alt

জাতীয়

মরু অঞ্চলের দুম্বার খামার করে স্বাবলম্বী ভৈরবের সবুজ

বাকী বিল্লাহ, ঢাকা, সোহেল সাশ্রু, ভৈরব : শনিবার, ১০ মে ২০২৫

ভৈরবে সবুজের দুম্বা খামার -সংবাদ

মরু অঞ্চলের (মধ্যপ্রাচ্যের) প্রাণী দুম্বা এখন দেশেই পালন করা হচ্ছে। ভৈরবের শিমুলকান্দি ইউনিয়নের চাঁনপুরের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের সবুজ ভূইয়া নামে এক ব্যক্তি দুম্বা চাষ করে এখন স্বাবলম্বী। তার খামারে আছে এখন ৫০টি দুম্বা।

খামারে আছে ৫০টি দুম্বা, কোরবানির জন্য ১৩টি দুম্বা বিক্রি

করার টার্গেট

প্রতিটি দুম্বার দাম ১ লাখ ৪০ হাজার থেকে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা

আসন্ন কোরবানির ঈদে ১৩টি দুম্বা বিক্রি করার টার্গেট নিয়ে পালন করা হয়েছে। এক একটি দুম্বা বিক্রি করবেন ১ লাখ ৪০ হাজার থেকে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। প্রতিটি দুম্বায় খরচ বাদে তার লাভ থাকে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। আর একটি দুম্বায় ৫৫ থেকে ৬০ কেজি পর্যন্ত মাংস হয়।

মাঝে মধ্যে এলাকার লোক জন দুম্বা কিনে জবাই করে মাংস ভাগ করে নেয়। এতে প্রতি কেজি দুম্বার মাংস ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়। দুম্বার খামারি সবুজ মিয়া এই সব তথ্য সংবাদকে জানিয়েছেন।

সরজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সবুজ ভূঁইয়ার দুম্বার খামার করে এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছেন। শুধু সেই গ্রামের লোক জন নয়, আশপাশের বিভিন্ন গ্রামের নারী-পুরুষ-শিশু-তরুণরা সকাল-বিকেল ছুটে যান ওই খামারে। দুই চোখ ভরে দেখছেন দুম্বার পাল। বাড়ির আঙিনায় দুম্বা গুলো চড়ে বেড়াচ্ছে। খাচ্ছে কাঁচাঘাস। চারপাশে উৎসুক লোক জনের মন কাড়ছে দুম্বাগুলো। এমনই এক নয়নাভিরাম দৃশ্যের অবতারণা তৈরি হয়েছে ভৈরবের শিমুলকান্দি ইউনিয়নের চাঁনপুর গ্রামে।

জানা যায়, ৪ বছরেরও বেশি সময় আগে গড়ে তোলা এই বাণিজ্যিক খামারটি তাকে শুধু অর্থনৈতিকভাবেই লাভবান করেনি, দিয়েছে অন্যরকম উচ্চতার খ্যাতিও। মা-বাবার দেয়া জন্মসূত্রের মো. সবুজ ভূঁইয়া নামটি এখন পরিবর্তন হয়ে লোক মুখে পরিচিতি পেয়েছে ‘দুম্বা সবুজ’ নামে।

আর নামের শেষে লোকজনের জুড়ে দেয়া ‘দুম্বা’ শব্দটিতে তিনি বিব্রত না হয়ে বরং তার সফলতা বা প্রাপ্তি বলে মনে করেন তিনি। এ দিকে স্থানীয় প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তর তাকে প্রান্তিক কৃষকদের জন্য অনুকরণীয় বলে আখ্যা দিয়ে তার সহযোগিতায় দুম্বার খামার করে লাভবান হতে পরামর্শ দিয়েছে।

