হত্যা, ধর্ষণ, নিপীড়নের বিচার এবং স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার অপসারণের দাবিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে গণমিছিল করার কথা থাকলেও ‘সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায়’ সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেই কর্মসূচি শেষ করেছে বামপন্থি আটটি সংগঠন।
শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শুরু হওয়া সমাবেশের আধঘণ্টা পর, পূর্বঘোষিত গণমিছিলটি ‘স্থগিত’ করে কর্মসূচি ‘আজকের মতো শেষের’ ঘোষণা দেন ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাহির শাহরিয়ার রেজা। তিনি বলেন, ‘আমাদের এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি করা হচ্ছে। গোয়েন্দা সংস্থা থেকে বলা হয়েছে, আমরা যেন এই কর্মসূচি সংক্ষিপ্ত করি, পালন না করি। হামলার ভয়ভীতি দেখিয়ে আমাদের দমিয়ে রাখা যাবে না।
‘দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আমাদের যে গণমিছিল হওয়ার কথা ছিল শহীদ মিনার থেকে টিএসসি পর্যন্ত। সেই গণমিছিল স্থগিত করে আমাদের আজকের কর্মসূচি এখানেই সমাপ্ত করছি।’
গণমিছিলের ডাক দেয়া সংগঠনগুলো হলো বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ-বিসিএল, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম, বাংলাদেশ খেতমজুর সমিতি ও বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র (টিইউসি)।
এই গণমিছিলের ডাক এবং এর ‘পাল্টায়’ লেখক ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট পিনাকী ভট্টাচার্যের ঢাকার পুরানা পল্টনে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) এর কার্যালয়কে ‘ছাত্র-জনতার কার্যালয়’ বানানোর ডাক দেয়া ঘিরে রাত থেকেই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
তবে সিপিবি কার্যালয় এলাকার পরিস্থিতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ‘কঠোর নিরাপত্তা’ বলয়ের মধ্যেও...। এদিকে আট সংগঠনের উদ্যোগে গণমিছিলটি শহীদ মিনার থেকে শুরু হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্বর প্রদক্ষিণ করে টিএসসিতে গিয়ে শেষ হয়।
ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজা গত জুলাই আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবি তুলে বলেন, ‘এই অন্তর্বর্তী সরকারের সময় পর্যন্ত যত হত্যাকাণ্ড হয়েছে, তার বিচার করতে হবে। আমরা আগামীদিনে আমাদের লড়াই সংগ্রাম আরও দুর্বার গতিতে এগিয়ে নিয়ে যাব।’
এর আগে শহীদ মিনারে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে সাত দফা দাবি তুলে ধরেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রায়হান উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন গত জুলাই-আগস্টজুড়ে এক রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ থেকে কর্তৃত্ববাদী স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারকে বিতরণ করা হয়েছে। বৈষম্যহীন সমাজের আকাক্সক্ষা লাখো মানুষ এই গণআন্দোলনে শামিল হয়েছিল।
‘মানুষ আশা করেছিল হাসিনার পতনের মধ্য দিয়ে মানুষ একটা নিরাপদ সমাজ পাবে, পাবে স্বস্তির জীবন। কিন্তু গত ৫ আগস্ট, স্বৈরাচার হাসিনার পতনের পর দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা হওয়ার প্রত্যাশা থাকলেও বারবার আমাদের আশা ভঙ্গ ঘটেছে। সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে।’
ছাত্রফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রায়হান বলেন, ‘অভ্যুত্থানের পরপরই বিভিন্ন মসজিদ, মন্দির, মাজারে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়েছে। মব সন্ত্রাসের নামে মানুষকে পিটিয়ে হত্যা, পাওনা টাকার দাবিতে আন্দোলনরত
শ্রমিকদের হত্যা, রাজনৈতিক কর্মীদের হত্যা, চট্টগ্রাম কোর্ট প্রাঙ্গণে আইনজীবী হত্যাসহ কোনো অপরাধের বিচার করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সমর্থ হয় নাই।
