alt

জাতীয়

সার্চ কমিটিতে নারী সদস্যের বিধান রেখে ইসি গঠনের আইন পাস

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : বৃহস্পতিবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২২

সার্চ কমিটিতে রাষ্ট্রপতি মনোনীত দুইজন ‘বিশিষ্ট নাগরিকের’ মধ্যে একজন নারী থাকতে হবে, এমন বাধ্যবাধকতা রেখে আলোচিত নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন আইন জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। আইনে সার্চ কমিটির কার্যকাল বাড়িয়ে ১৫ দিন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী এ সংক্রান্ত ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল-২০২২’ পাসের প্রস্তাব করলে কণ্ঠভোটে তা পাস হয়। এর আগে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশন শুরু হয়। জাতীয় পার্টি (জাপা), বিএনপি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) ও ওয়ার্কার্স পার্টির সংসদ সদস্যরা বিলের ওপর জনমত যাচাই-বাছাই কমিটিতে পাঠানো এবং সংশোধনী প্রস্তাব দিলে সেগুলোর নিষ্পত্তি করেন স্পিকার। প্রথমে বিলের নাম ছিল ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল’। সংসদে সংশোধনী প্রস্তাব গ্রহণের মাধ্যমে এখন নাম হয়েছে ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল’।

ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন সার্চ কমিটিতে দুইজন বিশিষ্ট নাগরিকের মধ্যে একজন নারী রাখার প্রস্তাব করেন। আইনমন্ত্রী সেই প্রস্তাব গ্রহণে সম্মতি দিলে সংসদে কণ্ঠভোটে তা পাস হয়।

বিলে বলা ছিল, রাষ্ট্রপতি ছয় সদস্যের অনুসন্ধান (সার্চ) কমিটি গঠন করবেন, যার সভাপতি হবেন প্রধান বিচারপতি মনোনীত আপিল বিভাগের একজন বিচারক। সদস্য হিসেবে থাকবেন প্রধান বিচারপতির মনোনীত হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারক, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, সরকারি কর্মকমিশনের চেয়ারম্যান এবং রাষ্ট্রপতি মনোনীত দুইজন বিশিষ্ট নাগরিক। এখন রাষ্ট্রপতি মনোনীত ওই দুজন বিশিষ্ট নাগরিকের মধ্যে একজন নারী রাখার বিধান যুক্ত হলো।

জাপার সংসদ সদস্য ফখরুল ইমামের একটি সংশোধনী প্রস্তাবে সার্চ কমিটির কাজের মেয়াদ ১০ দিন থেকে বাড়িয়ে ১৫ দিন করার কথা বলেন। প্রস্তাবটি সংসদে গৃহীত হওয়ায় মধ্য দিয়ে সার্চ কমিটির কার্যকাল পাঁচ দিন বৃদ্ধি পায়।

বিলের ওপর বিভিন্ন শব্দ ও ছোটখাট কয়েকটি সংশোধনী প্রস্তাবও গ্রহণ করা হয়। সংসদ সদস্যদের ৬৪টি সংশোধনী প্রস্তাবের মধ্যে ২২টি আইনমন্ত্রী গ্রহণ করেন, যা ভোটে পাস হয়। একটি বিলে এতগুলো সংশোধনী আগে কখনও গ্রহণ করা হয়নি বলে জানান আইনমন্ত্রী।

বিলের ওপর জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাবগুলো পাসের সময় জাতীয় পার্টি ও বিএনপির সংসদ সদস্যরা সার্চ কমিটিতে সংসদের প্রতিনিধিত্ব দাবি করেন। বিলটির নানা দিকের সমালোচনা করেন তারা। বিলটি পাসের সময় তারা অভিযোগ করেন, খসড়া আইনটি ‘তড়িঘড়ি করে’ আনা হয়েছে।

জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘গত ১৭ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপ করে। যারা সংলাপে যায়নি এবং গিয়েছেন তারা সবাই আইনের কথা বলেছেন। মহামান্য রাষ্ট্রপতি আইনের বিষয়ে তার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন। আমরা তড়িঘড়ি করিনি। এ আইনের কথা অনেক আগে থেকেই শুরু হয়েছে। ২০১৭ সালেই এই আইনের কথা উঠেছিল।’

