১৯৭১ সালের ২ ডিসেম্বর দিনটি ছিল বৃহস্পতিবার। ১৯৭১ সালের এই দিন মুক্তি সংগ্রামে উত্তাল ছিল বাংলার মাটি। মুক্তিযোদ্ধারা মাতৃভূমিকে হানাদার বাহিনীর হাত থেকে মুক্ত করতে প্রচন্ড যুদ্ধ চালিয়ে যেতে থাকে। একের পর এক এলাকা মুক্ত করতে করতে মুক্তিবাহিনী প্রচন্ড গতিতে ঢাকার দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। আর প্রতিদিনই কোণঠাসা হতে থাকে পাকিস্তানি বাহিনী।
নভেম্বরের শুরু থেকে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে পাকিস্তানি বাহিনীর যুদ্ধ তীব্র আকার ধারণ করতে থাকে। সীমান্ত এলাকাগুলোতে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে যোগ দেয় সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ। সব মিলে এক বিশাল বাহিনী পাকিস্তানিদের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিতাড়িত করতে থাকে। পুরো দেশজুড়ে চলে গণপ্রতিরোধ।
এই দিনে মুক্তিবাহিনী পঞ্চগড় এলাকামুক্ত করে এগিয়ে যেতে থাকে ঠাকুরগাঁওয়ের দিকে।
মুক্তিবাহিনীর হামলায় ঢাকায় রামপুরা ও মালিবাগে বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। চট্টগ্রামে উত্তরে ফটিকছড়ি ও রাউজান থানা এবং দক্ষিণে আনোয়ারার অধিকাংশ স্থান হানাদারমুক্ত হয়। মুক্তিবাহিনীর বোমা বিস্ফোরণে চট্টগ্রামের পাঁচটি বিদ্যুৎ সাব-স্টেশন ও দুটি পেট্রোল পাম্প বিধ্বস্ত হয়। মুক্তিবাহিনী নরসিংদীর ঘোড়াশালে চারদিক থেকে আক্রমণ করে ২৭ পাকিস্তানি হানাদারকে হত্যা করে। সেখান থেকে বেশকিছু গোলাবারুদও উদ্ধার করে। আখাউড়া, কমলাপুর, বনতারা, শমশেরনগর ও পার্বত্য চট্টগ্রামে হানাদার বাহিনী পিছু হটে।
মুক্তিবাহিনী তিন দিক থেকে শত্রুকে আক্রমণ করলে হানাদার বাহিনী আজমপুর রেলওয়ে স্টেশন ছেড়ে পালিয়ে যায়। মুক্তিবাহিনী নেত্রকোনার বিরিসিঁড়ির বিজয়পুরে পাকিস্তানি বাহিনীর অবস্থানের ওপর অ্যামবুশ করে ৫ হানাদারকে হত্যা করে। সেখান থেকে মুক্তিবাহিনী রাইফেলসহ ২১ রাজাকারকে ধরতে সক্ষম হয়। হানাদার কমান্ডার মোছলেহ উদ্দিন ভালুকা থেকে একদল রাজাকার সঙ্গে নিয়ে কাঁঠালি গ্রামে লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগ করতে এলে মুক্তিবাহিনীর অতর্কিত আক্রমণে তিন পাকিস্তানি হানাদার ও সাত রাজাকার নিহত হয়, সাত পাকিস্তানি সৈন্য আহত হয়।
মুক্তিবাহিনী দিনাজপুরে বোদা থানা শত্রুমুক্ত করে ঠাকুরগাঁওয়ের দিকে অগ্রসর হয়। রংপুর জেলার নাগেশ্বরী থানা শত্রুমুক্ত করে এ আরও দক্ষিণে এগিয়ে যায়। কুষ্টিয়ায় জীবননগরের উত্তর-পূর্বে আন্দুল্বেড়িয়া গ্রাম স্বাধীন করে। হানাদার বাহিনী ৯ম বিভাগীয় হেডকোয়ার্টার যশোর থেকে মাগুরায় শিফট করে।
মুক্তিযোদ্ধারা ময়মনসিংহের ধানশুর ও কাটালী গ্রামের বড় রাস্তায় পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর আক্রমণ করে। এই যুদ্ধে ১৪ পাকিস্তানি সেনা ও ১৩ রাজাকার নিহত হয়। কামালপুরে শত্রু পোস্ট চারদিক দিয়ে ঘিরে ফেলে এবং শত্রুর সমস্ত যোগাযোগ লাইন ধ্বংস করে দেয়।
সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকা আগেই শত্রুমুক্ত হয়েছিল লে. জিয়াউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন মুক্তিবাহিনীর হামলায়। ডিসেম্বরের শুরুতে দূরবর্তী বিভিন্ন অবস্থান যথা বসন্তপুর, কালীগঞ্জ, নাছিমগঞ্জ, পারুলিয়া প্রভৃতি এলাকা থেকে পাকিস্তানি সেনাদের পিছু হটিয়ে মুক্তিবাহিনী সাতক্ষীরার উপকণ্ঠে পৌঁছে যায়। রূপসা নদীর ওপারে খুলনার কাছে ঘাঁটি স্থাপন করে মুক্তিযোদ্ধাদের আরেক দল। একাত্তরের এই দিনে ময়মনসিংহ, জামালপুরসহ দেশের বেশ কয়েকটি এলাকায় গণহত্যা চালায় পাকিস্তানি বাহিনী। তবুও অদম্য সাহস আর প্রবল দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে মুক্তিযোদ্ধারা এগিয়ে যায় তাদের আসন্ন বিজয়ের অভেদ্য লক্ষ্যে।
এদিন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী কংগ্রেসের কর্মিসভায় বলেন, সময় বদলেছে, তিন-চার হাজার মাইল দূর থেকে বর্ণের প্রাধান্য দিয়ে তাদের (পাকিস্তান) ইচ্ছামতো হুকুমনামা জানাবেন, তা মেনে নেয়া যায় না। ভারত আর ন্যাটিভ রাজ্য নয়। আজ আমরা আমাদের জাতীয় স্বার্থের জন্য দেশের সর্বোচ্চ প্রয়োজন অনুযায়ী কাজ করব, ওই সব বৃহৎ দেশগুলোর ইচ্ছানুযায়ী নয়। তিনি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।
ডিসেম্বরের এ সময়টাতে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মিডিয়াতেও মুক্তিবাহিনীর সাফল্যের খবর গুরুত্ব দিয়ে প্রচার হতে শুরু করে।
বুধবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২১
১৯৭১ সালের ২ ডিসেম্বর দিনটি ছিল বৃহস্পতিবার। ১৯৭১ সালের এই দিন মুক্তি সংগ্রামে উত্তাল ছিল বাংলার মাটি। মুক্তিযোদ্ধারা মাতৃভূমিকে হানাদার বাহিনীর হাত থেকে মুক্ত করতে প্রচন্ড যুদ্ধ চালিয়ে যেতে থাকে। একের পর এক এলাকা মুক্ত করতে করতে মুক্তিবাহিনী প্রচন্ড গতিতে ঢাকার দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। আর প্রতিদিনই কোণঠাসা হতে থাকে পাকিস্তানি বাহিনী।
নভেম্বরের শুরু থেকে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে পাকিস্তানি বাহিনীর যুদ্ধ তীব্র আকার ধারণ করতে থাকে। সীমান্ত এলাকাগুলোতে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে যোগ দেয় সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ। সব মিলে এক বিশাল বাহিনী পাকিস্তানিদের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিতাড়িত করতে থাকে। পুরো দেশজুড়ে চলে গণপ্রতিরোধ।
এই দিনে মুক্তিবাহিনী পঞ্চগড় এলাকামুক্ত করে এগিয়ে যেতে থাকে ঠাকুরগাঁওয়ের দিকে।
মুক্তিবাহিনীর হামলায় ঢাকায় রামপুরা ও মালিবাগে বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। চট্টগ্রামে উত্তরে ফটিকছড়ি ও রাউজান থানা এবং দক্ষিণে আনোয়ারার অধিকাংশ স্থান হানাদারমুক্ত হয়। মুক্তিবাহিনীর বোমা বিস্ফোরণে চট্টগ্রামের পাঁচটি বিদ্যুৎ সাব-স্টেশন ও দুটি পেট্রোল পাম্প বিধ্বস্ত হয়। মুক্তিবাহিনী নরসিংদীর ঘোড়াশালে চারদিক থেকে আক্রমণ করে ২৭ পাকিস্তানি হানাদারকে হত্যা করে। সেখান থেকে বেশকিছু গোলাবারুদও উদ্ধার করে। আখাউড়া, কমলাপুর, বনতারা, শমশেরনগর ও পার্বত্য চট্টগ্রামে হানাদার বাহিনী পিছু হটে।
