২০২৪ সালে খুলনা মেডিকেলের ওসিসিতে ভর্তি হন ৭৮৮ রোগী। এর মধ্যে যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণের শিকার ২২৮ জনের মধ্যে ১৭০ জনই শিশু। আর ২০২৫ সালের ১৮ মার্চ পর্যন্ত ধর্ষণের শিকার ৪৪ জনের মধ্যে ৩২ শিশু
খুলনায় নারী ও শিশু নির্যাতনের পাশাপাশি আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে ধর্ষণের ঘটনা। প্রতি বছর এ বিভাগে গড়ে প্রায় ৮০০ নারী ও শিশু নির্যাতনের শিকার হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।
এসব ঘটনায় খুলনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের তিন আদালতে এক হাজার ৫৯৮টি মামলা চলছে। এর মধ্যে শিশু নির্যাতন ও হত্যার মতো ঘটনাও রয়েছে। তবে মামলায় দৃষ্টান্তমূলক সাজা না থাকায় অপরাধীরা পার পেয়ে যাচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের তথ্যমতে, গত ১৪ মার্চ দুপুরে খুলনা নগরের ৭ নম্বর ঘাট এলাকায় বয়স্ক এক ব্যক্তি রিকশার মধ্যে এক শিশুকে যৌন নির্যাতন করেন। মোবাইলে ধারণ করা ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনা সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় খালিশপুর থানায় মামলা করেন শিশুটির মা। পরবর্তীতে ১৭ মার্চ অভিযুক্ত কালু শেখকে (৬৫) আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বদৌলতে আইনের আওতায় এলেও এমন ঘটনা ঘটছে হরহামেশাই।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তথ্যমতে, প্রতি বছর বিভাগের ৮০০ নারী ও শিশু বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনে শিকার হয়ে হাসপাতালে ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের ভর্তি হন। যার বড় একটি অংশ ধর্ষণের শিকার। ২০২৩ সালে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন ৭০৮ রোগী। এর মধ্যে শারীরিক নির্যাতনের শিকার ৪৮৮ জন এবং যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণ শিকার ২১৪ জন। এর মধ্যে ১৫৫ জনই শিশু।
২০২৪ সালে ভর্তি হন ৭৮৮ রোগী। এর মধ্যে শারীরিক নির্যাতনের শিকার ৫৫৯ জন এবং যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণের শিকার ২২৮ জনের মধ্যে ১৭০ জনই শিশু। আর ২০২৫ সালের ১৮ মার্চ পর্যন্ত ভর্তি হন ১৫৫ জন। এর মধ্যে শারীরিক নির্যাতনের শিকার ১১১ জন ও ধর্ষণের শিকার ৪৪ জনের মধ্যে ৩২ শিশু।
পরিসংখ্যান বলছে, খুলনা বিভাগে গড়ে প্রতিদিন একজন নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হন। ২০২৩ সাল থেকে এখন পর্যন্ত খুলনা বিভাগে যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণের শিকার হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে ৩৫৭টি শিশু।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের কো-অর্ডিনেটর ডা. শামীম হাসান বলেন, বিভাগের সব জেলার
রোগী এই হাসপাতালেই আসেন। এখানে শারীরিক ও যৌন নির্যাতন, ধর্ষণ ও নির্যাতনে পোড়া রোগীদের চিকিৎসার পাশাপাশি আইনি সহায়তা দেয়া হয়।
তিনি বলেন, গত কয়েক বছর ধর্ষণের শিকার হওয়া রোগীদের মধ্যে শিশুদের সংখ্যা বেশি। এখানে মেডিকেল পরীক্ষার পাশাপাশি ডিএনএ সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। অনেক সময় ডিএনএর রিপোর্ট পেতে সময় লাগে। তবে রিপোর্ট দ্রুত পাওয়া গেলে বিচারিক কাজে সুবিধা হতো।
এদিকে খুলনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের তিন আদালতে মামলা রয়েছে এক হাজার ৫৯৮টি। এর মধ্যে নির্যাতন, ধর্ষণ ও হত্যার মতো ঘটনাও রয়েছে। আদালতের নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, ধর্ষণ সংক্রান্ত মামলার ভুক্তভোগীদের বেশিরভাগই শিশু।
নারী-শিশুদের সুরক্ষা নিয়ে কাজ করা সংগঠন ও আইনজীবীরা বলছেন, শিশুদের সহজে প্রলোভন, পারিবারিক অসচেতনতা, ধর্মীয় ও সামাজিক নৈতিকতার অবক্ষয়, প্রভাবশালীদের চাপ, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়াসহ বিভিন্ন কারণে কমছে না এ ধরনের অপরাধ।
