ক্ষমতার পালাবদলের পর বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মধ্যে কর্মবিরতি শুরু করা পুলিশ সদস্যদের আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে কাজে ফেরার নির্দেশ দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেছেন, বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে কাজে যোগ না দিলে অনুপস্থিতরা আর ‘চাকরি করতে চাইছেন না’ বলে ধরে নেয়া হবে।
দায়িত্ব নিয়ে রোববার (১১ আগস্ট) প্রথমবার সচিবালয়ে আসা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন সাংবাদিকদের বলেন,‘আমি আইজিপি সাহেবের সঙ্গে আলাপ করেছি, র?্যাবের ডিজির সঙ্গে আলাপ করেছি, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে আলাপ করেছি। আপনারা যদি বৃহস্পতিবার না আসেন আমরা ধরে নেব আপনারা চাকরিতে ইচ্ছুক নন। বৃহস্পতিবারের মধ্যে যে যার জায়গায় চলে যাবেন, ডিউটিতে থাকবেন।’
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘পুলিশের গায়ে যেন অহেতুক কেউ হাত না দেয়। ছোট, বড় অপরাধ যাই হোক, তাদের বিচার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বিচারের আওতায় আনা হবে। ‘ঢালাওভাবে কাউকে দোষারোপ করা যাবে না। জনগণকে আমি এটুকু বলতে চাই, আপনারা পুলিশের গায়ে হাত দেবেন না। আপনারা দেখছেন, আপনারা নিজেরাই সাফার করছেন।’
পুলিশ থানায় না থাকার ফলে রাজধানীসহ সারাদেশে এক ভয়াবহ নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হয়েছে। রাত হলেই ঢাকার অলি-গলিতে সৃষ্টি হচ্ছে ডাকাত আতঙ্ক। দল বেঁধে পাড়া-মহল্লায় পাহারা দিচ্ছেন স্থানীয়রা। এ প্রসঙ্গ টেনে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘রাতে রাতে আমার কাছে টেলিফোন আসে, ‘অমুক জায়গায় ডাকাতি হয়েছে’, আমি বললাম; ‘আল্লাহ করো আর কিছু করার নাই’। যদি ডাকাতি হয়, সেখানে যদি পুলিশ না থাকে কী করবে?’
রোববার সকালে ইসলামী ব্যাংক নিয়ন্ত্রণে নিতে ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ে হামলার ঘটনা ঘটে। তাতে ৬ জন আহত হন। সে বিষয়েও কথা বলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘চেষ্টা করছি যাতে পুলিশ ফিরে আসে, যদি না ফেরে, আপনারা দেখছেন কী হতে পারে। একটু আগে দেখলাম ব্যাংকে মারামারি হইছে, ব্যাংক দখল করবে। এখন মনে হয় যে যার মতো করে যা দখল করতে পারে।’
সাখাওয়াত হোসেন বলেন, কিছুক্ষণ আগে রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে আনসারের একটি অংশ। ‘তাদেরও কিছু দাবি দাওয়া আছে। সবারই দাবি দাওয়া আছে, আমারও দাবি দাওয়া আছে। আমার দাবি দাওয়া হল, আপনারা ফিরে যান, আমি আপনাদেরকে কথা দিচ্ছি, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে আমার দায়িত্ব আপনাদের কাছে আসা, আপনাদের কথা শোনা। এবং যতদূর সম্ভব আমার পক্ষে ইমিডিয়েট যা করার করব। প্রত্যেক বাহিনীর সঙ্গে আমি কথা বলব।’
অরাজকতা নিয়েন্ত্রণে অন্তর্বর্তী সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি আসলাম দখল করব, বাজার দখল করব, ঘাট দখল করব, চান্দাবাজি করব- কিছুদিন করেন, কিন্তু আমি সেনা প্রধানকে বলেছি, অনুরোধ করেছি. পা ভেঙে দিতে আপনাদের। আই ডোন্ট কেয়ার, ইউ গো টু হেল।’
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, বিগত সরকারগুলোর আমলে বাংলাদেশে পুলিশকে লাঠিয়াল বাহিনীর মত ব্যবহার করা হয়েছে। সরকার পতনের আন্দোলনের আগে ও পরে সহিংসতায় আহত পুলিশ সদস্যদের দেখতে রোববার রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে গিয়ে তিনি বলেছেন, পুলিশের ওপর হামলা হয়েছে তা ‘অত্যন্ত বেদনাদায়ক’। আবার পুলিশও কিছুই করেনি, বিষয়টি এমন নয়।
