alt

নির্বাচন হলে দেশে স্থিতিশীলতা আরও ভালো হবে, আশা সেনাবাহিনীর

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক : বুধবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৫

নির্বাচন হলে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হবে এবং সেনাবাহিনী তখন ব্যারাকে ফিরে যেতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেছে সেনাসদর।

বিশ্রাম ও নির্বাচন সংক্রান্ত প্রশিক্ষণের জন্য ৫০ শতাংশ সেনা সদস্যকে প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত

ভোটের পর ব্যারাকে ফিরবে সেনাবাহিনী, ‘আশায়’ সেনাসদর

বুধবার,(০৫ নভেম্বর ২০২৫) ঢাকা সেনানিবাসের অফিসার্স মেসে সেনাবাহিনীর এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন সদর দপ্তরের আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ড-এর জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি আর্টডক) লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. মাইনুর রহমান।

তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি, নির্বাচন হলে দেশে স্থিতিশীলতা আসবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হবে এবং সেনাবাহিনী তখন সেনানিবাসে ফিরে যেতে পারবে। আমরা সেদিকে তাকিয়ে আছি।’

এক প্রশ্নের জবাবে লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. মাইনুর রহমান বলেন, ‘কিছু স্বার্থান্বেষী মহল সেনাবাহিনী, বিশেষ করে নেতৃত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য মিথ্যা ও বানোয়াট অপপ্রচার চালাচ্ছে, যা দুঃখজনক।

‘আমি আপনাদের নিশ্চিত করতে চাই, সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্য সেনাপ্রধান এবং বাহিনীর সিনিয়র লিডারশিপের প্রতি শতভাগ অনুগত এবং বিশ্বস্ত। আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় সেনাবাহিনী এখন আরও বেশি ঐক্যবদ্ধ এবং ভ্রাতৃত্ববোধে দৃঢ়।’

গত ১৫ মাস সেনাবাহিনী আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে ‘বাইরে’ থাকায় বাহিনীর নিয়মিত কাজের ‘ব্যাঘাত ঘটছে’ জানিয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘নির্বাচন পর্যন্ত বা তার কিছুটা পরেও যদি বাইরে থাকতে হয়, তাহলে আরও কিছুদিন বাইরে থাকতে হবে। এতে করে আমাদের প্রশিক্ষণ বিঘিœত হচ্ছে।

প্রশিক্ষণের সঙ্গে একটি বিষয় সম্পর্কিত, তা হলো শান্তিকালীন সময়ে সেনাবাহিনীর দায়িত্ব হলো যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নেয়া। আমরা বলে থাকি ‘উই ট্রেইন অ্যাজ উই ফাইট’।

‘এর পাশাপাশি যে পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গত ১৫ মাস চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছে সেনাবাহিনী; এটা সহজ পরিস্থিতি ছিল না। এ ধরনের পরিস্থিতি বাংলাদেশ প্রতিদিন ফেইস করেনি। এজন্য আমরাও চাই একটা সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক এবং আমরা সেনানিবাসে ফেরত আসতে পারি।’সেনাবাহিনী মাঠে থাকার পরও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আশানুরূপ নয়, উন্নতি হয়নি সড়ক-মহাসড়কের শৃঙ্খলার। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাইনুর বলেন, ‘আমি অনুরোধ করবো, ৫ আগস্টের পরবর্তী পরিস্থিতির দিকে একটু ফিরে তাকান। ১৫ বছর যে আবেগের বহিঃপ্রকাশ ঘটানো যায়নি, সেটার একটা বহিঃপ্রকাশ আউটবার্স্ট তো আছেই।

‘অনেক মেশিনারিই কিন্তু তখন কিছুটা হলেও অকার্যকর হয়ে পড়েছিল। এটা বাস্তবতা। এরকম একটা এক্সেপশনাল পরিস্থিতিতে আপনি সর্বোচ্চ আউটকাম আশা করতে পারেন না।

সেনাবাহিনী এই সময়ের মধ্যে কুমিল্লা, নোয়াখালীর বন্যা থেকে শুরু করে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া, বিভিন্ন বাহিনীর মধ্যে আনরেস্ট, বিভিন্ন পুলিশ স্টেশন রক্ষা করা থেকে শুরু করে ট্রাফিক দায়িত্বসহ এমন কোনো কাজ নাই যা করেনি। ৪০ বা ৫০ হাজার সেনাসদস্য যাদের প্রাথমিক কাজ কিন্তু এটা না।’

