alt

জাতীয়

সাধারণ স্কুলে কমছে শিক্ষার্থী মাদ্রাসায় বাড়ছে ভর্তি

রাকিব উদ্দিন : বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫

চলতি শিক্ষাবর্ষে মাদ্রাসার ইবতেদায়ী (১ম থেকে ৫ম শ্রেণী) স্তরে ছাত্র-ছাত্রী বেড়েছে। তবে সাধারণ শিক্ষা ধারার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক উভয় স্তরেই শিক্ষার্থী কমেছে। সাধারণ স্কুলগুলোতে ধারাবাহিকভাবে শিক্ষার্থী কমতে থাকার এই প্রবণতাকে ‘আশঙ্কাজনক’ বলছেন শিক্ষাবিদরা।

তাদের দাবি, সাধারণ স্কুলে পাঠদানের পরিবেশ উন্নতি না হওয়া ও কোচিংয়ের পেছনে বাড়তি খরচের কারণে গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র পরিবারের লোকজন সন্তানদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে পাঠাচ্ছেন। কারণ মাদ্রাসায় পড়ানোর খরচ খুব একটা লাগে না। এ ধরণের প্রতিষ্ঠান সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের অনুদানে চলে।

এ বিষয়ে প্রবীণ শিক্ষক নেতা ‘বাংলাদেশ অধ্যক্ষ পরিষদের’ সভাপতি মোহাম্মদ মাজহারুল হান্নান সংবাদকে বলেছেন, ‘সাধারণ স্কুল-কলেজে শিক্ষার্থী কেন কমছে সেই বিষয়ে সরকারের গবেষণা করা উচিত। কিন্তু আমার মনে হয়, এই সরকার শিক্ষার বিষয়ে নির্বিকার। তাদের এ নিয়ে খুব একটা মাথা ব্যাথা নেই।’

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) থেকে জানা গেছে, ২০২৫ ইবতেদায়ী স্তরে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪০ লাখ ৩৫ হাজার ৪৫৩ জন। আর ২০২৬ শিক্ষাবর্ষে এই সংখ্যা বেড়ে দাড়াচ্ছে ৪৩ লাখ ৪৬ হাজার ৮৩৬ জনে। সেই হিসেবে মাদ্রাসার এই প্রাথমিক স্তরে এক বছরে শিক্ষার্থী বেড়েছে তিন লাখ ১১ হাজার ৩৮৩ জন।

অন্যদিকে সাধারণ শিক্ষা স্তরে ষষ্ঠ শ্রেণীতে চলতি শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী রয়েছে ৪০ লাখ ৪৬ হাজার ১৯৭ জন; আর ২০২৬ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী কমে দাঁড়াচ্ছে ৩৭ লাখ ৫৮ হাজার ৮৪৬ জনে।

চলতি শিক্ষাবর্ষে ৭ম শ্রেণীতে মোট শিক্ষার্থী হলো ৩৭ লাখ ৮৫ হাজার ৮৯ জন; আর আগামী শিক্ষাবর্ষে তা কমে দাঁড়াচ্ছে ৩৬ লাখ ৪৮ হাজার ৮৯১ জনে।

অষ্টম শ্রেণীতে ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৭ লাখ ১৬ হাজার ৪৬৫ জন; আর আগামী শিক্ষাবর্ষে এই সংখ্যা কমে দাঁড়াচ্ছে ৩৫ লাখ ৩১ হাজার ৭৮২ জনে।

নবম শ্রেণীতে চলতি শিক্ষাবর্ষে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪০ লাখ ছয় হাজার ৩৩৯ জন; আর আগামী শিক্ষাবর্ষে এই সংখ্যা কমে দাঁড়াচ্ছে ৩৯ লাখ ৪৪ হাজার ২৯ জনে।

২০২৫ শিক্ষাবর্ষে ইবতেদায়ী এবং সাধারণ শিক্ষার ৬ষ্ঠ থেকে ১০তম শ্রেণী পর্যন্ত মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল দুই কোটি ৩২ লাখ ৯০ হাজার ৯০২ জন। আগামী শিক্ষাবর্ষে তা কমে দাঁড়াচ্ছে এক কোটি ৯৫ লাখ ১৪ হাজার ৫৫৫ জনে।

প্রাথমিক শিক্ষা পদ্ধতি নিয়ে কাজ করেন বেসরকারি ব্র্যাক বিশ^বিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক মঞ্জুর আহমদ।

