alt

জাতীয়

বিদ্যুতে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি : ভারত-বাংলাদেশের সম্মতির অপেক্ষায় নেপাল

ফয়েজ আহমেদ তুষার : বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রপ্তানির লক্ষ্যে আগামী ৩ অক্টোবর ত্রিপক্ষীয় চুক্তি সই করতে চায় নেপাল। এ সংক্রান্ত প্রস্তাব পাঠিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের সম্মতির অপেক্ষায় রয়েছে দেশটি। সব পক্ষ সম্মত হলে কাঠমান্ডুতে একটি বিশেষ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে চুক্তি সই হবে।

এক দশক আগে বিদ্যুৎ আমদানি-রপ্তানির বিষয়ে নেপাল ও বাংলাদেশের মধ্যে আলোচনা শুরু হলেও ভারতের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি সই না হওয়ায় তা আলোর মুখ দেখেনি।

নেপালের বিদ্যুৎ, পানিসম্পদ এবং সেচ মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র চিরঞ্জীব চাতাউত গত সোমবার দেশটির সংবাদমাধ্যম মাই রিপালিকাকে বলেছেন, এখন পর্যন্ত ভারত-বাংলাদেশ কেউ চুক্তির দিন-তারিখ নিশ্চিত করেনি। তিনি বলেছেন, যদি দেশ দুটি প্রস্তাবিত তারিখের অন্তত দুদিন আগে ইতিবাচক সাড়া দেয়। তাহলে আগামী ৩ অক্টোবর ত্রিপাক্ষিক চুক্তিটি হবে।

নেপালের এই কর্মকর্তা মাই রিপাবলিকাকে জানিয়েছেন, সব পক্ষ সম্মত হলে রাজধানী কাঠমান্ডুতে একটি বিশেষ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে চুক্তি সই হবে। তিনি আরও জানিয়েছেন, নেপালের পক্ষ থেকে আগামী ১ অক্টোবর বাংলাদেশকে একটি যৌথ ওয়ার্কিং দলের বৈঠকের আহ্বান জানানো হয়েছে। এরপর দুই দেশের মধ্যে একটি যৌথ স্টিয়ারিং দলের বৈঠক হবে।

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান গত শুক্রবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন, নেপাল থেকে বাংলাদেশে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির লক্ষ্যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি সই করতে অন্তর্বর্তী সরকারের একটি প্রতিনিধিদল শিগগিরই নেপাল যাবে। তবে ঠিক কবে প্রতিনিধিদল নেপাল সফরে যাবেন, তা জানাননি তিনি।

একই অনুষ্ঠানে ঢাকায় নিযুক্ত নেপালের রাষ্ট্রদূত ঘনশ্যাম ভান্ডারী বলেন, ভারতীয় সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে নেপাল থেকে বাংলাদেশে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ রপ্তানির বিষয়ে একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তি শিগগিরই শেষ হবে।

৩ অক্টোবর চুক্তি সই করতে নেপালের প্রস্তাবের বিষয়ে জানতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) মুখপাত্রদের সঙ্গে বুধবার সন্ধ্যায় যোগাযোগ করে সংবাদ। মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত তথ্য জেনে এরপর জানাবেন। পিডিবির মুখপাত্র বলেন, তার কাছে এ সংক্রান্ত তথ্য নেই। তিনি মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন।

নেপালের সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, নেপাল-ভারত-বাংলাদেশের এই বিদ্যুৎ চুক্তিটির সবকিছু চূড়ান্ত হয়ে আছে। গত ২৮ জুলাই চুক্তি সই হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ওই সময় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলন চলায় চুক্তিটি করা সম্ভব হয়নি।

এরপর পরিস্থিতি যখন স্বাভাবিক হয়েছে তখন নেপাল আবারও আলোচনায় আগায়। তখন অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে চুক্তির সবুজ সংকেতও দেয়া হয়। এরপরই নেপাল চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য অক্টোবরের ৩ তারিখকে নির্ধারণ করে বাংলাদেশ ও ভারতকে প্রস্তাব দেয়।