সবুজ জানান, হজ্ব পালন করার সময় দেশের হাজী সাহেবেরা সেখানে গিয়ে দুম্বা কোরবানি করেন। মুসলিম দেশ হিসেবে বাংলাদেশের মানুষেরও দুম্বার প্রতি আকর্ষণ আছে। এই ভাবনা থেকে ৪ বছর আগে ২০২১ সালে দেশের সীমান্ত এলাকার বাজার ঘুরে তিনি ১০টি দুম্বা সংগ্রহ করে খামার শুরু করেন। সেবার তিনি দুম্বা বিক্রি করে বেশ মুনাফা করেন এবং দুম্বার যে ব্যাপক চাহিদা আছে সেটি বুঝতে পারেন। সে বছর কোরবানির ঈদে তিনি তার খামারে উৎপাদিত ২৫টি দুম্বা বিক্রি করে এলাকায় তোলপাড় তৈরি করেন। দুম্বার খামার বিষয়ে তিনি নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলে ভিডিও আপলোড দিলে, রাতারাতি তার খামার দেশব্যাপী পরিচিতি লাভ করে। এতে করে দেশের দূরদূরান্তের লোক জন অনলাইনে এবং সরাসরি যোগাযোগ করে তাদের পছন্দের দুম্বা কিনে নেয়ার সহজ পথ পেয়ে যান।

সবুজ আরও জানান, একেকটি মাদি দুম্বা ৬ মাস পর পর অর্থাৎ বছরে দুইবার একটি করে বাচ্চা দেয়। আর বাচ্চা দেয়া শুরু করে ৮ মাস বয়সে। এক বছর বয়স হলে একেকটি দুম্বা ৫০ থেকে ৮০ কেজি ওজন হয়। তখন এক লাখ ৪০ হাজার থেকে

দেড় লাখ টাকায় বিক্রি করা যায়। আর বিক্রি হওয়া দুম্বা থেকে সব খরচ বাদে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা নিট মুনাফা হয়। মাঝে মধ্যে আরও বেশি লাভ হয়।

তিনি আরও জানান, দুম্বা বাজারে প্রচলিত কোনো দানাদার খাবার খায় না। চারণভূমির প্রাকৃতিক ঘাস আর চাষ করা নেপিয়ারসহ বিভিন্ন ঘাস খেয়েই থাকে। অন্যদিকে রোগ-বালাই হয় না বললেই চলে। তাই উৎপাদন খরচ ও লালন পালনের ঝামেলাও নেহায়েতই কম।

তার ইচ্ছে খামারটি আরও বড় করে গড়ে তুলবেন। যাতে মানুষের চাহিদাসহ আমিষের ঘাটতি পূরণে ভূমিকা রাখতে পারেন। বর্তমানে তার খামারে ৫০টিরও বেশি দুম্বা আছে। এর মধ্যে পুরুষ ৫টি। বাকিগুলো মাদি। আগামী কোরবানির ঈদের আগে তার খামারে শতাধিক দুম্বা উৎপাদিত হবে বলে তার প্রত্যাশা।

এলাকাবাসী তার এই খামারটাকে বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে নিয়েছে বলে জানান তিনি। তারা সব সময় খামার পরিদর্শন করে আনন্দ উপভোগ করায় তার বেশ ভালো লাগে। বর্তমানে এলাকার লোকজন তাকে ‘দুম্বা সবুজ’ নামে ডাকায় তিনি বেশ তৃপ্ত বলে জানান।

এ দিকে সবুজের দুম্বার খামারে স্থানীয় লোকজনের আনাগোনা লেগেই থাকে। সকাল-দুপুর, বিকেল-সন্ধ্যা। আর সেই তালিকায় নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ কেউ বাদ থাকেন না। নিজেরা তো আসেনই, পাশাপাশি শিশুদের কান্না থামাতে বা খুশি করতে তাদেরও নিয়ে আসেন বাড়ির বয়োজেষ্ঠ্যরা। শুধু কাছের মানুষ নয়, আসেন দূর গ্রামের লোক জনেরাও।

