alt

জাতীয়

বিদেশে স্বাস্থ্য সেবা নিতে প্রতিবছর ব্যয় হচ্ছে ৪ বিলিয়ন ডলারের বেশি: ডিসিসিআই সেমিনারে বক্তারা

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত “স্বাস্থ্য খাতে বিদেশমুখিতা কমাতে দেশীয় সক্ষমতা বৃদ্ধি” বিষয়ক সেমিনার আজ ঢাকা চেম্বার অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়।

সেমিনারের স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, ডব্লিউটিও-এর তথ্য মতে বাংলাদেশের ৪৯% মানুষই মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা পায়না, সেই সাথে স্থানীয় সেবায় প্রয়োজনীয় আন্তর্জাতিক মান না থাকায় বিদেশে স্বাস্থ্য সেবা নেওয়ার প্রবণতা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখাতের উন্নয়নে বিশেষ করে উন্নত অবকাঠামো ও আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিতকরণ, বাজেট সহায়তা বাড়ানো, আন্তর্জাতিক  হাসপাতলসমূহের চেইন কার্যক্রম বাংলাদেশে চালুকরণ, বিদেশী ডাক্তার ও নার্সদের বাংলাদেশে কার্যক্রম পরিচালনার রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সহজীকরণ সহ স্বাস্থ্যখাতের সকল ধরনের লাইসেন্স প্রাপ্তি ও নবায়নের প্রক্রিয়াগত জটিলতা নিরসন  এবং ডিজিটাল ব্যবস্থা প্রবর্তন, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বেসরকারিখাতে হাসপাতাল কার্যক্রম চালু উৎসাহিতকরণে কর অব্যাহতি সুবিধা প্রদানের উপর জোরারোপ করেন ডিসিসিআই সভাপতি।      

তিনি বলেন, ক্রমবর্ধমান হারে মধ্যবৃত্ত পরিবারগুলো সম্প্রতি বিদেশে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করতে যাচ্ছে, যদিও অনেক চিকিৎসা স্থানীয়ভাবেও পাওয়া যায়। তিনি আরও বলেন, রোবোটিক সার্জারির মতো স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা সেবা পাওয়া সম্ভব হলেও তুলনামূলকভাবে কম আত্মবিশ্বাস এবং গ্রাহকদের সন্তুষ্টির অভাবে বিদ্যমান পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে, গ্রাহক সন্তুষ্টি কেবল চিকিৎসা থেকে আসে না, বরং পুরো হাসপাতালের ইকো-সিস্টেম যথা: নার্স, প্রশাসন, টেকনোলোজিস সবাই এর সাথে সম্পৃক্ত। মানের ক্ষেত্রে ইতিবাচক ব্র্যান্ডিং-এর জন্য, বিদেশী ডাক্তার, নার্স ও টেকনোলজিস দেশে আসার প্রক্রিয়া আরো সহজতর করতে হবে।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডিসিসিআই ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি মালিক তালহা ইসমাইল বারী। মূল প্রবন্ধে তিনি বলেন, স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশের মাথাপিছু ব্যয় ১১০ মার্কিন ডলার, যেখানে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশে ব্যয় হয় ৪০১ মার্কিন ডলার। তিনি উল্লেখ করেন  ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ ছিল ৩০,১২৫ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের মাত্র ৩.৭৮%। তিনি জানান, প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবার অপ্রতুলতার কারণে দেশের একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠী বিশ্বের অন্যান্য দেশের সেবা নিয়ে থাকে এবং ২০১২ সালে বিদেশে স্বাস্থ্য সেবা নেওয়ায় বাংলাদেশীদের ব্যয়ের পরিমাণ ছিল প্রায় ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তিনি উল্লেখ করেন, বর্তমানে বাংলাদেশে ৫,৪৬১ বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক রয়েছে, যার মধ্যে ১৮১০টি ঢাকা বিভাগে অবস্থিত, পাশাপাশি ৩৬টি স্পেশালাইজড হাসপাতালের মধ্যে ১৯টি ঢাকা তে অবস্থিত হওয়ায় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাসকারী লোকজন উন্নত স্বাস্থ্য সেবা হতে বঞ্চিত হচ্ছে এবং প্রতিনিয়ত ঢাকার উপর চাপ বাড়ছে। উন্নত স্বাস্থ্যসেবার প্রতিবন্ধকতা হিসেবে অবকাঠমোর স্বল্পতা, দক্ষ ডাক্তার, নার্স ও টেকনিশিয়ান-এর অভাব, সরকারী হাসপাতলে সেবা প্রাপ্তিতে দীর্ঘসূত্রিতা, উন্নত সেবার জন্য ইন্স্যুরেন্স কভারেজের অনুপস্থিতি প্রভৃতি অন্যতম কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন। বিদ্যমান অবস্থা উত্তরণে স্বাস্থ্য খাতের রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সহজীকরণ, সরকারিভাবে সকলের জন্য স্বাস্থ্যসেবা ইন্স্যুরেন্সের আওতায় নিয়ে আসা, স্বাস্থ্য খাতে বাজেট সহায়তা ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি, পিপিপি মডেলে ঢাকায় আন্তর্জাতিক হাসপাতালসমূহের কার্যক্রম শুরু, সহায়ক নীতি সহায়তা প্রদানের উপর জোরারোপ করেন মালিক তালহা ইসমাইল বারী।      