‘একজনকে গুলি করে মারা, আরেকজনকে মাথার চামড়া তুলে ফেলা বা হাত-পা টুকরো করে ফেলা, মাথা থেঁতলে দেয়া, এটা তো আপনি কারও সঙ্গে করতে পারেন না। এমনকি যুদ্ধের সময় একজন মৃত সৈনিককে এভাবে থেঁতলে দিই না। এটা দুঃখজনক। এটাও দুঃখজনক যে হাজার তরুণ মারা গেছে পুলিশের গুলিতে।’ পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে উপদেষ্টা বলেন, পুলিশের হাতে আধুনিক মারণাস্ত্র দেখে তিনি আশ্চর্য হয়েছেন।
‘পুলিশকে ব্যবহার করেছেন লাঠিয়াল বাহিনীর মত। এই পুলিশকে তৈরি করেছে, তাদের হাতে মারণাস্ত্র দেয়া হয়েছে। তাদের হাতে আমি সেসব অস্ত্র দেখে আশ্চর্য হয়ে গেছি। এটা মনে হয় ১৫-২০ বছর আগে দেয়া হয়েছে। আমাদের কাছে অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র আছে তা শত্রুকে মারার জন্য। এটা পুলিশকে দেয়া ঠিক হয়নি।’
‘পুলিশ ছাড়া আমাদের সমাজ চলতে পারে না। আপনারা দেখছেন, আমরা প্রতিদিন খবর পাচ্ছি, বলে স্যার আমার বাড়ি লুট হচ্ছে। তারপরও কি করব, কিছু করার নাই, আমি শুনে যেতে পারি। সেনাবাহিনীকে বলেছি তারা বের হয়ে আছে, বিজিবি আছে.. এটা তাদের কাজ না। পুলিশের কাজ সেনাবাহিনী করতে পারে না, তবুও তারা করছে।’
নিহত হয়েছে ৪২ জন পুলিশ
গত এক মাসের সংঘাতে কত পুলিশ নিহত হয়েছেন জানতে চাইলে উপদেষ্টার সঙ্গে থাকা আইজিপি মো. ময়নুল ইসলাম বলেন, ‘হ্যাঁ, নিহতদের তালিকা আমাদের আছে। এ পর্যন্ত ৪২ জন পুলিশ সদস্য, বিভিন্ন র্যাংকের। এর মধ্যে ইন্সপেক্টর তিনজন রয়েছে, বিভিন্ন র্যাংকের আছে। দু’জন র্যাব সদস্যসহ টোটাল ৪২ জন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। আর আহত হয়েছে অসংখ্য। তিনি জানান, রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে ৫০৭ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। গুরুতর আহতরা এখনও হাসপাতাল ছাড়তে পারেননি। এরকম আছেন ২৭ জন, তাদের একজন আইসিইউতে। আহত পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসার পাশাপাশি ট্রমার শিকার পরিবারগুলোর আশ্রয় ও দেখভালর ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানান আইজিপি।
গণআন্দোলন ও সহিংসতার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার পর থেকেই দেশজুড়ে থানাসহ পুলিশের স্থাপনাগুলোতে একের পর এক হামলা হতে থাকে। ভাঙচুর ও লুটপাটও করা হয় অনেক থানায়। এসব ঘটনায় নিহত হয়েছেন অনেক পুলিশ সদস্য। নিরাপত্তাহীনতা ও সহকর্মীদের হতাহত হওয়ার ক্ষোভ থেকে ৫ আগস্টের পর কাজে যোগ দেননি পুলিশের নন ক্যাডার সদস্যরা। অনেকে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে পালিয়েও গেছেন। ফলে ঢাকার রাস্তাঘাট এবং থানাগুলো কার্যত পুলিশশূন্য হয়ে পড়ে।
নিরাপত্তাসহ ১১ দফা দাবিতে ৬ আগস্ট থেকে কর্মবিরতি শুরু করেন নন ক্যাডার পুলিশ সদস্যরা। এ পরিস্থিতিতে পুলিশি ব্যবস্থা কার্যত ভেঙে পড়ে। পুলিশহীন রাজধানীতে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করতে নামানো হয় আনসার। গত বুধবার নবনিযুক্ত মহাপরিদর্শক মো. ময়নুল ইসলাম পুলিশ সদস্যদের একদিনের মধ্যে যার যার ইউনিটে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দেন। এরপর শুক্রবার রমনা, শাহবাগ, নিউমার্কেট, কলাবাগান, ধানমন্ডিসহ রাজধানীর ২৮ থানায় স্বল্প পরিসরে তাদের কার্যক্রম শুরু করে।
