‘আমাদের সমাজে ছেলেমেয়েরা নানা বৈষম্যমূলক অবস্থার মধ্য দিয়ে বড় হয়। এক্ষেত্রে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন অব্যাহত রাখতে হবে; আমাদের সমাজ পরিবর্তন, দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন একদিনে আসবে না। আইন বাস্তবায়ন করতে হবে ’ বলে মন্তব্য করেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী।
আজ সোমবার বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের ঢাকা মহানগর শাখার উদ্যোগে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের আনোয়ারা বেগম- মুনিরা খান মিলনায়তনে গণপরিসর ও গণপরিবহনে নারী ও কন্যাদের প্রতি সংঘটিত সহিংসতা, নির্যাতন ও নিপীড়ন বন্ধের প্রতিবাদ জানিয়ে ‘গণপরিসর ও গণপরিবহনে নারী ও কন্যার নিরাপত্তা চাই’- শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন সড়ক সচিব। সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি মাহাতাবুন নেসা।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, গণপরিবহনে ও গণপরিসরে নারীর চলাফেরায় নানা সংকট আছে। যার জন্য পরিকল্পনাকারী ও নীতিনির্ধারকদের নিয়ে মত বিনিময় হওয়া প্রয়োজন। গনপরিবহনের সংকট নিরসনে আজকের আলোচনার মাধ্যমে গণপরিবহনে নারীবান্ধব হিসেবে গড়ে তোলার একটি পদক্ষেপ। গণপরিবহন সংবেদনশীল করে গড়ে তোলার জন্য প্রশাসনে, আইন বাস্তবায়নকারী, গণপরিবহন মালিকদের জন্য প্রশিক্ষণ চালুর আহ্বান জানান তিনি।
নিরাপদ সড়ক চাই চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘ড্রাইভারদের জন্য মানবিক দায়িত্ব , মানবিক আচরণ বিষয়ে প্রশিক্ষণের অভাব আছে। তারাও নানা বঞ্চনা ও নির্যাতনের শিকার। পরিস্থিতি উন্নয়নে শিশুদের মূল্যবোধ তৈরিতে পরিবার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে অধিক গুরুত্ব দিতে হবে’।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের ডেপুটি আ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাস গুপ্ত বলেন, ‘সমস্যা সমাধানে জনবলের ঘাটতি আছে কথাটি প্রায়ই বলা হয়। দায়িত্ব পালনে তৎপরতা থাকলে জনঘাটতি কমত। পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্মস্থলের কেন্দ্রে নির্যাতনের জন্য ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। গণপরিবহনে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধের জন্য থাকা আইন পরিবর্তনের জন্য সুপারিশ করা যেতে পারে।
বি আরটিএ এর পরিচালক (অপারেশন) মো. লোকমান হোসেন বলেন, আগামীতে জেন্ডারগত বিষয়ে প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হবে। বিআরটিএ এর উদ্যোগে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হলে সেই প্রশিক্ষণে মহিলা পরিষদকে যুক্ত করা হবে।
শ্যামলী পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রমেশ চন্দ্র ঘোষ নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে মালিক সমিতির পক্ষ থেকে কাজ করার আশ^াস দিয়ে বলেন, গণপরিবহনকে নারীবান্ধব হিসেবে গড়ে তোলার জন্য পরিবহন সেক্টর নিয়ে কাজ করতে চাই।
সভাপতির বক্তব্যে সংগঠনের ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি মাহাতাবুন নেসা বলেন, দিন দিন নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ায় আমরা উদ্বিগ্ন। সহিংসতার বিরুদ্ধে নারী আন্দোলনকে গড়ে তোলার জন্য তরুণদের সম্পৃক্ত করা আজ প্রয়োজন।
