পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন, ফাইল ছবি
সম্প্রতি বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশীদের ভিসা আবেদন প্রত্যাখ্যান করছে জানিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেছেন, এমন পরিস্থিতিতে তিনি নিজেও এ নিয়ে ‘উদ্বিগ্ন’। পাশাপাশি এই পরিস্থিতির জন্য তিনি নিজেদের (দেশের মানুষের) দায় দেখছেন। সামগ্রিকভাবে সুনামের প্রশ্ন তৈরি হওয়ায় ভিসা পাওয়া কঠিন হয়ে গেছে বলে তিনি মনে করছেন।
আজ বুধবার বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক সংবাদ সম্মেলনে তৌহিদ হোসেন এ মন্তব্য করেন।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই লিখেছেন, বিভিন্ন দেশের ভিসার জন্য আবেদন করে তারা প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন। ভিসা পাওয়া কঠিন হয়ে গেছে, ভ্রমণ সংক্রান্ত বিভিন্ন ফেইসবুক গ্রুপে এমন আলোচনা রয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ সম্মেলনে প্রসঙ্গটি টেনে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, বিভিন্ন রাষ্ট্র বাংলাদেশিদের ভিসা প্রত্যখ্যান করছে। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের উদ্বেগ আছে। প্রশ্ন শেষ হওয়ার আগেই পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “আপনার প্রশ্নটা আমি বুঝতে পেরেছি। এটা নিয়ে উদ্বেগ আমার নিজেরও আছে।”
তিনি বলেন, “আমি একটা উদাহরণ আপনাকে দিই। বিশেষ করে আপনারা জানেন, জার্মানিতে শিক্ষাব্যবস্থা খুবই উচ্চমানের এবং সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কোনো ফি লাগে না। কাজেই বাংলাদেশি ছাত্ররা খুবই আগ্রহী হয়ে উঠেছে জার্মানির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যাওয়ার জন্য। ৮০ হাজার আবেদন পড়েছে।
তিনি বলেন “জার্মান রাষ্ট্রদূত কয়েকদিন আগে চলে গেছেন, তিনি বলেছিলেন যে, ‘দেখুন আমার কিছুই করার নেই কারণ আমার মোট সামর্থই হচ্ছে দুই হাজার কেস প্রতিবছর ডিল করা’। তার মানে এত আবেদন তারা গ্রহণ করতে পারবেন না। পাকিস্তান থেকে প্রতিবছর তারা নয় হাজার শিক্ষার্থী নেয়। আমরা তাদের অনুরোধ করেছি, তারা যেন পাকিস্তানের সমান সংখ্যায় আমাদের শিক্ষার্থীদের নেয়। আমরা চেষ্টা করছি যে এটা করা যায় কিনা।”
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, যেসব দেশের দূতাবাস বাংলাদেশে নেই, সেসব দেশের ভিসা পেতে জটিলতা বেড়েছে। বিশেষ করে, যারা শিক্ষা এবং কাজের জন্য বিদেশ যেতে চান, তারা বেশি জটিলতায় পড়ছেন।
“অনেক দেশই কিন্তু পর্যটকদের জন্য অনলাইন ভিসা চালু করেছে। কিন্তু যখন আপনি একটা সময়ের জন্য সেখানে শিক্ষা বা কাজ করতে যাবেন, তখন সশরীরে উপস্থিত হয়ে ভিসা নিতে হয়। এটা নিয়েও আমরা অনেক সমস্যায় আছি। কারণ অনেকগুলো দেশের দূতাবাস বাংলাদেশে নেই, দিল্লিতে তাদের দূতাবাস আছে। কিন্তু এখন ভারতের ভিসা পাওয়া কঠিন হয়ে গেছে। এটা নিয়েও অনেকে ভোগান্তিতে পড়েছেন।”
তিনি বলেন, “আমরা চেষ্টা করছি এটার কোনো বিকল্প বের করা যায় কি না। যেমন: সার্বিয়ার জন্য একবার আমাদের ভিয়েতনাম থেকে ভিসা নেওয়া অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। এভাবে আমরা চেষ্টা করছি যে দিল্লি থাকুক, পাশাপাশি অন্য আরেকটি দেশ থেকে যেন বাংলাদেশিরা ভিসা নিতে পারে।”
কিন্তু ভিয়েতনামের ভিসাও তো এখন বাংলাদেশিরা পাচ্ছেন না, একজন সাংবাদিক এমন তথ্য দিলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “দেখুন ভিসা হচ্ছে একদমই একটি সার্বভৌম সিদ্ধান্ত সংশ্লিষ্ট দেশটির। আপনি কখনোই কাউকে বলতে পারবেন না, আপনি কেন আমাকে ভিসা দিলেন না। এটা কিন্তু বলা যাবে না। ভিসা নিয়ে বস্তুত সবখানেই, আমাদের সরকারি পর্যায়েও কথাবার্তা হয়।”
ভিসা না পাওয়ার জন্য বাংলাদেশিরা নিজেরাই দায়ী বলে দাবি করেন তৌহিদ হোসেন।
তিনি বলেন, “আমাদের দেশের লোকজনদের ভিসা যে বিভিন্নখানে বন্ধ করছে, এটার জন্য তাদেরকে (সংশ্লিষ্ট দেশকে) আমি যতখানি দায়ী করতে পারি, আমি মনে করি, আমরা নিজেরা তার থেকে বেশি দায়ী। কারণ আমরা খুব বেশি ভুয়া কাগজপত্র দাখিল করি। দ্বিতীয়ত আমাদের এখান থেকে তুলনামূলকভাবে অনিয়মিত অভিবানের সংখ্যা বেশি।
“কাজেই আমাদের সুনামের প্রশ্ন, যে কারণে আমাদের ভিসা কঠিন হয়ে গেছে। আসল লোকদের জন্যও কঠিন হয়ে গেছে। আগে আমাদের নিজেদের ঘর ঠিক করতে হবে, তাহলে এ সমস্যা থাকবে না।”
অনিয়মিত অভিবাসন হচ্ছে পুরোপুরি আইনগত প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে কোনো একটি দেশে গিয়ে কাজ করা বা থাকতে শুরু করা। সাধারণ ভ্রমণ ভিসায় গিয়ে অনেক দেশেই বাংলাদেশিরা কাজ করছেন এবং বছরের পর বছর অবস্থান করছেন এমন অভিযোগ বেশ পুরনো।
সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তানের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন তেহরিক ই তালিবান-টিটিপির পক্ষ নিয়ে পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গিয়ে একাধিক বাংলাদেশির মৃত্যুর বিষয়েও প্রশ্ন করা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ সম্মেলনে।
একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, পাকিস্তানে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে সম্প্রতি আরেক বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে, এর আগেও সেখানে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের সময় বাংলাদেশের নাগরিক মারা গেছেন। পাকিস্তানের পক্ষ থেকে এ বিষয়টি বাংলাদেশের সরকারকে জানানো হয়েছে কি না? আফগানিস্তানের পক্ষ হয়ে বাংলাদেশিরা কীভাবে যুদ্ধ করছে? এ বিষয়টিকে আপনারা কীভাবে দেখছেন?
জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “দেখুন, বাংলাদেশিরা বলা ঠিক হবে না। বিচ্ছিন্নভাবে যেকোনো জায়গায় একটা-দুইটা ঘটনা ঘটতে পারে। ইউক্রেন যুদ্ধেও তো দুই একজন বাংলাদেশি মারা গেছে। বাংলাদেশ তো এসব যুদ্ধে অংশগ্রহণ করছে না। এসবকে আমার মনে হয়, সেভাবেই দেখতে হবে।
“আমরা অবশ্যই চাই না যে আমাদের কেউ গিয়ে কোথাও এ ধরনের কার্যক্রমে জড়িত হোক। সেটা আফগানিস্তানের পক্ষে হোক বা পাকিস্তানের পক্ষে হোক বা ভারতের পক্ষে বা যেকোনোভাবেই যে কিছু হোক, তা আমরা চাই না।
“কিন্তু পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ কোনো দেশেরই সেভাবে থাকে না। একজন দুজন যদি কেউ এ ধরনের ঘটনা ঘটায়, সেটা দুঃখজনক। কিন্তু এসব ঘটনায় সরকারের পক্ষ থেকে বা দেশের পক্ষ থেকে কোন ধরনের কোন সমর্থন নেই।”
ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি বলেছেন, বাংলাদেশে একটি অবাধ সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পক্ষে ভারত। সোমবার সকালে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশের (ডিক্যাব) প্রতিনিধি দলের সঙ্গে এক মতবিনিময়ে তিনি এ কথা বলেন।
এ নিয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, “এ বিষয়ে আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, এটি সম্পূর্ণ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এটা তাদের বিষয় নয়। ওদের এ ধরনের বক্তব্য সম্পূর্ণ অনভিপ্রেত।”
সম্প্রতি কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগের নেতা ও সাবেক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীর বাসায় ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত তিন দেশের রাষ্ট্রদূতরা বৈঠক করেছেন, সংবাদমাধ্যমে আসা এই খবরের বিষয়ে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তৌহিদ হোসেন বলেন, রাষ্ট্রদূতরা ‘যে কারো’ বাসায় যেতে পারেন এবং এ বিষয়ে সরকারের ‘কিছু বলার বা করার নেই’।
সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টার কাছে জানতে চাওয়া হয়, সম্প্রতি কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের একজন নেতার বাসায় তিনজন রাষ্ট্রদূত বৈঠক করেছেন বলে খবর বেরিয়েছে। বিষয়টা আপনারা জানেন কি না এবং বিষয়টাকে কীভাবে দেখছেন?
তৌহিদ হোসেন বলেন, “আমি তো কলকাতায় রাষ্ট্রদূত না, এক ধাপ নিচে ছিলাম, আমি কিন্তু যে কারো বাসায় গিয়েছি, কোনো সমস্যা হয়নি। তবে তারা (তিন রাষ্ট্রদূত) কি নিয়ে কথাবার্তা বলেছেন, এসবের ফলাফল কী, এগুলো নিয়ে বিতর্ক চলতে থাকতে পারে। তবে এমনিতে সেখানে গেছেন তারা, এগুলো নিয়ে আমার বলার কিছু নেই।”
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন, ফাইল ছবি
বুধবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৫
সম্প্রতি বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশীদের ভিসা আবেদন প্রত্যাখ্যান করছে জানিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেছেন, এমন পরিস্থিতিতে তিনি নিজেও এ নিয়ে ‘উদ্বিগ্ন’। পাশাপাশি এই পরিস্থিতির জন্য তিনি নিজেদের (দেশের মানুষের) দায় দেখছেন। সামগ্রিকভাবে সুনামের প্রশ্ন তৈরি হওয়ায় ভিসা পাওয়া কঠিন হয়ে গেছে বলে তিনি মনে করছেন।
আজ বুধবার বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক সংবাদ সম্মেলনে তৌহিদ হোসেন এ মন্তব্য করেন।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই লিখেছেন, বিভিন্ন দেশের ভিসার জন্য আবেদন করে তারা প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন। ভিসা পাওয়া কঠিন হয়ে গেছে, ভ্রমণ সংক্রান্ত বিভিন্ন ফেইসবুক গ্রুপে এমন আলোচনা রয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ সম্মেলনে প্রসঙ্গটি টেনে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, বিভিন্ন রাষ্ট্র বাংলাদেশিদের ভিসা প্রত্যখ্যান করছে। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের উদ্বেগ আছে। প্রশ্ন শেষ হওয়ার আগেই পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “আপনার প্রশ্নটা আমি বুঝতে পেরেছি। এটা নিয়ে উদ্বেগ আমার নিজেরও আছে।”
তিনি বলেন, “আমি একটা উদাহরণ আপনাকে দিই। বিশেষ করে আপনারা জানেন, জার্মানিতে শিক্ষাব্যবস্থা খুবই উচ্চমানের এবং সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কোনো ফি লাগে না। কাজেই বাংলাদেশি ছাত্ররা খুবই আগ্রহী হয়ে উঠেছে জার্মানির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যাওয়ার জন্য। ৮০ হাজার আবেদন পড়েছে।
তিনি বলেন “জার্মান রাষ্ট্রদূত কয়েকদিন আগে চলে গেছেন, তিনি বলেছিলেন যে, ‘দেখুন আমার কিছুই করার নেই কারণ আমার মোট সামর্থই হচ্ছে দুই হাজার কেস প্রতিবছর ডিল করা’। তার মানে এত আবেদন তারা গ্রহণ করতে পারবেন না। পাকিস্তান থেকে প্রতিবছর তারা নয় হাজার শিক্ষার্থী নেয়। আমরা তাদের অনুরোধ করেছি, তারা যেন পাকিস্তানের সমান সংখ্যায় আমাদের শিক্ষার্থীদের নেয়। আমরা চেষ্টা করছি যে এটা করা যায় কিনা।”
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, যেসব দেশের দূতাবাস বাংলাদেশে নেই, সেসব দেশের ভিসা পেতে জটিলতা বেড়েছে। বিশেষ করে, যারা শিক্ষা এবং কাজের জন্য বিদেশ যেতে চান, তারা বেশি জটিলতায় পড়ছেন।
“অনেক দেশই কিন্তু পর্যটকদের জন্য অনলাইন ভিসা চালু করেছে। কিন্তু যখন আপনি একটা সময়ের জন্য সেখানে শিক্ষা বা কাজ করতে যাবেন, তখন সশরীরে উপস্থিত হয়ে ভিসা নিতে হয়। এটা নিয়েও আমরা অনেক সমস্যায় আছি। কারণ অনেকগুলো দেশের দূতাবাস বাংলাদেশে নেই, দিল্লিতে তাদের দূতাবাস আছে। কিন্তু এখন ভারতের ভিসা পাওয়া কঠিন হয়ে গেছে। এটা নিয়েও অনেকে ভোগান্তিতে পড়েছেন।”
তিনি বলেন, “আমরা চেষ্টা করছি এটার কোনো বিকল্প বের করা যায় কি না। যেমন: সার্বিয়ার জন্য একবার আমাদের ভিয়েতনাম থেকে ভিসা নেওয়া অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। এভাবে আমরা চেষ্টা করছি যে দিল্লি থাকুক, পাশাপাশি অন্য আরেকটি দেশ থেকে যেন বাংলাদেশিরা ভিসা নিতে পারে।”
কিন্তু ভিয়েতনামের ভিসাও তো এখন বাংলাদেশিরা পাচ্ছেন না, একজন সাংবাদিক এমন তথ্য দিলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “দেখুন ভিসা হচ্ছে একদমই একটি সার্বভৌম সিদ্ধান্ত সংশ্লিষ্ট দেশটির। আপনি কখনোই কাউকে বলতে পারবেন না, আপনি কেন আমাকে ভিসা দিলেন না। এটা কিন্তু বলা যাবে না। ভিসা নিয়ে বস্তুত সবখানেই, আমাদের সরকারি পর্যায়েও কথাবার্তা হয়।”
ভিসা না পাওয়ার জন্য বাংলাদেশিরা নিজেরাই দায়ী বলে দাবি করেন তৌহিদ হোসেন।
তিনি বলেন, “আমাদের দেশের লোকজনদের ভিসা যে বিভিন্নখানে বন্ধ করছে, এটার জন্য তাদেরকে (সংশ্লিষ্ট দেশকে) আমি যতখানি দায়ী করতে পারি, আমি মনে করি, আমরা নিজেরা তার থেকে বেশি দায়ী। কারণ আমরা খুব বেশি ভুয়া কাগজপত্র দাখিল করি। দ্বিতীয়ত আমাদের এখান থেকে তুলনামূলকভাবে অনিয়মিত অভিবানের সংখ্যা বেশি।
“কাজেই আমাদের সুনামের প্রশ্ন, যে কারণে আমাদের ভিসা কঠিন হয়ে গেছে। আসল লোকদের জন্যও কঠিন হয়ে গেছে। আগে আমাদের নিজেদের ঘর ঠিক করতে হবে, তাহলে এ সমস্যা থাকবে না।”
অনিয়মিত অভিবাসন হচ্ছে পুরোপুরি আইনগত প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে কোনো একটি দেশে গিয়ে কাজ করা বা থাকতে শুরু করা। সাধারণ ভ্রমণ ভিসায় গিয়ে অনেক দেশেই বাংলাদেশিরা কাজ করছেন এবং বছরের পর বছর অবস্থান করছেন এমন অভিযোগ বেশ পুরনো।
সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তানের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন তেহরিক ই তালিবান-টিটিপির পক্ষ নিয়ে পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গিয়ে একাধিক বাংলাদেশির মৃত্যুর বিষয়েও প্রশ্ন করা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ সম্মেলনে।
একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, পাকিস্তানে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে সম্প্রতি আরেক বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে, এর আগেও সেখানে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের সময় বাংলাদেশের নাগরিক মারা গেছেন। পাকিস্তানের পক্ষ থেকে এ বিষয়টি বাংলাদেশের সরকারকে জানানো হয়েছে কি না? আফগানিস্তানের পক্ষ হয়ে বাংলাদেশিরা কীভাবে যুদ্ধ করছে? এ বিষয়টিকে আপনারা কীভাবে দেখছেন?
জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “দেখুন, বাংলাদেশিরা বলা ঠিক হবে না। বিচ্ছিন্নভাবে যেকোনো জায়গায় একটা-দুইটা ঘটনা ঘটতে পারে। ইউক্রেন যুদ্ধেও তো দুই একজন বাংলাদেশি মারা গেছে। বাংলাদেশ তো এসব যুদ্ধে অংশগ্রহণ করছে না। এসবকে আমার মনে হয়, সেভাবেই দেখতে হবে।
“আমরা অবশ্যই চাই না যে আমাদের কেউ গিয়ে কোথাও এ ধরনের কার্যক্রমে জড়িত হোক। সেটা আফগানিস্তানের পক্ষে হোক বা পাকিস্তানের পক্ষে হোক বা ভারতের পক্ষে বা যেকোনোভাবেই যে কিছু হোক, তা আমরা চাই না।
“কিন্তু পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ কোনো দেশেরই সেভাবে থাকে না। একজন দুজন যদি কেউ এ ধরনের ঘটনা ঘটায়, সেটা দুঃখজনক। কিন্তু এসব ঘটনায় সরকারের পক্ষ থেকে বা দেশের পক্ষ থেকে কোন ধরনের কোন সমর্থন নেই।”
ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি বলেছেন, বাংলাদেশে একটি অবাধ সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পক্ষে ভারত। সোমবার সকালে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশের (ডিক্যাব) প্রতিনিধি দলের সঙ্গে এক মতবিনিময়ে তিনি এ কথা বলেন।
এ নিয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, “এ বিষয়ে আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, এটি সম্পূর্ণ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এটা তাদের বিষয় নয়। ওদের এ ধরনের বক্তব্য সম্পূর্ণ অনভিপ্রেত।”
সম্প্রতি কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগের নেতা ও সাবেক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীর বাসায় ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত তিন দেশের রাষ্ট্রদূতরা বৈঠক করেছেন, সংবাদমাধ্যমে আসা এই খবরের বিষয়ে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তৌহিদ হোসেন বলেন, রাষ্ট্রদূতরা ‘যে কারো’ বাসায় যেতে পারেন এবং এ বিষয়ে সরকারের ‘কিছু বলার বা করার নেই’।
সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টার কাছে জানতে চাওয়া হয়, সম্প্রতি কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের একজন নেতার বাসায় তিনজন রাষ্ট্রদূত বৈঠক করেছেন বলে খবর বেরিয়েছে। বিষয়টা আপনারা জানেন কি না এবং বিষয়টাকে কীভাবে দেখছেন?
তৌহিদ হোসেন বলেন, “আমি তো কলকাতায় রাষ্ট্রদূত না, এক ধাপ নিচে ছিলাম, আমি কিন্তু যে কারো বাসায় গিয়েছি, কোনো সমস্যা হয়নি। তবে তারা (তিন রাষ্ট্রদূত) কি নিয়ে কথাবার্তা বলেছেন, এসবের ফলাফল কী, এগুলো নিয়ে বিতর্ক চলতে থাকতে পারে। তবে এমনিতে সেখানে গেছেন তারা, এগুলো নিয়ে আমার বলার কিছু নেই।”