alt

ঢাকা সেনানিবাসের ভবনকে ‘অস্থায়ী কারাগার’ ঘোষণা

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫

ঢাকা সেনানিবাসের একটি ভবনকে সাময়িকভাবে কারাগার হিসেবে ঘোষণা করেছে সরকার। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে সেনা হেফাজতে নেয়ার ঘোষণার পরদিন গতকাল রোববার এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

১৫ সেনা কর্মকর্তাকে হেফাজতে নেয়ার ঘোষণা দেয়ার একদিন পর প্রজ্ঞাপন জারি করে

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

দুই মামলার ৩০ আসামির মধ্যে ২৫ জনই সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তা

সেখানে বলা হয়, ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪১(১) ধারার ক্ষমতাবলে এবং দ্য প্রিজন অ্যাক্ট এর ৩(বি) ধারা অনুসারে ঢাকা সেনানিবাসের বাশার রোড সংলগ্ন উত্তর দিকে অবস্থিত ‘এমইএস’ বিল্ডিং নং-৫৪-কে ‘সাময়িকভাবে কারাগার হিসেবে ঘোষণা করা হলো’। এ সিদ্ধান্ত অবিলম্বে কার্যকর করার কথা বলা হয়েছে প্রজ্ঞাপনে। তবে এই কারাগারে কাদের রাখা হবে, সে ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।

কেন্দ্রীয় কারা অধিদপ্তরের সরকারি কারা মহাপরিদর্শক জান্নাত উল ফরহাদ বলেন, ‘আমরা সোমবার,(১৩ অক্টোবর ২০২৫) আদেশ পেয়েছি। শিগগিরই সেখানে আমাদের লোক নিয়োজিত করা হবে।’ তবে গত শনিবার সেনা সদরের এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তিন মামলায় সেনাবাহিনীর সাবেক ও বর্তমান যে ৩২ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে, তাদের মধ্যে বর্তমানে চাকরিরত ১৫ জনকে হেফাজতে নেয়া হয়েছে।

সেনাসদরের সংবাদ সম্মেলনে মেজর জেনারেল হাকিমুজ্জামান বলেন, দুই মামলার ৩০ আসামির মধ্যে ২৫ জনই সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তা। তাদের মধ্যে ৯ জন অবসরপ্রাপ্ত, একজন এলপিআরে গেছেন এবং বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন ১৫ জন। গত ‘৮ অক্টোবর চার্জশিট দাখিলের পর এলপিআর ও সার্ভিসে থাকা ১৬ জনকে সেনাসদরে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। ৯ অক্টোবরের মধ্যে তাদের আসার জন্য নোটিস দেয়া হয়। ‘মেজর জেনারেল কবীর আহাম্মদ ছাড়া বাকি ১৫ জন সেনা কর্মকর্তার উপস্থিতি নিশ্চিত হয় এবং তাদের হেফাজতে নেয়া হয়েছে। তারা পরিবার থেকে আলাদা রয়েছেন।’

সিটিআইবি ও ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক কবীর আহাম্মদের বিষয়ে মেজর জেনারেল মো. হাকিমুজ্জামান বলেন, ‘তিনি গত ৯ অক্টোবর সকালে বাসা থেকে বের হন। এরপর থেকে তিনি নিখোঁজ।’ হেফাজতে থাকা সেনা কর্মকর্তাদের নাম সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশ করা হয়নি। মেজর জেনারেল হাকিমুজ্জামান বলেন, এই সেনা কর্মকর্তাদের হেফাজতে রাখা হয়েছে ‘আইনি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে’ এবং ‘প্রয়োজন অনুযায়ী’ তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আওয়ামী লীগের শাসনামলে বিরোধী মতের লোকদের গুম ও নির্যাতনের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের দুই মামলায় প্রসিকিউশনের দেয়া আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নিয়ে গত বুধবার আসামিদের বিরুদ্ধে ওই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

