ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধ
ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে বিধ্বস্ত ইসরায়েলের একটি ভবনের ধ্বংসস্তূপ পরিদর্শন করেন সেদেশের নিরাপত্তাকর্মীরা
ইসরায়েলের হামলার জবাবে ইরান পাল্টা আক্রমণ চালিয়েছে, যার ফলে দুই দেশের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা ও হুমকি আরও বেড়েছে। যদিও ইসরায়েল এতদিন শুধু ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার কথা বলে আসছিল, তবে রোববার(১৫ জুন ২০২৫) তারা হামলার পরিসর বাড়িয়েছে। ইসফাহানে কথিত পারমাণবিক স্থাপনা ও অবকাঠামোতে আঘাত হানার পাশাপাশি ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলেও হামলা চালিয়েছে। সেখানে ৩১ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৩০ জন সামরিক কর্মী এবং একজন ইরানি রেড ক্রিসেন্টের সদস্য।
আরও বড় আকারে হামলার পূর্বাভাস দিয়ে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) সাধারণ ইরানিদের সামরিক স্থাপনাগুলোর আশপাশের এলাকা থেকে সরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের খবরে বলা হয়েছে, পাল্টা জবাবে তারা ‘ব্যাপক ড্রোন হামলা’ চালিয়েছে এবং তেল আবিব ও হাইফা শহরে ১০০-র বেশি মিসাইল নিক্ষেপ করেছে। এই হামলায় ইসরায়েলের কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। দেশটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গতকাল শনিবার রাতের ইরানি হামলায় অন্তত ১০ জন নিহত এবং শতাধিক আহত হয়েছেন।
এই প্রেক্ষাপটে ইরান জানিয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পারমাণবিক বিষয়ে আলোচনার কোনো অর্থ নেই। একই সঙ্গে তারা হুঁশিয়ার করে বলেছে, যে কোনো দেশ ইসরায়েলকে সমর্থন দিলে তাকেও ছাড় দেয়া হবে না।
যুদ্ধ পরিস্থিতি প্রশমনে পশ্চিমা নেতারা রোববার সক্রিয় ভূমিকা নিতে শুরু করেছেন। এদিকে, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি সমর্থন চেয়েছেন। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধ বন্ধ করে দুইপক্ষকে চুক্তিতে পৌঁছাতে আহ্বান জানিয়েছেন, পাশাপাশি হুঁশিয়ার করে বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রে কোনো হামলা হলে পূর্ণ শক্তি দিয়ে জবাব দেয়া হবে।
ইরানের সামরিক স্থাপনার আশপাশ এলাকা ছাড়তে বাসিন্দাদের আহ্বান আইডিএফের
ইরানের সামরিক স্থাপনার আশপাশের এলাকা থেকে সরে যাওয়ার জন্য সাধারণ নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। রোববার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ দেয়া একটি পোস্টে এ আহ্বান জানানো হয়।
ইরানের পূর্ব আজারবাইজানে ৩১ জন নিহত
ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ৩১ জন নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৩০ জন সামরিক সদস্য এবং একজন ইরানি রেড ক্রিসেন্ট কর্মী বলে জানিয়েছেন গভর্নর বাহরাম সারমাস্ত। তিনি আরও জানান, হামলায় এ পর্যন্ত ৫৫ জন আহত হয়েছেন। ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের দাবি, তেহরানের একটি ভবনে ইসরায়েলি হামলায় ২০ শিশুসহ ৬০ জন নিহত হয়েছেন। এখনও পর্যন্ত হতাহতের মোট সংখ্যা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেনি ইরান। জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত জানান, ইসরায়েলি হামলায় ৭৮ জন নিহত এবং ৩২০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।
** ইরান-ইসরায়েল পাল্টাপাল্টি হামলায় বাড়ছে নিহতের সংখ্যা
ইসরায়েলের জরুরি পরিষেবা জানিয়েছে, মধ্য ইসরায়েলে ড্রোন হামলায় অন্তত চারজন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন ৬০ ও ৮০ বছর বয়সী দুই নারী, ১০ বছরের এক শিশু এবং এক তরুণী। আহত হয়েছেন ৯৯ জন, যাদের মধ্যে চারজনের অবস্থা গুরুতর। ইসরায়েলের বাট ইয়াম অঞ্চলেও হামলায় তিনজন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
