নোয়াখালীতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি
নোয়াখালীতে গত দুদিনের নতুন ধরে ‘ব্যাপক’ বৃষ্টিপাতের ফলে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ইতোমধ্যে নিম্নঞ্চলীয় উপজেলাগুলোতে কোথাও ৩-৪ ফুট কোথাও কোথাও ৭-৮ ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এ অঞ্চলের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার কারণে সৃষ্টি হওয়া জলাবদ্ধতায় পানি খুবই ধীর গতিতে নামছে।
জেলার বেগমগঞ্জের মিয়াপুর গ্রামের ব্যাবসায়ী মো. সোহাগ মিয়া বলেন, ‘বন্যার কারণে মাটি নরম হয়ে গেছে। এজন্য বৃষ্টিতে এ গ্রামসহ আশেপাশের এলাকার ৬০/৭০টি গাছ উপড়ে পড়েছে। এর কারণে ৪-৫টি ঘরও ভেঙে পড়েছে।’
জেলার কবিরহাট উপজেলার বাসিন্দা মিজানুর রহমান মিজান বলেন, ‘বন্যা ও জলাবব্ধতার কবিরহাট উপজেলার মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে।’
তার দাবি, পানি নিষ্কাশন না হওয়া ও সঠিক ব্যবস্থাপনা না থাকায় দ্রুত বন্যা ও জলাবদ্ধতা পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে। সমস্যা সমাধানের বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
জানা যায়, জেলার নয়টি উপজেলার মধ্যে আটটিতেই বন্যার পানি বেড়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে জেলার সেনবাগ, বেগমগঞ্জ, সদর, সোনাইমুড়ী ও চাটখিল উপজেলার বন্যার পানি। ফলে এলাকার বন্যার্ত মানুষ সীমাহীন কষ্টে দিন যাপন করছেন। এর ফলে আশ্রয়ায়ণে আবারও ৭০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। আশ্রায়ণগুলিতে তীব্র খাদ্যাভাবে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় গত ১৫ দিন বন্যার পানি স্থানীয় জলাবদ্ধতায় রূপ নেয়। এতে এখনও পানিবন্দী রয়েছে ২৪ লাখ ৫৫ হাজার মানুষ। ৩৪৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৭০ হাজার ৪৪১ জন মানুষ অবস্থান করছে। বন্যায় এ পর্যন্ত ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
জেলা আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক আরজুল ইসলাম জানান, ‘গত শুক্রবার দুপুর ১২টা থেকে শনিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত জেলা শহর মাইজদীতে ১২৪ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে রিপোর্ট লেখার সময় ও বৃষ্টি হচ্ছিল। বঙ্গোপসাগরে নিম্মচাপ ও মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে আগামী ২৪ ঘণ্টায় জেলায় বৃষ্টি অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে এখানকার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে।’
বৈরী আবহাওয়ার কারণে দ্বীপ উপজেলা হাতিয়াতে ১৩ সেপ্টেম্বর শুক্রবার বিকেলে ১০টি মাছ ধরার ট্রলার ডুবির ঘটনা ঘটে। ৫টি ট্রলারসহ এখনও ১৭ জন জেলে নিখোঁজ রয়েছে।
নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক খন্দকার ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, ‘নোয়াখালীতে বন্যা পরবর্তী জলাবদ্ধতা আগে থেকেই ছিল। এখনও বৃষ্টি হচ্ছে। পরিস্থিতির অবনতি হলে জেলা প্রশাসন আগের মতোই মানুষের পাশে দাঁড়াবে।’
৮ জেলার নিম্নঞ্চলে পানি বাড়ার আভাস
সাম্প্রতিক বন্যার ধকল কাটিয়ে ওঠার আগেই ফেনী ও নোয়াখালীসহ দেশের আট জেলার নিম্নঞ্চল নতুন করে ‘প্লাবিত হতে পারে’ বলে আভাস দিয়েছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
সংস্থাটি বলছে, ভারী বৃষ্টির কারণে চট্টগ্রাম বিভাগের নদ-নদীগুলোতে পানি বেড়ে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। এতে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর জেলার কিছু নিম্নঞ্চল প্লাবিত হতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর স্থল নি¤œচাপে পরিণত হওয়ার কারণে আজ থেকে বৃষ্টি কমে আসবে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বুলেটিনে বলা হয়, চট্টগ্রাম বিভাগের মুহরী, ফেনী ও মাতামুহুরী নদীর পানি কমলেও; গোমতী নদীর পানি স্থিতিশীল আছে। অন্যদিকে হালদা ও সাঙ্গু নদীর পানি বাড়ছে। তবে দেশের সব প্রধান নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পূর্বাভাস কেন্দ্রের বুলেটিনে বলা হয়, ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি স্থিতিশীল; অন্যদিকে যমুনা নদীর পানি কমছে। আগামী ৫ দিন ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি ধীর গতিতে কমতে পারে এবং বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।
গঙ্গা নদীর পানিও স্থিতিশীল আছে, তবে পানি কমছে পদ্মা নদীর। আগামী ৩ দিন গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি স্থিতিশীল থাকতে পারে এবং পরবর্তী ২ দিন পানি কমে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।
পূর্বাভাস কেন্দ্র বলছে, রংপুর বিভাগের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি স্থিতিশীল আছে। আগামী ৩ দিন এসব নদীর পানি ধীর গতিতে কমে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।
আর সিলেট বিভাগের সুরমা ও কুশিয়ারা, মনু, সারিগোয়াইন, ধলাই নদীর পানি কমছে। তবে খোয়াই নদীর পানি স্থিতিশীল আছে। আগামী ৩ এসব নদীর পানি কমতে পারে এবং বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে, বলা হয় বুলেটিনে।
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান সংবাদকে জানান, ‘আমরা শুধু চট্টগ্রাম বিভাগের ৮ জেলার বন্যার কথা বলছি। যেহেতু কিছুদিন আগে এইসব জেলায় বন্যা হয়েছে সেখানে কিছু-কিছু অঞ্চলে বাঁধও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেসব এলাকায় প্লাবিত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকবে।’
বন্যার কারণ হিসেবে তিনি ওই অঞ্চলের ভারী বৃষ্টিপাতকেই দায়ী করেন। তিনি বলেন, বঙ্গোপোসাগরে এখন নিম্নচাপ চলছে। আমরা সাধারণত বিপদসীমা অতিক্রম করলে বিপদের কথা বলি। আর নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষীপুর এসব জেলায় অনেক জায়গায় পানি আটকে আছে। এরসঙ্গে কিছু-কিছু জায়গায় বাঁধ ক্ষতিগস্ত হয়ে আছে। সেসব জায়গায় যদি আবারও বৃষ্টি হয় তবে, নিচু জায়গায় পানি আবারও পানি বাড়বে। আবার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে বিপদসীমা অতিক্রম না করলেও নিম্নঞ্চল প্লাবিত হতে থাকবে। সেজন্য আমরা বন্যার ম্যাসেজটা দিচ্ছি।
একইসঙ্গে, বান্দরবানের লামা পয়েন্টে শুক্রবার নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করছে। কিন্ত তা অল্প সময়ের মধ্যেই নেমে গেছে। সেখানকার পানি আবার বিপৎসীমা অতিক্রম করছে, আবার নেমে গেছে। এই রকম অল্প সময়েরর জন্য হলেও বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে অল্প সময়ের জন্য।
দেশের অনান্য বিভাগেও মোটামুটি বলতে পারি পানি বাড়ার হার মোটামুটি কম। কোনো কোনো জায়গায় পানি কমেও যাচ্ছে। মূলত; বরিশাল খুলনার দিকে নিম্নচাপের কারণে কিছুটা পানি বেড়েছিল সেটা এখন নেমেও যাচ্ছে। ওই নিম্নচাপটা এখন যশোর অতিক্রম করছে।
বাংলাদেশের উজানে পাহাড়ি ঢল আর অতি ভারী বৃষ্টির কারণে গত ২০ আগস্ট থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। দ্রুতই তা ছড়িয়ে যায় ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, লক্ষ্মীপুর ও কক্সবাজারে।
অতিবৃষ্টি এবং উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে সম্প্রতি ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া, সিলেট, লক্ষ্মীপুর ও কক্সবাজার জেলা বন্যার কবলে পড়ে। আকস্মিক এই বন্যায় ভেসে যায় বহু ঘরবাড়ি, গাছপালা, গবাদিবশু। সহায়-সম্বলহীন হয়ে পড়ে লাখো মানুষ।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এই বন্যায় দেশের ১১ জেলায় ৭১ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে পুরুষ ৪৫, নারী ৭ ও শিশু ১৯ জন। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫০ লাখের বেশি মানুষ।
