alt

জাতীয়

‘গান গেয়ে গেয়ে’ যুবককে পিটিয়ে হত্যা, মরদেহ ফেলে রাখে রাস্তায়

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

চট্টগ্রামে গান গেয়ে যুবক হত্যার ভাইরাল ছবি। পাশে নিহত শাহাদাত

গান গাইতে গাইতে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করে আরেকদল যুবক। ২০ সেপ্টেম্বর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ২০ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, শাহাদাত হোসেন নামের ২৪ বছর বয়সী ওই যুবকের দুই হাত স্টিলের পাইপের সঙ্গে বেঁধে ‘মধু হই হই আঁরে বিষ খাওয়াইলা’ গান গাইতে গাইতে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।

হত্যার পর শাহাদাতের নিথর দেহ ফেলে রাখা হয় চট্টগ্রাম মহানগরীর প্রবর্তক মোড়ের অদূরে বেসরকারি একটি হাসপাতালের সামনের রাস্তায়। ঘটনাটি গত ১৪ আগস্টের হলেও হত্যাকা-ের সময় ধারণকৃত ভিডিও শনিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি আলোচনায় আসে। ভিডিওতে দেখা যায়, যুবকদের কয়েক জনের হাতে লাঠি। বেঁধে রাখা যুবকের মাথা বার বার ঝুকে পড়ছিল। দুজন গিয়ে তার মাথা তুলে দিতেও দেখা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যে স্থানে শাহাদাতকে বেঁধে রাখা হয়েছিল, সেটি চট্টগ্রাম নগরের আখতারুজ্জামান উড়াল সড়কের নিচে ২ নম্বর গেট মোড় এলাকা।

ভুক্তভোগী যুবক শাহাদাত হোসেন নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ি উপজেলার পাঁচবাড়িয়া ইউনিয়নের নদনা গ্রামের মিয়া জান ভুঁইয়া বাড়ির মোহাম্মদ হারুনের ছেলে। কর্মসূত্রে বসবাস করতেন চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালি থানার বিআরটিসি এলাকার বয়লার কলোনিতে।

২২ সেপ্টেম্বর রোববার পুলিশ জানায়, গত ১৪ আগস্ট নগরীর দুই নম্বর গেট এলাকায় নির্মম এ হত্যাকা- ঘটে। হত্যার পর মরদেহ ফেলে রাখা হয়েছিল। এ ঘটনায় ১৫ আগস্ট ভিকটিমের বাবা মোহাম্মদ হারুন বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় অজ্ঞাতপরিচয়দের আসামি করা হয়। ওই সময় শাহাদাতকে মারধরের ভিডিওটি ফেইসবুকে আসেনি। গত দুই দিন ধরে ওই ভিডিওটি ফেইসবুকে ভাইরাল হলে নড়েচড়ে বসে নগর পুলিশ প্রশাসন।

মামলার বাদী নিহতের বাবা মোহাম্মদ হারুন জানান, শাহাদাত চট্টগ্রাম নগরীর বিআরটিসি এলাকার ফলমণ্ডিতে কাজ করতেন। দুই বছর আগে শারমীন আক্তার নামের এক নারীকে বিয়ে করেন। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত ১৩ আগস্ট দুপুর ২টার দিকে কর্মস্থলে যেতে এবং বন্ধু সাগরের ফোন পেয়ে পাওনা টাকা নেয়ার জন্য দুপুরে বাসা থেকে বের হন শাহাদাত। সন্ধ্যা ৭টার দিকে ফোন করলে কিছুক্ষণের মধ্যে বাসায় চলে আসবেন বলে স্ত্রীকে জানান। এরপর থেকে মুঠোফোন বন্ধ। গভীর রাত পর্যন্ত স্বামী বাসায় ফিরে না আসায় খোঁজাখুজি করেন শারমিন। এ সময় শাহাদাতের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। ১৪ আগস্ট রাত সাড়ে ৯টার দিকে বাদী ফেইসবুকে জানতে পারেন, নগরের প্রবর্তক মোড়ের অদূরে বদনাশাহ মিয়া (রহ.) মাজারের বিপরীতে সড়কের পাশে শাহাদাতের মরদেহ পড়ে আছে।