‘সরকারের ব্যর্থতা এবং বিচারহীনতার দীর্ঘ ইতিহাস অপরাধীদের অপরাধ সংঘটিত করতে উৎসাহ জুগিয়ে যাচ্ছে। সারাদেশে অব্যাহত ধর্ষণ, নারী নিপীড়ন, হত্যাকাণ্ড বন্ধে সরকার কার্যকর কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারেনি। উলটো স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী নারী নিপীড়নকারী মব সন্ত্রাসীদের পরোক্ষ সমর্থন অপরাধীদের মনোবল দৃঢ় করেছে।’
রায়হান আরও বলেছেন, পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের আমলে নানা গুম, খুন, ধর্ষণের বিচার করার সুযোগ এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ছিল এবং এখনও আছে।
‘সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড, তনু হত্যাকাণ্ড, আফসানা হত্যাকাণ্ড, নুসরাত হত্যাকাণ্ড, মুনিয়া হত্যাকাণ্ড, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী দ্বারা নোয়াখালীতে ধর্ষণ, হিন্দু ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের ঘরবাড়িতে হামলা-লুটপাট, শ্রমিক হত্যার বিচার না করে এই সরকার স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের দীর্ঘ বিচারহীনতাকেই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
মাগুরায় ধর্ষণের শিকার হওয়া আট বছরের শিশুর মৃত্যুর মতো ঘটনা দেশে প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে মন্তব্য করে রায়হান বলেন, ‘বরগুনায় কিশোরী ধর্ষণ, বিচার চাওয়ায় কিশোরীর বাবাকে হত্যা করা হয়েছে। সরকার ধর্ষকদের বিচার করতে না পারলেও, ধর্ষণের প্রতিবাদে আন্দোলনকারী ওপর খড়গৃহস্ত হয়েছে। পুলিশ দিয়ে হামলা করে পরবর্তীতে তাদের নামেই মামলা দায়ের করা হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্রমাগত অভ্যুত্থানের চেতনা থেকে বিচ্যুত হচ্ছে।’
ছাত্রফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রায়হান এরপর সাত দফা দাবি তুলে ধরেন। এগুলো হলো- আছিয়াসহ সব হত্যা, ধর্ষণ, নিপীড়নের বিচার করতে হবে; ব্যর্থ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে অপসারণ করতে হবে; গত জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে হবে; মসজিদ, মন্দির, মাজারে হামলাকারী মব সন্ত্রাসীদের বিচার করতে হবে; চট্টগ্রাম কোর্ট প্রাঙ্গণে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ, যৌথবাহিনী দ্বারা শ্রমিক হত্যার বিচার করতে হবে; সাগর-রুনি, তনু, আফসানা, মুনিয়াসহ পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ আমলে সংঘটিত হত্যার বিচার করতে হবে এবং হিন্দু ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের ঘরবাড়িতে হামলা, লুটপাটের বিচার করতে হবে।
সমাবেশে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মুক্তা বাড়ৈ বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানকে সফল করার জন্য এই নারীদের ভূমিকাই ছিল সবচেয়ে অগ্রগণ্য। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করছি গত ৫ তারিখের পরে একটা মহল আমার ওড়না ঠিক আছে কিনা, ঠিকমতো হাঁটছি কিনা, কী খেতে পারব, কেমন করে চলব সবকিছু নির্ধারণ করে দিতে চান। মানুষ হিসেবে গণ্য করতে চান না। কোনো জড়বস্তু বা পণ্য হিসেবে দেখতে চান তারা নারীকে। সেই দৃষ্টিভঙ্গির বিরুদ্ধে আমরা এখানে দাঁড়িয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা দেখেছি তনুকে ক্যান্টনমেন্টের মধ্যে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে, সেই হত্যার বিচার হয়নি। আমরা দেখেছি ধনাঢ্যর ছেলে ওই আনভীর, তার দ্বারা কীভাবে মুনিয়াকে ভুক্তভোগী করে তাকে হত্যা করা হয়েছে, বিচার হয়নি। আমাদের বোন সেই নুসরাতকে কীভাবে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে, সেই হত্যাকাণ্ডে বিচার আমরা পাইনি। এ রকম করতে করতে অসংখ্য নজির, গবেষণা বলছে প্রতি ১০ মিনিটে নাকি একটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে, এ জন্যই কি আমরা নারীরা নেমেছিলাম?