বিদ্যুৎ খাতে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে বাংলাদেশের পাশপাশি নেপালও আগ্রহী। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আলোচনা ছিল বাংলাদেশ নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আনবে গরমের দিনে, চাহিদা যখন বেশি থাকে। তবে শীতকালে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ চাহিদা কমে যায়। তখন সক্ষমতার অতিরিক্ত বিদ্যুৎ নেপালে রপ্তানি করা হবে।

হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত হওয়ায় নেপালে প্রচন্ড শীত পড়ে। তখন দেশটিতে বিদ্যুৎ চাহিদা বেড়ে যায়। তবে পাহাড় থেকে পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় জলবিদ্যুৎ উৎপাদন একেবারেই কমে যায়। এই পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ আমদানি নেপালের জন্যও প্রয়োজন।

নেপালে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নে বাংলাদেশ বিনিয়োগ করবে বলেও আলোচনা ছিল।

বিদ্যুৎ খাতে পারস্পরিক সহযোগিতার লক্ষ্যে ২০১৪ সালে সমঝোতা স্বারক (এমওইউ) সই করেছিল নেপাল ও বাংলাদেশ। তবে এই দুই দেশের মধ্যে স্থলপথে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ভারত। কারণ নেপালের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্ত নেই। তবে দুটি দেশের সঙ্গে ভারতের স্থল সীমান্ত আছে। আর বিদ্যুৎ আমদানি করতে হবে স্থলপথে।

ভারতে ভু-খন্ড এবং সঞ্চালন লাইন ব্যবহার করে বিদ্যুৎ আনা হবে। ত্রিপক্ষীয় চুক্তি সই হলে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার এইচভিডিসি স্টেশন (সাবস্টেশন) ব্যবহার করে এ বিদ্যুৎ আসবে বাংলাদেশে। এক্ষেত্রে ট্রেডিং মার্জিন ও সঞ্চালন চার্জ দিতে হবে প্রতিবেশী দেশটিকে।

পিডিবি’র তথ্য অনুযায়ী, আগামী পাঁচ বছরে নেপাল থেকে ৬৫০ কোটি টাকার বিদ্যুৎ কেনার পরিকল্পনা রয়েছে। প্রতি বছর আনুমানিক ১৩০ কোটি টাকার বিদ্যুৎ কেনা হবে নেপালের কাছ থেকে।

মাই রিপাবলিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নেপাল থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বাংলাদেশ কিনবে ৮ দশমিক ১৭ রুপিতে। যার মধ্যে ভারতের সঞ্চালন লাইনের খরচও থাকবে।

নেপাল থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ আমদানি শুরু হলে বাংলাদেশে মোট আমদানি বিদ্যুতের পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ২ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট, যা বাংলাদেশের গ্রিডভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার প্রায় ১১ শতাংশ।

বর্তমানে বাংলাদেশ ২ হাজার ৬৫৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করছে, যার পুরোটাই ভারত থেকে। এর মধ্যে দেশটির সঙ্গে সরকারি বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি রয়েছে ১ হাজার ১৬০ মেগাওয়াট আর বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র আদানির ঝাড়খ- বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ আসছে ১ হাজার ৪৯৬ মেগাওয়াট। তবে কারিগরি ত্রুটি, বকেয়া বেড়ে যাওয়াসহ নানা কারণে ভারত থেকে বিদ্যুৎ রপ্তানি বা সরবরাহের পরিমাণ মাঝে মধ্যেই কমে যাচ্ছে।

ছবি

লেফটেন্যান্ট তানজিম ছারোয়ারের স্মৃতি সংরক্ষণে উদ্যোগ

আন্দোলনে শহীদ পরিবারের সদস্যদের পর্যটন শিল্পে সম্পৃক্ত করা হবে

ছবি

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য হলেই নির্বাচন : নিউইয়র্কে মুহাম্মদ ইউনূস

