রংপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের তিন কারারক্ষির নির্যাতনে বাহরাম বাদশা নামে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত এক কয়েদি নিহত হয়েছে। কারাগারের ভেতর কয়েদিরা নির্যাতনকারী ৩ কারারক্ষিকে গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে ব্যাপক বিক্ষোভ করেছে। ঘটনা ধামা চাপা দিতে কারারক্ষিরা অর্ধশতাধিক গুলি বর্ষণ ও বন্দিদের ওপর লাঠিচার্জ করেছে। এতে অর্ধশতাধিক বন্দি আহত হয়েছে।
শুক্রবার ( ১৬ আগস্ট) সকালে সেনাবাহিনী, র্যাব ও পুলিশ কারা অভ্যন্তরে প্রবেশ করে ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
নিহত বাহরাম বাদশার বাবার নাম বাদশা মিয়া বাড়ি রংপুরের পীরগজ্ঞ উপজেলার বগের বাড়ি গ্রামে।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত তিন কারারক্ষির মধ্যে দুইজনকে সাসপেন্ড করা করা হয়েছে। গঠন করা হয়েছে তদন্ত কমিটি।
যেভাবে নিহত কয়েদি বাহরাম বাদশা
কারাগার সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার সকাল ৭টার দিকে কারাগারের অভ্যন্তরে গাছ থেকে আমড়া পাড়া নিয়ে প্রথমে কথাকাটাকাটি হয় বন্দি রফিকুল ইসলামের সঙ্গে বাহারাম বাদশা নামের নিহত কয়েদীর। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কারাগারের অভ্যান্তরে ক্যাশ টেবিলের নামে জেল সুপারের নেতৃত্বে বিচার বসে সেখানে শত শত বন্দিদের সামনে কারাগারের সিআইডিতে কর্মরত মোতালেব ওরফে বাবু, সুবেদার শাহাজাহান ও জামাদার মাহবুব সাজাপ্রাপ্ত আসামি বাহরামকে গামছা দিয়ে হাঁত পা বেঁধে অমানুষিক নির্যাতন করে।
এক পর্যায়ে সে জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পড়লে কারারক্ষিরা তড়িঘড়ি করে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে কারাগারের পাশের্^ই রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে কয়েদি বাহরামকে মৃত ঘোষণা করেন।
কারাগার সূত্রে জানা গেছে ২০০৮ সালে জমি সংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে হত্যা মামলায় আসামি বাহরাম বাদশা তার অন্য তিন ভাই আলমাছ , ওসমান গনি ও শাহ আলমের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন রংপুরের বিচারক। ২০১১ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর বিচারক এ রায় প্রদান করেন। এরপর থেকে ২০১১ সাল থেকে আসামি বাহরাম বাদশাসহ তার চার ভাই রংপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক আছে। বাহরাম বাদশার কয়েদী নম্বর ৯৮০০ এ।
কারাগারে বিক্ষোভ
কারাগার সূত্রে জানা গেছে আসামি বাহরাম বাদশা নিহত হবার খবর কারাগারে ছড়িয়ে পড়লে কারাগারে থাকা বন্দি কয়েদিরা উত্তেজিত হয়ে ?উঠে। মুহূর্তের মধ্যে রংপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের সব সেলে খবর চাউর হয়ে যায়। দুপুর ১২টার দিকে বন্দিদের গোসলের সময় বন্দিরা এক জোট হয়ে তিন কারারক্ষির বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে। পুরো কারাগারে চরম বিশৃঙ্খলা অবস্থার সৃষ্টি হয়। এ সময় কারারক্ষিরা বন্দিদের দমন করার নামে লাঠিচার্জ করলে ৫০ জনেরও বেশি বন্দি আহত হয়। এ সময় পরিস্থিতি আরও প্রকট আকার ধারন করে বন্দিরা কারারক্ষিদের ওপর চড়াও হবার চেষ্টা করলে তারা অর্ধশতাধিক রাউন্ড গুলি বর্ষণ করে। তার পরেও পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