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার্থী কমতে থাকার কারণ সম্পর্কে তিনি সংবাদকে বলেছেন, ‘গরিব ছেলেমেয়ের জন্য স্কুলে টিকে থাকা এখন মুশকিল। স্কুলের পাশাপাশি তাদের প্রাইভেট কোচিংয়ে যেতে হয়। শিক্ষা সংক্রান্ত সবকিছুর খরচই এখন বেশি। কিন্তু সরকারের এদিকে নজর আছে বলে মনে হয় না।’

মাদ্রাসায় সেই খরচ খুব একটা নেই মন্তব্য করে ড. মঞ্জুর আহমদ বলেন, ‘কোভিড মহামারীর সময় (২০২০) থেকেই দেশে মাদ্রাসায় শিক্ষার্থী বাড়ছে; এর বিপরীতে সাধারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী কমছে। এটা খুবই আশঙ্কাজনক ব্যাপার।’ শিক্ষাবিদরা বলছেন, শিক্ষার প্রাথমিক স্তরে ভাষা ও গণিতের ভিত্তিমূলক দক্ষতা, অর্থাৎ প্রতিটি শিশুকে শেখার সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। এর সঙ্গে শিশুর নিরাপত্তা, স্কুলে টিকে থাকা, শারীরিক ও মানসিক ব্যবস্থা এবং দায়িত্বশীল সামাজিক আচরণেও দৃষ্টি দিতে হবে।

সাধারণ ধারার স্কুলে এসব কাজ ঠিকমতো হচ্ছে না- দাবি করে শিক্ষাবিদরা বলেন, অর্ধেকের বেশি শিশু পঞ্চম শ্রেণী সমাপ্ত করেও পড়তে, লিখতে বা অঙ্কের চার নিয়ম ব্যবহার করতে পারে না। গত দুই দশকে পরপর বিভিন্ন প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কার্যক্রম চালানোর পরও এ ক্ষেত্রে খুব একটা পরিবর্তন হয়নি বলে তাদের দাবি।

সরকার শিক্ষাখাতকে খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না মন্তব্য করে মঞ্জুর আহমদ বলেন, ‘এই সরকার বিভিন্ন খাতের জন্য সংস্কার কমিশন করেছে। কিন্তু শিক্ষা সংস্কারে কোনো কমিশন হয়নি। আমরা দাবি জানালেও তা আমলে নেয়া হয়নি।’

তবে অধ্যক্ষ মোহাম্মদ মাজহারুল হান্নান বলেন, ‘সাধারণ স্কুলগুলো যেভাবে কোচিং নির্ভর হয়ে পড়ছে তাতে অনেক পিতা-মাতার পক্ষেই সন্তানের পড়ালেখার ব্যয় বহন করা সম্ভব হচ্ছে না। এজন্য তারা সন্তানদের ধর্মীয় শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে হয়তো পাঠাচ্ছেন। কিন্তু এটা দেখার দায়িত্ব কার?... সরকারের। তারা কী এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে?’

গ্রামাঞ্চলের অনেক স্কুলে নূন্যতম শিক্ষক নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মাদ্রাসাগুলোকে আবার এই সমস্যা নেই। স্থানীয় লোকজন স্বেচ্ছায় এসব প্রতিষ্ঠানে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছেন।’

মাদ্রাসার বাজেটও বড় হচ্ছে :

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সারাদেশের মাদ্ররাসায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে, তাই এ খাতে বাজেটও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে মোট ৯৫ হাজার ৬৪৪ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে এই খাতে বরাদ্দ ছিল মোট ৯৪ হাজার ৭১০ কোটি টাকা।

বিদায়ী অর্থবছরের তুলনায় নতুন অর্থবছরে গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে তিন হাজার ৪১৬ কোটি টাকা কম বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এ মন্ত্রণালয়ে ৩৫ হাজার ৪০৩ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। বিদায়ী অর্থবছরে এ মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ ছিল ৩৮ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা।

প্রাথমিক শিক্ষায় প্রস্তাবিত বরাদ্দ টাকা হিসাবে কিছুটা কমেছে। তবে বিদায়ী অর্থবছরের তুলনায় এবার মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষায় তিন হাজার ৪৫৫ কোটি টাকা বেশি বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।

২০২৫-২৬ অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষায় ৪৭ হাজার ৫৬৩ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা চলতি অর্থবছরে ছিল ৪৪ হাজার ১০৮ কোটি টাকা।

আগের অর্থবছরের তুলনায় নতুন অর্থবছরে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে ৮৯৫ কোটি টাকা বেশি বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন অর্থ উপদেষ্টা। নতুন অর্থবছরে এ বিভাগের জন্য ১২ হাজার ৭২৮ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা আগের অর্থবছরে ১১ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা ছিল।

ছেলের ‘পরকীয়া ঠেকাতে’ ফ্লাইটে ‘বোমা’ থাকার উড়ো ফোন

পুলিশকে কার্যকর করার প্রশ্নে ‘অসন্তুষ্ট’ আইজিপি

সিন্ডিকেটের কবজায় বিমানের টিকেট, অভিযোগ আটাবের

মতলবে সেপটিক ট্যাংক থেকে উদ্ধার গৃহবধূর লাশ, স্বামী পলাতক

চাঁদাবাজির অভিযোগে যুবদল নেতা বহিষ্কার

২৮ মাসে ১৪ হাজার ধর্ষণের মামলা

ভাটারা থানা হেফাজতে ‘বিষপানে’ নারীর মৃত্যু, তিন পুলিশ বরখাস্ত

ছবি

মোরেলগঞ্জে ১০ বছরে আলোর মুখ দেখেনি সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি

ছবি

প্রশাসনকে ম্যানেজ করে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন

পুতুলকে ‘অনির্দিষ্টকালের ছুটিতে পাঠালো’ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা: হেলথ পলিসি ওয়াচ

ছবি

ডেঙ্গুতে এ বছর ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে ঢাকা দক্ষিণে

চট্টগ্রামে ৩৯ দখলদারের বিরুদ্ধে অভিযানে নামছে পাউবো

ছবি

নতুন শহর পূর্বাচল: এখনও সব সুবিধা নেই

শেষ হয়েছে শুল্ক নিয়ে আলোচনা, আবার হবে জানানো হলো বিজ্ঞপ্তিতে

বিএনপির পরিণতি হবে আওয়ামী লীগের মতো: যুবশক্তির আহ্বায়ক

‘সম্পূর্ণ সত্য প্রকাশের’ শর্তে রাজসাক্ষী মামুনকে ক্ষমা, লিখিত আদেশে ট্রাইব্যুনাল

অন্যায়কারীদের সরকার প্রশ্রয় দিচ্ছে কিনা, প্রশ্ন তারেক রহমানের

ব্যবসায়ী সোহাগ হত্যার বিচার হবে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে: আইন উপদেষ্টা

ছবি

ব্যবসায়ী সোহাগ হত্যার প্রতিবাদ সারাদেশে, চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ক্ষোভ

ভয়ে নীরব, স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম, নৃশংস হত্যার বর্ণনায় প্রত্যক্ষদর্শী

ছবি

গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে শহীদ মিনারে সোমবার কনসার্ট ও ড্রোন শো’র আয়োজন

ছবি

চলতি বছর ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা ৫৫, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১৩০২ জন

ছবি

মিটফোর্ডে ব্যবসায়ী খুন: নিহত লাল চাঁদের পরিবার বলছে, ‘এখনো হুমকি পাচ্ছি’

ছবি

পুলিশকে পুরোপুরি কার্যকর করার বিষয়ে ‘অসন্তুষ্ট’ আইজিপি বাহারুল

ছবি

সাবেক আইজিপি মামুনকে শর্তসাপেক্ষে ক্ষমার বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের আদেশ প্রকাশ

ছবি

‘সঙ্গে সঙ্গে অ্যাকশন’ তো হচ্ছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

ছেলের ‘পরকীয়া ঠেকাতে’ বিমানে বোমার ভুয়া খবর দিলেন মা: র‍্যাব

ছবি

মিটফোর্ডের সামনে লাল চাঁদ হত্যার বিচার দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালে: আসিফ নজরুল

ছবি

দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা

ছবি

সায়মা ওয়াজেদকে ছুটিতে পাঠালো ডব্লিউএইচও: হেলথ পলিসি ওয়াচ

ডেমরায় বাস ও মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে যুবক নিহত

শেরপুর সীমান্ত দিয়ে নারী-শিশুসহ ১০ জনকে পুশইন

চাঁদপুরে খতিবকে হত্যার চেষ্টা, হামলাকারী আটক

ছবি

শার্শায় বাগআঁচড়া-কায়বা সড়কের বেহাল দশা : চরম দুর্ভোগে মানুষ

ছবি

ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ১৩৮ রোগী, বেশিরভাগই বরিশালের

সূত্রাপুরে ‘গ্যাসের’ আগুনে একই পরিবারে দগ্ধ ৫

tab

জাতীয়

সাধারণ স্কুলে কমছে শিক্ষার্থী মাদ্রাসায় বাড়ছে ভর্তি

রাকিব উদ্দিন

বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫

চলতি শিক্ষাবর্ষে মাদ্রাসার ইবতেদায়ী (১ম থেকে ৫ম শ্রেণী) স্তরে ছাত্র-ছাত্রী বেড়েছে। তবে সাধারণ শিক্ষা ধারার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক উভয় স্তরেই শিক্ষার্থী কমেছে। সাধারণ স্কুলগুলোতে ধারাবাহিকভাবে শিক্ষার্থী কমতে থাকার এই প্রবণতাকে ‘আশঙ্কাজনক’ বলছেন শিক্ষাবিদরা।

তাদের দাবি, সাধারণ স্কুলে পাঠদানের পরিবেশ উন্নতি না হওয়া ও কোচিংয়ের পেছনে বাড়তি খরচের কারণে গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র পরিবারের লোকজন সন্তানদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে পাঠাচ্ছেন। কারণ মাদ্রাসায় পড়ানোর খরচ খুব একটা লাগে না। এ ধরণের প্রতিষ্ঠান সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের অনুদানে চলে।

এ বিষয়ে প্রবীণ শিক্ষক নেতা ‘বাংলাদেশ অধ্যক্ষ পরিষদের’ সভাপতি মোহাম্মদ মাজহারুল হান্নান সংবাদকে বলেছেন, ‘সাধারণ স্কুল-কলেজে শিক্ষার্থী কেন কমছে সেই বিষয়ে সরকারের গবেষণা করা উচিত। কিন্তু আমার মনে হয়, এই সরকার শিক্ষার বিষয়ে নির্বিকার। তাদের এ নিয়ে খুব একটা মাথা ব্যাথা নেই।’

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) থেকে জানা গেছে, ২০২৫ ইবতেদায়ী স্তরে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪০ লাখ ৩৫ হাজার ৪৫৩ জন। আর ২০২৬ শিক্ষাবর্ষে এই সংখ্যা বেড়ে দাড়াচ্ছে ৪৩ লাখ ৪৬ হাজার ৮৩৬ জনে। সেই হিসেবে মাদ্রাসার এই প্রাথমিক স্তরে এক বছরে শিক্ষার্থী বেড়েছে তিন লাখ ১১ হাজার ৩৮৩ জন।

অন্যদিকে সাধারণ শিক্ষা স্তরে ষষ্ঠ শ্রেণীতে চলতি শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী রয়েছে ৪০ লাখ ৪৬ হাজার ১৯৭ জন; আর ২০২৬ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী কমে দাঁড়াচ্ছে ৩৭ লাখ ৫৮ হাজার ৮৪৬ জনে।

চলতি শিক্ষাবর্ষে ৭ম শ্রেণীতে মোট শিক্ষার্থী হলো ৩৭ লাখ ৮৫ হাজার ৮৯ জন; আর আগামী শিক্ষাবর্ষে তা কমে দাঁড়াচ্ছে ৩৬ লাখ ৪৮ হাজার ৮৯১ জনে।

অষ্টম শ্রেণীতে ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৭ লাখ ১৬ হাজার ৪৬৫ জন; আর আগামী শিক্ষাবর্ষে এই সংখ্যা কমে দাঁড়াচ্ছে ৩৫ লাখ ৩১ হাজার ৭৮২ জনে।

নবম শ্রেণীতে চলতি শিক্ষাবর্ষে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪০ লাখ ছয় হাজার ৩৩৯ জন; আর আগামী শিক্ষাবর্ষে এই সংখ্যা কমে দাঁড়াচ্ছে ৩৯ লাখ ৪৪ হাজার ২৯ জনে।

২০২৫ শিক্ষাবর্ষে ইবতেদায়ী এবং সাধারণ শিক্ষার ৬ষ্ঠ থেকে ১০তম শ্রেণী পর্যন্ত মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল দুই কোটি ৩২ লাখ ৯০ হাজার ৯০২ জন। আগামী শিক্ষাবর্ষে তা কমে দাঁড়াচ্ছে এক কোটি ৯৫ লাখ ১৪ হাজার ৫৫৫ জনে।

প্রাথমিক শিক্ষা পদ্ধতি নিয়ে কাজ করেন বেসরকারি ব্র্যাক বিশ^বিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক মঞ্জুর আহমদ।