দখল-চাঁদাবাজি করলে পা ভেঙে দেয়া হবে-স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন চাঁদাবাজ ও দখলদারির বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে বলেছেন, ‘একটি রাজনৈতিক দলের অবস্থা আজকে দেখেন। এত বড় একটি দল, এত ঐতিহ্যবাহী একটি দল, যার নামের সঙ্গে বাংলাদেশের স্বাধীনতা জড়িত, আজকে তাদের সদস্যদের পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। যদি আপনি মনে করেন আমি আসলাম, আমি দখল করব, বাজার দখল করব, ঘাট দখল করব, চাঁদাবাজি করব.....সেনাপ্রধানকে অনুরোধ করেছি আপনাদের পা ভেঙে দিতে।’
তিনি রোববার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন। দায়িত্ব নেয়ার পর রোববার প্রথম সচিবালয়ে আসেন।
ভবিষ্যতে রাজনীতি করা অনেক কষ্টকর হবে মন্তব্য করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘একটা রাষ্ট্র এভাবে চলে না। একজনের ইচ্ছেমতো রাষ্ট্র চালানো যায় না। দেশটা কারো পার্সোনাল প্রপার্টি বা ফ্যামিলি প্রপার্টি না। হাজার হাজার লোক মারার পরেও ক্ষমতায় থাকতে চাওয়ার মানসিকতা।’
পুলিশকে লাঠিয়াল বাহিনীর মতো ব্যবহার করা হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘তাদের হাতে গত ১৫-২০ বছর আগে মরণাস্ত্র তুলে দেয়া হয়েছে। দেখে আমি আশ্চর্য হয়ে গেছি। এটা ঠিক হয়নি। ভবিষ্যতে রাজনীতি করা অনেক কষ্ট হবে। পুলিশকে আর লাঠিয়াল বাহিনীর মতো ব্যবহার করতে পারবেন না। পুলিশ কমিশনের মতো পুলিশ চলবে।’
এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, পুলিশের যেসব সদস্য এখনও কাজে যোগ দেননি, তাদের জন্য শেষ সময় হচ্ছে আগামী বৃহস্পতিবার। এই সময়ের মধ্যে যদি কেউ যোগ না দেন, তাহলে ধরে নেয়া হবে তারা চাকরিতে ইচ্ছুক নন।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দায়িত্ব পেয়েছেন এম সাখাওয়াত হোসেন।
সোমবার, ১২ আগস্ট ২০২৪
ক্ষমতার পালাবদলের পর বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মধ্যে কর্মবিরতি শুরু করা পুলিশ সদস্যদের আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে কাজে ফেরার নির্দেশ দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেছেন, বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে কাজে যোগ না দিলে অনুপস্থিতরা আর ‘চাকরি করতে চাইছেন না’ বলে ধরে নেয়া হবে।
দায়িত্ব নিয়ে রোববার (১১ আগস্ট) প্রথমবার সচিবালয়ে আসা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন সাংবাদিকদের বলেন,‘আমি আইজিপি সাহেবের সঙ্গে আলাপ করেছি, র?্যাবের ডিজির সঙ্গে আলাপ করেছি, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে আলাপ করেছি। আপনারা যদি বৃহস্পতিবার না আসেন আমরা ধরে নেব আপনারা চাকরিতে ইচ্ছুক নন। বৃহস্পতিবারের মধ্যে যে যার জায়গায় চলে যাবেন, ডিউটিতে থাকবেন।’
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘পুলিশের গায়ে যেন অহেতুক কেউ হাত না দেয়। ছোট, বড় অপরাধ যাই হোক, তাদের বিচার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বিচারের আওতায় আনা হবে। ‘ঢালাওভাবে কাউকে দোষারোপ করা যাবে না। জনগণকে আমি এটুকু বলতে চাই, আপনারা পুলিশের গায়ে হাত দেবেন না। আপনারা দেখছেন, আপনারা নিজেরাই সাফার করছেন।’
পুলিশ থানায় না থাকার ফলে রাজধানীসহ সারাদেশে এক ভয়াবহ নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হয়েছে। রাত হলেই ঢাকার অলি-গলিতে সৃষ্টি হচ্ছে ডাকাত আতঙ্ক। দল বেঁধে পাড়া-মহল্লায় পাহারা দিচ্ছেন স্থানীয়রা। এ প্রসঙ্গ টেনে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘রাতে রাতে আমার কাছে টেলিফোন আসে, ‘অমুক জায়গায় ডাকাতি হয়েছে’, আমি বললাম; ‘আল্লাহ করো আর কিছু করার নাই’। যদি ডাকাতি হয়, সেখানে যদি পুলিশ না থাকে কী করবে?’
