সাতক্ষীরার সদর উপজেলার ঘোনা ইউনিয় রাবেয়া খাতুন। ছোটবেলা থেকেই বাবার সাথে কৃষি কাজ করে বড় হয়েছেন। ওই অঞ্চলের জমিগুলো ছয় মাস পানির নিচে থাকার কারণে আবাদ করতে সমস্যা হতো। কিন্ত এখন ওই অঞ্চলের কৃষকের মনে সাহসের সঞ্চার হয়েছে। তারা এখন মোবাইলের মাধ্যমে আবহাওয়া ও ঝড়-বৃষ্টির তথ্য জানার কারণে চাষাবাদের ক্ষতি কমিয়ে এনেছেন।
তিনি সংবাদকে বলেন, ‘আগে লস হবে ভেবে আবাদ করতামনা, কৃষি অফিসারের কারণে সে ভয় দূর হয়ে গেছে। এখন ঝড়-বাদলের খবর আগেই দের ওনারা। উপজেলা অফিস থেকে এসএমএস এর মাধ্যমে রোদ বৃষ্টির খবর দেয়। আবার ফোনে অ্যাপ দিয়েছেন তার মাধ্যমে দেখা যায়।’
‘এখন ফসলও যেমন ভালো হচ্ছে, সাথে সাথে দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে। আমাদের সংসারের চিত্রই পাল্টে গেছে’, যোগ করেন তিনি।
কুমিল্লা জেলার লাকসাম উপজেলার কান্দিরপাড় ইউনিয়নের আব্দুর রহমান। তিনি তার কৃষি জমিতে সব ধরণের চাষবাস করেন। এই মৌসুমে ৫ বিঘা জমিতে ধান, মরিচ ও আলু চাষ করেছিলেন। ফলনো অনান্যবারের চেয়ে ভালো পেয়েছেন।সম্প্রতি ওই কৃষি জমির ফসলের আয় থেকে ছোট বোনকে বিয়েও দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এইবার যখন মরিচ তোলার সময় হলো তখন ভেবিছিলাম তিন দিন পরে তুলবো। কিন্ত বামিজ পোর্টালে যখন দেখলাম ২ দিন পরে বৃষ্টি হবে তখন সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করলাম। আগেই মরিচ উঠায়ে ফেললাম। সেবার আমার প্রায় দেড় লক্ষ টাকা লোকসানের হাত থেকে বেঁচে গেলাম।’
তিনি যোগ করেন, আমাদের অঞ্চলটা হাওর অঞ্চলে হওয়ায় খুব সাবধানে চাষবাস করতে হয়, সেই সাথে ঝড়-বৃষ্টির খবর আগে আগে রাখতে হয়। বামিস পোর্টাল ও ফেসবুক গ্রুপ থেকে আবহাওয়ার খবর পাওয়ায় কারণে আমাদের এলাকার কৃষকরা ক্ষতির হাত থেকে বেঁচে যাচ্ছে।
বগুড়া জেলার নন্দীগ্রাম উপজেলার চাকলমা গ্রামের কৃষক ও কৃষি উদ্যেক্তা মোঃ জাব্বির হোসেন জানান, আমি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আমি বামিস পোর্টাল সম্পর্কে জানতে পেরেছি। আমি সেখান থেকে আগাম বৃষ্টিপাতের তথ্য জানার কারণে তরমুজের জমিতে বৃষ্টি শুরুর আগেই নিষ্কাশন নালা তৈরি করি এবং পুরোনো ড্রেন সংস্কার করি। যার ফলশ্রুতিতে বৃষ্টির পানি খুব সহজেই নিষ্কাশিত হয়ে যায়।
তিনি বলেন, ‘আমার ১ বিঘা জমিতে প্রায় ৭০০টি তরমুজ গাছ ছিল। জলাবদ্ধতার কারণে তরমুজের গোড়া পঁচাসহ অন্যান্য রোগবালাইয়ের ব্যাপক সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু কৃষি আবহাওয়ার আগাম পূর্বাভাস পাওয়ার কারণে আমি আমার ক্ষেতের ফসল রক্ষা করতে পেরেছি। এছাড়াও ঐ সময়ে বালাইনাশক কম ব্যবহার করার কারণে আমার আর্থিক ক্ষতি কম হয়। আবহাওয়ার আগাম বার্তা কৃষি কাজে সঠিক ভাবে ব্যবহারের কারণে চৌদ্দ হাজার পাঁচশত টাকা ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পেয়েছি।’ এছাড়াও জাব্বির হোসেন ‘কৃষি আবহাওয়া তথ্য সেবা নন্দীগ্রাম’ ফেসবুক গ্রুপের একজন সদস্য হওয়ায় আবহাওয়ার আগাম বার্তা পেয়ে থাকে।