এসব ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর মধ্যে কার কী ভূমিকা ছিল, তা গত ৪ জুন জমা দেয়া কমিশনের দ্বিতীয় অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়। সেখানে বলা হয়, গুমের বেশিরভাগ ঘটনাই ঘটেছে পুলিশ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে। গুমের শিকার ব্যক্তি, তার পরিবারের সদস্য ও প্রত্যক্ষদর্শীরা পুলিশ, র‌্যাব এবং পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) ও কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটকে ‘মূল অপরাধী’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এর বাইরে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর (ডিজিএফআই), জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা (এনএসআই) অধিদপ্তর ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার ‘সত্যতা’ পাওয়ার কথা বলেছে কমিশন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই বিভিন্ন ‘ব্ল্যাক সাইট’ পরিচালনা করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে, যার মধ্যে সবচেয়ে কুখ্যাত হচ্ছে ‘আয়নাঘর’, যেখানে বন্দিদের সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রেখে চরম নির্যাতন চালানো হতো। বিগত সরকারের আমলে ‘আয়নাঘর’ নামে কুখ্যাতি পাওয়া এরকম তিনটি গোপন বন্দিশালা গত ১২ ফেব্রুয়ারি ঘুরে দেখেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।

গত ৩ জুলাই সেনা সদরের এক সংবাদ সম্মেলনে মিলিটারি অপারেশনস ডাইরেক্টরেটের কর্নেল স্টাফ কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, সেনাবাহিনীর যেসব সদস্য ডেপুটেশনে থাকেন, তারা সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণে থাকেন না। ডেপুটেশনে থাকা কিছু সেনা সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে, সেগুলোর তদন্ত চলমান রয়েছে। ‘এই তদন্তে যদি গুমের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে অবশ্যই সেনাবাহিনী তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এ বিষয়ে বাংলদেশ সেনাবাহিনী সব ধরনের সহযোগিতা করেছে এবং ভবিষ্যতেও সহযোগিতা থাকবে।’

গুমের সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে আইন করার প্রস্তাবে ইতোমধ্যে সম্মতি দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।

গত ২৫ আগস্ট উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ‘গুম প্রতিরোধ, প্রতিকার ও সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়। খসড়া অধ্যাদেশে গুমকে সজ্ঞায়ন ও শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। গোপন আটককেন্দ্র স্থাপন ও ব্যবহারকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে গুম সংক্রান্ত অভিযোগ গ্রহণ ও তদন্ত করার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।

ছবি

নিজেদের স্বার্থে ভারতীয় গণমাধ্যমে শেখ হাসিনার উপস্থিতি বন্ধের অনুরোধ ঢাকার

ছবি

আত্মসমর্পণ, পরে জামিন সাবেক বিচারপতিসহ তিনজনের

ছবি

প্রধান উপদেষ্টা আজ জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন

ছবি

বারোটি রাজনৈতিক দল নিয়ে ইসির সংলাপ শুরু বৃহস্পতিবার

ছবি

ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন সরকারের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডার অংশ: প্রসিকিউটর

ছবি

উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, জোরদার নিরাপত্তা

ছবি

ভারতীয় দূতকে তলব, গণমাধ্যমের সঙ্গে হাসিনার কথা বলা বন্ধের আহ্বান

ছবি

কানাডীয় পার্লামেন্টারি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের সাক্ষাৎ

ছবি

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে বৃহস্পতিবার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন, কোনো শক্তিই ঠেকাতে পারবে না: প্রেস সচিব

ছবি

ট্রাইব্যুনাল ফেইস না করে যানবাহনে আগুন মানুষ ‘ভালোভাবে নিচ্ছে না’: প্রসিকিউটর

কিউকম সিইও রিপন কারাগারে, রিমান্ড শুনানি বুধবার

বিমানবাহিনীর সাবেক প্রধান হান্নানের সহযোগীর দুই ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ

ছবি

১ ফেব্রুয়ারি থেকে একুশে বইমেলার দাবি, প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি

ছবি

পাচারের শিকার শান্তনা দীর্ঘ ১১ বছর পর দেশে ফিরলো

মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো: আরও ৪ এজেন্সির বিরুদ্ধে মামলা করছে দুদক

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরাতে আপিলের রায় ২০ নভেম্বর

ছবি

ডেঙ্গুতে আরও ৯১২ জন হাসপাতালে, মৃত্যু ৩ জনের

ইসির সংলাপ শুরু কাল থেকে, ধাপে ধাপে ডাকা হবে দলগুলোকে

ছবি

জুলাই সনদ নিয়ে ‘৩ থেকে ৪ দিনের মধ্যে’ সিদ্ধান্ত নেবে সরকার

ছবি

তৌহিদ হোসেন বললেন, দিল্লির বিস্ফোরণে বাংলাদেশকে জড়িয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমের সংবাদ ভিত্তিহীন

ছবি

বিমানবন্দরগুলোকে নিরাপত্তা ও নজরদারি বাড়াতে কয়েকটি নির্দেশ : বেবিচক

ছবি

রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় শেখ হাসিনাসহ ২৮৬ জনের বিচার প্রস্তুত, আদালত বদল

সাবেক মন্ত্রী উবায়দুল মোকতাদিরকে ট্রাইব্যুনালে হাজিরের নির্দেশ

সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ, রায়ের অপেক্ষা, হাসিনার বিরুদ্ধে ‘প্লট দুর্নীতি’ মামলা

এটা ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর নয়, এটা নতুন বাংলাদেশ: আওয়ামী লীগকে হুঁশিয়ারি প্রেস সচিবের

লতিফ সিদ্দিকী ও মঞ্জুরুল আলমের জামিন বহাল, মুক্তিতে বাধা নেই

শক্তিশালী বোমা মেশিন বসিয়ে বালু অপসারণ, ঝুঁকিতে তিস্তা ব্যারেজ

বন্দরকে আন্তর্জাতিক মানের করতে বিদেশি ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন: নৌ-পরিবহন উপদেষ্টা

সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনের ‘জিহাদ’ ঘোষণা

প্রাথমিকে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষার শিক্ষক নিয়োগের সুযোগ বাদের বিধান কেন অবৈধ নয়: হাইকোর্ট

ছবি

সনদ ও গণভোটের বিষয়ে এখন সিদ্ধান্ত নেবে সরকার: উপদেষ্টা রিজওয়ানা

ছবি

ইসির সিদ্ধান্ত অবৈধ: বাগেরহাটে ৪ ও গাজীপুরে ৫ আসনই বহাল

ছবি

দুদকের অভিযোগ: বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে ১১ কোটি টাকা আয়বহির্ভূত সম্পদ

ছবি

প্লট বরাদ্দ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন, ১৭ নভেম্বর আত্মপক্ষ সমর্থনের দিন

প্রাথমিক শিক্ষকদের সিদ্ধান্ত বদল, ফের কর্মবিরতি ঘোষণা

tab

ঢাকা সেনানিবাসের ভবনকে ‘অস্থায়ী কারাগার’ ঘোষণা

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫

ঢাকা সেনানিবাসের একটি ভবনকে সাময়িকভাবে কারাগার হিসেবে ঘোষণা করেছে সরকার। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে সেনা হেফাজতে নেয়ার ঘোষণার পরদিন গতকাল রোববার এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

১৫ সেনা কর্মকর্তাকে হেফাজতে নেয়ার ঘোষণা দেয়ার একদিন পর প্রজ্ঞাপন জারি করে

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

দুই মামলার ৩০ আসামির মধ্যে ২৫ জনই সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তা

সেখানে বলা হয়, ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪১(১) ধারার ক্ষমতাবলে এবং দ্য প্রিজন অ্যাক্ট এর ৩(বি) ধারা অনুসারে ঢাকা সেনানিবাসের বাশার রোড সংলগ্ন উত্তর দিকে অবস্থিত ‘এমইএস’ বিল্ডিং নং-৫৪-কে ‘সাময়িকভাবে কারাগার হিসেবে ঘোষণা করা হলো’। এ সিদ্ধান্ত অবিলম্বে কার্যকর করার কথা বলা হয়েছে প্রজ্ঞাপনে। তবে এই কারাগারে কাদের রাখা হবে, সে ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।

কেন্দ্রীয় কারা অধিদপ্তরের সরকারি কারা মহাপরিদর্শক জান্নাত উল ফরহাদ বলেন, ‘আমরা সোমবার,(১৩ অক্টোবর ২০২৫) আদেশ পেয়েছি। শিগগিরই সেখানে আমাদের লোক নিয়োজিত করা হবে।’ তবে গত শনিবার সেনা সদরের এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তিন মামলায় সেনাবাহিনীর সাবেক ও বর্তমান যে ৩২ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে, তাদের মধ্যে বর্তমানে চাকরিরত ১৫ জনকে হেফাজতে নেয়া হয়েছে।