ছবি

মানবাধিকার ও বাকস্বাধীনতা সমুন্নত রাখার প্রতিশ্রুতি দিলেন অধ্যাপক ইউনূস

ছবি

অতিরিক্ত ডিআইজি হলেন ৪৭ এসপি

ছবি

অপরাধ করে থাকলে শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করা উচিত: ইউনূস

ছবি

সংস্কার উদ্যোগে ৩৫০ কোটি ডলার দেবে বিশ্ব ব্যাংক

ছবি

দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করতে শাহবাজ শরিফ ও মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠক

ছবি

সরকার পতনের পর দেড়মাসে শতাধিক খুন রাজধানীতে

ছবি

গুলিতেই মারা গেছে আবু সাইদ ,মাথায় আঘাত উল্লেখ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেয়া ময়না তদন্ত প্রতিবেদনটি ভুয়া

ছবি

নাহিদ ইসলাম এর সাথে গণঅভ্যুত্থানে শহীদ মিরাজ ও রাব্বির পরিবারের সাক্ষাৎ

ছবি

‘বিরল’ বৈঠকে ইউনূসকে বুকে টেনে নিলেন বাইডেন

ছবি

তরুণদের আত্মত্যাগে নতুন বাংলাদেশের সম্ভাবনা, বিদেশি বন্ধুদের সহায়তা কামনা ইউনূসের

ছবি

ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, ২৪ ঘণ্টায় ৮৫৪ জন ভর্তি, ২ জনের মৃত্যু

ছবি

দুর্গাপূজায় প্রতিটি মণ্ডপের নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ সতর্কতা: ডিএমপি কমিশনার

ছবি

তরুণদের স্বপ্নের নতুন বাংলাদেশ গড়তে বিদেশী বন্ধুদের সহযোগিতা চান ইউনূস

ছবি

কানাডার প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোর সঙ্গে বৈঠক করলেন মুহাম্মদ ইউনূস

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেনের পূর্ণ সমর্থন মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে

ছবি

ইউনূস ও জাস্টিন ট্রুডো একান্ত বৈঠক

ছবি

এ মাসে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা অর্ধশতাধিক

ছবি

সাংবাদিক রুহুল আমিন গাজী আর নেই

ছবি

অন্তবর্র্তী সরকারকে ‘পূর্ণ সমর্থন’ জানালেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন

ছবি

রাজধানীর সুপারশপে পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধের প্রথম ধাপ: সচেতনতা এবং বিকল্পের দিকে উদ্যোগ

ছবি

গণঅভ্যুত্থানে নিহত ৭০৮ জনের তালিকা প্রকাশ করল সরকার

ছবি

শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি বাস্তবায়ন হবে, হাজিরা বোনাস বাড়ছে

ছবি

জুলাই-অগাস্টে নিহতদের ‘জাতীয় বীর’ ঘোষণায় রুল জারি

ছবি

১ নভেম্বর থেকে কাঁচাবাজারেও পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার বন্ধ : পরিবেশ উপদেষ্টা

ছবি

সংস্কারকাজের সময় দীর্ঘায়িত হবে: বদিউল আলম মজুমদার

ছবি

নিউইয়র্কে আজ রাতে ইউনূস-বাইডেন বৈঠক

ছবি

সেনাবাহিনী রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করবে না : ওয়াকার-উজ-জামান

চরমপন্থী নেতা সুশীলের মৃত্যু নিশ্চিত হতে ১০ মিনিট দাঁড়িয়ে ছিল হামলাকারীরা

বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মন্তব্যের কড়া প্রতিবাদ ঢাকার

সারাদেশে ৩২ হাজার পূজামণ্ডপে থাকবে নিñিদ্র নিরাপত্তা

দুর্গাপূজায় ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবিতে মন্দিরে মন্দিরে উড়োচিঠি

