alt

জাতীয়

গেজেট সংশোধন: ট্রাইব্যুনালে দোষী সাব্যস্ত হলে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ, সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের বিধান

বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ: উপদেষ্টা পরিষদে সিদ্ধান্ত

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : রোববার, ১১ মে ২০২৫

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে রোববার ও শাহবাগে অবস্থান করতে দেখা যায় বিক্ষোভকারীদের। তাদের মধ্যে ছিলেন জুলাই আন্দোলনের আহতরাও -সংবাদ

গত বছর জুলাইয়ে শিক্ষার্থী-জনতার আন্দোলন দমাতে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সেই সময়ের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক দল হিসেবে বিচারের মুখোমুখি করতে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন সংশোধনের গেজেট জারি হয়েছে।

আইনের দুটি ধারায় এই সংশোধনের মধ্য দিয়ে সম্ভাব্য মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত রাজনৈতিক দল বা সংগঠন, তার অঙ্গ বা সহযোগী সংগঠন বা সমর্থক গোষ্ঠীর বিচারের সুযোগ তৈরি করার পাশাপাশি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে ট্রাইব্যুনালকে।

সংশোধিত আইনে বলা হয়েছে, কোনো সংগঠন যেমন রাজনৈতিক দল বা তার সহযোগী কোনো সত্তা যদি এ আইনের আওতাভুক্ত কোনো অপরাধে জড়িত থাকে বলে ট্রাইব্যুনালের কাছে প্রতীয়মান হয়, তাহলে ওই সংগঠনের কার্যক্রম স্থগিত বা নিষিদ্ধ করা, নিবন্ধন বা লাইসেন্স বাতিল এবং সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার ক্ষমতা ট্রাইব্যুনালের থাকবে।

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ

জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া ছাত্রনেতাদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), জামায়াতে ইসলামীসহ ধর্মভিত্তিক কয়েকটি দলের দাবির মুখে রোববার,(১১ মে ২০২৫) অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি বৈঠকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধনের সিদ্ধান্ত হয়। সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (আইসিটি) আওয়ামী লীগ এবং দলটির নেতাদের বিচার কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত দলটির যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়।

উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল গতকাল শনিবার রাতে বলেন, পরবর্তী কর্মদিবসে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরিপত্র জারি করা হবে। রোববার বুদ্ধ পূর্ণিমার সরকারি ছুটির দিনে ১০ মে শনিবারের তারিখ দিয়ে আইন সংশোধনের প্রজ্ঞাপন জারি হলো।

এর আগে গত বছর ২৩ অক্টোবর ‘সন্ত্রাসী’ কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবির মুখে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করে অন্তর্বর্তী সরকার। এখন বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত একই আইনের আওতায় আওয়ামী লীগও নিষিদ্ধ থাকবে।

গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের মুখে ২০১৩ সালে ট্রাইব্যুনাল আইনে যে সংশোধনী আনা হয়, সেখানে ব্যক্তির পাশাপাশি সংগঠনের বিচারের সুযোগও রাখা হয়। কিন্তু সংগঠনের সাজা কী, সেটি উল্লেখ করা ছিল না। একাত্তরের ভূমিকার জন্য দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বিচার করতে সে সময় আইনটি আবারও সংশোধন করা হবে, এমনটাই বলেছিল শেখ হাসিনার সরকার। কিন্তু পরবর্তী এক দশকেও আওয়ামী লীগ সরকার তা করেনি।

এখন ট্রাইব্যুনাল আইনে সেই সংশোধনী এনে দল হিসেবে খোদ আওয়ামী লীগের বিচারের পথ তৈরি করা হলো।

জামায়াতকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন

অবশ্য, আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে ‘সন্ত্রাসী কর্মকা-’ চালানোর অভিযোগে গত বছর ১ আগস্ট জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্র শিবির এবং তাদের সহ অঙ্গ সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। সেই সঙ্গে ২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইনানুযায়ী জামায়াত এবং এর সব অঙ্গ সংগঠনকে ‘সন্ত্রাসী সত্তা’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

