পাঠকপ্রিয় থ্রিলার সিরিজ ‘মাসুদ রানা’ অধ্যায়ের সমাপ্তিরেখা টেনে মায়ের কবরে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন সেবা প্রকাশনীর কর্ণধার কাজী আনোয়ার হোসেন।
বৃহস্পতিবার (২০ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর বনানীর কবরস্থানে মা সাজেদা খাতুনের কবরে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়। গতকাল বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটে রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে মারা যান কাজী আনোয়ার হোসেন।
করোনা সংক্রমণের কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত উপস্থিতি এবং সংক্ষিপ্তভাবে সম্পন্ন করা হয় তার অন্তিম বিদায় পালা। কাজী আনোয়ার হোসেনের শেষ ইচ্ছা ছিল মার কবরেই থাকবেন তিনি। এর আগে বৃহস্পতিবার সকালে বারডেমের হিমঘর থেকে তার মরদেহ ২৪/৪ কাজী মোতাহার হোসেন সড়কের বাড়িতে নেওয়া হয়।
কাজী আনোয়ার হোসেনের বাসভবনেই অবস্থিত সেবা প্রকাশনী। যার মাধ্যমে ষাটের দশক থেকে বাংলাদেশে পাঠক সৃষ্টির এক অনন্য যাত্রা শুরু করেছিলেন তিনি। তার অনন্ত যাত্রার পর্বও শুরু হয় এ স্থান থেকে। শেষবারের মতো কাজী আনোয়ার হোসেনকে শ্রদ্ধা জানাতে সেখানে তার মরদেহ আনার পর পরিবারের সদস্য থেকে শুরু করে পাঠক-ভক্তরা সেখানে ভিড় জমান।
শ্রদ্ধা জানাতে আসেন সেবা প্রকাশনীর লেখক নিয়াজ মোরশেদ। তিনি বলেন, এ দেশের পাঠক সৃষ্টিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন কাজী আনোয়ার হোসেন। হুমায়ূন আহমেদের আগেই তিনি এ দেশে বই পড়ার পথ তৈরি করেছিলেন। এমনকি জেলায় জেলায় নিজের গাড়িতে চড়ে মাইকিং করে বই বিক্রি করেছিলেন।
সেগুনবাগিচার বাসভবনে ছেলে কাজী শাহনূর হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, আমার বাবা একজন যোদ্ধা মানুষ ছিলেন। সব সময় সাহস নিয়ে বেঁচেছেন। এ মানুষটি পরিবারকে নিয়ে থাকতে পছন্দ করতেন।
ছেলে কাজী মায়মূর হোসেন বলেন বাবা বলে গিয়েছিলেন মৃত্যুর পরে তাঁকে নিয়ে টানাহ্যাঁচড়া না করতে। তা ছাড়া এখন করোনার সংক্রমণও বেড়েছে। সব মিলিয়েই মরদেহ শহীদ মিনার বা অন্য কোথাও নিয়ে যাওয়ার কথা ভাবা হয়নি। তবে তিনি বলে গেছেন প্রকাশনীর কাজ আমরা যেন অব্যাহত রাখি। আমরা দুই ভাই সেই চেষ্টা করে যাব।
জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে মাসুদ রানা স্বত্বাধিকার নিয়ে একটি মামলা লড়েছিলেন কাজী আনোয়ার হোসেন। সে বিষয়ে তার পুত্রবধূ মাসুমা মায়মূর বলেন, ৪৩ বছর ধরে মাসুদ রানা ও কুয়াশা সিরিজ লিখেছেন। জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে তার বইগুলোর লেখক হিসেবে শেখ আবদুল হাকিম নিজেকে দাবি করেন। কপিরাইট অফিস ও হাইকোর্টের রায় নানা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। তবে এ বিষয়টি এখনো অমীমাংসিত এবং বিচারাধীন।
সেগুনবাগিচার বাসভবন থেকে কাজী আনোয়ার হোসেনের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় সেগুনবাগিচা জামে মসজিদে। সেখানে বাদ যোহর তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সেখান থেকে তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় বনানী কবরস্থানে। সেখানে তার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী, মায়ের কবরে তাকে দাফন করা হয়।
