সংবাদ-এর সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় আইভী
২০১১ সালে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা এ কে এম শামীম ওসমানকে লক্ষাধিক ভোটে হারিয়ে বাংলাদেশের প্রথম নারী মেয়র নির্বাচিত হন ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। তারপর থেকেই অপ্রতিরোধ্য। সদ্য সমাপ্ত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা তৈমুর আলম খন্দকারের চেয়ে প্রায় ৬৭ হাজার ভোট বেশি পেয়ে ‘হ্যাটট্রিক’ বিজয় পেয়েছেন।
জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি হলেও মানুষ তাকে ভালোবাসে দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে। সারা দেশে আলোচনার কেন্দ্রে থাকা নাসিক নির্বাচনে টানা তৃতীয় বিজয় সেই জনপ্রিয়তারই প্রমাণ। নিজের রাজনীতি, নগর পরিকল্পনা ও চলমান নানা বিষয়ে সংবাদের সঙ্গে একান্তভাবে কথা বলেছেন এই মেয়র। আলাপে ছিলেন সংবাদের নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি সৌরভ হোসেন সিয়াম।
সংবাদ : নির্বাচনের আগেও জানতে চেয়েছিলাম, বিজয়ের পরও জানতে চাইছি, আইভী কেন এত জনপ্রিয়?
সেলিনা হায়াৎ আইভী : আইভী কতটুকু জনপ্রিয় আমি জানি না। জনপ্রিয়তা এমন এক জিনিস যা আজকে আছে কালকে নাও থাকতে পারে। তবে আমি মানুষের সঙ্গে মিশেছি একদম নিঃস্বার্থভাবে। কখনও চাওয়া-পাওয়ার চিন্তা করি নাই। যখন যেখানে যতটুকু কাজ করা দরকার ততটুকু করে দেয়ার চেষ্টা করেছি। মানুষ আমাকে বিশ্বাস করে। কারণ আমি যখন কথা দিয়েছি সেই কথা রাখার চেষ্টা করেছি। মানুষের সঙ্গে মিশেছি, ভালোবেসেছি নিঃস্বার্থভাবে, তাদের কাজও করে দিয়েছি নিঃস্বার্থভাবেই। হয়তো এই কারণে মানুষ আমাকে বিশ্বাস করে, ভালোবাসে।
সংবাদ : বিগত নির্বাচনগুলোর চেয়ে এবারের নির্বাচন আলাদা ছিল। আপনার কী মনে হয়?
সেলিনা হায়াৎ আইভী : এই নির্বাচন অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমি তো বিগত তিনটা নির্বাচন করেছি, তার থেকে এবারেরটা একটু পার্থক্য ছিল। সবকিছু মিলিয়ে নির্বাচন তো জমজমাট হয়েছে। তাতে আপনাদেরও সুবিধা হয়েছে। এখন এটা নিয়ে আর কথা বলতে চাচ্ছি না। যা হওয়ার তো হয়েছেই। আসলে সব নির্বাচনই জটিল। একেকটার ধারা একেক রকম হয়। ৫ বছর পরপর নির্বাচন তো, এর মধ্যে অনেক কিছুই সংঘঠিত হতে থাকে। সুতরাং প্রত্যেক নির্বাচনেই আলাদা মেজাজ ছিল। তবে মানুষকে সঙ্গে নিয়েই তো সফলতা পেয়েছি।
সংবাদ : নিজের দলেরই একটি অংশ সরাসরি বিরোধিতা করেছে, এ কারণ কি?
সেলিনা হায়াৎ আইভী : কে বিরোধিতা করেছে আর কে করে নাই সেটা তো আপনারা দেখেছেন। এখন যেহেতু নির্বাচন হয়ে গিয়েছে, এখন আর এগুলো নিয়ে কথা না বাড়িয়ে নিজেকে জনগণের কাজে নিয়োজিত রাখার দরকার বলে আমার মনে হয়। যারা বিরোধিতা করার তারা করবেই। এই চিন্তা আমি মাথায় রাখি না, রাখতে চাইও না। আমি আমার সাধারণ মানুষকে নিয়েই কাজকর্ম করে যেতে চাই।
সংবাদ : ইভিএম অভিজ্ঞতা কেমন?
