একসময় সবচেয়ে কার্যকরভাবে বাতাস থেকে কার্বন ডাইঅক্সাইড টেনে নিত পৃথিবীর ফুসফুসখ্যাত আমাজন। কিন্তু এখন গ্রীষ্মম-লীয় এ বনাঞ্চলের কিছু অংশ উল্টো আচরণ করছে, অর্থাৎ শোষণের চেয়ে বেশি কার্বন বায়ুমণ্ডলে ঢোকাচ্ছে। এ অস্বাভাবিক ঘটনা পুরো মানবসভ্যতার জন্য হুমকি। লাতিন আমেরিকার ব্রাজিলসহ কয়েক দেশজুড়ে বিস্তৃত আমাজনের এ পরিবর্তনকে গুরুতর বলছেন বিজ্ঞানীরা। তারা এটিকে জাগরণের সংকেত বলেও মনে করেন। কী কারণে আমাজনের এ অসুখ, তা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই চলছিল অনুসন্ধান। সম্প্রতি পৃথিবী পর্যবেক্ষণ করা কৃত্রিম উপগ্রহ এর ব্যাখ্যা দিয়েছে।
ভূমি থেকে কার্বন ট্র্যাক করা কঠিন। এ ক্ষেত্রে অনেক কিছুই অনুমাননির্ভর পদ্ধতিতে করতে হয়। এর মধ্যে আছে, একটি কারখানায় কত জ্বালানি পোড়ানো হয়েছে বা কত গাছ লাগানো হলো। এ বিষয়গুলো কার্যকর। তবে বনাঞ্চলের প্রকৃত পরিবর্তন জানতে আসে উপগ্রহের প্রসঙ্গ। ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা ইএসএর কয়েক দশকের প্রযুক্তিগত উন্নয়নের কারণে এসব উপগ্রহ থেকে বিজ্ঞানীরা এখন সরাসরি তথ্য পাচ্ছেন। উপগ্রহগুলো বন ও বায়ুমণ্ডল পর্যবেক্ষণ করে। ভূমি ও আকাশের মধ্যে কতটা কার্বন চলাচল করছে, তা নির্ধারণ করতে সহায়তা করছে এসব উপগ্রহ।
কার্বন বাজেট: জলবায়ু বিজ্ঞানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর একটি ‘কার্বন বাজেট’। এটি কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ, যা মানুষ এখনও প্যারিস চুক্তির ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রমের আগে নির্গত করতে পারবে। গত জানুয়ারি পর্যন্ত অবশিষ্ট কার্বন বাজেট প্রায় ২৩৫ গিগাটন। বর্তমান গতিতে বিশ্বব্যাপী কার্বন নির্গমন চলতে থাকলে এ পরিমাণ মাত্র ছয় বছরের মধ্যে অতিক্রম করতে পারে। ইএসএর রিক্যাপ-২ প্রকল্পটি এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে।
এটি কার্বন কোথায় যাচ্ছে এবং কোথা থেকে আসছে, তা নির্ধারণে গবেষণা ও কম্পিউটার মডেলের সঙ্গে উপগ্রহের তথ্যের সন্নিবেশ ঘটাচ্ছে।
ছোট হচ্ছে আমাজন: আমাজন অববাহিকার বনাঞ্চল বিপুল পরিমাণে কার্বন শোষণ করে। প্রতিবছর পৃথিবীতে মোট উদ্ভিদ যে পরিমাণ গ্রহণ করে, তার প্রায় ১৪ শতাংশই এ বনাঞ্চল শুষে নেয়। তবে, ২০১০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে আমাজন ৩৭ কোটি টন কার্বন নিঃসরণ করেছে। এ ঘটনা বেশির ভাগই ঘটছে দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে। এ ক্ষতি ক্রমশ বাড়ছে।
উত্তর গোলার্ধে বোরিয়াল ও নাতিশীতোষ্ণ বন বিশ্বের বনভূমির ৪১ শতাংশ। ২০১৬ সাল থেকে এসব বনের অনেকটি কার্বন গ্রহণের চেয়ে কার্বন নিঃসরণের উৎসে পরিণত হয়েছে। খরা, দাবানল ও অন্যান্য জলবায়ু চাপ পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তুলছে।
বনের কার্বন গ্রহণক্ষমতা কমছে: ইউরোপীয় ইউনিয়নের বনগুলো ওই অঞ্চলের গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের প্রায় ১০ শতাংশ শোষণ করত। কি‘ সেই সংখ্যাটিও হ্রাস পাচ্ছে। ফসল কাটা, বন পুরোনো হয়ে যাওয়া ও খরার মতো নানা কারণে এটা ঘটছে। এ প্রবণতা ২০৫০ সালের মধ্যে ইইউর জলবায়ু নিরপেক্ষতার লক্ষ্য অর্জনকে আরও কঠিন করে তুলবে।
মানুষ জীবন্ত বনের ওপর অনেক বেশি মনোযোগ দেয়। কি‘ দেখা যাচ্ছে জীবন্ত উদ্ভিদ বেশির ভাগ কার্বন জমিতে সঞ্চয় করে না। ১৯৯২ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে জমি দ্বারা শোষিত ৩৫ গিগাটন কার্বনের মাত্র ৬ শতাংশ জীবন্ত গাছপালায় পরিণত হয়েছিল। বাকি অংশ মাটি, মৃত কাঠ ও অন্যান্য নির্জীব অঞ্চলে চলে গেছে। এসব লুকানো কার্বনের সঞ্চয়ও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ, যা প্রায়শই উপেক্ষা করা হয়।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৫
একসময় সবচেয়ে কার্যকরভাবে বাতাস থেকে কার্বন ডাইঅক্সাইড টেনে নিত পৃথিবীর ফুসফুসখ্যাত আমাজন। কিন্তু এখন গ্রীষ্মম-লীয় এ বনাঞ্চলের কিছু অংশ উল্টো আচরণ করছে, অর্থাৎ শোষণের চেয়ে বেশি কার্বন বায়ুমণ্ডলে ঢোকাচ্ছে। এ অস্বাভাবিক ঘটনা পুরো মানবসভ্যতার জন্য হুমকি। লাতিন আমেরিকার ব্রাজিলসহ কয়েক দেশজুড়ে বিস্তৃত আমাজনের এ পরিবর্তনকে গুরুতর বলছেন বিজ্ঞানীরা। তারা এটিকে জাগরণের সংকেত বলেও মনে করেন। কী কারণে আমাজনের এ অসুখ, তা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই চলছিল অনুসন্ধান। সম্প্রতি পৃথিবী পর্যবেক্ষণ করা কৃত্রিম উপগ্রহ এর ব্যাখ্যা দিয়েছে।
ভূমি থেকে কার্বন ট্র্যাক করা কঠিন। এ ক্ষেত্রে অনেক কিছুই অনুমাননির্ভর পদ্ধতিতে করতে হয়। এর মধ্যে আছে, একটি কারখানায় কত জ্বালানি পোড়ানো হয়েছে বা কত গাছ লাগানো হলো। এ বিষয়গুলো কার্যকর। তবে বনাঞ্চলের প্রকৃত পরিবর্তন জানতে আসে উপগ্রহের প্রসঙ্গ। ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা ইএসএর কয়েক দশকের প্রযুক্তিগত উন্নয়নের কারণে এসব উপগ্রহ থেকে বিজ্ঞানীরা এখন সরাসরি তথ্য পাচ্ছেন। উপগ্রহগুলো বন ও বায়ুমণ্ডল পর্যবেক্ষণ করে। ভূমি ও আকাশের মধ্যে কতটা কার্বন চলাচল করছে, তা নির্ধারণ করতে সহায়তা করছে এসব উপগ্রহ।
কার্বন বাজেট: জলবায়ু বিজ্ঞানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর একটি ‘কার্বন বাজেট’। এটি কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ, যা মানুষ এখনও প্যারিস চুক্তির ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রমের আগে নির্গত করতে পারবে। গত জানুয়ারি পর্যন্ত অবশিষ্ট কার্বন বাজেট প্রায় ২৩৫ গিগাটন। বর্তমান গতিতে বিশ্বব্যাপী কার্বন নির্গমন চলতে থাকলে এ পরিমাণ মাত্র ছয় বছরের মধ্যে অতিক্রম করতে পারে। ইএসএর রিক্যাপ-২ প্রকল্পটি এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে।
এটি কার্বন কোথায় যাচ্ছে এবং কোথা থেকে আসছে, তা নির্ধারণে গবেষণা ও কম্পিউটার মডেলের সঙ্গে উপগ্রহের তথ্যের সন্নিবেশ ঘটাচ্ছে।
ছোট হচ্ছে আমাজন: আমাজন অববাহিকার বনাঞ্চল বিপুল পরিমাণে কার্বন শোষণ করে। প্রতিবছর পৃথিবীতে মোট উদ্ভিদ যে পরিমাণ গ্রহণ করে, তার প্রায় ১৪ শতাংশই এ বনাঞ্চল শুষে নেয়। তবে, ২০১০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে আমাজন ৩৭ কোটি টন কার্বন নিঃসরণ করেছে। এ ঘটনা বেশির ভাগই ঘটছে দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে। এ ক্ষতি ক্রমশ বাড়ছে।
উত্তর গোলার্ধে বোরিয়াল ও নাতিশীতোষ্ণ বন বিশ্বের বনভূমির ৪১ শতাংশ। ২০১৬ সাল থেকে এসব বনের অনেকটি কার্বন গ্রহণের চেয়ে কার্বন নিঃসরণের উৎসে পরিণত হয়েছে। খরা, দাবানল ও অন্যান্য জলবায়ু চাপ পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তুলছে।
বনের কার্বন গ্রহণক্ষমতা কমছে: ইউরোপীয় ইউনিয়নের বনগুলো ওই অঞ্চলের গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের প্রায় ১০ শতাংশ শোষণ করত। কি‘ সেই সংখ্যাটিও হ্রাস পাচ্ছে। ফসল কাটা, বন পুরোনো হয়ে যাওয়া ও খরার মতো নানা কারণে এটা ঘটছে। এ প্রবণতা ২০৫০ সালের মধ্যে ইইউর জলবায়ু নিরপেক্ষতার লক্ষ্য অর্জনকে আরও কঠিন করে তুলবে।
মানুষ জীবন্ত বনের ওপর অনেক বেশি মনোযোগ দেয়। কি‘ দেখা যাচ্ছে জীবন্ত উদ্ভিদ বেশির ভাগ কার্বন জমিতে সঞ্চয় করে না। ১৯৯২ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে জমি দ্বারা শোষিত ৩৫ গিগাটন কার্বনের মাত্র ৬ শতাংশ জীবন্ত গাছপালায় পরিণত হয়েছিল। বাকি অংশ মাটি, মৃত কাঠ ও অন্যান্য নির্জীব অঞ্চলে চলে গেছে। এসব লুকানো কার্বনের সঞ্চয়ও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ, যা প্রায়শই উপেক্ষা করা হয়।