ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ ও ব্লাস্ট-এর উদ্যোগে পরিচালিত এক গবেষনায় জানানো হয়েছে, মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্তদের বেশির ভাগ দরিদ্র, স্বল্পশিক্ষিত ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষ।
বাংলাদেশে গত কুড়ি বছরে মৃত্যুদন্ড প্রদান এবং দন্ড কার্যকরের সংখ্যা বেড়েছে। বিভিন্ন মামলায় আদালতের দেয়া রায়ে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ৩৯ জনের মামলা নিয়ে এক গবেষণায় এমন তথ্য পাওয়া যায়।
বৃহস্পতিবার রাতে ভার্চ্যুয়াল এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মৃত্যুদন্ডের সাজা পাওয়া ব্যক্তিদের নিয়ে করা গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের উদ্যোগে ও বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) সহযোগিতায় গবেষণাটি হয়েছে।
গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে একাধিক আইন বিশেষজ্ঞ দেশে মৃত্যুদন্ডের বিধান রাখার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করার সময় এসেছে বলে মত দেন। একই সঙ্গে মৃত্যুদন্ডের বিধান ও সামাজিক অভিঘাত নিয়ে গবেষণা, আলোচনা ও বিতর্কের ওপর জোর দিয়েছেন তাঁরা।
আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. নিজামুল হক তার অভিমত প্রকাশ করে অনুষ্ঠানে বলেন, ‘লোকেরা মনে করে মৃত্যুদন্ডে অবৈধ কাজ কমায়। আমি তা মনে করি না। মৃত্যুদন্ডের বিধান থাকলেও অপরাধ হয়, না থাকলেও হয়। এটি কমানোর জন্য সামাজিক সচেতনতা দরকার।’
যেকোন অপরাধ করার পর বিভিন্ন মহল থেকে ‘ন্যায়বিচার’ চাই বলে দাবি ওঠে। ফাঁসি চাই বলে দাবি জানায় অনেকে। কিন্তু মৃত্যুদন্ড হলেই ন্যায়বিচার হয়েছে বলা যায়? এটা ভয়াবহ অবস্থা, এ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
অনুষ্ঠানে গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমান। গবেষণা প্রবন্ধে বলা হয়, ১৯৯১ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত ১১ জন, ২০০১ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ৫৭ জন এবং ২০১১ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ৩৩ পর্যন্ত মৃত্যুদন্ড কার্যকর হয়েছে।
৪৬ শতাংশ মামলায় দেখা যায়, ঘটনার তারিখ থেকে হাইকোর্টে মামলা নিষ্পত্তি হতে ১০ বছরের বেশি সময় লেগেছে। হাইকোর্ট বিভাগে মামলা নিষ্পত্তি হতে গড়ে সাড়ে পাঁচ বছর সময় লেগেছে।
গবেষণায় বলা হয়, সাধারণ আইনে ৩৩টি অপরাধের জন্য মৃত্যুদন্ডের বিধান আছে। এর মধ্যে ১৪টি বিধান ২০০০ সালের পর যুক্ত হয়েছে। ২০১৩ সালে বিচারিক আদালতে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ৩৯ জনকে নিয়ে এই গবেষণা হয়েছে। ওই ৩৯ জনের মধ্যে অর্ধেকের বেশি পরিবার সামাজিকভাবে বিভিন্ন রকম হয়রানির শিকারও হয়েছে।
অধ্যাপক মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমানের নেতৃত্বে গবেষণাটি হয়েছে। গবেষণার সময়কাল ছিল ২০১৮ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত।
অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে যাঁদের সাজা হয়েছে বা কার্যকর হওয়ার অপেক্ষায় আছে, তাঁদের বেশির ভাগ গরিব ও শিক্ষার সুযোগবঞ্চিত। তিনি বলেন, শিক্ষার দিকে দৃষ্টি দেওয়ার পাশাপাশি আইনের সংস্কার প্রয়োজন। মৃত্যুদন্ডের বিষয়ে আরও বেশি গবেষণা, আলোচনা ও পর্যালোচনা হওয়া দরকার।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আসিফ নজরুল । অনুষ্ঠানের শুরুতে তিনি বলেন, বিশ্বজুড়েই মৃত্যুদন্ড নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। ইতিমধ্যে পৃথিবীর ১০৮টি দেশে মৃত্যুদন্ড দেয়ার বিধান বিলুপ্ত করা হয়েছে।
দেশে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামির সাজা কার্যকরে অনেক সময় লাগে। ১৫-২০ বছর পর্যন্ত দন্ডিত ব্যক্তিকে এ জন্য অপেক্ষা করতে হয়। এটি তার জন্য বাড়তি শাস্তি হয়ে যায়। মৃত্যুদন্ডের বিধান পরিবর্তনের বিষয়টি ভাবার সময় এসেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. রহমত উল্লাহ, ব্লাস্টের অবৈতনিক নির্বাহী পরিচালক আইনজীবী সারা হোসেন, অধ্যাপক নাইমা হক, বাংলাদেশে সুইডিশ দূতাবাসের (কাউন্সিলর-রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সংস্কৃতিবিষয়ক প্রধান) থমাস বামগার্টনার, অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন খান, ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনের রাজনৈতিক বিভাগের প্রধান আবু জাকি, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্যুদন্ডবিষয়ক গবেষণা ইউনিটের পরিচালক ক্যারোলিন হল প্রমুখ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ।
