তত্ত্বাবধায়ক ও উচ্চকক্ষ নিয়ে মঙ্গলবার ঐকমত্য হবে: আশা আলী রীয়াজের
একই ব্যক্তি দলীয়প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন কিনা, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে এই ইস্যুতে বিএনপির সঙ্গে ঐকমত্য হয়নি জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির। বিএনপির মতে, এক্ষেত্রে দলীয়প্রধানের অধিকার ক্ষুণ্য করা ঠিক হবে না। দল চাইলে তিনি হবেন। না চাইলে নয়। তবে জামায়াত ও এনসিপির মতে, দলীয়প্রধান প্রধানমন্ত্রী হলে ক্ষমতা কুক্ষিগত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে।
রোববার,(২০ জুলাই ২০২৫) ঢাকার ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের (বৈঠক) ১৫তম দিনের আলোচনা শেষে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
এ দিনের আলোচনার (সংলাপ) এজেন্ডায় ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার, প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে থাকার বিধান।
বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ সভাপতি আলী রীয়াজ বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের পদ্ধতি বিষয়ে অধিকাংশ দল একমত হয়েছে। কমিশন একটি সংশোধিত সমন্বিত প্রস্তাব দিয়েছে। প্রস্তাবগুলো লিখিত আকারে উত্থাপন করা হয়েছে। দলগুলো আলোচনা করে আজ মতামত জানাবে। কাল এ নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো যাবে বলে কমিশন আশা করে।
আলী রীয়াজ জানান, ‘উচ্চকক্ষের বিষয়ে একাধিক দিন আলোচনা হয়েছে। এর প্রতিষ্ঠা নিয়ে বিতর্ক নেই। তবে গঠনপ্রণালি নিয়ে মতভেদ আছে। আগামী দুই-এক দিনের মধ্যে আমরা একটি সিদ্ধান্ত নিতে পারবো বলে আশা করি।’ এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকলে চলতি মাসের মধ্যেই জুলাই সনদ তৈরি করা যাবে বলে মনে করেন ঐকমত্য কমিশনের সহ সভাপতি।
বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি আদালতের রায়ের মাধ্যমে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে বলে আমরা আশাবাদী। বিচার বিভাগকে বাইরে রেখে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে আরও কিছু বিষয় যুক্ত করা যায় কিনা, আমরা আলোচনা করেছি। এ নিয়ে পরশু দিন আলোচনা হবে। দলগুলো নিজেদের ফোরামে আলোচনা করে কাল আলোচনা করবে।’
প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে থাকার বিধান সম্পর্কে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা একত্রে জড়িত। কিন্তু দলীয়প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী বা সংসদ নেতা একই ব্যক্তি থাকার বিষয়ে অনেকেরই দ্বিমত।’
তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি দলীয়প্রধান, তার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার অধিকার ক্ষুণœ না হোক। এ সিদ্ধান্ত দল নেবে, তাকে প্রধানমন্ত্রী করবে কিনা। তবে এ নিয়ে আরও আলোচনা হবে।’
সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, ‘যুক্তরাজ্যের মতো দেশেও দলের প্রধান ব্যক্তিই প্রধানমন্ত্রী হন। তবে এটা নির্বাচন নয়, সংসদীয় দলের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে হয়ে থাকে। সে ব্যক্তি যদি কোনো দলের প্রধান হন, তাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অযোগ্য ঘোষণা করা হয় না।’
‘প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ক্ষেত্রে দলীয়প্রধানের জন্য অপশন খোলা থাকা উচিত’ মন্তব্য করে বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ‘এটা তার গণতান্ত্রিক অধিকার। পার্লামেন্টারি পার্টি যদি সিদ্ধান্ত নেয়, তবে তিনি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন। আবার তারা চাইলে অন্য কাউকেও মনোনয়ন দিতে পারে। কিন্তু সেই সুযোগটা রাখা জরুরি।’
সংলাপে এ বিষয়ে বিএনপির বিপক্ষে অবস্থান নেয় জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদিব বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘বিচার বিভাগকে যুক্ত না করার বিষয়ে আমরা দাবি জানিয়েছিলাম। এতে সবাই একমত হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগে সরকারি দলে তিনজন, বিরোধীদল তিনজন ও সংসদের তৃতীয় দল দুইজনের নাম প্রস্তাব করার প্রস্তাব দিয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘একই ব্যক্তি যদি প্রধানমন্ত্রী, দলীয়প্রধান ও সংসদ নেতা হন তাহলে বিভিন্ন বিতর্ক তৈরি হয়। যদি দলীয়প্রধান প্রধানমন্ত্রী হতে চান, তাহলে তাকে অন্যের কাছে দলের ভার হস্তান্তর করতে হবে। আগামীর বাংলাদেশের কথা চিন্তা করে আমরা তিন ব্যক্তির জন্য আলাদা তিনজনের প্রস্তাব দিয়েছি।’
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠায় প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনে নির্বাচন কমিটি সাতজন হোক বা পাঁচজন হোক, এতে আপত্তি নেই।’
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী দলীয়প্রধান থাকতে পারবেন না। এক ব্যক্তি দলীয়প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী হলে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার সম্ভাবনা থাকে। তবে লিডার অব দ্য হাউজ (সংসদ নেতা) হতে পারবেন।’
আলোচনায় (সংলাপ) কমিশনের সদস্য- বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ইফতেখারুজ্জামান, বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন ও মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার উপস্থিত ছিলেন।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, রোববার আলোচনায় বিএনপি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি আন্দোলন, কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টিসহ ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।