তিনি বলেন, ‘আমরা না থাকলে অবনতি কতটা হতো সেটা কেউ ধারণাও করতে পারবেন না। এভাবে চিন্তা করলে রাইট পারসপেক্টিভটা পাবেন।’

প্রেসবিফ্রিংয়ে একই ধরনের কথা বলেন সেনাবাহিনীর মিলিটারি অপারেশনস ডিরেক্টরেটের (এমওডি) পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল দেওয়ান মোহাম্মদ মনজুর হোসেনও।

তিনি বলেন, গত ১৫ মাস ধরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করে আসছে। এর পাশাপাশি চুরি যাওয়া অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার এবং চিহ্নিত অপরাধীদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

এই সময়ের মধ্যে ৮১ শতাংশ খোয়া যাওয়া অস্ত্র ও ৭৩ শতাংশ গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে। কিশোর গ্যাং, ডাকাত ও চাঁদাবাজসহ ১৯ হাজারের বেশি সন্দেহভাজন অপরাধীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় মাঠে থাকা অর্ধেক সেনাসদস্যকে ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সে নির্দেশনা পাওয়ার কথা জানিয়েছে সেনাসদর।

এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ব্রিগেডিয়ার মনজুর বলেন ‘প্রত্যাহারের বিষয়ে আমরা চিঠি পেয়েছি এবং সে অনুযায়ী আমরা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’

গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির বৈঠকে বুধবার, থেকে বিশ্রাম ও নির্বাচন সংক্রান্ত প্রশিক্ষণের জন্য ৫০ শতাংশ সেনা সদস্যদের প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত হয়।

বিশ্রাম ও প্রশিক্ষণ শেষে ধাপে ধাপে তাদের আবারও মোতায়েন করা হবে। তারা মোতায়েন হলে বাকিরা আবার প্রশিক্ষণ ও বিশ্রামে যাবেন।

গেল বছর ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গত ১৭ সেপ্টেম্বর সেনাবাহিনীর কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ৬০ দিনের জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দেয় সরকার। ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর কর্মকর্তাদেরও এই ক্ষমতা দেয়া হয়। এরপর সাত দফা দুই মাস করে এই মেয়াদ বাড়ানো হয়।

‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’: গ্রেপ্তারকৃত সেনা কর্মকর্তাদের চাকরি নিয়ে যা বললো সেনা সদর

আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার শাসনামলে গুম-খুনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের তিন মামলায় কারাগারে থাকা ১৫ সেনা কর্মকর্তার চাকরি এখনও আছে কি না, সেই প্রশ্নের জবাবে সেনাসদর বলছে, এটা একটা আইনগত প্রক্রিয়া।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) আইনে অভিযোগপত্রে নাম এলে চাকরি যাওয়ার বিধানটি স্পষ্ট করা হয়নি। সেটা স্পষ্টীকরণের অপেক্ষায় আছে সেনাসদর।

বুধবার, ঢাকা সেনানিবাসের অফিসার্স মেসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন সেনাসদরের পিএস পরিদপ্তরের এজি শাখার পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মুস্তাফিজুর রহমান। এর আগে সেনাবাহিনীর তরফে বলা হয়েছিল আইসিটি আইনের সঙ্গে সেনা আইনের যে অসামঞ্জস্যগুলো রয়েছে, সেগুলো ঘোচানোর বিষয়ে সরকারের সঙ্গে তারা যোগাযোগ করছে।

এই প্রক্রিয়া কতদূর এগিয়েছে জানতে চাইলে ব্রিগেডিয়ার মুস্তাফিজুর বলেন, ‘এটি একটি আইনি প্রক্রিয়াগত বিষয়। আপনারা জানেন যে, আর্মি অ্যাক্ট ১৯৫২ এবং আইসিটি অ্যাক্ট ১৯৭২ দুটোই স্পেশাল অ্যাক্ট। এই দুটো আইনকে আমরা কখনোই মুখোমুখি দাঁড় করাবো না।’

আইসিটি অ্যাক্টেই বর্তমানে মামলাটি পরিচালিত হচ্ছে, আমরা সরকারের সঙ্গে ‘এনগেজমেন্টে’ আছি। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। দেশের যে প্রচলিত আইনগুলো রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে যে আইনেই বিচার হবে আমরা চাইবো, সরকার একটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বিচারটি সম্পন্ন করবে।