ছবি

‘গান গেয়ে গেয়ে’ যুবককে পিটিয়ে হত্যা, মরদেহ ফেলে রাখে রাস্তায়

ছবি

পোশাক শিল্পে অস্থিরতা, বন্ধ অনেক কারখানা

tab

জাতীয়

বিদ্যুতে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি : ভারত-বাংলাদেশের সম্মতির অপেক্ষায় নেপাল

ফয়েজ আহমেদ তুষার

বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রপ্তানির লক্ষ্যে আগামী ৩ অক্টোবর ত্রিপক্ষীয় চুক্তি সই করতে চায় নেপাল। এ সংক্রান্ত প্রস্তাব পাঠিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের সম্মতির অপেক্ষায় রয়েছে দেশটি। সব পক্ষ সম্মত হলে কাঠমান্ডুতে একটি বিশেষ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে চুক্তি সই হবে।

এক দশক আগে বিদ্যুৎ আমদানি-রপ্তানির বিষয়ে নেপাল ও বাংলাদেশের মধ্যে আলোচনা শুরু হলেও ভারতের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি সই না হওয়ায় তা আলোর মুখ দেখেনি।

নেপালের বিদ্যুৎ, পানিসম্পদ এবং সেচ মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র চিরঞ্জীব চাতাউত গত সোমবার দেশটির সংবাদমাধ্যম মাই রিপালিকাকে বলেছেন, এখন পর্যন্ত ভারত-বাংলাদেশ কেউ চুক্তির দিন-তারিখ নিশ্চিত করেনি। তিনি বলেছেন, যদি দেশ দুটি প্রস্তাবিত তারিখের অন্তত দুদিন আগে ইতিবাচক সাড়া দেয়। তাহলে আগামী ৩ অক্টোবর ত্রিপাক্ষিক চুক্তিটি হবে।

নেপালের এই কর্মকর্তা মাই রিপাবলিকাকে জানিয়েছেন, সব পক্ষ সম্মত হলে রাজধানী কাঠমান্ডুতে একটি বিশেষ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে চুক্তি সই হবে। তিনি আরও জানিয়েছেন, নেপালের পক্ষ থেকে আগামী ১ অক্টোবর বাংলাদেশকে একটি যৌথ ওয়ার্কিং দলের বৈঠকের আহ্বান জানানো হয়েছে। এরপর দুই দেশের মধ্যে একটি যৌথ স্টিয়ারিং দলের বৈঠক হবে।

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান গত শুক্রবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন, নেপাল থেকে বাংলাদেশে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির লক্ষ্যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি সই করতে অন্তর্বর্তী সরকারের একটি প্রতিনিধিদল শিগগিরই নেপাল যাবে। তবে ঠিক কবে প্রতিনিধিদল নেপাল সফরে যাবেন, তা জানাননি তিনি।

একই অনুষ্ঠানে ঢাকায় নিযুক্ত নেপালের রাষ্ট্রদূত ঘনশ্যাম ভান্ডারী বলেন, ভারতীয় সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে নেপাল থেকে বাংলাদেশে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ রপ্তানির বিষয়ে একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তি শিগগিরই শেষ হবে।

৩ অক্টোবর চুক্তি সই করতে নেপালের প্রস্তাবের বিষয়ে জানতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) মুখপাত্রদের সঙ্গে বুধবার সন্ধ্যায় যোগাযোগ করে সংবাদ। মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত তথ্য জেনে এরপর জানাবেন। পিডিবির মুখপাত্র বলেন, তার কাছে এ সংক্রান্ত তথ্য নেই। তিনি মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন।

নেপালের সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, নেপাল-ভারত-বাংলাদেশের এই বিদ্যুৎ চুক্তিটির সবকিছু চূড়ান্ত হয়ে আছে। গত ২৮ জুলাই চুক্তি সই হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ওই সময় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলন চলায় চুক্তিটি করা সম্ভব হয়নি।

