আদালতে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদা -সংবাদ
সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদা রিমান্ড শুনানিতে আদালতে বলেছেন, নির্বাচন হয়ে গেলে কমিশনারের কোনো কিছু করার থাকে না। নির্বাচন বিতর্কিত হয়েছে, কিন্তু সেটার জন্য নির্বাচন কমিশনারের কোনো দোষ নেই।
সোমবার,(২৩ জুন ২০২৫) বিকেলে শুনানি শেষে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাফিজুর রহমানের আদালতে ৪ দিনের রিমান্ড শুনানিতে বিচারকের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
সোমবার বিকেল ৩টার কিছু পরে কেএম নূরুল হুদাকে আদালতের হাজতখানায় হাজির রাখা হয়। পেছনে হ্যান্ডকাফ, মাথায় হেলমেট ও গায়ে বুলেট প্রুফ জ্যাকেট পরিয়ে ১ ঘণ্টা পর তাকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এ সময় আইনজীবীদের সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলেন তিনি। পরে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা কথা বলতে বাধা দেয়ায় কাঠগড়ার মাঝামাঝি অংশে দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়ান তিনি। এরপর বিচারক আসেন। শেরেবাংলা নগর থানায় প্রহসনের অভিযোগে করা মামলায় তার ১০ দিনের রিমান্ড শুনানি শুরু হয়। শুনানি শেষে নূরুল হুদার ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।
শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট হাসিনার ফ্যাসিজম তৈরি করার জন্য প্রধান ভূমিকা রেখেছেন নূরুল হুদা। তিনি জনতার হাতে কট। জনগণ ওনাকে রাস্তায় পেয়ে ধরে ফেলেছেন। কারণ হলো, এরা জনগণের ভোটের অধিকার, মৌলিক অধিকার হরণ করেছে। জনগণের অধিকার হরণ করায় জনগণই তাকে ধরে, পরে উত্তরা এলাকায় পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। এরা যদি মানুষের পক্ষে থাকতো, তাহলে হাসিনা এত বড় ফ্যাসিস্ট হতে পারত না। তিনি ২০১৭ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছিলেন। রাজনৈতিক দলগুলোকে আশ্বস্ত করে ভোটে এনেছেন। কিন্তু তিনি জনগণ ও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। নির্বাচন কমিশন সারাদেশের সব ডিসিকে নির্দেশ দিয়েছেন আগের রাতে সব ভোট সম্পন্ন করার জন্য। তাকে বলা হয়, নিশি রাতের নির্বাচন কমিশনার। তিনি এ রকম নির্বাচন করেন, তার আত্মীয়, পরিবারের কাছে কীভাবে মুখ দেখাবেন? তিনি জাতির সঙ্গে এত বড় প্রতারণা করেছেন।’
আসামিপক্ষের আইনজীবী তৌহিদুল ইসলাম সজীব জামিন
শুনানি করেন। তিনি বলেন, ‘রিমান্ড কী কারণে হবে, কেন হবে? সে বিষয়গুলো এখানে আসেনি। মামলার ধারাগুলো দেখার জন্য বলব। আজ যে ধারায় এ মামলা হয়েছে, সবই জামিনযোগ্য ধারার। ওনারা জামিনযোগ্য ধারায় মামলা দিয়েছেন, আবার রিমান্ড চাচ্ছেন। এ মামলার এজাহার ত্রুটিপূর্ণ। এ মামলার আইনগতভাবে চলার সুযোগ নেই।’
এ সময় রিমান্ড শুনানিতে বিচারক নূরুল হুদার কাছে জানতে চান, আপনি মনে করেন কিনা দায়িত্ব নেয়ার পর আপনারা শপথ ভঙ্গ করেছেন? তখন নূরুল হুদা বলেন, ‘না, আমি মনে করি না।’
তখন বিচারক বলেন, আপনার নির্বাচনে সবাই ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পেরেছেন কিনা? তখন নূরুল হুদা বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন ৫টা লোক নিয়ে গঠিত। আর এ নির্বাচনের জন্য আরও ১৫ লাখ লোক নিয়োজিত থাকে। রিটার্নিং কর্মকর্তা, প্রিজাইডিং অফিসার, পুলিশ, আর্মি সবাই থাকে। তাদের সবার ওপর নির্বাচনের দায়িত্ব থাকে। কিন্তু ঢাকায় বসে প্রত্যন্ত অঞ্চলে নির্বাচনে কী হচ্ছে, সবটা জানার সুযোগ নেই।’
এ সময় বিচারক বলেন, ‘যারা ভোট কারচুপি করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছেন? তখন নূরুল হুদা বলেন, ‘নির্বাচন হয়ে গেলে নির্বাচন কমিশনের হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই। এরপর নির্বাচনের বিষয়টি হাইকোর্ট দেখবে। কোথাও কোনো সমস্যা হলে হাইকোর্ট মামলায় লড়বে।’
এরপর আদালত জানতে চায়, নির্বাচনের পর থেকে নির্বাচনী কর্মকর্তারা আপনার অধীনে। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগে আপনি ব্যবস্থা নিয়েছেন? সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের যে হুঙ্কার মুভমেন্ট ছিল, আপনি তা দেখেছেন কিনা?
এ বিষয়ে নূরুল হুদা আদালতে বলেন, ‘এ বিষয়গুলো আমার জানা নেই।’ এরপর তিনি প্রসিকিউশনের এক কথার জবাবে বলেন, ‘ডিসি, এসপিকে টাকা দেয়ার মাধ্যমে নির্বাচন প্রভাবিত করার যে কথা বলা হয়েছে, এ ধরনের কিছুই হয়নি। আর টাকা লেনদেনের এমন কোনো অভিযোগ ছিল না নির্বাচন কমিশনে। এজন্য ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। নির্বাচন হয়ে গেলে কমিশনারের কোনো কিছু করার থাকে না। নির্বাচন বিতর্কিত হয়েছে, কিন্তু সেটার জন্য নির্বাচন কমিশনারের কোনো দোষ নেই।’
আদালতে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদা -সংবাদ
সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫
সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদা রিমান্ড শুনানিতে আদালতে বলেছেন, নির্বাচন হয়ে গেলে কমিশনারের কোনো কিছু করার থাকে না। নির্বাচন বিতর্কিত হয়েছে, কিন্তু সেটার জন্য নির্বাচন কমিশনারের কোনো দোষ নেই।
সোমবার,(২৩ জুন ২০২৫) বিকেলে শুনানি শেষে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাফিজুর রহমানের আদালতে ৪ দিনের রিমান্ড শুনানিতে বিচারকের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
সোমবার বিকেল ৩টার কিছু পরে কেএম নূরুল হুদাকে আদালতের হাজতখানায় হাজির রাখা হয়। পেছনে হ্যান্ডকাফ, মাথায় হেলমেট ও গায়ে বুলেট প্রুফ জ্যাকেট পরিয়ে ১ ঘণ্টা পর তাকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এ সময় আইনজীবীদের সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলেন তিনি। পরে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা কথা বলতে বাধা দেয়ায় কাঠগড়ার মাঝামাঝি অংশে দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়ান তিনি। এরপর বিচারক আসেন। শেরেবাংলা নগর থানায় প্রহসনের অভিযোগে করা মামলায় তার ১০ দিনের রিমান্ড শুনানি শুরু হয়। শুনানি শেষে নূরুল হুদার ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।
শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট হাসিনার ফ্যাসিজম তৈরি করার জন্য প্রধান ভূমিকা রেখেছেন নূরুল হুদা। তিনি জনতার হাতে কট। জনগণ ওনাকে রাস্তায় পেয়ে ধরে ফেলেছেন। কারণ হলো, এরা জনগণের ভোটের অধিকার, মৌলিক অধিকার হরণ করেছে। জনগণের অধিকার হরণ করায় জনগণই তাকে ধরে, পরে উত্তরা এলাকায় পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। এরা যদি মানুষের পক্ষে থাকতো, তাহলে হাসিনা এত বড় ফ্যাসিস্ট হতে পারত না। তিনি ২০১৭ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছিলেন। রাজনৈতিক দলগুলোকে আশ্বস্ত করে ভোটে এনেছেন। কিন্তু তিনি জনগণ ও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। নির্বাচন কমিশন সারাদেশের সব ডিসিকে নির্দেশ দিয়েছেন আগের রাতে সব ভোট সম্পন্ন করার জন্য। তাকে বলা হয়, নিশি রাতের নির্বাচন কমিশনার। তিনি এ রকম নির্বাচন করেন, তার আত্মীয়, পরিবারের কাছে কীভাবে মুখ দেখাবেন? তিনি জাতির সঙ্গে এত বড় প্রতারণা করেছেন।’