শুধু রাবেয়া খাতুন, আব্দুর রহমান বা কৃষি উদ্যেক্তা জাব্বির হোসেনই নয়, সারা দেশে হাজার হাজার কৃষকের ‘কৃষি আবহাওয়া তথ্য উন্নতির’ কারণে কৃষি ক্ষেত্রে নানান ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছেন। কৃষকরা সঠিক আবহাওয়ার পূর্বাভাস পাওয়ায় ফসল রোপণ, সার ও কীটনাশক প্রয়োগ, এবং ফসল কাটার মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করছে যা ফলন এবং কৃষকের আয় বৃদ্ধিতে সহায়ক ভুমিকা রাখছে। এছাড়া, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার পূর্বাভাস কৃষকদের ফসল ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে প্রস্তুতি নিতেও সাহায্য করছে।
এজন্য তারা বাংলাদেশ কৃষি আবহাওয়া তথ্য সেবা (বামিস)অ্যাপস ব্যাবহার করে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ‘কৃষি আবহাওয়া তথ্য পদ্ধতি উন্নতকরণ প্রকল্প’ মাধ্যমে বাস্তবায়ন করেছে সরকার। ইতোমধ্যে প্রকল্পের আওতায় বামিস পোর্টালের (www.bamis.gov.bd/)মাধ্যমে কৃষি আবহাওয়া পরামর্শসহ বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য উপাত্ত এবং বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে প্রাপ্ত নদ নদীর তথ্য উপাত্ত সন্নিবেশিত হয়েছে। এই পোর্টালটির সাথে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরসহ একাধিক প্রতিষ্ঠান যুক্ত আছে।
কৃষিবিদ ড. মোহাম্মদ শাহ কামাল খান বলেন, আবহাওয়া ও নদ-নদীর অবস্থার তথ্য কৃষকের কাছে পৌঁছানো ও সেগুলো ব্যবহারের সক্ষমতা তৈরি করা হয়েছে। এসব তথ্য ব্যবহার করে সময়মত ফসল লাগানো, উৎপাদন খরচ কমানো আর নিরাপদে ফসল পেতে কৃষকে সহায়তা করছে।
জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ও সেন্টার ফর পিপল অ্যান্ড এনভায়রন (সিপিই) পরিচালক মুহম্মদ আবদুর রহমান সংবাদকে বলেন, ‘জলবায়ুর উপাদানসমূহ এখন খুব দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে এবং স্বল্প স্থানের ব্যবধানে বদলে যাচ্ছে। যে কারণে অভিযোজন প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে। এর জন্য প্রয়োজন জলবায়ু তথ্য সেবা। আগাম তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত ইত্যাদির তথ্য জলবায়ু ঝুঁকিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর নিকট পৌঁছাতে পারলে প্রস্তুতি গ্রহণ সম্ভব হয়।’
তিনি বলেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি আগাম জলবায়ু তথ্যসেবা উপকূলীয় মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি হ্রাস করতে বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করছে।’
কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কৃষি আবহাওয়া পরামর্শ তৈরী ও বিস্তারের সাথে সম্পৃক্ত ব্যাক্তিরা কৃষকদের দক্ষতা ও সচেতনতা বাড়াতে পারলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলাসহ কৃষি আবহাওয়া পরামর্শ কাজে লাগিয়ে দেশের কৃষি ও কৃষকের অভূতপূর্ব উন্নতি হবে।
রোববার, ২০ জুলাই ২০২৫
সাতক্ষীরার সদর উপজেলার ঘোনা ইউনিয় রাবেয়া খাতুন। ছোটবেলা থেকেই বাবার সাথে কৃষি কাজ করে বড় হয়েছেন। ওই অঞ্চলের জমিগুলো ছয় মাস পানির নিচে থাকার কারণে আবাদ করতে সমস্যা হতো। কিন্ত এখন ওই অঞ্চলের কৃষকের মনে সাহসের সঞ্চার হয়েছে। তারা এখন মোবাইলের মাধ্যমে আবহাওয়া ও ঝড়-বৃষ্টির তথ্য জানার কারণে চাষাবাদের ক্ষতি কমিয়ে এনেছেন।
তিনি সংবাদকে বলেন, ‘আগে লস হবে ভেবে আবাদ করতামনা, কৃষি অফিসারের কারণে সে ভয় দূর হয়ে গেছে। এখন ঝড়-বাদলের খবর আগেই দের ওনারা। উপজেলা অফিস থেকে এসএমএস এর মাধ্যমে রোদ বৃষ্টির খবর দেয়। আবার ফোনে অ্যাপ দিয়েছেন তার মাধ্যমে দেখা যায়।’
‘এখন ফসলও যেমন ভালো হচ্ছে, সাথে সাথে দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে। আমাদের সংসারের চিত্রই পাল্টে গেছে’, যোগ করেন তিনি।
কুমিল্লা জেলার লাকসাম উপজেলার কান্দিরপাড় ইউনিয়নের আব্দুর রহমান। তিনি তার কৃষি জমিতে সব ধরণের চাষবাস করেন। এই মৌসুমে ৫ বিঘা জমিতে ধান, মরিচ ও আলু চাষ করেছিলেন। ফলনো অনান্যবারের চেয়ে ভালো পেয়েছেন।সম্প্রতি ওই কৃষি জমির ফসলের আয় থেকে ছোট বোনকে বিয়েও দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এইবার যখন মরিচ তোলার সময় হলো তখন ভেবিছিলাম তিন দিন পরে তুলবো। কিন্ত বামিজ পোর্টালে যখন দেখলাম ২ দিন পরে বৃষ্টি হবে তখন সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করলাম। আগেই মরিচ উঠায়ে ফেললাম। সেবার আমার প্রায় দেড় লক্ষ টাকা লোকসানের হাত থেকে বেঁচে গেলাম।’
তিনি যোগ করেন, আমাদের অঞ্চলটা হাওর অঞ্চলে হওয়ায় খুব সাবধানে চাষবাস করতে হয়, সেই সাথে ঝড়-বৃষ্টির খবর আগে আগে রাখতে হয়। বামিস পোর্টাল ও ফেসবুক গ্রুপ থেকে আবহাওয়ার খবর পাওয়ায় কারণে আমাদের এলাকার কৃষকরা ক্ষতির হাত থেকে বেঁচে যাচ্ছে।
বগুড়া জেলার নন্দীগ্রাম উপজেলার চাকলমা গ্রামের কৃষক ও কৃষি উদ্যেক্তা মোঃ জাব্বির হোসেন জানান, আমি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আমি বামিস পোর্টাল সম্পর্কে জানতে পেরেছি। আমি সেখান থেকে আগাম বৃষ্টিপাতের তথ্য জানার কারণে তরমুজের জমিতে বৃষ্টি শুরুর আগেই নিষ্কাশন নালা তৈরি করি এবং পুরোনো ড্রেন সংস্কার করি। যার ফলশ্রুতিতে বৃষ্টির পানি খুব সহজেই নিষ্কাশিত হয়ে যায়।
তিনি বলেন, ‘আমার ১ বিঘা জমিতে প্রায় ৭০০টি তরমুজ গাছ ছিল। জলাবদ্ধতার কারণে তরমুজের গোড়া পঁচাসহ অন্যান্য রোগবালাইয়ের ব্যাপক সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু কৃষি আবহাওয়ার আগাম পূর্বাভাস পাওয়ার কারণে আমি আমার ক্ষেতের ফসল রক্ষা করতে পেরেছি। এছাড়াও ঐ সময়ে বালাইনাশক কম ব্যবহার করার কারণে আমার আর্থিক ক্ষতি কম হয়। আবহাওয়ার আগাম বার্তা কৃষি কাজে সঠিক ভাবে ব্যবহারের কারণে চৌদ্দ হাজার পাঁচশত টাকা ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পেয়েছি।’ এছাড়াও জাব্বির হোসেন ‘কৃষি আবহাওয়া তথ্য সেবা নন্দীগ্রাম’ ফেসবুক গ্রুপের একজন সদস্য হওয়ায় আবহাওয়ার আগাম বার্তা পেয়ে থাকে।
