গোপালগঞ্জে শনিবার,(১৯ জুলাই ২০২৫) রাত ৮টা থেকে রোববার সকাল ৬টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ কামরুজ্জামান এ ঘোষণা দেন। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে শনিবার বিকেল পৌনে ৫টায় পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
এর আগে শনিবার সকাল ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল থাকলেও শহরে মানুষের চলাচল ছিল সীমিত।
গত বুধবার এনসিপির (জাতীয় নাগরিক পার্টি) পদযাত্রা ঘিরে আয়োজিত সমাবেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হামলা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষের পর রণক্ষেত্রে পরিণত হয় গোপালগঞ্জ শহর। টানা পাঁচ ঘণ্টার ওই সংঘর্ষে চারজন নিহত হন এবং আহতদের মধ্যে একজন গত বৃহস্পতিবার রাতে মারা যান।
সংঘাত চলাকালে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আটকা পড়া এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া যানে করে গোপালগঞ্জ ত্যাগ করেন।
এই সহিংসতার পরিপ্রেক্ষিতে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট প্রথমে ১৪৪ ধারা জারি করেন এবং পরে গত বুধবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়। এরপর সেটি স্থায়ীভাবে বাড়ানো হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, গতকাল শুক্রবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টা বিরতির পর ফের কারফিউ কার্যকর হয়।
পরবর্তীতে গতকাল শুক্রবার বিকেলে কারফিউ বাড়িয়ে শনিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত করা হয়। শনিবার সকালে জেলা প্রশাসন জানায়, কারফিউ শিথিল থাকবে সকাল ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত।
কারফিউ শিথিল হলেও
জনচলাচল সীমিত
গোপালগঞ্জে শনিবার সকাল ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ১৪ ঘণ্টা কারফিউ শিথিল থাকলেও শহরে মানুষের উপস্থিতি ছিল খুবই কম।
যানবাহনের সংখ্যা ছিল হাতেগোনা। কিছু দোকানপাট খুললেও বেচাকেনা ছিল দুর্বল।
স্থানীয়রা জানান, শনিবার এখানে সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় সাধারণ সময়েও লোকজনের উপস্থিতি কম থাকে। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনার পর উদ্ভূত পরিস্থিতি ও গ্রেপ্তার আতঙ্ক।
হরিদাসপুর ইউনিয়নের ইজিবাইকচালক আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘রাস্তায় নামছি, কিন্তু যাত্রী নেই। এমনিতেই শনিবার লোক কম থাকে, তার ওপর একটা আতঙ্ক আছে মানুষের মনে।’
তিনি জানান, সাধারণত দিনে ৭০০-৮০০ টাকা আয় করলেও গত তিন দিন ধরে আয় ২০০-৩০০ টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ। অথচ ইজিবাইকের জন্য দৈনিক ৪০০ টাকা জমা দিতে হয়।
ডিসি রোডের ব্যবসায়ী বাবুল হোসেন বলেন, ‘আজ মার্কেট বন্ধ, তবে কারফিউ শিথিল থাকায় দোকান খুলেছি। কিন্তু বিক্রি নেই। গত তিন দিন দোকান বন্ধ থাকায় প্রায় ২০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। সংঘর্ষে দোকানের শাটারে গুলি লেগেছে, কাপড়ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এতে আরও ২০ হাজার টাকার ক্ষতি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা রাজনীতি করি না, পেটের রাজনীতি করি। দোকান খুললে পেট চলে। যত তাড়াতাড়ি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, ততই ভালো।’
৪ মামলায় আসামি ৩০০৮, গ্রেপ্তার ২৭৭ জন গোপালগঞ্জে সহিংসতার ঘটনায় সন্ত্রাস দমন ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে মোট চারটি মামলা দায়ের করা হয়েছে, যাতে আসামি করা হয়েছে ৩,০০৮ জনকে।
গোপালগঞ্জ সদর থানা: গত বৃহস্পতিবার ৫৭৫ জন গতকাল শুক্রবার ৪০৪ জন (সন্ত্রাস দমন আইন) কোটালীপাড়া থানা: বৃহস্পতিবার ১,৬৫৫ জন (বিশেষ ক্ষমতা আইন) কাশিয়ানী থানা: বৃহস্পতিবার ৩৭৪ জন (বিশেষ ক্ষমতা আইন) মামলার বাদী পুলিশ।
এ পর্যন্ত জেলার পাঁচ থানায় মোট ২৭৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে: গোপালগঞ্জ থানা: ৯২ জন মুকসুদপুর থানা: ৭৯ জন কাশিয়ানী থানা: ৫৭ জন কোটালীপাড়া থানা: ২২ জন টুঙ্গিপাড়া থানা: ২৭ জন
গোপালগঞ্জ সিজেএম আদালতের পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম জানান, গ্রেপ্তারকৃতদের আদালতে হাজির করা হলে বিচারক সবাইকে জেলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
বড় বাজারের চাল ব্যবসায়ী অনুপ সাহা (৫৪) বলেন, ‘তিন দিন পর দোকান খুলেছি। সকালে কিছু বিক্রি হলেও দুপুরের পর বাজার ফাঁকা হয়ে যায়, তাই দোকান বন্ধ করে দিয়েছি।’
সবজি ব্যবসায়ী কিবরিয়া মিয়া (৪৫) বলেন, ‘সকালে লোক বেশি ছিল। জোহরের আজানের পর থেকে
লোকজন কমতে শুরু করে, তারপর একেবারে ফাঁকা হয়ে যায়। স্বল্প সময়েই সব বিক্রি করে ফেলেছি।’
পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে কারফিউ জারি থাকবে কিনা, সে বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে জেলা প্রশাসন। শহরজুড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল অব্যাহত রয়েছে।