নোয়াখালীতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি
রোববার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪
নোয়াখালীতে গত দুদিনের নতুন ধরে ‘ব্যাপক’ বৃষ্টিপাতের ফলে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ইতোমধ্যে নিম্নঞ্চলীয় উপজেলাগুলোতে কোথাও ৩-৪ ফুট কোথাও কোথাও ৭-৮ ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এ অঞ্চলের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার কারণে সৃষ্টি হওয়া জলাবদ্ধতায় পানি খুবই ধীর গতিতে নামছে।
জেলার বেগমগঞ্জের মিয়াপুর গ্রামের ব্যাবসায়ী মো. সোহাগ মিয়া বলেন, ‘বন্যার কারণে মাটি নরম হয়ে গেছে। এজন্য বৃষ্টিতে এ গ্রামসহ আশেপাশের এলাকার ৬০/৭০টি গাছ উপড়ে পড়েছে। এর কারণে ৪-৫টি ঘরও ভেঙে পড়েছে।’
জেলার কবিরহাট উপজেলার বাসিন্দা মিজানুর রহমান মিজান বলেন, ‘বন্যা ও জলাবব্ধতার কবিরহাট উপজেলার মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে।’
তার দাবি, পানি নিষ্কাশন না হওয়া ও সঠিক ব্যবস্থাপনা না থাকায় দ্রুত বন্যা ও জলাবদ্ধতা পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে। সমস্যা সমাধানের বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
জানা যায়, জেলার নয়টি উপজেলার মধ্যে আটটিতেই বন্যার পানি বেড়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে জেলার সেনবাগ, বেগমগঞ্জ, সদর, সোনাইমুড়ী ও চাটখিল উপজেলার বন্যার পানি। ফলে এলাকার বন্যার্ত মানুষ সীমাহীন কষ্টে দিন যাপন করছেন। এর ফলে আশ্রয়ায়ণে আবারও ৭০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। আশ্রায়ণগুলিতে তীব্র খাদ্যাভাবে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় গত ১৫ দিন বন্যার পানি স্থানীয় জলাবদ্ধতায় রূপ নেয়। এতে এখনও পানিবন্দী রয়েছে ২৪ লাখ ৫৫ হাজার মানুষ। ৩৪৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৭০ হাজার ৪৪১ জন মানুষ অবস্থান করছে। বন্যায় এ পর্যন্ত ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
জেলা আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক আরজুল ইসলাম জানান, ‘গত শুক্রবার দুপুর ১২টা থেকে শনিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত জেলা শহর মাইজদীতে ১২৪ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে রিপোর্ট লেখার সময় ও বৃষ্টি হচ্ছিল। বঙ্গোপসাগরে নিম্মচাপ ও মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে আগামী ২৪ ঘণ্টায় জেলায় বৃষ্টি অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে এখানকার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে।’
বৈরী আবহাওয়ার কারণে দ্বীপ উপজেলা হাতিয়াতে ১৩ সেপ্টেম্বর শুক্রবার বিকেলে ১০টি মাছ ধরার ট্রলার ডুবির ঘটনা ঘটে। ৫টি ট্রলারসহ এখনও ১৭ জন জেলে নিখোঁজ রয়েছে।
নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক খন্দকার ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, ‘নোয়াখালীতে বন্যা পরবর্তী জলাবদ্ধতা আগে থেকেই ছিল। এখনও বৃষ্টি হচ্ছে। পরিস্থিতির অবনতি হলে জেলা প্রশাসন আগের মতোই মানুষের পাশে দাঁড়াবে।’
৮ জেলার নিম্নঞ্চলে পানি বাড়ার আভাস
সাম্প্রতিক বন্যার ধকল কাটিয়ে ওঠার আগেই ফেনী ও নোয়াখালীসহ দেশের আট জেলার নিম্নঞ্চল নতুন করে ‘প্লাবিত হতে পারে’ বলে আভাস দিয়েছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
