ক্রমেই বেড়ে চলেছে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা
বেতাগী (বরগুনা): ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীরা -সংবাদ
ডেঙ্গু সংক্রমণ শুধু শহর কেন্দ্রিক হলেও গত এক সপ্তাহে সংক্রমণ ছড়িয়ে গেছে বরগুনার বেতাগী পৌর শহরের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে। ক্রমেই বেড়ে চলেছে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্সে ডেঙ্গু নিয়ে ভর্তি হয়েছেন ১১ জন এবং আরো চারজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল ডেঙ্গু ইউনিটে প্রেরণ করা হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্স সূত্রে জানা গেছে, সাধারণত জুন থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত এডিস মশার বিস্তর থাকে অনেক বেশি। ওই সময়টাকে ডেঙ্গু মৌসুমও বলা হয়। এসময়ের তাপমাত্রা, বাতাসের আর্দ্রতা ও বৃষ্টির ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব। কিন্তু অক্টোবরের শেষে উপকূলীয় জনপদ বরগুনার বেতাগীতে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। বৃষ্টির পর প্রখর রোদে এডিস মশা বাড়ে। এডিস শহুরে মশা হলেও এবার গ্রামে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে।
সূত্রমতে, গত অক্টোবর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। বেতাগীতে ডেঙ্গু পরিস্থিতি অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে। তবে ডেঙ্গু নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই বলেও জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। চিকিৎসকদের মতে, এবছর উপকূলীয় অঞ্চলে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। একারণে পৌর শহরে কোনো জায়গায় বৃষ্টির কারণে পানি জমেছে এবং সেখান কিছু মশা ডিম পেড়েছে। এক্ষেত্রে বিষয়টা যদি এরকম হয়, যে খুব বেশি বৃষ্টি হলো আবার সঙ্গে সঙ্গে রোদ হলো, এতে দ্রুত সময়ে ডিম থেকে একটি পূর্ণাঙ্গ মশা পরিণত হয়।’
এ বিষয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্সের চিকিৎসক সৈয়্যাদ আমারুল ইসলাম বলেন,’ মশার ডিম, দুই-তিন ঘণ্টার মধ্যেই সে পূর্ণাঙ্গ জীবন পেয়ে যায়। কিন্তু আবার যদি কয়েকদিন টানা বৃষ্টি হয় এবং রোদ না থাকে, তাহলে ডেঙ্গু সংক্রমণ কমে আসবে। কারণ ওই সময়ে ডিমটা কোনো এক জায়গায় স্থায়ীভাবে থাকতে পারবে না। আর থাকলেও মশাটি খুব দ্রুত সময়ে পূর্ণাঙ্গ রূপ লাভ করতে পারবে না। রোগটি কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রনে করা যাবে।’
গতকাল শনিবার বিকেলে উপজেলা কমপেক্সে তথ্যের প্রয়োজনে সরেজমিনে যাওয়া হয়। এসময় স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সৈয়্যাদ আমারুল ইসলামকে পাওয়া যায়নি। এসময় তিনি মুঠোফোনে বলেন, আমাদের তাপমাত্রার তারতম্যের কারণে ডেঙ্গুর সাইকেলে সমস্যা হয়। অর্থাৎ ডিম থেকে পূর্ণাঙ্গ মশা হতে যেই সময় লাগে সেটা তাপমাত্রার ওপর অনেকটা নির্ভরশীল। গত কিছুদিন পূর্বে বৃষ্টির কারণে বিভিন্নস্থানে বদ্ধ জলাশয়ে পানি জমেছিল। এ কারণে এই মশার সংখ্যা বেড়েছে এবং এতে রোগির সংখ্যাও বেড়েছে।’
তিনি আরো বলেন,’এটা আমাদের জন্য একটা বড় ধরণের চাপ। এখন নতুন করে যদি আবার একদিনের বৃষ্টি এবং পরে প্রখর রোদ ওঠে, তাহলে ডেঙ্গুর বিস্তর আরও অনেক বেড়ে যাবে।’
বেতাগী আবাসিক মেডিক্যাল কর্মকর্তা ডা. রবীন্দ্রনাথ সরকার বলেন,’ এখন যাদের ডেঙ্গু জ্বর হচ্ছে, তাদের অনেকেরই প্রথম দিন থেকেই জ্বরের মাত্রা ১০৩ থেকে ১০৪ ডিগ্রি হয়েছে। যাদেরই এই তাপমাত্রায় জ্বর আসছে। এমনকি তারা এত পরিমাণ দুর্বল হয়ে যাচ্ছে, যে কারণে দ্রুততম সময়ে তাদের হাসপাতালে ভর্তি করানো হচ্ছে। চিকিৎসকদের মতে, এডিস মশাটিকে বলা হয়ে ‘শহুরে মশা’। কিন্তু গ্রামেও এবার ডেঙ্গু সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। গ্রামের মশার আবাসস্থলের সঙ্গে শহরের মশার আবাসস্থলের অনেক পার্থক্য। শহরে আমরা দেখি যে খুবই অল্প পানিতে মশাগুলো ডিম পাড়ে এবং জন্মাতে পারে। যেমন- ডাবের খোসা, ফুলের টব। এগুলোতে খুব অল্প পরিমাণ পানি থাকলেও এর মধ্যেই মশা জন্মাতে পারে। আর গ্রামের মশাগুলো জন্মায় আবদ্ধ পুকুর, ডোবা, নালায়। এবিষয় বেতাগী পৌরসভার প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হরেকৃষ্ণ অধিকারী বলেন, পৌর শহরে মশক নিধন ও পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
