এক যুগেও বাস্তবায়ন হয়নি ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের (ইআরএল) দ্বিতীয় তেল শোধনাগার প্রকল্প। রাষ্ট্রীয় এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে আমদানিকৃত ক্রুড অয়েল থেকে ডিজেল উৎপাদনের মাধ্যমে বছরে ৯২৭ কোটি টাকার বেশি সাশ্রয় হওয়ার কথা।
দেশে বছরে জ্বালানি চাহিদা ৬০ থেকে ৬৫ লাখ মেট্রিক টনের বেশি। এর মধ্যে সিংহভাগই ডিজেল। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) অধীনস্থ রাষ্ট্রীয় একমাত্র তেল পরিশোধনাগার ইআরএলের জ্বালানি (ক্রুড অয়েল) পরিশোধন ক্ষমতা বছরে ১৫ লাখ টন, যা থেকে বছরে ৮ লাখ মেট্রিক টনের মতো ডিজেল পাওয়া যায়। চাহিদা মেটাতে উচ্চমূল্যে অবশিষ্ট পরিমাণ ডিজেল আমদানি করে বিপিসি।
পরিশোধিত তেল আমদানির চেয়ে ক্রুড আমদানি করে পরিশোধনের মাধ্যমে জ্বালানি তেল উৎপাদন তুলনামূলক লাভজনক। এই কারণে প্রায় এক যুগ আগে (২০১০ সালে) বছরে ৩০ লাখ মেট্রিক টন ক্রুড অয়েল পরিশোধন ক্ষমতাসম্পন্ন আরেকটি নতুন প্রসেস প্লান্ট স্থাপনের উদ্যোগ নেয় বিপিসি। এরপর প্রকল্পের প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট কনসালটেন্সির (পিএমসি) জন্য ২০১৬ সালের ১৯ এপ্রিল ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ইঞ্জিনিয়ারস ইন্ডিয়া লিমিটেডের সঙ্গে এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে কারিগরি নকশা তৈরি করতে ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে ফ্রান্সের কোম্পানি টেকনিপের সঙ্গে চুক্তি করে বিপিসি। নকশা তৈরি করতে তিন বছর সময় নেয় টেকনিপ।
ইন্সটলেশন অব ইআরএল ইউনিট-২ নামের ওই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৩ হাজার কোটি টাকা। বার বার ডিপিপি সংশোধন এবং ব্যয় বাড়তে বাড়তে তা এখন দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ৮৬৯ কোটি টাকা। বিপিসির দাবি, বিশ্ববাজারে যন্ত্রপাতির দাম বৃদ্ধি, ডলারের মূল্যবৃদ্ধিসহ নানা কারণে প্রকল্প ব্যয় বেড়েছে।
প্রকল্পের সর্বশেষ অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে ইআরএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী মো. লোকমান সংবাদকে বলেন, ‘এটার আমরা ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) জমা দিয়েছি। ফাইনালি এটা প্ল্যানিং কমিশনে আছে। গত আগস্টের ২৪ তারিখ এটার পিইসি মেকিং হয়েছে। কিছু অবজারবেইশন আছে। এখন ডিপিপি আবার রিকাস্ট করতে হবে। করার পর হয়ত এটা একনেকে (জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি) উঠবে। এ পর্যায়ে আছে’।
প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘ সূত্রতার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রকৌশলী মো. লোকমান বলেন, ‘প্রকল্প ঝুলে গেছে ঠিক এমন না। মানে... এটা তো খুব কমপ্লেক্স প্রজেক্ট। আমাদের এগজিসটিং যে রিফাইনারি সেটা তৈরি করেছিল টেকনিপ (ফ্রান্সের প্রতিষ্ঠান)। নতুন ইউনিটেরও ফিড ডিজাইন করেছে টেকনিপ। ওরা ফিড ডিজাইন যেহেতু করেছে। আর যেহেতু তাদের প্রিভিয়াস এক্সপেরিয়েন্স আছে আমাদের রিফাইনারিতে।’
‘তখন তারা একটি টেকনিক্যাল এবং কমার্শিয়াল প্রপোজাল জমা দিয়েছিল। আমরা দীর্ঘ দুই বছর তাদের সঙ্গে নেগোশিয়েশন করেছি। বাট আফটার অল আমরা সফল হইনি। বিকজ আমাদের দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে বা স্বার্থের সঙ্গে কম্প্রোমাইজ করে তো করা যাবে না। তার অনেক টেকনিক্যাল প্যারামিটার মানতে চাইছিল না। আবার অনেক ফাংশনাল গ্যারান্টিস... আমরা যেখানে নাইনটি-এইট চাচ্ছি, তারা সেখানে নাইনটি বা নাইনটি-ফাইভ বলছে।’
‘ফাইনালি তারা রিগ্রেট করেছে.. তারা আর ইপিসি স্টেইজে আমাদের সঙ্গ কাজ করবে না। এখন টেন্ডারে সিদ্ধান্ত হবে। এজন্য ডিপিপি জমা হচ্ছে। যদি পাস হয় তাহলে সিদ্ধান্ত হবে।’
ইআরএল ইউনিট-২ চালু হলে এর সক্ষমতা অনুযায়ী বছরে ৩০ লাখ মেট্রিক টন ক্রুড থেকে প্রায় সাড়ে ১১ লাখ মেট্রিক টন ডিজেল পাওয়া যাবে বলে জানান ইআরএল এমডি প্রকৌ. লোকমান। তিনি বলেন, ‘বেসঅয়েল, সালফার, জেট-১ ফুয়েলসহ স্বল্প পরিমাণে আরও কিছু প্রোডাক্টও এখান থেকে পাওয়া যাবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, আমদানিকৃত ডিজেলের তুলনায় এখানে ক্রুড থেকে পরিশোধনের মাধ্যমে উৎপাদিত ডিজেল গড়ে প্রায় ৭ টাকা সাশ্রয়ী হবে।
ইআরএল এমডির তথ্য অনুযায়ী, নতুন প্রসেসিং প্লান্টটি চালুর পর পুরো সক্ষমতার ব্যবহার করা গেলে এখান থেকে বছরে প্রায় সাড়ে ১১ লাখ মেট্রিক টনডিজেল পাওয়া যাবে।
এক মেট্রিক টনে ৭ দশমিক ২৫ ব্যারেল; এক ব্যারেলে ১৫৯ লিটার হিসাবে সাড়ে ১১ লাখ মেট্রিক টনে ৮৩ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ ব্যারেল বা ১৩২ কোটি ৫৬ লাখ ৬২ হাজার ৫০০ লিটার।
উৎপাদিত প্রতি লিটার ডিজেলে গড়ে ৭ টাকা সাশ্রয় হলে সাড়ে ১১ লাখ মেট্রিক টনে মোট সাশ্রয় হবে ৯২৭ কোটি ৯৬ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ টাকা।
২০২০ সালের ৬ সেপ্টেম্বর অনলাইনে বিপিসির বাস্তবায়নাধীন উন্নয়ন প্রকল্পের পর্যালোচনা সভায় ইআরএলের ২য় প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। প্রকল্প পরিচালকদের ব্যর্থতা ও অযোগ্যতার জন্য প্রকল্প ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় মন্ত্রণালয় এর দায় নেবে না বলে ওই সভায় জানিয়ে দেন প্রতিমন্ত্রী। প্রকল্পের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে ওই সভায় মনিটরিং জোরদার করারও নির্দেশনা দেন।
এরপর ২০২১ সালের ৭ জানুয়ারি রাষ্ট্রীয় আরেক প্রতিষ্ঠান ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টস ব্লেন্ডার্স লিমিটেডের (ইএলবিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. লোকমানকে ইআরএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে নিয়োগ দেয়া হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিপিসির এক কর্মকর্তারা সংবাদকে বলেন, ‘সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আকতারুল হক প্রকল্পটির কাজের অগ্রগতি দেখাতে না পারায় তাকে সরিয়ে দেয় মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন নিয়ে দীর্ঘসূত্রতার অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে।’
ইআরএল বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করে ১৯৬৮ সালে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এটি জাতীয়করণ করা হয়। এক সময় পেট্রোবাংলার এই প্রতিষ্ঠান এখন বিপিসির অধীনে। দেশের জ্বালানি নিরাপত্তায় ইআরএলের একটা বড় ভূমিকা আছে। বিশ্ববাজার থেকে আমদানি করা ক্রুড অয়েল বা অপরিশোধিত তেল পরিশোধন করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে এক সময় রপ্তানি করত প্রতিষ্ঠানটি।
জ্বালানি ও খানিজ সম্পদ বিভাগ সূত্র জানায়, ৮০ শতাংশ বিপিসির ও ২০ শতাংশ সরকারি অর্থায়নে ইআরএল ইউনিট-২ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা হয়েছিল। শতভাগ বিপিসির অর্থায়নে করতে সরকারের পক্ষ থেকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
এই প্রকল্পে ১০টি প্রসেসিং ইউনিট রাখা হয়েছে। দ্বিতীয় ইউনিট সম্পন্ন হলে ইআরএল থেকে ফিনিশড প্রোডাক্ট হিসেবে পাওয়া যাবে এলপিজি, গ্যাসোলিন ইউরো-৫, ডিজেল ইউরো-৫, গ্রুপ-৩ বেসঅয়েল, জেট এ-১, ফুয়েল অয়েল, বিটুমিন ও সালফার। এর মধ্যে দেশে ডিজেলের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। সড়ক নির্মাণে বিটুমিনের চাহিদাও রয়েছে।
মঙ্গলবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২
এক যুগেও বাস্তবায়ন হয়নি ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের (ইআরএল) দ্বিতীয় তেল শোধনাগার প্রকল্প। রাষ্ট্রীয় এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে আমদানিকৃত ক্রুড অয়েল থেকে ডিজেল উৎপাদনের মাধ্যমে বছরে ৯২৭ কোটি টাকার বেশি সাশ্রয় হওয়ার কথা।
দেশে বছরে জ্বালানি চাহিদা ৬০ থেকে ৬৫ লাখ মেট্রিক টনের বেশি। এর মধ্যে সিংহভাগই ডিজেল। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) অধীনস্থ রাষ্ট্রীয় একমাত্র তেল পরিশোধনাগার ইআরএলের জ্বালানি (ক্রুড অয়েল) পরিশোধন ক্ষমতা বছরে ১৫ লাখ টন, যা থেকে বছরে ৮ লাখ মেট্রিক টনের মতো ডিজেল পাওয়া যায়। চাহিদা মেটাতে উচ্চমূল্যে অবশিষ্ট পরিমাণ ডিজেল আমদানি করে বিপিসি।
পরিশোধিত তেল আমদানির চেয়ে ক্রুড আমদানি করে পরিশোধনের মাধ্যমে জ্বালানি তেল উৎপাদন তুলনামূলক লাভজনক। এই কারণে প্রায় এক যুগ আগে (২০১০ সালে) বছরে ৩০ লাখ মেট্রিক টন ক্রুড অয়েল পরিশোধন ক্ষমতাসম্পন্ন আরেকটি নতুন প্রসেস প্লান্ট স্থাপনের উদ্যোগ নেয় বিপিসি। এরপর প্রকল্পের প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট কনসালটেন্সির (পিএমসি) জন্য ২০১৬ সালের ১৯ এপ্রিল ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ইঞ্জিনিয়ারস ইন্ডিয়া লিমিটেডের সঙ্গে এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে কারিগরি নকশা তৈরি করতে ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে ফ্রান্সের কোম্পানি টেকনিপের সঙ্গে চুক্তি করে বিপিসি। নকশা তৈরি করতে তিন বছর সময় নেয় টেকনিপ।
ইন্সটলেশন অব ইআরএল ইউনিট-২ নামের ওই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৩ হাজার কোটি টাকা। বার বার ডিপিপি সংশোধন এবং ব্যয় বাড়তে বাড়তে তা এখন দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ৮৬৯ কোটি টাকা। বিপিসির দাবি, বিশ্ববাজারে যন্ত্রপাতির দাম বৃদ্ধি, ডলারের মূল্যবৃদ্ধিসহ নানা কারণে প্রকল্প ব্যয় বেড়েছে।
প্রকল্পের সর্বশেষ অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে ইআরএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী মো. লোকমান সংবাদকে বলেন, ‘এটার আমরা ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) জমা দিয়েছি। ফাইনালি এটা প্ল্যানিং কমিশনে আছে। গত আগস্টের ২৪ তারিখ এটার পিইসি মেকিং হয়েছে। কিছু অবজারবেইশন আছে। এখন ডিপিপি আবার রিকাস্ট করতে হবে। করার পর হয়ত এটা একনেকে (জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি) উঠবে। এ পর্যায়ে আছে’।
প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘ সূত্রতার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রকৌশলী মো. লোকমান বলেন, ‘প্রকল্প ঝুলে গেছে ঠিক এমন না। মানে... এটা তো খুব কমপ্লেক্স প্রজেক্ট। আমাদের এগজিসটিং যে রিফাইনারি সেটা তৈরি করেছিল টেকনিপ (ফ্রান্সের প্রতিষ্ঠান)। নতুন ইউনিটেরও ফিড ডিজাইন করেছে টেকনিপ। ওরা ফিড ডিজাইন যেহেতু করেছে। আর যেহেতু তাদের প্রিভিয়াস এক্সপেরিয়েন্স আছে আমাদের রিফাইনারিতে।’
‘তখন তারা একটি টেকনিক্যাল এবং কমার্শিয়াল প্রপোজাল জমা দিয়েছিল। আমরা দীর্ঘ দুই বছর তাদের সঙ্গে নেগোশিয়েশন করেছি। বাট আফটার অল আমরা সফল হইনি। বিকজ আমাদের দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে বা স্বার্থের সঙ্গে কম্প্রোমাইজ করে তো করা যাবে না। তার অনেক টেকনিক্যাল প্যারামিটার মানতে চাইছিল না। আবার অনেক ফাংশনাল গ্যারান্টিস... আমরা যেখানে নাইনটি-এইট চাচ্ছি, তারা সেখানে নাইনটি বা নাইনটি-ফাইভ বলছে।’
‘ফাইনালি তারা রিগ্রেট করেছে.. তারা আর ইপিসি স্টেইজে আমাদের সঙ্গ কাজ করবে না। এখন টেন্ডারে সিদ্ধান্ত হবে। এজন্য ডিপিপি জমা হচ্ছে। যদি পাস হয় তাহলে সিদ্ধান্ত হবে।’
ইআরএল ইউনিট-২ চালু হলে এর সক্ষমতা অনুযায়ী বছরে ৩০ লাখ মেট্রিক টন ক্রুড থেকে প্রায় সাড়ে ১১ লাখ মেট্রিক টন ডিজেল পাওয়া যাবে বলে জানান ইআরএল এমডি প্রকৌ. লোকমান। তিনি বলেন, ‘বেসঅয়েল, সালফার, জেট-১ ফুয়েলসহ স্বল্প পরিমাণে আরও কিছু প্রোডাক্টও এখান থেকে পাওয়া যাবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, আমদানিকৃত ডিজেলের তুলনায় এখানে ক্রুড থেকে পরিশোধনের মাধ্যমে উৎপাদিত ডিজেল গড়ে প্রায় ৭ টাকা সাশ্রয়ী হবে।
ইআরএল এমডির তথ্য অনুযায়ী, নতুন প্রসেসিং প্লান্টটি চালুর পর পুরো সক্ষমতার ব্যবহার করা গেলে এখান থেকে বছরে প্রায় সাড়ে ১১ লাখ মেট্রিক টনডিজেল পাওয়া যাবে।
এক মেট্রিক টনে ৭ দশমিক ২৫ ব্যারেল; এক ব্যারেলে ১৫৯ লিটার হিসাবে সাড়ে ১১ লাখ মেট্রিক টনে ৮৩ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ ব্যারেল বা ১৩২ কোটি ৫৬ লাখ ৬২ হাজার ৫০০ লিটার।
উৎপাদিত প্রতি লিটার ডিজেলে গড়ে ৭ টাকা সাশ্রয় হলে সাড়ে ১১ লাখ মেট্রিক টনে মোট সাশ্রয় হবে ৯২৭ কোটি ৯৬ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ টাকা।
২০২০ সালের ৬ সেপ্টেম্বর অনলাইনে বিপিসির বাস্তবায়নাধীন উন্নয়ন প্রকল্পের পর্যালোচনা সভায় ইআরএলের ২য় প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। প্রকল্প পরিচালকদের ব্যর্থতা ও অযোগ্যতার জন্য প্রকল্প ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় মন্ত্রণালয় এর দায় নেবে না বলে ওই সভায় জানিয়ে দেন প্রতিমন্ত্রী। প্রকল্পের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে ওই সভায় মনিটরিং জোরদার করারও নির্দেশনা দেন।
এরপর ২০২১ সালের ৭ জানুয়ারি রাষ্ট্রীয় আরেক প্রতিষ্ঠান ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টস ব্লেন্ডার্স লিমিটেডের (ইএলবিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. লোকমানকে ইআরএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে নিয়োগ দেয়া হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিপিসির এক কর্মকর্তারা সংবাদকে বলেন, ‘সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আকতারুল হক প্রকল্পটির কাজের অগ্রগতি দেখাতে না পারায় তাকে সরিয়ে দেয় মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন নিয়ে দীর্ঘসূত্রতার অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে।’
ইআরএল বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করে ১৯৬৮ সালে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এটি জাতীয়করণ করা হয়। এক সময় পেট্রোবাংলার এই প্রতিষ্ঠান এখন বিপিসির অধীনে। দেশের জ্বালানি নিরাপত্তায় ইআরএলের একটা বড় ভূমিকা আছে। বিশ্ববাজার থেকে আমদানি করা ক্রুড অয়েল বা অপরিশোধিত তেল পরিশোধন করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে এক সময় রপ্তানি করত প্রতিষ্ঠানটি।
জ্বালানি ও খানিজ সম্পদ বিভাগ সূত্র জানায়, ৮০ শতাংশ বিপিসির ও ২০ শতাংশ সরকারি অর্থায়নে ইআরএল ইউনিট-২ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা হয়েছিল। শতভাগ বিপিসির অর্থায়নে করতে সরকারের পক্ষ থেকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
এই প্রকল্পে ১০টি প্রসেসিং ইউনিট রাখা হয়েছে। দ্বিতীয় ইউনিট সম্পন্ন হলে ইআরএল থেকে ফিনিশড প্রোডাক্ট হিসেবে পাওয়া যাবে এলপিজি, গ্যাসোলিন ইউরো-৫, ডিজেল ইউরো-৫, গ্রুপ-৩ বেসঅয়েল, জেট এ-১, ফুয়েল অয়েল, বিটুমিন ও সালফার। এর মধ্যে দেশে ডিজেলের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। সড়ক নির্মাণে বিটুমিনের চাহিদাও রয়েছে।