‘আমরা বলতে চাই শাসক যায়, শাসক আসে, চেহারা বদলায় না। আমরা চেহারার বদল চাই। আমাদের দেশে যেন আর একটি নারী, একটি শিশু এ ধরনের দানবীয় হত্যাকাণ্ড, ধর্ষণের শিকার না হয়।’
মুক্তা বাড়ৈ বলেন, ‘গত ৫ তারিখের পর মব সন্ত্রাসের মাধ্যমে মানুষকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। দেশে যেন আইন, নাই, বিচার নাই, যেন শাসন ব্যবস্থার কিছুই নেই। একটা সরকার যে আছে তার নমুনা আমরা দেখতে পাচ্ছি না। সরকার আছে, গণঅভ্যুত্থানের ম্যান্ডেট নিয়ে আপনারা ক্ষমতায় এসেছেন, সেটি স্মরণ করিয়ে দিতে আমরা এখানে দাঁড়িয়েছি।’
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ-বিসিএল সভাপতি গৌতম চন্দ্র শীল বলেন, ‘আমরা দীর্ঘ লড়াই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা সরকারকে উৎখাত করেছিলাম। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করছি এখনও সারাদেশে হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, নিপীড়ন, লুটতরাজ চলছে। মব জাস্টিসের নামে সারাদেশে লুটপাট, নৈরাজ্য চলছে।’
‘সরকার ডেভিল হান্ট পরিচালনা করে কোনো মব সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি। আমরা লক্ষ্য করছি, ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের সময়ে যেসব অসাধু, লুটেরা ব্যবসায়ী লুটপাট, টাকা পাচার, হত্যা, ধর্ষণ, দখলদারিত্বের সঙ্গে জড়িত ছিল, অবৈধ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে, জুলাই অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে গিয়ে হাসিনার সঙ্গে হাত মিলিয়েছে, তারা গ্রেপ্তার হচ্ছে না। তাদের সঙ্গে বর্তমান সরকারের লোকজনদের অবৈধ আর্থিক লেনদেনের গুঞ্জনও শোনা যাচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা গত ৭ মাসে বর্তমান সরকারের রাষ্ট্র পরিচালনায় কোনো সফলতা দেখিনি। তাই কালক্ষেপণ না করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাসহ অযোগ্য উপদেষ্টাদের এবং অযোগ্য আমলাদের সরিয়ে দিন এবং একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দিয়ে বিদায় নিন। অন্যথায় বিগত ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের চেয়েও আপনাদের পরিনতি ভয়াবহ হবে।’
শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫
হত্যা, ধর্ষণ, নিপীড়নের বিচার এবং স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার অপসারণের দাবিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে গণমিছিল করার কথা থাকলেও ‘সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায়’ সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেই কর্মসূচি শেষ করেছে বামপন্থি আটটি সংগঠন।
শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শুরু হওয়া সমাবেশের আধঘণ্টা পর, পূর্বঘোষিত গণমিছিলটি ‘স্থগিত’ করে কর্মসূচি ‘আজকের মতো শেষের’ ঘোষণা দেন ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাহির শাহরিয়ার রেজা। তিনি বলেন, ‘আমাদের এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি করা হচ্ছে। গোয়েন্দা সংস্থা থেকে বলা হয়েছে, আমরা যেন এই কর্মসূচি সংক্ষিপ্ত করি, পালন না করি। হামলার ভয়ভীতি দেখিয়ে আমাদের দমিয়ে রাখা যাবে না।
‘দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আমাদের যে গণমিছিল হওয়ার কথা ছিল শহীদ মিনার থেকে টিএসসি পর্যন্ত। সেই গণমিছিল স্থগিত করে আমাদের আজকের কর্মসূচি এখানেই সমাপ্ত করছি।’
গণমিছিলের ডাক দেয়া সংগঠনগুলো হলো বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ-বিসিএল, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম, বাংলাদেশ খেতমজুর সমিতি ও বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র (টিইউসি)।
এই গণমিছিলের ডাক এবং এর ‘পাল্টায়’ লেখক ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট পিনাকী ভট্টাচার্যের ঢাকার পুরানা পল্টনে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) এর কার্যালয়কে ‘ছাত্র-জনতার কার্যালয়’ বানানোর ডাক দেয়া ঘিরে রাত থেকেই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