** আমেরিকানদের সমর্থন চাইলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু আমেরিকানদের কাছে সমর্থন চেয়েছেন। এক ভিডিও বার্তায়, যেখানে তিনি ইংরেজিতে কথা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান এবং ২৫০ বছর ধরে স্বাধীনতা রক্ষা করা মার্কিন সেনা ও নারীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। নেতানিয়াহু বলেন, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী মধ্যপ্রাচ্যের ‘স্বাধীনতা রক্ষা’ করছে এবং ইরানি শাসনকে ‘অত্যাচারী’ হিসেবে আখ্যা দেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের শত্রু, আপনাদের শত্রু। আমরা যা করছি, তা আজ হোক বা কাল হোক, আমাদের সবার জন্য হুমকি।’ তিনি কোনো প্রমাণ না দেখিয়ে দাবি করেন, ইসরায়েল যদি পদক্ষেপ না নিত, তাহলে ইরান তাদের প্রক্সি হিজবুল্লাহ ও হামাসকে পারমাণবিক অস্ত্রে সজ্জিত করত। নেতানিয়াহু বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প, তার জনগণ এবং বিশ্বের আরও অনেকের স্পষ্ট সমর্থনে ইসরায়েল এসব পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
পারমাণবিক আলোচনা হবে না, বললেন ইরানের প্রেসিডেন্ট
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাঁখো ইরানের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের সঙ্গে কথা বলেছেন। মাঁখো তাকে ‘উত্তেজনা এড়াতে সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনের’ আহ্বান জানান এবং যত দ্রুত সম্ভব ইরানকে পারমাণবিক আলোচনায় ফেরার আহ্বান জানান। তবে প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান জানান, ইসরায়েলের হামলা অব্যাহত থাকলে ইরান কোনো আলোচনায় বসবে না। রোববারের নির্ধারিত যুক্তরাষ্ট্র-ইরান পারমাণবিক আলোচনা বাতিলের পর ইরান এই অবস্থান নেয়।
উত্তেজনা কমানোর আহ্বান স্টারমারের
ইরান-ইসরায়েল চলমান সংঘর্ষ নিয়ে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ের স্টারমার বলেন, ‘আমাদের বার্তা পরিষ্কার উত্তেজনা কমানো জরুরি,’ বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান। তিনি ইসরায়েলকে সহায়তায় ব্রিটিশ বিমানের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেননি, যেমনটা ঘটেছিল ২০২৪ সালের এপ্রিল ও অক্টোবর মাসে। স্টারমার নিরাপত্তা ও বাণিজ্যবিষয়ক আলোচনার জন্য কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং পরে দুজনই আলবার্টায় অনুষ্ঠিতব্য জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেবেন। এই সম্মেলনে মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি শীর্ষ আলোচ্যসূচিতে রয়েছে। সম্মেলনে অংশ নেবেন জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রেডরিখ মার্জ, ফরাসি প্রেসিডেন্ট মাঁখো ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। এদিকে, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রকে হুঁশিয়ারি দিয়ে ইরান জানায়, যদি তারা ইসরায়েলকে সমর্থন করে, তাহলে এ অঞ্চলে তাদের জাহাজ ও ঘাঁটিগুলো বৈধ লক্ষ্যবস্তু হিসেবে বিবেচিত হবে।
ইরানের হামলায় যুক্তরাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হলে ‘নজিরবিহীন’ প্রতিক্রিয়ার হুঁশিয়ারি ট্রাম্পের