এরপর পরিস্থিতি যখন স্বাভাবিক হয়েছে তখন নেপাল আবারও আলোচনায় আগায়। তখন অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে চুক্তির সবুজ সংকেতও দেয়া হয়। এরপরই নেপাল চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য অক্টোবরের ৩ তারিখকে নির্ধারণ করে বাংলাদেশ ও ভারতকে প্রস্তাব দেয়।

বিদ্যুৎ খাতে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে বাংলাদেশের পাশপাশি নেপালও আগ্রহী। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আলোচনা ছিল বাংলাদেশ নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আনবে গরমের দিনে, চাহিদা যখন বেশি থাকে। তবে শীতকালে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ চাহিদা কমে যায়। তখন সক্ষমতার অতিরিক্ত বিদ্যুৎ নেপালে রপ্তানি করা হবে।

হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত হওয়ায় নেপালে প্রচন্ড শীত পড়ে। তখন দেশটিতে বিদ্যুৎ চাহিদা বেড়ে যায়। তবে পাহাড় থেকে পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় জলবিদ্যুৎ উৎপাদন একেবারেই কমে যায়। এই পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ আমদানি নেপালের জন্যও প্রয়োজন।

নেপালে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নে বাংলাদেশ বিনিয়োগ করবে বলেও আলোচনা ছিল।

বিদ্যুৎ খাতে পারস্পরিক সহযোগিতার লক্ষ্যে ২০১৪ সালে সমঝোতা স্বারক (এমওইউ) সই করেছিল নেপাল ও বাংলাদেশ। তবে এই দুই দেশের মধ্যে স্থলপথে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ভারত। কারণ নেপালের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্ত নেই। তবে দুটি দেশের সঙ্গে ভারতের স্থল সীমান্ত আছে। আর বিদ্যুৎ আমদানি করতে হবে স্থলপথে।

ভারতে ভু-খন্ড এবং সঞ্চালন লাইন ব্যবহার করে বিদ্যুৎ আনা হবে। ত্রিপক্ষীয় চুক্তি সই হলে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার এইচভিডিসি স্টেশন (সাবস্টেশন) ব্যবহার করে এ বিদ্যুৎ আসবে বাংলাদেশে। এক্ষেত্রে ট্রেডিং মার্জিন ও সঞ্চালন চার্জ দিতে হবে প্রতিবেশী দেশটিকে।

পিডিবি’র তথ্য অনুযায়ী, আগামী পাঁচ বছরে নেপাল থেকে ৬৫০ কোটি টাকার বিদ্যুৎ কেনার পরিকল্পনা রয়েছে। প্রতি বছর আনুমানিক ১৩০ কোটি টাকার বিদ্যুৎ কেনা হবে নেপালের কাছ থেকে।

মাই রিপাবলিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নেপাল থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বাংলাদেশ কিনবে ৮ দশমিক ১৭ রুপিতে। যার মধ্যে ভারতের সঞ্চালন লাইনের খরচও থাকবে।

নেপাল থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ আমদানি শুরু হলে বাংলাদেশে মোট আমদানি বিদ্যুতের পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ২ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট, যা বাংলাদেশের গ্রিডভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার প্রায় ১১ শতাংশ।

বর্তমানে বাংলাদেশ ২ হাজার ৬৫৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করছে, যার পুরোটাই ভারত থেকে। এর মধ্যে দেশটির সঙ্গে সরকারি বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি রয়েছে ১ হাজার ১৬০ মেগাওয়াট আর বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র আদানির ঝাড়খ- বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ আসছে ১ হাজার ৪৯৬ মেগাওয়াট। তবে কারিগরি ত্রুটি, বকেয়া বেড়ে যাওয়াসহ নানা কারণে ভারত থেকে বিদ্যুৎ রপ্তানি বা সরবরাহের পরিমাণ মাঝে মধ্যেই কমে যাচ্ছে।

back to top