গ্রেপ্তারকৃত সেনাকর্মকর্তাদের অধিকার বিষয়ে সেনাসদর ওয়াকিবহাল আছে তুলে ধরে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘সেই সঙ্গে আমি এটাও বলতে চাই, যারা গুম-খুনের শিকার হয়েছেন তাদের পরিবারের প্রতি আমরা সহানুভূতিশীল।

একইসঙ্গে আমাদের যে অফিসাররা আছে তাদের যে ‘রাইটস’ আছে, ‘রাইটস অ্যান্ড প্রিভিলেইজেস’, সেটার সম্পর্কেও আমরা ওয়াকিবহাল আছি এবং আমরা সেটার ক্ষেত্রে সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি।’

সরকার যদি ‘আর্মি অ্যাক্টের’ অধীনে এই বিচার করতে চায় সেজন্যও সেনাবাহিনীর প্রস্তুতি চলছে তুলে ধরে ব্রিগেডিয়ার মুস্তাফিজুর বলেন, ‘আমরা দুটো আইনকে সামনা-সামনি দাঁড় করাবো না।

সরকার যেটাকে ভালো মনে করে সেভাবেই যেন এগিয়ে যায় আমরা প্রস্তুত আছি। যদি এটা আর্মি অ্যাক্টের অধীনে বিচার করতে বলে সেটা আমরা করতে পারবো। সেভাবে আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

কারাগারে থাকা এই কর্মকর্তাদের এখনও চাকরি বহাল আছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটিও আরেকটি আইনি প্রক্রিয়াগত বিষয়। আইসিটি অ্যাক্টের যে থার্ড অ্যামেন্ডমেন্ট, গত ৬ অক্টোবর যেটা প্রকাশিত হয়েছিল সেখানে ‘ডিসকোয়ালিফিকিশন টু হ্যাভ আ পাবলিক অফিস’, এটার বিষয়ে ‘ইন্টারপ্রিটেশনের প্রবলেম’ আছে। সেটা হচ্ছে যে এটাকে বিভিন্নভাবে ইন্টারপ্রিট করা যেতে পারে। সেটার বিষয়ে সরকারের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ জারি আছে। আমরা এটার বিষয়ে একটা স্পষ্ট নির্দেশনার অপেক্ষায় আছি।

ছবি

ধনী দেশগুলো প্যারিস জলবায়ু চুক্তির অঙ্গীকার পূরণে ব্যর্থ: মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা

ছবি

বাংলাদেশ ও কাতার সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে জনবল নিয়োগ চুক্তি সই

ছবি

‘জুলাই শহীদদের’ পরিচয় শনাক্তে বিদেশি বিশেষজ্ঞ আনা হচ্ছে: আসিফ মাহমুদ

ছবি

উপদেষ্টা রিজওয়ানার বাসার সামনে ককটেল বিস্ফোরণ

ছবি

আধুনিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত আর্মি অর্ডন্যান্স কোর: সেনাপ্রধান

ছবি

শেখ হাসিনার মামলার রায় সোমবার

ছবি

একদিনে পুলিশের ৩৬ কর্মকর্তার ব্যাপক রদবদল

ছবি

ডেঙ্গুতে একদিনে ৫ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ১১৩৯ জন

ছবি

সৈয়দপুরে রেলওয়ে কারখানায় কাটছে না কাঁচামালের সংকট

ছবি

আওয়ামী লীগ ফেইসবুক ভিত্তিক দলে পরিণত হয়েছে: ফেইসবুক পোস্টে প্রেস সচিব

ছবি

পুলিশ নামছে নতুন পোশাকে

ছবি

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে প্লাস্টিকমুক্ত ক্যাম্পাস ঘোষণার আহ্বান উপদেষ্টার

ছবি

জামায়াতসহ ১২ দলের সঙ্গে ইসির সংলাপ কাল

নির্বাচন ঘিরে দেশজুড়ে ৯ দিনের বিশেষ আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা কার্যকর করা হবে