যুক্তরাষ্ট্র যদি ইরানের হামলার শিকার হয়, তাহলে ‘নজিরবিহীন’ পাল্টা প্রতিক্রিয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। ট্রুথ সোশালে দেয়া এক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, ‘যদি ইরান আমাদের ওপর কোনোভাবে বা কোনো আকারে হামলা চালায়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনীর পূর্ণ শক্তি এমনভাবে নেমে আসবে, যা আগে কখনও দেখা যায়নি।’ তিনি আরও বলেন, ‘তবে আমরা চাইলে সহজেই ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে একটি চুক্তি করে এই রক্তক্ষয়ী সংঘাতের অবসান ঘটাতে পারি!’ তিনি জানান, ইসরায়েল-ইরান সাম্প্রতিক সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র জড়িত নয়। ট্রাম্প বলেন, ‘আজ রাতে ইরানের ওপর চালানো হামলার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সম্পর্ক ছিল না।’ এদিকে, ইরান হুঁশিয়ার করে বলেছে, তেহরানের প্রতিশোধমূলক হামলা ঠেকাতে ইসরায়েলকে সাহায্য না করতে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের সতর্ক করা হয়েছে।
ইরানের নতুন হামলার চিত্র প্রকাশ, ইরানের পরমাণু কর্মসূচির স্থাপনায় হামলার দাবি ইসরায়েলের
গতকাল শনিবার সারারাত ইরান ও ইসরায়েল একে অন্যের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি হামলা চালিয়েছে। রোববার ভোরে তেল আবিব ও হাইফা শহরে ইরান ড্রোন হামলা চালায়। ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা রোববার তেহরানের একটি পারমাণবিক কেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে। ইসরায়েলের দাবি, তারা তেহরানে ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং একটি প্রতিরক্ষা-সম্পর্কিত গবেষণা প্রতিষ্ঠানসহ পারমাণবিক কর্মসূচির অবকাঠামোতে হামলা চালিয়েছে। তাদের ভাষ্যমতে, এসব স্থানে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির প্রচেষ্টা এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গোপন রাখা হচ্ছিল। অন্যদিকে, ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) জানায়, তারা ইসরায়েলের ফাইটার জেট জ্বালানি উৎপাদন ও বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্রগুলোতে হামলা করেছে এবং সতর্ক করে দেয়, হামলা চললে তারা আরও ‘তীব্র’ জবাব দেবে। আইআরজিসি আরও দাবি করেছে, তারা তিনটি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, ১০টি ড্রোন এবং কয়েকটি মাইক্রো ইউএভি ভূপাতিত করেছে।
তেহরানে তেল ডিপোতে আগুন এবং হাইফায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা
তেহরানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের একটি তেল ডিপোতে আগুন লেগেছে বলে স্থানীয়রা পোস্ট করা ভিডিওতে দেখা যায়, যা বিবিসি ভেরিফাই যাচাই করেছে। মেহর নিউজ এজেন্সিও ঘটনাস্থল থেকে রিপোর্ট করে জানায়, জায়গাটি সম্ভবত হামলার লক্ষ্য ছিল। ইরানের তেল মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে,’ তবে মানুষকে ওই এলাকা থেকে দূরে থাকতে বলা হয়েছে। হাইফায় ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় একটি তেল শোধনাগারে আগুন লাগে, যা অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায় বিবিসি তা যাচাই করেছে।
ইসরায়েল সাতটি ড্রোন ভূপাতিত করেছে: আইডিএফের দাবি
গত এক ঘণ্টায় ইসরায়েলি ভূখণ্ডে দিকে সাতটি মনুষ্যবিহীন আকাশযান (ইউএভি) ছোড়া হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। তাদের দাবি, ইসরায়েলি বিমান ও নৌবাহিনী ড্রোনগুলো নিষ্ক্রিয় করেছে। আইডিএফ শেয়ার করা ফুটেজে আকাশে একটি বিস্ফোরণ ঘটতে দেখা যায়, যা তারা একটি ইউএভি প্রতিরোধের চিত্র বলে উল্লেখ করেছে। আইডিএফ জানিয়েছে, তারা পশ্চিম ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কাঠামো এবং গুদামে নতুন করে হামলা চালিয়েছে। টেলিগ্রামে দেয়া এক পোস্টে তারা এ তথ্য জানায় এবং হামলার একটি ভিডিও ফুটেজও প্রকাশ করে, তবে বিবিসি তা স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি।
ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধ
ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে বিধ্বস্ত ইসরায়েলের একটি ভবনের ধ্বংসস্তূপ পরিদর্শন করেন সেদেশের নিরাপত্তাকর্মীরা
রোববার, ১৫ জুন ২০২৫
ইসরায়েলের হামলার জবাবে ইরান পাল্টা আক্রমণ চালিয়েছে, যার ফলে দুই দেশের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা ও হুমকি আরও বেড়েছে। যদিও ইসরায়েল এতদিন শুধু ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার কথা বলে আসছিল, তবে রোববার(১৫ জুন ২০২৫) তারা হামলার পরিসর বাড়িয়েছে। ইসফাহানে কথিত পারমাণবিক স্থাপনা ও অবকাঠামোতে আঘাত হানার পাশাপাশি ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলেও হামলা চালিয়েছে। সেখানে ৩১ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৩০ জন সামরিক কর্মী এবং একজন ইরানি রেড ক্রিসেন্টের সদস্য।
আরও বড় আকারে হামলার পূর্বাভাস দিয়ে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) সাধারণ ইরানিদের সামরিক স্থাপনাগুলোর আশপাশের এলাকা থেকে সরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের খবরে বলা হয়েছে, পাল্টা জবাবে তারা ‘ব্যাপক ড্রোন হামলা’ চালিয়েছে এবং তেল আবিব ও হাইফা শহরে ১০০-র বেশি মিসাইল নিক্ষেপ করেছে। এই হামলায় ইসরায়েলের কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। দেশটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গতকাল শনিবার রাতের ইরানি হামলায় অন্তত ১০ জন নিহত এবং শতাধিক আহত হয়েছেন।
এই প্রেক্ষাপটে ইরান জানিয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পারমাণবিক বিষয়ে আলোচনার কোনো অর্থ নেই। একই সঙ্গে তারা হুঁশিয়ার করে বলেছে, যে কোনো দেশ ইসরায়েলকে সমর্থন দিলে তাকেও ছাড় দেয়া হবে না।
যুদ্ধ পরিস্থিতি প্রশমনে পশ্চিমা নেতারা রোববার সক্রিয় ভূমিকা নিতে শুরু করেছেন। এদিকে, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি সমর্থন চেয়েছেন। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধ বন্ধ করে দুইপক্ষকে চুক্তিতে পৌঁছাতে আহ্বান জানিয়েছেন, পাশাপাশি হুঁশিয়ার করে বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রে কোনো হামলা হলে পূর্ণ শক্তি দিয়ে জবাব দেয়া হবে।
ইরানের সামরিক স্থাপনার আশপাশ এলাকা ছাড়তে বাসিন্দাদের আহ্বান আইডিএফের
ইরানের সামরিক স্থাপনার আশপাশের এলাকা থেকে সরে যাওয়ার জন্য সাধারণ নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। রোববার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ দেয়া একটি পোস্টে এ আহ্বান জানানো হয়।
ইরানের পূর্ব আজারবাইজানে ৩১ জন নিহত
ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ৩১ জন নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৩০ জন সামরিক সদস্য এবং একজন ইরানি রেড ক্রিসেন্ট কর্মী বলে জানিয়েছেন গভর্নর বাহরাম সারমাস্ত। তিনি আরও জানান, হামলায় এ পর্যন্ত ৫৫ জন আহত হয়েছেন। ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের দাবি, তেহরানের একটি ভবনে ইসরায়েলি হামলায় ২০ শিশুসহ ৬০ জন নিহত হয়েছেন। এখনও পর্যন্ত হতাহতের মোট সংখ্যা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেনি ইরান। জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত জানান, ইসরায়েলি হামলায় ৭৮ জন নিহত এবং ৩২০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।
** ইরান-ইসরায়েল পাল্টাপাল্টি হামলায় বাড়ছে নিহতের সংখ্যা
ইসরায়েলের জরুরি পরিষেবা জানিয়েছে, মধ্য ইসরায়েলে ড্রোন হামলায় অন্তত চারজন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন ৬০ ও ৮০ বছর বয়সী দুই নারী, ১০ বছরের এক শিশু এবং এক তরুণী। আহত হয়েছেন ৯৯ জন, যাদের মধ্যে চারজনের অবস্থা গুরুতর। ইসরায়েলের বাট ইয়াম অঞ্চলেও হামলায় তিনজন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