সংস্থাটি বলছে, ভারী বৃষ্টির কারণে চট্টগ্রাম বিভাগের নদ-নদীগুলোতে পানি বেড়ে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। এতে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর জেলার কিছু নিম্নঞ্চল প্লাবিত হতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর স্থল নি¤œচাপে পরিণত হওয়ার কারণে আজ থেকে বৃষ্টি কমে আসবে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বুলেটিনে বলা হয়, চট্টগ্রাম বিভাগের মুহরী, ফেনী ও মাতামুহুরী নদীর পানি কমলেও; গোমতী নদীর পানি স্থিতিশীল আছে। অন্যদিকে হালদা ও সাঙ্গু নদীর পানি বাড়ছে। তবে দেশের সব প্রধান নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পূর্বাভাস কেন্দ্রের বুলেটিনে বলা হয়, ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি স্থিতিশীল; অন্যদিকে যমুনা নদীর পানি কমছে। আগামী ৫ দিন ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি ধীর গতিতে কমতে পারে এবং বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।
গঙ্গা নদীর পানিও স্থিতিশীল আছে, তবে পানি কমছে পদ্মা নদীর। আগামী ৩ দিন গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি স্থিতিশীল থাকতে পারে এবং পরবর্তী ২ দিন পানি কমে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।
পূর্বাভাস কেন্দ্র বলছে, রংপুর বিভাগের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি স্থিতিশীল আছে। আগামী ৩ দিন এসব নদীর পানি ধীর গতিতে কমে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।
আর সিলেট বিভাগের সুরমা ও কুশিয়ারা, মনু, সারিগোয়াইন, ধলাই নদীর পানি কমছে। তবে খোয়াই নদীর পানি স্থিতিশীল আছে। আগামী ৩ এসব নদীর পানি কমতে পারে এবং বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে, বলা হয় বুলেটিনে।
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান সংবাদকে জানান, ‘আমরা শুধু চট্টগ্রাম বিভাগের ৮ জেলার বন্যার কথা বলছি। যেহেতু কিছুদিন আগে এইসব জেলায় বন্যা হয়েছে সেখানে কিছু-কিছু অঞ্চলে বাঁধও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেসব এলাকায় প্লাবিত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকবে।’
বন্যার কারণ হিসেবে তিনি ওই অঞ্চলের ভারী বৃষ্টিপাতকেই দায়ী করেন। তিনি বলেন, বঙ্গোপোসাগরে এখন নিম্নচাপ চলছে। আমরা সাধারণত বিপদসীমা অতিক্রম করলে বিপদের কথা বলি। আর নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষীপুর এসব জেলায় অনেক জায়গায় পানি আটকে আছে। এরসঙ্গে কিছু-কিছু জায়গায় বাঁধ ক্ষতিগস্ত হয়ে আছে। সেসব জায়গায় যদি আবারও বৃষ্টি হয় তবে, নিচু জায়গায় পানি আবারও পানি বাড়বে। আবার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে বিপদসীমা অতিক্রম না করলেও নিম্নঞ্চল প্লাবিত হতে থাকবে। সেজন্য আমরা বন্যার ম্যাসেজটা দিচ্ছি।
একইসঙ্গে, বান্দরবানের লামা পয়েন্টে শুক্রবার নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করছে। কিন্ত তা অল্প সময়ের মধ্যেই নেমে গেছে। সেখানকার পানি আবার বিপৎসীমা অতিক্রম করছে, আবার নেমে গেছে। এই রকম অল্প সময়েরর জন্য হলেও বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে অল্প সময়ের জন্য।
দেশের অনান্য বিভাগেও মোটামুটি বলতে পারি পানি বাড়ার হার মোটামুটি কম। কোনো কোনো জায়গায় পানি কমেও যাচ্ছে। মূলত; বরিশাল খুলনার দিকে নিম্নচাপের কারণে কিছুটা পানি বেড়েছিল সেটা এখন নেমেও যাচ্ছে। ওই নিম্নচাপটা এখন যশোর অতিক্রম করছে।
বাংলাদেশের উজানে পাহাড়ি ঢল আর অতি ভারী বৃষ্টির কারণে গত ২০ আগস্ট থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। দ্রুতই তা ছড়িয়ে যায় ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, লক্ষ্মীপুর ও কক্সবাজারে।
অতিবৃষ্টি এবং উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে সম্প্রতি ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া, সিলেট, লক্ষ্মীপুর ও কক্সবাজার জেলা বন্যার কবলে পড়ে। আকস্মিক এই বন্যায় ভেসে যায় বহু ঘরবাড়ি, গাছপালা, গবাদিবশু। সহায়-সম্বলহীন হয়ে পড়ে লাখো মানুষ।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এই বন্যায় দেশের ১১ জেলায় ৭১ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে পুরুষ ৪৫, নারী ৭ ও শিশু ১৯ জন। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫০ লাখের বেশি মানুষ।