খুলনা সম্মিলিত নারী অধিকার সুরক্ষা ফোরামের সদস্য সচিব সুতপা বেদজ্ঞ বলেন, আমরা মনে করি এটা সমাজ ও পরিবারের নৈতিক অবক্ষয়ের কারণে হচ্ছে। এছাড়া একটি ঘটনারও দৃষ্টান্তমূলক সাজা আমরা দেখি না। তার জন্যই অপরাধীরা পার পেয়ে যাচ্ছে। তারা সাহস পাচ্ছে। একের পর এক ঘটনা ঘটাচ্ছে।
খুলনা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট হালিমা আক্তার খানম বলেন, শাস্তির নিশ্চয়তা আমরা শত ভাগ দিতে পারছি না। দুর্বলতা, পারিপার্শ্বিকতা, পারিবারিক এবং বিভিন্ন মহলের চাপের কারণে সাক্ষীরা সঠিক সাক্ষ্য দিচ্ছেন না। কিছু কিছু মামলা টাকার বিনিময়ে আপস করছে। সাক্ষীরা হুমকির সম্মুখীন হচ্ছেন। যে কারণে বিচারটা নিশ্চিত হচ্ছে না।
সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, সামাজিক অপরাধপ্রবণতা রুখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক প্রতিরোধও দরকার। এই ক্ষেত্রে সামাজিক অস্থিরতা ও অসহিষ্ণুতার কারণ অনুসন্ধান এবং তা দূরীকরণে পদক্ষেপ নেয়া দরকার। দরকার পারিবারিক, সামাজিক ক্ষেত্রে মানবিক মূল্যবোধের চর্চা। সুস্থ মানস গঠনে সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকা-ে যুক্ত করার ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার এমএম শাকিলুজ্জামান বলেন, পুলিশ এসব অপরাধের বিরুদ্ধে সব সময়ই কাজ করছে। তবে পরিবার সবকিছুর কেন্দ্র। আপনার সন্তান কীভাবে বেড়ে উঠছে, কোন পরিসরে বেড়ে উঠছে, এটি আপনাকে লক্ষ্য করতে হবে। সন্তান কার কাছে থাকছে, কোথায় যাচ্ছে, পরিবারের যারা অভিভাবক আছেন, বাবা-মা আছেন, তাদের সচেতন হতে হবে। তাকে শৈশবে অনেক কিছু শিখিয়ে দিতে হবে -যেমন গুড টাচ, ব্যাড টাচ, কোথায় সতর্ক হতে হবে। এক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে।
২০২৪ সালে খুলনা মেডিকেলের ওসিসিতে ভর্তি হন ৭৮৮ রোগী। এর মধ্যে যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণের শিকার ২২৮ জনের মধ্যে ১৭০ জনই শিশু। আর ২০২৫ সালের ১৮ মার্চ পর্যন্ত ধর্ষণের শিকার ৪৪ জনের মধ্যে ৩২ শিশু
মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ ২০২৫
খুলনায় নারী ও শিশু নির্যাতনের পাশাপাশি আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে ধর্ষণের ঘটনা। প্রতি বছর এ বিভাগে গড়ে প্রায় ৮০০ নারী ও শিশু নির্যাতনের শিকার হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।
এসব ঘটনায় খুলনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের তিন আদালতে এক হাজার ৫৯৮টি মামলা চলছে। এর মধ্যে শিশু নির্যাতন ও হত্যার মতো ঘটনাও রয়েছে। তবে মামলায় দৃষ্টান্তমূলক সাজা না থাকায় অপরাধীরা পার পেয়ে যাচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের তথ্যমতে, গত ১৪ মার্চ দুপুরে খুলনা নগরের ৭ নম্বর ঘাট এলাকায় বয়স্ক এক ব্যক্তি রিকশার মধ্যে এক শিশুকে যৌন নির্যাতন করেন। মোবাইলে ধারণ করা ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনা সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় খালিশপুর থানায় মামলা করেন শিশুটির মা। পরবর্তীতে ১৭ মার্চ অভিযুক্ত কালু শেখকে (৬৫) আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বদৌলতে আইনের আওতায় এলেও এমন ঘটনা ঘটছে হরহামেশাই।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তথ্যমতে, প্রতি বছর বিভাগের ৮০০ নারী ও শিশু বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনে শিকার হয়ে হাসপাতালে ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের ভর্তি হন। যার বড় একটি অংশ ধর্ষণের শিকার। ২০২৩ সালে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন ৭০৮ রোগী। এর মধ্যে শারীরিক নির্যাতনের শিকার ৪৮৮ জন এবং যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণ শিকার ২১৪ জন। এর মধ্যে ১৫৫ জনই শিশু।