এর আগে খবর পেয়ে রাত ৯টার দিকে পাঁচলাইশ থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে শাহাদাতের নিথর দেহ উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ওইদিন রাতেই চমেক হাসপাতালে গিয়ে পুলিশের উপস্থিতিতে শাহাদাতের মরদেহ শনাক্ত করেন তার স্ত্রী শারমীন আক্তার এবং মামলার বাদী ও শাহাদাতের বাবা হারুন।

সুরতহাল প্রতিবেদনে বলা হয়, শাহাদাত হোসেনের মাথা, গলাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে গুরুতর জখমের চিহ্ন পাওয়া গেছে। বাদীর ধারণা অজ্ঞাতপরিচয় আসামিরা শাহাদাতকে মারধরের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছেন। এ ঘটনায় পরদিন একটি হত্যা মামলা দায়ের হয়।

মাস দেড়েক আগে চট্টগ্রামে নির্জন সড়কে গান গেয়ে শাহদাত হোসেন নামের যুবককে ‘পিটিয়ে হত্যা করা ঘটনা তদন্তে এখন পর্যন্ত তেমন কোনো তথ্য পায়নি পুলিশ। ঘটনাটি সরকার পতনের পর মাঝরাতে জনশূন্য সড়কে ঘটায় তথ্য পেতে ‘সমস্যা হচ্ছে’ বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম এন্ড অপারেশন) আবদুল মান্নান মিয়া।

পুলিশ তদন্তে নেমে জানিয়েছে, শাহাদাত হত্যা রহস্য উদঘাটনে তার পেশা, তার রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা, মারধরে জড়িতদের পরিচয়, মরদেহ দূরের স্থান থেকে পাওয়া-সব কিছু মাথায় নিয়ে কাজ চলছে।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর চট্টগ্রামের বেশ কয়েকটি থানায় হামলার ঘটনা ঘটে। এরপর গত ১৩ আগস্টের রাতে শাহাদাতকে যখন মারধর করা হয়, সেসময় থানাতে পুলিশ থাকলেও তাদের তেমন সক্রিয়তা ছিল না। এছাড়া সড়কে ট্রাফিক পুলিশের উপস্থিতি ছিল না বললেই চলে। সেই সময়ে সড়কে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছিল শিক্ষার্থীরা।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্যে, শাহাদাত হোসেনকে মারধর করা হয় ১৩ অগাস্ট রাত ২-৩টার দিকে ষোলশহর ২ নম্বর গেট এলাকার সড়কের গোলচত্বরে। “পরদিন প্রবর্তক মোড়ের অদূরে সিএসসিআর হাসপাতালের বিপরীতে বদনা শাহ মাজারের সামনের সড়কে রাস্তায় শাহাদাত হোসেনের লাশ পড়ে থাকতে দেখে সেখানে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালনকারী রেড ক্রিসেন্টের সদস্যরা।”

ওই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, রেড ক্রিসেন্টের সদস্যরাই প্রথমে লাশ নিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যায়। পরে পুলিশ খবর পেয়ে মেডিকেলে যায় ও পরবর্তী আইনি কাজ সারে। বিআরটিসি ফলম-ি ও স্টেশন রোড এলাকার সেসময়ের সরকারি দল আওয়ামী লীগের সহযোগী কোন সংগঠনের দুয়েকজন নেতার সাথে তাকে মাঝে মাঝে দেখা যেত, এমন তথ্যও প্রাথমিকভাবে পেয়েছে পুলিশ। তবে শাহাদাতের কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হতে পারেনি তদন্তকারীরা। দেশে প্রচলিত আইন আছে। কাউকে এভাবে বেঁধে পেটানো যায় না। ‘আমরা সিরিয়াসলি তদন্ত করছি। অগ্রগতি হলেই জানতে পারবেন।’

ছবি

লেফটেন্যান্ট তানজিম ছারোয়ারের স্মৃতি সংরক্ষণে উদ্যোগ

আন্দোলনে শহীদ পরিবারের সদস্যদের পর্যটন শিল্পে সম্পৃক্ত করা হবে

ছবি

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য হলেই নির্বাচন : নিউইয়র্কে মুহাম্মদ ইউনূস

ছবি

মানবাধিকার ও বাকস্বাধীনতা সমুন্নত রাখার প্রতিশ্রুতি দিলেন অধ্যাপক ইউনূস

ছবি

অতিরিক্ত ডিআইজি হলেন ৪৭ এসপি

ছবি

অপরাধ করে থাকলে শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করা উচিত: ইউনূস

ছবি

সংস্কার উদ্যোগে ৩৫০ কোটি ডলার দেবে বিশ্ব ব্যাংক

ছবি

দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করতে শাহবাজ শরিফ ও মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠক

বিদ্যুতে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি : ভারত-বাংলাদেশের সম্মতির অপেক্ষায় নেপাল

ছবি

সরকার পতনের পর দেড়মাসে শতাধিক খুন রাজধানীতে

ছবি

গুলিতেই মারা গেছে আবু সাইদ ,মাথায় আঘাত উল্লেখ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেয়া ময়না তদন্ত প্রতিবেদনটি ভুয়া

ছবি

নাহিদ ইসলাম এর সাথে গণঅভ্যুত্থানে শহীদ মিরাজ ও রাব্বির পরিবারের সাক্ষাৎ

ছবি

‘বিরল’ বৈঠকে ইউনূসকে বুকে টেনে নিলেন বাইডেন

ছবি

তরুণদের আত্মত্যাগে নতুন বাংলাদেশের সম্ভাবনা, বিদেশি বন্ধুদের সহায়তা কামনা ইউনূসের

ছবি

ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, ২৪ ঘণ্টায় ৮৫৪ জন ভর্তি, ২ জনের মৃত্যু

ছবি

দুর্গাপূজায় প্রতিটি মণ্ডপের নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ সতর্কতা: ডিএমপি কমিশনার

ছবি

তরুণদের স্বপ্নের নতুন বাংলাদেশ গড়তে বিদেশী বন্ধুদের সহযোগিতা চান ইউনূস

ছবি

কানাডার প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোর সঙ্গে বৈঠক করলেন মুহাম্মদ ইউনূস

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেনের পূর্ণ সমর্থন মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে

ছবি

ইউনূস ও জাস্টিন ট্রুডো একান্ত বৈঠক

ছবি

এ মাসে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা অর্ধশতাধিক

ছবি

সাংবাদিক রুহুল আমিন গাজী আর নেই

ছবি

অন্তবর্র্তী সরকারকে ‘পূর্ণ সমর্থন’ জানালেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন

ছবি

রাজধানীর সুপারশপে পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধের প্রথম ধাপ: সচেতনতা এবং বিকল্পের দিকে উদ্যোগ

ছবি

গণঅভ্যুত্থানে নিহত ৭০৮ জনের তালিকা প্রকাশ করল সরকার

ছবি

শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি বাস্তবায়ন হবে, হাজিরা বোনাস বাড়ছে

ছবি

জুলাই-অগাস্টে নিহতদের ‘জাতীয় বীর’ ঘোষণায় রুল জারি

ছবি

১ নভেম্বর থেকে কাঁচাবাজারেও পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার বন্ধ : পরিবেশ উপদেষ্টা

ছবি

সংস্কারকাজের সময় দীর্ঘায়িত হবে: বদিউল আলম মজুমদার

ছবি

নিউইয়র্কে আজ রাতে ইউনূস-বাইডেন বৈঠক

ছবি

সেনাবাহিনী রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করবে না : ওয়াকার-উজ-জামান

চরমপন্থী নেতা সুশীলের মৃত্যু নিশ্চিত হতে ১০ মিনিট দাঁড়িয়ে ছিল হামলাকারীরা

বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মন্তব্যের কড়া প্রতিবাদ ঢাকার

সারাদেশে ৩২ হাজার পূজামণ্ডপে থাকবে নিñিদ্র নিরাপত্তা

দুর্গাপূজায় ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবিতে মন্দিরে মন্দিরে উড়োচিঠি