২৮ দিনের মাথায় প্রজ্ঞাপন বাতিল

এর ২৮ দিনের মাথায় সেই আদেশ প্রত্যাহার করে নেয় মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ওই বছর ২৯ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অপর এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, জামায়াতে ইসলামী, এর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবির বা এর কোনো অঙ্গ সংগঠনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস ও সহিংসতায় সম্পৃক্ততার সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্যপ্রমাণ সরকার পায়নি। তাই জামায়াতে ইসলামী এবং এর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরসহ এর সব অঙ্গ সংগঠনকে রাজনৈতিক দল ও সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ ঘোষণাসংক্রান্ত ১ আগস্ট তারিখের প্রজ্ঞাপন বাতিল করা হলো।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতন

শিক্ষার্থী-জনতার আন্দোলনে গত বছর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। এর মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। ওই দিনই প্রধানমন্ত্রিত্ব ছেড়ে ভারতে চলে যান তিনি।

তার তিন দিনের মাথায় ৮ আগস্ট মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানের সময় হতাহতের ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের মন্ত্রী, এমপিসহ বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা হতে থাকে।

আওয়ামী লীগের সময়ে যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করে শীর্ষ জামায়াত নেতাদের একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছিল, সেই একই ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনাসহ তার সহযোগীদের বিচারের উদ্যোগ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। অভ্যুত্থান দমাতে গিয়ে গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করা হয়।

*আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলন*

আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকেই দলটিকে নিষিদ্ধ করার দাবি ছিল অভ্যুত্থানের নেতৃত্বে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের। তবে ওই দাবিতে জোরালো আন্দোলন শুরু হয় চার দিন আগে।

সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের দেশত্যাগের খবর নিয়ে আলোচনার মধ্যে গত বৃহস্পতিবার রাতে প্রধান উপদেষ্টা মোহাম্মদ ইউনূসের সরকারি বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান নেয় একদল বিক্ষোভকারী। তাদের নেতৃত্বে ছিলেন অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতাদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ।

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে আয়োজিত এ কর্মসূচিতে সংহতি প্রকাশ করেন জামায়াতে ইসলামী, এবি পার্টি, ইসলামী ছাত্রশিবির, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, হেফাজতে ইসলাম এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

গত শুক্রবার জুমার পর তারা মিন্টো রোডের প্রবেশ মুখে মঞ্চ বানিয়ে সেখানে সমাবেশ করেন। সেখান থেকে হাসনাত আবদুল্লাহ শাহবাগ অবরোধের ঘোষণা দেন। সেদিন বিকেল থেকেই তারা টানা অবস্থান করছিলেন শাহবাগে। গতকাল শনিবার বিকেলে সেখানে গণজমায়েত করে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করাসহ তিন দফা দাবি তারা তুলে ধরেন।

হাসনাত আবদুল্লাহ সেখানে বলেন, ‘বাংলাদেশ আজ দুই ভাগে বিভক্ত। একটি ফ্যাসিবাদী শক্তি, আরেকটি বাংলাদেশি শক্তি। যারা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ চায় না তারা ফ্যাসিবাদী শক্তি, আর যারা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ চায়, তারা বাংলাদেশি শক্তি।’

পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে গণজমায়েত থেকে তিনি অন্তর্বর্তী সরকারকে এক ঘণ্টা সময় বেঁধে দেন। হাসনাত বলেন, ‘ইন্টেরিম, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করেন। আগামী এক ঘণ্টা সময় দিলাম। যদি এই এক ঘণ্টায় ঘোষণা না আসে, তাহলে আমরা ইন্টারকন্টিনেন্টালকে কেন্দ্র ধরে বাংলামোটর অবধি দখল করে নেব।’

এদিকে গতকাল শনিবার রাত সাড়ে ৮টার কিছু পরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি বৈঠক শুরু হয়, যা রাত ১০টা পর্যন্ত চলে। পরে সংবাদ সম্মেলনে এসে এই সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত জানালে আন্দোলনকারীরা উল্লাসে মেতে ওঠে। এরপর তারা ধীরে ধীরে শাহবাগ খালি করে চলে যায়।

ছবি

আসন্ন বৈঠক ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে কৌতূহল, আলোচনায় নির্বাচনী প্রসঙ্গ

