জঙ্গি হামলা চালিয়ে ভারতের কাশ্মীরে পর্যটকদের হত্যার ঘটনার পর থেকে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা ক্রমেই বাড়ছে।

গত মঙ্গলবার ভারতের কাশ্মীরের পর্যটনকেন্দ্র পেহেলগামে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে ২ বিদেশিসহ ২৬ জনকে হত্যা করা হয়। পরে রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট নামে একটি সংগঠন এই হত্যার দায় স্বীকার করে।

এরপরই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এই অঞ্চলে জঙ্গি কার্যক্রমে মদদ দেয়ার অভিযোগ তোলে ভারত। পাকিস্তান তা অস্বীকার করে।

নারকীয় এই হত্যাকা-ের প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক সীমিত করে ভারত। সীমান্ত যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। পাকিস্তানি নাগরিকদের ভিসা বন্ধ করে দেয়। সেই সঙ্গে পাকিস্তানের সঙ্গে প্রথমবারের মতো হওয়া পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত ঘোষণা করা ভারতের পক্ষ থেকে। এর প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানও ভারতীয় নাগরিকদের ভিসা বন্ধসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ ঘোষণা করে।

কাশ্মীরে জঙ্গি সমস্যা পুরনো। এখানে বেশ কিছু জঙ্গি সংগঠন ভারত থেকে কাশ্মীরকে বিচ্ছিন্ন করতে চায়। আরও কিছু আছে যারা কাশ্মীরকে পাকিস্তানের অংশ বানাতে চায়। দীর্ঘদিন ধরেই এদের সঙ্গে লড়াই করছে ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনী।

পেহেলগামের জঙ্গি হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গত বৃহস্পতিবার বিহারে দেয়া একটি বক্তৃতায় ঘোষণা দিয়েছেন, হামলাকারীরা পৃথিবীর যে প্রান্তেই যাক না কেন, তাদেরকে ধরা হবে।

তিনি বলেন, আমি এই বিহারে দাঁড়িয়ে পুরো বিশ্বকে বলতে চাই, ভারতে এই সন্ত্রাসী ও তার পৃষ্ঠপোষকদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে বিচার নিশ্চিত করবে।

তিনি আরও বলেন, সন্ত্রাসী হামলা করে কেউ ভারতের মনোবল ভাঙতে পারবে না। সন্ত্রাসীরা শাস্তির হাত থেকে রেহাই পাবে না। বিচার নিশ্চিতের জন্য যা কিছু করার দরকার করা হবে। এই প্রশ্নে গোটা জাতি

ঐক্যবদ্ধ। পেহেলগামে হামলার পর ভারত নামোল্লেখ করে সুনির্দিষ্ট কোনো গোষ্ঠী বা দেশকে দায়ী করেনি। তবে এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় সবগুলো পদক্ষেপই নিয়েছে পাকিস্তানকে লক্ষ্য করে।

ভারতের বক্তব্য, পাকিস্তানই সীমান্তের ওপার থেকে এসব জঙ্গিদের মদত দিয়ে আসছে।

পাকিস্তান সীমান্ত ও পাকিস্তানিদের ভিসা বন্ধ করে দেয়ার পাশাপাশি পাকিস্তানের দূতাবাস থেকে তাদের সামরিক উপদেষ্টাদেরও ভারত থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

এছাড়া যে পানি চুক্তিটি বাতিল করেছে, সেটি উভয় দেশের কূটনৈতিক ক্ষেত্রে বড় সাফল্য হিসেবে দেখা হতো। ১৯৬০ সালে হয়েছিল এই চুক্তি। সেটি বাতিলের সিদ্ধান্তকে কড়া ভাষায় নিন্দা জানিয়েছে পাকিস্তান।

তিব্বত থেকে উৎপন্ন সিন্ধু নদ ভারতের কাশ্মীরের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পাকিস্তানে যায়। এই চুক্তির কারণেই পানি পেতো পাকিস্তান।

উভয় দেশের জন্যই এই পানি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখন সেই চুক্তি বাতিলের প্রভাব পড়বে পাকিস্তানের অর্থনীতির ওপর।

সেই কারণেই ভারতের এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ পাকিস্তান। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানও ভারতীয় ?কূটনীতিকদের বহিষ্কার, ভারতের সঙ্গে যে কোনো ধরনের বাণিজ্য এবং ভারতের জন্য পাকিস্তানের আকাশপথ বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

ভারতের পদক্ষেপসমূহকে ‘একতরফা, অন্যায্য, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, চূড়ান্ত দায়িত্বজ্ঞানহীন ও আইনগতভাবে পুরোপুরি ভিত্তিহীন’ বলে অভিহিত করেছে পাকিস্তান। পাকিস্তান বলেছে, পাকিস্তানে পানি প্রবাহ বন্ধ বা পানি প্রবাহ বদলে দেয়ার যে কোনো ধরনের চেষ্টা যুদ্ধ ঘোষণার শামিল।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ইসহাক দার বলেছেন, ভারত সবসময়ই এই দোষারোপের খেলা খেলে আসছে। তাদের কাছে প্রমাণ থাকলে দিক।

এই পরিস্থিতিতে কী ঘটবে তা নিয়ে এক ধরনের উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে অনেক জায়গাতেই।

কী অবস্থা কাশ্মীরে?

পর্যটকদের ওপর হামলার তাৎক্ষণিক প্রভাব পড়েছে কাশ্মীরের পর্যটনে। ভূস্বর্গ হিসেবে পরিচিত কাশ্মীরের আয়ের একটি বড় উৎস পর্যটন।

কিন্তু হামলার পর পর্যটকশূন্য হয়ে পড়েছে। ফলে পর্যটনসংশ্লিষ্ট অনেকেই রাস্তায় নেমেছে।

এদিকে গত মঙ্গলবারের হামলার প্রতিবাদে দিল্লীসহ ভারতের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ হয়েছে।

উদ্ভুত পরিস্থিতিতে জম্মু ও কাশ্মীরের মূখ্যমন্ত্রী উমর আব্দুলাহর নেতৃত্বে সর্বদলীয় বৈঠক হয়েছে কাশ্মীরে। বৈঠকে পেহেলগাম হামলায় নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে দুই মিনিটের নিরবতা পালন করেছেন।

ওমর আব্দুল্লাহ সন্ত্রাসী হামলায় হতাহতের ঘটনাকে জাতির জন্য শোক ও সংহতির সুযোগ হিসেবে অভিহিত করেছেন।

তিন হামলাকারী চিহ্নিত, দাবি পুলিশের

হামলার ঘটনা তদন্তে নিয়োজিত পুলিশরা জানিয়েছে, ইতোমধ্যেই তিনজন হামলাকারীকে শনাক্ত করা গেছে। তাদের দাবি, এদের মধ্যে দুইজন পাকিস্তানি।