alt

জাতীয়

সব গ্রেডে ৯৩ শতাংশ মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের প্রজ্ঞাপন

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : মঙ্গলবার, ২৩ জুলাই ২০২৪

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন আইনমন্ত্রী-সংবাদ

সরকারি চাকরিতে সব গ্রেডে ৯৩ শতাংশ মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের বিধান রেখে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। বাকি ৭ শতাংশ নিয়োগ হবে কোটায়। এখন থেকে সরকারি চাকরির সব গ্রেডে অর্থাৎ ৯ম থেকে ২০তম গ্রেড পর্যন্ত সরাসরি ৯৩ শতাংশই কোটার ভিত্তিতে নিয়োগ হবে।

প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ‘মেধাভিত্তিক ৯৩ শতাংশ; মুক্তিযোদ্ধা, শহিদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনার সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ১ শতাংশ এবং শারীরিক প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য ১ শতাংশ’ নির্ধারণ করা হয়েছে। নির্ধারিত কোটায় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে সংশ্লিষ্ট কোটার শূন্য পদসমূহ সাধারণ মেধা তালিকা থেকে পূরণ করা হবে বলে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) বেলা আড়াইটার দিকে রাজধানীর গুলশানে নিজ বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে কোটা সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারির কথা জানান। এ সময় জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

‘সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বা আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, স্ব-শাসিত ও সংবিধিবদ্ধ কর্তৃপক্ষের এবং বিভিন্ন করপোরেশনের চাকরিতে বা কর্মে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারের বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি সংশোধন’ প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

প্রজ্ঞাপনের ব্যাখ্যা দিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, এই প্রজ্ঞাপন জারির ফলে ২০১৮ সালে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কোটা বাতিল করে যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল সেটিও ‘রহিত’ বা বাতিল করা হলো। এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘সমতার নীতি ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর প্রজাতন্ত্রের কর্মে প্রতিনিধিত্ব লাভ নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্ত্বশাসিত বা আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, স্ব-শাসিত ও সংবিবিধবদ্ধ কর্তৃপক্ষের এবং বিভিন্ন করপোরেশনের চাকরি বা কর্মে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে সব গ্রেডে মেধাভিত্তিক ৯৩ শতাংশ; মুক্তিযোদ্ধা, শহিদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনার সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ; ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ১ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য ১ শতাংশ কোটা নির্ধারণ করা হয়েছে।’

সরকারি চাকরিতে মোট ২০টি গ্রেড আছে। সরাসরি নিয়োগ হয় ৯ম থেকে ২০তম গ্রেডে। বাকি গ্রেডগুলো পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা হয়।

সরকারের করণীয় সম্পন্ন
কোটা নিয়ে এই প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সরকারের করনীয় সম্পন্ন হয়েছে জানিয়ে আনিসুল হক বলেন, ‘যা যা করণীয় ছিলো...আমরা কোটা সংস্কারের যে রায় আপিল বিভাগ দিয়েছে তা প্রতিপালন করেছি। আমরা....একটি কথা ছিল...একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত...আমরা এক সদস্য বিশিষ্ট একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি করে দিয়েছি। তিনি কাজ শুরু করেছেন। অবস্থা একটু শান্ত হলেই তিনি স্পট ঘুরে দেখবেন।’

সহিংসতা যেসব ছাত্রছাত্রী আহত হয়েছে তাদের চিকিৎসার বিষয়ে সরকার ব্যবস্থা নেবে জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আর সাধারণ ছাত্রছাত্রী যারা কোটাবিরোধী আন্দোলন করেছিলেন তাদের ব্যাপারে যদি কোনো মামলা হয়ে থাকে সেটি আমরা অবশ্যই দেখবো।’ এই প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের নারী কোটা বাতিল হবে কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার সর্বোচ্চ আদালত-আপিল বিভাগের রায় প্রতিপালন করেছে। আপিল বিভাগের রায়ে একটা দাঁড়ি, কমা, সেমিকোলন বদলানোর ক্ষমতা আমাদের নেই। তারা যেভাবে রায় দিয়েছেন, আমরা সেভাবেই প্রতিপালন করেছি।’