সেলিনা হায়াৎ আইভী : ইভিএমে (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) ভোটগ্রহণ খুব ধীরগতির ছিল। হয়তো নতুন প্রযুক্তি হওয়ার কারণে হতে পারে। তাছাড়া এখানে যেটা হয়েছে, নারী ভোটকক্ষগুলো কেন্দ্রের তিনতলা, চারতলাতে দেয়া হয়েছে। আগে কখনই এইরকম দেখিনি। খুবই সুচতুরভাবে এই কাজটি করা হয়েছে। আরেকটা জিনিস হলো, নারীদের ভোটকক্ষ কমিয়ে দেয়া হয়েছে। যেমন ধরুন, কোন কেন্দ্রে ১০টা ভোটকক্ষ ছিল, সেখানে পাঁচটা কমিয়ে দেয়া হয়েছে। এই কাজটা সকালবেলা তাৎক্ষণিকভাবে করা হয়েছে। এটা নির্বাচনের ভালো দিক ছিল না বলে মনে করি। আমার নারী ভোটাররা অনেকেই ভোট দিতে পারে নাই। প্রচুর ভোটাররা ফেরত গেছেন। এটা আপনারা নিজেও দেখেছেন। ইভিএমে ভোট দিতে একেকজনের তিন-চার মিনিট লেগেছে। অনেকের আরও বেশি সময় লেগেছে। এই কালক্ষেপণ হওয়ার কারণে আমার ভোট কিন্তু অনেক কমেছে। গতবার ৬২ শতাংশ ভোট কাস্টিং ছিল। এবার ৭০ শতাংশেরও বেশি ভোট কাস্টিং হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা হয়নি। এজন্য ভোটের ব্যবধান কমেছে।
সংবাদ : শীঘ্রই শপথ হতে যাচ্ছে। পুরোনো চেয়ারে নতুন করে বসবেন। নতুন কী কী পরিকল্পনা রয়েছে?
সেলিনা হায়াৎ আইভী : অনেক পরিকল্পনা আছে। প্রথমত যেই কাজগুলো করছিলাম সেগুলো আরও গুরুত্ব দিয়ে করবো। ময়লা-আবর্জনা থেকে বিদ্যুৎ উৎপন্নের কাজ শুরু করেছিলাম। এটাতে বেশি করে মনোযোগ দিতে হবে। নদীর ওইপাড়েও (বন্দর) ময়লা-আবর্জনার জন্য একটি জায়গা অধিগ্রহণ করছি। সেখানে বিদ্যুৎ উৎপাদন নয়, অন্য কিছু করার চিন্তা রয়েছে। পানি সরবরাহের জন্য দুই হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প জমা দিয়েছি। নতুন করে একটা পানি শোধনাগার করতে চাচ্ছি। গোদনাইলের পানি শোধনাগারটি অনেক পুরোনো। নতুনটা করতে চাচ্ছি নদীর ওইপাড়ে মেঘনা নদীর কাছাকাছি কোন জায়গায়। এটা একটা বড় প্রকল্প (মেগা প্রজেক্ট)। এইরকম আরও কিছু কাজ করতে চাচ্ছি। নগর পরিবহন, মাল্টিমডেল হাব নিয়ে কাজ করতে চাচ্ছি। নদীর দুই পাড়েই আমরা কাজ করতে চাচ্ছি। দুইপাড়ের রাস্তা, ফুটপাত বাঁধিয়ে সবুজায়ন করতে চাচ্ছি। শীতলক্ষ্যার উপর কদমরসুল সেতুরও দ্রুত ভিত্তিপ্রস্তর করতে চাই।
সংবাদ : স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি হলেও জনপ্রশাসনের তেমন সহযোগিতা পান না। এই কথা আপনি নিজেও বলেছেন। সমন্বয়টা এবার কী হবে?