আসামিপক্ষের আইনজীবী তৌহিদুল ইসলাম সজীব জামিন
শুনানি করেন। তিনি বলেন, ‘রিমান্ড কী কারণে হবে, কেন হবে? সে বিষয়গুলো এখানে আসেনি। মামলার ধারাগুলো দেখার জন্য বলব। আজ যে ধারায় এ মামলা হয়েছে, সবই জামিনযোগ্য ধারার। ওনারা জামিনযোগ্য ধারায় মামলা দিয়েছেন, আবার রিমান্ড চাচ্ছেন। এ মামলার এজাহার ত্রুটিপূর্ণ। এ মামলার আইনগতভাবে চলার সুযোগ নেই।’
এ সময় রিমান্ড শুনানিতে বিচারক নূরুল হুদার কাছে জানতে চান, আপনি মনে করেন কিনা দায়িত্ব নেয়ার পর আপনারা শপথ ভঙ্গ করেছেন? তখন নূরুল হুদা বলেন, ‘না, আমি মনে করি না।’
তখন বিচারক বলেন, আপনার নির্বাচনে সবাই ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পেরেছেন কিনা? তখন নূরুল হুদা বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন ৫টা লোক নিয়ে গঠিত। আর এ নির্বাচনের জন্য আরও ১৫ লাখ লোক নিয়োজিত থাকে। রিটার্নিং কর্মকর্তা, প্রিজাইডিং অফিসার, পুলিশ, আর্মি সবাই থাকে। তাদের সবার ওপর নির্বাচনের দায়িত্ব থাকে। কিন্তু ঢাকায় বসে প্রত্যন্ত অঞ্চলে নির্বাচনে কী হচ্ছে, সবটা জানার সুযোগ নেই।’
এ সময় বিচারক বলেন, ‘যারা ভোট কারচুপি করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছেন? তখন নূরুল হুদা বলেন, ‘নির্বাচন হয়ে গেলে নির্বাচন কমিশনের হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই। এরপর নির্বাচনের বিষয়টি হাইকোর্ট দেখবে। কোথাও কোনো সমস্যা হলে হাইকোর্ট মামলায় লড়বে।’
এরপর আদালত জানতে চায়, নির্বাচনের পর থেকে নির্বাচনী কর্মকর্তারা আপনার অধীনে। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগে আপনি ব্যবস্থা নিয়েছেন? সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের যে হুঙ্কার মুভমেন্ট ছিল, আপনি তা দেখেছেন কিনা?
এ বিষয়ে নূরুল হুদা আদালতে বলেন, ‘এ বিষয়গুলো আমার জানা নেই।’ এরপর তিনি প্রসিকিউশনের এক কথার জবাবে বলেন, ‘ডিসি, এসপিকে টাকা দেয়ার মাধ্যমে নির্বাচন প্রভাবিত করার যে কথা বলা হয়েছে, এ ধরনের কিছুই হয়নি। আর টাকা লেনদেনের এমন কোনো অভিযোগ ছিল না নির্বাচন কমিশনে। এজন্য ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। নির্বাচন হয়ে গেলে কমিশনারের কোনো কিছু করার থাকে না। নির্বাচন বিতর্কিত হয়েছে, কিন্তু সেটার জন্য নির্বাচন কমিশনারের কোনো দোষ নেই।’