আজ বিশ্ব ও জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস
আজ বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে প্রতিবন্ধী দিবস। এই দিবসটি পালন হঠাৎ করেই শুরু হয়নি। এই দিবসের পিছনে আছে এক ঘটনাবহুল দুঃখের স্মৃতি। ১৯৫৮ সালের মার্চ মাস। বেলজিয়ামে এক মর্মান্তিক খনি দুর্ঘটনায় মারা যান আনেক মানুষ। আহত পাঁচ হাজারেরও বেশি মানুষ চিরজীবনের মতো হয়ে পড়েন প্রতিবন্ধী। দুর্বিষহ হয়ে ওঠে তাদের জীবন। তাদের প্রতি সহমর্মিতা জানাতে বেশ কিছু সামাজিক সংস্থা চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের কাজে এগিয়ে আসে। এর ঠিক পরের বছর জুরিখে বিশ্বের বহু সংগঠন একত্রিত হয়ে এক সম্মেলনের ডাক দেয়। সেখান থেকেই প্রতিবন্ধিতার বিষয়টি জানতে পারে। হদিশ মেলে বিস্তারিত সব তথ্যের। সেই সম্মেলন থেকে সর্বসম্মতভাবে প্রতিবন্ধী কল্যাণে বেশকিছু প্রস্তাব ও কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়।
খনি দুর্ঘটনায় আহত বিপন্ন প্রতিবন্ধীদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস পালন করতে আহ্বান জানানো হয়। সেই থেকেই শুরু হলেও ১৯৯২ সাল থেকে জাতিসংঘ ঘোষিত এ দিবসটি বিশ্বজুড়ে পালন করা হচ্ছে। আর সারা পৃথিবীর প্রতিবন্ধী মানুষের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়ানোর দিন হয়ে উঠে ৩ ডিসেম্বর।
সমাজের সব স্তরের কর্মকা-ে প্রতিবন্ধীদের সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা ও উন্নয়নের সব ক্ষেত্রে তাদের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করাই এই দিবস পালনের লক্ষ্য বলে মনে করেন অধিকারকর্মীরা।
৩১তম আন্তর্জাতিক ও ২৪তম জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবসটিকে নিয়ে এবারের জাতীয় প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের জন্য পরিবর্তনমুখী পদক্ষেপ : প্রবেশগম্যতা ও সমতাভিত্তিক বিশ্ব বিনির্মানে উদ্ভাবনের ভূমিকা।’
দিবসটি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক বাণীতে সর্বস্তরের মানুষকে আহ্বান জানিয়ে বলেন, প্রতিবন্ধী মানুষের সার্বিক উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি সমাজের সর্বস্তরের জনগণ, সংশ্লিষ্ট সব স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও দেশি-বিদেশি সংস্থাগুলোকে সমন্বিতভাবে কাজ করার জন্য এগিয়ে আসতে হবে।
প্রতিবন্ধী দিবস নিয়ে সংবাদের সঙ্গে কথা বলেন একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রোগ্রামের ন্যাশনাল কনসালটেন্ট ভাস্কর ভট্টাচার্য। যিনি নিজে একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তি। বাংলাদেশ থেকে তিনিই প্রথম ‘ডি-৩০ ডিজঅ্যাবিলিটি লিস্ট-২০২১’ সম্মাননা পেয়েছেন। পেয়েছেন ইউনেসকো পুরস্কার। বিশ্বের ৩০ জন প্রভাবশালী নির্বাচিত প্রতিবন্ধী নেতাদের মধ্যে তিনি অন্যতম।
ভাস্কর ভট্টাচার্য সংবাদকে বলেন, ‘আজকের এই দিবসটি করা হয়েছে মূলত প্রতিবন্ধী নাগরিকদের ব্যাপারে সমাজে, রাষ্ট্রে তাদের দায়িত্বকে মনে করিয়ে দেয়ার জন্য। সচেতনতা বৃদ্ধি করবার জন্য। মূলত প্রতিবন্ধী মানুষদের ব্যাপারে যে নেতিবাচক ধারণা প্রচলিত, তার অবসান ঘটানো এই দিবসের মূল উপজীব্য।
‘তবে সবচেয়ে বেশি যেটা গুরুত্বপূর্ণ বলে আমি মনে করি তা হলো প্রতিবন্ধী মানুষদের নেতৃত্বে নিয়ে আসা। যা এটুআই করেছে। তাদের ফিজিবিলিটি প্রোগ্রামে নেতৃত্ব দিচ্ছে একজন প্রতিবন্ধী মানুষ যা আমি নিজে। এ ধরনের লিডারশিপ পজিশনে প্রতিবন্ধী মানুষদের দেখছি না। এটা থাকা দরকার বলে আমি মনে করি।’
