জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘মাফিয়া সিস্টেমের সঙ্গে আমরা খেলবো না। এই সিস্টেমের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান হয়েছে। খেলার নিয়ম বদলাতে হবে। পুরনো খেলা বন্ধ না হলে আরেকটি গণঅভ্যুত্থানের প্রস্তুতি নিতে হবে।’

শুক্রবার,(১৮ জুলাই ২০২৫) বিকেলে নারায়ণগঞ্জ শহরে পদযাত্রা শেষে চাষাঢ়া গোলচত্বরে এক পথসভায় তিনি এসব কথা বলেন।

নাহিদ বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের পরে বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে পরিবর্তনের কথা বলেছিলাম। এই রাষ্ট্রব্যবস্থার পরিবর্তন করতে হবে। পুরনো রাষ্ট্রব্যবস্থার এক চরম উদাহরণ হচ্ছে এই নারায়ণগঞ্জ শহর, যেখানে পরিবারতন্ত্র, মাফিয়াতন্ত্র, গডফাদারতন্ত্র সব একাকার হয়ে গেছে। এই একই সিস্টেমে পুরো বাংলাদেশ এতদিন ধরে পরিচালিত হয়ে আসছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জকে কিছু পরিবার বছরের পর বছর নিয়ন্ত্রণ করেছে। এই নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে তারা দখলদারিত্ব, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস কায়েম করেছে এবং জনগণের অধিকার হরণ করেছে।’ এই মাফিয়া সিস্টেমের সঙ্গে আমরা খেলবো না, পুরনো

খেলায় অংশ নেবো না। এই পুরনো খেলার বিরুদ্ধেই গণঅভ্যুত্থান হয়েছে, আমরা রক্ত দিয়েছি। তাই খেলার নিয়ম বদলাতে হবে। কিন্তু আমরা জানি, খেলার নিয়ম এখনো বদলায়নি। নারায়ণগঞ্জে খেলা এখনো বন্ধ হয়নি। খেলা বন্ধ না হলে আরেকটি গণঅভ্যুত্থানের জন্য প্রস্তুতি নিন।’

নাহিদ বলেন, ‘নতুন বন্দোবস্তের আকাক্সক্ষা নিয়ে আমরা গণঅভ্যুত্থানে লড়াই করেছি। সেই নতুন বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। এই যুদ্ধ সেদিনই শেষ হবে, যেদিন পুরনো বন্দোবস্তের পরিবর্তন করে জনগণের গণতান্ত্রিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠা করতে পারবো।’

সকালে মুন্সিগঞ্জে পদযাত্রা শেষে দুপুরে নারায়ণগঞ্জে আসেন এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা। দুপুরের খাবার শেষে নগরীর নিতাইগঞ্জ এলাকা থেকে পদযাত্রা শুরু হয়। দলটির কয়েক হাজার নেতা, কর্মী ও সমর্থক প্রায় তিন কিলোমিটার হেঁটে চাষাঢ়ায় এসে থামেন। সেখানে সড়কের ওপর একটি ট্রাকের মাধ্যমে অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করা হয়।

পদযাত্রায় ‘নারায়ণগঞ্জবাসীর স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ’ নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপিকে অনুপ্রাণিত করেছে বলেও মন্তব্য করেন নাহিদ ইসলাম।

তিনি অভিযোগ করেন, ‘এই পদযাত্রার আগের রাতে জনআতঙ্ক তৈরি করতে নারায়ণগঞ্জ শহরে জুলাই পদযাত্রার একটি তোরণে সন্ত্রাসীরা আগুন দিয়েছে।’

রাজধানী লাগোয়া নারায়ণগঞ্জে ‘আওয়ামী লীগের মাফিয়াতন্ত্র, দখলদারিত্ব ও গডফাদারতন্ত্র পুনর্বাসিত হচ্ছে’ বলেও মন্তব্য করেন অন্তর্বর্তী সরকারের সাবেক এই উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, ‘মাফিয়া ব্যবসায়ীদের রক্ষা করা হচ্ছে, আর ছোট-মাঝারি ব্যবসায়ীরা চাঁদাবাজদের তাড়নায় ব্যবসা করতে পারছে না।’

জুলাইয়ে নিহতদের বিচার চেয়ে মামলা করা পরিবারগুলো নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

নাহিদ বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে সন্ত্রাসের অভয়ারণ্য তৈরি করা হয়েছিল, আমরা সেই অভয়ারণ্য ভেঙে ফেলবো। আমরা কখনো হুমকিতে ভয় পাইনি, পাবোও না।’

তিনি গণঅভ্যুত্থানে নারায়ণগঞ্জবাসীর ভূমিকার কথা তুলে ধরে বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাসে নারায়ণগঞ্জের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।’

এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘সন্ত্রাসী হামলা করে আমাদের থামিয়ে রাখা যাবে না। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগকে ফেরানোর জন্য ভারতীয় শক্তিগুলো একযোগে মাঠে নেমেছে। কিন্তু আমরা আবারও রক্ত দিয়ে হলেও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের আর কখনো ফিরে আসতে দেবো না। কেয়ামত পর্যন্ত বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের রাজনীতির আর কোনো সুযোগ নেই।’

আওয়ামী লীগের আমলে অনুষ্ঠিত বিতর্কিত নির্বাচনগুলোতে জাতীয় পার্টি ও ১৪ দল অংশগ্রহণ করায় তাদের ‘গাদ্দার’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক দল নয়, এটি একটি ভারতীয় দল। এই দলে ভালো বলতে কিছু নেই।’

গোপালগঞ্জে এনসিপির কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের হামলার ঘটনায় কিছু বুদ্ধিজীবী ‘খুনিদের পক্ষ’ নিয়েছেন বলেও অভিযোগ করেন দলটির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ।

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন আমাদের জন্য মৃত্যু পরোয়ানা। তাই আপনাদের মতো সুশীলতা আমি দেখাতে পারি না। আপনাদের বুদ্ধিজীবীত্ব প্রশাসনের কাছে বর্গা দেয়া, আর আমাদের জীবন জনগণের কাছে বর্গা।’

গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে উৎখাত হওয়া আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন সম্ভব নয়। গোপালগঞ্জের সাম্প্রতিক ঘটনার পর আওয়ামী লীগের তওবা করার সুযোগও আর নেই।’

চাঁদাবাজ ও দখলদারদের বিরুদ্ধেও কড়া হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি।

পদযাত্রায় আরও উপস্থিত ছিলেন দলটির যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা, যুগ্ম সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল আমিন, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সার্জিস আলম, দক্ষিণাঞ্চলের সংগঠক শওকত আলী এবং নারায়ণগঞ্জ জেলার যুগ্ম সমন্বয়কারী আহমেদুর রহমান তনু প্রমুখ।

সাড়ে ছয়টার দিকে পদযাত্রা শেষ করে এনসিপির গাড়িবহর চাষাঢ়া-আদমজী সড়ক হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দিয়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা হয় বলে জানিয়েছেন নেতারা।