স্থানীয়রা জানান, সবুজের এই দুম্বার খামার তাদের বিনে পয়সার বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে কাজ করছে। এছাড়া আরও একটা উপকার হয়েছে তাদের। সেটি হলো- দুম্বার গোস্ত খাওয়ার সুযোগ হয়েছে। প্রয়োজনবোধে ৫/১০ জনে মিলে একটি দুম্বা কিনে ভাগ করে গোস্ত খাওয়ার সুযোগ হয়েছে তাদের। তারাও চান সবুজের এই খামার ফুলে-ফেঁপে উঠুক। গড়ে উঠুক আরও খামার।

উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. আজহারুল ইসলাম স্থানীয় সাংবাদিককে জানান, সবুজের এই দুম্বার খামার প্রান্তিক খামারিদের জন্য অনুকরণীয় একটি বিষয়। তার সাফল্য অন্যদের অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছে। দুম্বার প্রধান খাবার ঘাস হওয়ায় এবং একমাত্র কৃমি ছাড়া অন্য আর কোনো রোগে সাধারণত আক্রান্ত হয় না বলে উৎপাদন খরচ খুবই কম। ফলে এটি একটি অতি লাভজনক প্রকল্প।

মুনাফা ও খ্যাতি অর্জন করা সফল খামারি সবুজকে তার দপ্তর সব রকমের সহায়তা দিয়ে যাবার বিষয় উল্লেখ করে তিনি আরও জানান, অন্য যে কেউ দুম্বার খামার করলে তার দপ্তর সার্বিক সহযোগিতা করে যাবে। মরুর দেশের এই প্রাণীটির ব্যাপকতা ঘটবে নদী-নালার বাংলাদেশে- এমনটিই প্রত্যাশা।

ছবি

আসন্ন বৈঠক ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে কৌতূহল, আলোচনায় নির্বাচনী প্রসঙ্গ

ছবি

শোকবার্তা পাঠালেন মুহাম্মদ ইউনূস এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান বিধ্বস্তে প্রাণহানি

ছবি

দেশের কিছু অঞ্চলে মৃদু তাপপ্রবাহ, কোথাও কোথাও হতে পারে বৃষ্টি

ছবি

এক মাসেই ৬৫৮ জন নিহত, দুর্ঘটনায় শীর্ষে ঢাকা বিভাগ

ছবি

২৫ জুলাইয়ের মধ্যে এসএসসির ফল প্রকাশের প্রস্তুতি

ছবি

দুই সপ্তাহ পর আংশিক চালু চক্ষুবিজ্ঞান হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা, শনিবার থেকে পুরোপুরি চালুর সম্ভাবনা

ছবি

ইউনূসকে সাক্ষাৎ দিচ্ছেন না ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্টারমার

ছবি

যুক্তরাজ্যে সাবেক ভূমিমন্ত্রী জাবেদের সম্পত্তি জব্দ

ছবি

‘দেশ ও রাজনীতির নিরাপত্তার স্বার্থে’ আ.লীগের কার্যক্রম ‘স্থগিত’, দল নিষিদ্ধ নয় : মুহাম্মদ ইউনূস

ছবি

নির্বাচন শেষেই বিদায়—পরবর্তী সরকারের অংশ হওয়ার ইচ্ছা নেই: মুহাম্মদ ইউনূস

ছবি

বাড়ছে করোনার সংক্রমণ, প্রতিরোধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ১১ নির্দেশনা

ছবি

বাংলাদেশের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি অংশীদারিত্বে আগ্রহী এয়ারবাস ও মেনজিস

ছবি

তাপপ্রবাহ কিছুটা কমতে পারে, ভ্যাপসা গরম থাকবে: আবহাওয়া অফিস

ছবি

মেট্রোরেলে যাত্রীদের মাস্ক পরার অনুরোধ

ছবি

হাজিদের ফিরতি ফ্লাইট শুরু আজ, চলবে ১০ জুলাই পর্যন্ত

ছবি

লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ও তারেক রহমানের সম্ভাব্য বৈঠক ১৩ জুন

