alt

জাতীয়

জেনোসাইডের স্বীকৃতির জন্য ‘এগ্রেসিভ ডিপ্লোমেসি’ প্রয়োজন

শাফিউল ইমরান : রোববার, ০২ অক্টোবর ২০২২

’৭১ সালে পাকিস্তান বাহিনী যে পরিকল্পিত ও বিস্তৃত গণহত্যা করেছে তার ৫১ বছরেও জেনোসাইড বা গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মেলেনি। স্বীকৃতি না থাকায় পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীদের আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের মুখোমুখি করা যায়নি। সরকারিভাবে বিভিন্ন সময়ে গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে উদ্যোগের কথা বলা হলেও তা থমকে আছে। বেসরকারি ব্যক্তি ও সংগঠনের উদ্যোগে গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে গ্রহণ করা হয়েছে সমন্বিত কর্মসূচি। এ নিয়ে আজ জেনেভায় যে আলোচনা হবে তা খুব বেশি কাজে আসবে না বলে মত দেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির।

তিনি রোববার (২ অক্টোবর) সংবাদকে বলেন, ‘কালকে (আজ) উঠবে, সেটা হিতে বিপরীত হয় কিনা সেটা নিয়েও আমার শঙ্কা আছে। কারণ আমাদের প্রস্তাব ছিল প্রথমে জাতিসংঘের সদস্যদেশগুলোর সম্মতি নেয়া। তারপর জাতিসংঘে যাওয়া। এখানে পাকিস্তান শুধু একটা পার্টনার। তাদের সঙ্গে আমেরিকা ও চীনও আছে। সেই সঙ্গে মুসলিম উম্মাহ যেটা সেটাও পাকিস্তানের পক্ষে ছিল। কোন ধরনের প্রস্তুতি ছাড়া এমন একটা বড় ফোরামে কেন যাচ্ছে সেটা আমি বুঝতে পারছি না।’

বাংলাদেশের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি না থাকলেও জাতীয়ভাবে ২০১৭ সালের ১১ মার্চ সংসদে ২৫ মার্চকে ‘গণহত্যা দিবস’ ঘোষণার বিষয়টি সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়। সংসদে উত্থাপিত প্রস্তাবে বলা হয়, ‘সংসদের অভিমত এই যে, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে বর্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনী কর্তৃক সংঘটিত গণহত্যাকে স্মরণ করে ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস ঘোষণা করা হোক এবং আন্তর্জাতিকভাবে এ দিবসের স্বীকৃতি আদায়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা হোক।’ এরপর থেকে জাতীয়ভাবে গণহত্যা দিবস পালন করা হচ্ছে।

“এই দিবসের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। ফলে মন্ত্রীরা পর্যন্ত বিভ্রান্ত হচ্ছেন, তারা অনেকেই জাতিসংঘে গিয়ে বলেছেন, ২৫ মার্চের আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস ঘোষণা করতে হবে।” ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে যখন প্রস্তাবটি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে উঠল তখন ‘৯ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস’ প্রস্তাবে তো বাংলাদেশ স্বাক্ষর করেছে’ বলেন শাহরিয়ার কবির।

ওই সময়ের ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, ‘এই প্রস্তাব নেয়ার দু’দিন পরে আমরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে বসেছি। ওই প্রস্তাবে বলা ছিল ২৫ মার্চকে জাতীয় গণহত্যা দিবস ঘোষণা করতে হবে এবং দিবসের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির উদ্যোগ নিতে হবে। আমরা বলেছিলাম ২৫ তারিখের দিবস কেটে দিয়ে ৯ মাসের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির উদ্যোগ নিতে হবে। সেই সংশোধনীটি করা হয়নি।’

ব্যক্তি বা প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগের পাশাপাশি এখানে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ অনেক বেশি জরুরি। রাষ্ট্রের পক্ষে আন্তর্জাতিক ফোরামে যেভাবে বিষয়টি তুলে ধরা সম্ভব, ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে তা নয়। একাত্তরে যেসব দেশ আমাদের সহায়তা করেছিল, যেমন ভারত, তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন, পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলোর লেখক-বুদ্ধিজীবীদের কাছেও বিষয়টি তুলে ধরা প্রয়োজন। একই সঙ্গে তাদের মহাফেজখানায় যেসব তথ্য-প্রমাণ আছে, সেগুলোও সংগ্রহ করা প্রয়োজন।

আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়ার উপায় কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের যত বন্ধুরাষ্ট্র আছে তাদেরকে আমাদের স্বীকৃতির বিষয়ে বলতে হবে। তারপর সেই দেশের পার্লামেন্টগুলোতে লবিং করতে হবে। ধরেন, কানাডার পার্লামেন্টে ২৬ জন এমপি আছেন ভারতীয় বংশউদ্ভুত। তারা যদি আমাদের বিষয়টা যাতে ওই দেশের পার্লামেন্টে উঠায় সেজন্য তো ভারতের সঙ্গে তো লবিং করতে হবে। এখন প্রবাসী ভারতীয় যদি আমাদের সহায়তা করে তবে প্রাচ্যসহ অনেক দেশের সমর্থন পাওয়া সহজ হবে।’

‘২০১৮ সালে আমরা সুইডিশ পার্লামেন্টের এমপিদের সঙ্গে বসেছিলাম তারা আমাদের বলেছেন, তোমাদের সরকার যদি আমাদের ফরমাললি বলে তবে আমরা এটা পার্লামেন্টে আলোচনা করব। কিন্তু সরকার তো সবচেয়ে বড় যে মিত্র (ভারত) তাকেই জানায়নি। অন্যদেশ তো অনেক পরের কথা’ বলেন নির্মূল কমিটির সভাপতি।

“সে সময়ে বঙ্গভবনে এক অনুষ্ঠানে তৎকালীন ভারতীয় হাইকমিশনার (যিনি এখন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব) বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশ যখনই স্বীকৃতি চাইবে, ভারত তখনই স্বীকৃতি দেবে।’ কিন্তু বাংলাদেশ কেন স্বীকৃতি চাইছে না সেটা তো পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলবে?” প্রশ্ন শাহরিয়ার কবিরের।

জেনোসাইডের স্বীকৃতির জন্য ‘এগ্রেসিভ ডিম্লোমেসি’ প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘এজন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বলেছিলাম একটা পৃথক সেল খুলতে বলেছিলাম যেখানে সচিব পর্যায়ের একজন প্রধান হয়ে দায়িত্ব পালন করবেন। সে সঙ্গে, তথ্য প্রমাণ যা ছড়িয়ে আছে সেটা এক জায়গায় করতে হবে। সেই বিষয়গুলো নিয়ে কোন দেশকে কীভাবে লবিং করতে হবে সেটার জন্য প্রবাসী বাংলাদেশিরা আছেন, সরকারের মন্ত্রীরা আছেন আর যেসব দেশ আমাদের বন্ধু প্রতীম সেসব দেশের সঙ্গে ধাপে ধাপে লবিং করতে হবে।’

‘কোন রকম লবিং করলাম না, সদস্যদেশগুলোর সঙ্গে আলোচনাও করলাম না সরাসরি জাতিসংঘে চলে গেলাম স্বীকৃতি দেন আমাদের গণহত্যার! বিষয়টা তো ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস করার মতো সহজ বিষয় না’ আক্ষেপ শাহরিয়ার কবিরের।

কবে থেকে গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির বিষয়ে দাবি তুলছেন জানতে চাইলে বলেন, ‘২০০৪ কি ২০০৫ সালে আমি শহীদ মিনার থেকে ঘোষণা করেছিলাম। তখন থেকে আমরা ধারাবাহিকভাবে বলে যাচ্ছি।’

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের চিহ্নিত এবং আন্তর্জাতিক সংস্থায় এর স্বীকৃতির প্রশ্নে প্রবাসীরা আগে থেকেই সোচ্চার থাকলেও তা এখন প্রবল হয়ে উঠেছে। তা জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের এজেন্ডায় পরিণত হওয়ায় সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের সদরদপ্তরে ৫১তম অধিবেশনে আলোচনা সভা, যার নেতৃত্বে রয়েছে সুইজারল্যান্ডের প্রবাসী সংগঠন বাংলাদেশ সাপোর্ট গ্রুপ (বাসুগ) এবং বাংলাদেশি সংগঠন আমরা একাত্তর ও প্রজন্ম ’৭১। কয়েকদিন আগে পাকিস্তান বাহিনীর গণহত্যা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের টাইমস স্কোয়ারে র‌্যালি করেছে প্রবাসী বাংলাদেশিরা।

ছবি

একদিনে করোনায় আক্রান্ত ১৬ জন

ছবি

তাপপ্রবাহ নিয়ে ৭২ ঘণ্টার সতর্ক বার্তা আবহাওয়া অধিদপ্তরের

ছবি

বঙ্গবন্ধু টানেলে টোল ফ্রি সুবিধা পেল যেসব গাড়ি

ছবি

সারাদেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি

ছবি

জাতীয় পতাকার নকশাকার শিবনারায়ণ দাস আর নেই

ছবি

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা ও অভিজ্ঞতা বিনিময় করা হবে : আরাফাত

স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র এবং মুজিবনগর দিবস সম্পর্কে নতুন প্রজন্মেকে জানাতে হবে

ছবি

স্থানীয় সরকার নির্বাচ‌নে ভোটার উপ‌স্থি‌তি সংসদ নির্বাচ‌নের ‌চে‌য়ে বে‌শি থাকবে

ছবি

প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

ছবি

থাইল্যান্ড সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী

জুন-জুলাইয়ে দেশে ইনফ্লুয়েঞ্জার হার বেশি

মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতির ওপর নজর রাখতে বললেন প্রধানমন্ত্রী

এথেন্স সম্মেলনে দায়িত্বশীল ও টেকসই সমুদ্র ব্যবস্থাপনায় সম্মিলিত প্রয়াসের আহ্বান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর

ছবি

কৃষকরাই অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি: স্পিকার

ছবি

মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতির ওপর নজর রাখার তাগিদ প্রধানমন্ত্রীর

ছবি

লালমনিরহাট সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে সাবেক ইউপি সদস্য গুলিবিদ্ধ

ছবি

তৃতীয় ধাপে ১১২ উপজেলায় ভোট ২৯ মে

ছবি

এমভি আবদুল্লাহ : ২১ নাবিক দেশে ফিরবেন জাহাজে, বাকি দুজন বিমানে

ছবি

৯৬ হাজার ৭৩৬ শিক্ষক নিয়োগে প্রক্রিয়া শুরু, আবেদনের নিয়ম

ছবি

ঢাকায় গ্রিসের দূতাবাস স্থাপন ও জনশক্তি রপ্তানি বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা

ছবি

টিসিবির তালিকা হালনাগাদ করতে চাই:বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী

ছবি

লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে গমের আবাদ কম

ছবি

ভোজ্য তেলের দাম বাড়াতে চায় ব্যবসায়ীরা আপত্তি বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীর

ছবি

অনিবন্ধিত অনলাইনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেবো : তথ্য প্রতিমন্ত্রী

ছবি

জলবায়ু পরিবর্তনে দেশে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষিখাত : মন্ত্রী

ছবি

দেশে ফিরতে আরও ১০ দিন সময় লাগবে নাবিকদের

ছবি

মুক্ত এমভি আবদুল্লাহর ৩ ছবি প্রকাশ

ছবি

২ মে বসছে সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশন

ছবি

কারো যাতে ডেঙ্গু না হয় সেজন্য সবাইকে কাজ করতে হবে : স্বাস্থ্যমন্ত্রী

ছবি

মুক্তিপণ দেওয়ার ছবি নিয়ে যা বললেন নৌ প্রতিমন্ত্রী

ছবি

লঞ্চে বেড়েছে ঢাকায় ফেরা যাত্রীর চাপ

ছবি

নববর্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সমৃদ্ধ ও স্মার্ট ভবিষ্যৎ নির্মাণে একযোগে কাজ করার আহ্বান অর্থ প্রতিমন্ত্রীর

ছবি

জিম্মি জাহাজটি কীভাবে মুক্ত হলো, জানাল মালিকপক্ষ

ছবি

সোমানিয়ান জলদস্যুদের কবল থেকে এমভি আব্দুল্লাহ মুক্ত ২৩ নাবিক অক্ষত

ছবি

মুক্তিপণ নিয়ে তীরে উঠেই ৮ জলদস্যু গ্রেপ্তার

ছবি

দেশের প্রতি ভালোবাসার বার্তা এমভি আব্দুল্লাহর নাবিকদের

tab

জাতীয়

জেনোসাইডের স্বীকৃতির জন্য ‘এগ্রেসিভ ডিপ্লোমেসি’ প্রয়োজন

শাফিউল ইমরান

রোববার, ০২ অক্টোবর ২০২২

’৭১ সালে পাকিস্তান বাহিনী যে পরিকল্পিত ও বিস্তৃত গণহত্যা করেছে তার ৫১ বছরেও জেনোসাইড বা গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মেলেনি। স্বীকৃতি না থাকায় পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীদের আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের মুখোমুখি করা যায়নি। সরকারিভাবে বিভিন্ন সময়ে গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে উদ্যোগের কথা বলা হলেও তা থমকে আছে। বেসরকারি ব্যক্তি ও সংগঠনের উদ্যোগে গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে গ্রহণ করা হয়েছে সমন্বিত কর্মসূচি। এ নিয়ে আজ জেনেভায় যে আলোচনা হবে তা খুব বেশি কাজে আসবে না বলে মত দেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির।

তিনি রোববার (২ অক্টোবর) সংবাদকে বলেন, ‘কালকে (আজ) উঠবে, সেটা হিতে বিপরীত হয় কিনা সেটা নিয়েও আমার শঙ্কা আছে। কারণ আমাদের প্রস্তাব ছিল প্রথমে জাতিসংঘের সদস্যদেশগুলোর সম্মতি নেয়া। তারপর জাতিসংঘে যাওয়া। এখানে পাকিস্তান শুধু একটা পার্টনার। তাদের সঙ্গে আমেরিকা ও চীনও আছে। সেই সঙ্গে মুসলিম উম্মাহ যেটা সেটাও পাকিস্তানের পক্ষে ছিল। কোন ধরনের প্রস্তুতি ছাড়া এমন একটা বড় ফোরামে কেন যাচ্ছে সেটা আমি বুঝতে পারছি না।’

বাংলাদেশের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি না থাকলেও জাতীয়ভাবে ২০১৭ সালের ১১ মার্চ সংসদে ২৫ মার্চকে ‘গণহত্যা দিবস’ ঘোষণার বিষয়টি সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়। সংসদে উত্থাপিত প্রস্তাবে বলা হয়, ‘সংসদের অভিমত এই যে, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে বর্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনী কর্তৃক সংঘটিত গণহত্যাকে স্মরণ করে ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস ঘোষণা করা হোক এবং আন্তর্জাতিকভাবে এ দিবসের স্বীকৃতি আদায়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা হোক।’ এরপর থেকে জাতীয়ভাবে গণহত্যা দিবস পালন করা হচ্ছে।

“এই দিবসের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। ফলে মন্ত্রীরা পর্যন্ত বিভ্রান্ত হচ্ছেন, তারা অনেকেই জাতিসংঘে গিয়ে বলেছেন, ২৫ মার্চের আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস ঘোষণা করতে হবে।” ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে যখন প্রস্তাবটি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে উঠল তখন ‘৯ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস’ প্রস্তাবে তো বাংলাদেশ স্বাক্ষর করেছে’ বলেন শাহরিয়ার কবির।

ওই সময়ের ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, ‘এই প্রস্তাব নেয়ার দু’দিন পরে আমরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে বসেছি। ওই প্রস্তাবে বলা ছিল ২৫ মার্চকে জাতীয় গণহত্যা দিবস ঘোষণা করতে হবে এবং দিবসের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির উদ্যোগ নিতে হবে। আমরা বলেছিলাম ২৫ তারিখের দিবস কেটে দিয়ে ৯ মাসের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির উদ্যোগ নিতে হবে। সেই সংশোধনীটি করা হয়নি।’

ব্যক্তি বা প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগের পাশাপাশি এখানে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ অনেক বেশি জরুরি। রাষ্ট্রের পক্ষে আন্তর্জাতিক ফোরামে যেভাবে বিষয়টি তুলে ধরা সম্ভব, ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে তা নয়। একাত্তরে যেসব দেশ আমাদের সহায়তা করেছিল, যেমন ভারত, তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন, পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলোর লেখক-বুদ্ধিজীবীদের কাছেও বিষয়টি তুলে ধরা প্রয়োজন। একই সঙ্গে তাদের মহাফেজখানায় যেসব তথ্য-প্রমাণ আছে, সেগুলোও সংগ্রহ করা প্রয়োজন।

আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়ার উপায় কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের যত বন্ধুরাষ্ট্র আছে তাদেরকে আমাদের স্বীকৃতির বিষয়ে বলতে হবে। তারপর সেই দেশের পার্লামেন্টগুলোতে লবিং করতে হবে। ধরেন, কানাডার পার্লামেন্টে ২৬ জন এমপি আছেন ভারতীয় বংশউদ্ভুত। তারা যদি আমাদের বিষয়টা যাতে ওই দেশের পার্লামেন্টে উঠায় সেজন্য তো ভারতের সঙ্গে তো লবিং করতে হবে। এখন প্রবাসী ভারতীয় যদি আমাদের সহায়তা করে তবে প্রাচ্যসহ অনেক দেশের সমর্থন পাওয়া সহজ হবে।’

‘২০১৮ সালে আমরা সুইডিশ পার্লামেন্টের এমপিদের সঙ্গে বসেছিলাম তারা আমাদের বলেছেন, তোমাদের সরকার যদি আমাদের ফরমাললি বলে তবে আমরা এটা পার্লামেন্টে আলোচনা করব। কিন্তু সরকার তো সবচেয়ে বড় যে মিত্র (ভারত) তাকেই জানায়নি। অন্যদেশ তো অনেক পরের কথা’ বলেন নির্মূল কমিটির সভাপতি।

“সে সময়ে বঙ্গভবনে এক অনুষ্ঠানে তৎকালীন ভারতীয় হাইকমিশনার (যিনি এখন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব) বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশ যখনই স্বীকৃতি চাইবে, ভারত তখনই স্বীকৃতি দেবে।’ কিন্তু বাংলাদেশ কেন স্বীকৃতি চাইছে না সেটা তো পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলবে?” প্রশ্ন শাহরিয়ার কবিরের।

জেনোসাইডের স্বীকৃতির জন্য ‘এগ্রেসিভ ডিম্লোমেসি’ প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘এজন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বলেছিলাম একটা পৃথক সেল খুলতে বলেছিলাম যেখানে সচিব পর্যায়ের একজন প্রধান হয়ে দায়িত্ব পালন করবেন। সে সঙ্গে, তথ্য প্রমাণ যা ছড়িয়ে আছে সেটা এক জায়গায় করতে হবে। সেই বিষয়গুলো নিয়ে কোন দেশকে কীভাবে লবিং করতে হবে সেটার জন্য প্রবাসী বাংলাদেশিরা আছেন, সরকারের মন্ত্রীরা আছেন আর যেসব দেশ আমাদের বন্ধু প্রতীম সেসব দেশের সঙ্গে ধাপে ধাপে লবিং করতে হবে।’

‘কোন রকম লবিং করলাম না, সদস্যদেশগুলোর সঙ্গে আলোচনাও করলাম না সরাসরি জাতিসংঘে চলে গেলাম স্বীকৃতি দেন আমাদের গণহত্যার! বিষয়টা তো ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস করার মতো সহজ বিষয় না’ আক্ষেপ শাহরিয়ার কবিরের।

কবে থেকে গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির বিষয়ে দাবি তুলছেন জানতে চাইলে বলেন, ‘২০০৪ কি ২০০৫ সালে আমি শহীদ মিনার থেকে ঘোষণা করেছিলাম। তখন থেকে আমরা ধারাবাহিকভাবে বলে যাচ্ছি।’

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের চিহ্নিত এবং আন্তর্জাতিক সংস্থায় এর স্বীকৃতির প্রশ্নে প্রবাসীরা আগে থেকেই সোচ্চার থাকলেও তা এখন প্রবল হয়ে উঠেছে। তা জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের এজেন্ডায় পরিণত হওয়ায় সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের সদরদপ্তরে ৫১তম অধিবেশনে আলোচনা সভা, যার নেতৃত্বে রয়েছে সুইজারল্যান্ডের প্রবাসী সংগঠন বাংলাদেশ সাপোর্ট গ্রুপ (বাসুগ) এবং বাংলাদেশি সংগঠন আমরা একাত্তর ও প্রজন্ম ’৭১। কয়েকদিন আগে পাকিস্তান বাহিনীর গণহত্যা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের টাইমস স্কোয়ারে র‌্যালি করেছে প্রবাসী বাংলাদেশিরা।

back to top