শুক্রবার, ১৮ জুন ২০২১
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ ও ব্লাস্ট-এর উদ্যোগে পরিচালিত এক গবেষনায় জানানো হয়েছে, মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্তদের বেশির ভাগ দরিদ্র, স্বল্পশিক্ষিত ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষ।
বাংলাদেশে গত কুড়ি বছরে মৃত্যুদন্ড প্রদান এবং দন্ড কার্যকরের সংখ্যা বেড়েছে। বিভিন্ন মামলায় আদালতের দেয়া রায়ে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ৩৯ জনের মামলা নিয়ে এক গবেষণায় এমন তথ্য পাওয়া যায়।
বৃহস্পতিবার রাতে ভার্চ্যুয়াল এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মৃত্যুদন্ডের সাজা পাওয়া ব্যক্তিদের নিয়ে করা গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের উদ্যোগে ও বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) সহযোগিতায় গবেষণাটি হয়েছে।
গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে একাধিক আইন বিশেষজ্ঞ দেশে মৃত্যুদন্ডের বিধান রাখার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করার সময় এসেছে বলে মত দেন। একই সঙ্গে মৃত্যুদন্ডের বিধান ও সামাজিক অভিঘাত নিয়ে গবেষণা, আলোচনা ও বিতর্কের ওপর জোর দিয়েছেন তাঁরা।
আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. নিজামুল হক তার অভিমত প্রকাশ করে অনুষ্ঠানে বলেন, ‘লোকেরা মনে করে মৃত্যুদন্ডে অবৈধ কাজ কমায়। আমি তা মনে করি না। মৃত্যুদন্ডের বিধান থাকলেও অপরাধ হয়, না থাকলেও হয়। এটি কমানোর জন্য সামাজিক সচেতনতা দরকার।’
যেকোন অপরাধ করার পর বিভিন্ন মহল থেকে ‘ন্যায়বিচার’ চাই বলে দাবি ওঠে। ফাঁসি চাই বলে দাবি জানায় অনেকে। কিন্তু মৃত্যুদন্ড হলেই ন্যায়বিচার হয়েছে বলা যায়? এটা ভয়াবহ অবস্থা, এ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
অনুষ্ঠানে গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমান। গবেষণা প্রবন্ধে বলা হয়, ১৯৯১ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত ১১ জন, ২০০১ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ৫৭ জন এবং ২০১১ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ৩৩ পর্যন্ত মৃত্যুদন্ড কার্যকর হয়েছে।
৪৬ শতাংশ মামলায় দেখা যায়, ঘটনার তারিখ থেকে হাইকোর্টে মামলা নিষ্পত্তি হতে ১০ বছরের বেশি সময় লেগেছে। হাইকোর্ট বিভাগে মামলা নিষ্পত্তি হতে গড়ে সাড়ে পাঁচ বছর সময় লেগেছে।
গবেষণায় বলা হয়, সাধারণ আইনে ৩৩টি অপরাধের জন্য মৃত্যুদন্ডের বিধান আছে। এর মধ্যে ১৪টি বিধান ২০০০ সালের পর যুক্ত হয়েছে। ২০১৩ সালে বিচারিক আদালতে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ৩৯ জনকে নিয়ে এই গবেষণা হয়েছে। ওই ৩৯ জনের মধ্যে অর্ধেকের বেশি পরিবার সামাজিকভাবে বিভিন্ন রকম হয়রানির শিকারও হয়েছে।
অধ্যাপক মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমানের নেতৃত্বে গবেষণাটি হয়েছে। গবেষণার সময়কাল ছিল ২০১৮ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত।
অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে যাঁদের সাজা হয়েছে বা কার্যকর হওয়ার অপেক্ষায় আছে, তাঁদের বেশির ভাগ গরিব ও শিক্ষার সুযোগবঞ্চিত। তিনি বলেন, শিক্ষার দিকে দৃষ্টি দেওয়ার পাশাপাশি আইনের সংস্কার প্রয়োজন। মৃত্যুদন্ডের বিষয়ে আরও বেশি গবেষণা, আলোচনা ও পর্যালোচনা হওয়া দরকার।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আসিফ নজরুল । অনুষ্ঠানের শুরুতে তিনি বলেন, বিশ্বজুড়েই মৃত্যুদন্ড নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। ইতিমধ্যে পৃথিবীর ১০৮টি দেশে মৃত্যুদন্ড দেয়ার বিধান বিলুপ্ত করা হয়েছে।
দেশে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামির সাজা কার্যকরে অনেক সময় লাগে। ১৫-২০ বছর পর্যন্ত দন্ডিত ব্যক্তিকে এ জন্য অপেক্ষা করতে হয়। এটি তার জন্য বাড়তি শাস্তি হয়ে যায়। মৃত্যুদন্ডের বিধান পরিবর্তনের বিষয়টি ভাবার সময় এসেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. রহমত উল্লাহ, ব্লাস্টের অবৈতনিক নির্বাহী পরিচালক আইনজীবী সারা হোসেন, অধ্যাপক নাইমা হক, বাংলাদেশে সুইডিশ দূতাবাসের (কাউন্সিলর-রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সংস্কৃতিবিষয়ক প্রধান) থমাস বামগার্টনার, অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন খান, ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনের রাজনৈতিক বিভাগের প্রধান আবু জাকি, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্যুদন্ডবিষয়ক গবেষণা ইউনিটের পরিচালক ক্যারোলিন হল প্রমুখ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ।