুদ্ধ এখনো অব্যহত রয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া শান্তি প্রস্তাবের বদলে হুমকি দেয়া চালিয়ে যাচ্ছে।পুতিনের সঙ্গে ব্যক্তিগত কূটনীতিতে ট্রাম্পের বাজি এখনো কেন কাজ করেনি?
‘ভালো কথা হয়, কিন্তু এগোয় না’: ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের শুরুর দিকে কিছুটা অগ্রগতির আংশিক ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল। রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার আক্রমণের পর প্রথমবার ওয়াশিংটন ও মস্কো সরাসরি আলোচনা করে। দুই প্রেসিডেন্ট নিয়মিত ফোনে কথা বলেন এবং গত আগস্টে আলাস্কায় বৈঠক করেন। এ মুহূর্তে উভয় পক্ষের একমাত্র সাফল্য হলো যে সংলাপ অন্তত চলছে।
মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের ইউরোপ ও রাশিয়া বিষয়ক সাবেক সিনিয়র ডিরেক্টর অ্যান্ড্রু পিক বলছেন, “আমরা অন্তত শান্তি প্রক্রিয়া নিয়ে কথা বলছি—এটাই বড় অগ্রগতি। অবস্থান তুলে ধরা, মত বিনিময় করা, এটাই কূটনীতির ভিত্তি।”
বিশেষ দূত উইটকফ: ট্রাম্প ব্যক্তিগত সম্পর্কের ওপরই বেশি ভরসা করেছেন। তিনি তার পুরনো নিউ ইয়র্ক রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়িক ঘনিষ্ঠ বন্ধু স্টিভ উইটকফকে বিশেষ দূত হিসেবে পুতিনের সঙ্গে দেখা করার জন্য বেশ কয়েকবার পাঠিয়েছেন। প্রতিটি সফরের পর দুই পক্ষই জানায় তারা সমঝোতার কাছাকাছি চলে এসেছেন। কিন্তু পররাষ্ট্র নিয়ে যারা কাজ করেন সেসব মহলে উইটকফের কূটনৈতিক অভিজ্ঞতা নিয়ে সন্দেহ আছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইউরোপের দুই কূটনীতিক বিবিসিকে জানান, উইটকফ প্রায়ই পুতিন ছাড় দেবেন এমন ভুল ধারণা ধরে নিয়ে মস্কো যেতেন কিন্তু পরে হোয়াইট হাউস দেখতো বাস্তবতা তার উল্টো।
রাশিয়ার একজন সাবেক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেন, উইটকফ রাশিয়ার অবস্হানের সূক্ষ্মতা বুঝতে পারতেন না এবং ক্রেমলিনকে মার্কিন নীতি ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রেও অসংগত ছিলেন। ফলে উভয় পক্ষই প্রায়ই বিপরীত উদ্দেশ্য নিয়ে কথা বলছিল। এ বিভ্রাট আলাস্কার পুতিন-ট্রাম্প বৈঠকে সবার সামনেই প্রকাশ পায়। সম্মেলন হঠাৎ সংক্ষিপ্ত করা হয়, কোনো স্পষ্ট ব্যাখ্যা ছাড়াই। পরে ট্রাম্প এবং পুতিন যখন একটি যৌথ সংবাদ সম্মেলনে উপস্হিত হন, তখন তারা যুদ্ধ শেষের জন্য কোনো সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপের ঘোষণা দেননি।
পুতিনের দিক থেকে ন্যূনতম প্রতিশ্রুতিও না পাওয়া ট্রাম্পকে বৈঠকের আয়োজক হিসেবে কঠিন অবস্হায় ফেলে। পর্দার আড়ালে কী হয়েছে তা দুই পক্ষই স্পষ্ট করেনি; ফলে সাংবাদিকরা গোপন সূত্রে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করেন। ফিনান্সিয়াল টাইমস জানায় ট্রাম্প ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতির বিনিময়ে নিষেধাজ্ঞা শিথিল ও বাণিজ্য বাড়ানোর প্রস্তাব দেন। পুতিন তা সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেন এবং ইউক্রেনের আত্মসমর্পণ ও পুরো ডনবাসের নিয়ন্ত্রণ দাবি করেন এবং একটি “ঐতিহাসিক বক্তৃতা” দেন, যা ট্রাম্পকে ক্ষুব্ধ করে, বলে ওই রিপোর্টে উল্লেখ আছে।
ইউরোপের এক কূটনীতিক বিবিসিকে বলেন, “আমেরিকানরা আলাস্কায় অগ্রগতির ঘাটতি দেখে সত্যিই হতাশ হয়েছিল।” আরেকজন বলেন, তারা ভুল বুঝেছিল রাশিয়ার জন্য যুদ্ধ আসলে কী অর্থ বহন করে। বাইডেন প্রশাসনের সময়ে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের সাবেক রাশিয়া উপদেষ্টা এরিক গ্রিন বলেন, “সম্ভাব্য ছাড় ও বিনিময় নিয়ে অনেক ভুল বোঝাবুঝি ছিল। অঞ্চল ছাড়াও নিরাপত্তা নিশ্চয়তার বিষয় ছিল, আর ট্রাম্প প্রশাসনের কিছু মানুষ বুঝতে পারেনি পুতিন ‘যুদ্ধের মূল কারণ’ বলতে কী বোঝাচ্ছেন।”