ছবি

শোকবার্তা পাঠালেন মুহাম্মদ ইউনূস এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান বিধ্বস্তে প্রাণহানি

ছবি

দেশের কিছু অঞ্চলে মৃদু তাপপ্রবাহ, কোথাও কোথাও হতে পারে বৃষ্টি

ছবি

এক মাসেই ৬৫৮ জন নিহত, দুর্ঘটনায় শীর্ষে ঢাকা বিভাগ

ছবি

২৫ জুলাইয়ের মধ্যে এসএসসির ফল প্রকাশের প্রস্তুতি

ছবি

দুই সপ্তাহ পর আংশিক চালু চক্ষুবিজ্ঞান হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা, শনিবার থেকে পুরোপুরি চালুর সম্ভাবনা

ছবি

ইউনূসকে সাক্ষাৎ দিচ্ছেন না ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্টারমার

ছবি

যুক্তরাজ্যে সাবেক ভূমিমন্ত্রী জাবেদের সম্পত্তি জব্দ

ছবি

‘দেশ ও রাজনীতির নিরাপত্তার স্বার্থে’ আ.লীগের কার্যক্রম ‘স্থগিত’, দল নিষিদ্ধ নয় : মুহাম্মদ ইউনূস

ছবি

নির্বাচন শেষেই বিদায়—পরবর্তী সরকারের অংশ হওয়ার ইচ্ছা নেই: মুহাম্মদ ইউনূস

ছবি

বাড়ছে করোনার সংক্রমণ, প্রতিরোধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ১১ নির্দেশনা

ছবি

বাংলাদেশের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি অংশীদারিত্বে আগ্রহী এয়ারবাস ও মেনজিস

ছবি

তাপপ্রবাহ কিছুটা কমতে পারে, ভ্যাপসা গরম থাকবে: আবহাওয়া অফিস

ছবি

মেট্রোরেলে যাত্রীদের মাস্ক পরার অনুরোধ

ছবি

হাজিদের ফিরতি ফ্লাইট শুরু আজ, চলবে ১০ জুলাই পর্যন্ত

ছবি

লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ও তারেক রহমানের সম্ভাব্য বৈঠক ১৩ জুন

যুক্তরাজ্যের উদ্দেশে দেশ ছাড়লেন প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

করোনার নতুন ধরন নিয়ে সতর্কতা, ভারতসহ আক্রান্ত দেশগুলোতে ভ্রমণ এড়ানোর পরামর্শ

ছবি

৩৩ জেলায় তাপপ্রবাহ, বুধবার থেকে পরিস্থিতি কিছুটা স্বস্তিদায়ক হতে পারে

ছবি

ইউনূস-মোদীর মধ্যে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়

ছবি

‘নির্দোষরা যেন সাজা না পায়’—সাবেক রাষ্ট্রপতি হামিদ ইস্যুতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

চার দিনের সফরে আজ যুক্তরাজ্যে যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

মধ্য রাতে দেশে ফিরলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ

এ কে খন্দকারের স্ত্রী ফরিদা খন্দকারের ইন্তেকাল

ছবি

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন, ইউনূসের সাক্ষাৎ চেয়ে চিঠি দিয়েছেন টিউলিপ সিদ্দিক

ছবি

ঈদের ফিরতি যাত্রায় ট্রেনযাত্রীদের মাস্ক পরার অনুরোধ

ছবি

ঈদের ছুটিতে বৃষ্টির পরও ঢাকায় ‘অস্বাস্থ্যকর’ বাতাস

ছবি

২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় ২৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা ৩৩ ডিগ্রি

ছবি

ঈদের দিন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সেনা ও নৌবাহিনী প্রধানের সাক্ষাৎ

ছবি

কোরবানির পশু কাটতে গিয়ে শতাধিক ব্যক্তি আহত

ছবি

উৎসবের আমেজে উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল আজহা

ছবি

ঢাকাসহ ৬ বিভাগে হালকা বৃষ্টির আভাস

ছবি

দেশের মঙ্গলে সবার দোয়া চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

জাতীয় ঈদগাহে ঈদুল আজহার প্রধান জামাত, দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনা

আজ ঈদুল আজহা

সব অংশীদারকে এই প্রক্রিয়ায় গঠনমূলকভাবে জড়িত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ইইউ

tab

জাতীয়

গেজেট সংশোধন: ট্রাইব্যুনালে দোষী সাব্যস্ত হলে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ, সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের বিধান

বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ: উপদেষ্টা পরিষদে সিদ্ধান্ত

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে রোববার ও শাহবাগে অবস্থান করতে দেখা যায় বিক্ষোভকারীদের। তাদের মধ্যে ছিলেন জুলাই আন্দোলনের আহতরাও -সংবাদ

রোববার, ১১ মে ২০২৫

গত বছর জুলাইয়ে শিক্ষার্থী-জনতার আন্দোলন দমাতে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সেই সময়ের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক দল হিসেবে বিচারের মুখোমুখি করতে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন সংশোধনের গেজেট জারি হয়েছে।

আইনের দুটি ধারায় এই সংশোধনের মধ্য দিয়ে সম্ভাব্য মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত রাজনৈতিক দল বা সংগঠন, তার অঙ্গ বা সহযোগী সংগঠন বা সমর্থক গোষ্ঠীর বিচারের সুযোগ তৈরি করার পাশাপাশি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে ট্রাইব্যুনালকে।

সংশোধিত আইনে বলা হয়েছে, কোনো সংগঠন যেমন রাজনৈতিক দল বা তার সহযোগী কোনো সত্তা যদি এ আইনের আওতাভুক্ত কোনো অপরাধে জড়িত থাকে বলে ট্রাইব্যুনালের কাছে প্রতীয়মান হয়, তাহলে ওই সংগঠনের কার্যক্রম স্থগিত বা নিষিদ্ধ করা, নিবন্ধন বা লাইসেন্স বাতিল এবং সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার ক্ষমতা ট্রাইব্যুনালের থাকবে।

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ

জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া ছাত্রনেতাদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), জামায়াতে ইসলামীসহ ধর্মভিত্তিক কয়েকটি দলের দাবির মুখে রোববার,(১১ মে ২০২৫) অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি বৈঠকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধনের সিদ্ধান্ত হয়। সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (আইসিটি) আওয়ামী লীগ এবং দলটির নেতাদের বিচার কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত দলটির যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়।

উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল গতকাল শনিবার রাতে বলেন, পরবর্তী কর্মদিবসে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরিপত্র জারি করা হবে। রোববার বুদ্ধ পূর্ণিমার সরকারি ছুটির দিনে ১০ মে শনিবারের তারিখ দিয়ে আইন সংশোধনের প্রজ্ঞাপন জারি হলো।

এর আগে গত বছর ২৩ অক্টোবর ‘সন্ত্রাসী’ কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবির মুখে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করে অন্তর্বর্তী সরকার। এখন বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত একই আইনের আওতায় আওয়ামী লীগও নিষিদ্ধ থাকবে।

গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের মুখে ২০১৩ সালে ট্রাইব্যুনাল আইনে যে সংশোধনী আনা হয়, সেখানে ব্যক্তির পাশাপাশি সংগঠনের বিচারের সুযোগও রাখা হয়। কিন্তু সংগঠনের সাজা কী, সেটি উল্লেখ করা ছিল না। একাত্তরের ভূমিকার জন্য দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বিচার করতে সে সময় আইনটি আবারও সংশোধন করা হবে, এমনটাই বলেছিল শেখ হাসিনার সরকার। কিন্তু পরবর্তী এক দশকেও আওয়ামী লীগ সরকার তা করেনি।

এখন ট্রাইব্যুনাল আইনে সেই সংশোধনী এনে দল হিসেবে খোদ আওয়ামী লীগের বিচারের পথ তৈরি করা হলো।

জামায়াতকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন

অবশ্য, আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে ‘সন্ত্রাসী কর্মকা-’ চালানোর অভিযোগে গত বছর ১ আগস্ট জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্র শিবির এবং তাদের সহ অঙ্গ সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। সেই সঙ্গে ২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইনানুযায়ী জামায়াত এবং এর সব অঙ্গ সংগঠনকে ‘সন্ত্রাসী সত্তা’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