শিক্ষার্থীদের অন্যান্য দাবির বিষয়ে সরকারের অবস্থান
কোটা ছাড়াও শিক্ষার্থীদের আরো কয়েকটি দাবি রয়েছে সেগুলো মানা না হলে তারা ফের আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে- সেই বিষয়ে আনিসুল হক বলেন, ‘ছাত্রছাত্রীরা কোটাবিরোধী আন্দোলন করছিল কোটা সংস্কারের দাবিতে। আমরা সংস্কার করেছি। এখন তাদেরও একটা কর্তব্য আছে...যে জনগণ মনে করে, তাদের করা উচিত। সেটি হলো তাদের স্ব-স্ব জায়গায় গিয়ে পড়াশোনা করা উচিত।’

সরকারের যেসব নিয়োগ কার্যক্রম চলমান রয়েছে সেগুলোতে কোটা পদ্ধতি সংশোধনের এই প্রজ্ঞাপন কার্যকর হবে কী না জানতে চাইলে অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, ‘এই প্রজ্ঞাপনে পরিস্কার বলা আছে-এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে। আমার মনে হয়, এই শেষ লাইনটা জনপ্রশাসনমন্ত্রী আছেন...তিনি গুরুত্ব দিয়ে দেখবেন।’

ভবিষ্যতে এই প্রজ্ঞাপন পাল্টানোর সুযোগ রয়েছে-এ সংক্রান্ত বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘সর্বোচ্চ আদালত অত্যন্ত বিচক্ষণ একটি রায় দিয়েছে....সুদূর প্রসারী; তার কারণ হলো- সর্বোচ্চ আদালত এখানে শেষ করে দিতেন তাহলে এটা বদলাতে হলো আবারও রিভিউ করতে হতো......ফিউচারে যদি প্রয়োজন হয় তখন দেখা যাবে।’

এই প্রজ্ঞাপন আইনি রূপ পাবে না
কোটা আন্দোলনকারীদের দাবি অনুযায়ী এই প্রজ্ঞাপনকে আইনে রুপ দেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘কোনো দিন, কখনো আইন ছিল না। এটা সব সময়...ইটস এ পলিসি ম্যাটার অব দ্যা গভর্মেন্ট এবং এটা সবসময় পরিপত্র ও প্রজ্ঞাপন দ্বারাই করা হয়।’

কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের অন্যতম একটি দাবি হলো- সব কোটা বাতিল এবং এটিকে স্থায়ী রুপ দেয়ার জন্য জাতীয় সংসদে আইন করা।

মুক্তিযোদ্ধার নাতি-পুতির কোটা
মুক্তিযোদ্ধার নাতি-পুতিরা এখন কোটার সুবিধা পাবে কিনা-এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে আনিসুল হক বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ হলো- সর্বোচ্চ আদালত। তারা এই রায় দিয়েছেন। এই রায়ের দাঁড়ি-কমা, সেমিকোলনও বদলানোর ক্ষমতা আমাদের নেই।’

শিক্ষার্থীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার
আরেক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘এটা শুধু কোটা বিরোধী বা কোটা সংস্কারের আন্দোলন ছিল না। এটা- জঙ্গিরা, যারা বিএনপি-জামায়াত, ইসলামি ছাত্রশিবির এবং ছাত্রদলের যারা জঙ্গি হয়ে এই আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয়ে দেশ নষ্ট করা চেষ্টা করছে।’

এ সময় তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ঢাল হিসেবে ব্যাবহার করে শান্তিপূর্ণ মুবমেন্টের মধ্যে সহিংসতা ঢুকানোর যে পরিকল্পনা....কাজেই তাদের মধ্যে প্রিপারেশন ছিলো যে তারা ডাটা সেন্টার জালিয়ে দেবে, ইন্টারনেটের অনুপস্থিতিতে আমরাও বিপদে পড়েছি, গ্লোবালি যোগাযোগ করতে পারছি না।’

সহিংসতাকারীরা পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই ‘ইন্টারনেটকে ইন্টারাপ্ট’ করেছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘তারা কিন্তু বেক-আপ রেখেছিল, এটিরই প্রতিফলন হিসেবে বিশ^ব্যাপী ভুল তথ্য ছাড়ানো হচ্ছে। আমি আজকে ফ্রান্সের একটি গণমাধ্যমে দেখলাম টোটালি একপেশে একটি প্রতিবেদন। ছাত্রদের সঙ্গে যে আমাদের যোগাযোগ হয়েছে সেই তথ্য নেই। ছাত্রদের সঙ্গে যে শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান হয়েছে সেই তথ্য কিন্তু নেই। তারা যে সন্ত্রাস করেছে সেই তথ্য নেই।’

পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সহিংসতা হলে সেই বিষয়ে গোয়েন্দাদের কাছে আগাম তথ্য ছিল কিনা এবং না থাকলে ব্যর্থতার জন্য কোনো পদক্ষেপ নেয়া হবে কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে তথ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার যা বলেছিল তাই কিন্তু হলো। সরকার বলেছিল, একটু ধের্য ধরুন, আদালতে আছে, এটা সমাধান হয়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রীও এই কথা বলেছেন, তাই তো হলো। তারা যে অধর্য্য হলো সেই সুযোগই সন্ত্রাসীরা নিয়েছে।’

২০১৮ সালে কোটা সংস্কার করে ১০ শতাংশ করার দাবিতে ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’র ব্যানাড়ে আন্দোলনে নামে বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা। এক পর্যায়ে সরকার ওই বছর নবম থেকে ১৩তম গ্রেডের (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণী) সরকারি চাকরিতে পুরো কোটাই বাতিল করে দেয়। তবে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর চাকরিতে কোটা বহাল থাকে। এই দুই শ্রেণীতে পোষ্য, আনসার-ভিডিপিসহ কিছু কোটা রয়েছে।

২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এই পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অহিদুল ইসলামসহ সাতজন ২০২১ সালে রিট করেন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রুল দেয়। চূড়ান্ত শুনানি শেষে রুল অ্যাবসলিউট (যথাযথ) ঘোষণা করে গত ৫ জুন রায় দেয় হাইকোর্ট।

সর্বশেষ সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে হাইকোর্টের রায় গত ২১ জুলাই বাতিল করে রায় আপিল বিভাগ। এই রায়ের ফলে এখন কোটা থাকছে মাত্র ৭ শতাংশ। আগে এই কোটা ছিল ৫৬ শতাংশ।

ছবি

নারীর প্রতি সহিংসতায় আশঙ্কাজনক চিত্র, সাংবাদিকদের আরও দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান

ছবি

গত বছর ধর্ষণের ঘটনা ৫১৬টি, এ বছর ছয় মাসেই ৪৮১টি

ডিপজলের বিরুদ্ধে তরুণীর মামলা, মারধর-অ্যাসিড নিক্ষেপের অভিযোগ

শিবলী রুবাইয়াতের জমিসহ ১০ তলা ভবন জব্দের আদেশ

সাবেক এমপি শাহীন চাকলাদারসহ ৪ জনের নামে প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের মামলা

শার্শায় গণধর্ষণ: ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেপ্তার ১

টিকটকে পরিচয়, ইমোতে ব্ল্যাকমেইল, গ্রেপ্তার ১

আবারও যমুনা, সচিবালয় ও আশপাশের এলাকায় সমাবেশ নিষিদ্ধ

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মোবারকের আপিল শুনানি বুধবার

ছবি

মায়ের বানানো লোহার খাঁচায় ৩ শিশু, ক্ষুধা নিবারণই লক্ষ্য

ছবি

নার্স সংকটে চমেক হাসপাতালের আইসিইউ, ঝুঁকিতে রোগীরা

ছবি

প্রথমবারের মতো অনুমোদন পেলো ছোট্ট শিশুদের ম্যালেরিয়ার ওষুধ

ছবি

খুলনায় মেলা ঘিরে চাঁদাবাজির অভিযোগ, বৈষম্যবিরোধী দুই নেতাকে শোকজ

ছবি

রাতে ভোট করে সরকারি কর্মকর্তা, পুলিশ সুনাম নষ্ট করেছে: সিইসি

হবিগঞ্জে দুই সাংবাদিকের বিরোধের জেরে সংঘর্ষ: নিহত ১, আহত শতাধিক

মালয়েশিয়ায় ‘সন্ত্রাসবাদে জড়িত’ অভিযোগে ৩৫ প্রবাসীর বিরুদ্ধে ঢাকায় মামলা

ছবি

ভর মৌসুমেও ইলিশের দেখা মিলছে না

দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা থেকে বাসায় ফেরার পথে প্রবাসীকে অপহরণের পর হত্যা 

জিএম কাদেরের সিদ্ধান্ত মানেন না আনিসুল-রুহুল-মুজিবুল

ডেঙ্গুতে ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছে ৩ জন, নতুন আক্রান্ত ৪২৫

খসড়া টেলিযোগাযোগ নীতিমালা নিয়ে প্রধান উপদেষ্টাকে ৩ কোম্পানির চিঠি

ছবি

টানা বর্ষণে বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা, দুর্ভোগ

ট্রাম্পের ৩৫ শতাংশ শুল্ক, সমঝোতার আশা ছাড়েনি বাংলাদেশ

ছবি

অন্যের অপকর্মে ‘ফেঁসে গেছেন’, রিমান্ড শুনানিতে জানালেন মালয়েশিয়া ফেরত চারজন

ছবি

বিমান বাহিনী প্রধানের সাথে তুরস্কের প্রতিরক্ষা শিল্প সংস্থার সচিব অধ্যাপক হালুক গরগুনের সৌজন্য সাক্ষাৎ

ছবি

নিউমুরিং টার্মিনাল বিদেশি পরিচালনায় দেওয়া অবৈধ কি না—রিটের শুনানি বুধবার

ছবি

ঢাকাসহ ৪ বিভাগে ভারি বর্ষণের আভাস, চট্টগ্রামে ভূমিধসের শঙ্কা

ছবি

৩৫% শুল্ক: ইউনূসকে লেখা ট্রাম্পের চিঠিতে কী আছে

ছবি

ট্রাম্পের ৩৫% শুল্কের খড়্গ: সমঝোতার আশায় বাংলাদেশ

দেশের দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ কর্মক্ষম: ইউএনএফপিএ

ছবি

উপজেলা পর্যায়ে আদালত স্থাপনে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যমত

শেখ হাসিনার সাবেক এপিএস লিকুর জমি ক্রোক, ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ

বোনকে উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদে যুবককে মধ্যযুগীয় নির্যাতন

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কক্সবাজারে সুপেয় পানির সংকট মেটাতে নতুন প্রকল্প

সাগরে লঘুচাপ, বাড়তে পারে বৃষ্টি

১০ জুলাই এসএসসির ফল প্রকাশ হতে পারে

tab

জাতীয়

সব গ্রেডে ৯৩ শতাংশ মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের প্রজ্ঞাপন

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন আইনমন্ত্রী-সংবাদ

মঙ্গলবার, ২৩ জুলাই ২০২৪

সরকারি চাকরিতে সব গ্রেডে ৯৩ শতাংশ মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের বিধান রেখে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। বাকি ৭ শতাংশ নিয়োগ হবে কোটায়। এখন থেকে সরকারি চাকরির সব গ্রেডে অর্থাৎ ৯ম থেকে ২০তম গ্রেড পর্যন্ত সরাসরি ৯৩ শতাংশই কোটার ভিত্তিতে নিয়োগ হবে।

প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ‘মেধাভিত্তিক ৯৩ শতাংশ; মুক্তিযোদ্ধা, শহিদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনার সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ১ শতাংশ এবং শারীরিক প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য ১ শতাংশ’ নির্ধারণ করা হয়েছে। নির্ধারিত কোটায় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে সংশ্লিষ্ট কোটার শূন্য পদসমূহ সাধারণ মেধা তালিকা থেকে পূরণ করা হবে বলে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) বেলা আড়াইটার দিকে রাজধানীর গুলশানে নিজ বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে কোটা সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারির কথা জানান। এ সময় জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

‘সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বা আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, স্ব-শাসিত ও সংবিধিবদ্ধ কর্তৃপক্ষের এবং বিভিন্ন করপোরেশনের চাকরিতে বা কর্মে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারের বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি সংশোধন’ প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

প্রজ্ঞাপনের ব্যাখ্যা দিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, এই প্রজ্ঞাপন জারির ফলে ২০১৮ সালে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কোটা বাতিল করে যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল সেটিও ‘রহিত’ বা বাতিল করা হলো। এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘সমতার নীতি ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর প্রজাতন্ত্রের কর্মে প্রতিনিধিত্ব লাভ নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্ত্বশাসিত বা আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, স্ব-শাসিত ও সংবিবিধবদ্ধ কর্তৃপক্ষের এবং বিভিন্ন করপোরেশনের চাকরি বা কর্মে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে সব গ্রেডে মেধাভিত্তিক ৯৩ শতাংশ; মুক্তিযোদ্ধা, শহিদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনার সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ; ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ১ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য ১ শতাংশ কোটা নির্ধারণ করা হয়েছে।’

সরকারি চাকরিতে মোট ২০টি গ্রেড আছে। সরাসরি নিয়োগ হয় ৯ম থেকে ২০তম গ্রেডে। বাকি গ্রেডগুলো পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা হয়।

সরকারের করণীয় সম্পন্ন
কোটা নিয়ে এই প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সরকারের করনীয় সম্পন্ন হয়েছে জানিয়ে আনিসুল হক বলেন, ‘যা যা করণীয় ছিলো...আমরা কোটা সংস্কারের যে রায় আপিল বিভাগ দিয়েছে তা প্রতিপালন করেছি। আমরা....একটি কথা ছিল...একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত...আমরা এক সদস্য বিশিষ্ট একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি করে দিয়েছি। তিনি কাজ শুরু করেছেন। অবস্থা একটু শান্ত হলেই তিনি স্পট ঘুরে দেখবেন।’

সহিংসতা যেসব ছাত্রছাত্রী আহত হয়েছে তাদের চিকিৎসার বিষয়ে সরকার ব্যবস্থা নেবে জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আর সাধারণ ছাত্রছাত্রী যারা কোটাবিরোধী আন্দোলন করেছিলেন তাদের ব্যাপারে যদি কোনো মামলা হয়ে থাকে সেটি আমরা অবশ্যই দেখবো।’ এই প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের নারী কোটা বাতিল হবে কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার সর্বোচ্চ আদালত-আপিল বিভাগের রায় প্রতিপালন করেছে। আপিল বিভাগের রায়ে একটা দাঁড়ি, কমা, সেমিকোলন বদলানোর ক্ষমতা আমাদের নেই। তারা যেভাবে রায় দিয়েছেন, আমরা সেভাবেই প্রতিপালন করেছি।’

শিক্ষার্থীদের অন্যান্য দাবির বিষয়ে সরকারের অবস্থান
কোটা ছাড়াও শিক্ষার্থীদের আরো কয়েকটি দাবি রয়েছে সেগুলো মানা না হলে তারা ফের আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে- সেই বিষয়ে আনিসুল হক বলেন, ‘ছাত্রছাত্রীরা কোটাবিরোধী আন্দোলন করছিল কোটা সংস্কারের দাবিতে। আমরা সংস্কার করেছি। এখন তাদেরও একটা কর্তব্য আছে...যে জনগণ মনে করে, তাদের করা উচিত। সেটি হলো তাদের স্ব-স্ব জায়গায় গিয়ে পড়াশোনা করা উচিত।’

সরকারের যেসব নিয়োগ কার্যক্রম চলমান রয়েছে সেগুলোতে কোটা পদ্ধতি সংশোধনের এই প্রজ্ঞাপন কার্যকর হবে কী না জানতে চাইলে অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, ‘এই প্রজ্ঞাপনে পরিস্কার বলা আছে-এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে। আমার মনে হয়, এই শেষ লাইনটা জনপ্রশাসনমন্ত্রী আছেন...তিনি গুরুত্ব দিয়ে দেখবেন।’

ভবিষ্যতে এই প্রজ্ঞাপন পাল্টানোর সুযোগ রয়েছে-এ সংক্রান্ত বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘সর্বোচ্চ আদালত অত্যন্ত বিচক্ষণ একটি রায় দিয়েছে....সুদূর প্রসারী; তার কারণ হলো- সর্বোচ্চ আদালত এখানে শেষ করে দিতেন তাহলে এটা বদলাতে হলো আবারও রিভিউ করতে হতো......ফিউচারে যদি প্রয়োজন হয় তখন দেখা যাবে।’

এই প্রজ্ঞাপন আইনি রূপ পাবে না
কোটা আন্দোলনকারীদের দাবি অনুযায়ী এই প্রজ্ঞাপনকে আইনে রুপ দেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘কোনো দিন, কখনো আইন ছিল না। এটা সব সময়...ইটস এ পলিসি ম্যাটার অব দ্যা গভর্মেন্ট এবং এটা সবসময় পরিপত্র ও প্রজ্ঞাপন দ্বারাই করা হয়।’

কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের অন্যতম একটি দাবি হলো- সব কোটা বাতিল এবং এটিকে স্থায়ী রুপ দেয়ার জন্য জাতীয় সংসদে আইন করা।

মুক্তিযোদ্ধার নাতি-পুতির কোটা
মুক্তিযোদ্ধার নাতি-পুতিরা এখন কোটার সুবিধা পাবে কিনা-এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে আনিসুল হক বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ হলো- সর্বোচ্চ আদালত। তারা এই রায় দিয়েছেন। এই রায়ের দাঁড়ি-কমা, সেমিকোলনও বদলানোর ক্ষমতা আমাদের নেই।’

শিক্ষার্থীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার
আরেক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘এটা শুধু কোটা বিরোধী বা কোটা সংস্কারের আন্দোলন ছিল না। এটা- জঙ্গিরা, যারা বিএনপি-জামায়াত, ইসলামি ছাত্রশিবির এবং ছাত্রদলের যারা জঙ্গি হয়ে এই আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয়ে দেশ নষ্ট করা চেষ্টা করছে।’

এ সময় তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ঢাল হিসেবে ব্যাবহার করে শান্তিপূর্ণ মুবমেন্টের মধ্যে সহিংসতা ঢুকানোর যে পরিকল্পনা....কাজেই তাদের মধ্যে প্রিপারেশন ছিলো যে তারা ডাটা সেন্টার জালিয়ে দেবে, ইন্টারনেটের অনুপস্থিতিতে আমরাও বিপদে পড়েছি, গ্লোবালি যোগাযোগ করতে পারছি না।’

সহিংসতাকারীরা পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই ‘ইন্টারনেটকে ইন্টারাপ্ট’ করেছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘তারা কিন্তু বেক-আপ রেখেছিল, এটিরই প্রতিফলন হিসেবে বিশ^ব্যাপী ভুল তথ্য ছাড়ানো হচ্ছে। আমি আজকে ফ্রান্সের একটি গণমাধ্যমে দেখলাম টোটালি একপেশে একটি প্রতিবেদন। ছাত্রদের সঙ্গে যে আমাদের যোগাযোগ হয়েছে সেই তথ্য নেই। ছাত্রদের সঙ্গে যে শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান হয়েছে সেই তথ্য কিন্তু নেই। তারা যে সন্ত্রাস করেছে সেই তথ্য নেই।’

পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সহিংসতা হলে সেই বিষয়ে গোয়েন্দাদের কাছে আগাম তথ্য ছিল কিনা এবং না থাকলে ব্যর্থতার জন্য কোনো পদক্ষেপ নেয়া হবে কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে তথ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার যা বলেছিল তাই কিন্তু হলো। সরকার বলেছিল, একটু ধের্য ধরুন, আদালতে আছে, এটা সমাধান হয়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রীও এই কথা বলেছেন, তাই তো হলো। তারা যে অধর্য্য হলো সেই সুযোগই সন্ত্রাসীরা নিয়েছে।’

২০১৮ সালে কোটা সংস্কার করে ১০ শতাংশ করার দাবিতে ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’র ব্যানাড়ে আন্দোলনে নামে বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা। এক পর্যায়ে সরকার ওই বছর নবম থেকে ১৩তম গ্রেডের (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণী) সরকারি চাকরিতে পুরো কোটাই বাতিল করে দেয়। তবে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর চাকরিতে কোটা বহাল থাকে। এই দুই শ্রেণীতে পোষ্য, আনসার-ভিডিপিসহ কিছু কোটা রয়েছে।

২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এই পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অহিদুল ইসলামসহ সাতজন ২০২১ সালে রিট করেন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রুল দেয়। চূড়ান্ত শুনানি শেষে রুল অ্যাবসলিউট (যথাযথ) ঘোষণা করে গত ৫ জুন রায় দেয় হাইকোর্ট।

সর্বশেষ সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে হাইকোর্টের রায় গত ২১ জুলাই বাতিল করে রায় আপিল বিভাগ। এই রায়ের ফলে এখন কোটা থাকছে মাত্র ৭ শতাংশ। আগে এই কোটা ছিল ৫৬ শতাংশ।

back to top