ট্রাম্প নিজেও হতাশ হয়েছিলেন। “প্রতিবার ভ্লাদিমিরের সঙ্গে আলোচনা করি, ভালো কথা হয়, কিন্তু কিছুই এগোয় না,”—অক্টোবরের নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার সময় তিনি বলেন। পুতিন আসলে কী চান: মস্কোতে রাশিয়ার সরকারি অবস্থান সাম্প্রতিক মাসগুলোতে খুব একটা বদলায়নি। যুদ্ধ শেষের পুতিনের শর্তগুলো হলো: পাঁচটি ইউক্রেনীয় অঞ্চলে রাশিয়ার সার্বভৌমত্ব স্বীকৃতি। ইউক্রেনের নিরপেক্ষ অবস্থান। ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী কমানো। রুশ ভাষার সাংবিধানিক সুরক্ষা। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার।
রাশিয়া বলছে, একটি পূর্ণাঙ্গ রাজনৈতিক চুক্তির পরই যুদ্ধ থামবে। ওয়াশিংটন ও কিয়েভের কাছে এটি অগ্রহণযোগ্য। তাদের মতে, আগে যুদ্ধবিরতি হতে হবে। অ্যান্ড্রু পিক বলেন, অগ্রগতি করতে হলে তিন বিষয়ে সমঝোতা জরুরি ভূখণ্ড। ইউক্রেনের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ। ইউক্রেনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা তার মতে, এসব বিষয়গুলির কোনোটিতেই প্রায় কোনো অগ্রগতি হয়নি।
ট্রাম্প শুরুতে ভূখণ্ডের বিষয়ে আপোষের ক্ষেত্রে নমনীয় ছিলেন।
এপ্রিলেই তিনি বলেন, “ক্রিমিয়া রাশিয়ার মতোই থাকবে,” এবং তার দল ২০১৪ সালে এ অঞ্চলের অধিগ্রহণের স্বীকৃতির সম্ভাবনাও পরখ করেছিল বলে মিডিয়া রিপোর্টে উল্লেখ আছে। অক্টোবরে ভলোদিমির জেলেনস্কির সাথে বৈঠকেও ট্রাম্প ‘অঞ্চল বিনিময়’ প্রস্তাব তোলেন বলে রয়টার্স জানায়। রাশিয়াও কিছুটা নমনীয়তার ইঙ্গিত দিয়েছিল। তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, দক্ষিণ ইউক্রেনের বর্তমান ফ্রন্টলাইন ধরে মস্কো হয়তো সমঝোতা করতে পারে। তবে তিনি এটাও বলেন, রাশিয়া এখনো খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ ডনবাস অঞ্চলের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ চায় যেখানে তারা আংশিক হামলা করেছে।
ক্রেমলিন জানিয়েছে, চলমান আলোচনার মধ্যে ভূখণ্ড সংক্রান্ত বিষয়সহ কোনো বিস্তারিত বিবরণ প্রকাশ করবে না। কি‘ কূটনীতিকরা জোর দিয়ে বলেন যে ইউক্রেনের ভূমির উপর নিয়ন্ত্রণ সবচেয়ে জটিল বিষয় নয়। ইউরোপের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেন, ট্রাম্প তার ব্যবসায়িক মানসিকতায় “রিয়েল এস্টেট ডিল” চেয়েছিলেন। কি‘ পুতিনের কাছে বিষয়টি শুধু ভূখণ্ডের বিষয় নয়—এটা ইউক্রেনের ওপর সার্বভৌমত্বের বিষয়। অর্থাৎ কিয়েভের রাজনৈতিক দিকনির্দেশনা ও সামরিক সক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ। মস্কো যথাযথ “নিরপেক্ষতা” এবং ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর ব্যাপক হ্রাস চায়। অন্যদিকে কিয়েভ যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর কাছ থেকে পোক্ত নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দাবি করে। পিক বলেন, “নিরাপত্তা নিশ্চয়তায় রাশিয়া একেবারেই নমনীয় না, ২০২২ সালেও, এখনো। এখানে ব্যবধান ভূখণ্ডের প্রশ্নের চেয়ে অনেক বড়।”
‘সময় কেনা’: এই শরতে বুদাপেস্টে শীর্ষ সম্মেলন আয়োজনের ব্যর্থ প্রচেষ্টা অচলাবস্হা্কে আরও স্পষ্ট করে তুলেছে। অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে ফোনালাপের পর ট্রাম্প ও পুতিন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভকে প্রতির দায়িত্ব দেন। তারা একবার কথা বলেছিলেন, কি‘ কোনও বৈঠক হয়নি। ব্লুমবার্গ জানায়, রুবিও বুঝতে পারছেন মস্কোর অবস্হান বদলায়নি। ফিনান্সিয়াল টাইমস জানায়, রাশিয়া আবারও তাদের বিশাল দাবিগুলো পুনরাবৃত্তি করে একটি স্মারকলিপি পাঠিয়েছে - যা মার্কিন কর্মকর্তাদের আরও হতাশ করেছে। ১২ নভেম্বর রুবিও বলেন, “আমরা কেবল বৈঠকের জন্য বৈঠক চালিয়ে যেতে পারি না”।