সেমিনারের নির্ধারিত আলোচনায় বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি’র সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক এ কে খান আজাদ, বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্টার ডা. মো. লিয়াকত হোসাইন, বাংলাদেশ প্রাইভেট ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক ওনার্স এসোসিয়েশনের ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি এবং সমরিতা হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. এ বি এম হারুন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অব হেলথ ইকোনোমিক্সের প্রাক্তন পরিচালক অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আব্দুল হামিদ, বিএসএমএমইউ-এর প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ডা. রেজাউল করিম কাজল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ও বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিসিয়ান্স অ্যান্ড সার্জন্স-এর সেক্রেটারি ডা. আবুল বাসার মো: জামাল এবং বাংলাদেশ সোসাইটি অব ইমার্জেন্সি মেডিসিন-এর সেক্রেটারি জেনারেল ডা. মীর সাদউদ্দিন আহমেদ প্রমুখ অংশগ্রহণ করেন।

জাতীয় অধ্যাপক এ কে খান আজাদ বলেন, যেহেতু প্রযুক্তির ক্ষেত্রে চিকিৎসা বিজ্ঞান একটি সর্বদা পরিবর্তনশীল প্রক্রিয়া, এমতাবস্থায় বর্তমানে আমরা যা আমরা প্রত্যক্ষ করছি আগামী ২৫ বছর পর এক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে, তাই সেরা প্রযুক্তিগত অগ্রগতি গ্রহণ করার জন্য আমাদের একটি সঠিক পাঠ্যক্রম থাকা জরুরী। দেশে পরিচালিত ল্যাবরেটরিগুলোর মান উন্নয়ন, বাজেট সহায়তা বাড়ানোর মাধ্যমে চিকিৎসাশাস্ত্রের গবেষণা কার্যক্রম বৃদ্ধি ও বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল-এর শক্তিশালীকরনের উপর তিনি জোর দেন। 

বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল-এর ভারপ্রাপ্ত রেজিস্টার ডা. মো. লিয়াকত হোসাইন উন্নত সেবা প্রদানে রোগীদের প্রতি ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মানসিকতা পরিবর্তন একান্ত অপরিহার্য উল্লেখ করে বলেন, দেশীয় ডাক্তার ও নার্সদের দক্ষতা উন্নয়নের আন্তর্জাতিকমানের প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট স্থাপনের কোন বিকল্প নেই। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অব হেলথ ইকোনোমিক্স-এর প্রাক্তন পরিচালক অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আব্দুল হামিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি মেডিকেল অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেন। এছাড়াও তিনি শুধুমাত্র স্বাস্থ্য প্রশাসনকে দক্ষতার সাথে পরিচালনার জন্য সিভিল সার্ভিস থেকে বাদ দিয়ে পৃথক স্বাস্থ্য ক্যাডারের প্রস্তাব করেন পাশাপাশি এ খাতকে আরও কার্যকর করতে জুডিশিয়ারি সার্ভিস কমিশনের মতো স্বাস্থ্যসেবা কমিশন গঠনের উপর জোরারোপ করেন। তিনি উল্লেখ করেন, আমাদের স্বাস্থ্য খাতে বিদ্যমান সমস্যাসমূহ নিরসনে দেশের স্বাস্থ্য সেবা খাতের বিদ্যমান ব্যবস্থাপনার আমূল সংষ্কারের কোন বিকল্প নেই। জনগনের প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা পেতে ডাক্তার ও হাসাপাতাল নির্বাচনে প্রয়োজনীয় তথ্যসমৃদ্ধ অ্যাপস্ চালুর উপর তিনি জোরারোপ করেন।

বিএসএমএমইউ-এর প্রসূতি ও স্ত্রীরোধবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ডা. রেজাউল করিম কাজল বলেন, আস্থা এই সেক্টরের উন্নয়নের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, তাই আমাদের স্বাস্থ্যসেবাকে স্বাস্থ্যসেবা পর্যটনে রূপান্তর করতে হবে। বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে উন্নত স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের লক্ষ্যে গ্রামীণ পর্যায়ে আরও বেশি মানের হাসপাতাল স্থাপন করা উচিত বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিসিয়ান্স অ্যান্ড সার্জন্স-এর সেক্রেটারি ডা. আবুল বাসার মো: জামাল বলেন, বাংলাদেশ এখন ওষুধ উৎপাদনকারী দেশ এবং আমরা বিভিন্ন দেশে রপ্তানিও করি, কিন্তু চিকিৎসা যন্ত্র উৎপাদনে আমরা এখনো পিছিয়ে আছি, এমতাবস্থায় এ খাতে আরও ভালো করতে হলে দক্ষ জনশক্তি ও প্রশিক্ষণের ওপর জোর দিতে হবে। তিনি জানান, বাংলাদেশে ১,৩৪,০০০ চিকিৎসক রয়েছে এবং এর মধ্যে মাত্র ৩৩ হাজার সরকারি চিকিৎসক। তবে এটা সন্তোষজনক যে এখানে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ১০ হাজারের বেশি বিদেশি মেডিকেল শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে। 

বাংলাদেশ সোসাইটি অব ইমার্জেন্সি মেডিসিন-এর সেক্রেটারি জেনারেল ডা. মীর সাদউদ্দিন আহমেদ বলেন, কোভিডের সময় কেউ চিকিৎসা নিতে বিদেশে যায়নি। মহামারীর সেই সময়ে আমরা পরিস্থিতি সামলাতে পেরেছি, এটা স্বাস্থ্যসেবা খাতে আমাদের সক্ষমতা প্রতিফলিত করে। তিনি বিশ্বমানের ডাক্তারদের সাথে জরুরী যত্নের প্ল্যাটফর্ম বাড়াতে এবং আস্থা তৈরির সুবিধার উপর জোরারোপ করেন।  

ঢাকা চেম্বারের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যবৃন্দ সহ সংশ্লিষ্ট বেসরকারিখাতের প্রতিনিধিবৃন্দ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

ছবি

বিমানবন্দরে হয়রানির অভিযোগ: তদন্তের নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

ছবি

জুলাই গণঅভ্যুত্থান আমাদের আত্নমর্যাদা নিয়ে দাঁড়াতে শিখিয়েছে: নাহিদ ইসলাম

ছবি

ডেঙ্গুতে একদিনে ১০ জনের মৃত্যু

ছবি

ভারতের কোনও যুক্তিই নেই আমাদের পানি না দেওয়ার: অর্থ উপদেষ্টা

ছবি

দুর্ঘটনায় অক্টোবর মাসে ৫৭৫ জন হারিয়েছে প্রাণ

ছবি

জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন হওয়া উচিত: তোফায়েল আহমেদ

ছবি

সরাসরি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রস্তাব, বিবেচনার আশ্বাস বদিউলের

ছবি

বিদেশে উচ্চ বেতনের চাকরির ফাঁদে পড়ে বাংলাদেশিদের জিম্মি হওয়ার ঘটনা, সতর্কতা জারি করেছে দূতাবাস

ছবি

আসন সংরক্ষণ ও আলাদা নির্বাচনব্যবস্থার দাবি হিন্দু মহাজোটের

ছবি

নতুন সিইসি-ইসিদের শপথ রোববার

ছবি

সশস্ত্র বাহিনী দিবসে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানদের সাক্ষাৎ

ছবি

দায়ীদের বিচারের পরই আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে: ড. মুহাম্মদ ইউনূস

ছবি

যুক্তরাষ্ট্র চায় বাংলাদেশের মানবাধিকার সুরক্ষিত থাকুক: পররাষ্ট্র দপ্তর

ছবি

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সাতটি অগ্রাধিকার কর্মসূচি ঘোষণা

ছবি

দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে ৭০ লাখ ডলার জালিয়াতির অভিযোগ

ছবি

রংপুরে আবু সাইদ হত্যা মামলার আসামী শরীফুল ইসলাম ৩ দিনের রিমান্ড শেষে কারাগারে

ছবি

এক যুগ পর সেনাকুঞ্জে খালেদা, বসলেন প্রধান উপদেষ্টার পাশে

ছবি

ভারত থেকে ৫৬ টাকা ৫৯ পয়সা কেজিপ্রতি কেনা হচ্ছে ৫০ হাজার টন চাল

ছবি

সেনাকুঞ্জে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে খালেদা জিয়ার কুশল বিনিময়

ছবি

ছয় ঘণ্টা পর ঘুরল রেলের চাকা, ঢাকার সঙ্গে সারা দেশের ট্রেন চলাচল শুরু

ছবি

নতুন একটা চাঁদাবাজ দল আবার আবির্ভূত হচ্ছে: আনু মুহাম্মদ

ছবি

সরবরাহ বাড়াতে উৎপাদন বৃদ্ধির তাগিদ দিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা

ছবি

ট্রাইব্যুনালে কোনো পক্ষেই মামলা লড়বেন না সমাজী, বিশেষ পরামর্শকের দায়িত্বও নিবেন না

ছবি

২০২৫ সালে মাধ্যমিক স্কুলে ছুটি থাকবে ৭৬ দিন

ছবি

নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন, সিইসি হলেন সাবেক সচিব নাসির উদ্দীন

ছবি

সশস্ত্র বাহিনীর বীর শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানালেন প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

শেখ হাসিনার পক্ষে ট্রাইব্যুনালে দাঁড়াতে চান জেড আই খান পান্না

ছবি

সব রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখবে বাংলাদেশ: প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

রিকশাচালকদের হটালো সেনাবাহিনী, রামপুরায় যানচলাচল শুরু

ছবি

সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মেহেদীর জামিন স্থগিত

ছবি

বিচারের শুদ্ধতায় ট্রাইব্যুনালের আদেশের বিরুদ্ধে আপিলের সুযোগ : আসিফ নজরুল

ছবি

ট্রাইব্যুনালে চিফ প্রসিকিউটরের বিশেষ পরামর্শকের দায়িত্বে টবি ক্যাডম্যান

আগামী নির্বাচনের সময় জানালেন উপদেষ্টা সাখাওয়াত

ছবি

ঢাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের অবরোধ

ছবি

জলবায়ু পরিবর্তনে মারাত্মক ঝুঁকিতে বাঁশখালী উপকূল

সাবেক আইজিপি, জে. জিয়াসহ ৮ জনের তদন্ত প্রতিবেদন ১ মাসের মধ্যে দাখিলের নির্দেশ ট্রাইব্যুনালের

tab

জাতীয়

বিদেশে স্বাস্থ্য সেবা নিতে প্রতিবছর ব্যয় হচ্ছে ৪ বিলিয়ন ডলারের বেশি: ডিসিসিআই সেমিনারে বক্তারা

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত “স্বাস্থ্য খাতে বিদেশমুখিতা কমাতে দেশীয় সক্ষমতা বৃদ্ধি” বিষয়ক সেমিনার আজ ঢাকা চেম্বার অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়।

সেমিনারের স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, ডব্লিউটিও-এর তথ্য মতে বাংলাদেশের ৪৯% মানুষই মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা পায়না, সেই সাথে স্থানীয় সেবায় প্রয়োজনীয় আন্তর্জাতিক মান না থাকায় বিদেশে স্বাস্থ্য সেবা নেওয়ার প্রবণতা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখাতের উন্নয়নে বিশেষ করে উন্নত অবকাঠামো ও আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিতকরণ, বাজেট সহায়তা বাড়ানো, আন্তর্জাতিক  হাসপাতলসমূহের চেইন কার্যক্রম বাংলাদেশে চালুকরণ, বিদেশী ডাক্তার ও নার্সদের বাংলাদেশে কার্যক্রম পরিচালনার রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সহজীকরণ সহ স্বাস্থ্যখাতের সকল ধরনের লাইসেন্স প্রাপ্তি ও নবায়নের প্রক্রিয়াগত জটিলতা নিরসন  এবং ডিজিটাল ব্যবস্থা প্রবর্তন, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বেসরকারিখাতে হাসপাতাল কার্যক্রম চালু উৎসাহিতকরণে কর অব্যাহতি সুবিধা প্রদানের উপর জোরারোপ করেন ডিসিসিআই সভাপতি।      

তিনি বলেন, ক্রমবর্ধমান হারে মধ্যবৃত্ত পরিবারগুলো সম্প্রতি বিদেশে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করতে যাচ্ছে, যদিও অনেক চিকিৎসা স্থানীয়ভাবেও পাওয়া যায়। তিনি আরও বলেন, রোবোটিক সার্জারির মতো স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা সেবা পাওয়া সম্ভব হলেও তুলনামূলকভাবে কম আত্মবিশ্বাস এবং গ্রাহকদের সন্তুষ্টির অভাবে বিদ্যমান পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে, গ্রাহক সন্তুষ্টি কেবল চিকিৎসা থেকে আসে না, বরং পুরো হাসপাতালের ইকো-সিস্টেম যথা: নার্স, প্রশাসন, টেকনোলোজিস সবাই এর সাথে সম্পৃক্ত। মানের ক্ষেত্রে ইতিবাচক ব্র্যান্ডিং-এর জন্য, বিদেশী ডাক্তার, নার্স ও টেকনোলজিস দেশে আসার প্রক্রিয়া আরো সহজতর করতে হবে।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডিসিসিআই ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি মালিক তালহা ইসমাইল বারী। মূল প্রবন্ধে তিনি বলেন, স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশের মাথাপিছু ব্যয় ১১০ মার্কিন ডলার, যেখানে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশে ব্যয় হয় ৪০১ মার্কিন ডলার। তিনি উল্লেখ করেন  ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ ছিল ৩০,১২৫ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের মাত্র ৩.৭৮%। তিনি জানান, প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবার অপ্রতুলতার কারণে দেশের একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠী বিশ্বের অন্যান্য দেশের সেবা নিয়ে থাকে এবং ২০১২ সালে বিদেশে স্বাস্থ্য সেবা নেওয়ায় বাংলাদেশীদের ব্যয়ের পরিমাণ ছিল প্রায় ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তিনি উল্লেখ করেন, বর্তমানে বাংলাদেশে ৫,৪৬১ বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক রয়েছে, যার মধ্যে ১৮১০টি ঢাকা বিভাগে অবস্থিত, পাশাপাশি ৩৬টি স্পেশালাইজড হাসপাতালের মধ্যে ১৯টি ঢাকা তে অবস্থিত হওয়ায় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাসকারী লোকজন উন্নত স্বাস্থ্য সেবা হতে বঞ্চিত হচ্ছে এবং প্রতিনিয়ত ঢাকার উপর চাপ বাড়ছে। উন্নত স্বাস্থ্যসেবার প্রতিবন্ধকতা হিসেবে অবকাঠমোর স্বল্পতা, দক্ষ ডাক্তার, নার্স ও টেকনিশিয়ান-এর অভাব, সরকারী হাসপাতলে সেবা প্রাপ্তিতে দীর্ঘসূত্রিতা, উন্নত সেবার জন্য ইন্স্যুরেন্স কভারেজের অনুপস্থিতি প্রভৃতি অন্যতম কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন। বিদ্যমান অবস্থা উত্তরণে স্বাস্থ্য খাতের রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সহজীকরণ, সরকারিভাবে সকলের জন্য স্বাস্থ্যসেবা ইন্স্যুরেন্সের আওতায় নিয়ে আসা, স্বাস্থ্য খাতে বাজেট সহায়তা ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি, পিপিপি মডেলে ঢাকায় আন্তর্জাতিক হাসপাতালসমূহের কার্যক্রম শুরু, সহায়ক নীতি সহায়তা প্রদানের উপর জোরারোপ করেন মালিক তালহা ইসমাইল বারী।      

সেমিনারের নির্ধারিত আলোচনায় বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি’র সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক এ কে খান আজাদ, বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্টার ডা. মো. লিয়াকত হোসাইন, বাংলাদেশ প্রাইভেট ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক ওনার্স এসোসিয়েশনের ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি এবং সমরিতা হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. এ বি এম হারুন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অব হেলথ ইকোনোমিক্সের প্রাক্তন পরিচালক অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আব্দুল হামিদ, বিএসএমএমইউ-এর প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ডা. রেজাউল করিম কাজল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ও বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিসিয়ান্স অ্যান্ড সার্জন্স-এর সেক্রেটারি ডা. আবুল বাসার মো: জামাল এবং বাংলাদেশ সোসাইটি অব ইমার্জেন্সি মেডিসিন-এর সেক্রেটারি জেনারেল ডা. মীর সাদউদ্দিন আহমেদ প্রমুখ অংশগ্রহণ করেন।

জাতীয় অধ্যাপক এ কে খান আজাদ বলেন, যেহেতু প্রযুক্তির ক্ষেত্রে চিকিৎসা বিজ্ঞান একটি সর্বদা পরিবর্তনশীল প্রক্রিয়া, এমতাবস্থায় বর্তমানে আমরা যা আমরা প্রত্যক্ষ করছি আগামী ২৫ বছর পর এক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে, তাই সেরা প্রযুক্তিগত অগ্রগতি গ্রহণ করার জন্য আমাদের একটি সঠিক পাঠ্যক্রম থাকা জরুরী। দেশে পরিচালিত ল্যাবরেটরিগুলোর মান উন্নয়ন, বাজেট সহায়তা বাড়ানোর মাধ্যমে চিকিৎসাশাস্ত্রের গবেষণা কার্যক্রম বৃদ্ধি ও বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল-এর শক্তিশালীকরনের উপর তিনি জোর দেন। 

বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল-এর ভারপ্রাপ্ত রেজিস্টার ডা. মো. লিয়াকত হোসাইন উন্নত সেবা প্রদানে রোগীদের প্রতি ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মানসিকতা পরিবর্তন একান্ত অপরিহার্য উল্লেখ করে বলেন, দেশীয় ডাক্তার ও নার্সদের দক্ষতা উন্নয়নের আন্তর্জাতিকমানের প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট স্থাপনের কোন বিকল্প নেই। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অব হেলথ ইকোনোমিক্স-এর প্রাক্তন পরিচালক অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আব্দুল হামিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি মেডিকেল অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেন। এছাড়াও তিনি শুধুমাত্র স্বাস্থ্য প্রশাসনকে দক্ষতার সাথে পরিচালনার জন্য সিভিল সার্ভিস থেকে বাদ দিয়ে পৃথক স্বাস্থ্য ক্যাডারের প্রস্তাব করেন পাশাপাশি এ খাতকে আরও কার্যকর করতে জুডিশিয়ারি সার্ভিস কমিশনের মতো স্বাস্থ্যসেবা কমিশন গঠনের উপর জোরারোপ করেন। তিনি উল্লেখ করেন, আমাদের স্বাস্থ্য খাতে বিদ্যমান সমস্যাসমূহ নিরসনে দেশের স্বাস্থ্য সেবা খাতের বিদ্যমান ব্যবস্থাপনার আমূল সংষ্কারের কোন বিকল্প নেই। জনগনের প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা পেতে ডাক্তার ও হাসাপাতাল নির্বাচনে প্রয়োজনীয় তথ্যসমৃদ্ধ অ্যাপস্ চালুর উপর তিনি জোরারোপ করেন।

বিএসএমএমইউ-এর প্রসূতি ও স্ত্রীরোধবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ডা. রেজাউল করিম কাজল বলেন, আস্থা এই সেক্টরের উন্নয়নের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, তাই আমাদের স্বাস্থ্যসেবাকে স্বাস্থ্যসেবা পর্যটনে রূপান্তর করতে হবে। বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে উন্নত স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের লক্ষ্যে গ্রামীণ পর্যায়ে আরও বেশি মানের হাসপাতাল স্থাপন করা উচিত বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিসিয়ান্স অ্যান্ড সার্জন্স-এর সেক্রেটারি ডা. আবুল বাসার মো: জামাল বলেন, বাংলাদেশ এখন ওষুধ উৎপাদনকারী দেশ এবং আমরা বিভিন্ন দেশে রপ্তানিও করি, কিন্তু চিকিৎসা যন্ত্র উৎপাদনে আমরা এখনো পিছিয়ে আছি, এমতাবস্থায় এ খাতে আরও ভালো করতে হলে দক্ষ জনশক্তি ও প্রশিক্ষণের ওপর জোর দিতে হবে। তিনি জানান, বাংলাদেশে ১,৩৪,০০০ চিকিৎসক রয়েছে এবং এর মধ্যে মাত্র ৩৩ হাজার সরকারি চিকিৎসক। তবে এটা সন্তোষজনক যে এখানে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ১০ হাজারের বেশি বিদেশি মেডিকেল শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে। 

বাংলাদেশ সোসাইটি অব ইমার্জেন্সি মেডিসিন-এর সেক্রেটারি জেনারেল ডা. মীর সাদউদ্দিন আহমেদ বলেন, কোভিডের সময় কেউ চিকিৎসা নিতে বিদেশে যায়নি। মহামারীর সেই সময়ে আমরা পরিস্থিতি সামলাতে পেরেছি, এটা স্বাস্থ্যসেবা খাতে আমাদের সক্ষমতা প্রতিফলিত করে। তিনি বিশ্বমানের ডাক্তারদের সাথে জরুরী যত্নের প্ল্যাটফর্ম বাড়াতে এবং আস্থা তৈরির সুবিধার উপর জোরারোপ করেন।  

ঢাকা চেম্বারের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যবৃন্দ সহ সংশ্লিষ্ট বেসরকারিখাতের প্রতিনিধিবৃন্দ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

back to top