সেবা প্রকাশনীর কর্ণধার হিসেবে কাজী আনোয়ার হোসেন ষাটের দশকের মধ্যভাগে মাসুদ রানা নামের স্পাই চরিত্র সৃষ্টি করেন। মাসুদ রানার চরিত্রটি মূলত ইয়ান ফ্লেমিংয়ের সৃষ্ট জেমস বন্ড চরিত্রের বাঙালি সংস্করণ হিসেবে গণ্য করা হয়।
মাসুদ রানা সৃষ্টির কিছু আগে কুয়াশা নামক আরেকটি জনপ্রিয় চরিত্র তার হাতেই জন্ম নেয়। কাজী আনোয়ার হোসেন ছদ্মনাম হিসেবে বিদ্যুৎ মিত্র ও শামসুদ্দীন নওয়াব নাম দুটি ব্যবহার করতেন। তবে সেবা প্রকাশনীর ভক্ত পাঠকের কাছে তিনি কাজীদা নামেই বেশি পরিচিতি পান।
কাজী আনোয়ার হোসেন ১৯৩৬ সালের ১৯ জুলাই ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। পুরো নাম কাজী শামসুদ্দিন আনোয়ার হোসেন।
কাজী আনোয়ার হোসেন প্রোস্টেট ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছিলেন। গত প্রায় তিন মাস থেকে চিকিৎসার ভেতরেই ছিলেন। গত ১০ জানুয়ারি থেকে বারডেম হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল। বুধবার বিকেল সাড়ে চারটায় তিনি অন্তিম শ্বাস ত্যাগ করেন। তার স্ত্রী ফরিদা ইয়াসমিন ২০১৫ সালে এবং মেয়ে শাহরিন সোনিয়া ২০১৪ সালে ইন্তেকাল করেন। দুই ছেলে কাজী শাহনূর হোসেন ও কাজী মায়মূর হোসেনসহ আত্মীয়স্বজন আর দেশ-বিদেশে অসংখ্য গুণমুগ্ধ পাঠককে শোকাচ্ছন্ন করে গেলেন মাসুদ রানা ও কুয়াশার স্রষ্টা, সেবা প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা কাজী আনোয়ার হোসেন।
বৃহস্পতিবার, ২০ জানুয়ারী ২০২২
পাঠকপ্রিয় থ্রিলার সিরিজ ‘মাসুদ রানা’ অধ্যায়ের সমাপ্তিরেখা টেনে মায়ের কবরে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন সেবা প্রকাশনীর কর্ণধার কাজী আনোয়ার হোসেন।
বৃহস্পতিবার (২০ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর বনানীর কবরস্থানে মা সাজেদা খাতুনের কবরে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়। গতকাল বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটে রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে মারা যান কাজী আনোয়ার হোসেন।
করোনা সংক্রমণের কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত উপস্থিতি এবং সংক্ষিপ্তভাবে সম্পন্ন করা হয় তার অন্তিম বিদায় পালা। কাজী আনোয়ার হোসেনের শেষ ইচ্ছা ছিল মার কবরেই থাকবেন তিনি। এর আগে বৃহস্পতিবার সকালে বারডেমের হিমঘর থেকে তার মরদেহ ২৪/৪ কাজী মোতাহার হোসেন সড়কের বাড়িতে নেওয়া হয়।
কাজী আনোয়ার হোসেনের বাসভবনেই অবস্থিত সেবা প্রকাশনী। যার মাধ্যমে ষাটের দশক থেকে বাংলাদেশে পাঠক সৃষ্টির এক অনন্য যাত্রা শুরু করেছিলেন তিনি। তার অনন্ত যাত্রার পর্বও শুরু হয় এ স্থান থেকে। শেষবারের মতো কাজী আনোয়ার হোসেনকে শ্রদ্ধা জানাতে সেখানে তার মরদেহ আনার পর পরিবারের সদস্য থেকে শুরু করে পাঠক-ভক্তরা সেখানে ভিড় জমান।
শ্রদ্ধা জানাতে আসেন সেবা প্রকাশনীর লেখক নিয়াজ মোরশেদ। তিনি বলেন, এ দেশের পাঠক সৃষ্টিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন কাজী আনোয়ার হোসেন। হুমায়ূন আহমেদের আগেই তিনি এ দেশে বই পড়ার পথ তৈরি করেছিলেন। এমনকি জেলায় জেলায় নিজের গাড়িতে চড়ে মাইকিং করে বই বিক্রি করেছিলেন।