ছবি

পোশাক শিল্পে অস্থিরতা, বন্ধ অনেক কারখানা

tab

জাতীয়

‘গান গেয়ে গেয়ে’ যুবককে পিটিয়ে হত্যা, মরদেহ ফেলে রাখে রাস্তায়

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

চট্টগ্রামে গান গেয়ে যুবক হত্যার ভাইরাল ছবি। পাশে নিহত শাহাদাত

মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

গান গাইতে গাইতে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করে আরেকদল যুবক। ২০ সেপ্টেম্বর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ২০ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, শাহাদাত হোসেন নামের ২৪ বছর বয়সী ওই যুবকের দুই হাত স্টিলের পাইপের সঙ্গে বেঁধে ‘মধু হই হই আঁরে বিষ খাওয়াইলা’ গান গাইতে গাইতে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।

হত্যার পর শাহাদাতের নিথর দেহ ফেলে রাখা হয় চট্টগ্রাম মহানগরীর প্রবর্তক মোড়ের অদূরে বেসরকারি একটি হাসপাতালের সামনের রাস্তায়। ঘটনাটি গত ১৪ আগস্টের হলেও হত্যাকা-ের সময় ধারণকৃত ভিডিও শনিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি আলোচনায় আসে। ভিডিওতে দেখা যায়, যুবকদের কয়েক জনের হাতে লাঠি। বেঁধে রাখা যুবকের মাথা বার বার ঝুকে পড়ছিল। দুজন গিয়ে তার মাথা তুলে দিতেও দেখা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যে স্থানে শাহাদাতকে বেঁধে রাখা হয়েছিল, সেটি চট্টগ্রাম নগরের আখতারুজ্জামান উড়াল সড়কের নিচে ২ নম্বর গেট মোড় এলাকা।

ভুক্তভোগী যুবক শাহাদাত হোসেন নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ি উপজেলার পাঁচবাড়িয়া ইউনিয়নের নদনা গ্রামের মিয়া জান ভুঁইয়া বাড়ির মোহাম্মদ হারুনের ছেলে। কর্মসূত্রে বসবাস করতেন চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালি থানার বিআরটিসি এলাকার বয়লার কলোনিতে।

২২ সেপ্টেম্বর রোববার পুলিশ জানায়, গত ১৪ আগস্ট নগরীর দুই নম্বর গেট এলাকায় নির্মম এ হত্যাকা- ঘটে। হত্যার পর মরদেহ ফেলে রাখা হয়েছিল। এ ঘটনায় ১৫ আগস্ট ভিকটিমের বাবা মোহাম্মদ হারুন বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় অজ্ঞাতপরিচয়দের আসামি করা হয়। ওই সময় শাহাদাতকে মারধরের ভিডিওটি ফেইসবুকে আসেনি। গত দুই দিন ধরে ওই ভিডিওটি ফেইসবুকে ভাইরাল হলে নড়েচড়ে বসে নগর পুলিশ প্রশাসন।

মামলার বাদী নিহতের বাবা মোহাম্মদ হারুন জানান, শাহাদাত চট্টগ্রাম নগরীর বিআরটিসি এলাকার ফলমণ্ডিতে কাজ করতেন। দুই বছর আগে শারমীন আক্তার নামের এক নারীকে বিয়ে করেন। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত ১৩ আগস্ট দুপুর ২টার দিকে কর্মস্থলে যেতে এবং বন্ধু সাগরের ফোন পেয়ে পাওনা টাকা নেয়ার জন্য দুপুরে বাসা থেকে বের হন শাহাদাত। সন্ধ্যা ৭টার দিকে ফোন করলে কিছুক্ষণের মধ্যে বাসায় চলে আসবেন বলে স্ত্রীকে জানান। এরপর থেকে মুঠোফোন বন্ধ। গভীর রাত পর্যন্ত স্বামী বাসায় ফিরে না আসায় খোঁজাখুজি করেন শারমিন। এ সময় শাহাদাতের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। ১৪ আগস্ট রাত সাড়ে ৯টার দিকে বাদী ফেইসবুকে জানতে পারেন, নগরের প্রবর্তক মোড়ের অদূরে বদনাশাহ মিয়া (রহ.) মাজারের বিপরীতে সড়কের পাশে শাহাদাতের মরদেহ পড়ে আছে।

