নিজের সন্তানের কবরটি একনজর দেখতে ও শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিল পিলখানা হত্যাকাণ্ডে নিহত মেজর মমিনুল ইসলাম সরকারের মা মুমিনুন্নেসা। বারবার কাঁদছিলেন।? এ সময় তার এক মেয়ে চোখের জল বারবার মুছে দিচ্ছিলেন। পাশেই দাঁড়িয়েছিলেন মমিনুল ইসলামের বাবা। ষাটোর্ধ্ব এই বৃদ্ধা আক্ষেপ করে বলেন, ‘এত বছর হলো এখনও তো ছেলে হত্যার বিচার পাইলাম না। আমরা আর কি চাইবো? এটাই চাইবো ছেলের বিচারটা অন্তত সুষ্ঠুভাবে হয়। মৃত্যুর আগে শুনে যেতে পারলে তাতে শাস্তি পাবো।’ মমিনুলের বৃদ্ধা মায়ের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন বোন মেহেরুন নাহার। বাবার কথাগুলো শুনে মাকে সান্ত¡না দিচ্ছিলেন আর নিজে অঝোরে কাঁদছিলেন। মায়ের কথা শেষ হতেই তিনি আনমনে বলতে লাগলেন, ‘প্রতি বছর এই দিনটায় স্মরণ করা হয়। বছরের বাকি দিনগুলো আমাদের কেউ খোঁজ খবর নেয় না। আমরা কি হালে থাকি, কি খাই কেউ খোঁজ খবর নেয় না। ভাই হত্যার বিচারটা পেলে হয়তো ভালো লাগত। আমাদের দুই ভাই ছিল। একজন অফিসার আরেকজন চিকিৎসক।
আমরা সবাইকে পাই কিন্তু ভাইকে তো পাই না। ?কাউকে পোশাক পরিহিত অবস্থায় দেখলে মনে হয় আমার ভাই আসছে।’ কবরে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন নিহত মেজর মমিনুলের ভাই চিকিৎসক আল মামুন শাহরিয়ার সরকার। এ সময় তিনি জানান, তার ভাই যখন মারা যান তার বর্তমানে ১৩ বছরের ছেলে স্ত্রীর গর্ভে ছিল। এখন সেই ছেলে বাবাকে খুঁজে। বাবা হত্যার বিচারের রায় কার্যকর হলো কি-না জানতে চায়। আমি তাকে কোন জবাব দিতে পারি না।’
এর আগে গতকাল সকাল ৯টায় রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে তাদের সামরিক সচিবরা বনানীর সামরিক কবরস্থানে নিহত সেনা সদস্যদের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। আইএসপিআর জানিয়েছে, রাষ্ট্রপতির পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এসএম সালাহ উদ্দিন ইসলাম। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল নকিব আহমেদ।
পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল শ্রদ্ধা নিবেদন করেন স্মৃতিস্তম্ভে। সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এসএম শফিউদ্দিন আহমেদ, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম শাহীন ইকবাল ও বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল শেখ আবদুল হান্নান শ্রদ্ধা জানান একসঙ্গে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার হোসেন ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাফিনুল ইসলাম শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। র্যাবের পক্ষ থেকেও শ্রদ্ধা জানানো হয়। পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। শ্রদ্ধা নিবেদন করতে এসে নিহত লে. কর্নেল গোলাম কিবরিয়ার বোন রওশন আরা শিলা বলেন, ‘আমরা তো আমাদের ভাইকে ফেরত পাব না। কিন্তু বিচারের রায় কার্যকর করা হলে অন্তত আত্মা শান্তি পাবে। বিচারটা সুষ্ঠুভাবে হলে আমরা শান্তি পাবো।’
নিহত কর্নেল কুদরত এলাহির ছেলে অ্যাডভোকেট শাকিব রহমান বলেন, পিলখানা হত্যাকাণ্ড যাদের ষড়যন্ত্রে সংঘটিত হয়েছে সেসব কুশীলব বা ষড়যন্ত্রকারীরা পর্দার আড়ালেই থেকে গেল। তারা কারা এখনও তা স্বজনরা জানতে পারেননি। ??আমরা চাই বিচারের রায় দ্রুত কার্যকর করা হোক।’
নিহতের স্বজনরা নীরবে কবর জিয়ারত ও দোয়া মোনাজাত করে চলে যান। কেউ কেউ প্রিয়জনের কবরটি ছুঁয়ে দেখেন। দোয়া মোনাজাত শেষে কান্নার চোখ মুছতে মুছতে বেশির ভাগ স্বজনরা বনানী সামরিক কবরস্থান ত্যাগ করেন। বিজিবির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দিবসটি পালন উপলক্ষে বিজিবির সব স্থাপনায় বিজিবির পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়েছে। বিজিবির সব সদস্য কালো ব্যাজ ধারণ করেছেন। বিজিবির সব সেক্টর ও ব্যাটালিয়ন পর্যায়ে হয়েছে বিশেষ দরবার। গতকাল জুমার নামাজের পর পিলখানা বিজিবি কেন্দ্রীয় মসজিদ, ঢাকা সেক্টর মসজিদ এবং বর্ডার গার্ড হাসপাতাল মসজিদে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহে ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে হত্যা করা হয়।
শনিবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০২২
নিজের সন্তানের কবরটি একনজর দেখতে ও শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিল পিলখানা হত্যাকাণ্ডে নিহত মেজর মমিনুল ইসলাম সরকারের মা মুমিনুন্নেসা। বারবার কাঁদছিলেন।? এ সময় তার এক মেয়ে চোখের জল বারবার মুছে দিচ্ছিলেন। পাশেই দাঁড়িয়েছিলেন মমিনুল ইসলামের বাবা। ষাটোর্ধ্ব এই বৃদ্ধা আক্ষেপ করে বলেন, ‘এত বছর হলো এখনও তো ছেলে হত্যার বিচার পাইলাম না। আমরা আর কি চাইবো? এটাই চাইবো ছেলের বিচারটা অন্তত সুষ্ঠুভাবে হয়। মৃত্যুর আগে শুনে যেতে পারলে তাতে শাস্তি পাবো।’ মমিনুলের বৃদ্ধা মায়ের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন বোন মেহেরুন নাহার। বাবার কথাগুলো শুনে মাকে সান্ত¡না দিচ্ছিলেন আর নিজে অঝোরে কাঁদছিলেন। মায়ের কথা শেষ হতেই তিনি আনমনে বলতে লাগলেন, ‘প্রতি বছর এই দিনটায় স্মরণ করা হয়। বছরের বাকি দিনগুলো আমাদের কেউ খোঁজ খবর নেয় না। আমরা কি হালে থাকি, কি খাই কেউ খোঁজ খবর নেয় না। ভাই হত্যার বিচারটা পেলে হয়তো ভালো লাগত। আমাদের দুই ভাই ছিল। একজন অফিসার আরেকজন চিকিৎসক।
আমরা সবাইকে পাই কিন্তু ভাইকে তো পাই না। ?কাউকে পোশাক পরিহিত অবস্থায় দেখলে মনে হয় আমার ভাই আসছে।’ কবরে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন নিহত মেজর মমিনুলের ভাই চিকিৎসক আল মামুন শাহরিয়ার সরকার। এ সময় তিনি জানান, তার ভাই যখন মারা যান তার বর্তমানে ১৩ বছরের ছেলে স্ত্রীর গর্ভে ছিল। এখন সেই ছেলে বাবাকে খুঁজে। বাবা হত্যার বিচারের রায় কার্যকর হলো কি-না জানতে চায়। আমি তাকে কোন জবাব দিতে পারি না।’
এর আগে গতকাল সকাল ৯টায় রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে তাদের সামরিক সচিবরা বনানীর সামরিক কবরস্থানে নিহত সেনা সদস্যদের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। আইএসপিআর জানিয়েছে, রাষ্ট্রপতির পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এসএম সালাহ উদ্দিন ইসলাম। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল নকিব আহমেদ।
পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল শ্রদ্ধা নিবেদন করেন স্মৃতিস্তম্ভে। সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এসএম শফিউদ্দিন আহমেদ, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম শাহীন ইকবাল ও বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল শেখ আবদুল হান্নান শ্রদ্ধা জানান একসঙ্গে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার হোসেন ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাফিনুল ইসলাম শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। র্যাবের পক্ষ থেকেও শ্রদ্ধা জানানো হয়। পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। শ্রদ্ধা নিবেদন করতে এসে নিহত লে. কর্নেল গোলাম কিবরিয়ার বোন রওশন আরা শিলা বলেন, ‘আমরা তো আমাদের ভাইকে ফেরত পাব না। কিন্তু বিচারের রায় কার্যকর করা হলে অন্তত আত্মা শান্তি পাবে। বিচারটা সুষ্ঠুভাবে হলে আমরা শান্তি পাবো।’
নিহত কর্নেল কুদরত এলাহির ছেলে অ্যাডভোকেট শাকিব রহমান বলেন, পিলখানা হত্যাকাণ্ড যাদের ষড়যন্ত্রে সংঘটিত হয়েছে সেসব কুশীলব বা ষড়যন্ত্রকারীরা পর্দার আড়ালেই থেকে গেল। তারা কারা এখনও তা স্বজনরা জানতে পারেননি। ??আমরা চাই বিচারের রায় দ্রুত কার্যকর করা হোক।’
নিহতের স্বজনরা নীরবে কবর জিয়ারত ও দোয়া মোনাজাত করে চলে যান। কেউ কেউ প্রিয়জনের কবরটি ছুঁয়ে দেখেন। দোয়া মোনাজাত শেষে কান্নার চোখ মুছতে মুছতে বেশির ভাগ স্বজনরা বনানী সামরিক কবরস্থান ত্যাগ করেন। বিজিবির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দিবসটি পালন উপলক্ষে বিজিবির সব স্থাপনায় বিজিবির পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়েছে। বিজিবির সব সদস্য কালো ব্যাজ ধারণ করেছেন। বিজিবির সব সেক্টর ও ব্যাটালিয়ন পর্যায়ে হয়েছে বিশেষ দরবার। গতকাল জুমার নামাজের পর পিলখানা বিজিবি কেন্দ্রীয় মসজিদ, ঢাকা সেক্টর মসজিদ এবং বর্ডার গার্ড হাসপাতাল মসজিদে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহে ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে হত্যা করা হয়।