alt

জাতীয়

তলানিতে শেয়ারবাজার, ছয় মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে ডিএসইর সূচক

রেজাউল করিম : শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫

দিনের পর দিন তলানিতে নেমে যাচ্ছে দেশের শেয়ারবাজার। লেনদেনের শুরুতে কিছুটা উঠলেও দিনের শেষে পতনের খাতায় নাম লেখায়। তবে কেন এমন ধারাবাহিক পতন তার কোনো কারণ বলতে পারছেন না কেউই। যেন অজানা কোনো কারণে নেমে যাচ্ছে তলানিতে। কোনো উপায় না দেখে রাগে-ক্ষোভে রাস্তায় নেমেছেন বিনিয়োগকারীরা। পতন ঠেকাতে সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার অনুরোধ করছেন তারা।

টানা নয় দিনের পতনের পর সপ্তাহের শেষ দিন গতকাল বৃহস্পতিবার দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৫০ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার পয়েন্টের নিচে ৪ হাজার ৯৭২ দশমিক ৫৯ পয়েন্টে নেমে এসেছে। এই সূচক গত ছয় মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম। এর আগে এক দিনে ১৪৯ পয়েন্ট হারিয়ে ৫ হাজারের নিচে সূচক নামে গত বছরের ২৭ অক্টোবর। সেদিন ডিএসইএক্স ছিল ৪ হাজার ৯৬৫ পয়েন্টে।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিএসইসি চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলাম পদত্যাগ করেন। এরপর পুঁজিবাজার সংস্কারের উদ্যোগে নানা নাটকীয়তার পর খন্দকার রাশেদ মাকসুদকে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেয়া হয়। এরপর গত আট মাসে ডিএসইএক্স সূচক ১ হাজার পয়েন্টের বেশি কমেছে।

এই বিষয়ে শুক্রবার, (২৫ এপ্রিল) কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ আবু আহমেদের সঙ্গে। শেয়ারবাজারের পতনের জন্য তিনি কিছু কারণ উল্লেখ করেন। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘নির্দিষ্ট করে বলা না গেলেও শেয়ারবাজারের পতনের বেশ কিছু কারণ থাকতে পারে। যেমন, শেয়ারবাজারে তারল্য সংকট রয়েছে। আগে ব্যাংকের সুদের হার কম ছিল। মানুষ তখন শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতেন। এখন সুদের হার বাড়ানো হয়েছে। অনেকে এখন শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ না করে ব্যাংকে টাকা জমা রাখেন। বন্ডের সুদ বাড়ানো হয়েছে। শেয়ারবাজার ছেড়ে সেখানেও অনেকে বিনিয়োগ করছেন। তাছাড়া, আজ থেকে ১৫ বছর আগে প্রায় সব লিজিং কোম্পানি ভালো করছিল, ব্যাংকগুলো ভালো করছিল, মিউচুয়্যাল ফান্ডগুলো ভালো করছিল। এখন এসব প্রতিষ্ঠানের ওপর মানুষের আস্থা উঠে গেছে। তারা এখন শেয়ারবাজারবিমুখ হচ্ছেন। এটাও বাজারের পতনের জন্য দায়ী।’

ডিএসই এর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত বছর জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে ডিএসইএক্স সূচক তলানিতে নামে। জুনের ১১ তারিখে সূচকের অবস্থান ছিল ৫০৭০ পয়েন্ট। এরপরের মাসে কিছুটা বেড়ে জুলাইয়ের ৯ তারিখে দাঁড়ায় ৫৫৯৪ পয়েন্টে। এরপর গত আগস্ট মাসে আবার কিছুটা পতন হয়ে আবার উত্থান হয়। আগস্টের ৪ তারিখে সূচকের অবস্থান ছিল ৫২২৯ পয়েন্টে এবং ১১ তারিখে বড় লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ায় ৬০১৫ পয়েন্টে। মূলত, ছাত্র-জনতা অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের কারণে এই উত্থান হয়েছিল।

এরপর আবার কিছুটা পতন হয়। গত অক্টোবরের ২৮ তারিখে বড় পতন হয়ে সূচক নেমে যায় ৪৮৯৮ পয়েন্টে। পরের মাস নভেম্বরে আবার কিছুটা বেড়ে দাঁড়ায় ৫৩৬৫ পয়েন্টে। এরপর থেকে ধারাবাহিক পতন চলতে থাকে শেয়ারবাজারে। সর্বশেষ গতকাল বৃহস্পতিবার ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমে দাঁড়ায় ৪৯৭২ পয়েন্টে। অর্থাৎ আগস্টে যে সূচক ছয় হাজার ছাড়িয়ে যায় সেই সূচক আট মাসের ব্যবধানে এক হাজার পয়েন্ট কমে যায়।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর ১৩ আগস্ট পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজকে বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তার ওই নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক ওঠে। ফেইসবুকে অনেকেই ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা, পুঁজিবাজারের আলোচিত নাম সালমান এফ রহমানের সঙ্গে মাসরুরের সম্পর্ক থাকার কথা তোলেন। দু’জনের ঘনিষ্ঠতার নজির হিসেবে তাদের ছবিও দেন কেউ কেউ। এরপর বিএসইসির কর্মকর্তাদের একাংশ মাসরুর রিয়াজের নিয়োগ নিয়ে আপত্তি তোলেন। সেই আপত্তির মুখে নতুন কর্মস্থলে যোগদান করেননি তিনি।

এর মধ্যে গত ১৪ আগস্টই অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের ওয়েবসাইট থেকে মাসরুরের নিয়োগের প্রজ্ঞাপনটি সরিয়ে ফেলা হয়। এই পরিস্থিতিতে গত ১৮ আগস্ট খন্দকার রাশেদ মাকসুদকে বিএসইসির নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দিয়ে নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।

পুঁজিবাজারের লেনদেন কমে গেলে তাতে বিনিয়োগকারীরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হন, তেমনি স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে শুরু করে ব্রোকারেজ হাউস, মার্চেন্ট ব্যাংকসহ বাজারের অংশীজনেরাও বড় লোকসানের মুখে পড়েন। ২০১০ সালের বড় ধসের পর থেকে পুঁজিবাজারের এমন পরিস্থিতিই চলছে। মাঝে মধ্যে অবশ্য কিছুটা উত্থান দেখা গেলেও সেটি স্থায়ী হয় না। এর কারণে হঠাৎ আশার ঝিলিক দেখা গেলেও আবার হতাশার মুখোমুখি হতে হয় বিনিয়োগকারীদের।

বাজার অংশীজন থেকে শুরু করে বিনিয়োগকারী সবারই এখন একটাই বক্তব্য- কেউ ভালো নেই। কারণ, শেয়ারের অব্যাহত দরপতনে সবাই বড় অঙ্কের পুঁজি হারিয়েছেন। বাজার অংশীজনেরা বলছেন, সরকার বদলের পর পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির নেতৃত্বের বদল হলেও বাজারে কোনো আশার আলো দেখা যায়নি। বিদ্যমান সংকটেরও যেন কোনো সমাধান নেই। যে কারণে বাজার কেবলই দরপতনের একই বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে। তাতে হতাশা বাড়ছে সর্বমহলে। এমন পরিস্থিতিতে গত বুধবার ফের রাস্তায় নামেন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা। রাজধানীর মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংক ও পুরনো ডিএসই ভবনের সামনে বিক্ষোভ করেন তারা।

তবে সাময়িক পতন হলেও শেয়ারবাজার নিয়ে আশাবাদী আবু আহমেদ। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘দেশের অর্থনীতি যেমন যাবে, তেমন যাবে দেশের শেয়ারবাজার। অর্থনীতি যেমন একটা চ্যালেঞ্জিং সময় পার করছে ঠিক তেমনটা করছে শেয়ারবাজারও। যেমন, অন্তর্বর্তী সরকার আগের সরকারের বকেয়া ঋণগুলো এখন শোধ করছে। অর্থাৎ যেসব ডলার আয় হচ্ছে সেগুলো ঋণ শোধ করতে ব্যয় হচ্ছে। এই ব্যয়গুলো কাটিয়ে উঠলে তখন অর্থনীতি চাঙ্গা হবে। আর অর্থনীতি চাঙ্গা হলে তার ইতিবাচক প্রভাব শেয়ারবাজারেও পড়বে।’

পল্লবীতে চালককে হত্যা করে অটো ছিনতাইয়ের ঘটনায় ৫ জন গ্রেপ্তার

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই শিক্ষক ও ছাত্রী সাময়িক বহিষ্কার

ছবি

প্রত্যেক ঋতুতেই উৎসব মনিপুরীদের

ঈদযাত্রায় বাড়তি চাপ, অতিরিক্ত ফ্লাইট চালাবে বিমান

গ্রেপ্তারের ক্ষমতা পেলেন ট্রাইব্যুনালের তদন্তকারী ও প্রসিকিউটর

ছবি

প্রথমবারের মতো কাতারে বাংলাদেশি আমের মেলা

ছবি

পীরগাছায় ৫০০ হেক্টর জমির কৃষি ফসল পানিতে

ছবি

শখের গাছে থোকায় থোকায় লাল, মিষ্টি আঙুর

ইইউর পণ্যে ৫০%, অ্যাপল আইফোনে ২৫% শুল্কের হুমকি ট্রাম্পের

প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগের গুঞ্জন: পোস্ট দিয়ে সরিয়ে নিলেন তৈয়্যব

ছবি

রাজধানীসহ ৫ স্থানে দুর্ঘটনায় নিহত ৭

শুধু নির্বাচন আয়োজনের দায়িত্ব নিইনি, সংস্কার-বিচারও দায়িত্ব:উপদেষ্টা রিজওয়ানা

চার দফা দাবিতে অটল এনবিআর ঐক্য পরিষদ

গুজবে বিভ্রান্ত না হতে সেনাবাহিনীর আহ্বান

বেচা-বিক্রি ‘একদমই কম’ নিত্যপণ্যের বাজারে

ছবি

‘হতাশ-ক্ষুব্ধ’ প্রধান উপদেষ্টা, ‘পদত্যাগ’ নিয়ে আলোচনা

ছবি

রাজনৈতিক সংকটে ইউনূসের পদত্যাগ বিবেচনায়: নাহিদের সঙ্গে বৈঠকে ইঙ্গিত

ছবি

কোন কোন এলাকায় ঝড়-বৃষ্টি হতে পারে, জানাল আবহাওয়া অফিস

ছবি

সংস্কার ও বিচার কার্যক্রমে অন্তর্বর্তী সরকার বাধার মুখে পড়েছে: রিজওয়ানা হাসান

ছবি

সরকারি দিনমজুরের মজুরি বাড়ল, ঢাকায় দৈনিক ৮০০ টাকা

ছবি

চ্যালেঞ্জের মধ্যে দিয়েই কাজ করছি: অর্থ উপদেষ্টা

ছবি

ভুয়া প্রেস বিজ্ঞপ্তি ‘স্বার্থান্বেষী মহলের অপচেষ্টা’, গুজবে বিভ্রান্ত না হতে সেনাবাহিনীর আহ্বান

ঈদুল আজহা : ট্রেনের ২ জুনের টিকেট বিক্রি আজ

ছবি

মুহাম্মদ ইউনূস ‘পদত্যাগের বিষয়ে ভাবছেন’: নাহিদ ইসলাম

ছবি

কলকাতা মিশনে কোরবানি নিয়ে বিতর্ক, কুটনীতিক শাবাবকে দেশে ফেরার নির্দেশ

ছবি

আওয়ামী লীগ সমর্থকদের দমনে ইউনূস সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ হিউম্যান রাইটস ওয়াচের

ছবি

আশ্রয়প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ, অপপ্রচারে সতর্ক থাকার আহ্বান সেনাবাহিনীর

ছবি

জসীম উদ্দিনের স্থলাভিষিক্ত রুহুল আলম, কার্যকর শুক্রবার থেকে

‘মব’ সামলে পুরস্কৃত ধানমন্ডির ওসি

সংশোধিত সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের প্রস্তাব অনুমোদন

হলফনামায় ‘তথ্য গোপন’ : হাসিনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ইসিকে দুদকের চিঠি

সাবেক এনএসআই ডিজির সম্পদ ‘স্থানান্তরচেষ্টা’, এনবিআর সদস্যসহ দুইজনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

ছবি

রাজবাড়ীর ‘রাজা’র দাম ৮ লাখ টাকা, ওজন ২০ মণ

ছবি

কুয়েট: শিক্ষক আন্দোলনের মুখে অন্তর্বর্তী উপাচার্যের পদত্যাগ

ছবি

সাম্য হত্যা: ৭ ঘণ্টা পর শাহবাগ ছাড়লো ছাত্রদল

বেসরকারি স্কুল-কলেজে শিক্ষক নিয়োগে নারী কোটা বাতিল

tab

জাতীয়

তলানিতে শেয়ারবাজার, ছয় মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে ডিএসইর সূচক

রেজাউল করিম

শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫

দিনের পর দিন তলানিতে নেমে যাচ্ছে দেশের শেয়ারবাজার। লেনদেনের শুরুতে কিছুটা উঠলেও দিনের শেষে পতনের খাতায় নাম লেখায়। তবে কেন এমন ধারাবাহিক পতন তার কোনো কারণ বলতে পারছেন না কেউই। যেন অজানা কোনো কারণে নেমে যাচ্ছে তলানিতে। কোনো উপায় না দেখে রাগে-ক্ষোভে রাস্তায় নেমেছেন বিনিয়োগকারীরা। পতন ঠেকাতে সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার অনুরোধ করছেন তারা।

টানা নয় দিনের পতনের পর সপ্তাহের শেষ দিন গতকাল বৃহস্পতিবার দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৫০ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার পয়েন্টের নিচে ৪ হাজার ৯৭২ দশমিক ৫৯ পয়েন্টে নেমে এসেছে। এই সূচক গত ছয় মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম। এর আগে এক দিনে ১৪৯ পয়েন্ট হারিয়ে ৫ হাজারের নিচে সূচক নামে গত বছরের ২৭ অক্টোবর। সেদিন ডিএসইএক্স ছিল ৪ হাজার ৯৬৫ পয়েন্টে।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিএসইসি চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলাম পদত্যাগ করেন। এরপর পুঁজিবাজার সংস্কারের উদ্যোগে নানা নাটকীয়তার পর খন্দকার রাশেদ মাকসুদকে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেয়া হয়। এরপর গত আট মাসে ডিএসইএক্স সূচক ১ হাজার পয়েন্টের বেশি কমেছে।

এই বিষয়ে শুক্রবার, (২৫ এপ্রিল) কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ আবু আহমেদের সঙ্গে। শেয়ারবাজারের পতনের জন্য তিনি কিছু কারণ উল্লেখ করেন। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘নির্দিষ্ট করে বলা না গেলেও শেয়ারবাজারের পতনের বেশ কিছু কারণ থাকতে পারে। যেমন, শেয়ারবাজারে তারল্য সংকট রয়েছে। আগে ব্যাংকের সুদের হার কম ছিল। মানুষ তখন শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতেন। এখন সুদের হার বাড়ানো হয়েছে। অনেকে এখন শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ না করে ব্যাংকে টাকা জমা রাখেন। বন্ডের সুদ বাড়ানো হয়েছে। শেয়ারবাজার ছেড়ে সেখানেও অনেকে বিনিয়োগ করছেন। তাছাড়া, আজ থেকে ১৫ বছর আগে প্রায় সব লিজিং কোম্পানি ভালো করছিল, ব্যাংকগুলো ভালো করছিল, মিউচুয়্যাল ফান্ডগুলো ভালো করছিল। এখন এসব প্রতিষ্ঠানের ওপর মানুষের আস্থা উঠে গেছে। তারা এখন শেয়ারবাজারবিমুখ হচ্ছেন। এটাও বাজারের পতনের জন্য দায়ী।’

ডিএসই এর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত বছর জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে ডিএসইএক্স সূচক তলানিতে নামে। জুনের ১১ তারিখে সূচকের অবস্থান ছিল ৫০৭০ পয়েন্ট। এরপরের মাসে কিছুটা বেড়ে জুলাইয়ের ৯ তারিখে দাঁড়ায় ৫৫৯৪ পয়েন্টে। এরপর গত আগস্ট মাসে আবার কিছুটা পতন হয়ে আবার উত্থান হয়। আগস্টের ৪ তারিখে সূচকের অবস্থান ছিল ৫২২৯ পয়েন্টে এবং ১১ তারিখে বড় লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ায় ৬০১৫ পয়েন্টে। মূলত, ছাত্র-জনতা অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের কারণে এই উত্থান হয়েছিল।

এরপর আবার কিছুটা পতন হয়। গত অক্টোবরের ২৮ তারিখে বড় পতন হয়ে সূচক নেমে যায় ৪৮৯৮ পয়েন্টে। পরের মাস নভেম্বরে আবার কিছুটা বেড়ে দাঁড়ায় ৫৩৬৫ পয়েন্টে। এরপর থেকে ধারাবাহিক পতন চলতে থাকে শেয়ারবাজারে। সর্বশেষ গতকাল বৃহস্পতিবার ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমে দাঁড়ায় ৪৯৭২ পয়েন্টে। অর্থাৎ আগস্টে যে সূচক ছয় হাজার ছাড়িয়ে যায় সেই সূচক আট মাসের ব্যবধানে এক হাজার পয়েন্ট কমে যায়।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর ১৩ আগস্ট পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজকে বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তার ওই নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক ওঠে। ফেইসবুকে অনেকেই ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা, পুঁজিবাজারের আলোচিত নাম সালমান এফ রহমানের সঙ্গে মাসরুরের সম্পর্ক থাকার কথা তোলেন। দু’জনের ঘনিষ্ঠতার নজির হিসেবে তাদের ছবিও দেন কেউ কেউ। এরপর বিএসইসির কর্মকর্তাদের একাংশ মাসরুর রিয়াজের নিয়োগ নিয়ে আপত্তি তোলেন। সেই আপত্তির মুখে নতুন কর্মস্থলে যোগদান করেননি তিনি।

এর মধ্যে গত ১৪ আগস্টই অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের ওয়েবসাইট থেকে মাসরুরের নিয়োগের প্রজ্ঞাপনটি সরিয়ে ফেলা হয়। এই পরিস্থিতিতে গত ১৮ আগস্ট খন্দকার রাশেদ মাকসুদকে বিএসইসির নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দিয়ে নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।

পুঁজিবাজারের লেনদেন কমে গেলে তাতে বিনিয়োগকারীরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হন, তেমনি স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে শুরু করে ব্রোকারেজ হাউস, মার্চেন্ট ব্যাংকসহ বাজারের অংশীজনেরাও বড় লোকসানের মুখে পড়েন। ২০১০ সালের বড় ধসের পর থেকে পুঁজিবাজারের এমন পরিস্থিতিই চলছে। মাঝে মধ্যে অবশ্য কিছুটা উত্থান দেখা গেলেও সেটি স্থায়ী হয় না। এর কারণে হঠাৎ আশার ঝিলিক দেখা গেলেও আবার হতাশার মুখোমুখি হতে হয় বিনিয়োগকারীদের।

বাজার অংশীজন থেকে শুরু করে বিনিয়োগকারী সবারই এখন একটাই বক্তব্য- কেউ ভালো নেই। কারণ, শেয়ারের অব্যাহত দরপতনে সবাই বড় অঙ্কের পুঁজি হারিয়েছেন। বাজার অংশীজনেরা বলছেন, সরকার বদলের পর পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির নেতৃত্বের বদল হলেও বাজারে কোনো আশার আলো দেখা যায়নি। বিদ্যমান সংকটেরও যেন কোনো সমাধান নেই। যে কারণে বাজার কেবলই দরপতনের একই বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে। তাতে হতাশা বাড়ছে সর্বমহলে। এমন পরিস্থিতিতে গত বুধবার ফের রাস্তায় নামেন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা। রাজধানীর মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংক ও পুরনো ডিএসই ভবনের সামনে বিক্ষোভ করেন তারা।

তবে সাময়িক পতন হলেও শেয়ারবাজার নিয়ে আশাবাদী আবু আহমেদ। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘দেশের অর্থনীতি যেমন যাবে, তেমন যাবে দেশের শেয়ারবাজার। অর্থনীতি যেমন একটা চ্যালেঞ্জিং সময় পার করছে ঠিক তেমনটা করছে শেয়ারবাজারও। যেমন, অন্তর্বর্তী সরকার আগের সরকারের বকেয়া ঋণগুলো এখন শোধ করছে। অর্থাৎ যেসব ডলার আয় হচ্ছে সেগুলো ঋণ শোধ করতে ব্যয় হচ্ছে। এই ব্যয়গুলো কাটিয়ে উঠলে তখন অর্থনীতি চাঙ্গা হবে। আর অর্থনীতি চাঙ্গা হলে তার ইতিবাচক প্রভাব শেয়ারবাজারেও পড়বে।’

back to top