সেলিনা হায়াৎ আইভী : আমি তো আশা করবই। কারণ আশা করতে তো কোন বাধা নেই। আমরা তো চাইবই, সবগুলো প্রশাসন একসঙ্গে মিলে কাজ করার জন্য। কারণ কিছু কিছু কাজ প্রশাসনের সহযোগিতা না পেলে করা যায় না। আমার চাওয়া তো সবসময়ই ছিল। কম-বেশি সহযোগিতা তো তারা করেছে। আমরা চাই, এটা ব্যাপকভাবে করুক, জনকল্যাণে করুক।
সংবাদ : নারায়ণগঞ্জের রাজনীতি; বিশেষ করে আওয়ামী লীগে বড় পরিবর্তনের আভাস পাচ্ছি।
সেলিনা হায়াৎ আইভী : আমি তো এখনও তেমন কোন আভাস পেলাম না। আপনারা কোত্থেকে পান আমি ঠিক জানি না। তবে আমাদের অনেকগুলো সংগঠনেরই মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। সেক্ষেত্রে পরিবর্তন অনিবার্য। অনেক সংগঠন সাত-আট-দশ বছর যাবত আছে। তিন বছর অন্তর কমিটি করতে হয়। সেক্ষেত্রে পরিবর্তন হতে পারে। তবে এর সঙ্গে সিটি নির্বাচনের সম্পৃক্ততা দেখি না। মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলো এমনিতেই পরিবর্তন হবে। আমি আবারও বলি, দলের একজন ক্ষুদ্র কর্মী হয়েও আমি জনস্বার্থে কাজ করতে চাই।
সংবাদ : নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি পদে আছেন। আপনার শুভাকাক্সক্ষীরা আপনাকে আরও ওপরে দেখতে চান। সেক্ষেত্রে আপনার ভাবনা কী?
সেলিনা হায়াৎ আইভী : কে কী চায় তাতে কিছু আসে যায় না। জননেত্রী শেখ হাসিনা কী চাচ্ছেন সেটা সবচেয়ে বড় কথা। আমি যেখানে কাজ করছি সেখানে জনগণেরই কাজ করছি। এইটাও রাজনীতি, এটা জনকল্যাণে রাজনীতি। সুতরাং এখানে আলাদা করে দেখার কিছু নেই। উন্নত ও নিরাপদ নগরীতে মানুষকে শান্তিতে রাখাই আমার রাজনীতি। আমি যেভাবে আছি সেভাবেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছি।
সংবাদ : বাংলাদেশের প্রথম নির্বাচিত নারী সিটি মেয়র হয়েছিলেন আপনি। দীর্ঘ পথচলায় নারী হিসেবে আলাদা বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে?
সেলিনা হায়াৎ আইভী : প্রথম প্রথম সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। এখন আর সেই জটিলতা নাই। কিন্তু সুযোগ পেলেই অনেকে খুব সহজেই নারীকে অসম্মান বা অপমান করে ফেলে। আমি নারী বলেই আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো সহজ হয়। এগুলোকে আর মাথায় রাখি না। প্রথমেই আমি চিন্তা করি, আমি একজন মানুষ। আমি নিজেকে একজন মানুষ হিসেবে ভাবি। তারপর ভাবি, জনগণ আমাকে একজন লিডার হিসেবে কাজ করতে সুযোগ দিয়েছে। তারপর আমি নারী, আমি কারও মা, কারও বোন, কারও স্ত্রী; সেই চিন্তা মাথায় আসে। কিন্তু প্রতিকূলতা আছে, বাধা আছে, বাধা থাকেই। সেগুলোকে অতিক্রম করে নেই, করে নিতে হয়।
সংবাদ-এর সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় আইভী
শুক্রবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২২
২০১১ সালে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা এ কে এম শামীম ওসমানকে লক্ষাধিক ভোটে হারিয়ে বাংলাদেশের প্রথম নারী মেয়র নির্বাচিত হন ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। তারপর থেকেই অপ্রতিরোধ্য। সদ্য সমাপ্ত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা তৈমুর আলম খন্দকারের চেয়ে প্রায় ৬৭ হাজার ভোট বেশি পেয়ে ‘হ্যাটট্রিক’ বিজয় পেয়েছেন।
জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি হলেও মানুষ তাকে ভালোবাসে দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে। সারা দেশে আলোচনার কেন্দ্রে থাকা নাসিক নির্বাচনে টানা তৃতীয় বিজয় সেই জনপ্রিয়তারই প্রমাণ। নিজের রাজনীতি, নগর পরিকল্পনা ও চলমান নানা বিষয়ে সংবাদের সঙ্গে একান্তভাবে কথা বলেছেন এই মেয়র। আলাপে ছিলেন সংবাদের নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি সৌরভ হোসেন সিয়াম।
সংবাদ : নির্বাচনের আগেও জানতে চেয়েছিলাম, বিজয়ের পরও জানতে চাইছি, আইভী কেন এত জনপ্রিয়?
সেলিনা হায়াৎ আইভী : আইভী কতটুকু জনপ্রিয় আমি জানি না। জনপ্রিয়তা এমন এক জিনিস যা আজকে আছে কালকে নাও থাকতে পারে। তবে আমি মানুষের সঙ্গে মিশেছি একদম নিঃস্বার্থভাবে। কখনও চাওয়া-পাওয়ার চিন্তা করি নাই। যখন যেখানে যতটুকু কাজ করা দরকার ততটুকু করে দেয়ার চেষ্টা করেছি। মানুষ আমাকে বিশ্বাস করে। কারণ আমি যখন কথা দিয়েছি সেই কথা রাখার চেষ্টা করেছি। মানুষের সঙ্গে মিশেছি, ভালোবেসেছি নিঃস্বার্থভাবে, তাদের কাজও করে দিয়েছি নিঃস্বার্থভাবেই। হয়তো এই কারণে মানুষ আমাকে বিশ্বাস করে, ভালোবাসে।
সংবাদ : বিগত নির্বাচনগুলোর চেয়ে এবারের নির্বাচন আলাদা ছিল। আপনার কী মনে হয়?
সেলিনা হায়াৎ আইভী : এই নির্বাচন অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমি তো বিগত তিনটা নির্বাচন করেছি, তার থেকে এবারেরটা একটু পার্থক্য ছিল। সবকিছু মিলিয়ে নির্বাচন তো জমজমাট হয়েছে। তাতে আপনাদেরও সুবিধা হয়েছে। এখন এটা নিয়ে আর কথা বলতে চাচ্ছি না। যা হওয়ার তো হয়েছেই। আসলে সব নির্বাচনই জটিল। একেকটার ধারা একেক রকম হয়। ৫ বছর পরপর নির্বাচন তো, এর মধ্যে অনেক কিছুই সংঘঠিত হতে থাকে। সুতরাং প্রত্যেক নির্বাচনেই আলাদা মেজাজ ছিল। তবে মানুষকে সঙ্গে নিয়েই তো সফলতা পেয়েছি।
সংবাদ : নিজের দলেরই একটি অংশ সরাসরি বিরোধিতা করেছে, এ কারণ কি?
সেলিনা হায়াৎ আইভী : কে বিরোধিতা করেছে আর কে করে নাই সেটা তো আপনারা দেখেছেন। এখন যেহেতু নির্বাচন হয়ে গিয়েছে, এখন আর এগুলো নিয়ে কথা না বাড়িয়ে নিজেকে জনগণের কাজে নিয়োজিত রাখার দরকার বলে আমার মনে হয়। যারা বিরোধিতা করার তারা করবেই। এই চিন্তা আমি মাথায় রাখি না, রাখতে চাইও না। আমি আমার সাধারণ মানুষকে নিয়েই কাজকর্ম করে যেতে চাই।
সংবাদ : ইভিএম অভিজ্ঞতা কেমন?
সেলিনা হায়াৎ আইভী : ইভিএমে (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) ভোটগ্রহণ খুব ধীরগতির ছিল। হয়তো নতুন প্রযুক্তি হওয়ার কারণে হতে পারে। তাছাড়া এখানে যেটা হয়েছে, নারী ভোটকক্ষগুলো কেন্দ্রের তিনতলা, চারতলাতে দেয়া হয়েছে। আগে কখনই এইরকম দেখিনি। খুবই সুচতুরভাবে এই কাজটি করা হয়েছে। আরেকটা জিনিস হলো, নারীদের ভোটকক্ষ কমিয়ে দেয়া হয়েছে। যেমন ধরুন, কোন কেন্দ্রে ১০টা ভোটকক্ষ ছিল, সেখানে পাঁচটা কমিয়ে দেয়া হয়েছে। এই কাজটা সকালবেলা তাৎক্ষণিকভাবে করা হয়েছে। এটা নির্বাচনের ভালো দিক ছিল না বলে মনে করি। আমার নারী ভোটাররা অনেকেই ভোট দিতে পারে নাই। প্রচুর ভোটাররা ফেরত গেছেন। এটা আপনারা নিজেও দেখেছেন। ইভিএমে ভোট দিতে একেকজনের তিন-চার মিনিট লেগেছে। অনেকের আরও বেশি সময় লেগেছে। এই কালক্ষেপণ হওয়ার কারণে আমার ভোট কিন্তু অনেক কমেছে। গতবার ৬২ শতাংশ ভোট কাস্টিং ছিল। এবার ৭০ শতাংশেরও বেশি ভোট কাস্টিং হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা হয়নি। এজন্য ভোটের ব্যবধান কমেছে।
সংবাদ : শীঘ্রই শপথ হতে যাচ্ছে। পুরোনো চেয়ারে নতুন করে বসবেন। নতুন কী কী পরিকল্পনা রয়েছে?
সেলিনা হায়াৎ আইভী : অনেক পরিকল্পনা আছে। প্রথমত যেই কাজগুলো করছিলাম সেগুলো আরও গুরুত্ব দিয়ে করবো। ময়লা-আবর্জনা থেকে বিদ্যুৎ উৎপন্নের কাজ শুরু করেছিলাম। এটাতে বেশি করে মনোযোগ দিতে হবে। নদীর ওইপাড়েও (বন্দর) ময়লা-আবর্জনার জন্য একটি জায়গা অধিগ্রহণ করছি। সেখানে বিদ্যুৎ উৎপাদন নয়, অন্য কিছু করার চিন্তা রয়েছে। পানি সরবরাহের জন্য দুই হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প জমা দিয়েছি। নতুন করে একটা পানি শোধনাগার করতে চাচ্ছি। গোদনাইলের পানি শোধনাগারটি অনেক পুরোনো। নতুনটা করতে চাচ্ছি নদীর ওইপাড়ে মেঘনা নদীর কাছাকাছি কোন জায়গায়। এটা একটা বড় প্রকল্প (মেগা প্রজেক্ট)। এইরকম আরও কিছু কাজ করতে চাচ্ছি। নগর পরিবহন, মাল্টিমডেল হাব নিয়ে কাজ করতে চাচ্ছি। নদীর দুই পাড়েই আমরা কাজ করতে চাচ্ছি। দুইপাড়ের রাস্তা, ফুটপাত বাঁধিয়ে সবুজায়ন করতে চাচ্ছি। শীতলক্ষ্যার উপর কদমরসুল সেতুরও দ্রুত ভিত্তিপ্রস্তর করতে চাই।
সংবাদ : স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি হলেও জনপ্রশাসনের তেমন সহযোগিতা পান না। এই কথা আপনি নিজেও বলেছেন। সমন্বয়টা এবার কী হবে?
সেলিনা হায়াৎ আইভী : আমি তো আশা করবই। কারণ আশা করতে তো কোন বাধা নেই। আমরা তো চাইবই, সবগুলো প্রশাসন একসঙ্গে মিলে কাজ করার জন্য। কারণ কিছু কিছু কাজ প্রশাসনের সহযোগিতা না পেলে করা যায় না। আমার চাওয়া তো সবসময়ই ছিল। কম-বেশি সহযোগিতা তো তারা করেছে। আমরা চাই, এটা ব্যাপকভাবে করুক, জনকল্যাণে করুক।
সংবাদ : নারায়ণগঞ্জের রাজনীতি; বিশেষ করে আওয়ামী লীগে বড় পরিবর্তনের আভাস পাচ্ছি।
সেলিনা হায়াৎ আইভী : আমি তো এখনও তেমন কোন আভাস পেলাম না। আপনারা কোত্থেকে পান আমি ঠিক জানি না। তবে আমাদের অনেকগুলো সংগঠনেরই মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। সেক্ষেত্রে পরিবর্তন অনিবার্য। অনেক সংগঠন সাত-আট-দশ বছর যাবত আছে। তিন বছর অন্তর কমিটি করতে হয়। সেক্ষেত্রে পরিবর্তন হতে পারে। তবে এর সঙ্গে সিটি নির্বাচনের সম্পৃক্ততা দেখি না। মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলো এমনিতেই পরিবর্তন হবে। আমি আবারও বলি, দলের একজন ক্ষুদ্র কর্মী হয়েও আমি জনস্বার্থে কাজ করতে চাই।
সংবাদ : নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি পদে আছেন। আপনার শুভাকাক্সক্ষীরা আপনাকে আরও ওপরে দেখতে চান। সেক্ষেত্রে আপনার ভাবনা কী?
সেলিনা হায়াৎ আইভী : কে কী চায় তাতে কিছু আসে যায় না। জননেত্রী শেখ হাসিনা কী চাচ্ছেন সেটা সবচেয়ে বড় কথা। আমি যেখানে কাজ করছি সেখানে জনগণেরই কাজ করছি। এইটাও রাজনীতি, এটা জনকল্যাণে রাজনীতি। সুতরাং এখানে আলাদা করে দেখার কিছু নেই। উন্নত ও নিরাপদ নগরীতে মানুষকে শান্তিতে রাখাই আমার রাজনীতি। আমি যেভাবে আছি সেভাবেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছি।
সংবাদ : বাংলাদেশের প্রথম নির্বাচিত নারী সিটি মেয়র হয়েছিলেন আপনি। দীর্ঘ পথচলায় নারী হিসেবে আলাদা বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে?
সেলিনা হায়াৎ আইভী : প্রথম প্রথম সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। এখন আর সেই জটিলতা নাই। কিন্তু সুযোগ পেলেই অনেকে খুব সহজেই নারীকে অসম্মান বা অপমান করে ফেলে। আমি নারী বলেই আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো সহজ হয়। এগুলোকে আর মাথায় রাখি না। প্রথমেই আমি চিন্তা করি, আমি একজন মানুষ। আমি নিজেকে একজন মানুষ হিসেবে ভাবি। তারপর ভাবি, জনগণ আমাকে একজন লিডার হিসেবে কাজ করতে সুযোগ দিয়েছে। তারপর আমি নারী, আমি কারও মা, কারও বোন, কারও স্ত্রী; সেই চিন্তা মাথায় আসে। কিন্তু প্রতিকূলতা আছে, বাধা আছে, বাধা থাকেই। সেগুলোকে অতিক্রম করে নেই, করে নিতে হয়।