তবে সিপিবি কার্যালয় এলাকার পরিস্থিতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ‘কঠোর নিরাপত্তা’ বলয়ের মধ্যেও...। এদিকে আট সংগঠনের উদ্যোগে গণমিছিলটি শহীদ মিনার থেকে শুরু হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্বর প্রদক্ষিণ করে টিএসসিতে গিয়ে শেষ হয়।
ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজা গত জুলাই আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবি তুলে বলেন, ‘এই অন্তর্বর্তী সরকারের সময় পর্যন্ত যত হত্যাকাণ্ড হয়েছে, তার বিচার করতে হবে। আমরা আগামীদিনে আমাদের লড়াই সংগ্রাম আরও দুর্বার গতিতে এগিয়ে নিয়ে যাব।’
এর আগে শহীদ মিনারে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে সাত দফা দাবি তুলে ধরেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রায়হান উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন গত জুলাই-আগস্টজুড়ে এক রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ থেকে কর্তৃত্ববাদী স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারকে বিতরণ করা হয়েছে। বৈষম্যহীন সমাজের আকাক্সক্ষা লাখো মানুষ এই গণআন্দোলনে শামিল হয়েছিল।
‘মানুষ আশা করেছিল হাসিনার পতনের মধ্য দিয়ে মানুষ একটা নিরাপদ সমাজ পাবে, পাবে স্বস্তির জীবন। কিন্তু গত ৫ আগস্ট, স্বৈরাচার হাসিনার পতনের পর দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা হওয়ার প্রত্যাশা থাকলেও বারবার আমাদের আশা ভঙ্গ ঘটেছে। সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে।’
ছাত্রফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রায়হান বলেন, ‘অভ্যুত্থানের পরপরই বিভিন্ন মসজিদ, মন্দির, মাজারে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়েছে। মব সন্ত্রাসের নামে মানুষকে পিটিয়ে হত্যা, পাওনা টাকার দাবিতে আন্দোলনরত
শ্রমিকদের হত্যা, রাজনৈতিক কর্মীদের হত্যা, চট্টগ্রাম কোর্ট প্রাঙ্গণে আইনজীবী হত্যাসহ কোনো অপরাধের বিচার করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সমর্থ হয় নাই।
‘সরকারের ব্যর্থতা এবং বিচারহীনতার দীর্ঘ ইতিহাস অপরাধীদের অপরাধ সংঘটিত করতে উৎসাহ জুগিয়ে যাচ্ছে। সারাদেশে অব্যাহত ধর্ষণ, নারী নিপীড়ন, হত্যাকাণ্ড বন্ধে সরকার কার্যকর কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারেনি। উলটো স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী নারী নিপীড়নকারী মব সন্ত্রাসীদের পরোক্ষ সমর্থন অপরাধীদের মনোবল দৃঢ় করেছে।’
রায়হান আরও বলেছেন, পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের আমলে নানা গুম, খুন, ধর্ষণের বিচার করার সুযোগ এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ছিল এবং এখনও আছে।
‘সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড, তনু হত্যাকাণ্ড, আফসানা হত্যাকাণ্ড, নুসরাত হত্যাকাণ্ড, মুনিয়া হত্যাকাণ্ড, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী দ্বারা নোয়াখালীতে ধর্ষণ, হিন্দু ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের ঘরবাড়িতে হামলা-লুটপাট, শ্রমিক হত্যার বিচার না করে এই সরকার স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের দীর্ঘ বিচারহীনতাকেই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
মাগুরায় ধর্ষণের শিকার হওয়া আট বছরের শিশুর মৃত্যুর মতো ঘটনা দেশে প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে মন্তব্য করে রায়হান বলেন, ‘বরগুনায় কিশোরী ধর্ষণ, বিচার চাওয়ায় কিশোরীর বাবাকে হত্যা করা হয়েছে। সরকার ধর্ষকদের বিচার করতে না পারলেও, ধর্ষণের প্রতিবাদে আন্দোলনকারী ওপর খড়গৃহস্ত হয়েছে। পুলিশ দিয়ে হামলা করে পরবর্তীতে তাদের নামেই মামলা দায়ের করা হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্রমাগত অভ্যুত্থানের চেতনা থেকে বিচ্যুত হচ্ছে।’