এর আগে খবর পেয়ে রাত ৯টার দিকে পাঁচলাইশ থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে শাহাদাতের নিথর দেহ উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ওইদিন রাতেই চমেক হাসপাতালে গিয়ে পুলিশের উপস্থিতিতে শাহাদাতের মরদেহ শনাক্ত করেন তার স্ত্রী শারমীন আক্তার এবং মামলার বাদী ও শাহাদাতের বাবা হারুন।

সুরতহাল প্রতিবেদনে বলা হয়, শাহাদাত হোসেনের মাথা, গলাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে গুরুতর জখমের চিহ্ন পাওয়া গেছে। বাদীর ধারণা অজ্ঞাতপরিচয় আসামিরা শাহাদাতকে মারধরের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছেন। এ ঘটনায় পরদিন একটি হত্যা মামলা দায়ের হয়।

মাস দেড়েক আগে চট্টগ্রামে নির্জন সড়কে গান গেয়ে শাহদাত হোসেন নামের যুবককে ‘পিটিয়ে হত্যা করা ঘটনা তদন্তে এখন পর্যন্ত তেমন কোনো তথ্য পায়নি পুলিশ। ঘটনাটি সরকার পতনের পর মাঝরাতে জনশূন্য সড়কে ঘটায় তথ্য পেতে ‘সমস্যা হচ্ছে’ বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম এন্ড অপারেশন) আবদুল মান্নান মিয়া।

পুলিশ তদন্তে নেমে জানিয়েছে, শাহাদাত হত্যা রহস্য উদঘাটনে তার পেশা, তার রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা, মারধরে জড়িতদের পরিচয়, মরদেহ দূরের স্থান থেকে পাওয়া-সব কিছু মাথায় নিয়ে কাজ চলছে।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর চট্টগ্রামের বেশ কয়েকটি থানায় হামলার ঘটনা ঘটে। এরপর গত ১৩ আগস্টের রাতে শাহাদাতকে যখন মারধর করা হয়, সেসময় থানাতে পুলিশ থাকলেও তাদের তেমন সক্রিয়তা ছিল না। এছাড়া সড়কে ট্রাফিক পুলিশের উপস্থিতি ছিল না বললেই চলে। সেই সময়ে সড়কে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছিল শিক্ষার্থীরা।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্যে, শাহাদাত হোসেনকে মারধর করা হয় ১৩ অগাস্ট রাত ২-৩টার দিকে ষোলশহর ২ নম্বর গেট এলাকার সড়কের গোলচত্বরে। “পরদিন প্রবর্তক মোড়ের অদূরে সিএসসিআর হাসপাতালের বিপরীতে বদনা শাহ মাজারের সামনের সড়কে রাস্তায় শাহাদাত হোসেনের লাশ পড়ে থাকতে দেখে সেখানে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালনকারী রেড ক্রিসেন্টের সদস্যরা।”

ওই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, রেড ক্রিসেন্টের সদস্যরাই প্রথমে লাশ নিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যায়। পরে পুলিশ খবর পেয়ে মেডিকেলে যায় ও পরবর্তী আইনি কাজ সারে। বিআরটিসি ফলম-ি ও স্টেশন রোড এলাকার সেসময়ের সরকারি দল আওয়ামী লীগের সহযোগী কোন সংগঠনের দুয়েকজন নেতার সাথে তাকে মাঝে মাঝে দেখা যেত, এমন তথ্যও প্রাথমিকভাবে পেয়েছে পুলিশ। তবে শাহাদাতের কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হতে পারেনি তদন্তকারীরা। দেশে প্রচলিত আইন আছে। কাউকে এভাবে বেঁধে পেটানো যায় না। ‘আমরা সিরিয়াসলি তদন্ত করছি। অগ্রগতি হলেই জানতে পারবেন।’

back to top