ভাস্কর ভট্টাচার্য আরও বলেন, ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য রাষ্ট্রের যে কমিটমেন্ট যেমন আইনি কমিটমেন্ট, রাজনৈতিক কমটিমেন্ট কিংবা আন্তর্জাতিক যেসব কমিটমেন্ট আছে সেটা যাতে বাস্তবায়িত হয় যথাযথভাবে এ বিষয়টিকে মনে করিয়ে দেয়া। প্রতিবন্ধী নাগরিকদের সারা পৃথিবীতে কিন্তু সম্মানের দৃষ্টিতে দেখা হয়। বিভিন্ন দেশে প্রতিবন্ধী নাগরিকরা কিন্তু সম্পদ। এখন এ যুগে এসে যা হচ্ছে যথাযথ শিক্ষা, প্রশিক্ষণ এবং প্রযুক্তির ব্যবহার। এই তিনটাকে যদি সমন্বয় করা যায় তবে প্রতিবন্ধী মানুষরা কিন্তু প্রায় সবার মতো সব কাজ করতে পারে। যে ধরনের প্রতিবন্ধী মানুষই হোন না কেন।
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের দেশে যে মন্ত্রণালয় আছে সেটা হলো সমাজকল্যাণ মন্ত্রলালয়। এখন কিন্তু আমরা কল্যাণের কথা বলছি না আমরা অধিকারের কথা বলছি। যেহেতু আমরা অধিকারের কথা বলছি তাহলে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য মন্ত্রণালয়টা যদি এমন হতো ‘সোশ্যালজাস্টিস’ বা ‘মিনিস্ট্রি অব সোশ্যাল জাস্টিস’ তাহলে কিন্তু অনেক বেশি বেটার হতো। তবে একটা মন্ত্রণালয় তো হতেই পারে।
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে ডিজেবল রিহ্যাবিলিটেশন অ্যান্ড রিসার্চ অ্যাসোসিয়েশন (ডিআরআরএ)। প্রতিষ্ঠানটি আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবসকে সামনে রেখে প্রতিবন্ধী ও দরিদ্র নারীদের কর্মসংস্থান তৈরি ও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করতে দৃষ্টিনন্দন পোশাক তৈরি করে তা বিপননে যাত্রা শুরু করলো ‘মালঞ্চ ক্র্যাফট’ নামে। শুধু দেশেই নয় আন্তর্জাতিকভাবে এই পোশাক রপ্তানি করা হবে জানিয়ে ডিআরআরএ’র নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া পদকপ্রাপ্ত ফরিদা ইয়াসমিন সংবাদকে বলেন, ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়নের সঙ্গে জাতীয় উন্নয়নের যোগসূত্র আছে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন হলে তারা জাতীয় উন্নয়ন ও উৎপাদনশীলতায় প্রভূত অবদান রাখতে পারবে এতে কোন সন্দেহ নেই।
ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ‘আমাদের দেশে অনেকদিন ধরেই প্রতিবন্ধী দিবস পালন করা হলেও এর তাৎপর্য আমরা ঠিকভাবে উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয়েছি। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ভাগ্যের তেমন একটা পরিবর্তন হয়নি। বিশেষ করে যারা দারিদ্র্য সীমার নিচে বাস করছেন। প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা গ্রহণের হার আগের চেয়ে বাড়লেও চাকরির বাজারে দেখা যায়, অনেকেই যোগ্যতা অনুযায়ী টিকে থাকতে পারছে না। সরকার শিক্ষা ক্ষেত্রে উপবৃত্তি দিচ্ছে, ভাতার পরিমাণও বাড়ানো হয়েছে, কিন্তু সেবা গ্রহণের পথ এখনও সুগম হয়নি।
‘এছাড়া প্রতিবন্ধী ব্যক্তি শনাক্তকরণ প্রক্রিয়ায় রয়েছে অনেক হয়রানি ও দীর্ঘসূত্রতা। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা যদি প্রয়োজনীয় সমর্থন পায় তবে তারা তাদের সক্ষমতা প্রমাণ করতে পারে এবং জাতীয় উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে। তারা কিন্তু ভিষণ শার্প (ধারালো) হয়।’
ফরিদা বলেন, ‘প্রতিবন্ধীরা নানা ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে তাদের সম্পর্কে ভুল ধারণার কারণে। বিভিন্ন বিষয়ে প্রতিবন্ধীদের মতামত সাধারণত গ্রাহ্য করা হয় না এবং প্রায় ক্ষেত্রেই তাদের অধিকার লঙ্ঘন করা হয়, যেটা শেষ পর্যন্ত তাদের উন্নয়নের মূল স্রোতধারা থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। প্রতিবন্ধীদের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় গঠন করা হলে তাদের অধিকার আদায় ও স্বার্থ রক্ষায় সেটি সহায়ক হবে’।
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়ে কাজ করে অ্যাকসেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন। এই প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক আলবার্ট মোল্লা সংবাদকে বলেন, ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের দক্ষতা উন্নয়ন ও আত্ম-কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে কোন উদ্যোগ বাজেটে নেই। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বাজেট বরাদ্দ সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়কেন্দ্রিক, অথচ অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন ধারণায় মন্ত্রণালয়ভিত্তিক বাজেট বরাদ্দ প্রয়োজন ছিল। এছাড়া বাজেটে প্রতিবন্ধিতাবিষয়ক আন্তর্জাতিক সনদ, জাতীয় আইন, নীতিমালা, কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রতিফলন নেই।’
আলবার্ট আরও বলেন, ‘প্রতিবন্ধিতা খাতে মোট বরাদ্দ ২ হাজার ৮৬৪.৮৫ কোটি টাকা, যা সামাজিক নিরাপত্তা খাতের মাত্র ২.৫২ শতাংশ এবং মোট বাজেটের ০.৪২ শতাংশ। এ বরাদ্দ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চাহিদার তুলনায় খুবই অপ্রতুল।
আজ বিশ্ব ও জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস
শনিবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২২
আজ বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে প্রতিবন্ধী দিবস। এই দিবসটি পালন হঠাৎ করেই শুরু হয়নি। এই দিবসের পিছনে আছে এক ঘটনাবহুল দুঃখের স্মৃতি। ১৯৫৮ সালের মার্চ মাস। বেলজিয়ামে এক মর্মান্তিক খনি দুর্ঘটনায় মারা যান আনেক মানুষ। আহত পাঁচ হাজারেরও বেশি মানুষ চিরজীবনের মতো হয়ে পড়েন প্রতিবন্ধী। দুর্বিষহ হয়ে ওঠে তাদের জীবন। তাদের প্রতি সহমর্মিতা জানাতে বেশ কিছু সামাজিক সংস্থা চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের কাজে এগিয়ে আসে। এর ঠিক পরের বছর জুরিখে বিশ্বের বহু সংগঠন একত্রিত হয়ে এক সম্মেলনের ডাক দেয়। সেখান থেকেই প্রতিবন্ধিতার বিষয়টি জানতে পারে। হদিশ মেলে বিস্তারিত সব তথ্যের। সেই সম্মেলন থেকে সর্বসম্মতভাবে প্রতিবন্ধী কল্যাণে বেশকিছু প্রস্তাব ও কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়।
খনি দুর্ঘটনায় আহত বিপন্ন প্রতিবন্ধীদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস পালন করতে আহ্বান জানানো হয়। সেই থেকেই শুরু হলেও ১৯৯২ সাল থেকে জাতিসংঘ ঘোষিত এ দিবসটি বিশ্বজুড়ে পালন করা হচ্ছে। আর সারা পৃথিবীর প্রতিবন্ধী মানুষের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়ানোর দিন হয়ে উঠে ৩ ডিসেম্বর।
সমাজের সব স্তরের কর্মকা-ে প্রতিবন্ধীদের সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা ও উন্নয়নের সব ক্ষেত্রে তাদের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করাই এই দিবস পালনের লক্ষ্য বলে মনে করেন অধিকারকর্মীরা।
৩১তম আন্তর্জাতিক ও ২৪তম জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবসটিকে নিয়ে এবারের জাতীয় প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের জন্য পরিবর্তনমুখী পদক্ষেপ : প্রবেশগম্যতা ও সমতাভিত্তিক বিশ্ব বিনির্মানে উদ্ভাবনের ভূমিকা।’
দিবসটি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক বাণীতে সর্বস্তরের মানুষকে আহ্বান জানিয়ে বলেন, প্রতিবন্ধী মানুষের সার্বিক উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি সমাজের সর্বস্তরের জনগণ, সংশ্লিষ্ট সব স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও দেশি-বিদেশি সংস্থাগুলোকে সমন্বিতভাবে কাজ করার জন্য এগিয়ে আসতে হবে।
প্রতিবন্ধী দিবস নিয়ে সংবাদের সঙ্গে কথা বলেন একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রোগ্রামের ন্যাশনাল কনসালটেন্ট ভাস্কর ভট্টাচার্য। যিনি নিজে একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তি। বাংলাদেশ থেকে তিনিই প্রথম ‘ডি-৩০ ডিজঅ্যাবিলিটি লিস্ট-২০২১’ সম্মাননা পেয়েছেন। পেয়েছেন ইউনেসকো পুরস্কার। বিশ্বের ৩০ জন প্রভাবশালী নির্বাচিত প্রতিবন্ধী নেতাদের মধ্যে তিনি অন্যতম।
ভাস্কর ভট্টাচার্য সংবাদকে বলেন, ‘আজকের এই দিবসটি করা হয়েছে মূলত প্রতিবন্ধী নাগরিকদের ব্যাপারে সমাজে, রাষ্ট্রে তাদের দায়িত্বকে মনে করিয়ে দেয়ার জন্য। সচেতনতা বৃদ্ধি করবার জন্য। মূলত প্রতিবন্ধী মানুষদের ব্যাপারে যে নেতিবাচক ধারণা প্রচলিত, তার অবসান ঘটানো এই দিবসের মূল উপজীব্য।
‘তবে সবচেয়ে বেশি যেটা গুরুত্বপূর্ণ বলে আমি মনে করি তা হলো প্রতিবন্ধী মানুষদের নেতৃত্বে নিয়ে আসা। যা এটুআই করেছে। তাদের ফিজিবিলিটি প্রোগ্রামে নেতৃত্ব দিচ্ছে একজন প্রতিবন্ধী মানুষ যা আমি নিজে। এ ধরনের লিডারশিপ পজিশনে প্রতিবন্ধী মানুষদের দেখছি না। এটা থাকা দরকার বলে আমি মনে করি।’
ভাস্কর ভট্টাচার্য আরও বলেন, ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য রাষ্ট্রের যে কমিটমেন্ট যেমন আইনি কমিটমেন্ট, রাজনৈতিক কমটিমেন্ট কিংবা আন্তর্জাতিক যেসব কমিটমেন্ট আছে সেটা যাতে বাস্তবায়িত হয় যথাযথভাবে এ বিষয়টিকে মনে করিয়ে দেয়া। প্রতিবন্ধী নাগরিকদের সারা পৃথিবীতে কিন্তু সম্মানের দৃষ্টিতে দেখা হয়। বিভিন্ন দেশে প্রতিবন্ধী নাগরিকরা কিন্তু সম্পদ। এখন এ যুগে এসে যা হচ্ছে যথাযথ শিক্ষা, প্রশিক্ষণ এবং প্রযুক্তির ব্যবহার। এই তিনটাকে যদি সমন্বয় করা যায় তবে প্রতিবন্ধী মানুষরা কিন্তু প্রায় সবার মতো সব কাজ করতে পারে। যে ধরনের প্রতিবন্ধী মানুষই হোন না কেন।
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের দেশে যে মন্ত্রণালয় আছে সেটা হলো সমাজকল্যাণ মন্ত্রলালয়। এখন কিন্তু আমরা কল্যাণের কথা বলছি না আমরা অধিকারের কথা বলছি। যেহেতু আমরা অধিকারের কথা বলছি তাহলে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য মন্ত্রণালয়টা যদি এমন হতো ‘সোশ্যালজাস্টিস’ বা ‘মিনিস্ট্রি অব সোশ্যাল জাস্টিস’ তাহলে কিন্তু অনেক বেশি বেটার হতো। তবে একটা মন্ত্রণালয় তো হতেই পারে।
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে ডিজেবল রিহ্যাবিলিটেশন অ্যান্ড রিসার্চ অ্যাসোসিয়েশন (ডিআরআরএ)। প্রতিষ্ঠানটি আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবসকে সামনে রেখে প্রতিবন্ধী ও দরিদ্র নারীদের কর্মসংস্থান তৈরি ও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করতে দৃষ্টিনন্দন পোশাক তৈরি করে তা বিপননে যাত্রা শুরু করলো ‘মালঞ্চ ক্র্যাফট’ নামে। শুধু দেশেই নয় আন্তর্জাতিকভাবে এই পোশাক রপ্তানি করা হবে জানিয়ে ডিআরআরএ’র নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া পদকপ্রাপ্ত ফরিদা ইয়াসমিন সংবাদকে বলেন, ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়নের সঙ্গে জাতীয় উন্নয়নের যোগসূত্র আছে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন হলে তারা জাতীয় উন্নয়ন ও উৎপাদনশীলতায় প্রভূত অবদান রাখতে পারবে এতে কোন সন্দেহ নেই।
ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ‘আমাদের দেশে অনেকদিন ধরেই প্রতিবন্ধী দিবস পালন করা হলেও এর তাৎপর্য আমরা ঠিকভাবে উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয়েছি। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ভাগ্যের তেমন একটা পরিবর্তন হয়নি। বিশেষ করে যারা দারিদ্র্য সীমার নিচে বাস করছেন। প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা গ্রহণের হার আগের চেয়ে বাড়লেও চাকরির বাজারে দেখা যায়, অনেকেই যোগ্যতা অনুযায়ী টিকে থাকতে পারছে না। সরকার শিক্ষা ক্ষেত্রে উপবৃত্তি দিচ্ছে, ভাতার পরিমাণও বাড়ানো হয়েছে, কিন্তু সেবা গ্রহণের পথ এখনও সুগম হয়নি।
‘এছাড়া প্রতিবন্ধী ব্যক্তি শনাক্তকরণ প্রক্রিয়ায় রয়েছে অনেক হয়রানি ও দীর্ঘসূত্রতা। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা যদি প্রয়োজনীয় সমর্থন পায় তবে তারা তাদের সক্ষমতা প্রমাণ করতে পারে এবং জাতীয় উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে। তারা কিন্তু ভিষণ শার্প (ধারালো) হয়।’
ফরিদা বলেন, ‘প্রতিবন্ধীরা নানা ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে তাদের সম্পর্কে ভুল ধারণার কারণে। বিভিন্ন বিষয়ে প্রতিবন্ধীদের মতামত সাধারণত গ্রাহ্য করা হয় না এবং প্রায় ক্ষেত্রেই তাদের অধিকার লঙ্ঘন করা হয়, যেটা শেষ পর্যন্ত তাদের উন্নয়নের মূল স্রোতধারা থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। প্রতিবন্ধীদের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় গঠন করা হলে তাদের অধিকার আদায় ও স্বার্থ রক্ষায় সেটি সহায়ক হবে’।
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়ে কাজ করে অ্যাকসেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন। এই প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক আলবার্ট মোল্লা সংবাদকে বলেন, ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের দক্ষতা উন্নয়ন ও আত্ম-কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে কোন উদ্যোগ বাজেটে নেই। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বাজেট বরাদ্দ সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়কেন্দ্রিক, অথচ অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন ধারণায় মন্ত্রণালয়ভিত্তিক বাজেট বরাদ্দ প্রয়োজন ছিল। এছাড়া বাজেটে প্রতিবন্ধিতাবিষয়ক আন্তর্জাতিক সনদ, জাতীয় আইন, নীতিমালা, কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রতিফলন নেই।’
আলবার্ট আরও বলেন, ‘প্রতিবন্ধিতা খাতে মোট বরাদ্দ ২ হাজার ৮৬৪.৮৫ কোটি টাকা, যা সামাজিক নিরাপত্তা খাতের মাত্র ২.৫২ শতাংশ এবং মোট বাজেটের ০.৪২ শতাংশ। এ বরাদ্দ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চাহিদার তুলনায় খুবই অপ্রতুল।