** আমেরিকানদের সমর্থন চাইলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু আমেরিকানদের কাছে সমর্থন চেয়েছেন। এক ভিডিও বার্তায়, যেখানে তিনি ইংরেজিতে কথা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান এবং ২৫০ বছর ধরে স্বাধীনতা রক্ষা করা মার্কিন সেনা ও নারীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। নেতানিয়াহু বলেন, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী মধ্যপ্রাচ্যের ‘স্বাধীনতা রক্ষা’ করছে এবং ইরানি শাসনকে ‘অত্যাচারী’ হিসেবে আখ্যা দেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের শত্রু, আপনাদের শত্রু। আমরা যা করছি, তা আজ হোক বা কাল হোক, আমাদের সবার জন্য হুমকি।’ তিনি কোনো প্রমাণ না দেখিয়ে দাবি করেন, ইসরায়েল যদি পদক্ষেপ না নিত, তাহলে ইরান তাদের প্রক্সি হিজবুল্লাহ ও হামাসকে পারমাণবিক অস্ত্রে সজ্জিত করত। নেতানিয়াহু বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প, তার জনগণ এবং বিশ্বের আরও অনেকের স্পষ্ট সমর্থনে ইসরায়েল এসব পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
পারমাণবিক আলোচনা হবে না, বললেন ইরানের প্রেসিডেন্ট
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাঁখো ইরানের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের সঙ্গে কথা বলেছেন। মাঁখো তাকে ‘উত্তেজনা এড়াতে সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনের’ আহ্বান জানান এবং যত দ্রুত সম্ভব ইরানকে পারমাণবিক আলোচনায় ফেরার আহ্বান জানান। তবে প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান জানান, ইসরায়েলের হামলা অব্যাহত থাকলে ইরান কোনো আলোচনায় বসবে না। রোববারের নির্ধারিত যুক্তরাষ্ট্র-ইরান পারমাণবিক আলোচনা বাতিলের পর ইরান এই অবস্থান নেয়।
উত্তেজনা কমানোর আহ্বান স্টারমারের
ইরান-ইসরায়েল চলমান সংঘর্ষ নিয়ে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ের স্টারমার বলেন, ‘আমাদের বার্তা পরিষ্কার উত্তেজনা কমানো জরুরি,’ বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান। তিনি ইসরায়েলকে সহায়তায় ব্রিটিশ বিমানের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেননি, যেমনটা ঘটেছিল ২০২৪ সালের এপ্রিল ও অক্টোবর মাসে। স্টারমার নিরাপত্তা ও বাণিজ্যবিষয়ক আলোচনার জন্য কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং পরে দুজনই আলবার্টায় অনুষ্ঠিতব্য জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেবেন। এই সম্মেলনে মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি শীর্ষ আলোচ্যসূচিতে রয়েছে। সম্মেলনে অংশ নেবেন জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রেডরিখ মার্জ, ফরাসি প্রেসিডেন্ট মাঁখো ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। এদিকে, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রকে হুঁশিয়ারি দিয়ে ইরান জানায়, যদি তারা ইসরায়েলকে সমর্থন করে, তাহলে এ অঞ্চলে তাদের জাহাজ ও ঘাঁটিগুলো বৈধ লক্ষ্যবস্তু হিসেবে বিবেচিত হবে।
ইরানের হামলায় যুক্তরাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হলে ‘নজিরবিহীন’ প্রতিক্রিয়ার হুঁশিয়ারি ট্রাম্পের