সেগুনবাগিচার বাসভবনে ছেলে কাজী শাহনূর হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, আমার বাবা একজন যোদ্ধা মানুষ ছিলেন। সব সময় সাহস নিয়ে বেঁচেছেন। এ মানুষটি পরিবারকে নিয়ে থাকতে পছন্দ করতেন।
ছেলে কাজী মায়মূর হোসেন বলেন বাবা বলে গিয়েছিলেন মৃত্যুর পরে তাঁকে নিয়ে টানাহ্যাঁচড়া না করতে। তা ছাড়া এখন করোনার সংক্রমণও বেড়েছে। সব মিলিয়েই মরদেহ শহীদ মিনার বা অন্য কোথাও নিয়ে যাওয়ার কথা ভাবা হয়নি। তবে তিনি বলে গেছেন প্রকাশনীর কাজ আমরা যেন অব্যাহত রাখি। আমরা দুই ভাই সেই চেষ্টা করে যাব।
জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে মাসুদ রানা স্বত্বাধিকার নিয়ে একটি মামলা লড়েছিলেন কাজী আনোয়ার হোসেন। সে বিষয়ে তার পুত্রবধূ মাসুমা মায়মূর বলেন, ৪৩ বছর ধরে মাসুদ রানা ও কুয়াশা সিরিজ লিখেছেন। জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে তার বইগুলোর লেখক হিসেবে শেখ আবদুল হাকিম নিজেকে দাবি করেন। কপিরাইট অফিস ও হাইকোর্টের রায় নানা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। তবে এ বিষয়টি এখনো অমীমাংসিত এবং বিচারাধীন।
সেগুনবাগিচার বাসভবন থেকে কাজী আনোয়ার হোসেনের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় সেগুনবাগিচা জামে মসজিদে। সেখানে বাদ যোহর তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সেখান থেকে তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় বনানী কবরস্থানে। সেখানে তার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী, মায়ের কবরে তাকে দাফন করা হয়।
সেবা প্রকাশনীর কর্ণধার হিসেবে কাজী আনোয়ার হোসেন ষাটের দশকের মধ্যভাগে মাসুদ রানা নামের স্পাই চরিত্র সৃষ্টি করেন। মাসুদ রানার চরিত্রটি মূলত ইয়ান ফ্লেমিংয়ের সৃষ্ট জেমস বন্ড চরিত্রের বাঙালি সংস্করণ হিসেবে গণ্য করা হয়।
মাসুদ রানা সৃষ্টির কিছু আগে কুয়াশা নামক আরেকটি জনপ্রিয় চরিত্র তার হাতেই জন্ম নেয়। কাজী আনোয়ার হোসেন ছদ্মনাম হিসেবে বিদ্যুৎ মিত্র ও শামসুদ্দীন নওয়াব নাম দুটি ব্যবহার করতেন। তবে সেবা প্রকাশনীর ভক্ত পাঠকের কাছে তিনি কাজীদা নামেই বেশি পরিচিতি পান।
কাজী আনোয়ার হোসেন ১৯৩৬ সালের ১৯ জুলাই ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। পুরো নাম কাজী শামসুদ্দিন আনোয়ার হোসেন।
কাজী আনোয়ার হোসেন প্রোস্টেট ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছিলেন। গত প্রায় তিন মাস থেকে চিকিৎসার ভেতরেই ছিলেন। গত ১০ জানুয়ারি থেকে বারডেম হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল। বুধবার বিকেল সাড়ে চারটায় তিনি অন্তিম শ্বাস ত্যাগ করেন। তার স্ত্রী ফরিদা ইয়াসমিন ২০১৫ সালে এবং মেয়ে শাহরিন সোনিয়া ২০১৪ সালে ইন্তেকাল করেন। দুই ছেলে কাজী শাহনূর হোসেন ও কাজী মায়মূর হোসেনসহ আত্মীয়স্বজন আর দেশ-বিদেশে অসংখ্য গুণমুগ্ধ পাঠককে শোকাচ্ছন্ন করে গেলেন মাসুদ রানা ও কুয়াশার স্রষ্টা, সেবা প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা কাজী আনোয়ার হোসেন।