শনিবার, ১৯ জুলাই ২০২৫
গোপালগঞ্জে শনিবার,(১৯ জুলাই ২০২৫) রাত ৮টা থেকে রোববার সকাল ৬টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ কামরুজ্জামান এ ঘোষণা দেন। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে শনিবার বিকেল পৌনে ৫টায় পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
এর আগে শনিবার সকাল ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল থাকলেও শহরে মানুষের চলাচল ছিল সীমিত।
গত বুধবার এনসিপির (জাতীয় নাগরিক পার্টি) পদযাত্রা ঘিরে আয়োজিত সমাবেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হামলা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষের পর রণক্ষেত্রে পরিণত হয় গোপালগঞ্জ শহর। টানা পাঁচ ঘণ্টার ওই সংঘর্ষে চারজন নিহত হন এবং আহতদের মধ্যে একজন গত বৃহস্পতিবার রাতে মারা যান।
সংঘাত চলাকালে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আটকা পড়া এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া যানে করে গোপালগঞ্জ ত্যাগ করেন।
এই সহিংসতার পরিপ্রেক্ষিতে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট প্রথমে ১৪৪ ধারা জারি করেন এবং পরে গত বুধবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়। এরপর সেটি স্থায়ীভাবে বাড়ানো হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, গতকাল শুক্রবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টা বিরতির পর ফের কারফিউ কার্যকর হয়।
পরবর্তীতে গতকাল শুক্রবার বিকেলে কারফিউ বাড়িয়ে শনিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত করা হয়। শনিবার সকালে জেলা প্রশাসন জানায়, কারফিউ শিথিল থাকবে সকাল ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত।
কারফিউ শিথিল হলেও
জনচলাচল সীমিত
গোপালগঞ্জে শনিবার সকাল ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ১৪ ঘণ্টা কারফিউ শিথিল থাকলেও শহরে মানুষের উপস্থিতি ছিল খুবই কম।
যানবাহনের সংখ্যা ছিল হাতেগোনা। কিছু দোকানপাট খুললেও বেচাকেনা ছিল দুর্বল।
স্থানীয়রা জানান, শনিবার এখানে সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় সাধারণ সময়েও লোকজনের উপস্থিতি কম থাকে। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনার পর উদ্ভূত পরিস্থিতি ও গ্রেপ্তার আতঙ্ক।
হরিদাসপুর ইউনিয়নের ইজিবাইকচালক আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘রাস্তায় নামছি, কিন্তু যাত্রী নেই। এমনিতেই শনিবার লোক কম থাকে, তার ওপর একটা আতঙ্ক আছে মানুষের মনে।’
তিনি জানান, সাধারণত দিনে ৭০০-৮০০ টাকা আয় করলেও গত তিন দিন ধরে আয় ২০০-৩০০ টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ। অথচ ইজিবাইকের জন্য দৈনিক ৪০০ টাকা জমা দিতে হয়।
ডিসি রোডের ব্যবসায়ী বাবুল হোসেন বলেন, ‘আজ মার্কেট বন্ধ, তবে কারফিউ শিথিল থাকায় দোকান খুলেছি। কিন্তু বিক্রি নেই। গত তিন দিন দোকান বন্ধ থাকায় প্রায় ২০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। সংঘর্ষে দোকানের শাটারে গুলি লেগেছে, কাপড়ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এতে আরও ২০ হাজার টাকার ক্ষতি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা রাজনীতি করি না, পেটের রাজনীতি করি। দোকান খুললে পেট চলে। যত তাড়াতাড়ি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, ততই ভালো।’
৪ মামলায় আসামি ৩০০৮, গ্রেপ্তার ২৭৭ জন গোপালগঞ্জে সহিংসতার ঘটনায় সন্ত্রাস দমন ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে মোট চারটি মামলা দায়ের করা হয়েছে, যাতে আসামি করা হয়েছে ৩,০০৮ জনকে।
গোপালগঞ্জ সদর থানা: গত বৃহস্পতিবার ৫৭৫ জন গতকাল শুক্রবার ৪০৪ জন (সন্ত্রাস দমন আইন) কোটালীপাড়া থানা: বৃহস্পতিবার ১,৬৫৫ জন (বিশেষ ক্ষমতা আইন) কাশিয়ানী থানা: বৃহস্পতিবার ৩৭৪ জন (বিশেষ ক্ষমতা আইন) মামলার বাদী পুলিশ।
এ পর্যন্ত জেলার পাঁচ থানায় মোট ২৭৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে: গোপালগঞ্জ থানা: ৯২ জন মুকসুদপুর থানা: ৭৯ জন কাশিয়ানী থানা: ৫৭ জন কোটালীপাড়া থানা: ২২ জন টুঙ্গিপাড়া থানা: ২৭ জন
গোপালগঞ্জ সিজেএম আদালতের পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম জানান, গ্রেপ্তারকৃতদের আদালতে হাজির করা হলে বিচারক সবাইকে জেলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
বড় বাজারের চাল ব্যবসায়ী অনুপ সাহা (৫৪) বলেন, ‘তিন দিন পর দোকান খুলেছি। সকালে কিছু বিক্রি হলেও দুপুরের পর বাজার ফাঁকা হয়ে যায়, তাই দোকান বন্ধ করে দিয়েছি।’
সবজি ব্যবসায়ী কিবরিয়া মিয়া (৪৫) বলেন, ‘সকালে লোক বেশি ছিল। জোহরের আজানের পর থেকে
লোকজন কমতে শুরু করে, তারপর একেবারে ফাঁকা হয়ে যায়। স্বল্প সময়েই সব বিক্রি করে ফেলেছি।’
পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে কারফিউ জারি থাকবে কিনা, সে বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে জেলা প্রশাসন। শহরজুড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল অব্যাহত রয়েছে।