রোববার সকালে ইসলামী ব্যাংক নিয়ন্ত্রণে নিতে ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ে হামলার ঘটনা ঘটে। তাতে ৬ জন আহত হন। সে বিষয়েও কথা বলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘চেষ্টা করছি যাতে পুলিশ ফিরে আসে, যদি না ফেরে, আপনারা দেখছেন কী হতে পারে। একটু আগে দেখলাম ব্যাংকে মারামারি হইছে, ব্যাংক দখল করবে। এখন মনে হয় যে যার মতো করে যা দখল করতে পারে।’
সাখাওয়াত হোসেন বলেন, কিছুক্ষণ আগে রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে আনসারের একটি অংশ। ‘তাদেরও কিছু দাবি দাওয়া আছে। সবারই দাবি দাওয়া আছে, আমারও দাবি দাওয়া আছে। আমার দাবি দাওয়া হল, আপনারা ফিরে যান, আমি আপনাদেরকে কথা দিচ্ছি, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে আমার দায়িত্ব আপনাদের কাছে আসা, আপনাদের কথা শোনা। এবং যতদূর সম্ভব আমার পক্ষে ইমিডিয়েট যা করার করব। প্রত্যেক বাহিনীর সঙ্গে আমি কথা বলব।’
অরাজকতা নিয়েন্ত্রণে অন্তর্বর্তী সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি আসলাম দখল করব, বাজার দখল করব, ঘাট দখল করব, চান্দাবাজি করব- কিছুদিন করেন, কিন্তু আমি সেনা প্রধানকে বলেছি, অনুরোধ করেছি. পা ভেঙে দিতে আপনাদের। আই ডোন্ট কেয়ার, ইউ গো টু হেল।’
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, বিগত সরকারগুলোর আমলে বাংলাদেশে পুলিশকে লাঠিয়াল বাহিনীর মত ব্যবহার করা হয়েছে। সরকার পতনের আন্দোলনের আগে ও পরে সহিংসতায় আহত পুলিশ সদস্যদের দেখতে রোববার রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে গিয়ে তিনি বলেছেন, পুলিশের ওপর হামলা হয়েছে তা ‘অত্যন্ত বেদনাদায়ক’। আবার পুলিশও কিছুই করেনি, বিষয়টি এমন নয়।
‘একজনকে গুলি করে মারা, আরেকজনকে মাথার চামড়া তুলে ফেলা বা হাত-পা টুকরো করে ফেলা, মাথা থেঁতলে দেয়া, এটা তো আপনি কারও সঙ্গে করতে পারেন না। এমনকি যুদ্ধের সময় একজন মৃত সৈনিককে এভাবে থেঁতলে দিই না। এটা দুঃখজনক। এটাও দুঃখজনক যে হাজার তরুণ মারা গেছে পুলিশের গুলিতে।’ পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে উপদেষ্টা বলেন, পুলিশের হাতে আধুনিক মারণাস্ত্র দেখে তিনি আশ্চর্য হয়েছেন।
‘পুলিশকে ব্যবহার করেছেন লাঠিয়াল বাহিনীর মত। এই পুলিশকে তৈরি করেছে, তাদের হাতে মারণাস্ত্র দেয়া হয়েছে। তাদের হাতে আমি সেসব অস্ত্র দেখে আশ্চর্য হয়ে গেছি। এটা মনে হয় ১৫-২০ বছর আগে দেয়া হয়েছে। আমাদের কাছে অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র আছে তা শত্রুকে মারার জন্য। এটা পুলিশকে দেয়া ঠিক হয়নি।’
‘পুলিশ ছাড়া আমাদের সমাজ চলতে পারে না। আপনারা দেখছেন, আমরা প্রতিদিন খবর পাচ্ছি, বলে স্যার আমার বাড়ি লুট হচ্ছে। তারপরও কি করব, কিছু করার নাই, আমি শুনে যেতে পারি। সেনাবাহিনীকে বলেছি তারা বের হয়ে আছে, বিজিবি আছে.. এটা তাদের কাজ না। পুলিশের কাজ সেনাবাহিনী করতে পারে না, তবুও তারা করছে।’
নিহত হয়েছে ৪২ জন পুলিশ
গত এক মাসের সংঘাতে কত পুলিশ নিহত হয়েছেন জানতে চাইলে উপদেষ্টার সঙ্গে থাকা আইজিপি মো. ময়নুল ইসলাম বলেন, ‘হ্যাঁ, নিহতদের তালিকা আমাদের আছে। এ পর্যন্ত ৪২ জন পুলিশ সদস্য, বিভিন্ন র্যাংকের। এর মধ্যে ইন্সপেক্টর তিনজন রয়েছে, বিভিন্ন র্যাংকের আছে। দু’জন র্যাব সদস্যসহ টোটাল ৪২ জন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। আর আহত হয়েছে অসংখ্য। তিনি জানান, রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে ৫০৭ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। গুরুতর আহতরা এখনও হাসপাতাল ছাড়তে পারেননি। এরকম আছেন ২৭ জন, তাদের একজন আইসিইউতে। আহত পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসার পাশাপাশি ট্রমার শিকার পরিবারগুলোর আশ্রয় ও দেখভালর ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানান আইজিপি।
গণআন্দোলন ও সহিংসতার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার পর থেকেই দেশজুড়ে থানাসহ পুলিশের স্থাপনাগুলোতে একের পর এক হামলা হতে থাকে। ভাঙচুর ও লুটপাটও করা হয় অনেক থানায়। এসব ঘটনায় নিহত হয়েছেন অনেক পুলিশ সদস্য। নিরাপত্তাহীনতা ও সহকর্মীদের হতাহত হওয়ার ক্ষোভ থেকে ৫ আগস্টের পর কাজে যোগ দেননি পুলিশের নন ক্যাডার সদস্যরা। অনেকে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে পালিয়েও গেছেন। ফলে ঢাকার রাস্তাঘাট এবং থানাগুলো কার্যত পুলিশশূন্য হয়ে পড়ে।
নিরাপত্তাসহ ১১ দফা দাবিতে ৬ আগস্ট থেকে কর্মবিরতি শুরু করেন নন ক্যাডার পুলিশ সদস্যরা। এ পরিস্থিতিতে পুলিশি ব্যবস্থা কার্যত ভেঙে পড়ে। পুলিশহীন রাজধানীতে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করতে নামানো হয় আনসার। গত বুধবার নবনিযুক্ত মহাপরিদর্শক মো. ময়নুল ইসলাম পুলিশ সদস্যদের একদিনের মধ্যে যার যার ইউনিটে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দেন। এরপর শুক্রবার রমনা, শাহবাগ, নিউমার্কেট, কলাবাগান, ধানমন্ডিসহ রাজধানীর ২৮ থানায় স্বল্প পরিসরে তাদের কার্যক্রম শুরু করে।
দখল-চাঁদাবাজি করলে পা ভেঙে দেয়া হবে-স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন চাঁদাবাজ ও দখলদারির বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে বলেছেন, ‘একটি রাজনৈতিক দলের অবস্থা আজকে দেখেন। এত বড় একটি দল, এত ঐতিহ্যবাহী একটি দল, যার নামের সঙ্গে বাংলাদেশের স্বাধীনতা জড়িত, আজকে তাদের সদস্যদের পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। যদি আপনি মনে করেন আমি আসলাম, আমি দখল করব, বাজার দখল করব, ঘাট দখল করব, চাঁদাবাজি করব.....সেনাপ্রধানকে অনুরোধ করেছি আপনাদের পা ভেঙে দিতে।’
তিনি রোববার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন। দায়িত্ব নেয়ার পর রোববার প্রথম সচিবালয়ে আসেন।
ভবিষ্যতে রাজনীতি করা অনেক কষ্টকর হবে মন্তব্য করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘একটা রাষ্ট্র এভাবে চলে না। একজনের ইচ্ছেমতো রাষ্ট্র চালানো যায় না। দেশটা কারো পার্সোনাল প্রপার্টি বা ফ্যামিলি প্রপার্টি না। হাজার হাজার লোক মারার পরেও ক্ষমতায় থাকতে চাওয়ার মানসিকতা।’
পুলিশকে লাঠিয়াল বাহিনীর মতো ব্যবহার করা হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘তাদের হাতে গত ১৫-২০ বছর আগে মরণাস্ত্র তুলে দেয়া হয়েছে। দেখে আমি আশ্চর্য হয়ে গেছি। এটা ঠিক হয়নি। ভবিষ্যতে রাজনীতি করা অনেক কষ্ট হবে। পুলিশকে আর লাঠিয়াল বাহিনীর মতো ব্যবহার করতে পারবেন না। পুলিশ কমিশনের মতো পুলিশ চলবে।’
এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, পুলিশের যেসব সদস্য এখনও কাজে যোগ দেননি, তাদের জন্য শেষ সময় হচ্ছে আগামী বৃহস্পতিবার। এই সময়ের মধ্যে যদি কেউ যোগ না দেন, তাহলে ধরে নেয়া হবে তারা চাকরিতে ইচ্ছুক নন।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দায়িত্ব পেয়েছেন এম সাখাওয়াত হোসেন।