শুধু রাবেয়া খাতুন, আব্দুর রহমান বা কৃষি উদ্যেক্তা জাব্বির হোসেনই নয়, সারা দেশে হাজার হাজার কৃষকের ‘কৃষি আবহাওয়া তথ্য উন্নতির’ কারণে কৃষি ক্ষেত্রে নানান ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছেন। কৃষকরা সঠিক আবহাওয়ার পূর্বাভাস পাওয়ায় ফসল রোপণ, সার ও কীটনাশক প্রয়োগ, এবং ফসল কাটার মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করছে যা ফলন এবং কৃষকের আয় বৃদ্ধিতে সহায়ক ভুমিকা রাখছে। এছাড়া, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার পূর্বাভাস কৃষকদের ফসল ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে প্রস্তুতি নিতেও সাহায্য করছে।
এজন্য তারা বাংলাদেশ কৃষি আবহাওয়া তথ্য সেবা (বামিস)অ্যাপস ব্যাবহার করে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ‘কৃষি আবহাওয়া তথ্য পদ্ধতি উন্নতকরণ প্রকল্প’ মাধ্যমে বাস্তবায়ন করেছে সরকার। ইতোমধ্যে প্রকল্পের আওতায় বামিস পোর্টালের (www.bamis.gov.bd/)মাধ্যমে কৃষি আবহাওয়া পরামর্শসহ বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য উপাত্ত এবং বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে প্রাপ্ত নদ নদীর তথ্য উপাত্ত সন্নিবেশিত হয়েছে। এই পোর্টালটির সাথে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরসহ একাধিক প্রতিষ্ঠান যুক্ত আছে।
কৃষিবিদ ড. মোহাম্মদ শাহ কামাল খান বলেন, আবহাওয়া ও নদ-নদীর অবস্থার তথ্য কৃষকের কাছে পৌঁছানো ও সেগুলো ব্যবহারের সক্ষমতা তৈরি করা হয়েছে। এসব তথ্য ব্যবহার করে সময়মত ফসল লাগানো, উৎপাদন খরচ কমানো আর নিরাপদে ফসল পেতে কৃষকে সহায়তা করছে।
জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ও সেন্টার ফর পিপল অ্যান্ড এনভায়রন (সিপিই) পরিচালক মুহম্মদ আবদুর রহমান সংবাদকে বলেন, ‘জলবায়ুর উপাদানসমূহ এখন খুব দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে এবং স্বল্প স্থানের ব্যবধানে বদলে যাচ্ছে। যে কারণে অভিযোজন প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে। এর জন্য প্রয়োজন জলবায়ু তথ্য সেবা। আগাম তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত ইত্যাদির তথ্য জলবায়ু ঝুঁকিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর নিকট পৌঁছাতে পারলে প্রস্তুতি গ্রহণ সম্ভব হয়।’
তিনি বলেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি আগাম জলবায়ু তথ্যসেবা উপকূলীয় মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি হ্রাস করতে বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করছে।’
কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কৃষি আবহাওয়া পরামর্শ তৈরী ও বিস্তারের সাথে সম্পৃক্ত ব্যাক্তিরা কৃষকদের দক্ষতা ও সচেতনতা বাড়াতে পারলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলাসহ কৃষি আবহাওয়া পরামর্শ কাজে লাগিয়ে দেশের কৃষি ও কৃষকের অভূতপূর্ব উন্নতি হবে।