তত্ত্বাবধায়ক ও উচ্চকক্ষ নিয়ে মঙ্গলবার ঐকমত্য হবে: আশা আলী রীয়াজের
রোববার, ২০ জুলাই ২০২৫
একই ব্যক্তি দলীয়প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন কিনা, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে এই ইস্যুতে বিএনপির সঙ্গে ঐকমত্য হয়নি জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির। বিএনপির মতে, এক্ষেত্রে দলীয়প্রধানের অধিকার ক্ষুণ্য করা ঠিক হবে না। দল চাইলে তিনি হবেন। না চাইলে নয়। তবে জামায়াত ও এনসিপির মতে, দলীয়প্রধান প্রধানমন্ত্রী হলে ক্ষমতা কুক্ষিগত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে।
রোববার,(২০ জুলাই ২০২৫) ঢাকার ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের (বৈঠক) ১৫তম দিনের আলোচনা শেষে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
এ দিনের আলোচনার (সংলাপ) এজেন্ডায় ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার, প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে থাকার বিধান।
বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ সভাপতি আলী রীয়াজ বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের পদ্ধতি বিষয়ে অধিকাংশ দল একমত হয়েছে। কমিশন একটি সংশোধিত সমন্বিত প্রস্তাব দিয়েছে। প্রস্তাবগুলো লিখিত আকারে উত্থাপন করা হয়েছে। দলগুলো আলোচনা করে আজ মতামত জানাবে। কাল এ নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো যাবে বলে কমিশন আশা করে।
আলী রীয়াজ জানান, ‘উচ্চকক্ষের বিষয়ে একাধিক দিন আলোচনা হয়েছে। এর প্রতিষ্ঠা নিয়ে বিতর্ক নেই। তবে গঠনপ্রণালি নিয়ে মতভেদ আছে। আগামী দুই-এক দিনের মধ্যে আমরা একটি সিদ্ধান্ত নিতে পারবো বলে আশা করি।’ এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকলে চলতি মাসের মধ্যেই জুলাই সনদ তৈরি করা যাবে বলে মনে করেন ঐকমত্য কমিশনের সহ সভাপতি।
বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি আদালতের রায়ের মাধ্যমে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে বলে আমরা আশাবাদী। বিচার বিভাগকে বাইরে রেখে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে আরও কিছু বিষয় যুক্ত করা যায় কিনা, আমরা আলোচনা করেছি। এ নিয়ে পরশু দিন আলোচনা হবে। দলগুলো নিজেদের ফোরামে আলোচনা করে কাল আলোচনা করবে।’
প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে থাকার বিধান সম্পর্কে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা একত্রে জড়িত। কিন্তু দলীয়প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী বা সংসদ নেতা একই ব্যক্তি থাকার বিষয়ে অনেকেরই দ্বিমত।’
তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি দলীয়প্রধান, তার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার অধিকার ক্ষুণœ না হোক। এ সিদ্ধান্ত দল নেবে, তাকে প্রধানমন্ত্রী করবে কিনা। তবে এ নিয়ে আরও আলোচনা হবে।’
সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, ‘যুক্তরাজ্যের মতো দেশেও দলের প্রধান ব্যক্তিই প্রধানমন্ত্রী হন। তবে এটা নির্বাচন নয়, সংসদীয় দলের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে হয়ে থাকে। সে ব্যক্তি যদি কোনো দলের প্রধান হন, তাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অযোগ্য ঘোষণা করা হয় না।’
‘প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ক্ষেত্রে দলীয়প্রধানের জন্য অপশন খোলা থাকা উচিত’ মন্তব্য করে বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ‘এটা তার গণতান্ত্রিক অধিকার। পার্লামেন্টারি পার্টি যদি সিদ্ধান্ত নেয়, তবে তিনি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন। আবার তারা চাইলে অন্য কাউকেও মনোনয়ন দিতে পারে। কিন্তু সেই সুযোগটা রাখা জরুরি।’
সংলাপে এ বিষয়ে বিএনপির বিপক্ষে অবস্থান নেয় জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদিব বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘বিচার বিভাগকে যুক্ত না করার বিষয়ে আমরা দাবি জানিয়েছিলাম। এতে সবাই একমত হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগে সরকারি দলে তিনজন, বিরোধীদল তিনজন ও সংসদের তৃতীয় দল দুইজনের নাম প্রস্তাব করার প্রস্তাব দিয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘একই ব্যক্তি যদি প্রধানমন্ত্রী, দলীয়প্রধান ও সংসদ নেতা হন তাহলে বিভিন্ন বিতর্ক তৈরি হয়। যদি দলীয়প্রধান প্রধানমন্ত্রী হতে চান, তাহলে তাকে অন্যের কাছে দলের ভার হস্তান্তর করতে হবে। আগামীর বাংলাদেশের কথা চিন্তা করে আমরা তিন ব্যক্তির জন্য আলাদা তিনজনের প্রস্তাব দিয়েছি।’
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠায় প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনে নির্বাচন কমিটি সাতজন হোক বা পাঁচজন হোক, এতে আপত্তি নেই।’
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী দলীয়প্রধান থাকতে পারবেন না। এক ব্যক্তি দলীয়প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী হলে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার সম্ভাবনা থাকে। তবে লিডার অব দ্য হাউজ (সংসদ নেতা) হতে পারবেন।’
আলোচনায় (সংলাপ) কমিশনের সদস্য- বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ইফতেখারুজ্জামান, বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন ও মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার উপস্থিত ছিলেন।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, রোববার আলোচনায় বিএনপি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি আন্দোলন, কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টিসহ ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।