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার্থী কমতে থাকার কারণ সম্পর্কে তিনি সংবাদকে বলেছেন, ‘গরিব ছেলেমেয়ের জন্য স্কুলে টিকে থাকা এখন মুশকিল। স্কুলের পাশাপাশি তাদের প্রাইভেট কোচিংয়ে যেতে হয়। শিক্ষা সংক্রান্ত সবকিছুর খরচই এখন বেশি। কিন্তু সরকারের এদিকে নজর আছে বলে মনে হয় না।’

মাদ্রাসায় সেই খরচ খুব একটা নেই মন্তব্য করে ড. মঞ্জুর আহমদ বলেন, ‘কোভিড মহামারীর সময় (২০২০) থেকেই দেশে মাদ্রাসায় শিক্ষার্থী বাড়ছে; এর বিপরীতে সাধারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী কমছে। এটা খুবই আশঙ্কাজনক ব্যাপার।’ শিক্ষাবিদরা বলছেন, শিক্ষার প্রাথমিক স্তরে ভাষা ও গণিতের ভিত্তিমূলক দক্ষতা, অর্থাৎ প্রতিটি শিশুকে শেখার সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। এর সঙ্গে শিশুর নিরাপত্তা, স্কুলে টিকে থাকা, শারীরিক ও মানসিক ব্যবস্থা এবং দায়িত্বশীল সামাজিক আচরণেও দৃষ্টি দিতে হবে।

সাধারণ ধারার স্কুলে এসব কাজ ঠিকমতো হচ্ছে না- দাবি করে শিক্ষাবিদরা বলেন, অর্ধেকের বেশি শিশু পঞ্চম শ্রেণী সমাপ্ত করেও পড়তে, লিখতে বা অঙ্কের চার নিয়ম ব্যবহার করতে পারে না। গত দুই দশকে পরপর বিভিন্ন প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কার্যক্রম চালানোর পরও এ ক্ষেত্রে খুব একটা পরিবর্তন হয়নি বলে তাদের দাবি।

সরকার শিক্ষাখাতকে খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না মন্তব্য করে মঞ্জুর আহমদ বলেন, ‘এই সরকার বিভিন্ন খাতের জন্য সংস্কার কমিশন করেছে। কিন্তু শিক্ষা সংস্কারে কোনো কমিশন হয়নি। আমরা দাবি জানালেও তা আমলে নেয়া হয়নি।’

তবে অধ্যক্ষ মোহাম্মদ মাজহারুল হান্নান বলেন, ‘সাধারণ স্কুলগুলো যেভাবে কোচিং নির্ভর হয়ে পড়ছে তাতে অনেক পিতা-মাতার পক্ষেই সন্তানের পড়ালেখার ব্যয় বহন করা সম্ভব হচ্ছে না। এজন্য তারা সন্তানদের ধর্মীয় শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে হয়তো পাঠাচ্ছেন। কিন্তু এটা দেখার দায়িত্ব কার?... সরকারের। তারা কী এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে?’

গ্রামাঞ্চলের অনেক স্কুলে নূন্যতম শিক্ষক নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মাদ্রাসাগুলোকে আবার এই সমস্যা নেই। স্থানীয় লোকজন স্বেচ্ছায় এসব প্রতিষ্ঠানে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছেন।’

মাদ্রাসার বাজেটও বড় হচ্ছে :

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সারাদেশের মাদ্ররাসায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে, তাই এ খাতে বাজেটও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে মোট ৯৫ হাজার ৬৪৪ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে এই খাতে বরাদ্দ ছিল মোট ৯৪ হাজার ৭১০ কোটি টাকা।

বিদায়ী অর্থবছরের তুলনায় নতুন অর্থবছরে গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে তিন হাজার ৪১৬ কোটি টাকা কম বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এ মন্ত্রণালয়ে ৩৫ হাজার ৪০৩ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। বিদায়ী অর্থবছরে এ মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ ছিল ৩৮ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা।

প্রাথমিক শিক্ষায় প্রস্তাবিত বরাদ্দ টাকা হিসাবে কিছুটা কমেছে। তবে বিদায়ী অর্থবছরের তুলনায় এবার মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষায় তিন হাজার ৪৫৫ কোটি টাকা বেশি বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।

২০২৫-২৬ অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষায় ৪৭ হাজার ৫৬৩ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা চলতি অর্থবছরে ছিল ৪৪ হাজার ১০৮ কোটি টাকা।

আগের অর্থবছরের তুলনায় নতুন অর্থবছরে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে ৮৯৫ কোটি টাকা বেশি বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন অর্থ উপদেষ্টা। নতুন অর্থবছরে এ বিভাগের জন্য ১২ হাজার ৭২৮ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা আগের অর্থবছরে ১১ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা ছিল।

back to top