যুক্তরাজ্যের উদ্দেশে দেশ ছাড়লেন প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

করোনার নতুন ধরন নিয়ে সতর্কতা, ভারতসহ আক্রান্ত দেশগুলোতে ভ্রমণ এড়ানোর পরামর্শ

ছবি

৩৩ জেলায় তাপপ্রবাহ, বুধবার থেকে পরিস্থিতি কিছুটা স্বস্তিদায়ক হতে পারে

ছবি

ইউনূস-মোদীর মধ্যে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়

ছবি

‘নির্দোষরা যেন সাজা না পায়’—সাবেক রাষ্ট্রপতি হামিদ ইস্যুতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

চার দিনের সফরে আজ যুক্তরাজ্যে যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

মধ্য রাতে দেশে ফিরলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ

এ কে খন্দকারের স্ত্রী ফরিদা খন্দকারের ইন্তেকাল

ছবি

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন, ইউনূসের সাক্ষাৎ চেয়ে চিঠি দিয়েছেন টিউলিপ সিদ্দিক

ছবি

ঈদের ফিরতি যাত্রায় ট্রেনযাত্রীদের মাস্ক পরার অনুরোধ

ছবি

ঈদের ছুটিতে বৃষ্টির পরও ঢাকায় ‘অস্বাস্থ্যকর’ বাতাস

ছবি

২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় ২৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা ৩৩ ডিগ্রি

ছবি

ঈদের দিন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সেনা ও নৌবাহিনী প্রধানের সাক্ষাৎ

ছবি

কোরবানির পশু কাটতে গিয়ে শতাধিক ব্যক্তি আহত

ছবি

উৎসবের আমেজে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল আজহা

ছবি

ঢাকাসহ ৬ বিভাগে হালকা বৃষ্টির আভাস

ছবি

দেশের মঙ্গলে সবার দোয়া চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

জাতীয় ঈদগাহে ঈদুল আজহার প্রধান জামাত, দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনা

আজ ঈদুল আজহা

সব অংশীদারকে এই প্রক্রিয়ায় গঠনমূলকভাবে জড়িত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ইইউ

tab

জাতীয়

মরু অঞ্চলের দুম্বার খামার করে স্বাবলম্বী ভৈরবের সবুজ

বাকী বিল্লাহ, ঢাকা, সোহেল সাশ্রু, ভৈরব

ভৈরবে সবুজের দুম্বা খামার -সংবাদ

শনিবার, ১০ মে ২০২৫

মরু অঞ্চলের (মধ্যপ্রাচ্যের) প্রাণী দুম্বা এখন দেশেই পালন করা হচ্ছে। ভৈরবের শিমুলকান্দি ইউনিয়নের চাঁনপুরের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের সবুজ ভূইয়া নামে এক ব্যক্তি দুম্বা চাষ করে এখন স্বাবলম্বী। তার খামারে আছে এখন ৫০টি দুম্বা।

খামারে আছে ৫০টি দুম্বা, কোরবানির জন্য ১৩টি দুম্বা বিক্রি

করার টার্গেট

প্রতিটি দুম্বার দাম ১ লাখ ৪০ হাজার থেকে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা

আসন্ন কোরবানির ঈদে ১৩টি দুম্বা বিক্রি করার টার্গেট নিয়ে পালন করা হয়েছে। এক একটি দুম্বা বিক্রি করবেন ১ লাখ ৪০ হাজার থেকে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। প্রতিটি দুম্বায় খরচ বাদে তার লাভ থাকে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। আর একটি দুম্বায় ৫৫ থেকে ৬০ কেজি পর্যন্ত মাংস হয়।

মাঝে মধ্যে এলাকার লোক জন দুম্বা কিনে জবাই করে মাংস ভাগ করে নেয়। এতে প্রতি কেজি দুম্বার মাংস ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়। দুম্বার খামারি সবুজ মিয়া এই সব তথ্য সংবাদকে জানিয়েছেন।

সরজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সবুজ ভূঁইয়ার দুম্বার খামার করে এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছেন। শুধু সেই গ্রামের লোক জন নয়, আশপাশের বিভিন্ন গ্রামের নারী-পুরুষ-শিশু-তরুণরা সকাল-বিকেল ছুটে যান ওই খামারে। দুই চোখ ভরে দেখছেন দুম্বার পাল। বাড়ির আঙিনায় দুম্বা গুলো চড়ে বেড়াচ্ছে। খাচ্ছে কাঁচাঘাস। চারপাশে উৎসুক লোক জনের মন কাড়ছে দুম্বাগুলো। এমনই এক নয়নাভিরাম দৃশ্যের অবতারণা তৈরি হয়েছে ভৈরবের শিমুলকান্দি ইউনিয়নের চাঁনপুর গ্রামে।

জানা যায়, ৪ বছরেরও বেশি সময় আগে গড়ে তোলা এই বাণিজ্যিক খামারটি তাকে শুধু অর্থনৈতিকভাবেই লাভবান করেনি, দিয়েছে অন্যরকম উচ্চতার খ্যাতিও। মা-বাবার দেয়া জন্মসূত্রের মো. সবুজ ভূঁইয়া নামটি এখন পরিবর্তন হয়ে লোক মুখে পরিচিতি পেয়েছে ‘দুম্বা সবুজ’ নামে।

আর নামের শেষে লোকজনের জুড়ে দেয়া ‘দুম্বা’ শব্দটিতে তিনি বিব্রত না হয়ে বরং তার সফলতা বা প্রাপ্তি বলে মনে করেন তিনি। এ দিকে স্থানীয় প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তর তাকে প্রান্তিক কৃষকদের জন্য অনুকরণীয় বলে আখ্যা দিয়ে তার সহযোগিতায় দুম্বার খামার করে লাভবান হতে পরামর্শ দিয়েছে।

সবুজ জানান, হজ্ব পালন করার সময় দেশের হাজী সাহেবেরা সেখানে গিয়ে দুম্বা কোরবানি করেন। মুসলিম দেশ হিসেবে বাংলাদেশের মানুষেরও দুম্বার প্রতি আকর্ষণ আছে। এই ভাবনা থেকে ৪ বছর আগে ২০২১ সালে দেশের সীমান্ত এলাকার বাজার ঘুরে তিনি ১০টি দুম্বা সংগ্রহ করে খামার শুরু করেন। সেবার তিনি দুম্বা বিক্রি করে বেশ মুনাফা করেন এবং দুম্বার যে ব্যাপক চাহিদা আছে সেটি বুঝতে পারেন। সে বছর কোরবানির ঈদে তিনি তার খামারে উৎপাদিত ২৫টি দুম্বা বিক্রি করে এলাকায় তোলপাড় তৈরি করেন। দুম্বার খামার বিষয়ে তিনি নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলে ভিডিও আপলোড দিলে, রাতারাতি তার খামার দেশব্যাপী পরিচিতি লাভ করে। এতে করে দেশের দূরদূরান্তের লোক জন অনলাইনে এবং সরাসরি যোগাযোগ করে তাদের পছন্দের দুম্বা কিনে নেয়ার সহজ পথ পেয়ে যান।

সবুজ আরও জানান, একেকটি মাদি দুম্বা ৬ মাস পর পর অর্থাৎ বছরে দুইবার একটি করে বাচ্চা দেয়। আর বাচ্চা দেয়া শুরু করে ৮ মাস বয়সে। এক বছর বয়স হলে একেকটি দুম্বা ৫০ থেকে ৮০ কেজি ওজন হয়। তখন এক লাখ ৪০ হাজার থেকে