ক্রমেই বেড়ে চলেছে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা
বেতাগী (বরগুনা): ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীরা -সংবাদ
রোববার, ০২ নভেম্বর ২০২৫
ডেঙ্গু সংক্রমণ শুধু শহর কেন্দ্রিক হলেও গত এক সপ্তাহে সংক্রমণ ছড়িয়ে গেছে বরগুনার বেতাগী পৌর শহরের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে। ক্রমেই বেড়ে চলেছে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্সে ডেঙ্গু নিয়ে ভর্তি হয়েছেন ১১ জন এবং আরো চারজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল ডেঙ্গু ইউনিটে প্রেরণ করা হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্স সূত্রে জানা গেছে, সাধারণত জুন থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত এডিস মশার বিস্তর থাকে অনেক বেশি। ওই সময়টাকে ডেঙ্গু মৌসুমও বলা হয়। এসময়ের তাপমাত্রা, বাতাসের আর্দ্রতা ও বৃষ্টির ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব। কিন্তু অক্টোবরের শেষে উপকূলীয় জনপদ বরগুনার বেতাগীতে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। বৃষ্টির পর প্রখর রোদে এডিস মশা বাড়ে। এডিস শহুরে মশা হলেও এবার গ্রামে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে।
সূত্রমতে, গত অক্টোবর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। বেতাগীতে ডেঙ্গু পরিস্থিতি অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে। তবে ডেঙ্গু নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই বলেও জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। চিকিৎসকদের মতে, এবছর উপকূলীয় অঞ্চলে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। একারণে পৌর শহরে কোনো জায়গায় বৃষ্টির কারণে পানি জমেছে এবং সেখান কিছু মশা ডিম পেড়েছে। এক্ষেত্রে বিষয়টা যদি এরকম হয়, যে খুব বেশি বৃষ্টি হলো আবার সঙ্গে সঙ্গে রোদ হলো, এতে দ্রুত সময়ে ডিম থেকে একটি পূর্ণাঙ্গ মশা পরিণত হয়।’
এ বিষয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্সের চিকিৎসক সৈয়্যাদ আমারুল ইসলাম বলেন,’ মশার ডিম, দুই-তিন ঘণ্টার মধ্যেই সে পূর্ণাঙ্গ জীবন পেয়ে যায়। কিন্তু আবার যদি কয়েকদিন টানা বৃষ্টি হয় এবং রোদ না থাকে, তাহলে ডেঙ্গু সংক্রমণ কমে আসবে। কারণ ওই সময়ে ডিমটা কোনো এক জায়গায় স্থায়ীভাবে থাকতে পারবে না। আর থাকলেও মশাটি খুব দ্রুত সময়ে পূর্ণাঙ্গ রূপ লাভ করতে পারবে না। রোগটি কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রনে করা যাবে।’
গতকাল শনিবার বিকেলে উপজেলা কমপেক্সে তথ্যের প্রয়োজনে সরেজমিনে যাওয়া হয়। এসময় স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সৈয়্যাদ আমারুল ইসলামকে পাওয়া যায়নি। এসময় তিনি মুঠোফোনে বলেন, আমাদের তাপমাত্রার তারতম্যের কারণে ডেঙ্গুর সাইকেলে সমস্যা হয়। অর্থাৎ ডিম থেকে পূর্ণাঙ্গ মশা হতে যেই সময় লাগে সেটা তাপমাত্রার ওপর অনেকটা নির্ভরশীল। গত কিছুদিন পূর্বে বৃষ্টির কারণে বিভিন্নস্থানে বদ্ধ জলাশয়ে পানি জমেছিল। এ কারণে এই মশার সংখ্যা বেড়েছে এবং এতে রোগির সংখ্যাও বেড়েছে।’
তিনি আরো বলেন,’এটা আমাদের জন্য একটা বড় ধরণের চাপ। এখন নতুন করে যদি আবার একদিনের বৃষ্টি এবং পরে প্রখর রোদ ওঠে, তাহলে ডেঙ্গুর বিস্তর আরও অনেক বেড়ে যাবে।’
বেতাগী আবাসিক মেডিক্যাল কর্মকর্তা ডা. রবীন্দ্রনাথ সরকার বলেন,’ এখন যাদের ডেঙ্গু জ্বর হচ্ছে, তাদের অনেকেরই প্রথম দিন থেকেই জ্বরের মাত্রা ১০৩ থেকে ১০৪ ডিগ্রি হয়েছে। যাদেরই এই তাপমাত্রায় জ্বর আসছে। এমনকি তারা এত পরিমাণ দুর্বল হয়ে যাচ্ছে, যে কারণে দ্রুততম সময়ে তাদের হাসপাতালে ভর্তি করানো হচ্ছে। চিকিৎসকদের মতে, এডিস মশাটিকে বলা হয়ে ‘শহুরে মশা’। কিন্তু গ্রামেও এবার ডেঙ্গু সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। গ্রামের মশার আবাসস্থলের সঙ্গে শহরের মশার আবাসস্থলের অনেক পার্থক্য। শহরে আমরা দেখি যে খুবই অল্প পানিতে মশাগুলো ডিম পাড়ে এবং জন্মাতে পারে। যেমন- ডাবের খোসা, ফুলের টব। এগুলোতে খুব অল্প পরিমাণ পানি থাকলেও এর মধ্যেই মশা জন্মাতে পারে। আর গ্রামের মশাগুলো জন্মায় আবদ্ধ পুকুর, ডোবা, নালায়। এবিষয় বেতাগী পৌরসভার প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হরেকৃষ্ণ অধিকারী বলেন, পৌর শহরে মশক নিধন ও পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চলমান রয়েছে।