ছবি

ডেঙ্গুতে একদিনে ৫ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ৭৯২ জন

ছবি

৫ আগস্টের পেছনে যুক্তরাষ্ট্র ‘বিশ্বাস করেন না’ শেখ হাসিনা

ছবি

বিকল্প শক্তির উত্থানে ‘জাতীয় কনভেনশন’ করবে বাম ঘরানার দলগুলো

ছবি

‘কাদিয়ানি’দের অমুসলিম ঘোষণার দাবিতে বছরব্যাপী কর্মসূচি খতমে নবুওয়তের

ছবি

ডেঙ্গু : রামেকে দুইজনের মৃত্যু পুঠিয়ায় সংক্রমণের শঙ্কা

ছবি

পটুয়াখালী ও বরগুনায় জুলাই স্মৃতিস্তম্ভে আগুন

ছবি

ভারত সফরে যাচ্ছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা

ছবি

নারীদের বাদ দিয়ে দেশের উন্নয়ন চিন্তা করলে ভুল হবে: সেনাপ্রধান

ছবি

আ’লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না, বৃটিশ মন্ত্রীকে ড. ইউনূস

ছবি

বিবিসিকে হাসিনার সাক্ষাৎকার: মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় অস্বীকার

ছবি

নিরাপত্তাসহ দুই দাবি, না মানলে কলম বিরতির হুঁশিয়ারি বিচারকদের

ছবি

জাতীয় নির্বাচনের দিনে গণভোট: ‘আলোচনা করে’ মত জানাবে ইসি

ইসির সংলাপ: আগামী রোববার ডাক পেয়েছে আরও ১২ দল

ছবি

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি

চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকার আহ্বান সেনাপ্রধানের

ছবি

মানবতাবিরোধী অপরাধ: শেখ হাসিনার মামলার রায় ঘোষণা সোমবার

আলী রীয়াজ প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী, পেলেন উপদেষ্টার মর্যাদা

ছবি

নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে: ইউনূস

ইসির সংলাপে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ, ভোটের পরিবেশ নিশ্চিত করার তাগিদ

ইসির সংলাপ: জামানত কমানো, ব্যয় মনিটরিং ও প্রশাসন নিয়ন্ত্রণের সুপারিশ দলগুলোর

ছবি

‘নতুন কুঁড়ির’ মূল উদ্দেশ্য নিজেকে আবিষ্কার করা: প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

আলী রীয়াজ প্রধান উপদেষ্টা বিশেষ সহকারী পদে নিযুক্ত

tab

নির্বাচন হলে দেশে স্থিতিশীলতা আরও ভালো হবে, আশা সেনাবাহিনীর

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

বুধবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৫

নির্বাচন হলে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হবে এবং সেনাবাহিনী তখন ব্যারাকে ফিরে যেতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেছে সেনাসদর।

বিশ্রাম ও নির্বাচন সংক্রান্ত প্রশিক্ষণের জন্য ৫০ শতাংশ সেনা সদস্যকে প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত

ভোটের পর ব্যারাকে ফিরবে সেনাবাহিনী, ‘আশায়’ সেনাসদর

বুধবার,(০৫ নভেম্বর ২০২৫) ঢাকা সেনানিবাসের অফিসার্স মেসে সেনাবাহিনীর এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন সদর দপ্তরের আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ড-এর জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি আর্টডক) লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. মাইনুর রহমান।

তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি, নির্বাচন হলে দেশে স্থিতিশীলতা আসবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হবে এবং সেনাবাহিনী তখন সেনানিবাসে ফিরে যেতে পারবে। আমরা সেদিকে তাকিয়ে আছি।’

এক প্রশ্নের জবাবে লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. মাইনুর রহমান বলেন, ‘কিছু স্বার্থান্বেষী মহল সেনাবাহিনী, বিশেষ করে নেতৃত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য মিথ্যা ও বানোয়াট অপপ্রচার চালাচ্ছে, যা দুঃখজনক।

‘আমি আপনাদের নিশ্চিত করতে চাই, সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্য সেনাপ্রধান এবং বাহিনীর সিনিয়র লিডারশিপের প্রতি শতভাগ অনুগত এবং বিশ্বস্ত। আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় সেনাবাহিনী এখন আরও বেশি ঐক্যবদ্ধ এবং ভ্রাতৃত্ববোধে দৃঢ়।’

গত ১৫ মাস সেনাবাহিনী আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে ‘বাইরে’ থাকায় বাহিনীর নিয়মিত কাজের ‘ব্যাঘাত ঘটছে’ জানিয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘নির্বাচন পর্যন্ত বা তার কিছুটা পরেও যদি বাইরে থাকতে হয়, তাহলে আরও কিছুদিন বাইরে থাকতে হবে। এতে করে আমাদের প্রশিক্ষণ বিঘিœত হচ্ছে।

প্রশিক্ষণের সঙ্গে একটি বিষয় সম্পর্কিত, তা হলো শান্তিকালীন সময়ে সেনাবাহিনীর দায়িত্ব হলো যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নেয়া। আমরা বলে থাকি ‘উই ট্রেইন অ্যাজ উই ফাইট’।

‘এর পাশাপাশি যে পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গত ১৫ মাস চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছে সেনাবাহিনী; এটা সহজ পরিস্থিতি ছিল না। এ ধরনের পরিস্থিতি বাংলাদেশ প্রতিদিন ফেইস করেনি। এজন্য আমরাও চাই একটা সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক এবং আমরা সেনানিবাসে ফেরত আসতে পারি।’সেনাবাহিনী মাঠে থাকার পরও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আশানুরূপ নয়, উন্নতি হয়নি সড়ক-মহাসড়কের শৃঙ্খলার। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাইনুর বলেন, ‘আমি অনুরোধ করবো, ৫ আগস্টের পরবর্তী পরিস্থিতির দিকে একটু ফিরে তাকান। ১৫ বছর যে আবেগের বহিঃপ্রকাশ ঘটানো যায়নি, সেটার একটা বহিঃপ্রকাশ আউটবার্স্ট তো আছেই।

‘অনেক মেশিনারিই কিন্তু তখন কিছুটা হলেও অকার্যকর হয়ে পড়েছিল। এটা বাস্তবতা। এরকম একটা এক্সেপশনাল পরিস্থিতিতে আপনি সর্বোচ্চ আউটকাম আশা করতে পারেন না।

সেনাবাহিনী এই সময়ের মধ্যে কুমিল্লা, নোয়াখালীর বন্যা থেকে শুরু করে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া, বিভিন্ন বাহিনীর মধ্যে আনরেস্ট, বিভিন্ন পুলিশ স্টেশন রক্ষা করা থেকে শুরু করে ট্রাফিক দায়িত্বসহ এমন কোনো কাজ নাই যা করেনি। ৪০ বা ৫০ হাজার সেনাসদস্য যাদের প্রাথমিক কাজ কিন্তু এটা না।’

তিনি বলেন, ‘আমরা না থাকলে অবনতি কতটা হতো সেটা কেউ ধারণাও করতে পারবেন না। এভাবে চিন্তা করলে রাইট পারসপেক্টিভটা পাবেন।’

প্রেসবিফ্রিংয়ে একই ধরনের কথা বলেন সেনাবাহিনীর মিলিটারি অপারেশনস ডিরেক্টরেটের (এমওডি) পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল দেওয়ান মোহাম্মদ মনজুর হোসেনও।

তিনি বলেন, গত ১৫ মাস ধরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করে আসছে। এর পাশাপাশি চুরি যাওয়া অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার এবং চিহ্নিত অপরাধীদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

এই সময়ের মধ্যে ৮১ শতাংশ খোয়া যাওয়া অস্ত্র ও ৭৩ শতাংশ গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে। কিশোর গ্যাং, ডাকাত ও চাঁদাবাজসহ ১৯ হাজারের বেশি সন্দেহভাজন অপরাধীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় মাঠে থাকা অর্ধেক সেনাসদস্যকে ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সে নির্দেশনা পাওয়ার কথা জানিয়েছে সেনাসদর।

এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ব্রিগেডিয়ার মনজুর বলেন ‘প্রত্যাহারের বিষয়ে আমরা চিঠি পেয়েছি এবং সে অনুযায়ী আমরা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’

গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির বৈঠকে বুধবার, থেকে বিশ্রাম ও নির্বাচন সংক্রান্ত প্রশিক্ষণের জন্য ৫০ শতাংশ সেনা সদস্যদের প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত হয়।

বিশ্রাম ও প্রশিক্ষণ শেষে ধাপে ধাপে তাদের আবারও মোতায়েন করা হবে। তারা মোতায়েন হলে বাকিরা আবার প্রশিক্ষণ ও বিশ্রামে যাবেন।

গেল বছর ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গত ১৭ সেপ্টেম্বর সেনাবাহিনীর কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ৬০ দিনের জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দেয় সরকার। ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর কর্মকর্তাদেরও এই ক্ষমতা দেয়া হয়। এরপর সাত দফা দুই মাস করে এই মেয়াদ বাড়ানো হয়।

‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’: গ্রেপ্তারকৃত সেনা কর্মকর্তাদের চাকরি নিয়ে যা বললো সেনা সদর

আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার শাসনামলে গুম-খুনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের তিন মামলায় কারাগারে থাকা ১৫ সেনা কর্মকর্তার চাকরি এখনও আছে কি না, সেই প্রশ্নের জবাবে সেনাসদর বলছে, এটা একটা আইনগত প্রক্রিয়া।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) আইনে অভিযোগপত্রে নাম এলে চাকরি যাওয়ার বিধানটি স্পষ্ট করা হয়নি। সেটা স্পষ্টীকরণের অপেক্ষায় আছে সেনাসদর।

বুধবার, ঢাকা সেনানিবাসের অফিসার্স মেসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন সেনাসদরের পিএস পরিদপ্তরের এজি শাখার পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মুস্তাফিজুর রহমান। এর আগে সেনাবাহিনীর তরফে বলা হয়েছিল আইসিটি আইনের সঙ্গে সেনা আইনের যে অসামঞ্জস্যগুলো রয়েছে, সেগুলো ঘোচানোর বিষয়ে সরকারের সঙ্গে তারা যোগাযোগ করছে।

এই প্রক্রিয়া কতদূর এগিয়েছে জানতে চাইলে ব্রিগেডিয়ার মুস্তাফিজুর বলেন, ‘এটি একটি আইনি প্রক্রিয়াগত বিষয়। আপনারা জানেন যে, আর্মি অ্যাক্ট ১৯৫২ এবং আইসিটি অ্যাক্ট ১৯৭২ দুটোই স্পেশাল অ্যাক্ট। এই দুটো আইনকে আমরা কখনোই মুখোমুখি দাঁড় করাবো না।’

আইসিটি অ্যাক্টেই বর্তমানে মামলাটি পরিচালিত হচ্ছে, আমরা সরকারের সঙ্গে ‘এনগেজমেন্টে’ আছি। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। দেশের যে প্রচলিত আইনগুলো রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে যে আইনেই বিচার হবে আমরা চাইবো, সরকার একটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বিচারটি সম্পন্ন করবে।

গ্রেপ্তারকৃত সেনাকর্মকর্তাদের অধিকার বিষয়ে সেনাসদর ওয়াকিবহাল আছে তুলে ধরে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘সেই সঙ্গে আমি এটাও বলতে চাই, যারা গুম-খুনের শিকার হয়েছেন তাদের পরিবারের প্রতি আমরা সহানুভূতিশীল।

একইসঙ্গে আমাদের যে অফিসাররা আছে তাদের যে ‘রাইটস’ আছে, ‘রাইটস অ্যান্ড প্রিভিলেইজেস’, সেটার সম্পর্কেও আমরা ওয়াকিবহাল আছি এবং আমরা সেটার ক্ষেত্রে সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি।’

সরকার যদি ‘আর্মি অ্যাক্টের’ অধীনে এই বিচার করতে চায় সেজন্যও সেনাবাহিনীর প্রস্তুতি চলছে তুলে ধরে ব্রিগেডিয়ার মুস্তাফিজুর বলেন, ‘আমরা দুটো আইনকে সামনা-সামনি দাঁড় করাবো না।

সরকার যেটাকে ভালো মনে করে সেভাবেই যেন এগিয়ে যায় আমরা প্রস্তুত আছি। যদি এটা আর্মি অ্যাক্টের অধীনে বিচার করতে বলে সেটা আমরা করতে পারবো। সেভাবে আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

কারাগারে থাকা এই কর্মকর্তাদের এখনও চাকরি বহাল আছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটিও আরেকটি আইনি প্রক্রিয়াগত বিষয়। আইসিটি অ্যাক্টের যে থার্ড অ্যামেন্ডমেন্ট, গত ৬ অক্টোবর যেটা প্রকাশিত হয়েছিল সেখানে ‘ডিসকোয়ালিফিকিশন টু হ্যাভ আ পাবলিক অফিস’, এটার বিষয়ে ‘ইন্টারপ্রিটেশনের প্রবলেম’ আছে। সেটা হচ্ছে যে এটাকে বিভিন্নভাবে ইন্টারপ্রিট করা যেতে পারে। সেটার বিষয়ে সরকারের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ জারি আছে। আমরা এটার বিষয়ে একটা স্পষ্ট নির্দেশনার অপেক্ষায় আছি।

back to top