দেড় লাখ টাকায় বিক্রি করা যায়। আর বিক্রি হওয়া দুম্বা থেকে সব খরচ বাদে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা নিট মুনাফা হয়। মাঝে মধ্যে আরও বেশি লাভ হয়।

তিনি আরও জানান, দুম্বা বাজারে প্রচলিত কোনো দানাদার খাবার খায় না। চারণভূমির প্রাকৃতিক ঘাস আর চাষ করা নেপিয়ারসহ বিভিন্ন ঘাস খেয়েই থাকে। অন্যদিকে রোগ-বালাই হয় না বললেই চলে। তাই উৎপাদন খরচ ও লালন পালনের ঝামেলাও নেহায়েতই কম।

তার ইচ্ছে খামারটি আরও বড় করে গড়ে তুলবেন। যাতে মানুষের চাহিদাসহ আমিষের ঘাটতি পূরণে ভূমিকা রাখতে পারেন। বর্তমানে তার খামারে ৫০টিরও বেশি দুম্বা আছে। এর মধ্যে পুরুষ ৫টি। বাকিগুলো মাদি। আগামী কোরবানির ঈদের আগে তার খামারে শতাধিক দুম্বা উৎপাদিত হবে বলে তার প্রত্যাশা।

এলাকাবাসী তার এই খামারটাকে বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে নিয়েছে বলে জানান তিনি। তারা সব সময় খামার পরিদর্শন করে আনন্দ উপভোগ করায় তার বেশ ভালো লাগে। বর্তমানে এলাকার লোকজন তাকে ‘দুম্বা সবুজ’ নামে ডাকায় তিনি বেশ তৃপ্ত বলে জানান।

এ দিকে সবুজের দুম্বার খামারে স্থানীয় লোকজনের আনাগোনা লেগেই থাকে। সকাল-দুপুর, বিকেল-সন্ধ্যা। আর সেই তালিকায় নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ কেউ বাদ থাকেন না। নিজেরা তো আসেনই, পাশাপাশি শিশুদের কান্না থামাতে বা খুশি করতে তাদেরও নিয়ে আসেন বাড়ির বয়োজেষ্ঠ্যরা। শুধু কাছের মানুষ নয়, আসেন দূর গ্রামের লোক জনেরাও।

স্থানীয়রা জানান, সবুজের এই দুম্বার খামার তাদের বিনে পয়সার বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে কাজ করছে। এছাড়া আরও একটা উপকার হয়েছে তাদের। সেটি হলো- দুম্বার গোস্ত খাওয়ার সুযোগ হয়েছে। প্রয়োজনবোধে ৫/১০ জনে মিলে একটি দুম্বা কিনে ভাগ করে গোস্ত খাওয়ার সুযোগ হয়েছে তাদের। তারাও চান সবুজের এই খামার ফুলে-ফেঁপে উঠুক। গড়ে উঠুক আরও খামার।

উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. আজহারুল ইসলাম স্থানীয় সাংবাদিককে জানান, সবুজের এই দুম্বার খামার প্রান্তিক খামারিদের জন্য অনুকরণীয় একটি বিষয়। তার সাফল্য অন্যদের অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছে। দুম্বার প্রধান খাবার ঘাস হওয়ায় এবং একমাত্র কৃমি ছাড়া অন্য আর কোনো রোগে সাধারণত আক্রান্ত হয় না বলে উৎপাদন খরচ খুবই কম। ফলে এটি একটি অতি লাভজনক প্রকল্প।

মুনাফা ও খ্যাতি অর্জন করা সফল খামারি সবুজকে তার দপ্তর সব রকমের সহায়তা দিয়ে যাবার বিষয় উল্লেখ করে তিনি আরও জানান, অন্য যে কেউ দুম্বার খামার করলে তার দপ্তর সার্বিক সহযোগিতা করে যাবে। মরুর দেশের এই প্রাণীটির ব্যাপকতা ঘটবে নদী-নালার বাংলাদেশে- এমনটিই প্রত্যাশা।

back to top