২৮ দিনের মাথায় প্রজ্ঞাপন বাতিল

এর ২৮ দিনের মাথায় সেই আদেশ প্রত্যাহার করে নেয় মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ওই বছর ২৯ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অপর এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, জামায়াতে ইসলামী, এর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবির বা এর কোনো অঙ্গ সংগঠনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস ও সহিংসতায় সম্পৃক্ততার সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্যপ্রমাণ সরকার পায়নি। তাই জামায়াতে ইসলামী এবং এর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরসহ এর সব অঙ্গ সংগঠনকে রাজনৈতিক দল ও সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ ঘোষণাসংক্রান্ত ১ আগস্ট তারিখের প্রজ্ঞাপন বাতিল করা হলো।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতন

শিক্ষার্থী-জনতার আন্দোলনে গত বছর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। এর মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। ওই দিনই প্রধানমন্ত্রিত্ব ছেড়ে ভারতে চলে যান তিনি।

তার তিন দিনের মাথায় ৮ আগস্ট মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানের সময় হতাহতের ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের মন্ত্রী, এমপিসহ বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা হতে থাকে।

আওয়ামী লীগের সময়ে যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করে শীর্ষ জামায়াত নেতাদের একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছিল, সেই একই ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনাসহ তার সহযোগীদের বিচারের উদ্যোগ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। অভ্যুত্থান দমাতে গিয়ে গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করা হয়।

*আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলন*

আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকেই দলটিকে নিষিদ্ধ করার দাবি ছিল অভ্যুত্থানের নেতৃত্বে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের। তবে ওই দাবিতে জোরালো আন্দোলন শুরু হয় চার দিন আগে।

সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের দেশত্যাগের খবর নিয়ে আলোচনার মধ্যে গত বৃহস্পতিবার রাতে প্রধান উপদেষ্টা মোহাম্মদ ইউনূসের সরকারি বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান নেয় একদল বিক্ষোভকারী। তাদের নেতৃত্বে ছিলেন অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতাদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ।

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে আয়োজিত এ কর্মসূচিতে সংহতি প্রকাশ করেন জামায়াতে ইসলামী, এবি পার্টি, ইসলামী ছাত্রশিবির, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, হেফাজতে ইসলাম এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

গত শুক্রবার জুমার পর তারা মিন্টো রোডের প্রবেশ মুখে মঞ্চ বানিয়ে সেখানে সমাবেশ করেন। সেখান থেকে হাসনাত আবদুল্লাহ শাহবাগ অবরোধের ঘোষণা দেন। সেদিন বিকেল থেকেই তারা টানা অবস্থান করছিলেন শাহবাগে। গতকাল শনিবার বিকেলে সেখানে গণজমায়েত করে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করাসহ তিন দফা দাবি তারা তুলে ধরেন।

হাসনাত আবদুল্লাহ সেখানে বলেন, ‘বাংলাদেশ আজ দুই ভাগে বিভক্ত। একটি ফ্যাসিবাদী শক্তি, আরেকটি বাংলাদেশি শক্তি। যারা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ চায় না তারা ফ্যাসিবাদী শক্তি, আর যারা আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ চায়, তারা বাংলাদেশি শক্তি।’

পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে গণজমায়েত থেকে তিনি অন্তর্বর্তী সরকারকে এক ঘণ্টা সময় বেঁধে দেন। হাসনাত বলেন, ‘ইন্টেরিম, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করেন। আগামী এক ঘণ্টা সময় দিলাম। যদি এই এক ঘণ্টায় ঘোষণা না আসে, তাহলে আমরা ইন্টারকন্টিনেন্টালকে কেন্দ্র ধরে বাংলামোটর অবধি দখল করে নেব।’

এদিকে গতকাল শনিবার রাত সাড়ে ৮টার কিছু পরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি বৈঠক শুরু হয়, যা রাত ১০টা পর্যন্ত চলে। পরে সংবাদ সম্মেলনে এসে এই সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত জানালে আন্দোলনকারীরা উল্লাসে মেতে ওঠে। এরপর তারা ধীরে ধীরে শাহবাগ খালি করে চলে যায়।

back to top