সেনাসদরের সংবাদ সম্মেলনে মেজর জেনারেল হাকিমুজ্জামান বলেন, দুই মামলার ৩০ আসামির মধ্যে ২৫ জনই সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তা। তাদের মধ্যে ৯ জন অবসরপ্রাপ্ত, একজন এলপিআরে গেছেন এবং বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন ১৫ জন। গত ‘৮ অক্টোবর চার্জশিট দাখিলের পর এলপিআর ও সার্ভিসে থাকা ১৬ জনকে সেনাসদরে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। ৯ অক্টোবরের মধ্যে তাদের আসার জন্য নোটিস দেয়া হয়। ‘মেজর জেনারেল কবীর আহাম্মদ ছাড়া বাকি ১৫ জন সেনা কর্মকর্তার উপস্থিতি নিশ্চিত হয় এবং তাদের হেফাজতে নেয়া হয়েছে। তারা পরিবার থেকে আলাদা রয়েছেন।’

সিটিআইবি ও ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক কবীর আহাম্মদের বিষয়ে মেজর জেনারেল মো. হাকিমুজ্জামান বলেন, ‘তিনি গত ৯ অক্টোবর সকালে বাসা থেকে বের হন। এরপর থেকে তিনি নিখোঁজ।’ হেফাজতে থাকা সেনা কর্মকর্তাদের নাম সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশ করা হয়নি। মেজর জেনারেল হাকিমুজ্জামান বলেন, এই সেনা কর্মকর্তাদের হেফাজতে রাখা হয়েছে ‘আইনি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে’ এবং ‘প্রয়োজন অনুযায়ী’ তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আওয়ামী লীগের শাসনামলে বিরোধী মতের লোকদের গুম ও নির্যাতনের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের দুই মামলায় প্রসিকিউশনের দেয়া আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নিয়ে গত বুধবার আসামিদের বিরুদ্ধে ওই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

এসব ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর মধ্যে কার কী ভূমিকা ছিল, তা গত ৪ জুন জমা দেয়া কমিশনের দ্বিতীয় অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়। সেখানে বলা হয়, গুমের বেশিরভাগ ঘটনাই ঘটেছে পুলিশ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে। গুমের শিকার ব্যক্তি, তার পরিবারের সদস্য ও প্রত্যক্ষদর্শীরা পুলিশ, র‌্যাব এবং পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) ও কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটকে ‘মূল অপরাধী’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এর বাইরে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর (ডিজিএফআই), জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা (এনএসআই) অধিদপ্তর ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার ‘সত্যতা’ পাওয়ার কথা বলেছে কমিশন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই বিভিন্ন ‘ব্ল্যাক সাইট’ পরিচালনা করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে, যার মধ্যে সবচেয়ে কুখ্যাত হচ্ছে ‘আয়নাঘর’, যেখানে বন্দিদের সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রেখে চরম নির্যাতন চালানো হতো। বিগত সরকারের আমলে ‘আয়নাঘর’ নামে কুখ্যাতি পাওয়া এরকম তিনটি গোপন বন্দিশালা গত ১২ ফেব্রুয়ারি ঘুরে দেখেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।

গত ৩ জুলাই সেনা সদরের এক সংবাদ সম্মেলনে মিলিটারি অপারেশনস ডাইরেক্টরেটের কর্নেল স্টাফ কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, সেনাবাহিনীর যেসব সদস্য ডেপুটেশনে থাকেন, তারা সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণে থাকেন না। ডেপুটেশনে থাকা কিছু সেনা সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে, সেগুলোর তদন্ত চলমান রয়েছে। ‘এই তদন্তে যদি গুমের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে অবশ্যই সেনাবাহিনী তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এ বিষয়ে বাংলদেশ সেনাবাহিনী সব ধরনের সহযোগিতা করেছে এবং ভবিষ্যতেও সহযোগিতা থাকবে।’

গুমের সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে আইন করার প্রস্তাবে ইতোমধ্যে সম্মতি দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।

গত ২৫ আগস্ট উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ‘গুম প্রতিরোধ, প্রতিকার ও সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়। খসড়া অধ্যাদেশে গুমকে সজ্ঞায়ন ও শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। গোপন আটককেন্দ্র স্থাপন ও ব্যবহারকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে গুম সংক্রান্ত অভিযোগ গ্রহণ ও তদন্ত করার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।

back to top