alt

জাতীয়

রংপুরে শিক্ষার্থী আবু সাইদের মৃত্যু ‘ইটের আঘাতে’ঃ পুলিশের প্রতিবেদন

লিয়াকত আলী বাদল, রংপুর : শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪

# পুলিশের মামলা

# ১১ দিনেও ময়না তদন্ত প্রতিবেদন ‘তৈরি’ হয়নি

# শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ বহু মানুষের ক্ষোভ

# সাইদের পরিবারকের ঢাকায় তলব

কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় রংপুরে শিক্ষার্থী আবু সাঈদের ‘মৃত্যুর’ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করেছে। সেখানে ‘ইট-পাটকেলের আঘাতে তার মৃত্যু’ হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আর মৃত্যুর ১১ দিন পরও ময়না তদন্তের রিপোর্ট পাওয়া যায়নি।

গত ১৬ জুলাই দুপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থী সাইদকে ‘লক্ষ্য করে গুলি’ করা হয়েছে বলে অভিযোগ। ওই দিনই রংপুর শহরের তাজহাট থানায় বেরোবি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এস আই বিভুতিভুষন রায় বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নম্বর ৬ তারিখ ১৬/০৭/২৪ইং।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে। আবু সাইদ ‘দুইপক্ষের ইট পাটকেলের আঘাতে’ মৃত্যু বরন করেছেন। মামলার এজাহারে অভিযুক্ত হিসেবে কারও নাম উল্লেখ না করা হলেও বলা হয়েছে, ‘অজ্ঞাত ২/৩ হাজার ছাত্র নামধারী দূবৃর্ত্ত ও জামায়াত শিবিরের সন্ত্রাসী’।

শনিবার মামলার এজাহার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন মানুষের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তাদের অভিযোগ, এটা ‘গুলিবর্ষনকারী পুলিশ সদস্য এবং নির্দ্দেশদাতা একজন সহকারী পুলিশ কমিশনারকে বাঁচাতে’ এই মামলা দায়ের করেছে পুলিশ।

তারা বলছেন, পুলিশ যে শিক্ষার্থী আবু সাইদকে ‘টার্গেট করে বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি করেছে’ তার পুরো ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহ দেশে বিদেশে ভাইরাল হয়েছে।

ময়না তদন্ত রিপোর্ট কবে

বেরোবির ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাইদের মৃত্যুর ১১দিনে পেরিয়া গেছে, কিন্তু এখনও ময়না তদন্তের প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি।

রংপুর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা শাহ মোঃ সরওয়ার জাহানের সাথে তার কার্যালয়ে গিয়ে দেখা করে ময়না তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ময়না তদন্তকারী চিকিৎসক ডা রাজিকুল ইসলাম ছুটিতে আছেন। সোমবার (২৯ জুলাই) তিনি যোগদান করবেন। আশা করা যায় দ্রুতই ময়না তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।‘

ক্ষোভ, অভিযোগ

বেরোবির বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. তুহিন ওয়াদুদ শনিবার সকালে সংবাদকে বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাইদকে পুলিশ গুলি করে হত্যা করেছে। তার মরদেহ আমি দেখেছি সারা শরীরে অসংখ্য গুলি আর রাবার বুলেটের চিহ্ন।‘ তিনি অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য ও তার নির্দ্দেশ দাতা পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোন ব্যাবস্থা না নেয়ায় বিস্ময় প্রকাশন। তার কথা, ‘হত্যাকারী পুলিশ সদস্যদের বিচার না করলে। তাদের গ্রেপ্তার করা না হলে পুলিশ বাহিনী ও সরকারের ভাবমুর্তি নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।‘

গুলিবিদ্ধ সাইদ মাটিতে লুটিয়ে পরার পর তাকে উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসাদের একজন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের রংপুরের আহবায়ক সাজু বাঁশফোর। তিনি বলেন, ‘আমরা কয়েক বন্ধু যখন গুলিবিদ্ধ সাইদকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলাম তখনও পুলিশ আমাদের লক্ষ্য করে নির্বিচারে গুলি করছিলো। আমরা অভাবনীয় ভাবে বেঁচে যাই।‘