এ সময় কারাকর্তৃপক্ষ জেলা প্রশাসক মোবাশে^র হাসানকে ফোন করে পরিস্থিতি জানালে তিনি তাৎক্ষনিক সেনাবাহিনী, র্যাব পুলিশকে কারাগারের অবস্থা জানান। খবর পেয়ে রংপুর সেনানিবাসের এরিয়া কমান্ডার ৬৬ পদাতিক ডিভিশনের প্রধান মেজর জেনারেল সাকিল আহাম্মেদের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর সাজোয়া গাড়িসহ বিপুল সংখ্যক সেনা সদস্য র্যাব ও পুলিশ কারাগারের অভ্যান্তরে প্রবেশ করে প্রথমে ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে।
এ সময় সবার প্রচেষ্টায় পরিস্থিতি শান্ত হলে বন্দিরা রংপুর কারাগারের জেল সুপার , জেলার ডেপুটি জেলারসহ কারাগারের সিআইডিসহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের দুর্নীতি, অনিয়ম ক্ষমতার অপব্যবহারসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ করেন।
তারা বলেন প্রতিবাদ করলেই কেস টেবিলের নামে ধরে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়। বন্দিরা সব অনিয়মের বিচার দায়িদের শাস্তি দাবি করেন। কয়েকজন বন্দি রংপুর কেন্দ্রীয় কারাগার সব অপকর্মের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। এখানে টাকা দিয়ে ঘণ্টা পর ঘণ্টা ১০ টাকা মিনিটে কথা বলা মাদক হাতের কাছে পাওয়া যায়। নিম্ন মানের খাওয়া সরবরাহ করাসহ অনেক অভিযোগ করে সেনাবাহিনী পুলিশ ও জেলা ও বিভাগীয় প্রশাসনের কাছে।
এক পর্যায়ে সেখানে আসেন ৬৬ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল শাকিল হাসান। তিনি বন্দীদের উত্তেজনা প্রশমিত করতে তাদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় বন্দিরা বাহারাম হত্যাকারীদের বিচার, খাওয়া দাওয়া এবং ওষুধ পত্র নিম্মমানের বিষয়টি জিওসির কাছে তুলে ধরেন। এছাড়াও কারাগারের বিভিন্ন অনিয়ম এবং কারারক্ষীদের কথায় কথায় মারপিট ও দুর্ব্যবহারের বিষয়ে অভিযোগ করেন। জিওসি তাদের কথা শোনেন ।
বেলা ১টায় জিওসি মেজর জেনারেল শাকিল হাসান বন্দিদের সামনে তাৎক্ষণিকভাবে ডিসির নেতৃত্বে দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি করে দেন। ঘটনাস্থলেই সাময়িক বরখাস্ত করা হয় নায়েক শাহজাহান আলী এবং কারারক্ষি মোতালেব হোসেনকে। বিষয়টি কারারক্ষিদের জানিয়ে দেয়া হলে উত্তেজনা কিছুটা কমে আসলে বেলা দেড়টার দিকে কারাগার থেকে চলে যান জিওসি।
এদিকে এ ঘটনার পর দুপুরের পর আবারও বন্দিরা বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির প্রতিবাদে বিভিন্ন শ্লোগান দিতে থাকেন।
জেলা প্রশাসক যা বললেন
সার্বিক বিষয়ে কথা বলার জন্য রংপুরের জেলা প্রশাসক মোবাশে^র হাসানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন কারাগারে গোলমালের খবর শুনে তাৎক্ষনিক সেনাবাহিনী র্যাব ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সবার সহযোগিতায় কারাগারের ভেতরে প্রবেশ করে বন্দিদের সঙ্গে কথা বলা হয়। তাদের ওপর নির্যাতনসহ সব বিষয়ে তদন্ত করে দায়িদের শাস্তি দেবার আশ^াস দেবার পর পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়।
তিনি বলেন, কারাগারের ভিতরে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। কোনো বন্দি চলেও যায়নি। আমার নেতৃত্বে দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি পুরো ঘটনাটির নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্ত করবে। পরিস্থিতি শান্ত আছে বলে জানান তিনি।
অর্থ-বাণিজ্য: নভেম্বরে মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়ালো ৮ দশমিক ২৯ শতাংশ