বিলটি নিয়ে সংসদের ভেতরে ও বাইরের সমালোচনার জবাব দেন আইনমন্ত্রী। সাবেক সিইসি এটিএম শামসুল হুদা এবং সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) তৈরি করা এ সংক্রান্ত আইনের খসড়া থেকে পড়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ওই দুটির সঙ্গে সরকারের আনা বিলের মৌলিক কোন পার্থক্য নেই।

অধিবেশনের ভেতরে-বাইরে রাজনীতিক এবং অংশীজনদের আপত্তির মুখে বহুল আলোচিত এই আইনের খসড়া রোববার (২৩ জানুয়ারি) বিল আকারে সংসদে উত্থাপন করেন আইনমন্ত্রী। পরে বিলটি পরীক্ষা করে সাত দিনের মধ্যে সংসদে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। বুধবার (২৬ জানুয়ারি) দুটি পরিবর্তনের সুপারিশসহ প্রতিবেদন সংসদে তোলেন সংসদীয় কমিটির সভাপতি মো. শহীদুজ্জামান সরকার।

সংসদীয় কমিটির দুই সুপারিশ গৃহীত

সংসদে উত্থাপিত বিলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও নির্বাচন কমিশনারদের যোগ্যতা সংক্রান্ত ৫(গ) ধারায় বলা ছিল, সিইসি ও কমিশনার হতে গেলে কোন গুরুত্বপূর্ণ সরকারি, বিচার বিভাগীয়, আধা সরকারি বা বেসরকারি পদে তার অন্যূন ২০ বছর কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এই ধারায় সরকারি, বিচার বিভাগীয়, আধা সরকারি বা বেসরকারি পদের পাশাপাশি ‘স্বায়ত্তশাসিত ও পেশায়’ যুক্ত করার সুপারিশ করেছিল সংসদীয় কমিটি। তা সংসদে গৃহীত হয়েছে। এর ফলে সিইসি ও নির্বাচন কমিশনার পদে এমন ব্যক্তিদের সার্চ কমিটি সুপারিশ করবে, যাদের কোন গুরুত্বপূর্ণ সরকারি, বিচার বিভাগীয়, আধা সরকারি বা বেসরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত পদে বা পেশায় অন্যূন ২০ বছর কাজের অভিজ্ঞতা আছে।

আর অযোগ্যতার ক্ষেত্রে ৬(ঘ) ধারায় বলা ছিল, নৈতিক স্খলনজনিত ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে অন্যূন দুই বছরের কারাদন্ডে দন্ডিত হলে সিইসি ও কমিশনার হওয়া যাবে না। এখানে দুই বছরের কারাদন্ড উঠিয়ে দিয়ে শুধু কারাদন্ডের সুপারিশ করেছিল সংসদীয় কমিটি। অর্থাৎ, নৈতিক স্খলন ফৌজদারি অপরাধে যেকোন মেয়াদের সাজা হলেই সিইসি বা কমিশনার হওয়ার ক্ষেত্রে অযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করা হবে। এ সংশোধনী প্রস্তাবও সংসদে গৃহীত হয়েছে।

সার্চ কমিটির কাজ

সার্চ কমিটির (অনুসন্ধান কমিটি) কাজ সম্পর্কে বলা হয়েছে, এ কমিটি স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার নীতি অনুসরণ করে দায়িত্ব পালন করবে। আইনে বেঁধে দেয়া যোগ্যতা, অযোগ্যতা অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও সুনাম বিবেচনা করে সিইসি ও নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করবে। এ কমিটি সিইসি ও কমিশনারদের প্রতি পদের জন্য দুইজন করে ব্যক্তির নাম সুপারিশ করবে। কমিটি গঠনের ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশ রাষ্ট্রপতির কাছে জাম দিতে হবে। সার্চ কমিটি সিইসি এবং নির্বাচন কমিশনার পদে যোগ্যদের অনুসন্ধানের জন্য রাজনৈতিক দল এবং পেশাজীবী সংগঠনের কাছ থেকে নাম আহ্বান করতে পারবে।

সিইসি ও কমিশনারদের যোগ্যতা

সিইসি ও নির্বাচন কমিশনার পদে কাউকে সুপারিশের ক্ষেত্রে তিনটি যোগ্যতা থাকতে হবে। তাকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে; ন্যূনতম ৫০ বছর বয়স হতে হবে; কোন গুরুত্বপূর্ণ সরকারি, বিচার বিভাগীয়, আধা সরকারি বা বেসরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত পদে বা পেশায় পদে তার অন্যূন ২০ বছর কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।

সিইসি ও কমিশনারদের অযোগ্যতা

সিইসি ও কমিশনার পদের জন্য ছয়টি অযোগ্যতার কথা বলা হয়েছে। আদালত অপ্রকৃতিস্থ ঘোষণা করলে; দেউলিয়া হওয়ার পর দায় থেকে অব্যাহতি না পেলে; কোন বিদেশি রাষ্ট্র্রের নাগরিকত্ব নিলে কিংবা বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা বা স্বীকার করলে; নৈতিক স্খলনজনিত ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে কারাদন্ডে দন্ডিত হলে; ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইব্যুনালস) অ্যাক্ট-১৯৭৩ বা বাংলাদেশ কোলাবরেটরস (স্পেশাল ট্রাইব্যুনালস) অর্ডার-১৯৭২ এর অধীনে কোন অপরাধের জন্য দন্ডিত হলে; আইনের দ্বারা পদাধিকারীকে অযোগ্য ঘোষণা করছে না, এমন পদ ব্যতীত প্রজাতন্ত্রের কর্মে লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত থাকলে।

আইন অনুযায়ী এর আগে গঠিত অনুসন্ধান কমিটি, তাদের কাজ এবং তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে সিইসি ও কমিশনার নিয়োগ বৈধ ছিল বলে গণ্য হবে এবং এ বিষয়ে আদালতে কোন প্রশ্ন উত্থাপন করা যাবে না।

ফিরে দেখা

কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান ইসির মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি। এর আগেই রাষ্ট্রপতিকে নতুন কমিশন গঠন করতে হবে। আইনটি সংসদে পাস হওয়ায় এখন গেজেট প্রকাশ, সার্চ কমিটি গঠন, তাদের সুপারিশ জমাসহ বাকি সব কাজের জন্য হাতে ১৭ দিন সময় থাকছে।

এখন রাষ্ট্রপতি এই বিলে সই করলে তা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে। স্বাধীনতার পর এই প্রথম প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে আইন পাবে বাংলাদেশ। যে আইনের অধীনে গঠিত কমিশনের অধীনে অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সংবিধানে বলা হয়েছে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের এখতিয়ার রাষ্ট্রপতির হলেও তা হতে হবে আইনের বিধান অনুযায়ী। তবে স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে কোন সরকার এ সংক্রান্ত আইন করেনি। এই প্রেক্ষাপটে গত দুইবারের মতো এবারও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করে সার্চ কমিটির মাধ্যমে ইসি গঠনের উদ্যোগ নেন রাষ্ট্রপতি। শুরু হয় বির্তক। নিবন্ধিত ৩২ দলকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও বঙ্গভবনে সংলাপে অংশ নেয় ২৫টি দল। বিএনপি, সিপিবিসহ সাতটি দল সংলাপ বর্জন করে। সংলাপে অংশ নেয়া, অংশ না নেয়া অধিকাংশ দলই ইসি গঠনে আইন প্রণয়নের পক্ষে মত দেয়। তবে সার্চ কমিটির প্রয়োজন নেই বলেও মন্তব্য করে কয়েকটি দল।

গত ১৭ জানুয়ারি সংলাপের শেষ দিন বিকেলে বঙ্গভবনে যাওয়ার আগে আওয়ামী লীগ সরকার দুপুরে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ইসি গঠন সংক্রান্ত আইনের খসড়া অনুমোদন করে। আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে বৃহস্পতিবার সংসদে বিলটি পাস হলো।

ছবি

১৫ বছরে আমাদের চাল আমদানি করতে হয়নি: এলজিআরডি মন্ত্রী

ছবি

শপথ নিলেন আপিল বিভাগের ৩ বিচারপতি

ছবি

যুদ্ধ অবশ্যই বন্ধ হওয়া উচিত : প্রধানমন্ত্রী

ছবি

গ্যাস সংকটে আগামীর ‘ভরসা’ এলএনজি

ছবি

রানা প্লাজা ধসের ১১ বছর : ‘আমার স্বপ্নও ভেঙে গেছে’

ছবি

এভিয়েশন শিল্পের উন্নয়নে সহযোগিতা করতে চায় যুক্তরাজ্য

ছবি

থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা

ছবি

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে ৩ নতুন বিচারক

ছবি

কক্সবাজারে ভোটার হওয়া রোহিঙ্গাদের তালিকা চায় হাই কোর্ট

ছবি

ব্যাংকক পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী

ছবি

তাপপ্রবাহের এলাকা আরও বাড়বে

ছবি

ব্যাংককের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করলেন প্রধানমন্ত্রী

ছবি

বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে ৫টি চুক্তি ও ৫টি সমঝোতা স্মারক সই

ছবি

ঢাকা ছাড়লেন কাতারের আমির

ছবি

সোমালি জলদস্যুদের দ্বারা জব্দ করা জাহাজ সংযুক্ত আরব আমিরাতে পৌঁছেছে; ২৩ জন বাংলাদেশি নাবিকের সবাই নিরাপদ

ছবি

পদে থেকেই ইউপি চেয়ারম্যানরা উপজেলা নির্বাচন করতে পারবেন

ছবি

পদত্যাগ না করেই ইউপি চেয়ারম্যানরা উপজেলা নির্বাচন করতে পারবেন

ছবি

বান্দরবানের তিন উপজেলায় ভোট স্থগিত : ইসি সচিব

ছবি

তীব্র দাবদাহের মধ্যেও বিদ্যুৎ উৎপাদনে রেকর্ড , আছে লোড শেডিংও

ছবি

বাংলাদেশ-কাতার ১০ চুক্তি সই

ছবি

ঢাকা থেকে প্রধান ১৫টি রুটে ট্রেনের ভাড়া যত বাড়ল

ছবি

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে কাতারের আমির

ছবি

তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তা বাড়লো আরও ৩ দিন, দুর্ভোগে সাধারণ মানুষ

ছবি

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও যুক্তরাষ্ট্রের প্যাসিফিক আর্মি কমান্ড এর যৌথ অংশগ্রহণে টিএল-২০২৪ উদ্বোধন

ছবি

শিশু অধিকার বিষয়ক সচেতনতা সৃষ্টিতে মিডিয়ার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ--স্পীকার

ছবি

দু’দিনের সফরে কাতারের আমির ঢাকায়

ছবি

পাঁচ দিনের সফরে বুধবার থাইল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী

ছবি

৪ মে থেকে বাড়ছে ট্রেনের ভাড়া

ছবি

আনু মুহাম্মদের পায়ে ‌‘কম্বাইন্ড অপারেশন’ দরকার: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

ছবি

আমরা জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার হ্রাস করেছি : শেখ হাসিনা

ছবি

তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তা, বাড়লো আরও ৩ দিন

ছবি

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই কি এত তাপ?

ছবি

ভারতের উজানে পানি প্রত্যাহার করে নেয়ায় তিস্তা মরা খালে পরিনত হয়েছে

ছবি

তাপদাহ : হাসপাতাল প্রস্তুত রাখার নির্দেশ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর

ছবি

পিছিয়ে নেই নারীরাও তামিলনাড়ু থেকে ট্রাক নিয়ে বেনাপোল এলেন অন্নপূর্ণা

ছবি

দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ঢাকা আসছেন কাতারের আমির, ১১ টি চুক্তি-সমঝোতা

tab

জাতীয়

সার্চ কমিটিতে নারী সদস্যের বিধান রেখে ইসি গঠনের আইন পাস

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

বৃহস্পতিবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২২

সার্চ কমিটিতে রাষ্ট্রপতি মনোনীত দুইজন ‘বিশিষ্ট নাগরিকের’ মধ্যে একজন নারী থাকতে হবে, এমন বাধ্যবাধকতা রেখে আলোচিত নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন আইন জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। আইনে সার্চ কমিটির কার্যকাল বাড়িয়ে ১৫ দিন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী এ সংক্রান্ত ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল-২০২২’ পাসের প্রস্তাব করলে কণ্ঠভোটে তা পাস হয়। এর আগে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশন শুরু হয়। জাতীয় পার্টি (জাপা), বিএনপি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) ও ওয়ার্কার্স পার্টির সংসদ সদস্যরা বিলের ওপর জনমত যাচাই-বাছাই কমিটিতে পাঠানো এবং সংশোধনী প্রস্তাব দিলে সেগুলোর নিষ্পত্তি করেন স্পিকার। প্রথমে বিলের নাম ছিল ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল’। সংসদে সংশোধনী প্রস্তাব গ্রহণের মাধ্যমে এখন নাম হয়েছে ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল’।

ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন সার্চ কমিটিতে দুইজন বিশিষ্ট নাগরিকের মধ্যে একজন নারী রাখার প্রস্তাব করেন। আইনমন্ত্রী সেই প্রস্তাব গ্রহণে সম্মতি দিলে সংসদে কণ্ঠভোটে তা পাস হয়।

বিলে বলা ছিল, রাষ্ট্রপতি ছয় সদস্যের অনুসন্ধান (সার্চ) কমিটি গঠন করবেন, যার সভাপতি হবেন প্রধান বিচারপতি মনোনীত আপিল বিভাগের একজন বিচারক। সদস্য হিসেবে থাকবেন প্রধান বিচারপতির মনোনীত হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারক, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, সরকারি কর্মকমিশনের চেয়ারম্যান এবং রাষ্ট্রপতি মনোনীত দুইজন বিশিষ্ট নাগরিক। এখন রাষ্ট্রপতি মনোনীত ওই দুজন বিশিষ্ট নাগরিকের মধ্যে একজন নারী রাখার বিধান যুক্ত হলো।

জাপার সংসদ সদস্য ফখরুল ইমামের একটি সংশোধনী প্রস্তাবে সার্চ কমিটির কাজের মেয়াদ ১০ দিন থেকে বাড়িয়ে ১৫ দিন করার কথা বলেন। প্রস্তাবটি সংসদে গৃহীত হওয়ায় মধ্য দিয়ে সার্চ কমিটির কার্যকাল পাঁচ দিন বৃদ্ধি পায়।

বিলের ওপর বিভিন্ন শব্দ ও ছোটখাট কয়েকটি সংশোধনী প্রস্তাবও গ্রহণ করা হয়। সংসদ সদস্যদের ৬৪টি সংশোধনী প্রস্তাবের মধ্যে ২২টি আইনমন্ত্রী গ্রহণ করেন, যা ভোটে পাস হয়। একটি বিলে এতগুলো সংশোধনী আগে কখনও গ্রহণ করা হয়নি বলে জানান আইনমন্ত্রী।

বিলের ওপর জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাবগুলো পাসের সময় জাতীয় পার্টি ও বিএনপির সংসদ সদস্যরা সার্চ কমিটিতে সংসদের প্রতিনিধিত্ব দাবি করেন। বিলটির নানা দিকের সমালোচনা করেন তারা। বিলটি পাসের সময় তারা অভিযোগ করেন, খসড়া আইনটি ‘তড়িঘড়ি করে’ আনা হয়েছে।

জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘গত ১৭ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপ করে। যারা সংলাপে যায়নি এবং গিয়েছেন তারা সবাই আইনের কথা বলেছেন। মহামান্য রাষ্ট্রপতি আইনের বিষয়ে তার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন। আমরা তড়িঘড়ি করিনি। এ আইনের কথা অনেক আগে থেকেই শুরু হয়েছে। ২০১৭ সালেই এই আইনের কথা উঠেছিল।’

বিলটি নিয়ে সংসদের ভেতরে ও বাইরের সমালোচনার জবাব দেন আইনমন্ত্রী। সাবেক সিইসি এটিএম শামসুল হুদা এবং সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) তৈরি করা এ সংক্রান্ত আইনের খসড়া থেকে পড়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ওই দুটির সঙ্গে সরকারের আনা বিলের মৌলিক কোন পার্থক্য নেই।

অধিবেশনের ভেতরে-বাইরে রাজনীতিক এবং অংশীজনদের আপত্তির মুখে বহুল আলোচিত এই আইনের খসড়া রোববার (২৩ জানুয়ারি) বিল আকারে সংসদে উত্থাপন করেন আইনমন্ত্রী। পরে বিলটি পরীক্ষা করে সাত দিনের মধ্যে সংসদে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। বুধবার (২৬ জানুয়ারি) দুটি পরিবর্তনের সুপারিশসহ প্রতিবেদন সংসদে তোলেন সংসদীয় কমিটির সভাপতি মো. শহীদুজ্জামান সরকার।

সংসদীয় কমিটির দুই সুপারিশ গৃহীত

সংসদে উত্থাপিত বিলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও নির্বাচন কমিশনারদের যোগ্যতা সংক্রান্ত ৫(গ) ধারায় বলা ছিল, সিইসি ও কমিশনার হতে গেলে কোন গুরুত্বপূর্ণ সরকারি, বিচার বিভাগীয়, আধা সরকারি বা বেসরকারি পদে তার অন্যূন ২০ বছর কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এই ধারায় সরকারি, বিচার বিভাগীয়, আধা সরকারি বা বেসরকারি পদের পাশাপাশি ‘স্বায়ত্তশাসিত ও পেশায়’ যুক্ত করার সুপারিশ করেছিল সংসদীয় কমিটি। তা সংসদে গৃহীত হয়েছে। এর ফলে সিইসি ও নির্বাচন কমিশনার পদে এমন ব্যক্তিদের সার্চ কমিটি সুপারিশ করবে, যাদের কোন গুরুত্বপূর্ণ সরকারি, বিচার বিভাগীয়, আধা সরকারি বা বেসরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত পদে বা পেশায় অন্যূন ২০ বছর কাজের অভিজ্ঞতা আছে।

আর অযোগ্যতার ক্ষেত্রে ৬(ঘ) ধারায় বলা ছিল, নৈতিক স্খলনজনিত ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে অন্যূন দুই বছরের কারাদন্ডে দন্ডিত হলে সিইসি ও কমিশনার হওয়া যাবে না। এখানে দুই বছরের কারাদন্ড উঠিয়ে দিয়ে শুধু কারাদন্ডের সুপারিশ করেছিল সংসদীয় কমিটি। অর্থাৎ, নৈতিক স্খলন ফৌজদারি অপরাধে যেকোন মেয়াদের সাজা হলেই সিইসি বা কমিশনার হওয়ার ক্ষেত্রে অযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করা হবে। এ সংশোধনী প্রস্তাবও সংসদে গৃহীত হয়েছে।

সার্চ কমিটির কাজ

সার্চ কমিটির (অনুসন্ধান কমিটি) কাজ সম্পর্কে বলা হয়েছে, এ কমিটি স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার নীতি অনুসরণ করে দায়িত্ব পালন করবে। আইনে বেঁধে দেয়া যোগ্যতা, অযোগ্যতা অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও সুনাম বিবেচনা করে সিইসি ও নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করবে। এ কমিটি সিইসি ও কমিশনারদের প্রতি পদের জন্য দুইজন করে ব্যক্তির নাম সুপারিশ করবে। কমিটি গঠনের ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশ রাষ্ট্রপতির কাছে জাম দিতে হবে। সার্চ কমিটি সিইসি এবং নির্বাচন কমিশনার পদে যোগ্যদের অনুসন্ধানের জন্য রাজনৈতিক দল এবং পেশাজীবী সংগঠনের কাছ থেকে নাম আহ্বান করতে পারবে।

সিইসি ও কমিশনারদের যোগ্যতা

সিইসি ও নির্বাচন কমিশনার পদে কাউকে সুপারিশের ক্ষেত্রে তিনটি যোগ্যতা থাকতে হবে। তাকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে; ন্যূনতম ৫০ বছর বয়স হতে হবে; কোন গুরুত্বপূর্ণ সরকারি, বিচার বিভাগীয়, আধা সরকারি বা বেসরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত পদে বা পেশায় পদে তার অন্যূন ২০ বছর কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।

সিইসি ও কমিশনারদের অযোগ্যতা

সিইসি ও কমিশনার পদের জন্য ছয়টি অযোগ্যতার কথা বলা হয়েছে। আদালত অপ্রকৃতিস্থ ঘোষণা করলে; দেউলিয়া হওয়ার পর দায় থেকে অব্যাহতি না পেলে; কোন বিদেশি রাষ্ট্র্রের নাগরিকত্ব নিলে কিংবা বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা বা স্বীকার করলে; নৈতিক স্খলনজনিত ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে কারাদন্ডে দন্ডিত হলে; ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইব্যুনালস) অ্যাক্ট-১৯৭৩ বা বাংলাদেশ কোলাবরেটরস (স্পেশাল ট্রাইব্যুনালস) অর্ডার-১৯৭২ এর অধীনে কোন অপরাধের জন্য দন্ডিত হলে; আইনের দ্বারা পদাধিকারীকে অযোগ্য ঘোষণা করছে না, এমন পদ ব্যতীত প্রজাতন্ত্রের কর্মে লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত থাকলে।

আইন অনুযায়ী এর আগে গঠিত অনুসন্ধান কমিটি, তাদের কাজ এবং তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে সিইসি ও কমিশনার নিয়োগ বৈধ ছিল বলে গণ্য হবে এবং এ বিষয়ে আদালতে কোন প্রশ্ন উত্থাপন করা যাবে না।

ফিরে দেখা

কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান ইসির মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি। এর আগেই রাষ্ট্রপতিকে নতুন কমিশন গঠন করতে হবে। আইনটি সংসদে পাস হওয়ায় এখন গেজেট প্রকাশ, সার্চ কমিটি গঠন, তাদের সুপারিশ জমাসহ বাকি সব কাজের জন্য হাতে ১৭ দিন সময় থাকছে।

এখন রাষ্ট্রপতি এই বিলে সই করলে তা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে। স্বাধীনতার পর এই প্রথম প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে আইন পাবে বাংলাদেশ। যে আইনের অধীনে গঠিত কমিশনের অধীনে অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সংবিধানে বলা হয়েছে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের এখতিয়ার রাষ্ট্রপতির হলেও তা হতে হবে আইনের বিধান অনুযায়ী। তবে স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে কোন সরকার এ সংক্রান্ত আইন করেনি। এই প্রেক্ষাপটে গত দুইবারের মতো এবারও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করে সার্চ কমিটির মাধ্যমে ইসি গঠনের উদ্যোগ নেন রাষ্ট্রপতি। শুরু হয় বির্তক। নিবন্ধিত ৩২ দলকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও বঙ্গভবনে সংলাপে অংশ নেয় ২৫টি দল। বিএনপি, সিপিবিসহ সাতটি দল সংলাপ বর্জন করে। সংলাপে অংশ নেয়া, অংশ না নেয়া অধিকাংশ দলই ইসি গঠনে আইন প্রণয়নের পক্ষে মত দেয়। তবে সার্চ কমিটির প্রয়োজন নেই বলেও মন্তব্য করে কয়েকটি দল।

গত ১৭ জানুয়ারি সংলাপের শেষ দিন বিকেলে বঙ্গভবনে যাওয়ার আগে আওয়ামী লীগ সরকার দুপুরে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ইসি গঠন সংক্রান্ত আইনের খসড়া অনুমোদন করে। আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে বৃহস্পতিবার সংসদে বিলটি পাস হলো।

back to top