দেশের ৬৩ জেলায় জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) সিরিজ বোমা হামলার ১৭ বছর পরও দেশ থেকে জঙ্গি হামলার আতঙ্ক এখনও কাটেনি। মাঝে মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে এখনও ধরা পড়ছে জঙ্গি সদস্যরা।
২০০৫ সালে ১৭ আগস্ট দেশের ৬৩ জেলায় একযোগে বোমা হামলা চালানো হয়। ওই হামলার ১৭ বছর পার হলেও এখনও জঙ্গি তৎপরতা থেমে নেই। তবে কমেছে হামলা ও নাশকতা। প্রতিনিয়ত ধরা পড়ছে জঙ্গি সদস্যরা।
জঙ্গিরা এখনও বিচ্ছিন্নভাবে ছোট-ছোট গ্রুপে বিভক্ত হয়ে তৎপরতা চালাচ্ছে। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জঙ্গিরা তাদের প্রচারণা ও দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করছে। অনলাইনেই তারা জঙ্গি হামলার প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। এদিকে জঙ্গি দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যক্রম অব্যাহত আছে বলে পুলিশ কর্মকর্তারা জানান।
সর্বশেষ গত ১১ আগস্ট রাতে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবির গাইবান্ধা জেলা দাওয়াহ শাখার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করা রাজীব গান্ধীর ঘনিষ্ঠ সহযোগী মো. আফজাল হোসেন ওরফে লিমনকে (৩৮) গ্রেপ্তার করা হয়।
গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে নরসিংদীর মাধবদী থেকে তাকে গ্রেপ্তার করেছে এন্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ)। এটিইউ বলছে, আফজাল জেএমবির সক্রিয় সদস্য। জেএমবির রংপুর বিভাগের সামরিক শাখার প্রধান জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধীর ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিল। একটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নিয়ে সে ৭ বছর ধরে পালিয়ে ছিল।
২০০০ সালে দিনাজপুরের ফুলবাড়িতে বোমা হামলার মধ্যদিয়ে জেএমবি কার্যক্রম শুরু করে। এরপর ময়মনসিংহে সিনেমা হলে বোমা বিস্ফোরণ, রাজশাহীতে প্রকাশ্যে জঙ্গি কার্যক্রম, গাজীপুরে আদালত প্রাঙ্গণে বোমা হামলা, ঝালকাঠিতে বিচারকদের ওপর বোমা হামলা, নেত্রকোনায় উদীচীর অনুষ্ঠানে বোমা হামলাসহ ২০০৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে আলোচনা বিষয় স্থান করে নেয় জেএমবির জঙ্গি কার্যক্রম। জেএমবির কার্যক্রম যে একেবারে শেষ হয়ে গেছে তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা।
জেএমবি এখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাদের কার্যক্রম বিস্তার করার চেষ্টা করছে। ইতোমধ্যে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে এদের শক্তিশালী নেটওয়ার্কের তথ্য মিলেছে। ২০১৪ সালের ২ অক্টোবর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের খাগড়াগড়ে জেএমবির বোমা বিস্ফোরণের মধ্যদিয়ে তাদের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অবস্থান জানান দেয়। পরবর্তীতে ২০১৮ সালের ৭ আগস্ট ভারতের ব্যাঙ্গালুরু এলাকা থেকে জেএমবির দুর্ধর্ষ পলাতক জঙ্গি বোমারু মিজানকে গ্রেপ্তার করে ওই দেশের এনআইয়ে টিম। ২০১৯ সালের ২৯ এপ্রিল রাজধানীর গুলিস্তানে কর্তব্যরত পুলিশের ওপর বোমা হামলায় ৩ পুলিশ সদস্য আহত হয়। ওই বছরের ২৭ মে মালিবাগে পুলিশভ্যানে বোমা হামলায় একজন পথচারী আহত হয়। একই বছরের ২৩ জুলাই রাতে খামারবাড়ী ও পল্টন পুলিশ বক্সে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা দুটি শক্তিশালী আইইডি যুক্ত বোমা ফেলে রেখে যায়।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক কর্মকর্তা জানান, ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশের ৬৩ জেলার (মুন্সীগঞ্জ ব্যতীত) ৪৩৪ স্থানে একযোগে বোমা হামলা চালায় জেএমবি। মাত্র আধঘণ্টার ব্যবধানে চালানো পরিকল্পিত এ সিরিজ বোমা হামলায় দু’জন নিহত হন ও আহত হন দুই শতাধিক মানুষ। সেদিন আদালত চত্বর, বিমানবন্দর, দূতাবাস এলাকা, জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়, প্রেসক্লাব ও সরকারি-আধা সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা টার্গেট করে এ বোমা হামলা চালায় জঙ্গিরা।
সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় সারাদেশের বিভিন্ন থানায় ১৫৯টি মামলা দায়ের হয়। এসব মামলায় ৫৬০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। হামলার ১৮ বছরের মধ্যে ১১৮টি মামলার রায় ঘোষণা হয়েছে। ৪১টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। তদন্ত শেষে এসব মামলায় ৭৩৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়া হয়। ১৯৩ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয় আদালত। গ্রেপ্তারকৃত আসামির মধ্যে ২৮১ জনকে অভিযোগ থেকে খালাস দেয়া হয়। মৃত্যুদ- রায় দেয়া হয়েছে ১৫ জনকে।
ঢাকা মহানগর আদালত সূত্র জানায়, ঢাকা মহানগর এলাকায় বোমা হামলার ঘটনায় ওই সময় ১৮টি মামলা দায়ের হয়। এই ১৮টি মামলায় পুলিশ ও র্যাব ৯১ জনকে গ্রেপ্তার করে। ৫৬ জনের বিরুদ্ধে পুলিশ চার্জশিট দেয়। অনেক মামলায় আসামিদের নাম ও ঠিকানা কিছুই নেই বা ছিল না। সাক্ষীদেরও ঠিকমতো পাওয়া যায়নি। অনেক সাক্ষী সাক্ষ্য দিতেও আসেননি। বেশিরভাগ সাক্ষীর ঠিকানাও পরির্বতন হয়েছে। এ কারণে ১৪টি মামলায় মাত্র ৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয় আদালত। বাকি ৪টি মামলা বিচারাধীন পর্যায়ে আছে।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর আবদুল্লাহ আবু বলেন, ঢাকার আদালতে ১৮টি মামলা ছিল। বর্তমানে ৪টি মামলা বিচারাধীন আছে। সেগুলোও সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। মামলার বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বিত হওয়ার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, সাক্ষীদের অনুপস্থিতিই মূল কারণ। অনেক ক্ষেত্রে সাক্ষীদের পাওয়া যায়নি। সাক্ষীদের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে। পুলিশও চেষ্টা করছে সাক্ষীদের খুঁজে বের করতে। চাঞ্চল্যকর এসব মামলা চাইলেই তো শেষ করে দেয়া যায় না। তারপরও সাক্ষী যা হয়েছে, বা আরও কয়েকটা সাক্ষী নিয়ে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করে এ বছরের মধ্যে বিচার কাজ শেষ করার চিন্তাভাবনা আছে।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, র্যাবের অভিযানেই জেএমবির আমির শায়খ আবদুর রহমান, সেকেন্ড ইন কমান্ড সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাই, আতাউর রহমান সানি, খালেদ সাইফুল্লাহ, আবদুল আউয়াল, আসাদুল ইসলাম আরিফসহ শীর্ষ জঙ্গি নেতারা গ্রেপ্তার হয়। তাদের বিচারের মুখোমুখিও করা হয়েছে। তাদের ফাঁসির রায়ও সরকার কার্যকর করেছে। জঙ্গিরা এখন সাইবার মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম চালানোর চেষ্টা করছে। জাতিগতভাবে বাংলাদেশ জঙ্গিবাদকে পছন্দ করে না। এ কারণে আমরা খুব অল্প সময়ে জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছি। জঙ্গি কার্যক্রম থেকে ফিরিয়ে এনে তাদের পুনর্বাসন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে কয়েকজনকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। তাই বলে এটা নিয়ে আত্মতুষ্টিতে ভুগছি না। তবে অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে জঙ্গিদের ওপর নজরদারি করা হচ্ছে। আমরা সাইবার ওয়ার্ল্ডে খোঁজ-খবর ও নজরদারি করছি। এটা নিয়ে আমরা সতর্ক অবস্থায় রয়েছি।
গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক সূত্রে জানা গেছে, পুলিশের মারমুখী অভিযানের কারণে জঙ্গিরা এখন আর আগের মতো সংগঠিত হতে পারছে না। আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে পুলিশ আগেই জঙ্গি দমন ও গ্রেপ্তার অভিযান চালায়। এখন পলাতক জঙ্গিরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে অপপ্রচার করছে। আবার অনেক জঙ্গি জামিনে ছাড়া পেয়ে আগের মতো তৎপরতা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে পুলিশ, র্যাব, গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারি ও গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত আছে।
বুধবার, ১৭ আগস্ট ২০২২
দেশের ৬৩ জেলায় জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) সিরিজ বোমা হামলার ১৭ বছর পরও দেশ থেকে জঙ্গি হামলার আতঙ্ক এখনও কাটেনি। মাঝে মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে এখনও ধরা পড়ছে জঙ্গি সদস্যরা।
২০০৫ সালে ১৭ আগস্ট দেশের ৬৩ জেলায় একযোগে বোমা হামলা চালানো হয়। ওই হামলার ১৭ বছর পার হলেও এখনও জঙ্গি তৎপরতা থেমে নেই। তবে কমেছে হামলা ও নাশকতা। প্রতিনিয়ত ধরা পড়ছে জঙ্গি সদস্যরা।
জঙ্গিরা এখনও বিচ্ছিন্নভাবে ছোট-ছোট গ্রুপে বিভক্ত হয়ে তৎপরতা চালাচ্ছে। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জঙ্গিরা তাদের প্রচারণা ও দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করছে। অনলাইনেই তারা জঙ্গি হামলার প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। এদিকে জঙ্গি দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যক্রম অব্যাহত আছে বলে পুলিশ কর্মকর্তারা জানান।
সর্বশেষ গত ১১ আগস্ট রাতে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবির গাইবান্ধা জেলা দাওয়াহ শাখার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করা রাজীব গান্ধীর ঘনিষ্ঠ সহযোগী মো. আফজাল হোসেন ওরফে লিমনকে (৩৮) গ্রেপ্তার করা হয়।
গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে নরসিংদীর মাধবদী থেকে তাকে গ্রেপ্তার করেছে এন্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ)। এটিইউ বলছে, আফজাল জেএমবির সক্রিয় সদস্য। জেএমবির রংপুর বিভাগের সামরিক শাখার প্রধান জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধীর ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিল। একটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নিয়ে সে ৭ বছর ধরে পালিয়ে ছিল।
২০০০ সালে দিনাজপুরের ফুলবাড়িতে বোমা হামলার মধ্যদিয়ে জেএমবি কার্যক্রম শুরু করে। এরপর ময়মনসিংহে সিনেমা হলে বোমা বিস্ফোরণ, রাজশাহীতে প্রকাশ্যে জঙ্গি কার্যক্রম, গাজীপুরে আদালত প্রাঙ্গণে বোমা হামলা, ঝালকাঠিতে বিচারকদের ওপর বোমা হামলা, নেত্রকোনায় উদীচীর অনুষ্ঠানে বোমা হামলাসহ ২০০৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে আলোচনা বিষয় স্থান করে নেয় জেএমবির জঙ্গি কার্যক্রম। জেএমবির কার্যক্রম যে একেবারে শেষ হয়ে গেছে তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা।
জেএমবি এখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাদের কার্যক্রম বিস্তার করার চেষ্টা করছে। ইতোমধ্যে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে এদের শক্তিশালী নেটওয়ার্কের তথ্য মিলেছে। ২০১৪ সালের ২ অক্টোবর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের খাগড়াগড়ে জেএমবির বোমা বিস্ফোরণের মধ্যদিয়ে তাদের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অবস্থান জানান দেয়। পরবর্তীতে ২০১৮ সালের ৭ আগস্ট ভারতের ব্যাঙ্গালুরু এলাকা থেকে জেএমবির দুর্ধর্ষ পলাতক জঙ্গি বোমারু মিজানকে গ্রেপ্তার করে ওই দেশের এনআইয়ে টিম। ২০১৯ সালের ২৯ এপ্রিল রাজধানীর গুলিস্তানে কর্তব্যরত পুলিশের ওপর বোমা হামলায় ৩ পুলিশ সদস্য আহত হয়। ওই বছরের ২৭ মে মালিবাগে পুলিশভ্যানে বোমা হামলায় একজন পথচারী আহত হয়। একই বছরের ২৩ জুলাই রাতে খামারবাড়ী ও পল্টন পুলিশ বক্সে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা দুটি শক্তিশালী আইইডি যুক্ত বোমা ফেলে রেখে যায়।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক কর্মকর্তা জানান, ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশের ৬৩ জেলার (মুন্সীগঞ্জ ব্যতীত) ৪৩৪ স্থানে একযোগে বোমা হামলা চালায় জেএমবি। মাত্র আধঘণ্টার ব্যবধানে চালানো পরিকল্পিত এ সিরিজ বোমা হামলায় দু’জন নিহত হন ও আহত হন দুই শতাধিক মানুষ। সেদিন আদালত চত্বর, বিমানবন্দর, দূতাবাস এলাকা, জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়, প্রেসক্লাব ও সরকারি-আধা সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা টার্গেট করে এ বোমা হামলা চালায় জঙ্গিরা।
সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় সারাদেশের বিভিন্ন থানায় ১৫৯টি মামলা দায়ের হয়। এসব মামলায় ৫৬০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। হামলার ১৮ বছরের মধ্যে ১১৮টি মামলার রায় ঘোষণা হয়েছে। ৪১টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। তদন্ত শেষে এসব মামলায় ৭৩৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়া হয়। ১৯৩ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয় আদালত। গ্রেপ্তারকৃত আসামির মধ্যে ২৮১ জনকে অভিযোগ থেকে খালাস দেয়া হয়। মৃত্যুদ- রায় দেয়া হয়েছে ১৫ জনকে।
ঢাকা মহানগর আদালত সূত্র জানায়, ঢাকা মহানগর এলাকায় বোমা হামলার ঘটনায় ওই সময় ১৮টি মামলা দায়ের হয়। এই ১৮টি মামলায় পুলিশ ও র্যাব ৯১ জনকে গ্রেপ্তার করে। ৫৬ জনের বিরুদ্ধে পুলিশ চার্জশিট দেয়। অনেক মামলায় আসামিদের নাম ও ঠিকানা কিছুই নেই বা ছিল না। সাক্ষীদেরও ঠিকমতো পাওয়া যায়নি। অনেক সাক্ষী সাক্ষ্য দিতেও আসেননি। বেশিরভাগ সাক্ষীর ঠিকানাও পরির্বতন হয়েছে। এ কারণে ১৪টি মামলায় মাত্র ৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয় আদালত। বাকি ৪টি মামলা বিচারাধীন পর্যায়ে আছে।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর আবদুল্লাহ আবু বলেন, ঢাকার আদালতে ১৮টি মামলা ছিল। বর্তমানে ৪টি মামলা বিচারাধীন আছে। সেগুলোও সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। মামলার বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বিত হওয়ার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, সাক্ষীদের অনুপস্থিতিই মূল কারণ। অনেক ক্ষেত্রে সাক্ষীদের পাওয়া যায়নি। সাক্ষীদের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে। পুলিশও চেষ্টা করছে সাক্ষীদের খুঁজে বের করতে। চাঞ্চল্যকর এসব মামলা চাইলেই তো শেষ করে দেয়া যায় না। তারপরও সাক্ষী যা হয়েছে, বা আরও কয়েকটা সাক্ষী নিয়ে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করে এ বছরের মধ্যে বিচার কাজ শেষ করার চিন্তাভাবনা আছে।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, র্যাবের অভিযানেই জেএমবির আমির শায়খ আবদুর রহমান, সেকেন্ড ইন কমান্ড সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাই, আতাউর রহমান সানি, খালেদ সাইফুল্লাহ, আবদুল আউয়াল, আসাদুল ইসলাম আরিফসহ শীর্ষ জঙ্গি নেতারা গ্রেপ্তার হয়। তাদের বিচারের মুখোমুখিও করা হয়েছে। তাদের ফাঁসির রায়ও সরকার কার্যকর করেছে। জঙ্গিরা এখন সাইবার মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম চালানোর চেষ্টা করছে। জাতিগতভাবে বাংলাদেশ জঙ্গিবাদকে পছন্দ করে না। এ কারণে আমরা খুব অল্প সময়ে জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছি। জঙ্গি কার্যক্রম থেকে ফিরিয়ে এনে তাদের পুনর্বাসন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে কয়েকজনকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। তাই বলে এটা নিয়ে আত্মতুষ্টিতে ভুগছি না। তবে অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে জঙ্গিদের ওপর নজরদারি করা হচ্ছে। আমরা সাইবার ওয়ার্ল্ডে খোঁজ-খবর ও নজরদারি করছি। এটা নিয়ে আমরা সতর্ক অবস্থায় রয়েছি।
গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক সূত্রে জানা গেছে, পুলিশের মারমুখী অভিযানের কারণে জঙ্গিরা এখন আর আগের মতো সংগঠিত হতে পারছে না। আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে পুলিশ আগেই জঙ্গি দমন ও গ্রেপ্তার অভিযান চালায়। এখন পলাতক জঙ্গিরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে অপপ্রচার করছে। আবার অনেক জঙ্গি জামিনে ছাড়া পেয়ে আগের মতো তৎপরতা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে পুলিশ, র্যাব, গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারি ও গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত আছে।