ছাত্রফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রায়হান এরপর সাত দফা দাবি তুলে ধরেন। এগুলো হলো- আছিয়াসহ সব হত্যা, ধর্ষণ, নিপীড়নের বিচার করতে হবে; ব্যর্থ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে অপসারণ করতে হবে; গত জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে হবে; মসজিদ, মন্দির, মাজারে হামলাকারী মব সন্ত্রাসীদের বিচার করতে হবে; চট্টগ্রাম কোর্ট প্রাঙ্গণে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ, যৌথবাহিনী দ্বারা শ্রমিক হত্যার বিচার করতে হবে; সাগর-রুনি, তনু, আফসানা, মুনিয়াসহ পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ আমলে সংঘটিত হত্যার বিচার করতে হবে এবং হিন্দু ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের ঘরবাড়িতে হামলা, লুটপাটের বিচার করতে হবে।
সমাবেশে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মুক্তা বাড়ৈ বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানকে সফল করার জন্য এই নারীদের ভূমিকাই ছিল সবচেয়ে অগ্রগণ্য। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করছি গত ৫ তারিখের পরে একটা মহল আমার ওড়না ঠিক আছে কিনা, ঠিকমতো হাঁটছি কিনা, কী খেতে পারব, কেমন করে চলব সবকিছু নির্ধারণ করে দিতে চান। মানুষ হিসেবে গণ্য করতে চান না। কোনো জড়বস্তু বা পণ্য হিসেবে দেখতে চান তারা নারীকে। সেই দৃষ্টিভঙ্গির বিরুদ্ধে আমরা এখানে দাঁড়িয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা দেখেছি তনুকে ক্যান্টনমেন্টের মধ্যে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে, সেই হত্যার বিচার হয়নি। আমরা দেখেছি ধনাঢ্যর ছেলে ওই আনভীর, তার দ্বারা কীভাবে মুনিয়াকে ভুক্তভোগী করে তাকে হত্যা করা হয়েছে, বিচার হয়নি। আমাদের বোন সেই নুসরাতকে কীভাবে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে, সেই হত্যাকাণ্ডে বিচার আমরা পাইনি। এ রকম করতে করতে অসংখ্য নজির, গবেষণা বলছে প্রতি ১০ মিনিটে নাকি একটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে, এ জন্যই কি আমরা নারীরা নেমেছিলাম?
‘আমরা বলতে চাই শাসক যায়, শাসক আসে, চেহারা বদলায় না। আমরা চেহারার বদল চাই। আমাদের দেশে যেন আর একটি নারী, একটি শিশু এ ধরনের দানবীয় হত্যাকাণ্ড, ধর্ষণের শিকার না হয়।’
মুক্তা বাড়ৈ বলেন, ‘গত ৫ তারিখের পর মব সন্ত্রাসের মাধ্যমে মানুষকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। দেশে যেন আইন, নাই, বিচার নাই, যেন শাসন ব্যবস্থার কিছুই নেই। একটা সরকার যে আছে তার নমুনা আমরা দেখতে পাচ্ছি না। সরকার আছে, গণঅভ্যুত্থানের ম্যান্ডেট নিয়ে আপনারা ক্ষমতায় এসেছেন, সেটি স্মরণ করিয়ে দিতে আমরা এখানে দাঁড়িয়েছি।’
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ-বিসিএল সভাপতি গৌতম চন্দ্র শীল বলেন, ‘আমরা দীর্ঘ লড়াই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা সরকারকে উৎখাত করেছিলাম। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করছি এখনও সারাদেশে হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, নিপীড়ন, লুটতরাজ চলছে। মব জাস্টিসের নামে সারাদেশে লুটপাট, নৈরাজ্য চলছে।’
‘সরকার ডেভিল হান্ট পরিচালনা করে কোনো মব সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি। আমরা লক্ষ্য করছি, ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের সময়ে যেসব অসাধু, লুটেরা ব্যবসায়ী লুটপাট, টাকা পাচার, হত্যা, ধর্ষণ, দখলদারিত্বের সঙ্গে জড়িত ছিল, অবৈধ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে, জুলাই অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে গিয়ে হাসিনার সঙ্গে হাত মিলিয়েছে, তারা গ্রেপ্তার হচ্ছে না। তাদের সঙ্গে বর্তমান সরকারের লোকজনদের অবৈধ আর্থিক লেনদেনের গুঞ্জনও শোনা যাচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা গত ৭ মাসে বর্তমান সরকারের রাষ্ট্র পরিচালনায় কোনো সফলতা দেখিনি। তাই কালক্ষেপণ না করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাসহ অযোগ্য উপদেষ্টাদের এবং অযোগ্য আমলাদের সরিয়ে দিন এবং একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দিয়ে বিদায় নিন। অন্যথায় বিগত ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের চেয়েও আপনাদের পরিনতি ভয়াবহ হবে।’