সহিংসতা প্রতিরোধের জন্য তরুণদের মধ্যে মানবিক মূল্যবোধ গড়ে তুলতে হবে , তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে, পরিবারে ছেলেমেয়ের মধ্যে বৈষম্য দূর করতে হবে, শিক্ষানীতি জেন্ডার সংবেনশীল করতে হবে।
লিখিত বক্তব্যে ইউএনডিপি, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ও সেন্টার ফর ইনফরমেশন - এর যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত জরিপের তথ্য উপস্থাপন করে বলা হয় বাস, লঞ্চ, ট্রেন এবং অন্যান্য যানবাহন ও টার্মিনাল সহ গণপরিবহনে ৩৬% নারী নিয়মিত যৌন হয়রানির শিকার হন। এছাড়াও গণপরিসরে ৮৭% নারী জীবনে অন্তত একবার যৌন সহিংসতার শিকার হন। আর ৬৬% নারী কয়েকবার এবং ৭% নারী বারবার নানা ধরনের যৌন হয়রানির শিকার হন।
তবে হয়রানির শিকার ৩৬% নারী প্রতিবাদ করেছেন বলে অনলাইনে পরিচালিত জরিপে উঠে এসেছে। এসময় গণপরিসরে ও গণপরিবহনে বিভিন্ন সময়ে যৌন হয়রানির ঘটনার উল্লেখ করে বলেন শতশত নারী ও কন্যা ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনার বিচারহীনতাই নারীকে আরও বেশি অনিরাপদ অবস্থানে নিয়ে গেছে। যার ফলশ্রুতিতে ধর্ষণ, দলবদ্ধ ধর্ষণ ও যৌন সহিংসতার মামলায় মাত্র ৩% অভিযুক্ত ব্যক্তি শাস্তি পায় বাকিরা আইনের ফাঁকফোকর কিংবা প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপে পার পেয়ে যায়।
লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয় টেকসই উন্নয়নের অগ্রগতি নির্ধারণে যে ৩৯টি নির্দেশক তৈরি করা হয়েছে। গণপরিবহনে ২০টি আসনে নারী-শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে, যা ২০৩০ সালের মধ্যে নিশ্চিত করতে সমন্বিতভাবে কাজ করার আহবান জানিয়ে বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়।
সোমবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২২
‘আমাদের সমাজে ছেলেমেয়েরা নানা বৈষম্যমূলক অবস্থার মধ্য দিয়ে বড় হয়। এক্ষেত্রে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন অব্যাহত রাখতে হবে; আমাদের সমাজ পরিবর্তন, দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন একদিনে আসবে না। আইন বাস্তবায়ন করতে হবে ’ বলে মন্তব্য করেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী।
আজ সোমবার বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের ঢাকা মহানগর শাখার উদ্যোগে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের আনোয়ারা বেগম- মুনিরা খান মিলনায়তনে গণপরিসর ও গণপরিবহনে নারী ও কন্যাদের প্রতি সংঘটিত সহিংসতা, নির্যাতন ও নিপীড়ন বন্ধের প্রতিবাদ জানিয়ে ‘গণপরিসর ও গণপরিবহনে নারী ও কন্যার নিরাপত্তা চাই’- শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন সড়ক সচিব। সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি মাহাতাবুন নেসা।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, গণপরিবহনে ও গণপরিসরে নারীর চলাফেরায় নানা সংকট আছে। যার জন্য পরিকল্পনাকারী ও নীতিনির্ধারকদের নিয়ে মত বিনিময় হওয়া প্রয়োজন। গনপরিবহনের সংকট নিরসনে আজকের আলোচনার মাধ্যমে গণপরিবহনে নারীবান্ধব হিসেবে গড়ে তোলার একটি পদক্ষেপ। গণপরিবহন সংবেদনশীল করে গড়ে তোলার জন্য প্রশাসনে, আইন বাস্তবায়নকারী, গণপরিবহন মালিকদের জন্য প্রশিক্ষণ চালুর আহ্বান জানান তিনি।
নিরাপদ সড়ক চাই চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘ড্রাইভারদের জন্য মানবিক দায়িত্ব , মানবিক আচরণ বিষয়ে প্রশিক্ষণের অভাব আছে। তারাও নানা বঞ্চনা ও নির্যাতনের শিকার। পরিস্থিতি উন্নয়নে শিশুদের মূল্যবোধ তৈরিতে পরিবার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে অধিক গুরুত্ব দিতে হবে’।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের ডেপুটি আ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাস গুপ্ত বলেন, ‘সমস্যা সমাধানে জনবলের ঘাটতি আছে কথাটি প্রায়ই বলা হয়। দায়িত্ব পালনে তৎপরতা থাকলে জনঘাটতি কমত। পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্মস্থলের কেন্দ্রে নির্যাতনের জন্য ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। গণপরিবহনে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধের জন্য থাকা আইন পরিবর্তনের জন্য সুপারিশ করা যেতে পারে।
বি আরটিএ এর পরিচালক (অপারেশন) মো. লোকমান হোসেন বলেন, আগামীতে জেন্ডারগত বিষয়ে প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হবে। বিআরটিএ এর উদ্যোগে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হলে সেই প্রশিক্ষণে মহিলা পরিষদকে যুক্ত করা হবে।
শ্যামলী পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রমেশ চন্দ্র ঘোষ নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে মালিক সমিতির পক্ষ থেকে কাজ করার আশ^াস দিয়ে বলেন, গণপরিবহনকে নারীবান্ধব হিসেবে গড়ে তোলার জন্য পরিবহন সেক্টর নিয়ে কাজ করতে চাই।
সভাপতির বক্তব্যে সংগঠনের ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি মাহাতাবুন নেসা বলেন, দিন দিন নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ায় আমরা উদ্বিগ্ন। সহিংসতার বিরুদ্ধে নারী আন্দোলনকে গড়ে তোলার জন্য তরুণদের সম্পৃক্ত করা আজ প্রয়োজন।
সহিংসতা প্রতিরোধের জন্য তরুণদের মধ্যে মানবিক মূল্যবোধ গড়ে তুলতে হবে , তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে, পরিবারে ছেলেমেয়ের মধ্যে বৈষম্য দূর করতে হবে, শিক্ষানীতি জেন্ডার সংবেনশীল করতে হবে।
লিখিত বক্তব্যে ইউএনডিপি, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ও সেন্টার ফর ইনফরমেশন - এর যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত জরিপের তথ্য উপস্থাপন করে বলা হয় বাস, লঞ্চ, ট্রেন এবং অন্যান্য যানবাহন ও টার্মিনাল সহ গণপরিবহনে ৩৬% নারী নিয়মিত যৌন হয়রানির শিকার হন। এছাড়াও গণপরিসরে ৮৭% নারী জীবনে অন্তত একবার যৌন সহিংসতার শিকার হন। আর ৬৬% নারী কয়েকবার এবং ৭% নারী বারবার নানা ধরনের যৌন হয়রানির শিকার হন।
তবে হয়রানির শিকার ৩৬% নারী প্রতিবাদ করেছেন বলে অনলাইনে পরিচালিত জরিপে উঠে এসেছে। এসময় গণপরিসরে ও গণপরিবহনে বিভিন্ন সময়ে যৌন হয়রানির ঘটনার উল্লেখ করে বলেন শতশত নারী ও কন্যা ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনার বিচারহীনতাই নারীকে আরও বেশি অনিরাপদ অবস্থানে নিয়ে গেছে। যার ফলশ্রুতিতে ধর্ষণ, দলবদ্ধ ধর্ষণ ও যৌন সহিংসতার মামলায় মাত্র ৩% অভিযুক্ত ব্যক্তি শাস্তি পায় বাকিরা আইনের ফাঁকফোকর কিংবা প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপে পার পেয়ে যায়।
লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয় টেকসই উন্নয়নের অগ্রগতি নির্ধারণে যে ৩৯টি নির্দেশক তৈরি করা হয়েছে। গণপরিবহনে ২০টি আসনে নারী-শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে, যা ২০৩০ সালের মধ্যে নিশ্চিত করতে সমন্বিতভাবে কাজ করার আহবান জানিয়ে বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়।