৫ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি আটকে দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়
বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি (পিপিএ) ছাড়াই চলছে রামপাল ১৩২০ মেগাওয়াট ও পটুয়াখালী ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ মোট ৯টি বিদ্যুৎকেন্দ্র। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের সম্মিলিত বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় ৩৪২৩ মেগাওয়াট। সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ (সাবেক মন্ত্রিসভা) কমিটি কর্তৃক পিপিএ বা ট্যরিফ অ্যাপ্রুভাল (দর অনুমোদন) না থাকায় এসব বিদুৎকেন্দ্রের ভর্তুকির অর্থ প্রদান স্থগিত রেখেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১২ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে এই কেন্দ্রগুলো বাস্তবায়ন করা হয়েছিল। এরমধ্যে রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ উদ্যোগে এবং পটুয়াখালী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি রাষ্ট্রীয় আরপিসিএল ও চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান নরিনকোর যৌথ উদ্যোগে বাস্তবায়ন করা হয়। এছাড়া, চারটি বিদ্যুৎকেন্দ্র রাষ্ট্রীয় রুরাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (আরপিএসএল), দুটি রাষ্ট্রীয় বিআর পাওয়ারজেন লিমিটেডের (বিআরপিএল) এবং একটি রাষ্ট্রীয় নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি ও চীনের সিএমসির যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ-চায়না রিনিউএবল এনার্জি কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিআরইসিএল) মালিকানাধীন।
বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তির অনুমোদন বা যথাযথ ট্যারিফ অ্যাপ্রুভাল না থাকার বিষয়ে গত ১৭ জুন এক চিঠিতে অর্থ বিভাগ জানায়, বিদ্যুৎ বিভাগকে ৩৬৯৬ কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়া হলেও, পিপিএ অনুমোদন না থাকায় ২০২৪ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত ৯টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য নির্ধারিত ৫০৫৬.৮৯ কোটি টাকা আটকে রাখা হয়েছে।
রাষ্ট্রীয়ভাবে পিডিবি বিদ্যুতের পাইকারি ক্রেতা। পিডিবি বিভিন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সরকার নির্ধারিত পাইকারি বিদ্যুৎ ক্রয় করে ভোক্তা পর্যায়ে বিতরণ করে। কোনো বিদ্যুৎকেন্দ্রের ইউনিটপ্রতি উৎপাদন খরচ যদি সরকার নির্ধারিত পাইকারি দরের চেয়ে বেশি হয় তাহলে অতিরিক্ত টাকা ওই বিদ্যুৎকেন্দ্র ভর্তুকি হিসেবে পায়। অর্থ বিভাগ এই টাকা পিডিবিকে প্রদান করে। পিডিবি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে ভর্তুকির অর্থ পরিশোধ করে।
বিদ্যুৎ বিভাগকে দেয়া নির্দেশনায় অর্থ বিভাগ বলেছে, ভবিষ্যতে ভর্তুকি প্রদান নিশ্চিত করতে হলে ২০২৫ সালের জুলাইয়ের মধ্যে এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির কাছ থেকে পিপিএ অনুমোদন নিশ্চিত করতে হবে।
শিক্ষার্থী-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়। নতুন সরকার একটি অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষার সময় এই সমস্যাটি (পিপিএ না থাকা) চিহ্নিত করে। এরপর, বিদ্যুৎ বিভাগ এবং বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে (পিডিবি) পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করতে বলা হয়।
এ বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের তৎকালীন সচিব হাবিবুর রহমান অর্থ বিভাগকে জানান যে বেশিরভাগ বিদ্যুৎকেন্দ্র সম্পূর্ণরূপে সরকারি অথবা সরকারি মালিকানাধীন যৌথ উদ্যোগে নির্মিত হওয়ায় ট্যারিফ (বিদ্যুৎ ক্রয়ের দর) অনুমোদন চাওয়া হয়নি।
পিপিএ অনুমোদন ছাড়া বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো হলো- ১৩২০ মেগাওয়াট রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ১৩২০ মেগাওয়াট পটুয়াখালী বিদ্যুৎকেন্দ্র (আরপিসিএল-নরিনকো), আরপিসিএলের ২১০ মেগাওয়াট ময়মনসিংহ বিদ্যুৎকেন্দ্র (গ্যাস), ৫২.১৯৪ মেগাওয়াট কোদ্দা বিদ্যুৎকেন্দ্র (ফার্নেশ তেল), ২৫.৫০ মেগাওয়াট রাউজান বিদ্যুৎকেন্দ্র (ফার্নেশ তেল) ও ১০৫ মেগাওয়াট গাজীপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র (ফার্নেশ তেল); বিআরপিএলের ১৬৩ মেগাওয়াট মিরসরাই বিদ্যুৎকেন্দ্র (ফার্নেশ তেল) ও ১৫০ মেগাওয়াট কোদ্দা বিদ্যুৎকেন্দ্র (ফার্নেশ তেল); এবং বিসিআরইসিএলের ৬৮ মেগাওয়াট সিরাজগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্র (সৌর)।
পিপিএর অনুমোদন না থাকার বিষয়ে জানিতে চাইলে আরপিসিএলের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা সংবাদকে বলেন, তারা তাদের চারটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ট্যারিফ (বিদ্যুতের দর) প্রস্তাব জমা দিয়েছেন। কিন্তু ট্যারিফ কমাতে সরকার আলোচনা অব্যাহত রেখেছে। ফলে পিপিএ অনুমোদন বিলম্বিত হচ্ছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা সংবাদকে বলেন, তারা পিপিএ না থাকা বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর ট্যারিফ পর্যালোচনা করছেন। পর্যালোচনা শেষ হওয়ার পর বিদ্যুৎ বিভাগের অনুমোদনের জন্য পিপিএ জমা দেয়া হবে।
এদিকে গত ১৪ মে তারিখে অর্থ বিভাগের একটি চিঠির জবাবে ২১ মে পিডিবি জানায়, পিডিবি নয়টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে আটটির জন্য বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে পিপিএ সম্মতি পেয়েছে। এছাড়া, বিসিআরইসিএলও উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সম্মতি পেয়েছে বলে জানা গেছে।
পিডিবির দাবি, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ট্যারিফ কমিটির অনুমোদন নিশ্চিত করা হয়েছে, কিন্তু অর্থ বিভাগ এখনও ভর্তুকির অর্থ ছাড় করেনি।
৫ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি আটকে দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়
শনিবার, ১৯ জুলাই ২০২৫
বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি (পিপিএ) ছাড়াই চলছে রামপাল ১৩২০ মেগাওয়াট ও পটুয়াখালী ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ মোট ৯টি বিদ্যুৎকেন্দ্র। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের সম্মিলিত বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় ৩৪২৩ মেগাওয়াট। সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ (সাবেক মন্ত্রিসভা) কমিটি কর্তৃক পিপিএ বা ট্যরিফ অ্যাপ্রুভাল (দর অনুমোদন) না থাকায় এসব বিদুৎকেন্দ্রের ভর্তুকির অর্থ প্রদান স্থগিত রেখেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১২ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে এই কেন্দ্রগুলো বাস্তবায়ন করা হয়েছিল। এরমধ্যে রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ উদ্যোগে এবং পটুয়াখালী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি রাষ্ট্রীয় আরপিসিএল ও চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান নরিনকোর যৌথ উদ্যোগে বাস্তবায়ন করা হয়। এছাড়া, চারটি বিদ্যুৎকেন্দ্র রাষ্ট্রীয় রুরাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (আরপিএসএল), দুটি রাষ্ট্রীয় বিআর পাওয়ারজেন লিমিটেডের (বিআরপিএল) এবং একটি রাষ্ট্রীয় নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি ও চীনের সিএমসির যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ-চায়না রিনিউএবল এনার্জি কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিআরইসিএল) মালিকানাধীন।
বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তির অনুমোদন বা যথাযথ ট্যারিফ অ্যাপ্রুভাল না থাকার বিষয়ে গত ১৭ জুন এক চিঠিতে অর্থ বিভাগ জানায়, বিদ্যুৎ বিভাগকে ৩৬৯৬ কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়া হলেও, পিপিএ অনুমোদন না থাকায় ২০২৪ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত ৯টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য নির্ধারিত ৫০৫৬.৮৯ কোটি টাকা আটকে রাখা হয়েছে।
রাষ্ট্রীয়ভাবে পিডিবি বিদ্যুতের পাইকারি ক্রেতা। পিডিবি বিভিন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সরকার নির্ধারিত পাইকারি বিদ্যুৎ ক্রয় করে ভোক্তা পর্যায়ে বিতরণ করে। কোনো বিদ্যুৎকেন্দ্রের ইউনিটপ্রতি উৎপাদন খরচ যদি সরকার নির্ধারিত পাইকারি দরের চেয়ে বেশি হয় তাহলে অতিরিক্ত টাকা ওই বিদ্যুৎকেন্দ্র ভর্তুকি হিসেবে পায়। অর্থ বিভাগ এই টাকা পিডিবিকে প্রদান করে। পিডিবি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে ভর্তুকির অর্থ পরিশোধ করে।
বিদ্যুৎ বিভাগকে দেয়া নির্দেশনায় অর্থ বিভাগ বলেছে, ভবিষ্যতে ভর্তুকি প্রদান নিশ্চিত করতে হলে ২০২৫ সালের জুলাইয়ের মধ্যে এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির কাছ থেকে পিপিএ অনুমোদন নিশ্চিত করতে হবে।
শিক্ষার্থী-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়। নতুন সরকার একটি অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষার সময় এই সমস্যাটি (পিপিএ না থাকা) চিহ্নিত করে। এরপর, বিদ্যুৎ বিভাগ এবং বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে (পিডিবি) পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করতে বলা হয়।
এ বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের তৎকালীন সচিব হাবিবুর রহমান অর্থ বিভাগকে জানান যে বেশিরভাগ বিদ্যুৎকেন্দ্র সম্পূর্ণরূপে সরকারি অথবা সরকারি মালিকানাধীন যৌথ উদ্যোগে নির্মিত হওয়ায় ট্যারিফ (বিদ্যুৎ ক্রয়ের দর) অনুমোদন চাওয়া হয়নি।
পিপিএ অনুমোদন ছাড়া বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো হলো- ১৩২০ মেগাওয়াট রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ১৩২০ মেগাওয়াট পটুয়াখালী বিদ্যুৎকেন্দ্র (আরপিসিএল-নরিনকো), আরপিসিএলের ২১০ মেগাওয়াট ময়মনসিংহ বিদ্যুৎকেন্দ্র (গ্যাস), ৫২.১৯৪ মেগাওয়াট কোদ্দা বিদ্যুৎকেন্দ্র (ফার্নেশ তেল), ২৫.৫০ মেগাওয়াট রাউজান বিদ্যুৎকেন্দ্র (ফার্নেশ তেল) ও ১০৫ মেগাওয়াট গাজীপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র (ফার্নেশ তেল); বিআরপিএলের ১৬৩ মেগাওয়াট মিরসরাই বিদ্যুৎকেন্দ্র (ফার্নেশ তেল) ও ১৫০ মেগাওয়াট কোদ্দা বিদ্যুৎকেন্দ্র (ফার্নেশ তেল); এবং বিসিআরইসিএলের ৬৮ মেগাওয়াট সিরাজগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্র (সৌর)।
পিপিএর অনুমোদন না থাকার বিষয়ে জানিতে চাইলে আরপিসিএলের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা সংবাদকে বলেন, তারা তাদের চারটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ট্যারিফ (বিদ্যুতের দর) প্রস্তাব জমা দিয়েছেন। কিন্তু ট্যারিফ কমাতে সরকার আলোচনা অব্যাহত রেখেছে। ফলে পিপিএ অনুমোদন বিলম্বিত হচ্ছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা সংবাদকে বলেন, তারা পিপিএ না থাকা বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর ট্যারিফ পর্যালোচনা করছেন। পর্যালোচনা শেষ হওয়ার পর বিদ্যুৎ বিভাগের অনুমোদনের জন্য পিপিএ জমা দেয়া হবে।
এদিকে গত ১৪ মে তারিখে অর্থ বিভাগের একটি চিঠির জবাবে ২১ মে পিডিবি জানায়, পিডিবি নয়টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে আটটির জন্য বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে পিপিএ সম্মতি পেয়েছে। এছাড়া, বিসিআরইসিএলও উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সম্মতি পেয়েছে বলে জানা গেছে।
পিডিবির দাবি, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ট্যারিফ কমিটির অনুমোদন নিশ্চিত করা হয়েছে, কিন্তু অর্থ বিভাগ এখনও ভর্তুকির অর্থ ছাড় করেনি।