আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধনের মাধ্যমে ‘গুম, খুন, নিপীড়ন ও অপশাসন পরিচালনাকারী’ একটি ‘ফ্যাসিবাদী দলের’ বিচার প্রক্রিয়া শুরুর সিদ্ধান্তকে সঠিক পদক্ষেপ বলে মন্তব্য করেছে বিএনপি।

রবিবার এক বিবৃতিতে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “আমরা আনন্দিত যে বিলম্বে হলেও গতরাতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ফ্যাসীবাদী সরকারের সাথে যুক্ত ব্যক্তিদের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার দ্রুত করার এবং বিচারকার্য নির্বিঘ্ন করার স্বার্থে ফ্যাসীবাদী দল আওয়ামী লীগ ও তার সাথে যুক্ত সকল সংগঠনের কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”

তিনি বলেন, “প্রাসঙ্গিক আইন সংশোধন করে বিচারিক প্রক্রিয়ায় গুম, খুন, নিপীড়ন ও জনগণের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন অপশাসন চালনাকারী, ফ্যাসীবাদী দলের বিচার করার সিদ্ধান্তকে আমরা সঠিক বলে মনে করি।”

বিএনপি জানিয়েছে, এসব দাবিতে তারা আগেও অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছে। তাদের মতে, সরকারের এ সিদ্ধান্ত আগে নেওয়া হলে, চাপে পড়ে এমন ‘বিব্রতকর ও অনভিপ্রেত’ অবস্থায় পড়তে হতো না।

বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল বলেন, “ভবিষ্যৎ কার্যক্রম পরিচালনায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিষয়টি সতর্কতার সাথে মনে রাখবেন বলে আমরা আশা করি।”

শনিবার রাতে উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি বৈঠকে অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রনেতাদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি, জামায়াতে ইসলামীসহ ধর্মভিত্তিক কয়েকটি দলের দাবির মুখে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। পাশাপাশি দলটিকে ‘জুলাই আন্দোলন’ দমনে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি করতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এ বিষয়ে বিএনপির বিবৃতিতে বলা হয়, “আমরা অনেক আগে থেকেই এসব দাবি জানিয়ে আসছিলাম। গত ১০ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে দেওয়া পত্রে ‘গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক দল হিসেবে বিচারিক প্রক্রিয়ায় নিয়ে আসার’ দাবি জানিয়েছিলাম। ১৬ এপ্রিল তার সঙ্গে সর্বশেষ সাক্ষাৎকালেও আমরা পতিত ফ্যাসীবাদী দল ও সেই দলীয় সরকারের সঙ্গে যুক্তদের দ্রুত বিচারের মাধ্যমে রাজনীতির ময়দানকে জঞ্জালমুক্ত করার দাবি জানিয়েছি।”

বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়, “আমরা প্রশাসনিক আদেশে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার বিপক্ষে, এ কারণেই বিগত ফ্যাসীবাদী সরকার জামায়াতে ইসলামীর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করেছিল বিএনপি।”

গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি পুনর্ব্যক্ত করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে ভোটাধিকার বঞ্চিত জনগণ ফ্যাসীবাদের পতনের জন্য গুম, খুন, জেল, জুলুম সহ্য করেও লড়াই করেছে। এই দাবি এখনও পূরণ হয়নি। রোডম্যাপ ঘোষণায় অবহেলা জনমনে ক্ষোভ সৃষ্টি করছে, এ বিষয়ে সরকারকে সচেতন হতে হবে।”