যুক্তরাষ্ট্র যদি ইরানের হামলার শিকার হয়, তাহলে ‘নজিরবিহীন’ পাল্টা প্রতিক্রিয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। ট্রুথ সোশালে দেয়া এক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, ‘যদি ইরান আমাদের ওপর কোনোভাবে বা কোনো আকারে হামলা চালায়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনীর পূর্ণ শক্তি এমনভাবে নেমে আসবে, যা আগে কখনও দেখা যায়নি।’ তিনি আরও বলেন, ‘তবে আমরা চাইলে সহজেই ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে একটি চুক্তি করে এই রক্তক্ষয়ী সংঘাতের অবসান ঘটাতে পারি!’ তিনি জানান, ইসরায়েল-ইরান সাম্প্রতিক সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র জড়িত নয়। ট্রাম্প বলেন, ‘আজ রাতে ইরানের ওপর চালানো হামলার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সম্পর্ক ছিল না।’ এদিকে, ইরান হুঁশিয়ার করে বলেছে, তেহরানের প্রতিশোধমূলক হামলা ঠেকাতে ইসরায়েলকে সাহায্য না করতে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের সতর্ক করা হয়েছে।
ইরানের নতুন হামলার চিত্র প্রকাশ, ইরানের পরমাণু কর্মসূচির স্থাপনায় হামলার দাবি ইসরায়েলের
গতকাল শনিবার সারারাত ইরান ও ইসরায়েল একে অন্যের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি হামলা চালিয়েছে। রোববার ভোরে তেল আবিব ও হাইফা শহরে ইরান ড্রোন হামলা চালায়। ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা রোববার তেহরানের একটি পারমাণবিক কেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে। ইসরায়েলের দাবি, তারা তেহরানে ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং একটি প্রতিরক্ষা-সম্পর্কিত গবেষণা প্রতিষ্ঠানসহ পারমাণবিক কর্মসূচির অবকাঠামোতে হামলা চালিয়েছে। তাদের ভাষ্যমতে, এসব স্থানে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির প্রচেষ্টা এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গোপন রাখা হচ্ছিল। অন্যদিকে, ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) জানায়, তারা ইসরায়েলের ফাইটার জেট জ্বালানি উৎপাদন ও বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্রগুলোতে হামলা করেছে এবং সতর্ক করে দেয়, হামলা চললে তারা আরও ‘তীব্র’ জবাব দেবে। আইআরজিসি আরও দাবি করেছে, তারা তিনটি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, ১০টি ড্রোন এবং কয়েকটি মাইক্রো ইউএভি ভূপাতিত করেছে।
তেহরানে তেল ডিপোতে আগুন এবং হাইফায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা
তেহরানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের একটি তেল ডিপোতে আগুন লেগেছে বলে স্থানীয়রা পোস্ট করা ভিডিওতে দেখা যায়, যা বিবিসি ভেরিফাই যাচাই করেছে। মেহর নিউজ এজেন্সিও ঘটনাস্থল থেকে রিপোর্ট করে জানায়, জায়গাটি সম্ভবত হামলার লক্ষ্য ছিল। ইরানের তেল মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে,’ তবে মানুষকে ওই এলাকা থেকে দূরে থাকতে বলা হয়েছে। হাইফায় ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় একটি তেল শোধনাগারে আগুন লাগে, যা অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায় বিবিসি তা যাচাই করেছে।
ইসরায়েল সাতটি ড্রোন ভূপাতিত করেছে: আইডিএফের দাবি
গত এক ঘণ্টায় ইসরায়েলি ভূখণ্ডে দিকে সাতটি মনুষ্যবিহীন আকাশযান (ইউএভি) ছোড়া হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। তাদের দাবি, ইসরায়েলি বিমান ও নৌবাহিনী ড্রোনগুলো নিষ্ক্রিয় করেছে। আইডিএফ শেয়ার করা ফুটেজে আকাশে একটি বিস্ফোরণ ঘটতে দেখা যায়, যা তারা একটি ইউএভি প্রতিরোধের চিত্র বলে উল্লেখ করেছে। আইডিএফ জানিয়েছে, তারা পশ্চিম ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কাঠামো এবং গুদামে নতুন করে হামলা চালিয়েছে। টেলিগ্রামে দেয়া এক পোস্টে তারা এ তথ্য জানায় এবং হামলার একটি ভিডিও ফুটেজও প্রকাশ করে, তবে বিবিসি তা স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি।