alt

জাতীয়

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলবাসীর আরেকটি স্বপ্ন

উদ্বোধনের অপেক্ষায় ৬ লেনের কালনা সেতু

ফরহাদ খান, নড়াইল : শুক্রবার, ১৯ আগস্ট ২০২২

দেশের প্রথম ছয় লেনের কালনা সেতুর কাজ শেষ পর্যায়ে। এখন প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে তারিখ ঘোষণা হলেই চূড়ান্ত হবে উদ্বোধনের দিনক্ষণ -সংবাদ

দীর্ঘদিন পর আরেকটি অপেক্ষার অবসান হচ্ছে। স্বপ্নের ‘পদ্মা সেতু’র পর ‘কালনা সেতু’র দ্বারও উন্মোচন হতে যাচ্ছে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলবাসীর আরেকটি স্বপ্নপূরণ হচ্ছে। এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায় দেশের প্রথম ছয় লেনের কালনা সেতু। সেতুর মূল কাজ শেষ হওয়ার পর এখন ছোটখাটো কিছু কাজ চলছে। লাইটিংসহ চলছে দৃষ্টিনন্দন কাজ। আগামী ৩০ আগস্টের মধ্যে যানবাহন চলাচলের জন্য সেতু সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত করা হচ্ছে। তবে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে তারিখ ঘোষণা হলেই চূড়ান্ত হবে উদ্বোধনের দিনক্ষণ। সেই অপেক্ষায় আছেন সেতু কর্তৃপক্ষসহ গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, নড়াইল, যশোর, বেনাপোল, সাতক্ষীরাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বেশ কয়েকটি জেলার কোটি কোটি মানুষ। মুখিয়ে আছেন যাত্রীবাহী বাসসহ অন্যান্য যানবাহন সংশ্লিষ্টরা। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইম্প্রুভমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে কালনা সেতু নির্মিত হয়েছে।

এদিকে কালনা সেতু চালু না হওয়ায় নড়াইল, যশোর, বেনাপোল, নোয়াপাড়া শিল্পনগর, সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরসহ আশপাশের কয়েকটি জেলার লোকজন পদ্মা সেতুর সরাসরি সুফলও পাচ্ছেন না। কারণ কালনাঘাটে এসে ফেরি পারাপারের বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে সব ধরনের যানবাহনকে। তাই এ অঞ্চলের সবাই তাকিয়ে আছেন কালনা সেতু উদ্বোধনের অপেক্ষায়।

সেতু কর্তৃপক্ষসহ স্থানীয়রা জানান, এপারে নড়াইলের কালনাঘাট। ওপারে গোপালগঞ্জের শংকরপাশা। মাঝ দিয়ে প্রবাহিত মধুমতি নদী। এ নদীর ওপরই নির্মিত হয়েছে দেশের প্রথম ছয় লেনের কালনা সেতু। প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সম্মতি পেলে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে যানবাহন চালাচলের জন্য উন্মুক্ত হবে কালনা সেতু।

কালনা সেতুর প্রকল্প ব্যবস্থাপক এবং সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) নড়াইলের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুজ্জামান বলেন, কালনা দেশের প্রথম ছয় লেনের সেতু। নেলসন লোস আর্চ টাইপের (ধনুকের মতো বাঁকা) সেতু এটি। সেতুটির দৈর্ঘ্য ৬৯০ মিটার এবং প্রস্থ ২৭ দশমিক এক মিটার। উভয় পাশে ছয় লেনের সংযোগ সড়ক প্রায় সাড়ে ৪ কিলোমিটার। সেতু নির্মাণে মোট ব্যয় প্রায় ৯৬০ কোটি টাকা। এশিয়ান হাইওয়ের ওপর অবস্থিত এটি। সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে সিলেটের তামাবিল হয়ে ঢাকা, ভাঙ্গা, নড়াইল, যশোর, বেনাপোল, কলকাতা পর্যন্ত সরাসরি ভূমিকা রাখবে। তবে এতদিন কালনা পয়েন্টে মধুমতি নদী ধারা বিছিন্ন ছিল। সেতু নির্মাণের ফলে সেই বিছিন্নতা আর রইল না। কালনা সেতু চালু হলে শুধু জাতীয় ক্ষেত্রেই নয়, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে। ভারত, কলকাতা, আসামসহ দেশের মধ্যে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর, বেনাপোল ও নোয়াপাড়া নদীবন্দরের মধ্যে যোগাযোগের মাইলফলক রচিত হবে। নড়াইলের লোহাগড়ায় ইপিজেড (রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল) চালুসহ ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ও ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।

কালনাঘাটে স্থাপিত নামফলক থেকে জানা যায়, ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘কালনা সেতু’র ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। কালনাঘাট থেকে ঢাকার দূরত্ব মাত্র ১০৮ কিলোমিটার। ফলে ঢাকার সঙ্গে নড়াইল, বেনাপোল, যশোর, খুলনাসহ আশপাশের সড়ক যোগাযোগ কোথাও ১০০ কিলোমিটার, কোথাও আবার ২০০ কিলোমিটার কমে যাবে। তবে ঢাকা থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ‘এক্সপ্রেস ওয়ে’ নির্মাণ করা হলেও ভাঙ্গা থেকে বেনাপোল পর্যন্ত এ ধরনের সড়ক নির্মিত হয়নি। ফলে ‘এক্সপ্রেসওয়ে’র সুফল পাচ্ছে না দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বড় একটি অংশ। ভাঙ্গা থেকে নড়াইল-যশোর-বেনাপোল পর্যন্ত বর্তমানে দুই লেন সড়ক চালু আছে। এই অংশে ‘এক্সপ্রেস ওয়ে’ সড়ক নির্মাণের বিষয়টি প্রকল্পাধীন বলে জানিয়েছেন কালনা সেতুর প্রকল্প ব্যবস্থাপক আশরাফুজ্জামান। তিনি বলেন, কালনা সেতু চালু হলে যানবাহনের চাপ বেড়ে যাবে। তাই আপাতত যশোরের মনিহার সিনেমা হল চত্বর থেকে নড়াইলের কালনাঘাট পর্যন্ত ৫২ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্ত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বর্তমানে সড়কটি ১৮ ফুট প্রশস্ত থাকলেও তা বাড়িয়ে ২৪ ফুট করা হবে। দরপত্রের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। দরপত্র অনুমোদন হলে দুই সপ্তাহের মধ্যে ওয়ার্কঅডার দিব। নড়াইল অংশে প্রায় ৪৭ কোটি এবং যশোর অংশে ৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়ক প্রশস্তকরণ করা হবে। এক বছরের মধ্যে কাজ শেষ করা হবে। এ লক্ষ্যে সড়কের দুই পাশে গাছ কাটার কাজ শুরু হয়েছে।

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী লোহাগড়ার সন্তান অ্যাডভোকেট ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, পদ্মা সেতুর সঙ্গে কালনা সেতুর অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক রয়েছে। এ দুটি সেতু (পদ্মা ও কালনা) রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখবে। ফেরিঘাটের অপেক্ষা আর যন্ত্রণা সহ্য করতে হবে না। যাত্রীসাধারণের পাশাপাশি কৃষিপণ্য বেচাকেনার ক্ষেত্রেও সহজ হবে। পাশাপাশি পদ্মা ও কালনাঘাট এলাকায় শিল্প-কলকারখানা গড়ে উঠবে। ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। বাসসহ অন্যান্য যানবাহন চালকেরা জানান, ফেরিঘাট মানেই ভোগান্তি। তাদের আশা কালনা সেতু চালু হলে সেই কষ্ট আর থাকবে না।

‘নড়াইল জেলার অতীত ও বর্তমান’ গ্রন্থের লেখক সিনিয়র সাংবাদিক আকরামুজ্জামান মিলু বলেন, কালনা সেতুর জন্য নড়াইল, লোহাগড়া, গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী, যশোর ও বেনাপোলের সড়ক যোগাযোগ, কৃষিপণ্য, শিল্প-কলকারখানার ব্যাপক গুরুত্ব বেড়ে গেছে। অনেক উদ্যোক্তা এখনই কালনাঘাট এলাকায় শিল্প-প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার চিন্তা-ভাবনা শুরু করেছেন। এ লক্ষ্যে অনেকে জমিও কিনেছেন।

লোহাগড়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সিকদার আবদুল হান্নান রুনু বলেন, সরকারের উন্নয়ন ধারাবাহিকতার বড় সাফল্য পদ্মা সেতু। সেই সঙ্গে কালনা সেতুও। সড়কপথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে এ অঞ্চলের মানুষের নদ-নদীর আর কোন প্রতিবন্ধকতা রইল না। ফলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখবে কালনা সেতু। এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই। কালনা সেতু উদ্বোধনের ক্ষণগণনার অপেক্ষায় আছি আমরা।

ছবি

থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা

ছবি

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে ৩ নতুন বিচারক

ছবি

কক্সবাজারে ভোটার হওয়া রোহিঙ্গাদের তালিকা চায় হাই কোর্ট

ছবি

ব্যাংকক পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী

ছবি

তাপপ্রবাহের এলাকা আরও বাড়বে

ছবি

ব্যাংককের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করলেন প্রধানমন্ত্রী

ছবি

বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে ৫টি চুক্তি ও ৫টি সমঝোতা স্মারক সই

ছবি

ঢাকা ছাড়লেন কাতারের আমির

ছবি

সোমালি জলদস্যুদের দ্বারা জব্দ করা জাহাজ সংযুক্ত আরব আমিরাতে পৌঁছেছে; ২৩ জন বাংলাদেশি নাবিকের সবাই নিরাপদ

ছবি

পদে থেকেই ইউপি চেয়ারম্যানরা উপজেলা নির্বাচন করতে পারবেন

ছবি

পদত্যাগ না করেই ইউপি চেয়ারম্যানরা উপজেলা নির্বাচন করতে পারবেন

ছবি

বান্দরবানের তিন উপজেলায় ভোট স্থগিত : ইসি সচিব

ছবি

তীব্র দাবদাহের মধ্যেও বিদ্যুৎ উৎপাদনে রেকর্ড , আছে লোড শেডিংও

ছবি

বাংলাদেশ-কাতার ১০ চুক্তি সই

ছবি

ঢাকা থেকে প্রধান ১৫টি রুটে ট্রেনের ভাড়া যত বাড়ল

ছবি

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে কাতারের আমির

ছবি

তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তা বাড়লো আরও ৩ দিন, দুর্ভোগে সাধারণ মানুষ

ছবি

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও যুক্তরাষ্ট্রের প্যাসিফিক আর্মি কমান্ড এর যৌথ অংশগ্রহণে টিএল-২০২৪ উদ্বোধন

ছবি

শিশু অধিকার বিষয়ক সচেতনতা সৃষ্টিতে মিডিয়ার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ--স্পীকার

ছবি

দু’দিনের সফরে কাতারের আমির ঢাকায়

ছবি

পাঁচ দিনের সফরে বুধবার থাইল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী

ছবি

৪ মে থেকে বাড়ছে ট্রেনের ভাড়া

ছবি

আনু মুহাম্মদের পায়ে ‌‘কম্বাইন্ড অপারেশন’ দরকার: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

ছবি

আমরা জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার হ্রাস করেছি : শেখ হাসিনা

ছবি

তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তা, বাড়লো আরও ৩ দিন

ছবি

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই কি এত তাপ?

ছবি

ভারতের উজানে পানি প্রত্যাহার করে নেয়ায় তিস্তা মরা খালে পরিনত হয়েছে

ছবি

তাপদাহ : হাসপাতাল প্রস্তুত রাখার নির্দেশ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর

ছবি

পিছিয়ে নেই নারীরাও তামিলনাড়ু থেকে ট্রাক নিয়ে বেনাপোল এলেন অন্নপূর্ণা

ছবি

দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ঢাকা আসছেন কাতারের আমির, ১১ টি চুক্তি-সমঝোতা

ছবি

অন্যায় আবদারের কাছে মাথানত করবো না: ইসি আলমগীর

ছবি

তীব্র গরম : হাসপাতালগুলো প্রস্তুত রাখতে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নির্দেশ

ছবি

দাবদাহ : হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত রাখার নির্দেশ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর

ছবি

বোরো মৌসুমে ৩২ টাকা কেজি দরে ধান কিনবে সরকার

ছবি

ব্যারিস্টার খোকনকে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম থেকে অব্যাহতি

ছবি

‘মুজিব ব্যাটারি’ কমপ্লেক্স উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

tab

জাতীয়

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলবাসীর আরেকটি স্বপ্ন

উদ্বোধনের অপেক্ষায় ৬ লেনের কালনা সেতু

ফরহাদ খান, নড়াইল

দেশের প্রথম ছয় লেনের কালনা সেতুর কাজ শেষ পর্যায়ে। এখন প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে তারিখ ঘোষণা হলেই চূড়ান্ত হবে উদ্বোধনের দিনক্ষণ -সংবাদ

শুক্রবার, ১৯ আগস্ট ২০২২

দীর্ঘদিন পর আরেকটি অপেক্ষার অবসান হচ্ছে। স্বপ্নের ‘পদ্মা সেতু’র পর ‘কালনা সেতু’র দ্বারও উন্মোচন হতে যাচ্ছে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলবাসীর আরেকটি স্বপ্নপূরণ হচ্ছে। এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায় দেশের প্রথম ছয় লেনের কালনা সেতু। সেতুর মূল কাজ শেষ হওয়ার পর এখন ছোটখাটো কিছু কাজ চলছে। লাইটিংসহ চলছে দৃষ্টিনন্দন কাজ। আগামী ৩০ আগস্টের মধ্যে যানবাহন চলাচলের জন্য সেতু সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত করা হচ্ছে। তবে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে তারিখ ঘোষণা হলেই চূড়ান্ত হবে উদ্বোধনের দিনক্ষণ। সেই অপেক্ষায় আছেন সেতু কর্তৃপক্ষসহ গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, নড়াইল, যশোর, বেনাপোল, সাতক্ষীরাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বেশ কয়েকটি জেলার কোটি কোটি মানুষ। মুখিয়ে আছেন যাত্রীবাহী বাসসহ অন্যান্য যানবাহন সংশ্লিষ্টরা। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইম্প্রুভমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে কালনা সেতু নির্মিত হয়েছে।

এদিকে কালনা সেতু চালু না হওয়ায় নড়াইল, যশোর, বেনাপোল, নোয়াপাড়া শিল্পনগর, সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরসহ আশপাশের কয়েকটি জেলার লোকজন পদ্মা সেতুর সরাসরি সুফলও পাচ্ছেন না। কারণ কালনাঘাটে এসে ফেরি পারাপারের বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে সব ধরনের যানবাহনকে। তাই এ অঞ্চলের সবাই তাকিয়ে আছেন কালনা সেতু উদ্বোধনের অপেক্ষায়।

সেতু কর্তৃপক্ষসহ স্থানীয়রা জানান, এপারে নড়াইলের কালনাঘাট। ওপারে গোপালগঞ্জের শংকরপাশা। মাঝ দিয়ে প্রবাহিত মধুমতি নদী। এ নদীর ওপরই নির্মিত হয়েছে দেশের প্রথম ছয় লেনের কালনা সেতু। প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সম্মতি পেলে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে যানবাহন চালাচলের জন্য উন্মুক্ত হবে কালনা সেতু।

কালনা সেতুর প্রকল্প ব্যবস্থাপক এবং সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) নড়াইলের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুজ্জামান বলেন, কালনা দেশের প্রথম ছয় লেনের সেতু। নেলসন লোস আর্চ টাইপের (ধনুকের মতো বাঁকা) সেতু এটি। সেতুটির দৈর্ঘ্য ৬৯০ মিটার এবং প্রস্থ ২৭ দশমিক এক মিটার। উভয় পাশে ছয় লেনের সংযোগ সড়ক প্রায় সাড়ে ৪ কিলোমিটার। সেতু নির্মাণে মোট ব্যয় প্রায় ৯৬০ কোটি টাকা। এশিয়ান হাইওয়ের ওপর অবস্থিত এটি। সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে সিলেটের তামাবিল হয়ে ঢাকা, ভাঙ্গা, নড়াইল, যশোর, বেনাপোল, কলকাতা পর্যন্ত সরাসরি ভূমিকা রাখবে। তবে এতদিন কালনা পয়েন্টে মধুমতি নদী ধারা বিছিন্ন ছিল। সেতু নির্মাণের ফলে সেই বিছিন্নতা আর রইল না। কালনা সেতু চালু হলে শুধু জাতীয় ক্ষেত্রেই নয়, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে। ভারত, কলকাতা, আসামসহ দেশের মধ্যে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর, বেনাপোল ও নোয়াপাড়া নদীবন্দরের মধ্যে যোগাযোগের মাইলফলক রচিত হবে। নড়াইলের লোহাগড়ায় ইপিজেড (রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল) চালুসহ ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ও ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।

কালনাঘাটে স্থাপিত নামফলক থেকে জানা যায়, ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘কালনা সেতু’র ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। কালনাঘাট থেকে ঢাকার দূরত্ব মাত্র ১০৮ কিলোমিটার। ফলে ঢাকার সঙ্গে নড়াইল, বেনাপোল, যশোর, খুলনাসহ আশপাশের সড়ক যোগাযোগ কোথাও ১০০ কিলোমিটার, কোথাও আবার ২০০ কিলোমিটার কমে যাবে। তবে ঢাকা থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ‘এক্সপ্রেস ওয়ে’ নির্মাণ করা হলেও ভাঙ্গা থেকে বেনাপোল পর্যন্ত এ ধরনের সড়ক নির্মিত হয়নি। ফলে ‘এক্সপ্রেসওয়ে’র সুফল পাচ্ছে না দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বড় একটি অংশ। ভাঙ্গা থেকে নড়াইল-যশোর-বেনাপোল পর্যন্ত বর্তমানে দুই লেন সড়ক চালু আছে। এই অংশে ‘এক্সপ্রেস ওয়ে’ সড়ক নির্মাণের বিষয়টি প্রকল্পাধীন বলে জানিয়েছেন কালনা সেতুর প্রকল্প ব্যবস্থাপক আশরাফুজ্জামান। তিনি বলেন, কালনা সেতু চালু হলে যানবাহনের চাপ বেড়ে যাবে। তাই আপাতত যশোরের মনিহার সিনেমা হল চত্বর থেকে নড়াইলের কালনাঘাট পর্যন্ত ৫২ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্ত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বর্তমানে সড়কটি ১৮ ফুট প্রশস্ত থাকলেও তা বাড়িয়ে ২৪ ফুট করা হবে। দরপত্রের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। দরপত্র অনুমোদন হলে দুই সপ্তাহের মধ্যে ওয়ার্কঅডার দিব। নড়াইল অংশে প্রায় ৪৭ কোটি এবং যশোর অংশে ৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়ক প্রশস্তকরণ করা হবে। এক বছরের মধ্যে কাজ শেষ করা হবে। এ লক্ষ্যে সড়কের দুই পাশে গাছ কাটার কাজ শুরু হয়েছে।

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী লোহাগড়ার সন্তান অ্যাডভোকেট ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, পদ্মা সেতুর সঙ্গে কালনা সেতুর অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক রয়েছে। এ দুটি সেতু (পদ্মা ও কালনা) রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখবে। ফেরিঘাটের অপেক্ষা আর যন্ত্রণা সহ্য করতে হবে না। যাত্রীসাধারণের পাশাপাশি কৃষিপণ্য বেচাকেনার ক্ষেত্রেও সহজ হবে। পাশাপাশি পদ্মা ও কালনাঘাট এলাকায় শিল্প-কলকারখানা গড়ে উঠবে। ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। বাসসহ অন্যান্য যানবাহন চালকেরা জানান, ফেরিঘাট মানেই ভোগান্তি। তাদের আশা কালনা সেতু চালু হলে সেই কষ্ট আর থাকবে না।

‘নড়াইল জেলার অতীত ও বর্তমান’ গ্রন্থের লেখক সিনিয়র সাংবাদিক আকরামুজ্জামান মিলু বলেন, কালনা সেতুর জন্য নড়াইল, লোহাগড়া, গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী, যশোর ও বেনাপোলের সড়ক যোগাযোগ, কৃষিপণ্য, শিল্প-কলকারখানার ব্যাপক গুরুত্ব বেড়ে গেছে। অনেক উদ্যোক্তা এখনই কালনাঘাট এলাকায় শিল্প-প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার চিন্তা-ভাবনা শুরু করেছেন। এ লক্ষ্যে অনেকে জমিও কিনেছেন।

লোহাগড়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সিকদার আবদুল হান্নান রুনু বলেন, সরকারের উন্নয়ন ধারাবাহিকতার বড় সাফল্য পদ্মা সেতু। সেই সঙ্গে কালনা সেতুও। সড়কপথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে এ অঞ্চলের মানুষের নদ-নদীর আর কোন প্রতিবন্ধকতা রইল না। ফলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখবে কালনা সেতু। এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই। কালনা সেতু উদ্বোধনের ক্ষণগণনার অপেক্ষায় আছি আমরা।

back to top