‘আমরা সাইদকে প্রথমে একটি রিক্সায়, পরে একটি অটো রিক্সায় করে হাসপাতালে নেবার সময় তার নাক মুখ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছিলো। তার শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন। কিন্তু হাসপাতালে নেবার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করে।‘

প্রত্যাক্ষদর্শী আরেকজন আরেফিন তিতু জানান তিনি খবর পান অনেক শিক্ষার্থী গুলি বিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। খবর পেয়ে তিনিও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। ‘সেখানে নিহত সাইদকে অজ্ঞান অবস্থায় দেখতে পাই। তার শরীরে হাত দিয়ে দেখি শরীর ঠান্ডা হয়ে আছে। নিহত সাইদের শরীরে অসংখ্য গুলির আঘাতের চিহ্ন দেখেছি।‘

বেরোবির অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের শিক্ষক ওমর ফারুখ বলেন, ‘আবু সাঈদকে ঠান্ডা মাথায় হত্যা করা হয়েছে। আমরা এর বিচার চাই। আমি মনে করি তদন্ত করে দোষীদের শাস্তির আওতায় আওতায় আনতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক বলছেন, ‘ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে পরিস্কার দেখা যাচ্ছে আবু সাইদ দাঁড়িয়ে আছেন। তাকে লক্ষ্য করে পুলিশ গুলি করছে। সে কয়েকবার আত্মরক্ষা করার চেষ্টা করেও সফল হয়নি। পরে যখন সরাসরি ২০ ফুটের কম দুরত্ব থেকে গুলি করা হয় তখনই সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এ ঘটনাটি ঘটেছে বেরোবির প্রধান ফটকের সামনে।‘

যা বললেন রংপুর মেট্রোপলিটান পুলিশ কমিশনার

রংপুর মেট্রোপলিটান পুলিশ কমিশনার মোঃ মনিরুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান ‘এ ঘটনায় পুলিশের কেউ গুলি করে থাকলে, প্রমান পেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।‘

তাজহাট থানায় পুলিশের দায়ের করা মামলায় ‘ইট-পাটকেলের আঘাতে’ আবু সাঈদের মৃত্যুর’ প্রসঙ্গ উল্লেখ করলে পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘সব ব্যাপারে অনুসন্ধান চলছে। তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সিসিটিভি, ভিডিও ফুটেজ পরীক্ষা করা হচ্ছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন সহ সব কিছু পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।‘

বেরোবির তদন্ত কমিটি

কোটা সংস্কার আন্দোলনে ইংরেজি বিভাগের ১২ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আবু সাইদ নিহত ও সংঘাত সংঘর্ষের ঘটনায় ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মতিউর রহমানকে আহবায়ক করে তিন সদস্যের একটি তথ্য অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কমিটির সদস্য করা হয়েছে রসায়ন বিভাগের প্রফেসর ড. বিজন মোহন চাকী এবং সদস্য-সচিব করা হয়েছে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. শফিকুর রহমানকে।

তদন্ত কমিটির আহবায়ক অধ্যাপক মতিউর রহমানের সাথে শনিবার বিকেলে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে। তার পরেও তদন্ত কাজ শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে ‘ভিডিও ও সিসি টিভির ফুটেজ’ সংগ্রহ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় খুললেই সকল অংশীজনের সাথে কথা বলে ‘দ্রুত’ প্রতিবেদন দেয়া হবে।

সাইদের পরিবারকে ঢাকায় তলব

গতকাল খবর পাওয়া যায় সাইদের বাবা, মাসহ স্বজনদের ঢাকায় ডেকে নেয়া হয়েছে। আবু সাইদের বাড়ি রংপুরের পীরগজ্ঞ উপজেলার মদনখালি ইউনিয়নের বাবন পাড়া গ্রামে। সেখানে যাবার পর প্রতিবেশীরা জানান শুক্রবার জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা তাদের বাসায় এসে ঢাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করার জন্য যেতে বলেছেন।

শনিবার সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে নিহত আবু সাইদের বাবা মকবুল হোসেন, মা মনোয়ারা বেগম, ভাই আবু হোসেন , বোন সুমি আখতার , ভাবী সাবিনা আকতার গাড়িতে করে ঢাকার উদ্দেশ্যে রংপুর ত্যাগ করেছেন বলে জানা গেছে।

পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে

মিটফোর্ডে সোহাগ হত্যা: রিমান্ড শেষে কারাগারে দুই ভাই

এডিস মশার উপদ্রব সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে

একাত্তর ও গণতন্ত্র প্রশ্নে ছাড় নয়: মির্জা ফখরুল

ছবি

মাশরুম উন্নয়ন প্রকল্পে লুটপাটের অভিযোগ

ছবি

দেবিদ্বারে ঘুমন্ত নারীকে হত্যার অভিযোগে প্রেমিক ও স্বামী গ্রেপ্তার

ছবি

চাপাতি হাতে পুলিশের সামনে দিয়ে চলে গেল ছিনতাইকারী

ছবি

ইবি শিক্ষার্থী মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত ও নিরাপত্তার দাবিতে দিনভর উত্তাল ক্যাম্পাস

‘গণঅভ্যুত্থানের পর নারীর ভূমিকা অবমূল্যায়ন করা হয়’

ট্যারিফ অনুমোদন ছাড়াই চলছে রামপালসহ ৯টি বিদ্যুৎকেন্দ্র

গোপালগঞ্জে কারফিউ বাড়লো

এনসিপির নিবন্ধন আবেদনে ছয় ঘাটতি, সংশোধনের জন্য ইসির চিঠি

গোপালগঞ্জে হতাহতের ঘটনায় নিন্দা ও তদন্তের দাবি জানিয়ে ২১ নাগরিকের বিবৃতি

ছবি

চকরিয়ায় এনসিপির পথসভা পণ্ড: উত্তপ্ত কক্সবাজার

গোপালগঞ্জের ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত চায় এইচআরএফবি

ঢাকায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন অফিস নিয়ে কয়েকটি দলের আপত্তি

ছবি

‘নতুন ব্যবস্থায় নতুন বাংলাদেশ’ গড়ার ঘোষণা জামায়াতের

ছবি

চলতি বছর ডেঙ্গুতে ৬২ জনের মৃত্যু, জুলাইতেই প্রাণ গেল ২০ জনের

যান্ত্রিক ত্রুটির কবলে পড়া বিমান দুবাই থেকে ফিরলো ৩০ ঘণ্টা বিলম্বে

গোপালগঞ্জে নিহতদের ‘প্রয়োজনে’ ময়নাতদন্ত: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

হাসিনার হলফনামায় তথ্য গোপনে কিছু করার নেই: দুদককে ইসির ব্যাখ্যা

মতিঝিলে সেনা কল্যাণ ভবনে আগুন

কুলাউড়া সীমান্ত থেকে ৩ যুবককে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ

যশোরে গৃহবধূ ধর্ষণ মামলা: আদালতে চার্জশিট

ডেঙ্গুতে একজনের মৃত্যু, হাসপাতালে ১১৪ জন

ইলিশের স্বাদ নিতে পারছেন না উপকূলের ক্রেতারা

৪ ট্রেন ভাড়া করলো জামায়াত, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা

ছবি

মিরপুরে পাখির হাট থেকে পাখি ও কচ্ছপ উদ্ধার

ফিরে দেখা: রংপুরে এই দিনে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ৬ জন নিহত, আহত অর্ধশতাধিক

ছবি

কোম্পানীগঞ্জ বাস টার্মিনাল: ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, আহত ১২

ছবি

ঝাঁজ বেড়েছে পেঁয়াজের, মুরগির দামও চড়া

ছবি

বাংলাদেশে স্টারলিংক চালু, কার্যকর সহায়তা পাওয়ায় স্পেসএক্সের প্রশংসা

ছবি

নোয়াখালীতে এখনও সাড়ে ১৭ হাজার পরিবার পানিবন্দী

গাজীপুরে কাভার্ড ভ্যান-সিএনজি সংঘর্ষে নিহত ৫ জন, চকরিয়ায় ১

পুরনো খেলা বন্ধ না হলে আরেক গণঅভ্যুত্থানের প্রস্তুতির আহ্বান নাহিদের

আগে স্থানীয় নির্বাচন ও পিআর পদ্ধতির কথা যারা বলছেন, তাদের উদ্দেশ্য অসৎ: বিএনপি

tab

জাতীয়

রংপুরে শিক্ষার্থী আবু সাইদের মৃত্যু ‘ইটের আঘাতে’ঃ পুলিশের প্রতিবেদন

লিয়াকত আলী বাদল, রংপুর

শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪

# পুলিশের মামলা

# ১১ দিনেও ময়না তদন্ত প্রতিবেদন ‘তৈরি’ হয়নি

# শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ বহু মানুষের ক্ষোভ

# সাইদের পরিবারকের ঢাকায় তলব

কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় রংপুরে শিক্ষার্থী আবু সাঈদের ‘মৃত্যুর’ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করেছে। সেখানে ‘ইট-পাটকেলের আঘাতে তার মৃত্যু’ হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আর মৃত্যুর ১১ দিন পরও ময়না তদন্তের রিপোর্ট পাওয়া যায়নি।

গত ১৬ জুলাই দুপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থী সাইদকে ‘লক্ষ্য করে গুলি’ করা হয়েছে বলে অভিযোগ। ওই দিনই রংপুর শহরের তাজহাট থানায় বেরোবি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এস আই বিভুতিভুষন রায় বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নম্বর ৬ তারিখ ১৬/০৭/২৪ইং।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে। আবু সাইদ ‘দুইপক্ষের ইট পাটকেলের আঘাতে’ মৃত্যু বরন করেছেন। মামলার এজাহারে অভিযুক্ত হিসেবে কারও নাম উল্লেখ না করা হলেও বলা হয়েছে, ‘অজ্ঞাত ২/৩ হাজার ছাত্র নামধারী দূবৃর্ত্ত ও জামায়াত শিবিরের সন্ত্রাসী’।

শনিবার মামলার এজাহার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন মানুষের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তাদের অভিযোগ, এটা ‘গুলিবর্ষনকারী পুলিশ সদস্য এবং নির্দ্দেশদাতা একজন সহকারী পুলিশ কমিশনারকে বাঁচাতে’ এই মামলা দায়ের করেছে পুলিশ।

তারা বলছেন, পুলিশ যে শিক্ষার্থী আবু সাইদকে ‘টার্গেট করে বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি করেছে’ তার পুরো ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহ দেশে বিদেশে ভাইরাল হয়েছে।

ময়না তদন্ত রিপোর্ট কবে

বেরোবির ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাইদের মৃত্যুর ১১দিনে পেরিয়া গেছে, কিন্তু এখনও ময়না তদন্তের প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি।

রংপুর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা শাহ মোঃ সরওয়ার জাহানের সাথে তার কার্যালয়ে গিয়ে দেখা করে ময়না তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ময়না তদন্তকারী চিকিৎসক ডা রাজিকুল ইসলাম ছুটিতে আছেন। সোমবার (২৯ জুলাই) তিনি যোগদান করবেন। আশা করা যায় দ্রুতই ময়না তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।‘

ক্ষোভ, অভিযোগ

বেরোবির বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. তুহিন ওয়াদুদ শনিবার সকালে সংবাদকে বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাইদকে পুলিশ গুলি করে হত্যা করেছে। তার মরদেহ আমি দেখেছি সারা শরীরে অসংখ্য গুলি আর রাবার বুলেটের চিহ্ন।‘ তিনি অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য ও তার নির্দ্দেশ দাতা পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোন ব্যাবস্থা না নেয়ায় বিস্ময় প্রকাশন। তার কথা, ‘হত্যাকারী পুলিশ সদস্যদের বিচার না করলে। তাদের গ্রেপ্তার করা না হলে পুলিশ বাহিনী ও সরকারের ভাবমুর্তি নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।‘

গুলিবিদ্ধ সাইদ মাটিতে লুটিয়ে পরার পর তাকে উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসাদের একজন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের রংপুরের আহবায়ক সাজু বাঁশফোর। তিনি বলেন, ‘আমরা কয়েক বন্ধু যখন গুলিবিদ্ধ সাইদকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলাম তখনও পুলিশ আমাদের লক্ষ্য করে নির্বিচারে গুলি করছিলো। আমরা অভাবনীয় ভাবে বেঁচে যাই।‘

‘আমরা সাইদকে প্রথমে একটি রিক্সায়, পরে একটি অটো রিক্সায় করে হাসপাতালে নেবার সময় তার নাক মুখ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছিলো। তার শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন। কিন্তু হাসপাতালে নেবার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করে।‘

প্রত্যাক্ষদর্শী আরেকজন আরেফিন তিতু জানান তিনি খবর পান অনেক শিক্ষার্থী গুলি বিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। খবর পেয়ে তিনিও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। ‘সেখানে নিহত সাইদকে অজ্ঞান অবস্থায় দেখতে পাই। তার শরীরে হাত দিয়ে দেখি শরীর ঠান্ডা হয়ে আছে। নিহত সাইদের শরীরে অসংখ্য গুলির আঘাতের চিহ্ন দেখেছি।‘

বেরোবির অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের শিক্ষক ওমর ফারুখ বলেন, ‘আবু সাঈদকে ঠান্ডা মাথায় হত্যা করা হয়েছে। আমরা এর বিচার চাই। আমি মনে করি তদন্ত করে দোষীদের শাস্তির আওতায় আওতায় আনতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক বলছেন, ‘ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে পরিস্কার দেখা যাচ্ছে আবু সাইদ দাঁড়িয়ে আছেন। তাকে লক্ষ্য করে পুলিশ গুলি করছে। সে কয়েকবার আত্মরক্ষা করার চেষ্টা করেও সফল হয়নি। পরে যখন সরাসরি ২০ ফুটের কম দুরত্ব থেকে গুলি করা হয় তখনই সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এ ঘটনাটি ঘটেছে বেরোবির প্রধান ফটকের সামনে।‘

যা বললেন রংপুর মেট্রোপলিটান পুলিশ কমিশনার

রংপুর মেট্রোপলিটান পুলিশ কমিশনার মোঃ মনিরুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান ‘এ ঘটনায় পুলিশের কেউ গুলি করে থাকলে, প্রমান পেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।‘

তাজহাট থানায় পুলিশের দায়ের করা মামলায় ‘ইট-পাটকেলের আঘাতে’ আবু সাঈদের মৃত্যুর’ প্রসঙ্গ উল্লেখ করলে পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘সব ব্যাপারে অনুসন্ধান চলছে। তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সিসিটিভি, ভিডিও ফুটেজ পরীক্ষা করা হচ্ছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন সহ সব কিছু পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।‘

বেরোবির তদন্ত কমিটি

কোটা সংস্কার আন্দোলনে ইংরেজি বিভাগের ১২ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আবু সাইদ নিহত ও সংঘাত সংঘর্ষের ঘটনায় ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মতিউর রহমানকে আহবায়ক করে তিন সদস্যের একটি তথ্য অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কমিটির সদস্য করা হয়েছে রসায়ন বিভাগের প্রফেসর ড. বিজন মোহন চাকী এবং সদস্য-সচিব করা হয়েছে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. শফিকুর রহমানকে।

তদন্ত কমিটির আহবায়ক অধ্যাপক মতিউর রহমানের সাথে শনিবার বিকেলে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে। তার পরেও তদন্ত কাজ শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে ‘ভিডিও ও সিসি টিভির ফুটেজ’ সংগ্রহ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় খুললেই সকল অংশীজনের সাথে কথা বলে ‘দ্রুত’ প্রতিবেদন দেয়া হবে।

সাইদের পরিবারকে ঢাকায় তলব

গতকাল খবর পাওয়া যায় সাইদের বাবা, মাসহ স্বজনদের ঢাকায় ডেকে নেয়া হয়েছে। আবু সাইদের বাড়ি রংপুরের পীরগজ্ঞ উপজেলার মদনখালি ইউনিয়নের বাবন পাড়া গ্রামে। সেখানে যাবার পর প্রতিবেশীরা জানান শুক্রবার জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা তাদের বাসায় এসে ঢাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করার জন্য যেতে বলেছেন।

শনিবার সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে নিহত আবু সাইদের বাবা মকবুল হোসেন, মা মনোয়ারা বেগম, ভাই আবু হোসেন , বোন সুমি আখতার , ভাবী সাবিনা আকতার গাড়িতে করে ঢাকার উদ্দেশ্যে রংপুর ত্যাগ করেছেন বলে জানা গেছে।

back to top