২০২৪ সালে ভর্তি হন ৭৮৮ রোগী। এর মধ্যে শারীরিক নির্যাতনের শিকার ৫৫৯ জন এবং যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণের শিকার ২২৮ জনের মধ্যে ১৭০ জনই শিশু। আর ২০২৫ সালের ১৮ মার্চ পর্যন্ত ভর্তি হন ১৫৫ জন। এর মধ্যে শারীরিক নির্যাতনের শিকার ১১১ জন ও ধর্ষণের শিকার ৪৪ জনের মধ্যে ৩২ শিশু।
পরিসংখ্যান বলছে, খুলনা বিভাগে গড়ে প্রতিদিন একজন নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হন। ২০২৩ সাল থেকে এখন পর্যন্ত খুলনা বিভাগে যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণের শিকার হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে ৩৫৭টি শিশু।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের কো-অর্ডিনেটর ডা. শামীম হাসান বলেন, বিভাগের সব জেলার
রোগী এই হাসপাতালেই আসেন। এখানে শারীরিক ও যৌন নির্যাতন, ধর্ষণ ও নির্যাতনে পোড়া রোগীদের চিকিৎসার পাশাপাশি আইনি সহায়তা দেয়া হয়।
তিনি বলেন, গত কয়েক বছর ধর্ষণের শিকার হওয়া রোগীদের মধ্যে শিশুদের সংখ্যা বেশি। এখানে মেডিকেল পরীক্ষার পাশাপাশি ডিএনএ সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। অনেক সময় ডিএনএর রিপোর্ট পেতে সময় লাগে। তবে রিপোর্ট দ্রুত পাওয়া গেলে বিচারিক কাজে সুবিধা হতো।
এদিকে খুলনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের তিন আদালতে মামলা রয়েছে এক হাজার ৫৯৮টি। এর মধ্যে নির্যাতন, ধর্ষণ ও হত্যার মতো ঘটনাও রয়েছে। আদালতের নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, ধর্ষণ সংক্রান্ত মামলার ভুক্তভোগীদের বেশিরভাগই শিশু।
নারী-শিশুদের সুরক্ষা নিয়ে কাজ করা সংগঠন ও আইনজীবীরা বলছেন, শিশুদের সহজে প্রলোভন, পারিবারিক অসচেতনতা, ধর্মীয় ও সামাজিক নৈতিকতার অবক্ষয়, প্রভাবশালীদের চাপ, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়াসহ বিভিন্ন কারণে কমছে না এ ধরনের অপরাধ।
খুলনা সম্মিলিত নারী অধিকার সুরক্ষা ফোরামের সদস্য সচিব সুতপা বেদজ্ঞ বলেন, আমরা মনে করি এটা সমাজ ও পরিবারের নৈতিক অবক্ষয়ের কারণে হচ্ছে। এছাড়া একটি ঘটনারও দৃষ্টান্তমূলক সাজা আমরা দেখি না। তার জন্যই অপরাধীরা পার পেয়ে যাচ্ছে। তারা সাহস পাচ্ছে। একের পর এক ঘটনা ঘটাচ্ছে।
খুলনা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট হালিমা আক্তার খানম বলেন, শাস্তির নিশ্চয়তা আমরা শত ভাগ দিতে পারছি না। দুর্বলতা, পারিপার্শ্বিকতা, পারিবারিক এবং বিভিন্ন মহলের চাপের কারণে সাক্ষীরা সঠিক সাক্ষ্য দিচ্ছেন না। কিছু কিছু মামলা টাকার বিনিময়ে আপস করছে। সাক্ষীরা হুমকির সম্মুখীন হচ্ছেন। যে কারণে বিচারটা নিশ্চিত হচ্ছে না।
সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, সামাজিক অপরাধপ্রবণতা রুখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক প্রতিরোধও দরকার। এই ক্ষেত্রে সামাজিক অস্থিরতা ও অসহিষ্ণুতার কারণ অনুসন্ধান এবং তা দূরীকরণে পদক্ষেপ নেয়া দরকার। দরকার পারিবারিক, সামাজিক ক্ষেত্রে মানবিক মূল্যবোধের চর্চা। সুস্থ মানস গঠনে সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকা-ে যুক্ত করার ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার এমএম শাকিলুজ্জামান বলেন, পুলিশ এসব অপরাধের বিরুদ্ধে সব সময়ই কাজ করছে। তবে পরিবার সবকিছুর কেন্দ্র। আপনার সন্তান কীভাবে বেড়ে উঠছে, কোন পরিসরে বেড়ে উঠছে, এটি আপনাকে লক্ষ্য করতে হবে। সন্তান কার কাছে থাকছে, কোথায় যাচ্ছে, পরিবারের যারা অভিভাবক আছেন, বাবা-মা আছেন, তাদের সচেতন হতে হবে। তাকে শৈশবে অনেক কিছু শিখিয়ে দিতে হবে -যেমন গুড টাচ, ব্যাড টাচ, কোথায় সতর্ক হতে হবে। এক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে।