ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার উপদ্রব সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় এই মশার কামড়ে আক্রান্ত হয়ে আরও ৩৯৪ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। আর চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা উত্তর সিটিতে ১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এ নিয়ে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে শনিবার,(১৯ জুলাই ২০২৫) পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১৬ হাজার ৭৮৯ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তার মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৬২ জনের মৃত্যু হয়েছে।
২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ১৬১ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৩৮ জন, ঢাকা বিভাগে ৫৮ জন, ঢাকা উত্তর সিটিতে ২৪ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ৪১ জন, খুলনা বিভাগে ৮ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৬ জন, রাজশাহী বিভাগে ৫৮ জন।
আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যুর শীর্ষে ঢাকা দক্ষিণ। মারা গেছে ২৫ জন। চলতি মাসের গত ১৯ দিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সারাদেশে ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি ও কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডা. জাহিদুল ইসলাম জানান, আক্রান্ত ডেঙ্গু রোগীদের মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪৪ জন, মিটফোর্ড হাসপাতালে ৪৩ জন, ঢাকা শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে ১ ৪জন, সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২১ জন, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫৫ জন, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ২৭ জন, মহাখালী ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কোভিড-১৯ হাসপাতালে ২৩ জন ভর্তি আছে। এ নিয়ে ঢাকার ১৮টি সরকারি হাসপাতালে ২৫৯ জন ভর্তি আছে। চট্টগ্রাম বিভাগে ভর্তি আছে ২৯ জন। এভাবে সারাদেশের বিভিন্ন হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রে মোট ভর্তি আছে ১ হাজার ২৩৯ জন।
এছাড়াও ডেঙ্গু আক্রান্ত আরও অনেকেই চিকিৎসকের গাইডলাইন নিয়ে বাসাবাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ওই সংখ্যা জানা গেলে আক্রান্ত আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণী বিদ্যা বিভাগের ডেঙ্গু গবেষক কবিরুল বাসার তার এক প্রতিবেদনে বলেছেন, ডেঙ্গু বাংলাদেশের জন্য একটি অন্যতম জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন, অপরিকল্পিত নগরায়ন এবং জনসচেতনতার অভাবের কারণে এডিস মশা বাহিত এই রোগের প্রকোপ ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
২০০০ সালে ডেঙ্গু সংক্রমণ প্রথম ধরা পড়ে। এরপর থেকে প্রতিবছর এর প্রকোপ আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। আর ২০১৯ ও ২০২৩ সালে ডেঙ্গু ভয়াবহ রূপ নেয়। আর মৃত্যুহারও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়।
বর্তমানে ডেঙ্গু শুধু ঢাকায় সীমাবদ্ধ নেই। বরং সারাদেশে মশাবাহিত এই রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। কারণ গ্রাম থেকে শহর প্রায় সব জায়গাই অপরিকল্পিত নগরায়ন ও দুর্বল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ফলে ডেঙ্গুর প্রকোপ দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে।
বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের অভাবে বিভিন্ন স্থানে পানি জমে থাকে, যা মশার বংশবৃদ্ধির ক্ষেত্র তৈরি করে। শহরে উঁচুু ভবন ও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় আলো বাতাস চলাচল কম হওয়ায় মশার সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কীটতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা জানান, পরিষ্কার জমা পানিতে অর্থাৎ বৃষ্টির সময়ে ডাবের খোসা, টায়ার, ফুলের টবসহ বিভিন্ন জায়গায় পানি জমে যায়। এ সমস্ত জায়গায় ডেঙ্গুর বিস্তার হয়। তাই আমাদের সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। এ সমস্ত জায়গায় পানি জমে যাতে না থাকে। তার জন্য সবাই সচেতন হলে ডেঙ্গুর প্রকোপ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব হবে।
হাসপাতাল সূত্রগুলো জানায়, ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে শিশুসহ অনেকেই হাসপাতালে ভর্তি হয়। তাদের প্রতিদিন ওষুধ, পরীক্ষা, হাসপাতালের খরচসহ মিলে ৩ থেকে ৫ হাজার টাকাও খরচ হয়। অনেকের পক্ষে এই টাকা খরচ করা কষ্টকর বলে রোগীদের স্বজনরা অভিযোগ করেছেন। এই প্রতিবেদক সম্প্রতি সরজমিনে শিশু হাসপাতালে গেলে আক্রান্ত শিশুদের স্বজনরা এই সব তথ্য জানিয়েছেন।
আর বাসাবাড়িতে মশা মারতে ওষুধ দিতে হচ্ছে। আবার অনেকেই কয়েল জ্বালিয়ে রাতে ঘুমায়। এই সব কারণে রোগীদের সমস্যা বেশি হচ্ছে। আবার যাদের ডায়বেটিসসহ অন্যান্য অসংক্রমণ রোগ আছে, তারা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে তাদের জটিলতা বেড়ে যায়। ফলে তাদের চিকিৎসা খরচ বেশি হয়।
কীটতত্ত্ব বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিটি ওয়ার্ডভিত্তিক নিয়মিত মশার ওষুধ ও মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করলে পরিস্থিতির আরও উন্নতি হত। বিশ্বের অনেক দেশে মশা দমনে বছরজুড়ে আলাদা বিভাগ রয়েছে। তারা কাজ করছেন। এতে বিভিন্ন প্রজাতির মশা মারতে তারা সব সময় ওষুধ দেয়। বাংলাদেশে মশা দমনে আলাদা বিভাগ থাকলে তারা বছরজুড়ে মশা দমনে কাজ করলে পরিস্থিতির উন্নতি হত। আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার কমতো বলে মন্তব্য করেন।
শনিবার, ১৯ জুলাই ২০২৫
ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার উপদ্রব সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় এই মশার কামড়ে আক্রান্ত হয়ে আরও ৩৯৪ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। আর চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা উত্তর সিটিতে ১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এ নিয়ে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে শনিবার,(১৯ জুলাই ২০২৫) পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১৬ হাজার ৭৮৯ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তার মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৬২ জনের মৃত্যু হয়েছে।
২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ১৬১ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৩৮ জন, ঢাকা বিভাগে ৫৮ জন, ঢাকা উত্তর সিটিতে ২৪ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ৪১ জন, খুলনা বিভাগে ৮ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৬ জন, রাজশাহী বিভাগে ৫৮ জন।
আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যুর শীর্ষে ঢাকা দক্ষিণ। মারা গেছে ২৫ জন। চলতি মাসের গত ১৯ দিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সারাদেশে ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি ও কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডা. জাহিদুল ইসলাম জানান, আক্রান্ত ডেঙ্গু রোগীদের মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪৪ জন, মিটফোর্ড হাসপাতালে ৪৩ জন, ঢাকা শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে ১ ৪জন, সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২১ জন, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫৫ জন, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ২৭ জন, মহাখালী ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কোভিড-১৯ হাসপাতালে ২৩ জন ভর্তি আছে। এ নিয়ে ঢাকার ১৮টি সরকারি হাসপাতালে ২৫৯ জন ভর্তি আছে। চট্টগ্রাম বিভাগে ভর্তি আছে ২৯ জন। এভাবে সারাদেশের বিভিন্ন হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রে মোট ভর্তি আছে ১ হাজার ২৩৯ জন।
এছাড়াও ডেঙ্গু আক্রান্ত আরও অনেকেই চিকিৎসকের গাইডলাইন নিয়ে বাসাবাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ওই সংখ্যা জানা গেলে আক্রান্ত আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণী বিদ্যা বিভাগের ডেঙ্গু গবেষক কবিরুল বাসার তার এক প্রতিবেদনে বলেছেন, ডেঙ্গু বাংলাদেশের জন্য একটি অন্যতম জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন, অপরিকল্পিত নগরায়ন এবং জনসচেতনতার অভাবের কারণে এডিস মশা বাহিত এই রোগের প্রকোপ ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
২০০০ সালে ডেঙ্গু সংক্রমণ প্রথম ধরা পড়ে। এরপর থেকে প্রতিবছর এর প্রকোপ আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। আর ২০১৯ ও ২০২৩ সালে ডেঙ্গু ভয়াবহ রূপ নেয়। আর মৃত্যুহারও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়।
বর্তমানে ডেঙ্গু শুধু ঢাকায় সীমাবদ্ধ নেই। বরং সারাদেশে মশাবাহিত এই রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। কারণ গ্রাম থেকে শহর প্রায় সব জায়গাই অপরিকল্পিত নগরায়ন ও দুর্বল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ফলে ডেঙ্গুর প্রকোপ দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে।
বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের অভাবে বিভিন্ন স্থানে পানি জমে থাকে, যা মশার বংশবৃদ্ধির ক্ষেত্র তৈরি করে। শহরে উঁচুু ভবন ও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় আলো বাতাস চলাচল কম হওয়ায় মশার সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কীটতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা জানান, পরিষ্কার জমা পানিতে অর্থাৎ বৃষ্টির সময়ে ডাবের খোসা, টায়ার, ফুলের টবসহ বিভিন্ন জায়গায় পানি জমে যায়। এ সমস্ত জায়গায় ডেঙ্গুর বিস্তার হয়। তাই আমাদের সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। এ সমস্ত জায়গায় পানি জমে যাতে না থাকে। তার জন্য সবাই সচেতন হলে ডেঙ্গুর প্রকোপ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব হবে।
হাসপাতাল সূত্রগুলো জানায়, ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে শিশুসহ অনেকেই হাসপাতালে ভর্তি হয়। তাদের প্রতিদিন ওষুধ, পরীক্ষা, হাসপাতালের খরচসহ মিলে ৩ থেকে ৫ হাজার টাকাও খরচ হয়। অনেকের পক্ষে এই টাকা খরচ করা কষ্টকর বলে রোগীদের স্বজনরা অভিযোগ করেছেন। এই প্রতিবেদক সম্প্রতি সরজমিনে শিশু হাসপাতালে গেলে আক্রান্ত শিশুদের স্বজনরা এই সব তথ্য জানিয়েছেন।
আর বাসাবাড়িতে মশা মারতে ওষুধ দিতে হচ্ছে। আবার অনেকেই কয়েল জ্বালিয়ে রাতে ঘুমায়। এই সব কারণে রোগীদের সমস্যা বেশি হচ্ছে। আবার যাদের ডায়বেটিসসহ অন্যান্য অসংক্রমণ রোগ আছে, তারা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে তাদের জটিলতা বেড়ে যায়। ফলে তাদের চিকিৎসা খরচ বেশি হয়।
কীটতত্ত্ব বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিটি ওয়ার্ডভিত্তিক নিয়মিত মশার ওষুধ ও মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করলে পরিস্থিতির আরও উন্নতি হত। বিশ্বের অনেক দেশে মশা দমনে বছরজুড়ে আলাদা বিভাগ রয়েছে। তারা কাজ করছেন। এতে বিভিন্ন প্রজাতির মশা মারতে তারা সব সময় ওষুধ দেয়। বাংলাদেশে মশা দমনে আলাদা বিভাগ থাকলে তারা বছরজুড়ে মশা দমনে কাজ করলে পরিস্থিতির উন্নতি হত। আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার কমতো বলে মন্তব্য করেন।