মুক্তিবাহিনী তিন দিক থেকে শত্রুকে আক্রমণ করলে হানাদার বাহিনী আজমপুর রেলওয়ে স্টেশন ছেড়ে পালিয়ে যায়। মুক্তিবাহিনী নেত্রকোনার বিরিসিঁড়ির বিজয়পুরে পাকিস্তানি বাহিনীর অবস্থানের ওপর অ্যামবুশ করে ৫ হানাদারকে হত্যা করে। সেখান থেকে মুক্তিবাহিনী রাইফেলসহ ২১ রাজাকারকে ধরতে সক্ষম হয়। হানাদার কমান্ডার মোছলেহ উদ্দিন ভালুকা থেকে একদল রাজাকার সঙ্গে নিয়ে কাঁঠালি গ্রামে লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগ করতে এলে মুক্তিবাহিনীর অতর্কিত আক্রমণে তিন পাকিস্তানি হানাদার ও সাত রাজাকার নিহত হয়, সাত পাকিস্তানি সৈন্য আহত হয়।
মুক্তিবাহিনী দিনাজপুরে বোদা থানা শত্রুমুক্ত করে ঠাকুরগাঁওয়ের দিকে অগ্রসর হয়। রংপুর জেলার নাগেশ্বরী থানা শত্রুমুক্ত করে এ আরও দক্ষিণে এগিয়ে যায়। কুষ্টিয়ায় জীবননগরের উত্তর-পূর্বে আন্দুল্বেড়িয়া গ্রাম স্বাধীন করে। হানাদার বাহিনী ৯ম বিভাগীয় হেডকোয়ার্টার যশোর থেকে মাগুরায় শিফট করে।
মুক্তিযোদ্ধারা ময়মনসিংহের ধানশুর ও কাটালী গ্রামের বড় রাস্তায় পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর আক্রমণ করে। এই যুদ্ধে ১৪ পাকিস্তানি সেনা ও ১৩ রাজাকার নিহত হয়। কামালপুরে শত্রু পোস্ট চারদিক দিয়ে ঘিরে ফেলে এবং শত্রুর সমস্ত যোগাযোগ লাইন ধ্বংস করে দেয়।
সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকা আগেই শত্রুমুক্ত হয়েছিল লে. জিয়াউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন মুক্তিবাহিনীর হামলায়। ডিসেম্বরের শুরুতে দূরবর্তী বিভিন্ন অবস্থান যথা বসন্তপুর, কালীগঞ্জ, নাছিমগঞ্জ, পারুলিয়া প্রভৃতি এলাকা থেকে পাকিস্তানি সেনাদের পিছু হটিয়ে মুক্তিবাহিনী সাতক্ষীরার উপকণ্ঠে পৌঁছে যায়। রূপসা নদীর ওপারে খুলনার কাছে ঘাঁটি স্থাপন করে মুক্তিযোদ্ধাদের আরেক দল। একাত্তরের এই দিনে ময়মনসিংহ, জামালপুরসহ দেশের বেশ কয়েকটি এলাকায় গণহত্যা চালায় পাকিস্তানি বাহিনী। তবুও অদম্য সাহস আর প্রবল দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে মুক্তিযোদ্ধারা এগিয়ে যায় তাদের আসন্ন বিজয়ের অভেদ্য লক্ষ্যে।
এদিন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী কংগ্রেসের কর্মিসভায় বলেন, সময় বদলেছে, তিন-চার হাজার মাইল দূর থেকে বর্ণের প্রাধান্য দিয়ে তাদের (পাকিস্তান) ইচ্ছামতো হুকুমনামা জানাবেন, তা মেনে নেয়া যায় না। ভারত আর ন্যাটিভ রাজ্য নয়। আজ আমরা আমাদের জাতীয় স্বার্থের জন্য দেশের সর্বোচ্চ প্রয়োজন অনুযায়ী কাজ করব, ওই সব বৃহৎ দেশগুলোর ইচ্ছানুযায়ী নয়। তিনি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।
ডিসেম্বরের এ সময়টাতে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মিডিয়াতেও মুক্তিবাহিনীর সাফল্যের খবর গুরুত্ব দিয়ে প্রচার হতে শুরু করে।